অনুভূতিহীন পর্ব-১৯

0
506

#অনুভূতিহীন (পর্ব ১৯)
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ

এক কাপ চা হাতে আমার পাশে এসে দাড়ালো রিদ ভাই। আমি ফোন রেখে বিষণ্ন মনে ছাদের কর্নিশ ঘেঁষে দাড়িয়ে আছি। চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে রিদ আমায় বললো,
– মুখটা এমন শুকনো দেখাচ্ছে কেন, এ্যানি প্রব্লেম?
আমি গম্ভির মুখে বললাম,
– সাবিহার বিয়ের কথা চলছে।
আমার কথায় ওনি যেন খুব আনন্দ পেয়েছে। হেসে বললো,
– বাহ্ কনগ্রেচুলেশন।
– কনগ্রেচুলেশনের কিছু নেই, সে বিয়েতে রাজি না।
উনি একটু ভ্রু-কুচকে তীক্ষ্ম দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকালেন। হয়তো কারণ টা জানতে আগ্রহি। তার দৃষ্টি বুঝতে পেরে আমি বললাম,
– সে আমাদের এলাকার সাব্বির ভাইকে ভালোবাসে। আর চাচা তাদের সম্পর্ক মেনে নিচ্ছে না। কারণ সাব্বির ভাই বেকার। মাস্টার্স কমপ্লিট করে অনেক দিন ধরে চাকরির খোজ করছে বাট কোথাও চাকরি হচ্ছে না। তাই একটু আগে সাবিহা ফোন দিয়ে কাঁন্নাকাটি করছিলো।
রিদ ভাই আবারও চায়ে চুমুক দিয়ে বললো,
– সে এখন কি চায়?
– সে সাব্বির ভাইকে ছারা আর কাউকে বিয়ে করবে না। আর চাচা বলেছে সাব্বির ভাইয়ের সাথে তার বিয়ে দিবে না৷ কারণ সাব্বির ভাইয়ের কোনো চাকরি নেই।
আমার কথায় তার চোখে মুখে কোনো ভাবান্তর দেখা গেলো না। সে স্বাভাবিক ভাবেই বললো,
– তো তোমার কি উচিৎ না তোমার বান্ধবিকে হেল্প করার? তোমার দুঃসময়ে সে’ই তো তোমার পাশে ছিলো।
আমি মন খারাপ করে বললাম,
– আমি চাই কিছু করতে, বাট কি করবো বুঝতে পারছি না৷
সে চা শেষ করে বললো,
– ছেলেটার নাম কি বললা? ওহ্ হ্যা সাব্বির, তাকে বলো ঢাকায় আসতে, আর বলো বাবার অফিসে একটা সিভি জমা দিতে। বাকি সব বাবাকে বলে রাখবো আমি।
তার একটা কথায় মুহুর্তেই যেন আমার চোখে মুখে আনন্দের ঝিলিক দিয়ে উঠলো। এতো সহজেই একটা পথ পেয়ে যাবো তা আমার ধারণার বাইরে ছিলো।
আমি হাস্যজ্জল মুখে বললাম,
– আচ্ছা আমি আজকেই বলবো।
সে এবার পুরোপুরি আমার দিকে চেয়ে বললো,
– আচ্ছা বিয়ের আগে তুমি এমন কোনো রিলেশনে ছিলো না তো?
তার এমন প্রশ্নে আমার একটু রাগ হলো। একটু রাগি লুক নিয়ে বললো,
– রিলেশনে থাকলে কি আপনাকে বিয়ে করতাম? রিলেশন নিয়ে আমি কখনো ভাবতাম না। আমার একটাই ডিসিশন ছিলো যে আমার কপালে লিখা আছে বিয়ের পর তাকেই শুধু ভালোবাসবো। তাই কখনো রিলেশনে যাওয়া হয়নি।
– আচ্ছা, গুড।
– হুম, ওসব রিলেশনে জড়ালে কোনো কালেই ভালো থাকতে পারতাম না। এখন যেমন আছি ভালোই আছি। আমিও আপনাকে ভালোবাসি আর আপনিও আমাকে ভালোবাসেন। আর কি লাগে বলুন?
মুহুর্তেই ওনার ভাব চেন্জ হয়ে গেলো,
– আমি কখনো বলেছি তোমায় ভালোবাসি?
ওনার কথায় যেন মুখ টা হা হয়ে গেলো আমার, বলে কি এই ছেলে। এই কয়দিনে কম করে হলেও দুই তিন বার বলেছে, আর এখন জায়গায় পল্টি?
আমি আর কিছু বলার আগেই ওনি হাটা ধরলেন। আমি বির বির করে বলতে লাগলাম,
– সালা, তোর তো ডাক্তারি না করে এফ’ডি’সি তে যাওয়া উচিৎ। এতো অভিনয় এফ’ডি’সি তে কাজে লাগালেও এতো দিনে অনেক বড় অভিনেতা হয়ে যাইতি। খবিস একটা।

