সম্মোহনী সেই মেয়েটি পর্ব-৩০ এবং শেষ পর্ব

0
969

#সম্মোহনী_সেই_মেয়েটি
#পর্বঃ৩০অন্তিম_পাতা
#লেখিকাঃরাদিয়াহ_রাফা_রুহি

নিষুপ্ত অন্তরিক্ষে রুপালি চাঁদের মোলায়েম আলো ছলকে পড়ছে পিঁচঢালা রাস্তার উপর। নামবিহীন এক ফুলের ঘ্রাণ আসছে কোথ থেকে ভেসে।জুনইদ খোলা,নির্জন রাস্তার ধারে দাঁড় করিয়ে রেখেছে গাড়িটি।অনিলা নিস্প্রভ,নিস্পলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তার প্রেমিক পুরুষের দিকে।জুনইদের মুখে নজর কাড়া স্নিগ্ধ হাসি।কয়েক মুহুর্ত আগের কথা ভেবেই আনমনে হাসলো সে।জুনইদ সময় সময় এমন করে যে সে না হেসে পারে না।জুনইদ এর চোখ এড়ালো না সে হাসি খানা।আবছা আলোতেও মেয়েটাকে এতো সম্মোহনী কেন দেখাচ্ছে?সে নেশাক্ত তবে ভরাট কন্ঠে অনিলাকে শুধালো,

“কেমন লাগছে জায়গা টা?”

“উম মন্দ নয়।আজীবন স্মৃতির পাতায় আগলে রাখার মতো একটা রাত।”

জুনইদ ফিচেল হেসে বললো, “তাই?”

অনিলা ঠোঁট প্রসারিত করে হাসলো।মিষ্টি কম্পিত গলায় আস্তে করে বললো,

“হুম”

“আইসক্রিম খাবে?”

আচানক প্রশ্নে হালকা নড়ে উঠলো অনিলা।
বললো,

”এতো রাতে আইসক্রিম পাবেন?”

“দেখাই যাক না।তুমি গাড়িতে বসো আমি আসছি।”

অনিলা গাড়িতে বসতেই গাড়ি লক করে জুনইদ সামনে এগিয়ে গেলো।আর অনিলা ভাবতে লাগলো কিছুক্ষন আগের কথা।

খুব কষ্ট করে জুনইদ পাইপ বেয়ে উপরে অনিলার রুমের ব্যালকনিতে উঠেছে।পিছনে পিছনে ফাহাদ।নিজের বউয়ের কাছে যাবে সেটাও কিনা এভাবে লুকিয়ে চুরিয়ে।ইস এটা খুবই লজ্জার।

ফাহাদ ফিসফিস করে বললো,
“যাও ভেতরে!”

জুনইদ ও সাবধানী গলায় বললো,

“ওকে ভাইয়া।আপনিও আসুন।

“ঠিক আছে তুমি তোমার বউ কে কোলে নিবা আর আমি আমার বউ কে ঠিক আছে।”

“ওকে ডান”

এদিকে জুনইদ আর ফাহাদ ঘরে ঢুকে দেখে অনিলা আর মায়াবী চাদর মুড়ি দিয়ে সম্পুর্ন ঢেকে ঘুমিয়েছে।চেনার উপায় নেই কোন টা অনিলা আর কোনটা মায়াবী।

“ভাইয়া চিনবো কি ভাবে কোনটা আমার বউ?”

“ছিঃছিঃ নিজের বউকে চিনতে পারছো না।আমি তো না দেখেও বলতে পারবো কোন টা আমার বউ।”

“তাহলে আপনিই বলুন ভাইয়া কোনটা আপনার বউ?তাহলেই তো আমিও সহজেই চিনতে পারবো আমার বউকে!”

ফাহাদ ভেবে বলে উঠলো, “ঠিক আছে।”

ফাহাদ কিছুক্ষণ ভেবে বললো,”ডান পাশের টা আমার বউ”

“ওকে তাহলে বাম পাশের টা আমার।”বলেই জুনইদ এগিয়ে যাচ্ছিলো।তখনই ফাহাদ আবার বলে উঠলো,

“ওয়েট, এয়েট।এটা নয় ওটা তোমার বউ। এখন মনে হচ্ছে।”

“কনফিউজ কেন করছেন ভাইয়া।”

“এবার আমি সিউর ডান পাশের জন-ই তোমার।”

“সিউর তো?”

