#তুমিময় নেশায় আসক্ত
#পর্ব- ১৪
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
ভালোবাসা মানুষটি আজ অন্যকারোর হয়ে যাওয়ার পরেও তার প্রতি বিন্দুমাত্র ভালোবাসার ঘাটতি নেই আমানের মনে।
আমানের শুধু মনে হচ্ছে সে যা জানে যা দেখেছে সব মিথ্যে। তার রিমিপাখি তো তাকে ভালোবাসে সে নিশ্চয় অন্য কাউকে ভালোবাসতে পারে না। বাংলাদেশে গেলে আমান সর্বপ্রথম রিমির সাথেই কথা বলবে। নিশ্চয় রিমির মনে তার জন্যে ঘৃণা এসে জমাট বেঁধেছে । না সেই ঘৃণার গ্লানি নিয়ে বেঁচে থাকতে পারবে না আমান।সর্বপ্রথম সে তার রিমিপাখির মনে থাকা সমস্ত সংসয় সমস্ত প্রশ্নের খোলাসা করবে বাংলাদেশে গিয়ে ।আমানের ভাবনার মাঝেই একজন লোক এসে জানায় আমানের ফ্লাইট এর সময় হয়ে গিয়েছে। আমান যেন এখনি বেড়িয়ে পড়ে। আমানও লোকটার কথায় ঘড়ির দিকে তাকায়। সত্যি অনেক দেরী হয়ে পড়েছে। তার ফ্লাইটের সময় হয়ে গিয়েছে। আমান সুদীর্ঘশ্বাস ফেলে তার লাগেজ টা নিয়ে হোটেলের রুম থেকে বেড়িয়ে যায়। অতঃপর গাড়িতে উঠে বসে উদ্দেশ্য এয়ারপোর্ট।
__________
অয়ন রাগে ফুশতে ফুশতে সামনের দিকে এগিয়ে জয়িতার হাত থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে নেয়। এতে রিমিসহ জয়িতা ভরকে গিয়ে অয়নের পানে তাকায়।
রিমিকে আরেকদফা অবাক করে দিয়ে, হঠাৎ অয়ন
জয়িতার হাত শক্ত করে চেপে ধরে বাজখাই গলায় বলে উঠে,
‘ তুমি আমার রিমিপরীকে স্পর্শ করলে কেন? আমার অনুমতি ব্যতিত একদম টাচ করবে না বলে দিলাম।
আর কে আমার রিমিপরীর বিএফ? একবার নাম বলো। মেরে পুতে দিবো একদম। এই মেয়ে তুমি তাড়তাড়ি নাম বলবে নাকি? ‘
কথাটি বলেই অয়ন একপ্রকাত হাতড়ে নিজের পকেট থেকে ধারালো ছুরি খানা বের করে জয়িতার দিকে তাক করে। ছুরি দেখেই জয়িতা ভয়ে কেঁদে ফেলে। মনে পড়ে যায় আসিফের সেই ভয়ানক পরিনতির কথা। রিমি বিস্মিত নয়নে চেয়ে থাকে অয়নের দিকে। অয়নের চোখমুখে যেমন রাগ উপচে পড়ছে তেমনভাবেই প্রখরভাবে হিংস্রতা ফুটে উঠেছে। রিমি ভেবে পায় না এতোদিন ছেলে অব্দি ঠিক ছিলো কিন্তু এখন একজন মেয়েকে নিয়েও অয়ন হিংসে করছে? না অয়ন স্বাভাবিক নয়। অয়ন একজন অস্বাভাবিক যুবক! অয়নকে আটকাতে হবে নাহলে অয়ন যা ছেলে সে জয়িতাকে আঘাত করতে পিছপা হবেনা। রিমির ভাবনার মাঝেই অয়ন
জয়িতার আরো শক্ত করে চেপে ব্জ্রকন্ঠে বললো,
‘ কি হলো? আমার প্রশ্নের জবাব দিচ্ছো না কেন? ‘
জয়িতা কাঁদতে কাঁদতে বললো,
‘ বিএফ মানে বেস্টফ্রেন্ড। রিমির কখনো কোন বিএফ ছিলো না স্যার। আমি তো মজা করেই বলেছি। ‘
