#মন_পিঞ্জর
#লেখিকা_আরোহী_নুর
#পর্ব_৩০
একাকিত্বে অনেক ভাবনাই কাজ করছে আয়ানের ভিতর,যা বেদনার সৃষ্টি করছে মন পিঞ্জরায়।নিজের করা ভুলগুলো যেনো অনেকাংশে ধরা দিচ্ছে মনে।
কেনো মাহি এমন করলো ওর সাথে,কেনো বাচ্চাটাকে মেরে ফেললো,কি দোষ ছিলো ওই নিষ্পাপ প্রাণের,তবে আয়ানও যে একদিন ঠিক একই কাজ করেছিলো,সেদিন তো আঁখিও বাচ্চা নিতে চেয়েছিলো আর আয়ান ওকে সেই নিষ্পাপ প্রাণকে মেরে ফেলতে বাধ্য করেছিলো,তবে কি সেদিন আঁখিরও এমন কষ্ট হচ্ছিলো?কিন্তু আয়ান তো তখন নিজের কেরিয়ারের জন্য এমনটা করেছিলো,তা কি খুব বড় ভুল ছিলো,সেটা যদি ভুল না হয় তবে তো মাহির করা কাজটাও ভুল না,ও ওতো নিজের কেরিয়ার,নিজের ফিটনেস, অনেককিছুই ভেবেই বাচ্চা নেয় নি যার পিছন ওর যথেষ্ট যুক্তি আছে, তবে কি নিজেদের জন্য অপরের মনের কষ্টানুভুতি অদেখা করা সত্যিই যুক্তিযুক্ত,কিন্তু সে জিনিসটা যে নিজের ক্ষেত্রে মোটেও মেনে নিতে সক্ষম হচ্ছি না আয়ান।আঁখি পাশে থাকলে কি খুব বড় ক্ষতি হয়ে যেতো ওর,নিজেই ওকে সরিয়ে দিলো, মনটা যে ভরে উঠেছিলো আঁখির উপর থেকে, তবে আজ কেনো বার বার ওর ধিদ্বার করতে চাইছে আয়ানের অবাধ্য মন তা বুঝতে ব্যার্থ হচ্ছে আয়ান,একাকিত্বে বসে এসব কথা আনমনে ভেবে যাচ্ছে।
কেনো বলবি না উনাকে কোনোদিন?ভ্রুযোগল কুঁচকে বললো আঁখি।
দেখ আমি উনার ঘরের সামান্য কেয়ারটেকার মাত্র,তাছাড়া আমার মনে হয় উনার জীবনে অন্য কেউ আছে,সব মিলিয়ে আমার মনের কথা উনাকে বলার প্রশ্নই উঠে না,এই সুপ্ত অনুভুতি থাক না অজানা দোষ কি তাতে?
দেখ আয়েশা তোর বেস্ট ফ্রেন্ড হিসেবে আমি তোকে একটা কথাই বলতে পারি,নোমান সাহেবের মতো লোক কারো সাথে কোনো সম্পর্ক রাখতে স্ট্যাটাস খুঁজবেন না অন্ততো,আর যেখানে কথা উনার জীবনে অন্য মেয়ে নিয়ে এটা তো তুই উনাকে তোর মনের কথা জানানোর আগে জিজ্ঞেস করলে পারিস,এমনও তো হতে পারে উনার জীবনে অন্য কেউ নেই,দেখ সময় থাকতে মনের কথা বলে দে নইলে পড়ে অনেক দেড়িও হয়ে যেতে পারে।ভালোবাসা তো আর পাপ না,পরে না আবার তোকে কষ্ট পেতে হয়।
না রে যদি আমি কথাটা উনাকে বলি আর উনি আমায় ভুল বুঝেন,পরে বর্তমানে যে সম্পর্কটা আমাদের মধ্যে আছে ওটাও না নষ্ট হয়ে যায়,তার থেকে এখন যেমন আছি তেমন ভালো।
হুম দেখ তোর যা ইচ্ছে কর, আমি তোর সাথে আছি।
এদিকে আদৃত আঁখিকে খুঁজে খুঁজে পাগল।হঠাৎ খুঁজে পেলো আঁখিকে।
এই যে আপনাকে খুঁজে পাওয়া যায় না কেনো? কোথায় থাকেন?চলেন আমার সাথে।হাসপাতাল যাবো।
আমি আপনার সাথে কোথাও যাবো না,এখন ভার্সিটি টাইম না সো আপনার সাথে এখন ওখানে যাওয়ার প্রশ্নই উঠে না?
দেখেন আপনি যাবেন না কি,আমি শেষবার জিজ্ঞেস করছি।
যাবো না আমিও শেষবার বলছি।
ঠিক আছে।
একি করছেন ছাড়েন আমায়,ছাড়েন।
ভালোয় ভালোয় হাত ধরে নিয়ে যাচ্ছি বেশি জেদ করলে সবার সামনে কোলে উঠিয়ে নিয়ে যাবো পরে আবার আমায় দোষারোপ করবেন না যে ওয়ার্ন করি নি।
আপনি মোটেও সুবিধার লোক না।
ও আমি জানি আমি কেমন আপনাকে সে নিয়ে ভাবতে হবে না।এবার চলেন।
আদৃত আঁখিকে নিয়ে এলো হাসপাতালে, তারপর ওর বিভিন্ন টেস্ট করালো,আঁখি মুখ ফুলিয়ে বসে আছে।
দেখেন মি.আদৃত আপনি জোর করে তো আমায় আর বাঁচিয়ে তুলতে পারবেন না,আগের রিপোর্টগুলো তো আছে আবার নতুন করে টেস্টের কি দরকার,সে রিপোর্ট অনুযায়ী তো আমি ওষুধ সেবন করছি।
দেখেন ডাক্তারি পড়ছেন এখনও ডাক্তার হন নি তাই আমার কাজে নাক গলাতে আসবেন না।
ইতিমধ্যে রিপোর্ট আসলো, আদৃত রিপোর্টগুলো দেখে চিন্তামগ্ন হলো অনেক।আঁখি ভ্রুযোগল কুঁচকে তাকিয়ে আছে ওর পানে।
এই যে ডাক্তার সাহেব কি দেখলেন,সেই ৩০% থেকে কম তাই না,শুধু শুধু ডাক্তারি ঝেড়ে কি লাভ হলো,হা হা হা হা।
একদম চুপ,ফাজলামোর সীমা থাকে মিস আঁখি,কি এতো চিন্তা আপনার?আপনার চিন্তার কারনে আপনার অবস্থার উন্নতি হচ্ছে না,মানুষকে জ্ঞান দেওয়া ক্ষেত্রে ঠিক আছে নিজের ক্ষেত্রে খাপছাড়াগিরি না করে থাকতে পারেন না,না কি?
