তুমিময় আসক্তি পর্ব-১৪

0
1203

#তুমিময়_আসক্তি
#লেখনী_আলো_ইসলাম

“১৪”

–” সকালে…….
–” দোলা রুদ্রর বুকে মাথা রেখে বাচ্চাদের মতো করে ঘুমিয়ে আছে৷ রুদ্রও যেনো খুব আদরে দোলাকে আগলে রেখেছে তার কাছে।
— দিনের আলো চারিদিকে পরিপূর্ণ ভাবে ছড়িয়ে গেছে। পাখিদের কিচিরমিচির শব্দ ধ্বনি বেড়েই চলেছে। বাইরের তীব্রকর আলো এসে রুদ্রর চোখ মুখে আঁচড়ে পড়ে বারান্দা দিয়ে। চোখে আলো লাগায় রুদ্রর ভ্রু কুচকে আসে। গভীর ঘুমটা হাল্কা হয়ে আসে। বাইরের জন কোলাহল, গাড়ির শব্দ সব কিছু মিলিয়ে রুদ্রর ঘুম ভেঙে যায়। রুদ্র আড়মোড়া দিতে গিয়ে বুঝতে পারে তার উপর কিছু একটা আছে।

— রুদ্র তার বুক বরাবর তাকাতে দেখে দোলা তার বুকে গুটিসুটি মেরে ঘুমিয়ে আছে। রুদ্র চোখে যতটুকু ঘুম ভাব ছিলো উবে গেছে। ঘুমন্ত দোলাকে কি দারুণ লাগছে দেখতে। সমস্ত মায়া’রা যেনো সেখানেই ভীড় জমিয়েছে। সামনের ছোট চুল গুলো এলোমেলো হয়ে পুরো মুখ বিচরণ করছে দোলার। সারারাতে জমে উঠা তৈলাক্ত ফেসে মায়া’দের কোলাহলে, যেকোনো পুরুষ’কে আকৃষ্ট করতে সক্ষম।

– রুদ্র তো মোহনীয় সৌন্দর্যে আবদ্ধ হয়ে গেছে। নেশাতুর দৃষ্টিতে দোলাকে দেখছে। রুদ্রর অজান্তেই এক চিলতে হাসি মুখে উঁকি দেয়। দোলা হাল্কা নড়েচড়ে উঠে, দোলাকে নড়ে উঠতে দেখে রুদ্র আবার ঘুমানোর ভান করে শুয়ে পড়ে। একটু পর যখন দোলা আবার ঘুমে বিভোর হয়ে যায় তখন রুদ্র আগের ন্যায় হয়ে দোলাতে আবদ্ধ হয়। কিছুখন যেতে রুদ্রর হুস ফিরে। দোলাকে আস্তে করে সরিয়ে দিয়ে উঠে পড়ে টানা একটা দম নিয়ে বলে বেঁচে গেছি। মেয়েটা যে এমন করে দেখিনি আমাদের এটাই অনেক। নাহলে কি সব ভেবে বসতো। আমি মেয়েটার এত কাছে গেলাম কি করে। আর মেয়েটাও বলিহারি, সুযোগ বুঝে ঠিক কাছে চলে গেছে ষ্টুপিড একটা বলে রুদ্র দোলার ঘরের সাথে বারান্দা সেদিকে যায়।

– কিন্তু রুদ্র তো আর জানে না। দোলা গতরাতে সব দেখে তবেই ঘুমিয়েছে।
— আজ শুক্রবার। রুদ্রর অফিস নেই। তবে রুদ্র চেয়েছিলো দোলার বাড়ি থেকে চলে যেতে। কিন্তু দোলার বাবার অনুরোধে আর যেতে পারেনি। দোলাদের নিয়ে তবে যাবে রুদ্র একবারে।

— রোকন রুদ্রর থেকে সব সময় দূরে দূরে থাকছে। তার মতে বিপদ থেকে যত দূরে থাকা যায় ততই মঙ্গল।
— রুদ্র একা একা বসে বোরিং হচ্ছে৷ তার উপর প্রচন্ড গরম পড়ছে। দোলা রান্না, কাজ নিয়ে ব্যস্ত আর তানিয়া সে একবার রোকনের সাথে নয়তো দোলার সাথে বেড়াচ্ছে।