“হুম হান্ডেড পারসেন্ট।

এদিকে ওদের দুজনের কান্ডে দুই বোন চাদরের নিচ থেকে মুখ চেপে হাসছে।এবার দেখার পালা সঠিক মানুষ কে ওরা নির্বাচন কর‍তে পারে কিনা।ওরা আগেই আন্দাজ করেছিলো যে নিশ্চয়ই ওরা আসবেই ঘরে।আর হলোও তাই।

জুনইদ চোখ বন্ধ করে তারপর ডান পাশের জন কে কোলে তুলতেই ওর মনে হলো যাকে সে কোলে নিয়েছে সে কিছু টা ভাড়ী।অনিলার তো এতো ওজন নয়।অনিলা পাতলা তবে কি সে ভুল জন কে তুলেছে।এদিকে ফাহাদ আল্লাহ আল্লাহ করছে।যেনো তার ধারণাই ঠিক হয়।

হঠাৎ জুনইদ তার কানে ব্যথা পেলো।ব্যথায় মৃদু আওয়াজে তার মুখ থেকে আহ শব্দে বেরিয়ে এলো।ভালো করে দেখতে সে তো চমকে উঠে।মায়াবী ওর কান টেনে ধরেছে।মায়াবী দাঁতে দাঁত পিষে বলে,

“তবে রে পাজি ছেলে।একটা দিন বউ কে ছাড়া থাকলে কি হইতো।এভাবে চোরের মতো লুকিয়ে কেন এসেছিস?”

“আহ আপু ছাড়ো!এবার কান টা ছিড়ে যাবে তো।আমার কোনো দোষ নেই।তোমার বর ই তো আমাকে উষ্কেছে।”

“একে তো দোষ করেছিস এখন আবার কথা ঘুরিয়ে আমার বরের দিক দিচ্ছিস।এসেছিস ভালো কথা তাও নিজের বউ কে রেখে আমাকে কোলে উঠিয়েছিস।আজকে তোর একদিন কি আমার একদিন।নামা বলছি কোল থেকে।”

ফাহাদ হতবুদ্ধির হয়ে মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে দাঁতে নখ কাটছে।আজকে তার জা’ন টা বুঝি বেঘোরে যাবে তারই বউয়ের কাছে।কথায় বলে না যার জন্য করি চু’রি সে বলে চো’র।এখন কিনা জুনইদ নির্বিঘ্নে তাকে ফাসিয়ে দিচ্ছে তার বউয়ের কাছে।

অনিলা উঠে বসে সশব্দে হাসছে।অনেক কষ্টে হাসি থামিয়ে রেখেছিলো সে।জুনইদ এবার অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো অনিলার পানে।মায়াবী এবার ফাহাদের দিকে কটমট করে তাকালো।তেড়ে গেলো সে ফাহাদের দিকে।পরিস্থিতি বেগতিক দেখে জুনইদ গিয়ে অনিলাকে ফট করে পাজা কোলে তুলে এক হাতে দরজা খুলে দৌড়ে বেরিয়ে এলো রুম থেকে।

ফাহাদ কি করবে এখন।জুনইদ তো পালিয়ে বেঁচে গেলো।এখন তার কি হবে।এখন তার কাছে মায়াবীকে কোনো হিংস্র বাঘিনীর চেয়ে কম লাগছে না।এই বুঝি ঝাপিয়ে পড়বে তার উপর।

“দেখো মায়া আমার কোনো দোষ নেই।আমি তো তোমাকে প্রথম ঠিকই চিনেছিলাম।কিন্তু পরে*”

আর কিছু বলতে পারলো না ফাহাদ।ততক্ষণে ফাহাদের মুখ বন্ধ করে দিয়েছে মায়াবী।ফাহাদ আহত পাখির ন্যায় ডানা ঝাপটাচ্ছে।ভয়ংকর পুলিশ অফিসার বউয়ের কাছে কিনা ভেজা বেড়াল!

