#তুমিময় নেশায় আসক্ত 🖤
#পর্ব- ২৪
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
অয়ন রিমিকে নিজের বক্ষে পরম শান্তিতে মিশিয়ে নিলো। রিমিও চুপটি করে মিশি রইলো অয়নের বুকের। অয়ন হঠাৎ রিমিকে নিজের থেকে ছাড়িয়ে নিলো। রিমি অবাক হলো এতে। অয়ন তাতে কোনপ্রকার ভ্রুক্ষেপ না করে, অভিমানের সাথে কিছুক্ষন তাঁকিয়ে রইলো তার প্রিয়তমার দিকে,কিন্তু আদোও কি তার প্রিয়তমা তার অভিমানের ভাষা বুঝতে পারছে?জানেনা অয়ন। রিমি শুধু নিষ্প্রান দৃষ্টিতে অয়নের পানে তাকিয়ে আছে। মানুষটারও তবে অভিমান হয়?কই আগে তো জানতো না রিমি। রিমি এবং অয়নকে একসাথে দেখে আমান হন্তদন্ত হয়ে বেড়িয়ে আসে। অতঃপর হাপাতে হাপাতে বলে,
‘ রিমিপাখি! ‘
আমানের কন্ঠস্বর শুনে রিমি এবং অয়ন একসাথে
আমানের দিকে তাকায়। রিমি একপলক আমান এবং একপলক ভয়ার্থ দৃষ্টিতে অয়নের দিকে তাকায়। এই বুঝি অয়ন কোন অনার্থ করে ছাড়বে। রিমির ভাবনার মাঝেই, আমান ছুটে এগিয়ে আসে তাদের সামনে। আমানকে এগোতে দেখে অয়ন রিমির হাত শক্ত করে চেপে ধরে,নিজের পিছনে নিয়ে আসে। রিমি স্পষ্ট দেখতে পারছে তার মামু হাতের ব্যাথায় কতটা কাতরাচ্ছে এবং রক্ত অনাবরত হাত থেকে গড়াচ্ছে। এইভাবে চলতে থাকলে তো রিমির মামুর অবস্হা গুরুতর থেকে গুরুতর হবে। রিমি অয়নকে ঝাঁকিয়ে বলতে থাকে,
‘ দয়া করে আমার মামুকে চিকিৎসার ব্যাবস্হা করে দিন। আমার মামুর অবস্হা ভালো না। দয়া করুন। ‘,
রিমির গভীর কষ্টমিশ্রিত অনুরোধ হয়তো মন গলাতে পারেনি অয়নের বরং তা অয়নের রাগকে দ্বিগুনভাবে বাড়িয়ে তুলছে সময়ের সাথে সাথে। অয়ন রিমির বাহু চেপে ধরে নিজের কাছে এনে বাজখাই গলায় বলে উঠে,
‘ যারা আমাকে তোমার থেকে আলাদা করতে চায় তাদের জন্যে এতো কিসের দরদ তোমার? সবার সব কষ্ট তুমি দেখতে পাও অথচ আমার বুকের তীব্র ব্যাথা তা দেখতে পাও না তুমি। কেন রিমিপরী আমি কি মানুষ নই? তুমি কি বুঝো না? তোমাকে ঘন্টার পর ঘন্টা না দেখে আমি কতটা পীড়িত হয়েছি আমি কতটা দহনে পুড়েছি তা তুমি জানো না রিমিপরী?কীভাবে জানবে আমার কষ্টটা তো তোমার কখনো চোখেই পড়ে না। ‘
রিমি চুপ হয়ে যায়। গলা থেকে সামান্যটুকু শব্দ ও বের হতে চাচ্ছে না তার। কি একটা বেদনাদায়ক অবস্হা। আজ যেন গলার স্বরও তার সাথে হরতালে নেমেছে। অদ্ভুদ এক হরতালে। অয়ন তার পেশিবহুল হাত দিয়ে এতোটা জোড়ে রিমিকে চেপে ধরেছে, যার ফলে রিমির ব্যাথার নেত্রকোণা ছলছল করছে। আমান হয়তো রিমির অবস্হা বুঝতে পারছে। তাই অয়নের সামনা সামনি দাঁড়িয়ে শক্ত কন্ঠে বলে,
‘ রিমিপাখি ব্যাথা পাচ্ছে। ওকে ছেড়ে দিন। ‘
অয়ন ঘাড় কাত করে অধরের কোণে বেশ ভয়ংকর হাসি ফুটিয়ে শীতল কন্ঠে বলে,
‘ আমার ওয়াইফের চিন্তা আমার থেকে আপনার বেশি মি ডক্টর আমান শিকদার। কিন্তু জানেন তো?