অয়ন জয়িতার দিকে রক্তচক্ষু নিয়ে তাকিয়ে আছে। এই মেয়েটা রিমির বেস্টফ্রেন্ড। তারমানে এই মেয়েটার গুরুত্ব রিমির জীবনে অনেক। হয়তো অয়নের থেকেও। কথাটি ভেবেই রক্তচড়ে বসলো অয়নের। রিমি পরিস্হিতি বেগতিক দেখে অয়নের থেকে জয়িতাকে ছাড়িয়ে নিলো। চোখের ইশারায় জয়িতাকে বেড়িয়ে যেতে বললো। জয়িতা ছাড়া পেয়ে চটজলদি দৌড়ে চলে গেলো। অয়ন রেগে জয়িতার পিছনে চলে যেতে নিলে, রিমি অয়নের হাত ধরে নিজের দিকে ঘুড়ায়। রিমি বুঝতে পেরেছে এই মুহুর্তে অয়ন নিজের মধ্যে নেই। রিমিকেই সামলাতে হবে অয়নকে। রিমি অয়নের হাত ধরে বাইরের দিকে নিয়ে যেতে থাকে৷
___________________ (লেখিকাঃ জান্নাতুল ফেরদৌসি রিমি)
পায়েল নিজের ঘরে চুল খামচে ধরে মাটিতে বসে চিৎকার করে কাঁদতে থাকে। বার বার অনামিকা আংটির দিকে তাকাচ্ছে। যা অয়ন তাকে পড়িয়ে দিয়েছিলো। পায়েল মুখ গুজে কেঁদে দেয়। বার বার তার চোখের সামনে ভেসে আসছে রিমি এবং অয়নের সেই ঘনিষ্ট মুহুর্ত গুলো। পায়েল আংটি টা খুলে ফেলে দেয়। কাঁদতে কাঁদতে বলে উঠে,
‘ অয়ন আমাকে চিট করেছে। হি ইজ আ চিটার। এমনকি চৌধরী বাড়ির সবাই চিটার। সবাই আমাকে প্রতিনিয়ত ধোকা দিচ্ছে। আমার সাথে অয়নের বিয়ে ঠিক করে, অয়নের বর্তমান স্ত্রীকে অয়নের বাড়িতে রেখেছে। তাই ওরা এতোটা কাছাকাছি। আমি কাউকে ছাড়বো না। কাউকে না। ‘
কথাটি ভেবেই তড়িঘড়ি করে ফোন হাতে নেয় পায়েল। অতঃপর ফোন করে রুহানা চৌধুরীর নাম্বারে।
রুহানা চৌধুরী অফিসে বসে ফাইল দেখছিলেন মনোযোগ সহকারে। তখনি তিনি দেখতে পায় পায়েলের ফোন। তিনি ফোন রিসিভ করেই শুনতে পায় পায়েল তাদের কম্পনির সাথে করা সমস্ত ডিল
ক্যান্সেল করে ফেলেছে। তার একমাত্র কারণ স্বয়ং অয়ন। পায়েলের ভাষ্যমতে অয়ন নাকি পায়েলের সাথে প্রতারণা করছে। সবকিছু শুনে মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়েন রুহানা চৌধুরী। বয়স্ক মুখে একরাজ্যের চিন্তা এসে ভর করে। ক্লান্তিতে মাথা এলিয়ে দেন অফিসের চেয়ারে। হাতড়ে এসির রিমোট নিয়ে এসির পাওয়ার বাড়িয়ে দেন তিনি। জানুয়ারী মাস। শীত বেশ ভালোভাবেই পড়েছে ঢাকা শহরে তবুও এই শীতেও চরম ঘেমে একাকার হয়ে পড়েছেন রুহানা চৌধুরী। পায়েল যদি তাদের সাথে কাজ না করে তাহলে অনেক বড় ক্ষতি হয়ে যাবে তাদের। রুহানা চৌধুরী সোজা হয়ে বসলেন। এইবার ভালো করে অয়নের সাথে কথা বলতে হবে। অয়নের এইসব পাগলামোর কারণও জানতে হবে।