অনিলার ঘোর কাটলো জুনইদের মৃদু ধাক্কায়।
জুনইদ মোলায়েম গলায় বললো,

“কি হয়েছে মিস সুনামি?”

মিষ্টি হেসে বললো,”কিছু না।আইসক্রিম পেয়েছেন?”

জুনইদ উৎফুল্ল কন্ঠে বলে,”হ্যাঁ এই নাও।সামনে একটা স্টোল আছে।দশ মিনিট লেগেছে যেতে।এখনো খোলা আছে।”

“ওহ আচ্ছা।একটাই এনেছেন যে?”

জুনইদ গাড়িতে বসতে বসতে বলা,”আমি খাবো না তুমি খাও।”

অনিলা আর কিছু না বলে আইসক্রিম হাতে নিয়ে খেতে লাগলো।আর জুনইদ দু চোখ ভরে ওঁকে দেখতে লাগলো।যাকে দেখার সাধ শেষ নিঃশ্বাস অব্দি থাকবে।যে কখনো পানসে হবে না।দুনিয়া উলটে গেলেও আগের মতোই সেই সম্মোহনী মেয়েটির প্রেমে পরবে বার বার সে এমনই একটি মেয়ে।অনিলা এক মনে আইসক্রিম খেতে খেতে তার নজর পরলো জুনইদের সে নেশাক্ত দুই জোড়া গম্ভীর আঁখিতে।সেই দৃষ্টির মানে বুঝতে দেরি হলো না তার।রাত বারার দরুন আশেপাশে মানুষ নেই বললেই চলে।জুনইদ গাড়ির কাচ উঠিয়ে দিলো।অনিলার ঠোঁটের কোণে লেপ্টে থাকা তরল আইসক্রিম নিজের ওষ্ঠাগত করে নিলো।তৃষ্ণার্ত পাখির ন্যায় তার সরু অধর মিলিত করে তার ওষ্ঠ পুরে নিলো।নিশিত রাত্রির নিস্তব্ধতায় দুইজন কপোত-কপোতী নিজেদের মনের ভাব ব্যক্ত করতে ব্যস্ত নিরবে।যে কথার আওয়াজ শুধুই তারা দুজন বুঝতে পারছে।

আট মাসের ভরা পেট অনিলার।সে মুখে বই গুজে বসে আছে।ভীষণ ভাবে বিরক্ত সে।এমন সময় তার পরীক্ষার ডেট পরেছে যে অনিলার বিরক্তির শেষ নেই।বাবু হবে আর এক মাস পরেই তার পরীক্ষা।বাবুকে রেখে গিয়ে পরীক্ষা দিতে হবে তার।এমন সময় শান্তা বেগম ভেতরে ঢুকলেন।হাতে তার খাবারের প্লেট।অনিলা তাকে দেখে মৃদু চোখে হাসলো।সে যখন কন্সিভ করে তখন এই মানুষ টাই সবচেয়ে বেশি খুশি হয়েছিলেন।কান্না করেন অনেক তাকে জ’ড়িয়ে ধরে।পরম মমতায় বুঝিয়ে দেন যে তিনি আগের ব্যবহারের জন্য অনুতপ্ত ভীষণ।এরপর থেকে রোজ তিনিই নিজের হাতে খাইয়ে দেন অনিলাকে।এ যেনো স্বর্গীয় সুখ তার কাছে।অনিলা বই রেখে দিলো পাশের ডেস্কে।শান্তা খাবার রাখতে রাখতে ভারী শাসনের গলায় বলেন,

“শুধু কি বইয়ে মুখ গুজে থাকলেই হবে?শরীরের মধ্যে যে আরেকটা প্রান আছে তার কথা ভাবতে হবে না?আমি খাবার না দিলে কি তোমার খাওয়ার কথা মনে পরে না মেয়ে।”

অনিলা হেসে দুই হাতে আঁকড়ে ধরে তাকে।তারপর আদুরে কন্ঠে বলে,

“আমি তো জানিই তুমি আমার জন্য খাবার ঠিক সময় মতো আনবেই।আমি তো নিচে যেতে চাই ই কিন্তু তুমিই তো যেতে দাও না।তাছাড়া এখন আমার অভ্যাস হয়ে গেছে!”