অন্য কারো জিনিস হাত দেওয়া কিংবা অন্য কারো ব্যাপারে ঢুকতে চাওয়াটা অনেক বড় একটা ভুল। সেখানে আপনি অয়ন চৌধুরীর রিমিপরীর দিকে হাত বাড়িয়েছেন সেখানে তো আপনার জীবন নিয়ে টানাটানি পড়ে যাবে।’
কথাটি বলে সঙ্গে সঙ্গে অয়ন আমানের বুক বরাবর লাত্থি দেয়। আমান ছিটকে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। ঠোট কেটে রক্ত বেড়িয়ে পড়ে। আমানের অবস্হা দেখে আরেকদফা উত্তেজিত হয়ে যায় রিমি। অয়ন রিমির হাত ধরে টানতে টানতে গাড়ির কাছে নিয়ে আসে। অতঃপর রিমিকে একপ্রকার ধাক্কা দিয়ে গাড়ির ভিতরে ছুড়ে মারে। রিমি নিজেকে কোনরকম সামলায়। অয়ন তার গার্ডসকে কিছু একটা ইশারা করে।।রিমি সেই চোখের ইশারা সহজেই বুঝে যায়। আমানের সাথে নিশ্চই কিছু খারাপ করবে অয়ন। কথাটি মাথাতে নাড়া দিয়ে উঠলেই, রিমির হাত বাড়িয়ে জানালার কাছ দিয়ে আমানকে এক পলক দেখতে পায়। অয়নের গার্ডসরা নির্মমভাবে মেরে চলেছে আমানকে। আমান চাইলেও আটকাতে পারছে না। রিমি ঢুকরে কেঁদে উঠে। আমান এখন তার প্রাক্তন হলেও, এই কথাটি তো সত্যি। একসময় আমান নামক যুবকের প্রতি তার মনে ভালোবাসা নামক অনুভুতি হয়তো এসে হানা দিয়েছিলো। রিমি ঠোট কামড়ে কান্না আটকানোর প্রচেষ্টায় থাকে। রিমিকে কাঁদতে দেখে অয়ন সজোড়ে কাচে ঘুসি দেয়। গাড়ির গ্লাস ভেঙ্গে ফেলে। রিমি হচকিয়ে যায়। অয়ন রিমির দিকে তাকিয়ে রিমির চোখের সযত্নে মুছিয়ে, পকেট থেকে টিস্যু বের করে রিমির হাতে ধরিয়ে দেয়। অতঃপর রিমির থেকে মুখ ফিরিয়ে রোষপূর্ন কন্ঠে বলে,
‘ চোখের জল দ্রুত মুছে ফেলো রিমিপরী। তোমার চোখের জল আমার সহ্য হয়না। সেখানে তুমি অন্যকারো জন্যে চোখের ফেলছো। সাহস কি করে হয় তোমার? দ্রুত চোখের জল মুছো।’
রিমি ঝটফট করে টিস্যু দিয়ে চোখের জল মুছলেও, ফুপিয়ে কেঁদে চলেছে। অয়ন সুদীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলে,
‘ আমার সবথেকে বড় আফসোস কি জানো রিমিপরী? তোমার যেই আখিতে আমি নিজের জন্যে
জল দেখতে চেয়েছিলে আজ সেই নেত্রকোনায় অন্য কারো জন্যে জলে পরিপূর্ন। ‘
রিমি কথাটি শুনে দীর্ঘশ্বাস ফেলে সিটে মাথা হেলিয়ে দিয়ে বসে থাকে। অয়নও কথা বাড়ায় না।
