তুমিময় আসক্তি পর্ব-২১+২২

0
1193

#তুমিময়_আসক্তি
#কলমে_আলো_ইসলাম

“২১”

–” তানিয়া আজ সারাদিন দোলার সাথে সময় কাটিয়েছে। কিন্তু দোলার মনটা খারাপ থেকেই গেছে। রুদ্রর এমন বিহেভিয়ার সে মানতে পারছে না। যদিও তানিয়ার সামনে কিছু বুঝতে দেয়না দোলা। কিন্তু মনে মনে তার ভীষণ খারাপ লাগছে। রুদ্রর হঠাৎ হঠাৎ বদল দোলাকে ভেতর থেকে নাড়িয়ে তুলছে। এই কাছে আসছে তো এই আবার অনেক দূরে সরে যাচ্ছে। দোলা এখন রুদ্রতে আসক্ত। রুদ্রর করা ছোট ছোট কেয়ার, আগলে রাখা সব কিছুতে দোলা আবদ্ধ হয়ে গেছে। তাই রুদ্রর অবহেলা, তাকে এড়িয়ে চলাটা দোলা ঠিক মানতে পারছে না।

–‘ রুদ্র বাড়ি ফিরেছে ঘন্টা খানিক হলো। এসে দোলার দিকে তাকায়নি একবারও। আগের ন্যায় সব কাজ করে বারান্দায় চলে যায়। এই ঘরে যে কেউ আছে সেদিকে তার নজর নেই। দোলার রাগ হয় রুদ্রর এমন আচরণে। একবার তার দিকে তাকালো না৷ কেমন আছে এটা পর্যন্ত একবার জিজ্ঞেস করার প্রয়োজন মনে করলো না। একজন অপরিচিত মানুষও তো জিজ্ঞেস করে কারো অসুস্থতায়। দোলার অভিমান হয় রুদ্রর প্রতি।

“” দোলার পায়ের ব্যথা কিছুটা কমেছে৷ তানিয়া গরম পানির সেক সাথে কয়েকবার স্প্রে করেছে৷ এখন মোটামুটি ভালোই আছে দোলার পা। কপালের ক্ষতটা আছে তেমনই। একদিনে কি আর শুকোই সব। গালের একটা অংশ ছিলে গিয়ে কালচে হয়ে আছে সেখানে৷ ফর্সা মুখে দাগটা বেমানান লাগছে দোলার৷ দোলার শরীর প্রচন্ড ব্যথা ছিলো সিঁড়ি বেয়ে বেয়ে পড়ার জন্য। সেটাও কম লাগছে আজ। কিন্তু দোলা একা উঠে কোথায় যেতে পারছে না। উঠতে গেলে পায়ে ব্যথা করছে তার।

– সময়টা সন্ধ্যা।
–” একজন সার্ভেন্ট দোলার জন্য নাস্তা নিয়ে আসে। দোলা তাকে বলে তানিয়াকে ডেকে দেওয়ার জন্য। রুদ্র বারান্দা থেকে দোলার সব কথোপকথন শুনতে পাচ্ছে৷ আসলে রুদ্রর মনো সংযোগ দোলার দিকেই। কিন্তু দোলাকে সেটা বুঝতে দিচ্ছে না ।

–” তানিয়া তার ঘরে ছিলো এই সময়টা। দোলা ডাকছে শুনে রুদ্রর রুমে আসে। দরজার সামনে আসতেই বলে, বউমনি আমাকে ডাকছিলে?

–‘ তানিয়ার কথায় দোলা হতাশ দৃষ্টিতে তাকায়।
-” রুদ্র এখনো একইভাবে বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে। আসলে দোলা তানিয়াকে কেনো ডাকলো সে বুঝতে পারছে না।
–” তানিয়া আমাকে তোমার ঘরে নিয়ে যাবে প্লিজ? আমি এখানে থাকতে চাই না। দোলার কথায় তানিয়া অবাক হয়ে বলে কিন্তু বউমনি…

