তুমিময় আসক্তি পর্ব-০৭

0
1230

#তুমিময়_আসক্তি
#কলমে_আলো_ইসলাম

“৭”

–” দোলা চা দিয়ে চলে আসছিলো তখনই জাহির চৌধুরী পেছন থেকে ডেকে উঠে দোলাকে। জাহির চৌধুরীর ডাকে থেমে যায় দোলা। পিছু ঘুরে মিষ্টি হাসি ঝুলিয়ে বলে কিছু বলবেন বাবা?

– জাহির চৌধুরী মুখটা ছোট করে বলে রুদ্র কাল বেশি রিয়াক্ট করেছে তাই না রে মা?

-দোলার মুখটা ফ্যাকাসে হয়ে যায় রাতের কথা মনে আসতে। তারপরও দোলা সব কিছু সরিয়ে মুখে হাসি নিয়ে বলে ওই একটু আর কি। জানেনই তো আপনার ছেলেকে। তবে সমস্যা নেই আমি কিছু মনে করিনি তাছাড়া তিনি তো আমার স্বামী।

– দোলার এই কথাটা অনেক ভালো লাগে জাহির চৌধুরী। মুখে তার প্রাপ্তির হাসি ঝুলে। তুই সত্যি অনেক ভালো মেয়ে দোলা। আমি মানুষ চিনতে একদম ভুল করিনি। আমার বিশ্বাস তোর উপর সব সময় অটুট ছিলো আর থাকবে। আমি জানি তুই সব পারবি। আমার পরিবারটা হাসি খুশি করতে একমাত্র তুই পারবি আমি জানি।

– দোলা মুচকি হেসে বলে দোয়া করবেন৷ আমি চেষ্টা করবো। জানি না সফলতা কতটুকু আসবে৷ তবে আমি সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো কথা দিচ্ছি। আচ্ছা দুপুরে কি খাবেন বলুন? আজ কিন্তু সব রান্না আমি করবো হাসি মুখে বলে দোলা।

– একদম না দোলা মা। তুই রান্নাঘরে যাবি না। তোকে সংসারের কাজ করতে হবে না৷ এর জন্য অনেক মানুষ রেখেছি আমি। তুই শুধু আমার ছেলেটাকে দেখ আর পড়াশোনায় মনোযোগ দে তাহলে হবে।

– তা বললে তো শুনবো না বাবা। আজ আমি রান্না করবো এটাই শেষ কথা। তাছাড়া এটা আমার সংসার। তাই আমার তো নিজের মতো সব গুছিয়ে নেওয়া লাগবে। আপাতত যতদিন আমি আছি ততদিন এই সংসার টা আমি নিজের মতো করে সাঁজিয়ে রাখতে চাই।

– দোলার বলা শেষের কথাটা জাহির চৌধুরীর ভালো লাগে না। তাই সে ভ্রু কুচকে বিষ্ময় নিয়ে বলে যতদিন আছিস মানে। এটা তোর সংসার আর তুই থাকবি সারাজীবন এখানে।

– দোলা মুখের হাসিটা সরিয়ে মলিন চেহারায় বলে জানি না বাবা সত্যি কতদিনের সংসার আমার কপালে আছে। তবে আপনার ছেলে না চাইলে আমি এই বাড়ি থাকবো না। কিন্তু সেটা সে ঠিক হওয়ার পরে। মেয়েদের জন্য সম্মান, শ্রদ্ধা সব কিছু তার মধ্যে জাগ্রত করে তবেই আমার দম। মেয়েদের জন্য তার মধ্যে যে ভুল ধারণা সে সব আমি ভেঙে গুড়িয়ে দেবো। তবে আমি একটা জিনিস এখনো বুঝে উঠলাম না ভাবুক হয়ে বলে দোলা।

– দোলার কৌতুহলপুর্ণ চেহারা দেখে জাহির চৌধুরী বলেন কি বুঝিস নাই তুই?
– আচ্ছা বাবা ছোট সাহেবের মেয়েতে এলার্জি কেনো? মানে উনি মেয়েদের কেনো সহ্য করতে পারেন না?