– এই রোকন চল আমরা তোদের এলাকা ঘুরে দেখে আসি বেশ আগ্রহ নিয়ে বলে তানিয়া। রোকনও হাসি মুখে বলে ওকে আপু চলো তোমাকে আমাদের এলাকা ঘুরিয়ে দেখায়৷ যদিও দেখার মতো কিছু নেই এখানে৷ তবে সামনে যেতে একটা বড় পুকুর আছে৷ অনেক সুন্দর সেই জায়গাটা চলো তোমাকে সেখানে নিয়ে যায় বলে রোকন তানিয়াকে নিয়ে ড্রয়িং রুমে আসতে দেখে রুদ্র বসে ফোন টিপছে। রোকনের মুখে যে হাসি ভাব ছিলো সেটা ছুটে পালিয়েছে রুদ্রকে দেখে। রোকন মুখটা মলিন করে রুদ্রকে পাশ কাটিয়ে বেরিয়ে আসতে যাবে এমন সময় রুদ্র গম্ভীর কন্ঠে রোকনকে ডেকে উঠে। রুদ্র ডাকে রোকন চমকে উঠে থমকে দাঁড়ায়।

– তানিয়াও থেমে গিয়ে রুদ্রর দিকে তাকায়।

— কোথায় যাচ্ছিস তোরা? তানিয়াকে উদ্দেশ্য করে বলে রুদ্র।
– আমরা এইতো সামনে যাবো। ঘরে বসে থাকতে ভালো লাগছে না তাই আমি আর রোকন যাচ্ছি বাইরে ঘুরতে কেনো ব্রো কিছু বলবে?

– এই অবেলায় কিসের ঘুরা৷ তাছাড়া এখানে দেখার মতো আছে কি? যে বস্তি তো মুখটা বেকিয়ে বলে একটু রুদ্র।

— তোমার কাছে হয়তো বস্তি বা ভালো নাও লাগতে পারে কিন্তু আমার অনেক ভালো লেগেছে। তাছাড়া বস্তি হলেও এখানে মানুষ’রাই বাস করে ব্রো। অন্য কিছু না।

রোকনের মন খারাপ হয় রুদ্রর কথা শুনে। তারা গরিব বলে আজ রুদ্র এমন কথা বলতে পারলো। দোলারও কর্ণপাত হয় রুদ্রর কথা৷ দোলা একটা তুচ্ছ হাসি দিয়ে কাজে মন দেয়।

– চল রোকন বলে তানিয়া আবার সামনে অগ্রসর হতে যাবে তখন রুদ্র দ্বিতীয় বারের মতো রোকন কে ডেকে কাছে আসতে বলে। রোকন একটা শুকনো ঢোক গিলে তানিয়ার দিকে তাকায়। তানিয়া ইশারা করে যেতে বলে রুদ্রর কাছে। রোকন ধীর পায়ে রুদ্রর সামনে এসে দাঁড়ালে৷ রুদ্র নরম স্বরে বলে তোমার সাথে তো তেমন ভাবে আলাপই হলো না। তা আমার থেকে দূরে দূরে থাকছো কেনো?

— রুদ্রর সোজা প্রশ্নে রোকন অবাক হয়ে তাকায়। সে যে রুদ্রর থেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছে৷ সেটা রুদ্র বুঝলো কি করে ভাবতে থাকে রোকন।

— রোকনকে চুপ থাকতে দেখে রুদ্র আর কিছু না বলে পাশে বসতে বলে। কিন্তু রোকন ইতস্ততবোধ করে।
— আমি দাঁড়িয়ে ঠিক আছি ছোট সাহেব। বলুন না কি বলবেন।

— রোকনের মুখে ছোট সাহেব কথাটা রুদ্রর ঠিক ভালো লাগেনি। তাই থমথমে গলায় বলে আমাকে ভাইয়া বলবে ওকে।

– রুদ্রর কথায় রোকন একটু না অনেকটাই অবাকই হয় কিন্তু সেটা প্রকাশ করে না৷ মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বলে। এরপর রুদ্র আবার বলাতে পাশে বসে যায়৷ আর বেচারা তানিয়া একা একা দাঁড়িয়ে এদের কান্ড দেখছে।

– এখন সময় টা সন্ধ্যা। রোকনের সাথে রুদ্রর বেশ ভাব জমে গেছে। রোকন যতটা ভয় করতো রুদ্রকে না বুঝে এখন রোকন বুঝতে পারছে সে এতদিন মিছেমিছি রুদ্রকে ভয় পেতো৷ আর পাবে নাই বা কেনো? সবাই রুদ্রর উপস্থাপন এমন ভাবে করতো যে, যে শুনবে সে ভয় পাবে এমন বদমেজাজি খিটখিটে স্বভাবকে।