আপনার সাহস হয় কি করে আমাকে ধমক দেওয়ার?আমি মরে গেলে আপনার কি?লোকে সত্যিই বলে যার বিয়ে তার খবর নাই আর পাড়া পড়শির ঘুম নাই।
খবরদার যদি আবার মরার কথা বলেছেন তো,খুব সহজ না আপনার জন্য এসব।আপনি কি মনে করেন আমি আপনাকে মরতে দিবো,আরও একবার যদি মরার কথা বলেছেন না তবে আমি কি করবো আমি নিজেও জানি না,চুপচাপ চলেন ক্লাসের সময় হয়েছে আপনার।
আদৃত আঁখিকে আবার হাত ধরে নিয়ে যেতে শুরু করলো,আঁখি হতবাক আদৃতের এমন প্রতিক্রিয়ায়,ওর সামান্য মরার কথা বলায় আদৃত এতো ক্ষেপে যাবে ভাবে নি,আঁখির এক মুহুর্তের জন্য মনে হলো যেনো কথাটা আদৃতের ঠিক বুকে প্রহার করেছে, নিজের জন্য একরাশ দুঃশ্চিন্তা আন্দাজ করতে পারলো আঁখি আদৃতের চোখে।
____________________
আয়ান আজ হাসপাতালে এসেছে,আজ কাজের বাহানায় এলেও আয়ানের চোখ শুধু আঁখিকেই খুঁজছে,পুরো ক্লাসে পড়ানোর ফাঁকে ফাঁকে আঁখিকেই দেখছিলো কিন্তু আঁখি একবারের জন্যও ওর দিকে তাকায় না যা আয়ানের মনে আঘাত করে প্রচন্ডভাবে,আজ যেনো আঁখির ওর দিকে এক পলক তাকানোইটা ওর জন্য বিশ্ব জ্বয়ের খুশি এনে দিবে,মনের মধ্যে আজ আর অন্য কোনো চাহনি নেই শুধু চায় আঁখির অল্প সঙ্গ,আঁখি ওর পাশে থাকুক ওর একাকিত্ব দূর করে দিক কিন্তু তা কি আর আদোও সম্ভব।
আয়ান সারাদিন থেকে আঁখির আশপাশ ঘুরছে তবে ওর সাথে কথা বলার হয়তো সাহস নেই,এমনও হতে পারে কথা বলার যথেষ্ট কারনও খুঁজে পাচ্ছে না,তাই শুধু ওকে দেখেই যাচ্ছে,আঁখি ওকে দেখেও যথারীতি না দেখার ভাব করলো।আয়ানও বুঝতে পারলো বিষয়টা যা ওর মনে ব্যাথার্থ অনুভুতির পরিমাণ আরও বাড়িয়ে দিলো, পরিণামস্বরুপ আয়ানের চোখ বেয়ে জল গড়াতে শুরু করলো,আয়ান যে বড্ড একা,এই একাকিত্ব একমাত্র আঁখিই দূর করতে পারবে সে আশায় ওকে পাশে চেয়েছিলো কিন্তু আঁখি হয়তো তা করতে নারায,আঁখি যে আজ সত্যিই আয়ান থেকে অনেক দূরে তিক্ত এই সত্যটা বড্ড জ্বালাতন করছে আয়ানকে,সত্যটা মেনে নিতে না পেরে চোখের জল মুছতে ব্যস্ত হয়ে হাসপাতালের পিছনের বিস্তর মাঠটার দিকে এগিয়ে গেলো,সেখানের পাতা বহুল হাত পা ছাড়িয়ে বেড়ে উঠা বড় বটগাছটার নিচে আয়ান বসে পড়লো আর মনে করা শুরু করলো আঁখির সাথে কাটানো সুন্দর স্মৃতিগুলো।আয়ানের ব্যাথার্থ অনুভুতি আঁখির চোখ এড়ালো না,ওর কান্না স্পষ্ট দেখতে পেলো আঁখি যার ফলস্বরূপ আঁখিরও একটু খারাপ লাগলো ওর জন্য,কারন আঁখি মাহির ব্যক্তিত্ব সম্পর্কে ভালোই জানে,আয়ানকে যে মাহি কখনোই ভালো রাখবে না তা খুব ভালোই জানতো আঁখি,কিছু একটা ভেবে আঁখি গেলো আয়ানের পিছন,এদিকে আদৃত আঁখিকে চোখে চোখে রাখছে তাই উক্ত বিষয় চোখে পড়লো আদৃতের,আঁখি মাঠটার দিকে গেলে আয়ান আঁখিকে দেখতে পেলো, আঁখিকে দেখে ওর মনের কোনে আশার একটা প্রদিপ যেনো অল্পতে জ্বলে উঠলো,ঠোঁটের কোনে ফুঁটে উঠলো আলতো হাসি।কিন্তু সেই হাসি নিমিষেই বিলুপ্তি পেলো আদৃতের আগমনে,আঁখি আয়ানের দিকে এগিয়ে আসতে নিলেই আদৃত এসে খপ করে ওর হাত ধরে নিলো।
এখানে কি করছেন মিস আঁখি আপনি?
