প্রেম প্রয়াস পর্ব-০১

0
1201

#সূচনা_পর্ব
#মাশফিয়াত_সুইটি(ছদ্মনাম)
#প্রেম_প্রয়াস

‘কিসের বান্ধবী তুই? যেখানে তোর ভাইয়ের সঙ্গে আমার কোনো সেটিং নেই। নিজে তো ঠিক আরিয়ান ভাইয়ার সাথে জমিয়ে প্রেম করছিস আর এইদিকে নিজের বান্ধবী সিঙ্গেল তার কোন খবর নেই কেন রে তোর ভাইটারে একটু পটিয়ে দিলে কি হয়? তুই জানিস না বান্ধবীর ভাই মানে জামাই।’

– এবার একটু থাম বাকিটা পরে বলিস।

– যা বলার এখনি বলবো তোর ভাইটা দেখতেই শুধু সুন্দর মুখটা সারাক্ষণ গম্ভীর করে রাখে সে কি বুঝে না তার উপর একটা বাচ্চা মেয়ে ক্রাশ খেয়েছে, শালা বজ্জাত একটু পাত্তা দেয় না আমার মনে হয় কি তোর ভাইয়ের অন্য কোন মেয়ের সাথে কিছু চলছে সবার সামনে ভালো আর ভদ্র সেজে থাকে, লুচ্চা একটা।

– আরো কিছু বলার বাকি আছে?

– বলতে তো অনেক কিছুই চাই কিন্তু তুই এমন ঘামছিস কেন? আর অন্যদিকে তাকিয়ে কি দেখছিস? ওই রাকা!

রাকার কোনো উত্তর না পেয়ে তার দৃষ্টি অনুসরণ করে পিছনে তাকাতেই চমকে গেল তাশফা। একটা ছেলে হাত দুটো ভাঁজ করে দরজায় হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। রাকা তাশফাকে ফিশফিশ করে,

– এই জন্যই থামতে বলেছিলাম এখন দেখ ভাইয়া সব শুনে নিয়েছে।

তাশফা একটা শুকনো ঢুক গিললো, ছেলেটি তাশফার দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে রাকার উদ্দেশ্যে,

– রাকা আম্মু তোকে ডাকছে যা তো।

রাকা তাশফার হাত ধরে,
– যাচ্ছি ভাইয়া চল তাশু।

– আম্মু তোর বান্ধবীকে নয় তোকে ডাকছে ওকে রেখে তুই যা।

রাকা আর তাশফা দু’জন দু’জনের দিকে চাওয়া চাওয়ি করলো, রাকা যাওয়ার আগে তাশফাকে বলে গেল,
– তোর কপালে যে আজ কি আছে কে জানে থাক তুই আমি গেলাম।

রাকা ঘর থেকে বের হতেই রাকার ভাই দরজা আটকে দিল তাশফার গলা শুকিয়ে গেছে ভিতু কন্ঠে,
– রাদিফ ভাই দরজা আটকালেন কেন?

রাদিফ দরজা আটকে তাশফার দিকে এগুতে এগুতে,
– আমি লুচ্চা যে তাই।

– সবটা শুনে ফেলেছেন!

চোয়াল শক্ত করে,
– আমি বজ্জাত তাই না?

তাশফা ভয়ে পিছনে যেতে যেতে,
– না না মুটেও না।

– আমার অন্য মেয়ের সাথে কিছু চলছে।

– আরে কি যে বলেন না আপনার চলবে কেন হি হি।

পিছনে যাওয়ার আর জায়গা নেই দেওয়ালে আটকে গেছে তাশফা। রাদিফ তাশফাকে দেওয়ালের সাথে নিজের হাত দিয়ে আটকে,

– বান্ধবীর ভাই মানে জামাই তাই না?

– ককই না তোওও বান্ধবীর ভাই মানে নিজের ভাই।

– জামাই সাথে সাথে ভাই হয়ে গেল! বাহ তুমি তো গিরগিটির থেকেও ফাস্ট।

– আর জীবনেও বলবো না যেতে দিন আমায়।

– জামাইকে ছেড়ে কোথায় যাবে?

– দূর বেডা কে জামাই? বললাম তো আর জীবনেও এসব বলবো না।

– কেন বলবে না?