–‘ তোমার যদি সমস্যা হয় তাহলে বাবাকে একটু ডেকে দাও। আমি বাবাকে বলে অন্য ঘরের ব্যবস্থা করে নিচ্ছি। কথাটা অনেক দুঃখ থেকে বলে দোলা। আসলে একই ঘরে থেকে এমন উপেক্ষা সহ্য করা যায় না। দোলার ভীষণ কষ্ট হচ্ছে রুদ্রর ইগ্নোরে। তাই সে এই ঘরে থাকতে চাই না। দোলা থেকেও রুদ্রর কাছে নাই যেনো। তাই দোলা চাইনা রুদ্রর ঝামেলা বাড়াতে৷ থাক সে নিজের মতো করে।

-“” এমন করে কেনো বলছো বউমনি৷ আমার কোনো সমস্যা নেই তোমাকে আমার ঘরে নিতে৷ আমি তো প্রথম দিনই ব্রোকে বলেছিলাম তোমাকে আমার কাছে দেওয়ার জন্য। ব্রোই তো.. বলে থেমে যায় তানিয়া। কিছু একটা হয়েছে তানিয়া বুঝতে পারছে।

–” দোলা রুদ্রর দিকে তাকাচ্ছে বারবার৷ রুদ্র হয়তো তাকে আটকাবে৷ কিছু বলবে এই প্রত্যাশায় দোলা এখনো পথ চেয়ে আছে। কিন্তু রুদ্র দোলার কথার কোনো রিয়াকশনই দেখায় না৷ দোলার কথা যেনো তার কান পর্যন্ত পৌছায়নি এমন ভাব ধরে আছে৷

–‘ তানিয়া রুদ্র দিকে তাকায় অ
কয়েকবার। রুদ্রর কোনো রেসপন্স না পাওয়ায় দোলাকে ধরে নিয়ে যায় তার রুমে৷ দোলা দরজা পর্যন্ত আসতেই পিছু ঘুরে রুদ্রর দিকে তাকায় একবার৷ রুদ্র এখনো আগের ন্যায় করে আছে৷ দোলার চোখ ভরে আসে পানিতে৷ সে ভেবেছিলো রুদ্র শেষ পর্যন্ত তাকে যেতে দিবে না৷ কিন্তু তার ধারণা ভুল৷ রুদ্রর মনে তার জন্য একটু জায়গা তৈরি হয়নি এতদিনে৷ দোলার দম আটকে আসে এইসব ভাবলে।

-” দোলা বেরিয়ে যেতেই রুদ্র ঘুরে তাকায়৷ বিসানার দিকে তাকিয়ে দেখে বিসানা শুন্য পড়ে আছে। দোলা যেখান’টাই থাকতো সেখানটা বড্ড ফাঁকা ফাঁকা লাগছে৷ রুদ্রর বুকের মধ্যে মোচড় দিয়ে উঠে।

””” দোলাকে আটকানো কি উচিত ছিলো আমার? আমার এমন হচ্ছে কেনো? নিজ ইচ্ছেতে চলে গেছে ভালোই তো হয়েছে। আমি তো এটাই চেয়েছিলাম৷ তাহলে আমার ভেতরে এমন অস্থির অস্থির লাগছে কেনো। মনে হচ্ছে অনেক মুল্যবান কিছু আমি হারিয়ে ফেলেছি৷ কেনো হচ্ছে আমার সাথে এমনটা৷। কি করব আমি বলেই রুদ্র চুল টেনে ধরে তার।

–‘ দোলার চলে যাওয়াটা রুদ্র সহ্য করতে পারছে। দোলা যে কষ্ট নিয়ে এই ঘর থেকে গেছে রুদ্র বেশ বুঝতে পারছে। রুদ্র বেরিয়ে যায় রুম থেকে। এই রুমে থাকতে যেনো তার ভালো লাগছে না আর৷ দম বন্ধ হয়ে আসছে তার।
–”
–‘” রাত ১০টা বাজে। রুদ্র সেই যে বেরিয়েছে এখনো ফিরেনি
–“” তানিয়া দোলার জন্য খাবার নিয়ে আসতে গেছে৷ জেসমিন চৌধুরী এই সুযোগে তানিয়ার ঘরে আসে। রুদ্রর ঘর থেকে দোলা বেরিয়ে এসেছে শুনে অনেক আনন্দ পেয়েছেন তিনি।।

