তুমিময় আসক্তি পর্ব-১৬

0
1240

#তুমিময়_আসক্তি
#কলমে_আলো_ইসলাম

“১৬”

–“” দোলা ভয়ে ভয়ে রুমের দিকে আসে। বুকের মধ্যে তার ঢিপঢিপ শব্দ করছে। হার্টবিট ক্রমশ উঠানামা করছে। রুমের সামনে আসতেই দোলা থেকে যায়। একটা শুকনো ঢোক গিলে রুমের দিকে তাকিয়ে দেখে পুরো রুম জুড়ে অন্ধকার বিরাজমান। দোলা ভ্রু কুচকে ভেতরে তাকায়।

— দোলা আর একটু সামনে এগিয়ে এসে দরজার পাশ থেকে উঁকিঝুঁকি দেয় তখনই রুদ্র দোলার ডান হাত টেনে ভেতরে নিয়ে যায়। হঠাৎ এমন হওয়াতে দোলা ভীষণ ভয় পেয়ে যায় সাথে চমকে উঠে ভীষণ।
— রুদ্র দোলার হাত ধরে পেছনে ঘুরিয়ে নেয়। দোলার পিঠ রুদ্রর বুকের সাথে মিশে গেছে। কিন্তু হাত ঘুরিয়ে রাখায় দোলার হাতে প্রচন্ড ব্যথা করছে। রুদ্রর চোখ দিয়ে আগুনের ফুলকি ছুটছে এখনো।

–” দোলা দাঁতে দাঁত চেপে ব্যথা সহ্য করার চেষ্টা করছে। রুদ্র দোলার হাতটা শক্ত করে চেপে ধরে বলে কেনো করেছো এই সব? প্রেসের লোকদের ডাকতে কে বলেছে তোমাকে? কি বুঝাতে চাও এই গুলা করে। তুমি রুদ্রনীল চৌধুরীর বউ? সবার সামনে আমার বউ বলে প্রমাণ করতে চাও?

– এটা বোঝানোর কি আছে৷ আমি তো আপনার বউ-ই। কাঁপা কাঁপা গলায় বলে দোলা। দোলার কথায় রুদ্র জোরের সাথে শাট আপ বলে উঠে।

–“” তুমি কেনো এমন একটা কাজ করলে আমার পারমিশন না নিয়ে সেটার উত্তর দাও। এত সাহস আসে কোথায় থেকে তোমার?
– দেখুন আমি কিছু করিনি। ভুল ভাবছেন আপনি, আর যদি করেও থাকি তাহলে অন্যায়টা কোথায়? আমি তো আপনার বিয়ে করা স্ত্রী। এটা আজ না হোক কাল সবাই এমনি জানতে পারতো। তাহলে আজ জানলে সমস্যা কোথায়। আপনি কেনো এমন বিহেভ করছেন আমার সাথে চোখ মুখ খিচে বলে কথা গুলো দোলা। রুদ্র হাতটা এমন ভাবে ধরে রেখে যে দোলা খুব ব্যথা পাচ্ছে।

– “” বউ মাই ফুট কথাটা বলে রুদ্র দোলার হাতটা আরো জোরে চেপে ধরে। এবার দোলার চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ে। এই ব্যথা সহ্য করার ক্ষমতা আর দোলার হয়না।
–‘ ছাড়ুন লাগছে আমার বলে দোলা হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করে। কিন্তু রুদ্রর মুঠো থেকে বেরিয়ে আসা সহজ ব্যাপার নয়। রুদ্র আরো শক্ত করে ধরে বলে লাগছে তাই না। এর থেকে বেশি আমার ভেতরে জ্বলছে। তুমি আমাকে প্রতিটি মুহূর্তে তিলে তিলে শেষ করে দিচ্ছো। আমার জীবনে আসা পর্যন্ত আমার জীবনটা হেল করে দিয়েছো। কি বোঝাতে চাও তুমি, যে তুমি খুব ভালো বউ। স্বামীর কেয়ার করো। ভালো বউ হয়ে দেখাতে চাও সবার কাছে ড্যামিট বলে রুদ্র দোলার হাতটা ছেড়ে দেয়।