____________
রিমি অয়নের হাত ধরে হসপিটালের বাগানের দিকটায় নিয়ে আসে। অয়নের রাগ এখনো নাকের ঢগায়। রাগে ফুসফুস করছে। সেই ফুপানির আওয়াজ রিমির কানে এসেছে খুব ভালো মতো করে। রিমি এবং দুজনেই ডক্টরের এপ্রোন পড়ে দাঁড়িয়ে আছে। অয়ন রিমির দিকে রাগে ফুশতে ফুশতে বলে,
‘ তুমি আমায় নিয়ে এলে কেন? ওই মেয়েটা তোমাকে… ‘
অয়নের কথা বলার মাঝেই, রিমি বললো,
‘ ও একটা মেয়ে ডক্টর এয়ারসি। প্লিয ওকে নিয়ে জেলাস হবেন না অন্তত। আচ্ছা সেসব বাদ দিন আজকের আবহাওয়া টা অনেক সুন্দর না? একটু চারদিকে তাকিয়ে দেখুন। ‘
রিমি অয়নের রাগটাকে কমানোর জন্যে আবহাওয়ার কথাটি বললো। অয়ন একপলক চারদিকে তাকালো। সন্ধ্যা হয়ে গেছে। চারদিকে শীত পড়েছে ভালো। কুয়াশা এখনো পড়া শুরু হয়নি।
তার মধ্যে আকাশে ঘন কালো মেঘ জমাট বাঁধতে শুরু করেছে। হয়তো জানুয়ারী মাসেও বৃষ্টি পড়বে।
বৃষ্টি আসার পূর্বে ধরনীতে এক অদ্ভুদ সুন্দর বাতাস এসে আচড়ে পড়ে। মনটাকে ভালো লাগায় নাড়িয়ে তুলে সেই বাতাস। অয়নের নিষ্প্রান দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলো তার রিমিপরীর দিকে। সে তো প্রকৃতি দেখতে ব্যস্ত। প্রকৃতিতে একপ্রকার মিশে যাচ্ছে রিমি। এই সুন্দর প্রকৃতি নিয়েও বেশ হিংসে জমলো অয়নের মনে। রিমি শুধু প্রকৃতিকে কেন দেখছে? কেন এতো অনুভব করছে গভীরভাবে। প্রকৃতি সুন্দর বলে কী তাতে মিশে যেতে হবে? অয়নের মতো সুদর্শন যুবক রিমিতে মগ্ধ সে খেয়াল কি আদোও আছে রিমির? উহু একদমই না। অয়ন পকেটে হাত গুজে বলে,
‘ ওহে প্রকৃতিপ্রেমী রমনী! মাঝে মাঝে এই অধম বান্দার মনের অন্তারালে প্রবেশ করেও তো দেখতে পারো। অনুভব করলে বুঝবে এই যুবক তোমার জন্যে কতটা কাতর। ‘
অয়নের গভীর আবেগমাখা রিমির কানে আদোও কি পৌছালো? হয়তো হ্যা! হয়তো না। রিমি চারদিকে
তাকিয়ে অনুভব করতে লাগলো পরিবেশটাকে। তার মধ্যে ঝুম করে বৃষ্টি এসে ভিজিয়ে দিতে লাগলো ধরনীকে। ধরনীও শীতের আমেজে বৃষ্টির সাথে মিশে যেতে লাগলো।
রিমি বৃষ্টির সাথে তাল মিলিয়ে লাফালাফি করতে থাকে। শীতের মধ্যে বৃষ্টি সত্যি অনাকাঙ্ক্ষিত একটি জিনিস। তবুও বেশ ভালো লাগছে রিমির। রিমিকে বৃষ্টিতে ভিজতে দেখে অয়ন এগিয়ে যায় রিমির দিকে। রিমির দিকে তাকিয়ে ক্ষিপ্ত গলায় বলে,
‘ কি করছো কি তুমি? এইভাবে বৃষ্টিতে ভিজো না রিমিপরী। জ্বর আসবে তো। ভিতরে চলো। ‘
অয়ন রিমির হাত ধরে ভিতরে নিয়ে যেতে লাগলে, রিমি অয়নের হাত শক্ত করে ধরে আটকে রাখে অয়নকে। গভীর আকুতি কন্ঠে বলে উঠে,
‘ আরো কিছুক্ষন থাকি? আমি বৃষ্টিতে কিছুক্ষন দাঁড়িয়ে থাকতে চাই এবং চাই সে আমার সমস্ত উদ্বেগ ধুয়ে ফেলুক।’
চলবে….কী?