— রুদ্র আর রোকন লুডু খেলছে বসে৷ বোরিং টাইম পার করার চেয়ে খেলায় বেটার। তাই রুদ্র রোকনকে বলে লুডুঘর নিয়ে আসতে।

– দোলার ভালো লাগছে রোকনের সাথে রুদ্রকে দেখে।

— “”তানিয়া চা এর কাপ টা হাতে নিয়ে দোলার পাশে এসে বসে। তানিয়াকে পাশে বসতে দেখে দোলা একটা মুচকি হাসি উপহার দেয়।

–” ব্রোকে দেখো বউমনি, এখন এই মানুষটাকে কেউ দেখলে বলবেই না এর মেজাজ খিটখিটে। রাক্ষস রাক্ষস ভাব।

– তানিয়া কথার ভঙ্গিতে দোলা ফিক করে হেসে দেয়। সাথে তানিয়াও হাসে।
– তোমার ভাইয়ার সবার সাথে সব ঠিক আছে। শুধু দোষ যত নারীদের৷ আর এখন তো আমি তোমার ভাইয়ার চোখে আসল অপরাধী এমন ভাব।

– আরে না৷ আসলে একটু সময় তো লাগবে। একভাবে চলে আসছে আজ ৫ টা বছর। তাই বদলাতে সময় লাগবে একটু কথাটা বলে তানিয়া চা-এ চুমুক দেয়।

; তানিয়ার কথায় দোলা কৌতুহলী হয়ে বলে ৫ বছর মানে৷ এর আগে উনি এমন ছিলেন না?

— তানিয়া সাবলীল ভাবে বলে হুম। ব্রো এর আগে ভালো ছিলো৷ মেয়েদের ঘৃণা নয় সম্মানই করতো। কিন্তু কিছু ঘটনা এক সাথে জুড়ে ভাইয়াকে বদলে দিয়েছে। মেয়েদের প্রতি একটা বাজে মন্তব্য রেখে দিয়েছে।

– কি হয়েছিলো তানিয়া? যার জন্য উনি এমন হয়েছে। আমাকে প্লিজ বলবে সব। অনুনয় করে বলে দোলা তানিয়াকে।
– বউমনি তুমি বরং রাজ ভাইয়াকে সব জিজ্ঞেস করো। সে ভালো বলতে পারবে সব। কারণ ভাইয়ার খুব কাছের মানুষ তিনি।

– রাজ মানে তোমার ভাইয়ার বন্ধু?
– তানিয়া মাথা ঝাকিয়ে হ্যাঁ বলে।

– আচ্ছা উনার কন্ট্রাক্ট নাম্বার টা আমাকে দিতে পারবে? দোলার কথায় তানিয়া মুখটা মলিন করে বলে আমার কাছে তো নেই বউমনি। তবে তুমি চাইলে আমি যোগাড় করে দিতে পারি। তানিয়ার কথায় দোলা খোশ মেজাজে বলে তাহলে আমার এই উপকারটা করে দাও তানিয়া প্লিজ। আমাকে সব জানতে হবে। কেনো উনি এমন। কি এমন কারণ? কি কষ্ট উনার মধ্যে?

– দুদিন পার করে দোলাদের নিয়ে বাড়ি ফিরে আসে রুদ্র। জাহির চৌধুরী ভীষণ খুশি রুদ্রর উপর। তার ছেলে তার কথা রেখেছে। তার সম্মানটা বজায় রেখেছে রাশেদের কাছে।

– রুদ্র দোলা আর তানিয়াকে বাড়িতে নামিয়ে দিয়ে অফিসে চলে যায়। দোলা এসে রেডি হচ্ছে কলেজ যাবে তাই। আশা দোলার বাড়িতে গিয়েছিলো দোলার সাথে দেখা করতে। বেশ কিছু সময় কাটিয়েছে তারা অনেক দিন পর। যদিও দোলার সাথে কলেজে দেখা হয়৷ কিন্তু তানিয়া দোলা আশা সবাই মিলে বেশ ভালো একটা আড্ডা জমিয়েছিলো।