– দোলার এই প্রশ্নে চমকে উঠে জাহির চৌধুরী। তার চোখ মুখ দেখে মনে হচ্ছে দোলা অনেক গভীর একটা প্রশ্ন তাকে করে ফেলেছে যেটা করা দোলার একদম উচিত ছিলো না।

– আচ্ছা রুদ্র কি এখনো উঠেনি ঘুম থেকে ভ্রু কুচকে প্রশ্ন করে জাহির চৌধুরী। আসলে দোলার কথাটা উপেক্ষা করার চেষ্টা এটা। দোলা ভাবান্তর হয়ে বলে কি জানি বাবা। আমি তো অনেক আগে নিচে নেমেছি আর যাওয়া হয়ে উঠেনি ওইদিকটা। আমি দেখছি বলে দোলা রান্না ঘরে চলে যায় রুদ্রর কফি জন্য নিয়ে যাবে তাই। তবে দোলা খুব ভালো করে বুঝতে পারে জাহির চৌধুরী বিষয়টা খুব সংগোপনে এড়িয়ে গেলেন।

–“রুদ্র প্রতিদিন সকালে ব্ল্যাক কফি খাই এটা দোলা জেনেছে সার্ভেন্টের থেকে। দোলা আসলে সবার সব পছন্দ অপছন্দ প্রায় সবটা জেনে নিয়েছে সার্ভেন্টের থেকে।

– দোলা রুদ্রর জন্য কফি করে সেটা একটু টেস্ট করে দেখার জন্য মুখে নেয় অল্প করে। সব ঠিক আছে নাকি দেখার জন্য মুলত এটা। এই প্রথম ব্ল্যাক কফি করছে দোলা। তাই কেমন হয়েছে কৌতুহল থেকে কফিটা টেস্ট করতে চাওয়া তার। দোলা কফি এক চুমুক মুখে নিতেই ওয়াক থু থু করে মুখের সবটুকু কফিটুকু ফেলে দেয়। এরপর পানি দিয়ে কুলকুচি করে বলে এই তেতো কফি খাই কি করে ওই রাক্ষস টা। অবশ্যই তার জন্য তেতোই মানানসই। এই জন্য মুখ দিয়ে এতো তেতো তেতো কথা বের হয়৷ আস্ত রাক্ষস একটা বলে একটা ফু ফুঁকে সাহস নিয়ে রুদ্রর ঘরের দিকে যায়। ওই সময় রুদ্র উপর থেকে একজন সার্ভেন্টকে ডেকে বলে তার ঘরে কফি দিয়ে যাওয়ার জন্য। রুদ্রর কথায় দোলা নিশ্চিত হয় রুদ্র দরজা খুলেছে। সেতো দরজা খোলার চিন্তা নিয়ে চিন্তিত ছিলো এতখন।

– বাহ দোলা তোর কি টাইমিং। একদম পার্ফেক্ট টাইমে কফিটা নিয়ে যাচ্ছিস৷ তোকে আর কষ্ট করে দরজা খোলাতে হবে না৷ একদম সোজা হেঁটে ভতরে চলে যাবি। এইসব আপন ভাবতে ভাবতে উপরে উঠে দোলা। নিচ থেকে জেসমিন চৌধুরী দোলাকে কফি নিয়ে যেতে দেখে মুচকি হেসে বলে যাও যাও এরপর বুঝবে। তোমার ওই হাসি মুখ কান্নায় পরিণত হয়ে ফিরে আসবে বলে ডাইনিং-এ বসে সে নাস্তা করার জন্য।