–” হাসতে হাসতে ঘরের মধ্যে ঢুকেন তিনি। দোলা মন খারাপ করে বসে ছিলো৷ জেসমিন চৌধুরীর হাসতে হাসতে আসতে দেখে নড়েচড়ে বসে৷ দোলা এখন কোনো কথা বলার মুডে নেই। তাই জেসমিন চৌধুরীর দিকে একবার তাকিয়ে অন্য দিকে ফিরে আবার।

— ইসস বড্ড মায়া হচ্ছে মুখটা দেখে৷ কি করুণ দৃশ্য। শেষ পর্যন্ত ওই ঘর ছাড়তে হলো তোমাকে। জায়গা হলো না ঘরে। রুদ্র তোমাকে তোমার আসল জায়গাটা ঠিক দেখিয়ে দিলো। বলে ছিলাম বেশি আশা রেখো না রুদ্র উপর । হলো তো। মুখ থুবড়ে সেই নিচে পড়লে। দোলা জেসমিন চৌধুরীর কথায় বিরক্ত হয় খুব৷ চেয়েছিলো কিছু বলবে না। কিন্তু ইনি এমন মহিলা চুপ করে থাকলে আরো মাথায় চড়ে বসে।

–” আপনার কোথাও ভুল হচ্ছে ফুপি৷ আমি ওই ঘর ছাড়িনি আর না ছেড়ে এসেছি সারাজীবনের জন্য। বেরিয়ে এসেছি। তাও কিছুদিনের জন্য। সুস্থ হলে আবার ফিরে যাব। আসলে নিজের ভালো মন্দ টাও দেখার বিষয় আছে৷ সুবিধা হচ্ছিলো না তাই এসেছি। সময় হলে ঠিক জায়গা মতো চলে যাবো৷ এতো চিন্তা করবেন না ফুপিমা। আমার জন্য চিন্তিত দেখতে ভালো লাগে না আপনাকে মুখে হাসি নিয়ে বলে দোলা।

—‘ সে তুমি যায় বলো। রুদ্র যে তোমাকে চাইনা এইটা দ্বারা প্রমানিত। আসলে তোমার লজ্জা বলতে কিছু নেই৷ যদি থাকত না, তাহলে আবার ওই ঘরে যাওয়ার কথা মুখেও আনতে না৷ জেসমিন চৌধুরীর কথায় তানিয়া কিছু বলতে যাবে,, এর মধ্যে তানিয়া প্রবেশ করে খাবার হাতে নিয়ে।

–“তানিয়া তার মাকে দেখে ভ্রু কুচকে বলে তুমি এখানে কি করছো মা?
-“‘ তানিয়ার কথায় জেসমিন চৌধুরী চমকে উঠে। নিজেকে সামলে নিয়ে বলে এইতো দোলাকে দেখতে এসেছিলাম। মেয়েটা পড়ে গিয়ে এত ব্যথা পেলো। কেমন আছে তাই জিজ্ঞেস করছিলাম। দোলার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলে। দোলা তো গভীর চাহনি নিয়ে তাকিয়ে আছে জেসমিন চৌধুরীর দিকে। তিনি যে নাটকটা বরাবরই ভালো করেন এটা দোলা জানে। দোলাও একটা হাসি ফেরত দেয় তার বিপরীতে।

— আচ্ছা আমি এখন আসি তাহলে। ওই কথা রইলো। নিজের খেয়াল রেখো দাঁতে দাঁত চেপে বলে বেরিয়ে যায় জেসমিন চৌধুরী।

“””– ঘড়ির কাঁটাটা ঠিক ২টার ঘরে অবস্থান করছে। রুদ্র বাড়ি এসেছে ১২টার দিকে। এসে পর্যন্ত ঘরের মধ্যে পায়চারি করছে। একদম ভালো লাগছে না তার এই ঘরে। দোলা ছাড়া ঘরটা শুন্য লাগছে। ঘরের প্রতিটি জায়গা দোলার স্মৃতি বহন করছে। এই অল্প কয়েকদিনে দোলা সব কিছুর সাথে এমন ভাবে মিশে গিয়েছে যে দোলা ছাড়া সব বেমানান লাগছে রুদ্রর কাছে। রুদ্র আলমারি খুলে দেখে দোলার জামা কাপড় রাখার জায়গাটা ফাকা৷ এটা দেখে রুদ্র অবাক হয়। মুখটা ফ্যাকাসে করে বলে ইডিয়ট টা সব কিছু নিয়ে গেছে। যাওয়াচ্ছি ঘর ছেড়ে বলে শব্দ করে আলমারির দরজাটা বন্ধ করে রুদ্র।