-“” দোলা যেনো হাঁফ ছেড়ে বাঁচে। হাতে ব্যথা করছে অনেক। রুদ্র যেখানে ধরে ছিলো সেখানে লাল টকটকে হয়ে গেছে। রক্ত’রা যেনো ওইখানে এসে ভীড় জমিয়েছে। দোলা ছলছল চোখে রুদ্রর দিকে তাকায়। আরেক হাত দিয়ে ওই জায়গাটা ম্যাসাজ করতে থাকে।

– – তুমি আমার জীবনে একটা ঝামেলা মাত্র৷ আমি চাইনা তোমাকে আমার জীবনে। প্লিজ আমাকে মুক্তি দাও কথাটা বলে রুদ্র বেরিয়ে যায় ঘর থেকে। দোলা দেয়ালের সাথে হেলান দিয়ে বসে পড়ে কান্না করে উঠে। রুদ্রর কথা গুলো দোলা কিছুতে মানতে পারছে না।

–” তাহলে কি আমি হেরে গেলাম। আমি পারবো না উনাকে বদলে দিতে। আমি কি বাবার বিশ্বাস ভরসা রাখতে পারবো না। হেরে গেলাম আমি বলে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠে দোলা।

–” দোলা কিছুখন কান্না করার পরে ওয়াসরুমে যায় ফ্রেস হতে। ওয়াসরুম থেকে বেরুতে দেখে ফোন বাজছে। ফোন হাতে তুলে দেখে রাজের নাম্বার। দোলা ফোন রিসিভ করতেই রাজ ব্যস্ত কণ্ঠে বলে সব ঠিক আছে তো ওইদিকে ভাবি। রুদ্র তোমাকে কিছু বলেনি তো?
–” দোলা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে না ভাইয়া উনি কিছু বলেননি। আপনি চিন্তা করবেন না। একটু রেগে ছিলো কিন্তু পরে ঠিক হয়ে গেছে। দোলা রাজকে সত্যিটা বলে না আর। যত হোক তাদের স্বামী স্ত্রীর ব্যাপার। বাইরের কাউকে না বলায় ভালো দোলা মনে করে।

-তাহলে নিশ্চিত হলাম একটু। রুদ্রর যা রাগ আমি তো ভেবেছিলাম হয়তো তোমার সাথে অনেক খারাপ ব্যবহার করবে আজ।

– ধন্যবাদ ভাইয়া আপনাকে। আপনার জন্য আমি এইসব কিছু করতে পেরেছি। সত্যি বলতে কি বলে যে কৃতঙ্গতা প্রকাশ করব আমার জানা নেই। বিনয় স্বরে বলে দোলা কথা গুলো।

— এমন করে বলো না। তুমি তো আমার ছোট বোনের মতো। একজন বড় ভাই হিসেবে এটা আমার দায়িত্ব। তাছাড়া আমি সব কিছু করেছি আমার বন্ধুর জন্য। আমি জানি ওর জন্য একমাত্র তুমি পার্ফেক্ট। ওকে একমাত্র তুমি বুঝতে পারো। এমনকি একদিন তুমি আমার বন্ধুকে ভালো করে দিবে। ওর মুখে হাসি ফিরে দিবে।

– ভাইয়া আপনার সাথে আমার কিছু জরুরি কথা আছে৷ আপনি কি আমার সাথে দেখা করতে পারবেন কাল?
— দোলার কথায় রাজ ভ্রু কুচকে বলে কি কথা বলো তো?

– সে না হয় কালই বলব দেখা হলে। তবে অনেক কিছু জানার আছে আপনার থেকে এটা জেনে রাখুন শুধু। আমাকে যেহেতু বোন বলেছেন, আশা করি আমাকে নিরাশ করবেন না।

– ওকে ওকে আর ইমোশনালি ব্ল্যাকমেইল করতে হবে না। কাল কখন দেখা করবে আর কোথায় দেখা করবে বলো আমি চলে যাব ঠিক সময়। এরপর দোলা রাজকে একটা কফিশপের কথা বলে। রাজ ঠিক সময় পৌছে যাবে বলে ফোন কেটে দেয়।

— আমাকে তো জানতেই হবে উনার এমন বিহেভের পেছনে কি কারণ আছে৷ উনি কেনো মেয়েদের এত ঘৃণা করে। এত নিচু চোখে দেখে এই সব ভাবে দোলা মনে মনে।