শান্তা খাবার মেখে অনিলার মুখের সামনে ধরে শান্ত গলায় শুধালেন,”কি অভ্যাস শুনি?”

“এই যে রোজ আমাকে খাইয়ে দাও।এখন আমি এটাতে অভ্যস্ত হয়ে গেছি।আমার কিন্তু খুব বাজে অভ্যাস করিয়ে দিলে মা।”

“খুব ভালো করেছি।খাওয়ার সময় কথা নয়।খাবার গলায় আটকাবে।চুপচাপ খা।”

“ওমা তোমার ছেলে কখন আসবে গো?”

“আহারে মন কেমন কেমন করছে বুঝি।ঠিক আছে আমি ওঁকে বলে দেবো যাতে লেট করে না আসে এখন থেকে।একটু তারাতাড়ি যেনো ফিরে আসে সে।”

নিজের শাশুড়ী মায়ের মুখে এমন কথায় ল্জ্জা পেলো অনিলা।ভীষণ ভাবে মুছড়ে গেলো সে।ইশ কি না কি মনে করলো মা,

“মা তুমিও না।এমনিতেই জিজ্ঞেস করেছি।”

“থাক আর লজ্জা পেতে হবে না!খাওয়া শেষ এখন রেস্ট করো তো বাপু।”

শান্তা বেগম যাওয়ার আগে অনিলা উনাকে টেনে ধরে টুকুস করে একটা চুমু দিয়ে দিলো।শান্তা কপট রাগ দেখালেন।রোজ ই অনিলা এমন টা করে।তিন বেলা খাওয়ানো শেষে এই মেয়ের এমন করা চাই ই চাই।শান্তাও তে অভ্যস্ত হয়ে গেছেন।

“ও মা আরেকটু থাকো না আমার কাছে?”

“দেখো মেয়ের কথা।আমার কি আর কাজ নেই।”

“না কাজ নেই।তুমি থাকো আমার কাছে একটু।”

“এভাবে বললে কি করে যায় বল তো।”

দুই শাশুড়ী বউমা মিলে গল্প শুরু করলেন।এ যেনো তার আরেকটা প্রান।অনিলা ভেবে পাই না একটা মানুষ এতো টা নিঃস্বার্থ ভাবে কিভাবে ভালোবাসে।নিজের মেয়ের চেয়েও শান্তা তাকে বেশি ভালোবাসে।এতোটাই সুখী এখন সে।একদম সুখের সংসার এখন তার।

পরিশিষ্ঠঃ

জুনইদ ঘন্টা খানেক থেকে দাঁড়িয়ে আছে।এদিকে বাচ্চার অনবরত কান্না থামছেই না।মা ছাড়া কি আর কোনো বাচ্চাই থাকতে পারে।বেবিকে যদিও বাড়িতে তার শাশুড়ীর কাছেই রেখে এসেছিলো সে।প্রথম এক ঘন্টা বাবু ঘুমিয়ে ছিলো।ঘুম ভাঙ্গলে এক ঘন্টা শান্তা সামলাতে পারলেও পরের এক ঘন্টা আর পারেন না।বাবুর কান্নায় শান্তা হাহুতাশ করছিলেন সমানে।তিনি তার এক মাত্র নাতির কান্না সহ্য করতে পারেন নি।বাধ্য হয়েই নিয়ে এসেছে জুনইদ বাবুকে।জুনইদ অনিলার কলেজের সামনে বাচ্চাকে নিয়ে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছে।

অনিলা আর নিশার এক্সাম শেষ।হল ভেঙেছে সবে মাত্র।জুনইদ কে দেখে অনিলা দৌড়ে এলো তার কাছে।নিশাও এসে বাবুকে আদর করলো।তার ও যে প্রান বাবু।অনিলা বাবু কে কোলে নিয়ে পুরো মুখে চুমুতে ভরিয়ে দিলো।চোখ দিয়ে অশ্রু কণা গড়িয় পরছে।বাচ্চার জন্য সে পরীক্ষায় বসতেই চাইছিলো না।তখন অবশ্য শান্তা অনিলার কথায় সমর্থন করেন।কিন্তু জুনইদের জেদে তাকে পরীক্ষায় বসতেই হয়েছে।