– রুদ্র অফিসে বসে আছে। বারবার দোলার কথা মনে হচ্ছে তার৷ দোলার কাছাকাছি থাকা। ঘুমন্ত ফেস সব কিছু রুদ্রকে ভীষণ করে ভাবাচ্ছে। রুদ্র একটা সময় নিজের উপর বিরক্ত হয়ে উঠে টেবিলে থাকা কলম রাখার বক্সটা ছুড়ে ফেলে।। দুইহাতে চুল টেনে ধরে পেছনে নিয়ে বলে এইসব কি হচ্ছে আমার সাথে? আমি কেনো বারবার ওই মেয়েটার কথা ভাবছি। কেনো ওকে নিয়ে চিন্তা করছি? সব কিছু কেমন এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে। আবার আগের মতো হতে যাচ্ছে কি তার মানে? না না এমন টা হতে পারে না। আমি এমন টা চাইনা আর। আমাকে দূরে থাকতে হবে ওই মেয়ের থেকে। এরজন্য ওই মেয়েকে সরাতে হবে আমার জীবন থেকে। আমি আর কারো মায়ায় আবদ্ধ হতে চাই না। চাইনা কাউকে বিশ্বাস করতে বলেই সামনে থাকা কিছু ফাইল ছুড়ে ফেলে।

– এমন সময় অফিসের মধ্যে প্রবেশ করে রাজ। রুদ্রর অদ্ভুত বিহেভে অবাক হয় সে।

– এই সব কি করছিস রুদ্র তুই? পাগল হয়ে গেছিস তুই? কি হয়েছে আমাকে বল?
– আমি সত্যি পাগল হয়ে গেছি রাজ৷ ওই মেয়েটা আমাকে পাগল করে দিচ্ছে। আমি চাইনা কাউকে। আমার জীবনে আর কাউকে লাগবে না৷ আমি বিশ্বাস করিনা কাউকে। রাজ শুন আমি দোলাকে ডিভোর্স দিতে চাই।

– রুদ্রর কথায় রাজ চমকানো চোখে তাকিয়ে বলে এই সব কি বলছিস তুই৷ তোর মাথা ঠিক আছে। তাছাড়া দোলার কথাটা একবার ভাব। এই কদিন হলো তোদের বিয়ে হওয়া। এর মধ্যে যদি এই সব কথা বলিস তাহলে দোলার কি হবে। লোকে তো ছি ছি করবে দোলাকে নিয়ে। ওর পরিবারকে নিয়ে উপহাস করবে রুদ্র।

– আমি এত কিছু জানতে বা শুনতে চাই না রাজ৷ আই নিড ডিভোর্স। আর এর সব ব্যবস্থা করবি তুই।

– কিহ৷ আমি পারবো না। যেখানে আমি চাইনা দোলাকে তুই ডিভোর্স দে। সেখানে এই সব আমি তো একদম করব না।

– তুই না আমার বন্ধু রাজ। তুই আমার বন্ধু হয়ে এমন কথা বলতে পারলি। আসলে কেউ কারো আপন হয়না এটাই বাস্তব তাচ্ছিল্যের সুরে বলে রুদ্র।

– দেখ রুদ্র একদম ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করবি না। তুই খুব ভালো করে জানিস সবার আগে তুই আমার কাছে বেশি মুল্যবান।

– তাহলে কেনো আমার কথা মানতে চাচ্ছিস না? আমার দিকটা বোঝার চেষ্টা কর একবার। আমি পারছি না কোনো ভাবে ওই মেয়েটাকে টলারেট করতে। প্লিজ রাজ আমাকে হেল্প কর।

– কিন্তু রুদ্র! তুই এইবার ঠান্ডা মাথায় ভাব। দোলার জীবন টা নষ্ট হয়ে যাবে। আচ্ছা তুই কি চাস তোর জন্য একটা মেয়ের জীবন নষ্ট হোক। মানুষ তাকে মিথ্যা অপবাদ দিক।

— আমি সব কিছু ভেবে তারপর এই ডিসিশন নিয়েছি রাজ। দেখ আমাদের বিয়ের কথা কেউ জানে না। জাস্ট দোলার কিছু আত্মীয় স্বজন আর এলাকার মানুষ। তাছাড়া কেউ জানে না। তাই আমার মনে হয়না দোলার তেমন সমস্যা হবে। তবে হ্যাঁ যদি প্রেস মিডিয়া একবার খবর পেতো আমাদের বিয়ের বিষয় টা তাহলে অনেক ঝামেলা হয়ে যেতো আরো।