___________________
পায়েলকে কিছু মেয়ে গার্ডস হাত-পা বেঁধে, অন্ধকার রুম থেকে একটি সুবিশাল রুমে এনে ছুড়ে ফেলে। পায়েল ছিটকে পড়ে যায়। হাত-পা রিতিমত কাঁপছে তার। শরীরে সামান্য পরিমান শক্তিটুকুও নেই উঠে দাঁড়ানোর। মেয়ে গার্ডসগুলো তাকে এতোটাই মেরেছে। অয়ন ভিতরে ঢুকার সাথে সাথেই মহিলা গার্ডসগুলো উঠে দাঁড়িয়ে, অয়নকে কুর্নিশ জানায়। অয়ন পায়েলের সামনে থাকা সোফায় গিয়ে বসে পড়ে পায়ের উপর পা দিয়ে। অয়ন হাতের ইশারায় পায়েলের মুখের এবং চোখের বাঁধনটি খুলে দিতে বলে। মহিলা গার্ডসগুলোও চোখের বাঁধনটি খুলে দেয়। পায়েল চোখের সামনে দ্বিগুনভাবে কাঁপতে থাকে। অয়ন ঝুঁকে পড়ে পায়েলের কাছে।অতঃপর বাঁকা হেসে বলতে করতে থাকে,
‘ পায়েল তুমি কি ভয় পাচ্ছো ডার্লিং! দেখো আমি কিন্তু ভয় পাওয়ার মতো এমন কিছুই করেনি। তাহলে শুধু শুধু ভয় পাচ্ছো কেন? ‘
পায়েল শুকনো ঢুগ গিলতে থাকে।অতঃপর কাঁপাকাঁপা কন্ঠে বলে উঠে,
‘ অয়ন আমি তোমাকে ভালোবাসি কিন্তু তুমি আমাকে শুধু কষ্ট দিচ্ছো। কেন করছো এমন? ‘
অয়ন সঙ্গে সঙ্গে পায়েলের গালে সজোড়ে থাপ্পর দেয়। এতোটা জোড়ে থাপ্পর দেওয়ার ফলে পায়েলের গাল লাল হয়ে যায়। অয়ন চিৎকার করে বলে,
‘ ইউ ডাফার গার্ল! এইসব ভালোবাসার মিথ্যে অভিনয় অন্তত আমার সাথে করতে এসো না। এতোদিন সব জেনেও আমি চুপ ছিলাম। শুধুমাত্র রুহানা চৌধুরীর জন্যে,কিন্তু আমি আজ চুপ থাকবো না। ‘
‘ মিথ্যে ভালোবাসা ‘ শব্দটি অয়নের মুখে শুনে অবাকের শীর্ষে চলে যায় পায়েল। পায়েলের অবাক মুখশ্রী দেখে অয়ন দাঁতে দাঁত চেপে বলে,
‘ তুমি কী ভেবেছিলে? এই অয়ন চৌধুরী এতোটাই বোকা? তোমার প্ল্যান সম্পর্কে কিচ্ছুটি জানবে না।
আমি সবকিছুই জানি। তুমি ভেবেছিলে,
তুমি আমাকে বিয়ে করে চৌধুরী ফ্যাশনের পুরো মডেলিং এর পাওয়ার নিজ হাতে নিয়ে নিবে। তারপর পুরো চৌধুরী ফ্যাশন তোমার হাতে। সবাই তোমার হাতের ইশারায় নাঁচবে। চৌধুরী বাড়ির ট্যাগ লেগে গেলেই তো সব পাওয়ার তোমার হাতেই। বাট আফসোস তার আগেই আমার বিয়ে রিমিপরীর সাথে হয়ে গেলো। তাই তুমি রুহানা চৌধুরীকে দিয়ে কন্টিনিউয়াসলি আমার এবং রিমিপরীর মাঝে ঢুকতে চাইছো। ‘
পায়েলের মুখ কালো হয়ে যায়। নেমে আসে তার মুখশ্রীতে ঘোর অন্ধকারের ছাঁয়া। অয়ন আরেকদফা হেসে টিভিটা চালু করে। চোখের ইশারায় পায়েলকে
টিভির দিকে তাকাতে বলে। পায়েলও টিভির পর্দায় চোখ যেতেই আৎকে উঠে। কেননা টিভির পর্দায় স্পষ্ট ব্রেকিং নিউজ হিসেবে দেখানো হচ্ছে, পায়েলের একটি ছোট্ট ভিডিও ক্লিপ। যেই ভিডিও তে দেখানো হচ্ছে পায়েল তার সেক্রিটারিকে বলছে সে অয়নকে বিয়ে করতে চায় শুধুমাত্র স্বার্থের জন্যে। সেই ভিডিও টা পাওয়া মাত্র অয়ন মিডিয়ার কাছে পৌঁছে দিয়েছে। মিডিয়ার লোকে মিডিয়াতে রটিয়ে বেড়াচ্ছে,
