#অনুভূতিহীন (পর্ব ১০)
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ
কথায় আছে সুখের সময় গুলো খুব তারাতারি চলে যায়। ঠিক আমার ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম নয়। এই কয়টা দিন যেনো চোখের পলকেই কেটে গেলো।
আজকের পর আবার সব পূর্বের মতো হয়ে যাবে। শূধূ পরিচয় টা থাকবে ভিন্ন।
হালকা বাতাস বইছে। হাত দুটি মেলে দিয়ে তাকে নিয়ে উড়ে কোথাও হাড়িয়ে যেতে ইচ্ছে করছে আমার। যখানে থাকবো শুধু আমি আর সে। ওটা হবে আমাদের ভিন্ন এক পৃথিবী।
হুট করেই সামনে একটা বাইক এসে থামলো। হুট করে এমন হওয়ায় চমকে উঠলাম আমি। রিদ ভাইয়া গেলো ঝালমুড়ি আনতে।
আমি শাড়ির আচল গুছিয়ে রাগি দৃষ্টিতে ছেলেটার দিকে তাকালাম। এভাবে হুট করে কেও এসে সামনে ব্রেক করে? আরেকটু হলেই আমার পরান পাখি টা উড়াল দিচ্ছিলো।
– এভাবে শাড়ি পড়া পরীর মতো একটা রমনি একা রাস্তার মাঝে দাড়িয়ে থাকা টা কি ঠিক ম্যাডাম?
ছেলেটার কথায় আমি তার দিকে ভ্রু কুচকে তাকালাম। ছোট্ট করে বললাম,
– সরি।
সে আবার বললো,
– আকাশে প্রায় মেঘ জমে আছে। হয়তো বৃষ্টি আসবে। তো আপনি এভাবে একা দাড়িয়ে আছেন কেন, কোথাও যাবেন?
এর মাঝেই ঝাল মুড়ি হাতে রিদ ভাইয়া এসে দাড়ালো। আর ছেলেটার উদ্দেশ্যে বললো,
– আরে সাগর তুমি?
আমি একটু অবাক হলাম। রাস্তায় যাকে দেখে সেই তার পরিচিত নাকি আজব। ছেলেটাও আমার দিকে ইশারা করে হেসে বললো,
– ভাবি নাকি ভাইয়া?
– আরে না, আমার কাজিন।
– ভাইয়া আপনার কাজিন তো দেখছি একধম পরীর মতো। যেন একধম নীল পরী।
– ধন্যবাদ।
– নাম কি ভাইয়া?
উনি আমার হাত ধরে সেখান থেকে চলে যেতে প্রস্তুত হলো। আর ছেলেটাকে বললো,
– আচ্ছা তোমার সাথে আমি পরে কথা বলছি, এখন আসি।
বলেই আমাকে নিয়ে একটু দুড়ে চলে গেলো। আমি তার দিকে চেয়ে অভিমানি চোখে বললাম,
– বৌ বলে পরিচয় দিলে কি মান সম্মান কমে যেতো?
সে কিছু বললো না। তার নিরবতায় রাগ হলো আমার। তার দিকে চেয়ে বললাম,
– আমি বাসায় যাবো।
– আচ্ছা চলো,
আমি আবার থেমে বললাম,
– চলো মানে, আপনি না বললেন আজ সারা বিকেল আমায় সময় দিবেন?
– তুমিই তো বলছো বাসায় চলে যাবে।
আমি কপালে হাত দিয়ে বললাম,
– কোনটা বলা আর কোনটা অভিমান তা বুঝেন না? হায়রে কপাল আমার।
তিনি হাসলেন, আর বললো,
– হুম বুঝছি আমি। শুনো আমাদের ফ্যামিলির একটা নাম ডাক আছে। তো ওই ফ্যামিলির ছেলে হয়ে যদি আমি সবাইকে বলি আমি বিয়ে করে ফেলেছি তাও ফ্যামিলি ছারা কাউকে না জানিয়ে। তাহলে সম্মান টা কোথায় দাড়াবে বলো। যখন তোমাকে একেবারে এখানে নিয়ে আসবো, তখন সবাই জানবে। এখন না, বুঝছো?