ওই আসলে ড.আয়ান।
ড.আয়ান কি মিস আঁখি?আপনি এখানে শুধু একজন স্টুডেন্ট তাই ড.আয়ানের জন্য আলাদা কোনো সহানুভূতি দেখানো আপনাকে শোভা দেয় না আর উনার সাথে আপনার কোনো কাজ আছে বলে আমার মনে হয় না,চলেন।
আদৃত আঁখিকে হাত ধরে নিয়ে যেতে নিলো,আঁখি এবার বেশ গম্ভীর স্বরে বললো।
আপনি একটু বেশি পজেজিব হচ্ছেন না আমাকে নি,আমি কিন্তু আপনারও স্টুডেন্ট মাত্র।
না আপনি শুধু আমার স্টুডেন্ট না,আপনি আমার দায়িত্ব,আর এখন আমার পেশেন্টও, আপনি যখন আমাকে ভালো রাখতে আমার ব্যক্তিগত জীবনে হস্তক্ষেপ করতে পারেন তখন আমারও অধিকার আছে আপনাকে ভালো রাখতে আপনার ব্যক্তিগত জীবনে হস্তক্ষেপ করার।আপনার সব চিন্তার কারন ওই আয়ান যার ফলস্বরূপ আপনার ওর কাছে যাওয়া বিপদজনক, আর আমি আমার পেশেন্টকে এমন কিছু করতে দিতে পারি না যা উনার স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।
রাত হয়ে গেছে আয়ান বসে আছে একা,জীবনে আর যেনো কোনো স্বাদ নেই ওর,সব কিছু যেনো বিস্বাদময়,আঁখি পাশে ছিলো সময় কতো সুন্দর ছিলো জীবনটা,মা বোন আর আঁখিকে নিয়ে সবকিছুই একদম পরিপূর্ণ ছিলো ওর,কিন্তু তার থেকে বেশি কিছু পেতে গিয়ে কি আয়ান সবকিছু হারিয়ে ফেললো,আয়ান তো আধুনিক, স্মার্ট, আর যথেষ্ট উচ্চ স্ট্যাটাস সম্পন্ন বউ চেয়েছিলো যার আঁখির মধ্যে বিলুপ্তি পেলে ওকে ছেড়ে দিলো কিন্তু মাহির মধ্যে তো এসব কিছু পুরোপুরিভাবে বিদ্যমান তবে কেনো আজ মাহিকে আর ভালো লাগছে না?মন কেনো আঁখিকে খুঁজছে?আজ যখন আদৃত আঁখির হাত ধরে নিয়ে যাচ্ছিলো তখন আয়ানের মনে কি ঝড় উঠেছিলো তা শুধু ওরই জানা আছে,আঁখি তো এখন আদৃতের স্ত্রী, তবে এতেও কেনো এখন খারাপ লাগবে আয়ানের,ঠিকই তো বলেছিলো আঁখি আয়ান বিয়ে করেছে, আঁখিরও কি অধিকার নেই বিয়ে করার?সংসার করার?জীবনে এগিয়ে যাওয়ার?পারছে না আর ভাবতে আয়ান,সব চিন্তা কেমন মিলিয়ে যাচ্ছে, কোনো কিছুরই সমাধান খুঁজে পাচ্ছে না তাই মনের শান্তির লোভে আজকেও মদ্যের বোতলকে সাথি বানালো,ছাঁদের প্রান্তে বসে একের পর এক গ্লাস খালি করছে আর আঁখির কথাই ভাবছে।
এদিকে আঁখি আজ বড়ই বিরক্ত আদৃত নামক যুবকের প্রতি, সকাল থেকে যা তা করছে, আঁখি যেনো কোনো ছয় মাসের বাচ্চা,এমন অবস্থা করছে যেনো ও আজকেই মারা যাবে,খেয়ে এসেছে আঁখি ভেবেছিলো পড়ালেখা শেষ এবার বসে একটু টেলিভিশন দেখবে নয়তো ফোন ঘাটবে কিন্তু এসব কোথায় হতে দিলো আদৃত, এনে দিলো ওকে এক রাশি ওষুধ খেতে বললো ওকে আঁখিও ভালো মেয়ের মতো খেয়ে নিলো সব,এবার টিভি দেখতে গেলে ওকে তা দেখতে দিলো না ওর নাকি প্রোপার রেস্ট প্রয়োজন,আঁখি না মানলে টিভির পিছনের লাইনটাই ছিড়ে দিলো,আঁখি ফোন ঘাটতে নিলে ফোনটাও নিয়ে নিলো,আঁখি রেগে বাইরে চলে যেতে নিলে ওকে জোর করে কোলে নিয়ে এনে বেডে বসিয়ে দিলো আঁখি এবার অতিরিক্ত রাগে আদৃতের বুকে এলোপাতাড়ি কিল-ঘুষি মারতে লাগলো আদৃত ঠায় দাঁড়িয়ে আছে যেনো এতে ওর কোনো যায় আসে না।
আপনি আমার সাথে ফাইট করেন,আমাকে গালি দেন মারেন কিন্তু নিজের খেয়াল রাখেন,একটু ডিসিপ্লিন আপনাকে জীবন দান করতে পারে মিস.আঁখি।
দেখেন ড.আয়ান আমার এভাবে বন্ধি লাগছে,আমি মুক্ত পাখির ন্যায় উড়তে চাই, জীবনটা কতো সুন্দর আমি তা উপভোগ করতে চাই,এভাবে ডিসিপ্লিন মানতে গিয়ে যদি মৃত্যুর দিন টা এসে যায় তবে মরনটাকে যে বড্ড আফসোসের সাথে মেনে নিতে হবে আমায়।
স্টপ ইট মিস আঁখি,আপনার মতো মেয়ে কোনো কিছুর কাছে এভাবে হার মেনে যাবে ভেবেই আমার অনর্থক লাগছে কথাটা, আপনি একজন সংগ্রামী ব্যক্তিত্ব,যে সমাজের হাজারজন লোকের প্রতিবাদে একাই একশো সেই মেয়ে একটা ছোট্ট রোগের কাছে এভাবে হার মেনে যাবে তা শুনলে সত্যিই হাস্যকর লাগে,আপনাকে বাঁচতে হবে মিস আঁখি,নিজের জন্য,আয়েশা, মিরা আন্টি আর তাজবীরের জন্য,আমাদের সবার জন্য।
সেই আমাদের মধ্যে কি আপনিও আছেন ড.আদৃত?