– রুদ্রর কথায় রাজের মুখে অল্প খুশিত্ব ভাব ফুটে উঠে।

– এবার বল আমাকে হেল্প করতে কোনো সমস্যা নেই তো তোর? রাজও সাবলীল ভঙ্গিতে খুশি মনে বলে, নাহ এখন আর কোনো সমস্যা নেই। সব সমস্যার সমাধান একটু পরে হয়ে যাবে দেখিস। আমি সব ব্যবস্থা করছি দোস্ত। এখন আসি। আমার একটা ইমপোর্টেন্স কাজ মনে পড়ে গেছে বলেই রাজ বেরিয়ে আসে রুদ্রর অফিস থেকে।

— দোলা, আশা,তানিয়া কলেজ মাঠে বসে আছে৷ তানিয়াও এসেছে দোলার সাথে কলেজে৷ বাড়িতে একা একা তার ভালো লাগে না। তাই দোলার সাথে দোলার কলেজে আসা। তানিয়ার তো আশার সাথে ফ্রেন্ডশিপ হয়ে গেছে। রীতিমতো তুই করে বলা শুরু করে দিয়েছে তারা।

– তানিয়া চলো আমরা ক্যানটিনে যায়। দোলার কথায় আশা তানিয়া উঠে দাঁড়ায়। এরপর তিনজন মিলে ক্যানটিনের দিকে অগ্রসর হয়।

– বউমনি বসো তোমরা আমি অর্ডার দিয়ে আসছি। আজ আমি তোমাদের ট্রিট দেবো বলে তানিয়া ক্যানটিনের রিসিপশনে যায় খাবার অর্ডার করতে।

– তানিয়া খাবার অর্ডার দিয়ে দোলার কাছে আসার জন্য যেই পিছু ফিরেছে এমন সময় একজনের সাথে জোরে ধাক্কা খায় তানিয়া৷ তানিয়া ধাক্কার খাওয়ার টাল সামলাতে না পেরে পড়ে যেতে নেয় তখনই এক জোড়া বলিষ্ঠ হাত তানিয়াকে আগলে নেয়৷ তানিয়া তো ভয়ে একদম চোখ খিচে বন্ধ করে আছে। দোলা আর আশা অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে৷ ওরা দুজনে বসে সবই দেখতে পাচ্ছে ভেতরে।

– তানিয়া যখন অনুভব করে সে পড়ে যায়নি৷ কেউ একজন খুব যত্ন নিয়ে ধরে আছে৷ তানিয়া এবার চট করে চোখ খুলে সামনে একটা সুদর্শন পুরুষ দেখতে পাই৷ যার ঠোঁট দুটো লাল টকটকে, নাকটা খাড়া, ছোট ছোট চোখ মায়ায় ভরা। মুখের গড়ন শ্যামবর্ণ। চোখে আবার মোটা ফেমের চশমা দেওয়া।

– ছেলেটা একহাতে তানিয়াকে ধরে আরেক হাতে চশমা ঠিক করে বলে এই যে ম্যাডাম আমাকে দেখা শেষ হলে প্লিজ উঠবেন। আমি না আপনার ভাড় আর বহন করতে পারছি না বলে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে সে।

– ছেলেটার কথায় তানিয়া লজ্জা পায় কিছুটা। কিন্তু লজ্জা ভাব টা সরিয়ে চোখ মুখে রাগী ভাব নিয়ে এসে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে বলে চোখে দেখেন আপনি? নাকি মেয়ে দেখলে হুমড়ি খেয়ে পড়তে ইচ্ছে করে হুম?

– তানিয়ার কথায় ছেলেটা যে অবাক হয়েছে সাথে তানিয়ার কথা গুলো তার কাছে দৃষ্টিকটু লেগেছে বেশ বোঝা যাচ্ছে। ছেলেটি চশমাটা আবার ঠিক করে বলে দেখুন আপনি ভুল ভাবছেন। আসলে…. বাকিটা বলার আগে তানিয়া একটা আঙ্গুল তুলে বলে একদম আসলে নকলে বোঝাতে আসবেন না। আপনাদের মতো ছেলেকে না আমার চেনা আছে৷ যত্তসব।

– ছেলেটি এবার রেগে গিয়ে বলে আপনি কিন্তু বেশি বেশি বলছেন এবার৷ আমি সত্যি খেয়াল করিনি আপনাকে। আমি তো ক্যানটিনে এসেছিলাম খাবার অর্ডার দেওয়ার জন্য মাঝ খানে আপনি যে আছেন আমি একদম দেখতে পাইনি।

–“” দেখবেন কি করে। চোখ থাকলে তবে না দেখবেন। এই জন্য তো চার চোখ লাগিয়ে ঘুরছেন। তানিয়ার কথায়া ছেলেটা বুঝতে পারে না৷ তাই কৌতুহল নিয়ে বলে এক্সকিউজ মি?