আমি একটু অভিমানি ভাব নিয়ে অন্য দিকে তাকিয়ে বললাম,
– হুম বুঝছি। এবার আমার অভিমান ভা*ঙাতে হবে আপনার।
তিনি আমার দিকে চেয়ে বললো,
– ন্যাকামি তো ভালোই জানো, এখন চলো কোথাও বসি, নাহলে এক্ষুনি বৃষ্টি এসে ভিজিয়ে দিবে।
-দিলে দিবে, আমি এতো কিছু বুঝিনা। প্রয়োজনে বৃষ্টিতে ভিজে কাক হয়ে যাবো তবুও এখান থেকে সরবো না।
– না গেলে তুমি ভিজো আমি গেলাম। কালকে যাওয়ার মুহুর্তে জ্বর উঠলে তখন বুঝবে।
– উঠলে তো আমি আরো হ্যাপি। জ্বরের বায়না ধরে আপনার সাথে আরো দুই দিন থাকতে পারবো।
আমার কথায় উনি কপালে হাত দিয়ে ‘চ’ সূচক একটা শব্দ করলেন। আর আমার দিকে চেয়ে বললো,
– আশে পাশে খুজে দেখো তো একটা বাশ বা লাঠি পাও কি না।
আমি চোখ বড় বড় করে তার দিকে চেয়ে বললাম,
– কেন!
– তোমার অভিমান গুলো ভা*ঙবো তাই।
আমার হা করা গাল বন্ধ করে এবার বললাম,
– থাক, আমার অভিমান ভা*ঙা হয়ে গেছে, আপনাকে আর এতো কষ্ট করতে হবে না।
মুহুর্তেই বৃষ্টি নামতে শুরু করেছে। আমি হাত দুটু মেলে দিয়ে উপরের দিকে তাকালাম। বৃষ্টি ফোটা কয়েকটা আমার মুখের উপর ছিটকে পারলো।
তিনি আমাকে তাড়া দিচ্ছে তারাতারি কোথায় গিয়ে বৃষ্টি থেকে বাচার জন্য। কিন্তু আমি জায়গা থেকেও নড়ছিনা। প্রায় কেছুটা ভিজে গেলাম। তখনই সে এসে আমায় কোলে তুলে হাটা শুরু করলো। সামনেই একটা স্কুল। আর রাস্তার পাশে একটা ছাউনি। ওখানে নিয়ে গিয়ে আমাকে ধপাশ করে নামিয়ে দিলো সে। আর বললো,
– তোমাকে দেখতে শুটকি মনে হলেও ওজনে একটা জল জেন্ত বোয়াল।
আমি আমি ভ্রু-কুচকে তাকে বললাম,
– কেলে নিয়ে আবার আপনি কি আমায় অপমান করলেন?
কিন্তু সে আর উত্তর দিলো না। পকেট থেকে রুমাল বের করে আমার হাত ও মুখ মুছে দিতে লাগলো। আমি তার দিকে চেয়ে আছি। অপমান করলেও লোকটা কিন্তু খুব কেয়ারিং।
আকাশে গুরুম গুরুম শব্দ হলো। আমি আচমকাই খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরলাম তাকে। যদিও আমি এসব গুরুম আওয়াজে ভয় পাওয়ার মেয়ে না, তবুও আজ ভয় পাওয়া অভিনয় করতেও ভালো লাগছে আমার।
,
,
সবাই মিলে রাতের খাবার শেষ করে রুমে আসলাম। রিদ ভাইয়া কি জরুরি ফোন এর কথা বলে বাইরে চলে গেলো। এখন প্রায় রাত ১২ টা বাজে। এখনো আসার খবর নেই। আমার বিষণ্ন মন আরো বিষণ্ন হয়ে গেলো। আজকে শেষ দিন টা তার সাথে থাকতে চেয়েছিলাম। তার বুকে মাথা রেখে ঘুমাতে চেয়েছিলাম। আজকের পর তো আর চাইলেও পারবো না। তাকে এভাবে জ্বালাবেও না কেও।
আজ রাতে বোধ হয় ঘুম হবে না আমার। বেলকনিতে বসে আছি চুপচাপ।