আদৃত সহানুভূতিময় ছোঁয়ায় আঁখির গালে হাত রেখে কথাগুলো বললে আঁখিও যেনো আদৃতের কথায় হারিয়ে যায় অল্পতেই,ঘোরের ঘরে বোকার ন্যায় প্রশ্নটা করে বসে আদৃতকে,যার ফলস্বরূপ দুজনই খানিকক্ষণ চুপচাপ থাকে একে অপরের পানে তাকিয়ে অতপর পরিস্থিতির বেগ মাথায় গেলে দুজনই নিজেদেরকে স্বাভাবিক করে নেয়।আঁখি আর কিছু না বলে শুয়ে পড়ে।
_____________________
চৌধুরী বাড়িতে পড়েছে ভ্রুমনে যাওয়ার হৈচৈ, প্রতিবছর ওরা কোথাও না কোথাও ভ্রুমনে যায়,বেশিরভাগ দেশের বাইরে ঘুরতে যায় তবে এবার দেশের ভিতরই কোথাও যাবে,জায়গা সিলেক্ট করা হলো রাঙামাটি, সায়েদা তো নেচে পাগল,আয়েশা একসাইড হয়ে দাঁড়িয়ে আছে তখনি নোমান এসে বললো।
কি মিস আয়েশা ভ্রুমনের নাম শুনে মুখটা ফ্যাকাশে হলো কেনো আপনার? জায়গা পছন্দ হয় নি বুঝি?
আসলে তা না,আপনারা ভ্রুমনে যাবেন, আপনাদের পছন্দ হতে হবে আমার পছন্দ দিয়ে কি হবে এখানে? তাছাড়া রাঙামাটি জায়গাটা আমারও খুব পছন্দ।
আরে বলেন কি আপনি? আমরা যাবো মানে?আমরা পুরো ফ্যামিলি যাবো যেখানে আপনি আন্টি আর আঁখিও আছেন।
আরে না না, তা কি করে হয়?আপনার মন বড় এজন্য এমনটা বলছেন,আপনাদের ফ্যামিলি ট্রিপে আমাদের নাম আসবে কেনো?
পর করে দিলেন তো,সত্যিই আপনার কথায় অনেক কষ্ট পেলাম আজ, আমি বা আমার পরিবার কখনোই আপনাদের পর কেউ ভাবি নি,যদি আপনারা না যান আমিও কিন্তু যাবো না এই বলে দিলাম।
নোমানের কথার উপর আর না করতে পারলো না আয়েশা রাজি হয়ে গেলো,এদিকে আঁখি জানতে পেরেছে আদৃত কখনো এসব ফ্যামিলি ভ্রুমনে পার্ট নেয় না কাজ নিয়ে পড়ে থাকে,অন্য সময় হলে আঁখি ওকে টেনেটুনে ভ্রুমনে পাঠাতো একটু ভালো থাকার উপায় হিসেবে কিন্তু এখন আঁখির অন্য ফন্দি, আদৃতের হাত থেকে দু-তিনদিনের জন্য বাঁচতে আঁখি ফন্দি করলো সবার সাথে ভ্রুমনে চলে যাবে যা আন্দাজে গেলো আদৃতের,তাই সবাইকে অবাক করে দিয়ে আদৃত বললো।
আমি এবার সবার সাথে ভ্রুমনে যাবো,হাসপাতাল থেকে ছুটি আমি নিয়ে নিয়েছি,আর ভ্রুমনের সব দায়িত্বও আমিই নিলাম।
সবাই আদৃতের কথা শুনে অবাক হবার সাথে সাথে অনেক খুশিও হলো,এদিকে আদৃত ঠোঁটের কোনে ডেবিল স্মাইল টাঙিয়ে তাকিয়ে আছে আঁখির পানে।
কি মনে করেছিলেন মিস আঁখি পালিয়ে বাঁচবেন?আপনার জেদ সম্পর্কে ভালোই জানা আছে আমার,আর আপনি জেদি হলেও আমিও কিছু কম নয়।
মনে মনে বললো আদৃত।
উল্লুকটাকে যে কোন মাটি দিয়ে বানানো হয়েছে একমাত্র আল্লাহ জানেন,বাঁচানোর নামে মারতে লেগে গেছে আমায়,সুযোগ বুঝে এর মাথায় কয়েকটা কাচের বোতল ফাঁটিয়ে দিতে ইচ্ছে হচ্ছে আমার বড্ড।
পরশু সবাই ভ্রুমনে যাবে ডেইট ফিক্স হলো।
এদিকে সায়েদা লুকিয়ে কারো সাথে ফোনে কথা বলছে।
কি রে তোদের যে কাজ দিয়েছিলাম তা হয়েছে?
হ্যাঁ হয়েছে,ব্যাটাকে এমনভাবে মেরেছি যে এখন হাসপাতালের বেডে পড়ে আছে,বাঁচবে কি না সন্দেহ।
হোয়াট,এটা কি করলি তোরা? আমি তো শুধু উনাকে একটু ধমকাতে বলেছিলাম যাতে আমার সাথে আর না লাগেন। তোরা উনাকে মারলি কেনো?এখন কি অবস্থা উনার?কোন হাসপাতালে আছেন উনি?