— তানিয়ার নিয়ে গেছে দোলার জিনিসপত্র। দোলা চায়না তার কিছু ওই ঘরে থাকুক। তাই তানিয়াকে বলে সব নিয়ে যায়।
–” রুদ্র তুমুলবেগে পায়চারি করছে ঘরের মধ্যে। কি করবে বুঝতে পারছে না৷ দোলাকে নিয়ে আসবে নাকি থাকবে বুঝতে উঠে না। এখন তো সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে৷ দোলাকে এইভাবে নিয়ে আসাটা ঠিক হবে? আর দোলা কি ভাববে। যদি প্রশ্ন করে তাকে কেনো নিয়ে এসেছি তাহলে কি বলব? এই সকল প্রশ্ন রুদ্র নিজে নিজেকে করে।

–‘ রুদ্রর বড় অসহায় লাগছে নিজেকে এখন। তার মধ্যে অস্থিরতা বেড়েই চলেছে।

–‘ নাহ যা হয় পরে দেখা যাবে৷ দোলাকে নিয়ে আসতে হবে। নাহলে আমার মধ্যে এই শূন্যতা যাবে না৷ কেনো হলো আমার সাথে এমন? আমি সত্যি দোলার মায়ায় আটকে গেলাম৷ আমার কি একটা সুযোগ দোলাকে দেওয়া উচিত? যদি দোলাও আমাকে ঠকায়। তাহলে আমি যে আর সহ্য করতে পারবনা। মানতে পারবো না আর কারো উপেক্ষা। রুদ্র সব ভাবনা ছেড়ে রুম থেকে বেরিয়ে আসে তানিয়ার রুমে যাওয়ার জন্য।

-“” নিশ্চুপ চারিপাশ। ড্রয়িং রুমে আলোয় ঝলমল করছে৷ রুদ্র এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখে নেয় কেউ আছে নাকি। এরপর তানিয়ার রুমের সামনে এসেই থেমে যায় রুদ্র৷ তার বুকের মধ্যে ঢিপঢিপ শব্দ করছে৷ মনে হচ্ছে সে কিছু চুরি করতে যাচ্ছে৷

–‘ নিজের বাড়িতে নিজের বউয়ের কাছে আমাকে কিনা চোরের মতো করে যাওয়া লাগছে৷ কি দিনকাল আসলো রে রুদ্র তোর বলে কপালে চাপড়াই রুদ্র।। রুদ্র তানিয়া ঘরে হাল্কা ধাক্কা দিতে দরজা অল্প একটু ফাঁকা হয়ে যায়৷ রুদ্র তো বেজায় খুশি দরজা খোলা আছে দেখে।
— তানিয়ায় খোলা রেখেছিলো ইচ্ছে করে দরজাটা। তার কেনো জানি মনে হচ্ছিল রুদ্র আসবে দোলার সাথে দেখা করতে। কিন্তু রুদ্র যে দোলাকে নিয়ে যাবে এটা অকল্পনীয় ছিলো।

–‘ দরজা খোলা রেখে ঘুমিয়েছে কেনো? এই তানিয়াটাও দিন দিন কি ষ্টুপিড হয়ে যাচ্ছে এই মেয়েটার সাথে থেকে।

— ড্রিম লাইটের আলোয় পুরো ঘর আলোকিত হয়ে আছে। আবছা আলোয় রুদ্রর দেখতে একটু সমস্যা হচ্ছে না৷ দোলা আর তানিয়া ঘুমে বিভোর হয়ে। দোলা মাথার নিচে এক হাত দিয়ে ঘুমিয়ে আছে। আর তানিয়া এক পা খাটের নিচে ঝুলে আর এক পা খাটের উপর দিয়ে শুয়ে।
–” তানিয়ার শোয়া দেখে রুদ্র ভ্রু কুচকে তাকায়৷ আসলে একটা ইডিয়ট ঘুমানোর কি অবস্থা বলে নাক শিটকায় রুদ্র।