— আজ শুক্রবার। অফিস বন্ধ থাকায় রুদ্র সেদিনটা বাড়িতে থাকে৷ দরকারে বের হয়। কিন্তু রুদ্রর আজ একটা মিটিং আছে অফিসের বাইরে। তাই সে মিটিং এটেন্ড করার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে।

– রুদ্র ওয়াসরুম থেকে শাওয়ার শেষ করে বেরিয়ে আয়নার সামনে দাঁড়াতেই দেখে দোলা তার পেছনে কফি হাতে দাঁড়িয়ে। মুখে অপরুপ হাসি ঝুলানো।

– রুদ্র দোলাকে দেখে বিরক্ত নিয়ে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে থাকে কয়েক সেকেন্ড। এরপরে কড়া গলায় বলে তুমি এখানে?

– তো আর কে থাকবে? সরল ভাবে জবাব দেয় দোলা। দোলার এমন হেয়ালিপণা দেখে রুদ্র রাগে তার হাতে থাকা চিরুনি টা মাটিতে ছুড়ে ফেলে জোরের সাথে। এতে দোলা ভয়ে কেঁপে ওঠে। হাত-পা তার কাঁপাকাঁপি শুরু হয়ে গেছে অলরেডি। রুদ্রর সামনে আসলেই তার ভয় করে কিন্তু সেটা আড়ালে রাখার চেষ্টা করে সে। কিন্তু রুদ্র এমন সব কান্ড করে দোলা চাইলেও সেই মুহূর্তে ভয়টা দমিয়ে রাখতে পারে না।

– তোমার সাহস দেখে আমি অবাক হচ্ছি। খুব চালাক আর ধুরন্তবাজ মেয়ে তুমি। ভেবেছো এইভাবে বিরক্ত করে আমার আশেপাশে থেকে আমার মন জয় করবে। শুনো মেয়ে যদি এই সব চিন্তা ভাবনা করে থাকো তাহলে তোমার জন্য প্রচুর সমবেদনা আমার তরফ থেকে। আমি রুদ্রনীল চৌধুরী কখনো কোনো মেয়েকে এলাউ করিনা লাইফে৷ আর সেখানে তুমি তো আমার অপছন্দের তালিকায় আছো এখন। তাই তোমাকে সহ্য করার প্রশ্নই আসে না। আউট মাই রুম শান্ত গলায় বলে কথাটা রুদ্র। কিন্তু দোলার ভীষণ কান্না পাচ্ছে রুদ্রর বলা কথাগুলো শুনে৷ রুদ্র যে তাকে লোভী, স্বার্থবাদী মনে করে এটা দোলা বেশ ভালো রকম বুঝে গেছে।

– দোলা চোখের পানিটা আড়াল করে মুখে হাসি নিয়ে এসে বলে শুনুন যত যায় বলুন না কেনো আমি আপনার স্ত্রী এটা কিন্তু অস্বীকার করতে পারবেন না।

– মানি না আমি। দোলার কথা শেষ হতেই বলে উঠে রুদ্র। আগেও বলেছি এখনো বলছি এই বিয়েটা শুধু মাত্র ড্যাডের জন্য করা এর বেশি কিছু না। আমি তোমাকে আমার স্ত্রী মানি না। তুমি কেনো পৃথিবীর কোনো মেয়েকেই আমি আমার জীবনে জায়গা দেবো না৷ মাইন্ড ইট, নাও গেট লস্ট।

– দোলা রুদ্রর কথা উপেক্ষা করে একবারে রুমের মধ্যে ঢুকে গিয়ে বলে দেখুন কাল থেকে বাইরে আছি আমি। সেই এক শাড়িতে ঘুরে বেরাচ্ছি এসে পর্যন্ত। আমার ফ্রেশ হওয়া লাগবে। এইভাবে আর ভালো লাগছে না। আপনি আপনার কাজ করুন আর আমাকে আমার কাজ করতে দিন। কথাটা বলে দোলা রুদ্রর সামনে কফিটা ধরে বলে এই নিন আপনার কফি এটা খেয়ে আমাকে উদ্ধার করুন দয়া করে। আমার অনেক কাজ হাতে গা ছাড়া ভাব নিয়ে বলে দোলা।

