প্রেম প্রয়াস পর্ব-০৬

0
829

#প্রেম_প্রয়াস
#মাশফিয়াত_সুইটি(ছদ্মনাম)
পর্ব:০৬

‘রাদিফ ভাই আপনি এসেছেন! কিন্তু এখন এসে কি লাভ হলো আমার বিয়ে তো হয়ে গেছে আপনার আসতে দেরি হয়ে গেছে।’

রাদিফ তাশফার কাছাকাছি এসে ঠিক তার সামনে বসে পড়লো বুড়ো আঙুল দিয়ে তাশফার চোখের পানি মুছে,
– এতদিন ভাবতাম একটা মেয়ে এত হাসতে পারে কিভাবে এখন ভাবছি একটা মেয়ে এত কান্না করে কিভাবে?

তাশফা ঢ্যাবঢ্যাব করে তাকিয়ে আছে রাদিফের দিকে কান্না কিছুটা থামলেও এখনো ফুপাচ্ছে। রাদিফ আবারো বলতে লাগল,
– নিষেধ করেছি তো কাঁদতে, এত কান্না করতে হবে কেন কেউ কি ম’রে গেছে?

তাশফা এবার রাদিফকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে,
– আপনার জন্যই তো কান্না করলাম।

– আমি বলেছি কান্না করতে?

– উহু।

– তাহলে?

– বেশ করেছি কান্না করেছি আরো করবো আপনার কি এখন কেন এখানে এসেছেন? কতবার বললাম বিয়ে ভাঙতে আসলেন না এখন তো বিয়ে হয়ে গেছে।

– আমি না আসলে বাসর হবে কিভাবে?

তাশফা রাদিফকে ছেড়ে চোখ বড় বড় করে,
– কিহ!!

– হু তোমার বিয়ে আমার সঙ্গেই হয়েছে এবার কান্না থামিয়ে যাও ফ্রেশ হয়ে আসো কাজল আর লিপস্টিক লেপ্টে গেছে।

– আপনার সাথে বিয়ে হলে নিহান কোথায়?

– বললাম না গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসো তারপর বাকি কথা।

তাশফা রাদিফের কথায় বাধ্য মেয়ের মত ফ্রেশ হতে চলে গেল। পোশাক পাল্টে মুখে পানি দিয়ে বের হতেই রাদিফকে সোফায় খাবার নিয়ে বসে থাকতে দেখে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।রাদিফ তাশফাকে ইশারায় ডাকতেই তাশফা গিয়ে তার পাশে বসল। রাদিফ চামচ দিয়ে খাবার নেড়ে তাশফার মুখের সামনে ধরে,

– হা করো।

– খাবো না।

– খাবে না মানে? দু’দিন ধরে না খেয়ে আছো এভাবে না খেয়ে থাকলে অসুস্থ হয়ে যাবে তখন তো আমারই সেবা করতে হবে।

– জানলেন কিভাবে?

– তোমাকে বলবো কেন যা বলছি তাই করো।

তাশফা আর কথা না বাড়িয়ে খেয়ে নিল রাদিফের হাতে। খাওয়া শেষ হতেই রাদিফ গিয়ে প্লেটটা রেখে আসল। বিছানায় বসতেই তাশফা গিয়ে রাদিফের কাছে ঘেঁষে বসে,

– বললেন না তো আমাদের কিভাবে বিয়ে হলো? আপনি না বললেন আমাকে পছন্দ করেন না বিয়ে করবেন না এমনকি বাবা আর আম্মুও আমার কথা শুনলো না তাহলে কিভাবে হলো?

– ভেবেছিলাম করবো না কিন্তু তুমি যেভাবে কান্নাকাটি শুরু করলে খাওয়া দাওয়া বাদ দিয়ে দিলে তাই আর কি বিয়েটা করেই নিলাম এমনিতেও একসময় বিয়ে করতেই হতো আবার ভেব না আমি তোমাকে ভালোবাসি হু। তোমার বাবা-মা’কে আমি আর আম্মু সরাসরি গিয়ে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলাম তারপর উনারাও না করতে পারেননি যেহেতু তুমিও আমায় পছন্দ করো।

– নিহান ছেলেটা একদম ভালো না আমি সব বললাম তারপরেও বিয়েতে রাজি হয়েছে, আচ্ছা ছেলেটা কিছু বলেনি?

– প্রথমে একটু সিনক্রিয়েট করেছিল কিন্তু পরে ঠিক মেনে নিয়েছিল তবে তার পরিবার ক্ষেপেছিল।

– রাকা সব জানতো?

– ও বিয়ের দিন জেনেছে।

– আমাকে আগে বলেননি কেন অযথা কষ্ট দিয়েছেন।

– আগে বললে কি করতে?