–” রুদ্র আলতো পায়ে ঘরের মধ্যে প্রবেশ করে দোলার কাছে যায়৷ দোলার মাথার কাছে চুপটি করে বসে দোলার দিকে তাকায়।
–‘ দোলার চোখের কোণ বেয়ে পড়া পানির দাগ বিদ্যমান। দোলা যে কান্না করতে করতে ঘুমিয়েছে এটাই তার স্পষ্ট সাক্ষী বহন করছে। রুদ্র একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে ভেতর থেকে। এরই মাঝে দোলা নড়ে উঠে উল্টোদিকে ফিরে ঘুমায়৷ দোলাকে নড়তে দেখে রুদ্র চমকে উঠে। ভয়ে হার্টবিট দ্রুত উঠানামা করতে থাকে। দোলা যদি জেগে যায় এখন তাহলে অনেক বড় বিপদ হয়ে যাবে৷ রুদ্র একটু পর লক্ষ্য করে দোলা আবার ঘুমিয়ে গেছে৷ রুদ্র যেনো হাঁফ ছেড়ে বাঁচে।

–‘ রুদ্র উঠে দাঁড়িয়ে নিজের বুকে ফু দিয়ে তানিয়ার দিকে তাকায়। তানিয়া আগের ন্যায় ঘুমে আছে৷ রুদ্র দোলাকে কোলে তুলে নিয়ে দ্রুত পায়ে তানিয়ার ঘর থেকে বেরিয়ে যায়।।

—‘”‘ রুদ্র দোলাকে ঘরে নিয়ে এসে বিসানায় শোয়াতে যায় তখনই দোলার ঘুম ভেঙে যায়। দোলা ঘুমন্ত চোখে আলতো করে তাকাতেই রুদ্রকে এত কাছে দেখে ঘাবড়ে গিয়ে চিৎকার করতে যাবে তখনই রুদ্র দোলার মুখ চেপে ধরে। দোলা তো শকড হয়ে বড়বড় চোখ করে তাকিয়ে আছে৷ আসলে দোলা ঘুমের ঘোরে রুদ্রকে ভালো করে দেখতে পেয়েছিলো না। এত কাছ থেকে রুদ্রকে দেখতে কেমন অদ্ভুত লাগছিলো। তাই দোলা ঘুমের ঘোরে রুদ্রকে দেখে ভয় পেয়ে চিৎকার করতে যায়।

–” দোলার ঘুম উড়ে গেছে এতখনে। রুদ্রকে দেখে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে বলে আপনি? আপনি এই ঘরে কি করছেন?

–‘ রুদ্র দোলার থেকে সরে এসে বলে আমার ঘরে আমি থাকবো না তো কে থাকবে?
–‘ দোলা রুদ্র কথায় কৌতুহল নিয়ে বলে মানে৷ আপনার ঘর আসলো কোথায় থেকে এটা তো… বলেই থেমে যায় দোলা। কারণ দোলা ঘরের চারিপাশে তাকিয়ে দেখে সে তানিয়া না রুদ্রর ঘরে অবস্থান করছে। দোলা চমকানো চোখে তাকিয়ে বলে এই আমি এখানে কি করে আসলাম? আমি তো ওই ঘরে. আপনি আমাকে নিয়ে এসেছেন এখানে? কেনো নিয়ে এসেছেন আমাকে আবার এখানে? মুখটা মলিন করে বলে দোলা।

–‘ আমার ইচ্ছে হয়েছে তাই নিয়ে এসেছি কোনো সমস্যা? সোজাসাপ্টা জবাব দেয় রুদ্র।

— অবশ্যই সমস্যা। আপনি আমাকে নিয়ে এমন খেলা করতে পারেন না৷ যখন ইচ্ছে হবে কেয়ার করবেন৷ আবার যখন ইচ্ছে হবে অবহেলা করবেন। আমি একটা মানুষ। আমার মধ্যেও অনুভূতি আছে৷ এটা হয়তো আপনি ভুলে যান থমথমে গলায় বলে দোলা।

–” রুদ্র করুণ চাহনি নিয়ে তাকায় দোলার দিকে। দোলা যে কষ্ট থেকে এইসব বলছে তার অজানা নয়৷