জুনইদ অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো।এতক্ষন থেকে চেষ্টা করেও সে কান্না থামাতে পারেনি বাবুর।আর এখন বাবু অনিলার কাছে যেতেই কান্না থামিয়ে দিয়েছে।একেই বোধহয় মায়ের কোল বলে।মায়ের কাছে যেতেই একদম শান্ত হয়ে গেছে।বাবু কান্নার ফলে ফর্সা তুলতুলে নরম গাল গুলো লাল হয়ে গেছে।বড় বড় ডাগর ডাগর চোখের পানি কিছু টা লেপ্টে আছে মেদুর ছোয়া গালে।

অনিলা কান্না মিশ্রিত গলায় বললো,

“আমার প্রান টা।খুব কষ্ট হয়েছে তাই না আমার পাখি।স্যরি বাবা।এই তোমার মা কান ধরছে দেখো।আর হবে না এমন টা।”

বাচ্চাটি শুধু মুখে হাত দিয়ে কোমল চোখে তাকিয়ে আছে।কি জানি কি বুঝলো এক মাসের একরত্তি বাচ্চাটি।মায়ের গলা জড়িয়ে ধরলো সে।অনিলা চুমু দিলো বাবুর গালে।ওর নাম টা জুনইদ এর নামের সঙ্গে মিলিয়ে জুবায়ের রাখা হয়েছে।তবে সবাই বাবু বলেই ডাকে।স্ট্রুয়ার্ট ও বাবু বাবু করে ডাকে আর খেলতে থাকে জুবায়ের এর সাথে।দোলনায় শুয়ে থাকলে টুকুর টুকুর করে তাকিয়ে থাকে বাবু স্ট্রুয়ার্ট এর দিকে।ওরা আর না দাঁড়িয়ে গাড়িতে বসে পরলো। নিশা ওর ভাইয়ের সঙ্গে বসলো।অনিলা পিছনে বাবুকে নিয়ে বসলো।গাড়িতে বসেই অনিলা বাবুকে খাওয়াতে চাইলো কিন্তু জুনইদ বাধ সাধলো,

“তুমি এক্সাম হলে ছিলে অনিলা।ঘেমে গেছো অনেক।বাসায় গিয়েই খাওয়াও।”

অনিলা থামলো।কাধে নিয়ে একটু ঝাকালো বাবুকে।কিছুক্ষন পর ঘুমিয়ে যায় বাবু অনিলার কোলে।একদম মিশে গেছে বাবু তার কোলে।স্ট্রুয়ার্ট গাড়িতেই আছে।অনিলা অবাক হলো।স্ট্রুয়ার্ট তো বাড়িতেই থাকে আজ তবে জুনইদ ওঁকে সঙ্গে করে এনেছে কেন?

“এই জুনইদ স্ট্রুয়ার্ট কে কেন এনেছেন?”

“স্ট্রুয়ার্টও বাড়িতে থাকতে চাইছিলো না।বাবু কে নিয়ে আসছিলাম তখন সমানে ডানা ঝাপটাচ্ছিলো আর বলছি সেও আসবে আমাদের সাথে।তাই এনেছি।”

অনিলা হেসে দিলো।বাবু হওয়ার পর থেকে
বাবুকে যেখানেই নিয়ে যাওয়া হয় সেখানেই স্ট্রুয়ার্ট এর ও যাওয়া চাই ই চাই।কি জানি কেন এমন করে স্ট্রুয়ার্ট।মায়াবীরও একটা ফুটফুটে মেয়ে হয়েছে।তাদের বাবুর থেকে দুই মাসের বড় তার বুবুর মেয়ে।ওর নাম জুরাইয়া।কি অদ্ভুত ভাবে মিল দুই ভাই বোনের নামের!