– দোলা আর আশা এবার উঠে আসে৷ কারণ তানিয়া যা শুরু করেছে তাতে বেশি বাড়াবাড়ি হয়ে যাবে এবার। তাই ওরা ছুটে আসে তানিয়ার কাছে।
–“”তানিয়া আবার কিছু বলতে যাবে তার আগে দোলা এসে বলে আইম সরি ভাইয়া। আসলে আপনাদের দুজনের কারো দোষ নেই৷ এটা একটা এক্সিডেন্টে জাস্ট। প্লিজ আমার ননদের কথায় কিছু মনে করবেন৷ তানিয়া চলো এখান থেকে।

”’ একি বউমনি তুমি উনাকে সরি বলছো কেনো।। সরি তো বলবেন উনি৷ কারণ দোষ টা উনি করেছেন। উনি আমাকে ইচ্ছে করে ধাক্কা মেরেছেন দাঁতে দাঁত চেপে বলে কথাটা তানিয়া।

– দোলা এবার বিরক্ত নিয়ে তানিয়ার দিকে তাকিয়ে চোখ রাঙায়। এতে তানিয়া চুপ মেরে যায়। কারণ দোলা রেগে যাচ্ছে বোঝাই যাচ্ছে।

– তানিয়া তুই চল ওইদিকটা বলে আশা নিয়ে যায় তানিয়াকে।

– প্লিজ কিছু মনে করবেন না৷ আসলে ও না এমনই।।তবে অনেক ভালো মেয়ে। দোলার কথায় ছেলেটি তানিয়ার দিকে তাকিয়ে অসহায় ফেস করে বলে কেমন ভালো সেতো দেখলামই। আপনারা না আসলে আমাকে এতখনে ভস্ম করে দিতো চোখ দিয়ে গিলে।ছেলেটির কথায় দোলা মুচকি হেসে উঠে।

— আপনার হাসিটা কিন্তু সুন্দর। হঠাৎ এমন কথা একটা অচেনা ছেলের থেকে শোনায় দোলা চমকে উঠে। লজ্জা মিশ্রিত চাহনি নিয়ে আমতাআমতা করে বলে আমি আসি।

– আইম সজল আহনাফ । ইউ?
– সজলের কথায় দোলা বলে আমি আরশিয়া দোলা। সবাই দোলা বলে ডাকে, ওইটা আমার ফ্রেন্ড আশা আর যে মেয়েটা রণমুর্তি ধারন করে ছিলো আপনার সামনে সে আমার একমাত্র ননদ তানিয়া।

– ওহ। আপনি বিবাহিত। জেনে ভালো লাগলো। তবে আমি না একটা কথা ভাবছি। ভাবান্তর হয়ে বলে সজল। সজলের কথায় দোলা ভ্রু কুচকে বলে কি বলুন তো?

– আপনার মতো এমন মিষ্টি একটা মেয়ের এমন পেত্নী ননদী হলো কিভাবে৷ সজলের কথাটা বলার ধরণ এমন ছিলো যে, দোলা জোরে না হেসে পারে না৷ তাই উচ্চস্বরে হেসে উঠে।
– আচ্ছা ভাইয়া আমি আসি এবার৷ যাই ওইদিকটা সামাল দিই বলে দোলা চলে আসে সজলের সামনে থাকে। আর সজল একটা টানা নিশ্বাস নিয়ে চলে যায় সেখান থেকে।

— বিকেলে….

“””” চৌধুরী বাড়ি জুড়ে প্রেস মিডিয়ার লোকে ভর্তি। জাহির চৌধুরী বুঝতে পারেন না এরা হঠাৎ এখানে কেনো আর কে পাঠিয়েছে। দোলা তানিয়া ড্রয়িং রুমে বসে। জেসমিন চৌধুরী একপাশে বসে সব কিছু বোঝার চেষ্টায় আছে…..

– চলবে….