— আসুন এবার দোলা আর রাজের কন্ট্রাক্ট কেমন করে হলো আর এই সব প্রেস মিডিয়া কে জানালো জেনে নিই।

– রাজ অফিস থেকে বেরিয়ে রুদ্রর বাড়ি যাবে বলে ঠিক করে। দোলার সাথে এই ব্যাপারে কথা বলবে তাই। কিন্তু রাজ পরোক্ষে কিছু একটা ভেবে তানিয়ার নাম্বারে ফোন দেয়৷ বাড়ি যাওয়া ঠিক হবে না ভেবেই রাজ তানিয়ার কাছে ফোন দেয় দোলার সাথে যোগাযোগ করার জন্য। রাজের কাছে তানিয়ার নাম্বার ছিলো বিধায় কোনো ঝামেলা হয়নি রাজের।

– তানিয়া দোলা তো কলেজে ছিলো একসাথে। রাজ তানিয়াকে ফোন দিয়ে দোলার নাম্বার চাইলে তানিয়া তখনই তার ফোন টা দোলার হাতে ধরিয়ে দেয়। এরপর রাজ দোলাকে সব বুঝিয়ে বলে। রুদ্র তাকে ডিভোর্স দিতে চাই কথাটা শুনে দোলা ভীষণ ভেঙে পড়েছিল। এমনকি অনেক কষ্ট হতে ছিলো তার। এরপর রাজ সব বুদ্ধি দেয় প্রেস মিডিয়া জানানোর জন্য। রাজ নিজেই প্রেসে খবর দেয়।

– প্রেসের ব্যাপারটা তানিয়া আশা দোলা এই চারজনেই জানতো। এরপর বাকি ঘটনা।

–” রাত ১ টা প্রায়। রুদ্র আর রাজ একটা বারে বসে আছে।

–” রুদ্র রাজকে ফোন করে ডেকে নিয়ে এসেছে। রুদ্র কোনো ভাবে বিকালের ঘটনা ভুলতে পারছে না। প্রেস আসায় রুদ্রর রাগটা আরও দ্বিগুণ হয়ে জ্বলে উঠে। কোথায় সে দোলার থেকে দূরে যাওয়ার কথা ভাবছিলো। কিন্তু ভাগ্য আবার তাদের এক সাথে জুড়ে দিলো।

— রুদ্র আজ বারে এসে একের পর এক ড্রিংক করে যাচ্ছে। রাজ বারণ করেও লাভ হয়নি আজ।

– রুদ্র আরেকটা প্যাক হাতে দিয়ে খেতে যাবে তখনই রাজ ওইটা কেড়ে নেয় রুদ্রর কাছে থেকে।
– রুদ্র অনেক বেশি হয়ে গেছে অলরেডি। তুই কিন্তু তোর মধ্যে নেই আর। এমনি তুই ড্রিংক করলে নিজেকে সামলাতে পারিস না৷ তার উপর আজ এত ড্রিংক করে ফেলেছিস। দেখ অনেক হয়েছে এবার বাড়ি চল।

–” আমি যাব না বাড়ি। ওই মেয়েটার মুখ আমি দেখতে চাই না। ওই মুখে কিছু একটা আছে জানিস রাজ নরম স্বরে বলে রুদ্র।

— রাজ রুদ্রর কথায় কৌতুহল নিয়ে বলে কি আছে?

– মায়া রে মায়া, ওর মধ্যে না অনেক মায়া আছে জানিস। আমি না মাঝে মাঝে সে মায়ায় আবদ্ধ হয়ে যায়। চাইলেও যেনো দূরে সরে আসতে পারিনা। আচ্ছা কেনো এমন হয় আমার সাথে তখন। আমি কেনো ওই মেয়েটাকে উপেক্ষা করতে পারিনা তখন।

— নেশার ঘোরে সব বলে রুদ্র। কিন্তু রাজ মুচকি হাসে রুদ্রর কথায়। রুদ্র যে আস্তে আস্তে দোলাতে আসক্ত হচ্ছে এটা বেশ বুঝতে পারছে। যার জন্য রুদ্র দোলার থেকে পালাতে চাচ্ছে।

— রাজ ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে ১ টার পার হয়ে গেছে। রাজ উঠে দাঁড়ায় তারপর রুদ্রর হাত ধরে টেনে বলে বাড়ি চল রুদ্র৷ অনেক রাত হয়ে গেছে। দোলা চিন্তা করবে তোর জন্য।