দুপুরের জন্য রান্না করছিলাম। কাজের মেয়েটা ছুটিতে গেছে। আর মামিকে বললাম আজ আমি রাঁধবো। এবাড়িতে গিয়ে মায়ের কাছ থেকে মোটামুটি রান্না শিখেছি। তখনি তার আগমন ঘটলো। তার দিকে চেয়ে বললাম,
– আজ এতো তারাতারি ফিরেছেন যে?
– জুম্মা শেষে আবার ৩ টায় চলে যাবো।
– আচ্ছা। তো এখানে এসেছেন কেন?
– আমার খুশি,,,
– আচ্ছা তাহলে আমায় হেল্প করুন।
– ওকে ফ্রি যেহেতু আছি তাহলে কা/টা/কা/টির কাজ গুলো আমায় দাও। বাকি গুলো তুমি করো।
ওর কথায় পেয়াজ, রসুন, মরিচ এগুলো তার দিকে এগিয়ে দিলাম। সে কাটছে আমি বললাম,
– সাবিহাকে বলেছি সব। জানেন ও খুব খুশি হয়েছিলো। সাব্বির ভাই হয়তো কালকে বা পরশু ঢাকায় আসবে।

বলেই আমি রান্নায় মন দিলাম। তার দিকে চেয়ে দেখি, বেচারা একটা পেয়াজ কে/টে শেষ করতে পারেনি তার আগেই কেঁদে দিয়ে দিবে ভাব। কা/টছে আর হাত দিয়ে চোখের পানি মুছছে এতে আরো ঝাঁঝ লাগছে, সব মিলিয়ে একটা নাজেহাল অবস্থা। আমি তার থেকে ছু/রি আর এগুলো নিয়ে বললাম,
– হয়েছে লাগবে না আর হেল্প করা৷ গাধা দিয়ে কখনো হাল চাষ হয় না। এটা আপনার অপারেশনের কোনো রোগী না, যে কাটবেন আর সেলাই করবেন। ওয়াশ রুমে গিয়ে কতোক্ষন চোখে পানি ছিটিয়ে নেন।
,
,
পরদিন সকাল পেড়িয়ে দুপুর হবে হবে ভাব। ঘড়ির কাটা তখন ১২ টা ছুই ছুই। সূর্যি মামার দেখা আজ আর মিলেনি। বর্ষার শেষের দিকে। আকাশ মেঘলা হয়ে বৃষ্টি বর্ষন হচ্ছে। বেলকনিতে দাড়িয়ে হাত দুটু বাইরে দিয়ে বৃষ্টিকে ছুয়ে দিচ্ছি আমি। মাঝে মাঝে ভালোই লাগে এসব ছোট খাটো পাগলামি গুলো। তখনি বাড়ি ফিরলো সে। চুল গুলো ভেজা। শরিরের অনেক অংশেই বৃষ্টি ফোটা পরে ভিজে গেছে। তার হাত টা ধরে আমি বললাম,
– চলুন,,
– কোথায়?
– আজ আবারও দুজন মিলে বৃষ্টিতে ভিজবো।
– পাগল হলে তুমি? কিসব বাচ্চাদের মতো শুরু করলে?
– কেন আপনি নিজেই তো বলেন, আমি বাচ্চা। তাহলে বাচ্চামি করলে দোষ ধরেন কেন?
– দোষ ধরলাম কখন? আমি বলছি ভিজলে জ্বর আসবে,,
ওনি আর কিছু বলার আগেই আমি এক আঙুল তার ঠোঁটে চেপে ধরে তাকে চুপ করিয়ে বললাম,
– কোনো কথা না। আপনার ওসব জ্ঞান আজ কানে ঢুকবে না আমার। বর্ষা শেষের দিকে। আর কয়দিন পর চাইলেও এখাবে বৃষ্টিতে ভিজতে পারবো না। আপনি না চাইলেও আজ আমার সাথে ভিজতে হবে। এক সাথে ভিজবো দুজন।
তাকে আর কিছু বলতে না দিয়েই তার হাত ধরে ছাদের দিকে হাটা ধরলাম আমি। বেটা যাবি না মানে, প্রয়োজনে ফ্লোরে ফেলে পা দুটু ধরে টেনে টেনে নিয়ে যাবো। তবুও ভিজতে হবে আজ।
,
,
আজ সাব্বির ভাই আসলো ঢাকায়। মামার অফিসে সিভি জামা দিলো। রিদ ভাই মামাকে আগেই বলে রেখেছে সব। তাই আর এতো কিছু প্রয়োজন হয় নি।
রিদ ভাইয়ের সাথে আমাদের বাসায় নিয়ে এলো তাকে। দুপুরে খেয়ে বিকেলে রওনা দিবে কুমিল্লার উদ্দেশ্যে। এর পর ওখানে সাবিহার বাবার কাছে তার বাবা মাকে পাঠিয়ে কথা বার্তা এগিয়ে রেখে কয়দিন পরই চাকরিতে জয়েন করবে।