‘ দেখুন মডেল পায়েলের ভালো মানুষি মুখোশের আড়ালে এক স্বার্থপর লোভী মেয়ের গল্প রয়েছে। ‘
পায়েল মাথা হাত দিয়ে চিৎকার করে বিড়বিড় করতে থাকে,
‘ শেষ! আমার সব শেষ। আমার ক্যারিয়ার। আমার মিডিয়া সব শেষ। ‘
অয়ন শুধু বাঁকা হাসে। হঠাৎ পায়েলের রাগ মাথায় চওরা দিয়ে উঠে। পায়েলের হিতাহিতজ্ঞান প্রায় শূন্য হতে থাকে। পায়েল উঠে দাঁড়িয়ে অয়নের কলার চেপে ধরে।
________________
রিমি আপাতত অয়নের ঘরে বসে আছে। অয়ন তাকে বাড়িতে এনেই, রিমিকে নিজের ঘরে রেখে দরজা বাইরে থেকে আটকে রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছে। রিমি সেই অনেক্ষন ধরে ঘরটায় বসে আছে। কিছুক্ষন আগেও কয়েকজন সার্ভেন্ট এসে রিমির জন্যে খাবার রেখে পুনরায় দরজা বন্ধ করে চলে গিয়েছে। তাদের ভাষ্যমতে অয়ন আদেশ দিয়ে গিয়েছে,যেন রিমি অয়ন ফিরে আসার আগে সব খাবার খেয়ে নেয়। রিমির মনের উপর দিয়ে এখন এক বিশাল ঝর বয়ে চলেছে। রিমির বড্ড চিন্তা হচ্ছে নিজের বাড়ির লোকের জন্যে। এমনকি আমানের জন্যেও। অয়ন যা মানুষ আমানকে মেরে ফেলতে তা হাতটুকু কাঁপবে না। রিমি প্রায় একটা দমবন্ধকর অবস্হায় রয়েছে। এমন একটা পরিস্হিতিতে সে চাইলেও তার গলা দিয়ে খাবার নামবে না। রিমির হাতের কাছে ফোনটাও নেই। রিমির নিজেকে বন্দী মনে হচ্ছে,যে অয়নের খাঁচায় চিরতরের জন্যে বন্দী হয়ে গিয়েছে। রিমির ভাবনার মাঝেই, দরজার কাছ থেকে ফারহানের গলার আওয়াজ পায়। ফারহান হাঁটছে এবং ফোনে কাউকে বলছে……
চলবে…কী?
#তুমিময়_নেশায়_আসক্ত 🖤
#পর্ব- ২৫
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
পায়েল অয়নের কলার চেপে ধরে ক্রোধে, মাত্রাধিক ক্ষোভে। তার ভাষ্যমতে সে নিজের স্বার্থের জন্যে অয়নকে বিয়ে করতে চাইলেও,অয়ন তাকে ঠকিয়েছে। তাকে বিয়ে করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে অন্য কাউকে বিয়ে করেছে। প্রতিউত্তরে অয়ন পায়েলকে
নিজের থেকে ছাড়িয়ে, আরেকদফা থাপ্পড় মেরে,একরোখা কন্ঠে বলেছে,
‘ আমি তোমাকে কখনো ঠকায়নি। তুমি আজ নিজের কর্মের ফল পেয়েছো শুধুমাত্র,কিন্তু এখনো তোমার পাপের শাস্তি পূর্ন হয়নি। ‘
‘ মানে? আর কত শাস্তি দিবে তুমি আমাকে অয়ন? ‘
পায়েলের প্রশ্নে অয়ন পায়ের উপর পা তুলে দায়সারা ভাবে বলে,
‘ তুমি যেন ভবিষ্যতে আমার এবং রিমিপরীর মাঝে ঢুকতে না পারো। সেই ব্যাবস্হাই করবো আমি। না থাকবে ফুল না থাকবে কাটা। ‘