; — ছাড় আমায়। কোথাও যাব না আমি। ওই মেয়েটা কাছে যেতে চাইনা আমি। মায়ায় পড়তে চাই না আমি কারো বলে রুদ্র আবার বসে পড়ে। রুদ্রর নেশাটা অনেক বেশিই হয়ে গেছে৷ যার ফলে রুদ্র নিজেকে সামলাতে পারছে না। এদিক ওদিক ঢুলে পড়ছে বারবার৷ আর ততবারই রাজ রুদ্রকে ধরছে।

— দেখ রুদ্র এবার কিন্তু বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে ভীষণ। বাড়ি চল বলে রাজ জোর করে রুদ্রকে বের করে নিয়ে আসে বার থেকে।

— এইদিকে ঘুম নেই দোলার চোখে। রুদ্র এখনো ফিরেনি তাই দোলার অনেক চিন্তা হচ্ছে রুদ্রর জন্য। রুদ্র তো রাগ করে বেরিয়ে গেছে। কোথায় আছে কি করছে দোলা জানে।

– আচ্ছা উনার কোনো বিপদ হলো না তো। কোথায় গেলেন উনি। এখনো ফিরছে না কেনো একা একা প্রশ্ন করে দোলা।

– দোলা একবার বারান্দায় যাচ্ছে তো একবার ঘরের মধ্যে আসছে। দোলার মধ্যে অশান্ত ভাব শুরু হয়ে গেছে। এখন কাউকে কিছু বলাও যাবে না ডেকে। অনেক রাত হয়ে গেছে। তাছাড়া যদি রুদ্রর বাবা শুনে তাহলে উনি অনেক চিন্তা করবেন। যেটা উনার শরীরের জন্য ভালো হবে না। তাই দোলা আর কাউকে ডাকে না। একা একা ঘর বারান্দা জুড়ে পায়চারি করছে।

— রাত প্রায় ২ টা৷ দোলার ফোন বেজে উঠে। স্ক্রিনে রাজের নাম্বার দেখে দোলা ভ্রু কুচকে ভাবে এত রাতে রাজের ফোন। কোনো বিপদ হলো না তো উনার৷ দোলা তাড়াতাড়ি করে ফোন রিসিভ করে।

– ভাবি একটু নিচে আসবে। আসলে রুদ্র ড্রিংক করেছে। ও নিজেকে সামলাতে পারছে না৷ ওকে উপরে নিয়ে যাবে একটু?

– দোলা একটা স্বস্তির নিশ্বাস ত্যাগ করে রুদ্র ঠিক আছে ভেবে। তারপর বলে হুম আমি আসছি। এরপর ফোন কেটে নিচে চলে যায় দোলা।

— রাজ রুদ্রকে নিয়ে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে।রুদ্র রাজের ঘাড়ে মাথা রেখে আছে।

– দোলা যেতেই রাজ রুদ্রকে দোলার হাতে দেয়।
— আচ্ছা আমি আসি ভাবি৷ আর হ্যাঁ ওকে একটু তেতুল পানি খায়ে দিবেন পারলে। তাহলে নেশাটা কেটে যাবে। এরপর রাজ দোলার থেকে বিদায় নিয়ে চলে যায়।

– দোলা রুদ্র এক হাত তার কাধে দেয় আরেক হাত দিয়ে রুদ্রুর পেটে দিয়ে আগলে নেয়৷ রুদ্রকে একা নিয়ে আসতে দোলার একটু কষ্টই হচ্ছে। এমন একটা বলিষ্ঠ পুরুষকে একটা মেয়ের পক্ষে ক্যারি করা সম্ভব না।

– দোলা অনেক কষ্টে রুদ্রকে ঘর পর্যন্ত নিয়ে আসে। রুদ্রকে শুয়ে দিয়ে দোলা রুদ্রর উপর থেকে উঠতে যাবে তখনই রুদ্র দোলাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে।
–“” রুদ্রর কাজে দোলা অবাক হয়। সাথে একটু ভয় কাজও করে। দোলা রুদ্রর থেকে ছাড়া পাওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু রুদ্র দোলাকে এমন ভাবে ধরেছে যে দোলা একটু নড়াচড়া করতে পারছে না৷ ছাড়া পাওয়া তো দূরে থাক।

– কি করছেন ছাড়ুন ছোট সাহেব। আমি আপনার জন্য তেঁতুল পানি করে নিয়ে আসি। দেখবেন নেশাটা কেটে যাবে আপনার। কেনো এই সব খেতে গেছেন আপনি। বাবা যদি জানতে পারে কত কষ্ট পাবে একবার ভেবে দেখেছেন?