– কান্না করতাম না হু সুন্দর করে সেজে বিয়েতে বসতাম।

– তাই তো বলিনি কারণ কান্না করলে তোমাকে সুন্দরী লাগে।

তাশফা রাদিফের দিকে কপাল কুঁচকে তাকাতেই রাদিফ মুচকি হেসে,
– অনেক রাত হয়েছে শুয়ে পড় এমনিতেও তো ঠিক মত ঘুম হয়না মনে হয়।

বলেই লাইট নেভানোর জন্য উঠল রাদিফ, পেছন থেকে তাশফা ডাক দিয়ে,
– রাদিফ ভাই।

রাদিফ কিছুটা রেগে পিছনে ফিরে,
– আমাদের বিয়ে হয়ে গেছে আমরা এখন স্বামী-স্ত্রী।

– হুম জানি।

– তাহলে ভাই বলো কেন? আমি তোমার কবেকার ভাই লাগি ফাজিল মেয়ে?

– তো কি বলবো?

– অনলি রাদিফ বলবে।

– আপনি আমার থেকে কত বড় আর আমি কিনা আপনাকে নাম ধরে ডাকবো?

– তাহলে বড়দেরকে ভালোবেসে বিয়ে করতে এসেছিলে কেন?

– পাইছে একটা কথা সারাজীবন এটাই শুনতে হবে।

রাদিফ মুচকি হেসে লাইট অফ করে দিয়ে বিছানায় শুয়ে,
– সারারাত কি এখানেই বসে থাকবে?

তাশফা শুয়ে পড়লো রাদিফের বুকে মাথা রেখে, রাদিফ একহাত দিয়ে তাশফাকে ধরে,
– এটা আমার শরীর বালিশ নয়।

– এখন থেকে এটাই আমার বালিশ হু।

– বিয়ে করা যে জ্বালা প্রমাণ পেয়ে গেলাম।

– চুপ করে ঘুমান তো।

– ঘুমাতে দিচ্ছো কোথায়।

তাশফা কিছু বললো না তার শরীরটা এমনিতেই ক্লান্ত বিয়ের জন্য ঠিক মতো ঘুমাতে পারেনি তাই চোখ বন্ধ করতেই ঘুমিয়ে পড়েছে রাদিফও বুঝতে পেরে ঘুমানোর চেষ্টা করল।
_____________
ফজরের আজান হয়ে গেছে রাদিফের ঘুমও ভেঙ্গে গেছে। প্রতিদিন ফজরের আজানের সময় ঘুম থেকে উঠে নামাজ আদায় করে তারপর এক কাপ চা বানিয়ে বাগানে যাওয়াই রাদিফের রুটিন।তাশফা রাতের ন্যায় এখনো রাদিফকে ধরে শুয়ে আছে। রাদিফ তাশফাকে ঠিক করে শুইয়ে দিয়ে নামাজ পড়তে চলে গেল, তাশফাকে ডাকেনি কারণ দু’দিন ধরে তাশফার উপর দিয়ে অনেক কিছু গেছে যার জন্য ঘুমটা নষ্ট করলো না।

নামাজ শেষ করে নিজেই এক কাপ চা বানিয়ে বাগানে চলে গেছে রাদিফ।রাদিফের মা নাস্তা তৈরি করে টেবিল সাজিয়ে রেখে রাদিফ আর রাকাকে ডাক দিলেন। তারা দু’জনে টেবিলে বসতেই রাদিফের দিকে প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলেন,

– তাশফা কোথায়?

– ঘুমাচ্ছে।

– ডাকলি না কেন? নাস্তা করে তারপর ঘুমাক।

– একবার ঘুম ভাঙলে সহজে ঘুম আসে না তার উপর দু’দিন তো ঠিক মত ঘুম হয়নি যখন ঘুম ভাঙবে নাস্তা করে নিবে।

রাদিফের মা সম্মতি দিয়ে খেতে বসলেন। খাওয়া শেষ হতেই যে যার ঘরে চলে গেল,রাদিফ আগেই অফিস থেকে কিছুদিনের জন্য ছুটি নিয়ে নিয়েছে। ঘরে আসতেই তাশফাকে বিছানায় বসে থাকতে দেখে,

– ঘুম ভেঙ্গে গেছে?

– হুম।

– ফ্রেশ হয়েছো?

– হুম।

আবারো বাইরে চলে যায় রাদিফ, তাশফা কিছুটা অবাক হয়ে গেল এই ভেবে যে রাদিফ হুট করে বাইরে গেল কেন? কিছুক্ষণ পর রাদিফ ঘরে ফিরল হাতে খাবার নিয়ে। তাশফার দিকে এগিয়ে দিয়ে,

– ঘুমিয়ে ছিলে তাই আর ডাকিনি নাও খাবার খেয়ে নাও।

তাশফা কিছু বলল না এমনিতেও তার অনেক খিদে পেয়েছে তাই খাবার নিয়ে খেতে শুরু করল। রাদিফ সোফায় বসে অফিসের কাজ নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লো। তাশফা খাওয়া শেষ করে এঁটো প্লেট নিয়ে রান্নাঘরে রেখে রাকার ঘরে গিয়ে বিছানায় বসলো।

রাকা তাশফার পাশে বসে,
– কিরে বান্ধবী কান্না থেমেছে?