– রুদ্র দোলার চোখের দিকে তাকায় একবার আরেকবার কফির দিকে। এরপর মুচকি হেসে কফিটা দোলার হাত থেকে নেয়। রুদ্রর এমন বিহেভে দোলা শকড হয়ে যায়। চোখ মুখে তার চরম বিষ্ময়।

– রুদ্র কফিটা হাতে নিয়ে দু কদম পিছিয়ে মাটিতে ছুড়ে ফেলে চিৎকার করে বলে রসিকতা হচ্ছে আমার সাথে? ফাজলামি পেয়েছো সব কিছু। সব কিছুর একটা লিমিট থাকে। তুমি সব লিমিট ক্রস করে যাচ্ছো অলরেডি। অনেক সহ্য করছি তোমাকে আর নয়। রুদ্র রাগে তেড়ে আসে দোলার দিকে।
– দোলার দুই বাহু শক্ত করে চেপে ধরে। শক্ত করে ধরায় দোলার বাহুতে ব্যথা করে। দোলা ব্যথায় কুঁকড়ে উঠে। চোখের পাপড়ি গুলো অশ্রুসিক্ত হয়ে উঠে। মায়াভরা চাহনি নিয়ে তাকায় রুদ্রর দিকে দোলা।

– এই মেয়ে কি সমস্যা তোমার হ্যাঁ? কেনো এমন করছো আমার সাথে। তোমাকে আমার সহ্য হচ্ছে না বুঝতে পারছো না। তোমাকে ঘৃণা করি আমি এটাও কি বুঝতে পারছো না৷ নাকি সব বুঝেও না বোঝার ভান করছো। কি ভেবেছো এই রুদ্রনীল চৌধুরীর মন জয় করে নিবে এইভাবে৷ আমাকে কি বোকা মনে হয় তোমার। আমি তোমাদের মতো মেয়েকেই ঘৃণা করি বুঝেছো।। তোমরা শুধু নিজের স্বার্থ বুঝো এর বেশি তোমাদের থেকে আশা করা যায় না। চিৎকার করে বলে কথা গুলো রুদ্র।

দোলা নির্বাক হয়ে রুদ্রর কথা গুলো শ্রবণ করছে। নিজের উপর নিজেরই রাগ হচ্ছে দোলার। আর কত নিচে নামবে এই মানুষটার কাছে সে। আর কত অপমান সহ্য করতে হবে তাকে৷ দোষ না করেও তাকে অপরাধীর কাতারে দাঁড়াতে হচ্ছে। এর থেকে অসম্মানের আর কি হতে পারে একটা মেয়ের জীবনে।

– দোলাকে চুপ থাকতে দেখে রুদ্র আরো বেশি বিরক্ত হয় সাথে রাগটাও বৃদ্ধি পেতে থাকে। রুদ্র আগের তুলনায় আরো বেশি শক্ত করে চেপে ধরে দোলার বাহু। দোলার এবার সহ্য করার ক্ষমতা লোপ পায়। অনেক ব্যথা করতে থাকে রুদ্রর ধরা জায়গাটা।

; শেষবারের মতো বলছি। আমার থেকে দূরে দূরে থাকবে। তোমার মুখও দেখতে চাই না আমি। এই ঘরের আশেপাশে আসার চেষ্টাও করবে না আর। যা ইচ্ছে করো “নট মাই সাব্জেক্ট ” কিন্তু আমার ধারেকাছেও যেনো আর না দেখি তোমায় বলে দোলাকে ধাক্কা মারে রুদ্র। দোলা নিজেকে সামলাতে না পেরে টুকরো হওয়া কফির কাপের উপর পড়ে যায়। আর তাতে দোলার হাতের কনুই কেটে যায় কাপের ভাঙ্গা অংশে।