#তুমিময়_নেশায়_আসক্ত 🖤
#পর্ব- ১৫
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
প্রেয়সীর গভীর আকুতিকে নাখোচ করার সাধ্যি নেই যুবকের। যুবক তার প্রেয়সীকে জড়িয়ে ধরলো। ঠান্ডার মধ্যে স্বামীর উষ্ম স্পর্শ পেয়ে রিমিও আনমনে
অয়নকে জড়িয়ে ধরলো। মিশিয়ে নিলো নিজেকে অয়নের সান্নিধ্যে। দূরত্ব কমলো! একে-অপরের নিঃশ্বাসের শব্দ প্রখর থেকে প্রখরতম হলো। অয়নের গায়ে লেপ্টে থাকা এপ্রোন এর উপর কালো হুডিটা অয়ন খুলে, রিমির গায়ে ভালোভাবে জড়িয়ে দিলো।
রিমির ললাটে ধরে ফিসফিস কন্ঠে গভীরভাবে বললো,
‘ রিমিপরী বৃষ্টিকে শাস্তি দিতে ইচ্ছে করছে খুব! হিংসে হচ্ছে এই প্রকৃতির উপর, এই বৃষ্টির উপর। তোমাকে বৃষ্টি স্পর্শ করবে তা আমি মানতে নারাজ।
তোমাকে স্পর্শ করার অধিকার শুধুই আমার। ‘
কথাটি বলেই রিমির থুত্নি উচু করে ধরে রিমির ললাটে অধর ছুঁয়ালো রিমি। কেঁপে উঠলো রিমির সর্বাঙ্গ। অয়ন আরেকটু ঘনিষ্ট হলো রিমির। একেবারে মিশে যেতে চাইলো তার রিমিপরীতে। অয়নের সাথে রিমিরও বড্ড অবাধ্য হতে ইচ্ছে হলো। ইচ্ছে হলো নিজের স্বামীর ডাকে সাড়া দিতে। কি হবে এমন? যা হবে সবকিছু তো বৈধই হবে। বৃষ্টির তেজ বাড়ছে সময়ের সাথে তার সাথে সাথে বেড়ে চলেছে
দুই যুবক যুবতীর ভিতরের অস্হিরতা। রিমি একপলক অয়নের চোখের দিকে তাকালো। সঙ্গে সঙ্গে চোখ নামিয়ে ফেললো। অয়নের চোখের দিকে তাকানোর ক্ষমতা যে তার নেই। কেননা সেই চোখে রয়েছে আকুলতা রয়েছে অজস্র নেশা। অয়ন রিমির গালে হাত রাখলো। যুবকের ঠান্ডা হাতের স্পর্শে খানিক্টা কেঁপে চোখ বন্ধ করে ফেললো রিমি নামক রমনী। মনে প্রেম নামক সুন্দর অনুভুতি ধরা দিলো।
সত্যিই কি আবেগময় সুন্দর অনুভুতির নাম প্রেম। এই প্রেমে কি তবে রিমিও পড়ে গেলো? রিমি চোখ বন্ধ করার সঙ্গে সঙ্গে ভেঁসে উঠলো অয়ন এবং পায়েলের এন্গেজমেন্ট এর দৃশ্য। সঙ্গে সঙ্গে চোখ-মুখ খিচে নিজের থেকে সরিয়ে ফেললো অয়নকে। রিমির ধাক্কায় খানিক্টা পিছিয়ে পড়লো অয়ন। কপালের বলিরেখায় রাগে রগগুলো ধরা দিতে লাগলো অপষ্টভাবে। রিমি হুডিটা নিজের গায়ে জড়িয়ে হন্তদন্ত হয়ে ছুটে হসপিটালের ভিতরে ঢুকে গেলো। অয়ন রাগে বৃষ্টির মধ্যেই লাত্থি দিয়ে সমস্ত ফুলের টব নিমিষেই ভেঙ্গে গুড়িয়ে দিতে লাগলো।