অয়নের হিম করা কন্ঠে কথাটি শুনে তরতর করে ঘামতে থাকে পায়েল। হাতপাগুলো নিজের গতি নিয়ন্ত্রন করে ফেলে। মাথা ঘুড়াবে মনে হচ্ছে তার। অয়নের কথার ধরনে খুব স্পষ্টভাবেই বুঝা যাচ্ছে অয়ন পায়েলকে মেরে ফেলার কথা বলছে। পায়েল বুঝতে পারছে না সে কি করবে।কীভাবে অয়ন নামক সাইকোর থেকে নিজেকে বাঁচাবে। পায়েলের ভাবনার মাঝেই, অয়ন হাত দিয়ে ইশারা করে মহিলা গার্ডসগুলোকে পায়েলকে নিয়ে যেতে। মহিলা গার্ডসগুলোও পায়েলকে নীচ থেকে উপরে উঠিয়ে নেয়। অয়ন পায়েলের গাল চেপে ধরে ঠোট কামড়ে হেসে বলে,
‘ পায়েল ডার্লিং! আর মাত্র একটা দিন সময় আছে তোমার হাতে। ইঞ্জয় ইউর ডে। ‘
কথাটি বলে অয়ন চলে যেতে নিলে, তার মাঝে ফোড়ন কেটে কাঁপাকাপা গলায় পায়েল বলে উঠে,
‘ কার কাছে কতটু্কু সময় রয়েছে, তা তো সঠিক সময় এলেই বুঝা যাবে অয়ন চৌধুরী। পায়েল রুজানা এতো সহজে মরবে না। আজকে যার জন্যে তুমি আমার থেকে আমার সব কিছু কেড়ে নিয়েছো।তাকেই আমি তোমার থেকে কেড়ে নিয়ে,
তোমাকে পুরোপুরি উম্মাদে পরিনত করবো আমি। ‘
পায়েলের কথাটি কানে আসতেই, অয়নের মুখস্রীতে অদ্ভুদ ক্রোধের গাঢ় লাল রং এসে হানা দেয়। আখিজোড়া ক্রমোশ লাল হয়ে উঠে। ‘পায়েল অয়নের থেকে তার রিমিপরীকে কেড়ে নিবে ‘কথাটি
মাথায় চওড়া দিয়ে উঠতেই রেগে ফেটে পড়ে অয়ন।
তড়িঘড়ি করে পিছনে ঘুড়ে পায়েলের গলা চেপে ধরে। পায়েলের গলায় চেপে ধরায় পায়েলের নেত্রকোনা থেকে জল গড়িয়ে গালে এসে ঠেকছে। শ্বাস নিতেও কষ্ট হচ্ছে তার। এই বুঝি সে মরেই যাবে চিরতরের জন্যে। অয়ন কি একটা ভেবে পায়েলকে তৎক্ষনাৎ ছেড়ে দিলো। অতঃপর হিম ধরা শীতল গলায় বলে উঠলো,
‘ তোমার মতো স্টুপিড মেয়েকে মেরে ফেলা আমার বা হাতের খেল,কিন্তু আমি আজকে তোমাকে মারবো না। বিখ্যাত মডেল পায়েল রুজানা তুমি। তোমার মৃত্যুটা একটু স্পেশালভাবে হবে। ‘
কথাটি বলেই অয়ন চোখে তার কালো সানগ্লাসটা পড়ে বেড়িয়ে গেলো দ্রুত পায়ে হেটে।
______
অপরদিকে রিমি দরজায় কান পেতে খুব ভালো করেই শুনতে পারছে ফারহানের কথাগুলো। ফারহান ফোনে কাউকে বলছে,
‘যত টাকা লাগে আপনি নিন কিন্তু পেশেন্ট যেন সুস্হ হয়ে যায়। আপ্নারা দ্রুত ওটির ব্যবস্হা করুন। আমি কালকে সকালের মধ্যেই হসপিটালে চলে আসবো।’