তাশফা প্রচুর ভয় পাচ্ছে সে বুঝতে পারছে অনেক বড় ভুল করে ফেলেছে। হঠাৎ করে তার মাথায় একটা বুদ্ধি চলে এসেছে চোখ বন্ধ করে জোরে চেঁচিয়ে,

– আন্টি গোওওও আমাকে বাঁচান আপনার বজ্জাত ছেলে আমাকে মেরে ফেললো গোওওও! আন্টিইইইইইইইইই!!!

তাশফার এমন কান্ডে রাদিফ ভরকে গিয়ে সরে গেল। গম্ভীর দৃষ্টিতে তাশফার দিকে তাকিয়ে আছে, তাশফা ছাড়া পেতেই রাদিফকে কিছুটা ধাক্কা মেরে জোরে দৌড়ে দরজা খুলে চলে গেল।

তাশফার এমন কান্ডে রাদিফের প্রচন্ড হাঁসি পাচ্ছে কিন্তু অনেক কষ্টে নিজের হাঁসি আটকে রেখেছে। তাশফা বাইরে যেতেই রাদিফের মা এসে জিজ্ঞেস করল,
– কি হয়েছে তাশফা রাদিফ কি করেছে?

– কিছু করেনি তো।

– তাহলে এইভাবে চেঁচিয়ে ডাকলে কেন?

– দুষ্টুমি করলাম।

– ওহ আমি ভাবলাম কি না কি।

– আচ্ছা আন্টি তাহলে আমি গেলাম।

– গেলাম মানে খেয়ে তারপর যাবে।

তাশফা আস্তে আস্তে,’আপনার বজ্জাত ছেলে যেই ভয় খাওয়ালো তারপরও কি পেট খালি থাকে।’

– তাশফা কি বিড়বিড় করছো?

– কিছু না আন্টি আমি গেলাম টাটা।

তাশফাকে আর পায় কে রাদিফের মা’কে বিদায় দিয়ে দ্রুত তাদের বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেল।রাকা আর তাশফা দু’জন বেস্ট ফ্রেন্ড এক ক্লাস এবং এক কলেজেই পড়ে রাদিফ হচ্ছে রাকার বড় ভাই সে একজন টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার। রাদিফ তেমন ফর্সা না হলেও মুখের গঠন এবং পার্সোনালিটি দেখে আশেপাশের অনেক মেয়েই তার জন্য পাগল তাশফারও একই অবস্থা সেও রাদিফের প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে কিন্তু রাদিফের সামনে গেলেই সব ভয় তাকে ঘিরে ধরে।

তাশফা বাড়িতে এসে শাওয়ার নিয়ে বিছানায় হেলান দিতেই ফোনটা বেজে উঠলো। ফোনটা রিসিভ করে কানে ধরতেই অপরপাশ থেকে,
– তাশু সোনা ভাইয়া দরজা আটকে কি করলো রে? তোকে কি মেরেছে?

রাকার এমন বিরক্তিকর কথায় তাশফার মেজাজ বিগড়ে গেল তেজি গলায়,
– তোর ভাই আমাকে মারবে আর আমি কি বসে থাকবো?

– তুইও কি সাথে মারবি নাকি? তুই তো ভাইয়াকে দেখলেই ভয় পাস হা হা।

– একদম হাসবি না আমি তো তোর ভাইকে সম্মান করি তাই কিছু বলি না।

– হয়েছে চাপা না মেরে এবার বল ভাইয়া কি বললো।

– তোকে বলবো কেন ফোন রাখ বান্দর মেয়ে যেদিন তোর ভাইয়ের সঙ্গে আমার সেটিং করাতে পারবি সেদিন আসবি।

বলেই ফোন কেটে দেয় তাশফা,একা একা বলতে লাগলো,
– হায়রে রাদিফ ভাই কবে বুঝবেন আমাকে আহা এতো সুন্দর বান্ধবীর ভাই থাকতেও আমি সিঙ্গেল।
_____________
‘আচ্ছা রাকা এই আরিয়ানটা কে?’

রাকা নিজের ঘরে বসে হেসে হেসে কারো সাথে চেটিং করছিল এমন সময় রাদিফ এসে এমন একটা প্রশ্ন করায় কিছুটা চমকে যায় রাকা। দ্রুত মোবাইলটা রেখে,

– কি বললে ভাইয়া?