দেখ তোর কথামতো কাজ করেছি আমরা,তোর বন্ধু হবার দায়িত্ব পালন করেছি,এমন মার দিয়েছে বাঁছাকে মনে হয় বেঁচে গেলেও আর হাঁটতে পারবে না,অবস্থা খারাপ,আমরা হাসাপাতালের ঠিকানা পাঠাচ্ছি মেসেজ করে চলে আয়।………..
ফোনটা রেখে দিলো।
এ কি করলাম আমি,আমি তো এমন কিছু চাই নি,তাজবীর সাহেবের কিছু হয়ে গেলে কি করে ক্ষমা করবো নিজেকে।
সায়েদা ছুটে চলে গেলো বাইরের দিকে।
চলবে……………
#মন_পিঞ্জর
#লেখিকা_আরোহী_নুর
#পর্ব_৩১
আয়ান নিজের লাগানো লোক লাগিয়ে জানতে সক্ষম হয়েছে যে আঁখি আদৃত ভ্রমণে যাচ্ছে এমনকি ওদের পরিবারের সবাইও,কথাটা শুনেই ওর গা জ্বলে উঠলো।
ভ্রমণে যাওয়া হচ্ছে,ছাড়বো না আমি ওই আদৃতকে,আঁখিকে বিয়ে করার সাহস আসলো কোথা থেকে ওর,আর এখন ওকে নিয়ে ভ্রমণ যাওয়া,রাঙামাটি যাওয়া হচ্ছে তাই না।দেখে নিবো।
দেখেন ড.আদৃত একটু বেশি হয়ে যাচ্ছে না এবার,আমি তো সব নিয়ম মেনে চলছি কিন্তু আপনি একটু বেশিই করছেন,সারাদিন রুটিন মেনে চলতে হচ্ছে আমায়,খেতে গেলে নিয়ম শুতে গেলে নিয়ম, এমনটা মনে হচ্ছে আমি যেনো আপনার পোষা প্রাণী,আরে বাবা এতো নিয়মের কি আছে,আমার আয়ু যতটুকু আছে ততোটুকু নিয়ে তো বাঁচবো, তাই না।
খাবার আর ওষুধ খেয়ে আঁখি আয়েশার সাথে আড্ডা দিতে যেতে চাইলে আঁখিকে রেস্ট করানের সুবিধার্তে আদৃত রুমে নিয়ে যাচ্ছিলো আর রিরক্ত হয়ে আঁখি এসব কথা বলছিলো তৎক্ষনাৎ ওর মাথা ঘুরলো অনেকটা বেশি, যাতে আঁখি সাথে সাথে পড়তে নিলো,আদৃত যেহেতু ওর হাত ধরা ছিলো তাই আর ও ওকে পড়তে দিলো না,কোলে তুলে নিলো তৎক্ষনাৎ তারপর রুমে নিয়ে গিয়ে বিছানায় শুয়ালো।আঁখি ভালো করে তাকাতেও পারছে না।
এখন কোথায় গেলো আপনার তেজ?কি হয়ে যাবে আপনার নিজের একটু বেশি খেয়াল রাখলে,হ্যাঁ আয়ু তো আল্লাহ প্রদত্ত,কিন্তু তাই বলে কি বাঁচার চেষ্টা ছেঁড়ে দিতে হবে?এমনটা হলো তো আর পৃথিবীতে হাসপাতাল থাকতো না,ডাক্তার থাকতো না,আমাদের সবাইকে আমাদের কাজ করা উচিৎ বাকিটা আল্লাহর হাতে,এবার চুপচাপ শুয়ে থাকেন,মাথা নাড়াবেন না,আপনার দুঃশ্চিতার কারনে টিউমারটার ভয়াবহতা বাড়ছে,তাই আপনার ঘন ঘন মাথা ঘুরছে, খুব জলদি আপনার ওপারেশন করতে হবে কিন্তু এর আগে আপনাকে এই অপারেশনের জন্য প্রস্তুত হতে হবে যার জন্য আপনার বাঁচার পার্সেন্টেজ মাস্ট বি ৪০% এর উপর হতে হবে আর তাই এতো নিয়ম বুঝেছেন।এবার রেস্ট করেন।
সায়েদা ছুঁটে যায় হাসপাতালে, কেবিনে ঢুকে দেখে তাজবীর শুয়ে আছে হাতে পায়ে ব্যান্ডেজ করা,ওকে দেখে ডাক্তার বললেন রোগী আর বাঁচবে না,তাজবীর অজ্ঞান অবস্থায় পড়ে আছে,সায়েদা এবার অতিরিক্ত ভয় আর অনুশোচনায় কাঁদতে লাগলো, তাজবীরের পাশে বসে বেশ শব্দ করেই কাঁদছে আর বলছে।
তাজবীর সাহেব,ও তাজবীর সাহেব উঠেন না,প্লিজ আপনি মরবেন না,আমি চাই নি আপনি মরে যান,প্লিজ আমায় ক্ষমা করে দিন,আপনি মারা যাবেন না।
সায়েদা কাঁদতে কাঁদতে বেহাল দশা বানিয়ে ফেলছে,তাজবীরের হাত ধরে ধরে কাঁদছে,এবার আবার হাসতে হাসতে উঠে পড়লো তাজবীর, অবিরত হেসেই যাচ্ছে,হাসতে হাসতে নিজের শরীরের সব বেন্ডেজ খুলে খাঁড়া হলো সায়েদার সামনে, সায়েদা ভ্যাবাচ্যাকা হয়ে তাকিয়ে আছে ওর পানে,এবার তাজবীর ওর হাত ধরে ওকে টেনে নিয়ে গেলো পাশের কেবিনে,সেখানের তিন সিটে ওর তিন বন্ধু ভর্তি,হাতে পায়ে তিনজনেরই ব্যান্ডেজ,সায়েদা ছুঁটে গেলো ওদের কাছে।
তোদের এ হাল কে করলো?কি করে হলো এসব?সায়েদা তাকালো তাজবীরের পানে প্রশ্নসুচক চাহনিতে।