– দেখতেই তো পাচ্ছিস।

– কেমন লাগলো সারপ্রাইজ?

– জঘন্য।

– কেন কেন?

– আগে যদি জানতাম তোর ভাইয়ের সঙ্গে বিয়ে হবে তাহলে কত মজা করে বিয়ে করতাম নিজের বিয়ে নিয়ে কত স্বপ্ন ছিল তোর বজ্জাত ভাই সব শেষ করে দিল।

– এখন সব দোষ ভাইয়ার!

– হু।

– এবার বল বাসর কেমন কাটলো রে তাশু?

তাশফা চোখ বড় বড় করে,
– ঘুমে ঘুমে কেটেছে।

– আনরোমান্টিক।

– তোর ভাই।

– তুই কি করছিস?

– ভাবী হই তোর সম্মান দিয়ে কথা বল আর এসব কি ধরনের প্রশ্ন?

– বাহ তাশু রাতারাতি পাল্টি খেয়ে গেলি।

তাশফা ভাব নিয়ে বসে আছে কোন হেলদোল নেই তৎক্ষণাৎ রাকার ফোনটা বেজে উঠল রাকা দ্রুত ফোন নিয়ে বারান্দার দিকে পা বাড়াতেই তাশফা ব্রু নাচিয়ে,

– আরিয়ান ভাইয়া ফোন দিয়েছে নিশ্চই, প্রতিদিনই তো দেখা করিস তারপরেও এত ফোন করে কেন কোন কাজ কর্ম নেই।

– চুপ থাক আর ভাইয়ার কাছে যা।

– হু এখন তো আর আমাকে ভালো লাগবে না ভালো লাগার মানুষ ফোন করেছে না।

মুখ ভেংচে চলে গেল রাকা,তাশফা ঘরে এসে রাদিফকে তখনকার মতোই ল্যাপটপে মুখ গুজে বসে থাকতে দেখে বিরক্ত নিয়ে,
– আজ অফিসে গেলেন না কেন?

– বাড়িতে থাকলে কি সমস্যা?

– সমস্যা হবে কেন শুধু জিজ্ঞেস করলাম।

– নতুন বিয়ে করলাম তোমাকে রেখে অফিসে গেলে তো বলতে লুচ্চা এমনিতেও বিনা কারণেই আমি তোমার চোখে লুচ্চা।

রাদিফের এহেম কথায় তাশফা কিছুটা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেল নিজেকে সামলে রাগ দেখিয়ে,

– তাহলে বাড়িতে বসে ল্যাপটপে তাকিয়ে আছেন কেন? এত কাজ অফিসে যেতে পারতেন আমার সামনে বসে কেন কাজ করতে হবে।

রাদিফ ল্যাপটপটা রেখে হেসে তাশফার দিকে তাকিয়ে,
– ওহ এই ব্যাপার আগে বলবে তো তাহলে তোমার দিকেই তাকিয়ে থাকতাম।

– দূর আপনার সাথে কথা বলাই বৃথা সত্যি সত্যি আপনি বজ্জাত।

বলেই দৌড়ে ঘর থেকে বেরিয়ে আসলো তাশফা, যতোই রাগ দেখিয়ে কথা বলুক এমনিতে তো রাদিফকে সে অনেক ভয় পায়।

একা একা বিরক্ত লাগছে কি করবে ভাবতে ভাবতে রাদিফের মায়ের ঘরে উঁকি দিয়ে,
– আন্টি আসবো?

– হ্যা হ্যা আসো।

তাশফা হেসে উনার পাশে গিয়ে বসে,
– বিরক্ত করলাম নাকি আন্টি?

– এতক্ষণ বিরক্ত লাগছিল তবে তুমি আসাতেই ভালো লাগছে।

তাশফা হাসলো,রাদিফের মা প্রশ্ন করলেন,
– রাদিফ কোথায়?

তাশফা মুখটা গম্ভীর করে ফেলল অন্য দিকে দৃষ্টি দিয়ে,
– কি আর করবে বসে বসে ল্যাপটপ টিপছে।

– ও এমনই যতক্ষন বাড়িতে থাকে অফিসের কাজ নিয়েই ব্যস্ত থাকে তবে এখন তো তুমি এসে গেছ ঠিক হয়ে যাবে।

শাশুড়ি আর বউমা মিলে বেশ কিছুক্ষণ গল্প করল। তাশফার এতে মনটা ভালো হয়ে গেছে, গল্প করতে করতে দুপুর হয়ে গেছে শাশুড়ির হাতে হাতে রান্নায় কিছুটা সাহায্য করল রাদিফের মা নিষেধ করেছিল কিন্তু তাশফা কোন বারণ শুনেনি।

চলবে…….