জুনইদ লুকিং গ্লাসে দেখলো অনিলা হাসছে।সেও হাসলো।এই মেয়েটিকে সব সময় এতোটা সম্মোহনী লাগে কেন তার কাছে।এখন তো মেয়েটা ক্লান্ত!মুখে ঘাম লেপ্টে আছে।এই অবস্থায় ও যেনো জুনইদ অনিলার প্রেমে পরতে বাধ্য।আসলেই কি অনিলা এতোটাই সম্মোহনী নাকি সে এই মেয়েটাকে ভালোবাসে বলেই তার কাছে এমন সম্মোহনী মনে হয়।হঠাৎ একটা কথা মনে হলো তার যেটা অনিলাকে বলা হয়নি।বাড়ি গেলে বলবে সে।দেখতে দেখতে ওরা বাড়িতে চলে এলো।অনিলা ঘরে ঢুকে বাবুকে শুইয়ে দিলো।গোসল করে ফ্রেশ হয়ে নিলো সে।

মেদুর আকাশে আজ নেই নক্ষত্রের মেলা।সাঁঝ নেমেছে পশ্চিমাকাশে।কমলাটে নীরদদেশে ছেঁয়ে পড়েছে কালচে আঁধার। বাতাবরণ নিরুত্তাপ,নিরুপম।কি নিদারুণ চন্দ্রমার আবির্ভাব ঘটেছে আজ।বাতাসে ভাসছে মিষ্টতা।অনিলা বাবুকে কোলে নিয়ে স্ট্রুয়ার্ট এর সাথে গল্প করছে।জুনইদ খেয়ে এসে অনিলার পাশে গিয়ে দাঁড়ালো।বারান্দার রেলিঙে হেলান দিলো সে।অনিলা সাবধান করলো মুখে আঙ্গুল দিয়ে।বাবু ঘুমাচ্ছে আওয়াজ করতে বারন করলো।অনিলা বাবুকে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে আবার এলো বারান্দায়।

“তোমার সাথে কিছু কথা ছিলো অনিলা!”

“কি কথা যে এমন সিরিয়াস মুখ করে আছেন?”

“আমার বাইক ব্রাস্টের কথা মনে আছে তোমার?”

এখনো অনিলার কথা টা মনে হলে শরীরের লোমকূপ দাঁড়িয়ে যায়।অনিলা আস্তে করে বলে,

“হুম মনে আছে।এমন লোহ মর্ষ ঘটনা কি ভুলা যায়।”

“ওইটা কোনো এক্সিডেন্ট ছিলো না।আমার কলেজের একটা সিনিয়রের আমার সাথে একটা পুরনো বিষয় নিয়ে ঝামেলা ছিলো।ঝামেলা টা বেশ বড় সড়ই বটে।আমি ওঁকে মেরেছিলাম একটা মেয়ের জন্য।”

অনিলা জুনইদের মুখে অন্য একটা মেয়ের কথা শুনেই তার বুকের ভেতর ধক করে উঠে।সে কি কোনো অজানা ভয়ংকর সত্যির মুখোমুখি হতে যাচ্ছে তবে।সে মিনমিনে গলায় বলে,

“কি করেছিলো মেয়েটার সঙ্গে ওই ছেলে?”

“ওঁকে রেপড করতে চেয়েছিলো ফাঁকা ক্লাস রুমে।আমি ওয়াশরুমে যাওয়ার সময় শব্দ পেয়ে সেখানে গিয়ে ধরে ফেলি ওই কুলা”ঙ্গারকে।ভাগ্যিস আমি ঠিক সময় পৌঁছে যায় তাই ওই ছেলে কিছুই করতে পারেনি।আমি অবশ্য সেদিন ওঁকে পুলিশে দিতে চাইছিলাম কিন্তু প্রিন্সিপাল স্যার আমাকে আটকে দেন এটা ভেবে যে আমাদের কলেজের রেপুটেশন খারাপ হবে।পরে আমিও সুযোগের অপেক্ষায় ছিলাম ওকে শিক্ষা দেওয়ার জন্য।একদিন একটা নির্জন জায়গায় নিয়ে গিয়ে ছেলেটাকে অনেক মেরেছিলাম।আর সেই জের ধরেই আমার বাইকে গোপনে টাইম বোম সেট করে দিয়েছিলো।আমাকে একেবারে শেষ করে দিতে চেয়েছিলো।”

অনিলা আঁতকে উঠে।সারা শরীর তার কাপছে।জুনইদ কে জাপটে ধরলো অনিলা।
অনিলার কি যেনো মনে পরলো,

“তাই তো আমি সেদিন আপনার বাইক থেকে টিক টিক আওয়াজ পেয়েছিলাম।ওটা তবে বোমের জন্য ব্রাস্ট হয়েছে?আবার যদি কিছু করে ছেলেটা তখন?”