রাত আট টার পর বাসায় ফিরলো রিদ ভাই। সাধারণত দশ টার পর খাওয়া দাওয়া করে ঘুমাই আমরা।
ফ্রেশ হয়ে রুমে বসে কলম হাতে সামনে একটা বই নিয়ে কি যেন করছে। আমি তার কাছে গিয়ে সামনে থেকে বইটা সরিয়ে তার কোলে উঠে বসে গেলাম। আমার কাজে হয়তো একটু অবাক হয়েছে সে। আমি ওসব না ভেবে তাকে বললাম,
– থ্যাংক ইউ,
– কেন?
– এই যে আপনার জন্য সাবিহার স্বপ্নটা পুরণ হবে।
– তুমি খুশি?
– হুম খুব খুশি। যার কারনে আপনাকে একটা জিনিস দিবো আমি।
– কি?
– চোখ বন্ধ করেন।
– কেন?
– ওফ, করেন না,,,,
– আচ্ছা করলাম, কি দিবে দাও।
আমি একটু হেসে এক হাতে তার চোখ দুটু ধরে ছোট্ট করে একটা চুমু এঁকে দিলাম তার ঠোঁটে। সে কিছু বুঝে উঠার আগেই দৌড়ে রুম থেকে বেড়িয়ে গেলাম আমি। এক দৌড়ে মামির কাছে চলে এলাম। এসেই মুখে হাত দিয়ে হেসে দিলাম আমি।

রাতে সাবিহাকে ফোন দিলাম। মেয়েটার মনে খুব আনন্দ দেখছি আজকাল। তার সাথে কথা বলে মনেই হয় না সে এতো দিন কষ্টে ছিলো। এটা তার প্রাপ্তির আনন্দ। ফোনের মাঝে খুব হেসে হেসে কথা বলছে মেয়েটা। আজ খুব হাসি খুশি সে।
,
,
দুই দিন পর। ফেসবুকে আজ কাল তেমন একটা ঢুকা হয় না। ফ্রি সময়ে একটু ফোন হাতে ফেসবুকে প্রবেশ করলাম। কুমিল্লার কিছু বড় ভাইয়ের সাথে এড আছে ফেসবুকে।
ওখান থেকে এক বড় ভাইয়ের আইডিতে একটা পোষ্ট দেখে মাথা টা ঘুরতে লাগলো আমার। সারা শরির কাঁপছে। একপাশে একটা গলা কা/টা মেয়ের লা/শ পরে আছে, আর অন্য পাশে সাবিহার একটা ছবি।
ফোন টা হাত থেকে পরে গেলো আমার। খুব কান্না পাচ্ছে। সাথে সারা শরির কাঁপছে এক মুহুর্তের জন্য যেনো নিজের হুশ টা হারিয়ে গেছে আমার।
আমার এমন অবস্থা দেখে রিদ ভাই এগিয়ে এসে আমার পাশে বসে কিছু জিজ্ঞেস করলো। কিছুই আমি শুনতে পারছি না। রিদ ভাই কে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে উঠলাম আমি।

To be continue…….