রাদিফ গিয়ে বিছানায় বসে তিক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে,
– বললাম আরিয়ান কে?

– কে আরিয়ান?

– তুই আবার উল্টো আমাকে প্রশ্ন করছিস কেন?

– ওহ আচ্ছা কেউ না আরিয়ান, আরিয়ান নামে কাউকে চিনি না।

– তাহলে তখন তাশফা যে বললো তুই আরিয়ানের সঙ্গে প্রেম করিস।

রাকা মনে মনে তাশফাকে বকে তারপর শুকনো একটা হাঁসি দিয়ে,
– তাশুর কথা বাদ দাও তো ভাইয়া ওর কথার ঠিক নেই তোমাকে দেখার পর থেকে ও কি বলে কি করে নিজেই জানে না।

রাদিফের রাকার কথা যেন বিশ্বাস হচ্ছে না সন্দিহান দৃষ্টিতে এখনো তাকিয়ে আছে রাকা বুঝতে পেরে,
– তাশু কিন্তু অনেক ভালো মেয়ে ভাইয়া তোমার উচিত ওকে এক্সেপ্ট করা জানো ও তোমাকে অনেক পছন্দ করে।

– তাহলে সামনে আসলে হাঁটু কাঁপে কেন তোর বান্ধবীর? ভিতু মেয়ে একটা।

– এমনিতে ও অনেক সাহসী কিন্তু তোমাকে দেখলেই ভয় পায় আসলে তুমি যেই গম্ভীর মুখে ওর সামনে আসো ভয় তো পাওয়া কথাই।

– হয়েছে বান্ধবীর প্রশংসা করতে হবে না।

বলেই চলে যাচ্ছিল কিন্তু কিছু একটা ভেবে আবারো পিছনে ফিরে,
– আমি যদি জানতে পারি সত্যি সত্যি আরিয়ান নামে কারো সাথে তোর কিছু চলছে তাহলে আমার থেকে খারাপ কেউ হবে না।

রাকার মনে এবার অনেক ভয় জমা হয়েছে দ্রুত বিছানার পাশের টেবিলে রাখা পানির বোতলটা ফাঁকা করে ফেললো কিন্তু এখনো পিপাসা মিটলো না। আরিয়ানকে ফোন দিল প্রথমবার কেটে গেলেও পরেরবার রিসিভ হতেই রাকা বলতে শুরু করলো,

– আরিয়ান সমস্যা হয়ে গেছে ভাইয়া আমাদের সম্পর্ক নিয়ে সন্দেহ করছে ধরা খেলে আমাদের দু’জনের অবস্থা খারাপ করে দিবে।

অপরপাশ থেকে আরিয়ান একটু ভাব নিয়ে,
– কুল বেবি কুল আমি থাকতে তোমার ভাই কিছুতেই আমাদেরকে ধরতে পারবে না।

আরিয়ানের কথায় রাকার ভয় কিছুটা হলেও কমেছে। তাশফা বাড়িতে একা একা বসে বিরক্ত হচ্ছে কিছুতেই মন ভালো লাগছে না বিছানা থেকে উঠে দরজার কাছে গিয়ে,

– আম্মু তোমার ছোট ছেলে কোথায়?

– কোচিং এ গেছে।(কিছুটা জোরে)

তাশফা মনে মনে,’দূর এখন আমি কাকে বিরক্ত করবো? বুঝি না দুপুরে আবার কিসের কোচিং।

তাশফা এতোটাই চঞ্চল যে বেশিক্ষণ সে একা চুপচাপ থাকতে পারে না বাড়িতে যতক্ষন থাকে ততক্ষণি ছোট ভাইকে বিরক্ত করে। কিন্তু এখন সে পুরোপুরি বাড়িতে একা,বিছানায় কিছুক্ষণ গড়াগড়ি খেয়ে এবার ফোনটা হাতে তুলে নিয়ে একটা নাম্বারে ডায়াল করে কানে ধরলো। পরপর তিনবার রিং হওয়ার পর ফোনটা রিসিভ করতেই তাশফা আদুরে গলায় বলতে লাগলো,

চলবে……