– রুদ্র যেনো দোলার কথা কান পর্যন্ত যাচ্ছে না। মাদক চোখে তাকিয়ে আছে দোলার দিকে। রুদ্রর চাহনিটা সুবিধার লাগে না আজ দোলার কাছে৷ তাই দোলা আপ্রাণ চেষ্টা করছে রুদ্র থেকে ছাড় পাওয়ার।

– রুদ্র এবার দোলাকে ধরে ঘুরিয়ে নেয়। দোলাকে নিচে ফেলে তার উপর সমস্ত ভাড় ছেড়ে দেয় রুদ্র।

– দোলা তো এবার চমকে উঠে। চোখ মুখে আঁতকের ছাপ দোলার।

— ছাড়ুন আমাকে প্লিজ। কেনো এমন পাগলামি করছেন দেখুন ছোট সাহেব আপনি এখন হুসে নেয় প্লিজ ছাড়ুন আমাকে।

– “” কেনো ছাড়ব৷ তুমি তো আমার বউ। আর বউকে বুঝি কেউ ছাড়ে?
– রুদ্রর মুখে বউ কথাটা শুনে দোলার মনে এক রাশ ভালো লাগায় ছেয়ে যায়। কিন্তু রুদ্র যে নেশার ঘোরে এইসব বলছে দোলা জানে।

— তুমি না প্রেস মিডিয়া সবাইকে ডেকে জানিয়ে দিলে তুমি রুদ্রনীল চৌধুরীর বউ। তাহলে এখন কেনো পালাতো চাচ্ছো। দিস ইস নট ফেয়ার মিসেস চৌধুরী। —” দোলা কৌতুহলী চোখে রুদ্র কথা শুনছে৷ চোখ মুখে ভীষণ বিষ্ময়ের ছাপ।

– “” আজ দেখবে বউ কাকে বলে। একজন স্বামীর জন্য বউয়ের কি করণীয়। স্বামীর কি কি অধিকার আছে বউয়ের উপর।

– মা-মানে কি বলতে চাইছেন আপনি। তোতলানো কন্ঠে বলে দোলা।

– বলতে না করতে চাই আদর। ভালোবাসতে চাই দোলার কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলে কথাটা রুদ্র। রুদ্রর আস্তে বলা কথা দোলার মধ্যে এক অন্য রকম শিহরণ জাগিয়ে দেয়। দোলা চোখ বন্ধ করে ফেলে।

– এই সুযোগে রুদ্র দোলার ওড়নাটা টেনে ফেলে দেয় মাটিতে। দোলা চমকে উঠে বড়সড় চোখ করে তাকায় রুদ্র দিকে। রুদ্রর মুখে মিষ্টি হাসি। চোখ মুখে কামনার উচ্চাকাঙ্খা।

– দোলা বুঝে যায় আজ তার কোনো ভাবে রক্ষা নেই।
— রুদ্র দোলার ঘাড়ে মুখ ডুবিয়ে দিলে দোলা পরম আবেশে চোখ বন্ধ করে ফেলে রুদ্রর শার্ট ঘামছে ধরে ।

– রুদ্রর ভালোবাসার প্রকাশ আস্তে আস্তে বাড়তে থাকে। রুদ্রর ভালোবাসার কাছে হার মেনে যায় আজ দোলা। নিজেকে নিজ ইচ্ছেয় সপে দেয় স্বামীর কাছে। যদিও জানে সামনে তার জিবনটা অনিশ্চিত। তারপরও দোলা রুদ্রর ডাকে আজ সাড়া না দিয়ে পারে না।

– রাতের গভীরতার সাথে দুটো মানুষের ভালোবাসা বাড়তে থাকে। তলিয়ে যায় এক সুখ রাজ্য ভ্রমণে।