ফারহান কথাটি বলেই ফোনটি রেখে দিলো। অতঃপর ধীর পায়ে স্হান ত্যাগ করলো। রিমি হচকিয়ে গেলো। বেশ বিস্ময় নিয়ে ফারহানের কথাগুলো ভাবতে লাগলো। ফারহান কার জন্যে কালকে হসপিটালে যাবে? ফারহান বেশ লুকিয়ে কথাটি বলছিলো যার মানে এই বিষয়ে ফারহান ছাড়া এই বাড়ির কোন লোক কিচ্ছুটি জানে না। রিমি একবার ভাবলো ফারহানের পিছন পিছনে সে হসপিটালে গিয়ে সত্যিটা তাকে খুঁজে বের করতে হবে। তাহলে হয়তো সে তার অনেক প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পাবে।পরক্ষনেই সে ভাবলো অয়ন থাকতে কি সে আদোও কাজটি করতে পারবে?এমনিতেই অয়ন প্রচন্ড রেগে আছে রিমির উপর। রিমি হয়তো তার প্রশ্নের উত্তর কখনোই পাবে না। কথাটি ভেবে দীর্ঘশ্বাস ফেললো রিমি। রিমির ভাবনার রেশ কাটতে না কাটতে দরজা খট করে অয়ন প্রবেশ করলো। রিমি অয়নের দিকে তাকালো। অয়নও রিমির এক পলক তাকিয়ে নিজের শার্টটা খুলে, ওয়াশরুমে চলে গেলো। রিমি অয়নের দিকে অদ্ভুদ দৃষ্টিতে তাকলো। অন্যদিন হলে অয়ন তাকে জড়িয়ে ধরতো এসেই কিন্তু আজ তার ব্যাতিক্রম। হয়তো অভিমানের পরিমান প্রখর। রিমিও অয়নের ব্যাপারটি নিয়ে মাথা ঘামালো না। অয়নের প্রতি শুধু ঘৃণা এসে বাসা বাধছে তার মনে। কতটা নির্মমভাবে অয়ন তার মামুকে মারলো। আমানের অবস্হাও হয়তো খুব সচনীয়। তাদের একটা খবরও রিমি পাচ্ছে না। বড্ড চিন্তা হচ্ছে নিজের পরিবারের জন্যে। রিমির ধারণামতে আজ অয়নের সাথে নিজের জীবন জড়িয়ে সে অনেক ভুল করে ফেলেছে। তার এই ছোট্ট ভুলের মাশল তার পরিবারকে গুনতে হচ্ছে। অয়ন ওয়াশরুম থেকে বেড়িয়ে এসে দেখতে পায় তার রিমিপরীর আখিতে অশ্রু টলমল করছে। যেকোন সময় বৃষ্টির মতো তা ঝড়ে পড়বে গাল বেয়ে। অয়ন দেয়ালে শব্দ দিয়ে ঘুষি মারে। কেঁপে উঠে রিমির সর্বাঙ্গ। অয়ন উঠে দাঁড়িয়ে রিমির গাল চেপে ধরে, তিক্ত সুরে বলে,
‘ বললাম না কাঁদবে না। তবুও কেন কাঁদছো। তোমার ওই নেত্রজোড়ায় যদিকোন জল এসে হানা দেয়। তা শুধু অয়ন চৌধুরীর জন্যে। অন্য কারো জন্যে নয়। ‘
রিমির মেজাজ তঙ্গে উঠে যায়। নিজের থেকে অয়নকে ছাড়িয়ে নিয়ে দ্বিগুন চিৎকার করে বলে,
‘ আমাকে কি আপনি নিজের মতো নির্দয় মনে করেছেন? আপনার আপনার পরিবারের জন্যে ভালোবাসা না থাকলেও, আমার নিজের পরিবারেী জন্যে ভালোবাসা রয়েছে। তারা আমাকে ছোটবেলা থেকে বড় করেছে। ‘
‘ ভালোবাসা থাকলেও, তা এখনি নিজের হৃদয় থেকে মুছে ফেলো রিমিপরী। তোমার হৃদয়ে মনে শুধু
অয়ন চৌধুরী জন্যে ভালোবাসা থাকবে। ‘
অয়নের একরোখা কথায় রিমি আশাহত হয়। সে জানে অয়নকে সে যত কিছুই বলুক। অয়ন কিছুতেই রিমির কথাকে গুরুত্ব দিবে না। রিমি তপ্ত নিঃশ্বাস ছেড়ে অয়নের কাছে গিয়ে, কান্না ভেজে গলায় বললো,
‘আমার মনে, আমার জীবনে প্রতিটি পদক্ষেপে আপনি শুধুমাত্র নিজের অস্তিত্ব বিস্তার করতে চাইছেন, এইটা কী বলে জানেন? অসুস্হ ভালোবাসা। দেখবেন আপনার এই অসুস্হ ভালোবাসাটাই আমাকে আপনার থেকে অনেক দূরে নিয়ে যাবে। ‘