“জুনইদ অনিলাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলে, উম হুম আর কেউ পারবে না কিচ্ছু কর‍তে।ফাহাদ ভাইয়া ওঁকে জেলে পুরে দিয়েছে।ভাইয়াই এসব আমাকে ছয় মাস আগে বলেছিলো।বাড়ি এসে বলবো তার আগেই শুনি তুমি কন্সিভ করেছো।সে জন্য বাড়ির সবাই অনেক খুশি ছিলো তাই কাউকে জানাই নি আর।”

“আচ্ছা ঠিক করেছেন।”

আরেকটা খবর আছে।ওই পাগল টা আছে না, ওঁকে আদালত জেলার দের এস্যাইলামে রাখার হুকুম জারি করেছেন।যাবত জীবন কারাদণ্ড অনধিক হয়েছে ওই ল’ম্পটের।

অনিলা চুপচাপ রইলো।এটাও তার জীবনের এক দুর্ধর্ষ মুহুর্ত।সে আরও শক্ত করে জ’ড়িয়ে ধরলো জুনইদ কে।কান্না মিশ্রিত গলায় বললো,

“প্লিজ জুনইদ আমি আর এসব শুনতে চাই না!আজ শুধুই ভালোবাসবেন আপনি আমাকে।ভালোবাসার কথা কইবেন রাত্রি জেগে।”

“তা না হয় বুঝলাম।কিন্তু শাপলা কড়ি একাউন্ট টা যে তোমার সেটা তো বলো নি।”

ইশরে এটার কথা তো অনিলা ভুলেই গেছিলো।কিন্তু জুনইদ জানলো কিভাবে।অনিলা চোখ কোণা করে বলে,

“আপনি কি করে জানলেন ওটা আমার একাউন্ট?আপনি আমার ফোন ধরেছিলেন?”

“কেন?তুমি যদি গোপনে আমার মনের খবর জানার জন্য ফেইক একাউন্ট ব্যবহার করতে পারো তবে আমি কেন পারবো না।অনেক আগেই জেনেছি যে শাপলা কড়ি একাউন্ট তোমার।”

“হুম হয়েছে, হয়েছে।তাই বলে কি এখন ভালোবাসবেন না নাকি?”

“কে বলেছে শুনি।তোমায় না ভালোবাসলে যে আমার নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে যাবে।তুমিই আমার জীবনের সেই সম্মোহনী মেয়েটি যার কাছে আমি আমার জীবনের সব টুকু সুখ নিংড়ে দিয়েছি।ভালোবাসার প্রতিটি মুহুর্ত কে অনুভব করেছি আমি তোমায় ভালোবেসে।”

“এভাবেই আমার পাশে থাকবেন সারাজীবন।আর কিচ্ছু চাই না আমি।’ভালোবাসি!”

“ভালোবাসি!”

পাশ থেকে স্ট্রুয়ার্ট মিহি কন্ঠে বললো, “সুখের,সুখের, হোক সুখের জীবন!”

অনিলা আর জুনইদ অকপটে তাকালো স্ট্রুয়ার্ট এর দিকে।দুজনেই এক সাথে হেসে উঠলো।আবার জ’ড়িয়ে ধরলো দু’জন দুজনকে।গভীর আলিঙ্গনে আবদ্ধ হলো দু’টি হৃদয়।প্রতিটি জিনিস সাক্ষী রইলো তাদের এই সুন্দর মুহুর্তের!❤️

সমাপ্ত।
আসসালামু আলাইকুম।নামাজ কায়েম করুন।