– কেটে যাওয়া অংশ থেকে প্রচুর রক্ত পড়তে থাকে। দোলা ব্যথায় আর্তনাদ করে উঠে। ভীষণ জ্বালা করছে তার কেটে যাওয়া জায়গাটায়। দোলার আর্তনাদে রুদ্র ভ্রুক্ষেপ করে না৷ গা ছাড়া ভাব নিয়ে অন্যদিকে ফিরে আছে।

– দোলার চোখ ভর্তি পানি উপচে বেরিয়ে আসতে চাই। রাতের চোট এখন কেটে যাওয়া অংশ সব কিছু একসাথে হয়ে জ্বালা করছে দোলার খুব। দোলা চোখ মুখ শক্ত করে দৃঢ় কন্ঠে বলে রুদ্রনীল চৌধুরী বিয়ে করে নিয়ে এসে বউকে নির্যাতন করছে, কথাটা বেশ অশোভনীয় লাগছে তাই না ছোট সাহেব? দোলার হঠাৎ এই কথায় রুদ্র চমকে যাওয়া চোখে তাকায় দোলার দিকে। চোখ মুখে বিষ্ময়ের ছাপ স্পষ্ট।

– দোলা উঠে দাঁড়িয়ে সাবলীল ভঙ্গিতে বলে।

–“আচ্ছা আমি যদি থানায় গিয়ে পুলিশকে এই কথা গুলো বলি তাহলে কেমন হবে? আমার তো মনে হয় বেশ মার্কেট পাবে এই কথাটা। কারণ কি জানেন?

– রুদ্র এখনো একই ভঙ্গিতে তাকিয়ে আছে দোলার দিকে। আর দোলা মুখে মুচকি হাসি এনে বলে আমি বলে দিচ্ছি কারণ টা বলেই দোলা শাড়ির আঁচল দিয়ে কেটে যাওয়া অংশটা চেপে ধরে কারণ অনেক রক্ত ঝরছে সেখান থেকে।

– কারণ হলো, প্রেস মিডিয়া থানা পুলিশ যায় বলুন না কেনো ওরা না ওতপেতে থাকে বড়লোকদের বাড়ির গোপন তথ্য পাওয়ার জন্য। যেই না একটু ছুতো খুজে পায় তখনই ওরা ঢাকঢোল পিটিয়ে সেটা জনতার সামনে তুলে ধরে। তো একবার ভাবুন তো ছোট সাহেব , রুদ্রনীল চৌধুরী তার বিয়ে করা বউকে এনে নির্যাতন করছে এটা যদি বাইরে যায় তাহলে কেমন হবে। সবাইতো হুমড়ি খেয়ে পড়বে এই নিউজটা নিয়ে। আমার কিন্তু সবকিছু প্রমাণে একটু সমস্যা হবে না৷ এই যে দেখুন আমার শরীরে আঘাত গুলো। এই গুলোই যথেষ্ট আপনার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য খুবই নিপুণতার সাথে বলে কথাগুলো দোলা। আর রুদ্র সে তো নির্বাক হয়ে গেছে৷ দোলার কথায় একের পর এক অবাক হওয়া ছাড়া তার আর কোনো উপায় নেই এখন।

– তবে হ্যাঁ আপনি এটা বলতে পারেন আমি যে আপনার স্ত্রী তার প্রমাণ কোথায়? কেউ তো জানে না আমাদের বিয়ের কথা। কিন্তু এটা ভুলে যাবেন না, আপনার পক্ষের কেউ না থাকতে পারে বিয়েতে আমার পক্ষের কিন্তু সবাই উপস্থিত ছিলো। আর তাদের জিজ্ঞেস করলে তারা কিন্তু খুব সাবলীল ভাবে উত্তরটা দেবে। সে যাই হোক। আমি না এইসবের মধ্যে যেতে চাই না। বিয়ে করেছেন ঠিক আছে, সেটা মানবেন না এটাও ঠিক আছে৷ তাই বলে বিয়ে করা বউকে ঘর থেকে বের করে দিবেন যখন তখন গায়ে হাত তুলবেন এটা কিন্তু একদম ঠিক না। আর আপনি যদি ওই একই কাজ বারবার করেন আমাকে এই ঘর থেকে বের করে দেন তো আমার আর উপায় থাকবে না৷ আমাকে আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে হাসি মুখে বলে দোলা।