কি হলো সায়েদা?ভেবে পাচ্ছো না কি হয়েছে?আরে এমনি কি আর টিউবলাইট বলি,তুমি একবারও ভাবো নি বাবা আঁখিকে কারাতে শিখিয়েছে আমাকে শেখাবে না এমন হতে পারে।তাছাড়া এই বডিশডি তো আর আমি এমনি এমনি বানিয়েছি না যে তোমার ওই মশার ন্যায় হেংলা তিনটা ফ্রেন্ডকে উড়াতে পারবো না,হা হা হা,আমার সাথে টক্কর নিতে এসো না কারন আমার সাথে টক্কর দেওয়ার মতো ক্ষমতা তোমার নেই মিস টিউবলাইট। তাছাড়া মারা যাবেন না মারা যাবেন না বলে কাউকে বাঁচানো যায় না,চিকিৎসা করতে হয় নয়তো করাতে হয়,ডাক্তার হবেন সো এসব শিখে নিবেন।হা হা হা হা
তাজবীর হাসতে হাসতে চলে গেলো,আর সায়েদা হতবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো ওর যাওয়ার পানে,ওর বন্ধুদের জিজ্ঞেস করলে ওরা বললো তাজবীর ওদের মেরে এখানে ভর্তি করিয়েছে তারপর ওদের দিয়ে কল করিয়ে সায়েদাকে আনিয়েছে।সায়েদা এবার মনে মনে আবারও কঠিন একটা পণে আবদ্ধ হলো।
আবারও আমায় ভ্যঙ্গ করে গেছে,উল্লুকটাকে উপযুক্ত জবাব তো আমি দিবো,তা না হলে আমার নামও সায়েদা না।
শুরু হলো রাঙামাটির সফর,আদৃত আর নোমান প্লেনে আসতে চাইলেও বাকি সবাই বাই রোড আসতে চাইলো,সে হিসেবে বাই রোডেই চলেছে সবাই,বড়রা সব এক গাড়িতে আর ছোটরা এক গাড়িতে,আদৃত ড্রাইব করছে সাথে সায়েদা বসে আছে আর পিছনে আয়েশা আর নোমান পাশাপাশি বসে আছে আঁখি এক পাশে,আয়েশা নোমানের পাশে বসতে না চাইলেও আঁখি ওকে জোর করে ধাক্কা দিয়ে ভিতরে ঢুকালো,নোমানের এতো কাছে এসে আয়েশার অনুভুতিগুলো যেনো বাঁধনহারা হয়ে যাচ্ছে,নোমান স্বাভাবিক ভাবে ওর সাথে এটা ওটা কথা বলছে তবে আয়েশা যেনো নিজেকে স্বাভাবিক রাখতেই পারছে না,এদিকে আঁখি ট্রিপটাকে জমিয়ে দিয়েছে,এটা ওটা গল্প করছে হৈ হুল্লোড় করছে,যেনো ও একাই একশো ,আসলে ওরা আরও এমন ভ্রুমণে এলেও এভাবে যাওয়ার পথে এতো আনন্দ উপভোগ করে নি যতোটা আজ আঁখি সম্ভব করছে,সবাই খুব উপভোগ করছে রাস্তার পাশের মনোমুগ্ধকর পরিবেশ, আঁখি মাঝে মধ্যে ছবিও তুলছে আয়েশার ক্যামরা দিয়ে,গাড়ির সামনে ঝোলে থাকা আয়না দিয়ে আঁখির সমস্ত কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করছে আদৃত ঠোঁটের কেনো মৃদু হাসি ঝুলিয়ে।আনমনে ভাবছে আঁখিকেই নিয়ে কিছু কথা।
এমনভাবে থাকে যেনো কিছুই হয় নি ওর সাথে,সব কিছুই যেনো ওর কাছে স্বাভাবিক, তবে ওর জীবনের অস্বাভাবিক জিনিসগুলোও যে আমি স্বাভাবিক করার প্রাণপন চেষ্টা করবো আর এখন এটাই আমার জীবনের অন্যতম লক্ষ্য,আয়ান নামের চ্যাপ্টার আর ওপেন হতে দিবো না আমি ওর জীবনে, আর এই রোগটাকেও ওর কাছে হার মানতেই হবে।
এদিকে আয়না দিয়ে আদৃতের বার বার আঁখির দিকে তাকিয়ে ঠোঁট বাঁকানো হাসিটা চোখ এড়িয়ে গেলো না সায়েদার।
একি ভাইয়া হাসছে তাও আঁখির দিকে তাকিয়ে, লাগতাহে ডাল মে কুচতো কালা হে,ইয়া পুরি ডাল হি কালি হে,হি হি হি।মনে হয় ভাইয়ার মনে প্রেমের ফুল আবারও ফুঁটছে।
___________________
আয়ান রেডি হচ্ছে অনেক খুশি মনে,ব্যাগ পত্র গুছিয়ে নিয়েছে অনেক আগে,তখনি মাহি এলো বাড়িতে,এসে আয়ানকে এতো উৎফুল্ল আর ওর ব্যাগ পত্র গুছানো দেখে খনিক সন্দেহ ভাব চেহারায় ফুঁটিয়ে বললো।
কোথাও যাচ্ছো আয়ান?
মাহিকে দেখে আয়ানের মুখের উৎফুল্ল ভাব চলে গেলে,বেশ বিরক্তি নিয়ে বললো।
রাঙামাটি যাচ্ছি কাজে,
রাঙামাটি আবার কি কাজ পড়ে গেলো তোমার?
সব কিছু কি তোমাকে বলতে হবে?