আজ তো তার রিমিপরী এতোটা কাছে চলে এসেছিলো তার তবে আবারোও কেন দূরত্ব সৃষ্টি করলো তাদের মধ্যে? অয়ন বেঞ্চে বসে চুল খামচে ধরে রিমির যাওয়ার পানে তাকিয়ে অসহায় হয়ে বলে,
‘ রিমিপরী! এই দূরত্ব আমার সত্যি বিচ্ছেদের থেকেও দ্বিগুনভাবে ব্যাথিত করছে। খুব কষ্ট হচ্ছে। অসহ্য ব্যাথা হচ্ছে। সেই ব্যাথা কবে বুঝবে তুমি? ‘
অয়নের গভীর অনুরক্তি তার প্রেয়সীকে ঘিড়ে, কিন্তু তার প্রেয়সী কি তা শুনলো আদোও?
_________________
রিমি হসপিটালে ঢুকে একটা ক্লাসরুমে চট করে ঢুকে গেলো। এখন প্রায় সবাই তাদের বাড়িতে কিংবা হোস্টেলে চলে গিয়েছে। তাই ক্লাসরুম টা ফাঁকা পড়ে আছে। রিমি জোড়ে জোড়ে নিঃশ্বাস নিলো খানিক্টা।
আরেকটু হলেই বিরাট বড় ভুল করতে যাচ্ছিলো সে।
অয়ন তার স্বামী হলেও সে তো অন্য কারো। কয়েকদিন পরে অন্যকারো হয়ে যাবে তখন কি করবে রিমি? রিমি খুব ভালোভাবেই বুঝতে পারছে অজান্তেই সাইকো স্বাভাবের লোকটার প্রতি মন দিয়ে বসছে সে গভীরভাবে কিন্ত তা যে অন্যায় বিরাট অন্যায়! ‘প্রেম এমন এক জিনিস মানুষের অজান্তেই তা মানুষের মনের অন্তরালে গভীরভাবে চলে আসে। ‘ কথাটি রিমির মস্তিষ্কে বার বার নাড়া দিচ্ছে। পরক্ষনে রিমি নিজেকে সামলিয়ে নেয়। তাকে তার অনুভুতিকে মাটিচাপা দিতে হবে। যেই কাজের উদ্দেশ্যে সে চৌধুরী বাড়িতে ঢুকেছে সে কাজটি এইবার তাড়াতাড়ি করে অয়ন নামক মানুষটিকে মুক্তি দিয়ে চলে যাবে সে।
_____________
রিমির মামা সবেমাত্র কাজ সেরে সোফায় বসলেন। এলাকার চেয়ারম্যান তিনি। কম কাজ থাকে না তার। সারাদিন দৌড়াদৌড়ির উপর দিয়েই যেতে হয় তাকে। ভাগ্নির বিয়ে হয়েছে বেশ কয়েকটা দিন হয়ে গেলো কিন্তু এখনো তিনি ভাগ্নি এবং ভাগ্নির জামাইকে ডেকে আপ্পায়ন করতে পারলেন না। সে নিয়ে তার কত আফসোস! গ্রামের লোকেরাও কতকিছু বলাবলি করছে । নিশ্চয় মেয়ের সাথে তার স্বামীর ভনিবনা নেই তাইতো স্বামীকে নিয়ে বিয়ের পর একবারও বাপের বাড়িতে আসেনা। বিষয়টি খুব বেশি অস্বস্হিতে ফেলছে রিমির মামাকে। চেয়ারম্যান হওয়ায় তার সামনে কথাগুলো বলার কারোর সাহস না থাকলেও, কথাগুলো তার কানে ঠিকই এসেছে। গ্রামের লোকের কাজেই তো একটাই! তিলকে তাল বানানো। রিমির মা চা এনে রিমির মামার চেয়ারের সামনের টেবিলে রাখলেন।