— সকালে দোলা রুদ্রর আগে উঠে যায়। নিজেকে পায় রুদ্রর বুকে আবদ্ধ অবস্থায়। গতরাতের কথা মনে হতে দোলা লজ্জা পায়৷ সাথে একটা অজানা ভয় গ্রাস করে তাকে।

– দোলা সব কিছু গুছিয়ে নিয়ে ওয়াসরুমে চলে যায়। রুদ্র ওঠার আগেই সব শেষ করতে হবে তাকে। কারণ রুদ্র একবার যদি বুঝতে পারে গতরাতে কি হয়েছে তাহলে আরো ঝামেলা করবে।

— দোলা গোসল সেরে বের হতেই দেখে রুদ্রর ঘুম ভেঙে গেছে৷ রুদ্র উঠে বসে আছে৷ কিন্তু এখনো উন্মুক্ত শরীরে আছে। আসলে রুদ্রর মাথাটা ধরে আছে ড্রিংক করার ফলে।
– দোলাকে এত সকালে গোসল করে ওয়াসরুম থেকে বেরুতে দেখে রুদ্র ভ্রু কুচকে তাকায়। একবার দোলার দিকে আরেকবার নিজের দিকে তাকায়। রুদ্র নিজেকে দেখে চমকে উঠে পাশে থাকা চাদর টা টেনে নিজেকে আবদ্ধ করে নেয়। শার্ট খুজতে দেখে সেটা নিচে পড়ে আছে।

–এইদিকে দোলা ভয়ার্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে৷ আর মনে মনে প্রে করছে রুদ্র যেনো কিছু বুঝতে না পারে। তাহলে আবার সে দোলার দোষ দেবে।
বলবে দোলা সুযোগ নিয়েছে তার।

— রুদ্র এখনো একটা ঘোরের মধ্যে আছে৷ আসলে কি হয়েছে গতরাত থেকে এখন পর্যন্ত বুঝতে পারছে না।

– আমার এই অবস্থা কেনো। আমার শার্ট কে খুলেছে। আর আমি এখানে আসলাম কি করে?
– রুদ্র প্রশ্নে দোলা ঘাবড়ানো গলায় বলে আপনি তো নিজেই এসেছেন এখানে আর শার্টও আপনি নিজেও খুলেছেন।

– রুদ্রর যেনো বিশ্বাস হচ্ছে না দোলার কথায়। তাই সন্দিহান চোখে তাকিয়ে বলে তুমি এত সকালে শাওয়ার নিয়েছো কেনো? কি হয়েছে গতরাতে৷ সত্যি করে বলো৷ আমার শার্ট ফ্লোরে গেলো কিভাবে?

– দোলা এই ভয়টাই পাচ্ছিলো। রুদ্র যে সহজে কিছু বিশ্বাস করবে না দোলা জানতো সেটা।

– দোলাকে চুপ থাকতে দেখে রুদ্র ধমক দিয়ে বলে কি হলো কিছু বলছো না যে? বলো কি হয়েছে এখানে। তোমার এই অবস্থা কেনো আর আমি বা এখানে কি করে?

– দেখুন এত প্রশ্ন করবেন না সব সময়। আপনার সব প্রশ্নের উত্তর দিতে আমি বাধ্য নয়। আমার প্রচন্ড গরম লাগছিলো তাই আমি গোসল দিয়েছি এতে আপনার সমস্যা কোথায়। আর রইলো আপনার শার্ট। ওইটা আপনি জানেন কি করে ফ্লোরে গেলো। শার্ট কি আমি পড়েছিলাম নাকি আপনি? উল্টো প্রশ্ন ছুড়ে দেয় রুদ্রর দিকে দোলা। দোলা ব্যাপারটা চাপা দেওয়ার জন্য নিজেকে শক্ত করে নিয়ে রুদ্রকে ঝাড়ি দেয়। এই ছাড়া দোলার কাছে উপায় নেই এখন। দোলার কথায় রুদ্র দ্বিধায় পড়ে যায়।

; দোলা মনে মনে ভাবে এই সুযোগ। এখনই রুদ্র থেকে পালাতে হবে তাকে৷ তাই দোলা রুদ্রকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে যায়। আর রুদ্র এখনো একই ভাবে বসে আছে।। আসলে সত্যি সে ভাবতে পারছে না কি হয়েছে এখানে৷ আর তারই বা এই অবস্থা কেনো?

.. চলবে…