বলতে হবে আমি তোমার ওয়াইফ।
মুখে বললেই ওয়াইফ হওয়া যায় না দায়িত্বও পালন করতে হয়,বাই দ্যা ওয়ে তুমি থাকো আমার কাজ আছে রাঙামাটিতে আমি চার-পাঁচ দিন পরে ফিরবো।
চলে গেলো আয়ান,মাহির কপালে পড়লো সন্দেহের ভাজ।
সবাই চলে এলো রাঙামাটি, আসার আগেই ওরা রিসোর্ট বুক করে রেখেছিলো তাই সবাই আগে সেখানেই উঠলো,সবাই যার যার রুমে গেলো এদিকে আদৃতের মিস আঁখির শান্তি নেই এখনও বাইরে ঘুরতে ব্যস্ত,আদৃত এবার বেশ বিরক্তি নিয়ে এলো আঁখির পানে।
এই যে মিস আঁখি এতোদূর জার্নি করে এসেছেন আপনার কি কোনো শান্তি নেই?রাস্তায় একবার ভালো করে ঘুমোতেও দেখলাম না আপনাকে,এতো লম্বা জার্নি করে এসে আপনার মধ্যে ক্লান্তি নামক জিনিস নেই বুঝি? কেনো এমনটা করেন বলেনতো?আপনি জানেন না আপনার জন্য রেস্ট আর শান্ত থাকা কতোটা জরুরি,বেশি দৌঁড় ঝাপ আপনার জন্য ভালো না তাও এতো রোদ্দুরে,আপনার মাথার উপর এসবের ডিরেক্টর প্রভাব পড়বে,এবার চুপচাপ রুমে চলেন।
আঁখি কিছু বললো না,বাংলা পাঁচের মতো মুখ করে চলতে থাকলো আদৃতের সাথে,ওরা স্বামী স্ত্রী ট্যাগ নিয়ে আছে তাই রুমও একটা বুক করতে হলো দুজনের জন্য।
আয়ানও পৌঁছে গেছে এতোক্ষণে,ও খোঁজ নিয়েই এসেছে,তাই আদৃত আঁখি যে রুমে উঠেছে তার পাশের রুমই নিয়েছে ও,তবে বর্তমানে আদৃত আঁখির সামনে আসতে খনিক চাইছে না।
_____________________
রাতে সবাই ঘুরতে বেরুলো,রাঙামাটি…… জায়গাটার নাম শুনলেই গাছ পালা সবুজের সমারোহ এসবেরই কল্পনা চোখে ভাসে,চারুদিকে অজস্র গাছগাছালি,পাহাড় পর্বত, সবাই যার যার মতো ঘুরছে,এদিকে আদৃত আঁখিকে একা ছাঁড়ছে না,ওর সাথেই আছে ছায়ার মতো,আঁখিও আদৃতের সাথে মন খোলে ঘুরছে আর কথা বলছে,আঁখির মনোভাব আদৃতকে একটু ভালো রাখা আর আদৃতের মনোভাব আঁখির খেয়াল রাখা,ওকে সুস্থ রাখা,দুজনই যেনো দুজনকে নিয়েই চিন্তায় মশগুল,আঁখি বাধাহীন কথা বলছে আর আদৃত প্রকৃতি ছেঁড়ে আঁখির কথা শ্রবনে ব্যাস্ত ওর দিকে অপলক চাহনিতে তাকাচ্ছে বার বার,আঁখির সাথে কথা বলতে ওর কথা শুনতে বড্ড ভালোই লাগছে আজকাল আদৃতের,কথা বলতে বলতে আদৃত আঁখি এক ছোট্ট নদীপাড়ের পাশে দুটো পাথরে বসলো, দুজনের মধ্যে খানিকক্ষণ নিরবতা কাজ করার পর আঁখি বললো
ড.আদৃত দিদু তো এখন সম্পুর্ণ সুস্থ, এখন কি উনাকে আসল সত্যটা বলা যায় না?আর কতোদিন আমরা এভাবে মিথ্যা একটা সম্পর্কে আবদ্ধ থাকবো?আপনার মনে হয় না এখন সময় এসে গেছে দিদুর সাথে এ নিয়ে কথা বলার?
আদৃতের আলতো হাসি রাঙা মুখটা যেনো খনিকে নিরাশায় ভরপুর করলো আঁখির উক্ত কথা,মনের কোনো কিছু হারিয়ে যাবার ভয় উঁকি দিলো,তাই আদৃত বেশ কটমট কন্ঠে বললো এবার।
আপনাকে ওসব নিয়ে ভাবতে হবে না,ঠিক সময় আসলে আমি দিদুকে বলে দিবো সবকিছু ,আপনি এখানে বসেন আমি একটা ইম্পরট্যান্ট কল করে আসছি।
আঁখি কিছুই বুঝে উঠতে সক্ষম হলো না আদৃতের মনোভাব।
হঠাৎ ঝোঁপের আড়াল থেকে কিছু নড়াচড়ার শব্দ কানে এলে আঁখি পিছন তাকালে কেউ ঝুঁপের আড়াল থেকে বেড়িয়ে ছুঁটতে লাগলো ততসময়ে,আঁখি বুঝতে পারলো একজন নারী কারন অন্ধকারে বেশি কিছু না আন্দাজ করতে না পারলেও শাড়ি পরনে কেউ একজন এটা বুঝতে ব্যার্থ হলো না আঁখির,তবে চেহারা দেখতে পেলো না ও,মেয়েটা ছুঁটতে লাগলো। আঁখির আবার কৌতুহল বরাবরই বেশি,তাই মেয়েটির পিছু ছুটলো,বার বার বলছে কে আপনি দাঁড়ান,তবে মেয়েটি দাঁড়াতে নারায,একসময় মেয়েটি কোথাও যেনো হারিয়ে গেলো,আঁখি চারপাশেই চোখ বোলাচ্ছে তবে মেয়েটিকে কোথাও খুঁজে পাচ্ছে না।