তাকে দেখেও অনেক চিন্তিত লাগছে বটে। রিমির মামা চা খেতে খেতেই তার বোনকে প্রশ্ন করে বললেন,
‘ কি হয়েছে রে? তোকে এতো চিন্তিত মনে হচ্ছে কেন? ‘
‘ তুমি যেই চিন্তায় চিন্তিত। আমিও সেই একি চিন্তায় চিন্তিত বটে। ‘
‘ কেন? ‘
‘ গ্রামের লোক দশকথা রটাচ্ছে। জামাইকে এইবার ডেকে খাওয়াতেই হবে। নাহলে লোকের কথা থামানো যাবে না। ‘
‘ ঠিকই বলেছিস আমাকেই দেখতে হবে এখন।’
রিমির মামা ফোন বের করে রুহানা চৌধুরীর নাম্বারে ফোন দিলেন উদ্দেশ্য অয়ন এবং রিমিকে দাওয়াত দেওয়া।
________________
আমান প্লেনে উঠেছে কিছুক্ষন হলো। সকল যাত্রি নিজ নিজ কাজে ব্যাস্ত। আমান তো নিজের চিন্তায় বিভোর। বার বার শুধু ছটফট করছে তার পরানপাখি। কখন বাংলাদেশে যাবে আর কখনই বা
সে দেখা করবে তার রিমিপাখির সাথে। তখনি আমানের কানে গেলো কোন এক দম্পতির কথোপকথন। একজন বৃদ্ধ বয়স্ক লোক তার স্ত্রীকে বলছেন,
‘ বুঝলে অনু? সেদিন যদি তোমাকে জোড় করে নিজের না করতাম তাহলে বোধহয় আজকে আমাকে দেবদাস হয়েই থাকতে হতো। তোমার সাথে এই ত্রিশটা বছর সুখের মুহুর্তগুলো খাটানো হতো না। ‘
স্বামীর কথায় বয়াস্কা অনু হাসলো খানিকটা। আমানের মাথায় চট করে একটা কথা বেশ নাড়া দিয়ে উঠলো।
‘ অনেকসময় জোড় করে হলেও নিজের ভালোবাসা আদায় করে নিতে হয়। নাহলে আজীবন আফসোসের সাথেই পার করতে হয়। ‘
আমান কথাগুলো ভাবলো। সঙ্গে সঙ্গে তার প্রিয়তমা রিমিপাখির হাঁসিমাখা মুখশ্রী ভেসে উঠলো। আমানের মনেও বড্ড লোভ জন্ম নিলো তার প্রেয়সীকে নিজের করে পাওয়ার।
___________________
রিমি হসপিটালে নিজের ক্লাসে ঢুকে হতবাক হয়ে গেলো। পুরো ক্লাস রুম ফাঁকা। রিমি হাক ছেড়ে সবাইকে ডাকলো, কিন্তু কেউ আসলো না। রিমি ক্লাস রুম থেকে বেড়িয়ে দুতালার পুরো আনাচে কানাচে গেলো কিন্তু দুতালার করিডোরে কেউ নেই।
রিমিকে অবাক করে দিয়ে, কেউ রিমির হাত ধরে রিমিকে একটা ক্লাসের রুমে নিয়ে গেলো। রিমি অবাক হয়ে সামনের দিকে তাকিয়ে অয়নকে দেখে
খানিকটা স্বস্হি পায়। অয়ন ঠোটে চমৎকার হাসি ঝুলিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। রিমি অস্হিরতার সুরে বলে,
‘ এখানে কেউ নেই কেন? ‘
অয়ন খুব সহজভাবেই বললো,