,
,
হসিপালে একটা মানুষ রিদকে ধরে অঝরে কাঁদছে। বয়স তার ৩০ কি ৩২ এর মতো হবে। জীবনের ৩০ টা বছর কাটিয়ে দিলো নিজের লাইফ টা গোছাতে। যেন বিয়ের পর সংসারে যেন টান না পরে। স্ত্রীকে যেন ন কষ্ট চোখে না দেখতে হয়। খুব সুখি ছোট্ট একটা সংসার হবে তাদের।
বছর দুয়েক আগে বিয়ে করেছিলো। তাদের এই দুই বছরের সংসার জীবন কতটা সুখের ছিলো তারা নিজেরাই তার শাক্ষি।
আজ সকালে স্ত্রীকে নিয়ে হসপিটালে এসেছে। অন্তঃসত্ত্বা ছিলো তার স্ত্রী। সারাটা দিন স্ত্রীর পাশে বসে কাটিয়ে দিলো সে। আর কিছুক্ষন আগেই তার সব স্বপ্ন হাওয়াই মিঠাইয়ের মতো ছোয়া মাত্রই হারিয়ে গেলো। তার ছেলে বাচলেও স্ত্রীকে বাচাতে পারেনি। তাই তো এতো হাউমাউ করে কান্না।
রিদও চুপচাপ দাড়িয়ে। বার বার চোখের সামনে আরশির মুখটা ভেষে উঠছে। কখনো এ পরিস্থিতিতে সে করলে হয়তো মরেই যাবে।
হসপিটাল থেকে বেড়িয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিলো সে। রাত তখন ৩ টা পেরিয়ে গেলো। আরশিকে খুব দেখতে ইচ্ছে হচ্ছিলো। হয়তো কোনো এক অজানা ভয়, নয়তো মাথার মাঝে ঘুরতে থাকা একটু পাগলামি।
ঘরে এসে রুমে ঢুকতেই দেখে আরশি নেই। বেলকনিতে দাড়িয়ে আছে। রিদ একটু এগিয়ে এসে দেখে আরশি দাড়িয়ে। হাতে থাকা ঘড়ির দিকে তাকালো। তারপর আরশির পাশে গিয়ে দাড়ালো।
– কি ব্যাপার এতো রাত হলো এখনো ঘুমাও নি কেন? রাত জাগা শরিরের জন্য ক্ষতিকর যানো না?
রিদ ভাইয়ার কথায় আমি ঘুরে তার দিকে তাকালাম। সারা রাত পার করে এখন শেষ রাতে আসছে হুকুম দিতে। কেন এসেছে এখন?
আমি তার দিয়ে চেয়ে বললাম,
– কেন এসেছেন এখন? রাত তো শেষই হয়ে গেলো। আর কিছুক্ষন বাইরে থাকতেন। এর পর আমি চলে গেলে তারপর আাসতেন। কেন এসেছেন এখন? আমার কাউকে দরকার নেই। আমি চলে গেলে আর কেও জ্বালাবে না আপনাকে। নিজের মতো থাকতে পারবেন।
কথা গুলো খুব অভিমান নিয়ে বললাম। ইমোশন ধরে রাখতে পারলাম না, চোখ দুটু ভিজে উঠেছে এখনই। ভেবেছিলাম সে আমার চোখ দুটু মুছে দিয়ে বলবে, সরি।
কিন্তু সে তা করলো না। হুট করেই খুব শক্ত করে আমায় জড়িয়ে ধরলো। মনে হচ্ছে এক্ষুনি আমার দম বেড়িয়ে যাবে।
আজ প্রথম ও আমাকে এভাবে জড়িয়ে ধরেছে। খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরে নিশ্চুপ হয়ে আছে। আমি আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলাম না। সব অভিমান দুরে ঠেলে দিয়ে আমিও তাকে জড়িয়ে ধরে এবার কেঁদে দিলাম।
– আমি আপনাকে ছারা থাকতে পারবো না,,,,,
To be continue……