বড় কিছুর আড়ালে লুকিয়ে পড়েছে মেয়েটি,উঁকি দিয়ে দেখছে আঁখিকে,ক্লান্ত হয়ে যাওয়ায় নিশ্বাস ফেলছে ঘন ঘন।
আজকে তো এই মেয়েটা আমায় ধরেই ফেলতো,তবে কি যেটা শুনেছি সেটা সত্য মেয়েটাকে কি আদৃত সত্যিই বিয়ে করেছে?না আমি যতোটুকু জানি আদৃত দ্বিতীয় বিয়ে করবে না,আমাকে সত্যটা বের করতে হবে,তবে এখন ওদের সামনে যাওয়া ঠিক হবে না,প্রথমে পুরো সত্য জানতে হবে তারপর না হয় কি করা যায় ভাববো।
আদৃত ফোনে কথা বলা শেষ হলে ফোনটা রেখে পাশে তাকালে দেখে আঁখি নেই,আদৃতের মনে অল্পতেই ভয় কাজ করতে শুরু হয়,ওর যেনো মনে হয় ও আঁখিকে হারিয়ে ফেলেছে,চারিদিকেই আঁখিকে খুঁজতে শুরু করে অনেকটা অস্থিরতা নিয়ে,এদিকে ওকে ফোন করছে ফোনটা রিং হলেও ধরছে না।
আঁখির অতিরিক্ত দৌঁড়ানোর কারনে মাথা ঘুরতে শুরু হয়েছে এবার,প্রচন্ড মাথা ঘুরছে, পর যাচ্ছে তাই আশেপাশে কোনো কিছু ধরার চেষ্টা করছে,সেখান দিয়ে দুজন মেয়ে যাচ্ছিলো তখন, মেয়ে দুটি আঁখির অবস্থা দেখে ওকে ধরে নিলো,ওরা আঁখিকে বার বার জিজ্ঞেস করছে ওর সাথে কারা এসেছে ওদের বলতে যাতে ওরা ওকে একটু সাহায্য করতে পারে,এদিকে আঁখি ওদের নিজের রুম নাম্বার বলে বললো ওকে ওখানে নিয়ে যেতে,মেয়েগুলো ওকে ধরে ওখানে নিয়ে গেলো,আয়ান রুম থেকে এখনও বের হয় নি,সুযোগ বুঝে আঁখির সাথে একাকিত্বে কিছু কথা বলবে ভেবেছে,তখনি দেখলো দুটি মেয়ে আঁখিকে ধরে নিয়ে আসছে,আঁখিকে অচেতন দেখে দুঃশ্চিন্তায় পরলো আয়ান আঁখিকে নিয়ে তাই আয়ান আর দেরি না করে ছুটে গেলো আঁখির পানে।
কি হয়েছে আঁখির?
জানি না ভাইয়া উনাকে আমরা রিসোর্টের বাইরে পেলাম মাথা ঘুরে পড়তে নিয়েছিলেন আমরা ধরে উনাকে নিয়ে এলাম,আসতে আসতে উনি জ্ঞান হারিয়ে গেছেন।
কি হলো ওর হঠাৎ করে?ঠিক আছে আপনারা যান আমি ওকে দেখছি।
আপনি ওর কে?
আমি…..আমি ওর….আমি ওর হাসবেন্ড।
আমতা কন্ঠে কথাটা বলে আয়ান আঁখিকে নিজের রুমে নিয়ে গেলো,আঁখির জ্ঞান ফিরছে না,আয়ান অনেক চেষ্টা করেও আঁখির জ্ঞান ফিরাতে সক্ষম হচ্ছে না,এদিকে আদৃত আঁখির খোজে রিসোর্ট পর্যন্ত এসে গেছে, রুমে আসলো সবার আগে তবে সেখানে আঁখিকে না পেয়ে আদৃতের মনের ভয়টা আরও বেড়ে গেলো,যখন থেকে আঁখির রোগ সম্পর্কে আদৃত জেনেছে তখন থেকেই ওর ভিতর যেনো আঁখিকে হারিয়ে ফেলার একটা আচমকা ভয় কাজ করতে শুরু করেছে,আঁখিকে যে এখন কোনো মুল্যেই হারাতে চায় না আদৃত,হয়তো জানা নেই সে অনুভুতির মানে ওর।আর এই ভয়েই হয়তো আদৃত এখন একটু অস্বাভাবিক বিহেব করছে।যাকে পাচ্ছে তাকেই আঁখির ছবি দেখিয়ে খুঁজে বেড়াচ্ছে আঁখিকে, পরিবারের সবাইকে ফোন করে জিজ্ঞেস করলেও সবাই নিশ্চিত করলো আঁখিকে কেউ দেখে নি,ও কারো সাথে নেই,তবে কাউকে আর কিছু বলে টেনশন দিতে চায় নি আদৃত তাই নিজেই খুঁজতে ব্যস্ত ওকে,হঠাৎ সেই দুটি মেয়েকে ছবি দেখালে ওরা আঁখিকে চেনে ফেলে আর সবকিছু আদৃতকে খুলে বলে।ওদের কথা শুনে আদৃত হতবাক হলো,কে সেই লোক যে আঁখিকে নিজের স্ত্রীর পরিচয়ে নিয়ে গেলো আদৃতের মনের ভয়টা আরও বাড়লো এবার, তাই মেয়েগুলোর থেকে রুম নাম্বারটা জেনে সেদিকে অগ্রসর হলো ছুঁটন্ত পায়ে।
আয়ান আঁখিকে নিয়ে বেশ চিন্তায় পরে গেছে,আঁখির জ্ঞান ফিরছে না, কি এমন হয়ে গেলো ওর,বার বার আঁখিকে ডাকছেও আঁখির কোনো হেলদুল দেই,যেহেতু মেডিক্যাল কোনো সরঞ্জাম এখানে নেই তাই ভাবলো আঁখিকে কোনো হাসপাতালে নিয়ে যাবে সেই ভাবনাতে আঁখিকে কোলে নিতে চাইলে……..
চলবে……….