‘ দুতালার এই ফ্লোরটা তো কেউ থাকবে না। সবাইকে আমি তিন তলার ফ্লোরে শিফট করেছি। শুধু তুমিই এই ফ্লোরে ক্লাস করবে এন্ড এখানে কোন স্টাফ থাকবে না। সবাই তোমার আসার আগেই কাজ সেরে চলে যাবে। ‘
রিমি অবাক হয়েই বলে,
‘ মানে এই ফ্লোরে শুধু আমি একাই থাকবো? কিন্তু কেন? ‘
‘ হুম। তুমিই তো বললে সবাই নাকি তোমার দিকে কেমন করে তাকায়। তোমার নাকি অস্বস্হি হয়।তাই সবাইকে তোমার থেকে আলাদা করে দিয়েছি। তোমার সমস্যা হয় এমন কাউকে তোমার আশে-পাশে আমি ঘেষতে দিবো না। তাছাড়া আমার রিমিপরীর দিকে কেন তাকাবে?আমার পরীর দিকে শুধু আমি তাকাবো। ‘
কথাটি বলেই রিমির হাত ধরে গভীরভাবে চুমু খায় অয়ন। রিমি অয়নের থেকে ছিটকে সরে যেতে চায় কিন্তু পারেনা অয়ন তাকে চেপে ধরে রেখেছে। রিমি অয়নের কথায় তেমন একটা অবাক হয়না শুধু চেয়ে থাকে অয়নের দিকে। লোকটা এমন কেন? এইভাবে তার থেকে সবাইকে দূরে সরিয়ে দিলো। অয়ন রিমির আরো কাছে গিয়ে বলে,
‘ তুমি চাইলে আমি তোমার জন্যে আলাদা হসপিটালের ব্যাবস্হা করে দিবো। আলাদা বড় বড় প্রফেসর শুধু তোমার জন্যেই আসবে রিমিপরী। ‘
রিমি সুদীর্ঘশ্বাস ফেলে। সে জানে রাগ করে কিছু হবে না। অয়ন এইরকমই। এখন যদি সে অয়নের সাথে দ্বিমত পোষন করে তাহলে অয়ন আরো রেগে যাবে। অয়ন যত রেগে যাবে ততই ক্ষতি। রিমি অয়নের চোখের দিকে তাকিয়ে আনমনে প্রশ্ন করে উঠে অয়নের উদ্দেশ্যে,
‘ এইভাবেও আগলে রাখা যায়? ‘
‘ আগলে রাখার অনেক ধরণ আছে রিমিপরী। আগলে রাখাটাই বড় ব্যাপার। কীভাবে আগলে রাখা হয় সেইটা কিন্তু বড় ব্যাপার নয়৷ ‘
অয়নের কথায় তখন কিছুই বলতে পারেনি রিমি।
__________
রিমি যথারিতিতে একা ক্লাস করেই বেড়িয়ে গেলো হসপিটাল থেকে একা। তখনি তার নজর গেলো পিছনের দিকে। সেদিনের মতো আজকেও তার পিছনে মহিলা গার্ডগুলো রয়েছে। রিমি বুঝতে পারছে না এই মহিলাগার্ডগুলো কেন তার পিছু নিচ্ছে? রিমি জোড়ে জোড়ে পা চালায় দ্রুত। মহিলগুলোও রিমির পিছনে আসতে থাকে, কিন্তু সেদিনের মতো রিমির ভাগ্য রিমির সহায় হয় না। আজকে রাস্তাটা সম্পূর্ন ফাঁকা। কোন গাড়িও নেই।
রিমি এইবার দৌড়ে রাস্তায় এপাশ থেকে ওপাশে চলে যেতে নিলে, কারো সাথে ধাক্কা খেয়ে পড়ে যায়। রিমি চোখ তুলে তাকিয়ে দেখে…..
চলবে….কী?