– রুদ্র এখনো যেনো একটা ঘোরের মধ্যে আছে৷ দোলার কথা গুলো তার মধ্যে ভীষণ ভাবে গেঁথে গেছে সাথে দোলার প্রতি তার ঘৃণার পরিমাণটাও বেড়ে গেছে৷

– আমাকে মাফ করবেন ছোট সাহেব। আপনাকে থামানোর জন্য এর থেকে ভালো পথ আমার জানা নেই আপাতত। আপনাকে ঠিক পথে নিয়ে আসতে হলে আমাকে আপনার কাছাকাছি থাকতে হবে। এর জন্য আমাকে এই ঘরে থাকতে হবে। তাই আপনাকে এই সব কথা বলে থামানো আমার। আমি জানি আমার উপর রাগ, ঘৃণা সব বেড়ে গেছে আপনার আমার কথায়৷ কিন্তু আমার বিশ্বাস আমি একদিন সব শেষ করে দিয়ে নতুন পথ চলা শুরু করবো আপনার সাথে। মনে মনে বলে কথা গুলো দোলা রুদ্রর চোখের দিকে তাকিয়ে।

– রুদ্র বিষ্ময়ভরা দৃষ্টি নিয়ে একটা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলে আমি আগেই বলেছিলাম তোমাদের মতো মেয়েরা ভীষণ স্বার্থবাদী হয়। স্বার্থের জন্য তারা সব করতে পারে দেখো তুমি ঠিক সেটা প্রমাণ করে দিলে। আর এতে তোমার উপর আমার ঘৃণার পরিমাণটা আরও বেড়ে গেছে। তোমাকে টলারেট করা আমার পক্ষে ইম্পসিবল হয়ে যাচ্ছে৷ খুব তাড়াতাড়ি আমি তোমার ব্যবস্থা করবো। এই বাড়ি থেকে খুব তাড়াতাড়ি বিদায় করবো আমি৷ আমার সমস্যাকে আমি কখনো জমিয়ে রাখি না। ছুড়ে ফেলি দিই আমার জীবন থেকে। তোমাকেও আমি খুব তাড়াতাড়ি ছুড়ে ফেলবো এই বাড়ি থেকে দেখে নিও বলে রুদ্র ঘর থেকে বেরিয়ে যেতে গিয়ে আবার থেমে যায়। তারপর দোলার দিকে তাকিয়ে বলে তোমার ব্যবহার আজ আমাকে আবারও নতুন করে মেয়েদের ঘৃণা করতে বাধ্য করলো। আই হেট ইউ জাস্ট হেট ইউ বলে রুদ্র বেরিয়ে যায় ঘর থেকে।

–” রুদ্র বেরিয়ে যেতেই দোলা মেঝেতে বসে পড়ে কান্না করতে করতে। রুদ্রর কথা গুলো ছুড়ির আঘাতের থেকেও ধারালো ছিলো দোলার কাছে। দোলা শাড়ির আঁচল মুখের সাথে চেপে ধরে চিৎকার করে কান্না করে। দোলার কান্না পাচ্ছে। অনেক কান্না পাচ্ছে। কিন্তু কারণ টা ঠিক জানা নেই তার৷ এটা কি রুদ্রর উপেক্ষা নাকি তার বলা কথা গুলোর জন্য এটাও জানে না দোলা।

– চলবে..