অয়ন রিমির কথা শুনে, রিমির দিকে হাত বাড়ায় থাপ্পড় মারার জন্যে কিন্তু মারেনা। হাত নামিয়ে ফেলে। রাগ প্রচন্ড মাথায় চড়ে বসেছে তার। তার ভালোবাসাকে তারই রিমিপরী অসুস্হ ভালোবাসার নামক উপাধি দিয়ে দিলো। ভাবতেই মাথায় রক্ত চড়ে যাচ্ছে অয়নের। অয়ন নিজের রুমের পাশের স্টাডি রুমে চলে যায়। ফেলে গুড়িয়ে ফেলে সমস্ত জিনিস। রিমি ঠোট কামড়ে দাঁড়িয়ে থাকে। অয়ন স্টাডি রুমের দরজা খট করে বন্ধ করে দেয়। অতঃপর ড্রয়ার থেকে ওষুধ বের করে চটজলদি খেয়ে নেয়। অয়ন সোফায় ধপ করে বসে পড়ে। মাথার ব্যাথা প্রচন্ড নাড়া দিয়ে উঠেছে তার। চুল খামচে ধরে সে। আপনমনে বিড়বিড় করতে থাকে,
‘ রিমিপরী তুমি আমাকে বুঝেও বুঝতে চাইলে না। এতোটা অবুঝ হয়ে থেকো না পরী। আমার কষ্ট হয়। ‘
_______________
রুহানা চৌধুরী এবং তার আশরাফ চৌধুরী ড্রইং টেবিলে বসে আছেন। রুজা চৌধুরী এবং মেঘ ও বসে আছে। সার্ভেন্টরা তাদের খাবার পরিবেশন করে দিচ্ছে। রিমি দরজা খুলে বাইরে বেড়িয়ে আসে। অয়ন এখনো স্টাডি রুমে দরজা বন্ধ করে রয়েছে। রিমিকে বেড়োতে দেখে, মেঘ উঠে দাঁড়িয়ে রিমির হাত ধরে বলে,
‘ রিমিপু তুমি এসেছো? জানো একদিনেই তোমাকে কতটা মিস করেছি আমি। এসো আজ তুমি আমাদের সাথে বসেই ডিনার টা সেড়ে নাও। ‘
মেঘের এমন আবদারে নাখোচ করতে পারছে না রিমি। মেয়েটা বড্ড ভালোবাসে তাকে। এই বাড়িতে আসার পর এই মেয়েটাই তো তাকে একদম কাছ থেকে আপন করে নিয়েছে। রিমি মেঘাকে না করতে পারেনা। হাত ধরে ড্রাইনিং টেবিলে বসিয়ে দিয়ে, নিজেও রিমির পাশে বসে পড়ে। রুহানা চৌধুরী ক্ষিপ্ত চোখে তাকিয়ে আছেন রিমির দিকে। আজ এই মেয়েটার জন্যেই তার ব্যবসার এতো ক্ষতি হয়েছে,কিন্তু রুহানা চৌধুরী চাইলেও কিছু বলতে পারছে না। অয়ন এমনিতেই রেগে আছে। তারমধ্যে রিমিকে তিনি কিছু করলে অয়ন আরো ভয়ংকর কিছু করে বসতে পারে। সার্ভেন্ট এসে রিমিকে খাবার পরিবেশন করে দিয়ে যায়। রুহানা চৌধুরী রিমিকে উদ্দেশ্য করে খাবার খেতে খেতে বললেন,
‘ তা রিমি! এতো বড় টেবিলে নিশ্চয় কোনদিন খাওনি। খাবে কীকরে এতো বড় টেবিল তুমিতো দেখোই নি। ক্লাস বলে তো কিছুই নি। সারাজীবন মামার ঘাড়ে বসে খেয়েছো। ‘
রিমি সরু চোখে তাকায় রুহানা চৌধুরীর দিকে। রিমি খুব ভালো করে বুঝতেই পারছে রুহানা চৌধুরী তাকে জব্দ করার জন্যেই কথাটি বলেছে। রিমি কিছু বলবে, তার আগেই অয়ন……….
চলবে…কী?