-” আমি থাকবো না এখানে। আমাকে আবার ওইঘরে দিয়ে আসুন৷ নাহলে আমি একাই যাচ্ছি বলে দোলা নামতে গেলে রুদ্র দোলাকে বিসানার সাথে চেপে ধরে।।
–‘ দোলা ভয়ার্ত চোখে তাকায় রুদ্রর দিকে৷ আর রুদ্র রক্তবর্ণ চোখে তাকিয়ে আছে দোলার দিকে। দোলা শুকনো ঢোক গিলে একটা। সেই আগের রুদ্রকে দেখতে পাচ্ছে দোলা আবার। বেশিখন রুদ্রর দিকে তাকিয়ে থাকার সাহস হয়না দোলার। তাই চোখ নামিয়ে অন্য দিকে তাকায়।।

—” আর একবার যদি এই ঘর থেকে যাওয়ার চেষ্টা করো তাহলে আরেকটা ঠ্যাং খোঁড়া করে রেখে দেবো মাইন্ড ইট বলে রুদ্র সরে আসে দোলার থেকে।

–‘ দোলা যেনো রুদ্রকে এখনো বুঝে উঠতে পারেনা। এই কেয়ারিং তো এই আবার ডেঞ্জারাস।

–” শুনো ভেবো না আমি তোমার প্রতি দুর্বল হয়ে পড়েছি বা তোমাকে ভালোবেসি, তাই থাকতে পারছি বলে আবার এখানে ফিরিয়ে নিয়ে এসেছি । রুদ্রর কথায় দোলা ছোট ছোট চোখে তাকায়।

–‘ আমাদের বিয়ের কথাটা এখন সবাই জেনে গিয়েছে৷ প্রেস মিডিয়া সবাই ছড়িয়ে দিয়েছে আমাদের বিয়ের ব্যাপারটা৷ তাই সবাই জানে তুমি আমার স্ত্রী। তবে হ্যা আমি কিন্তু এইসব মানি না। সবাই জেনে গিয়েছে তাই বললাম। এখন তুমি যদি সবাইকে গিয়ে বলো তোমার স্বামী আই মিন রুদ্রনীল চৌধুরী তার ওয়াইফকে ঘর থেকে বের করে দিয়েছে তাহলে সবাই আমার দিকে আঙ্গুল তুলবে। আর রুদ্রনীল চৌধুরীর দিকে কেউ আঙ্গুল তোলার সাহস দেখাক সেটা আমি চাইনা। তাই তোমাকে এই ঘরে আবার ফিরিয়ে এনেছি দ্যাটস ইট।

— আমি কেনো সবাইকে এই কথা বলতে যাবো আজব? কনফিউজড হয়ে বলে দোলা।

–” তোমাকে দিয়ে আমার বিশ্বাস নেই। তুমি যে এমন কিছু করবে না সেটা আমি বিশ্বাস করিনা৷ তাই আগে থেকে সেফটি নিয়ে রাখলাম। যাতে তুমি কাউকে এমন ধরনের কথা না বলতে পারো৷ আমার ঘুম পাচ্ছে আমি এখন ঘুমাবো। একদম ডিস্টার্ব করবে না আমাকে৷ আর একটাও কথা বলবে না চুপচাপ ঘুমিয়ে পড়ো গম্ভীর কন্ঠে বলে রুদ্র। এরপর দ্রুত পায়ে গিয়ে একপাশে শুয়ে পড়ে। আসলে দোলার থেকে পালিয়ে গেলো সে দোলাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে।

–” আর দোলা বেচারা একটা শকড কাটিয়ে আরেকটা শকড নিয়ে বসে আছে৷ কি বলল রুদ্র আর কি করলো কিছুই মাথায় যাচ্ছে না তার৷।

–”’ আমি বাইরে সবাইকে বলব উনি আমাকে ঘর থেকে বের করে দিয়েছে? মানে কি এইসব কথার। ভাবান্তর হয়ে বলে দোলা। এরপর ফিক করে হেসে উঠে দোলা মুখ চেপে ধরে। আসলে রুদ্রর ব্যাপারটা সে বুঝে গিয়েছে।

–”আসলে উনি আমাকে মিস করছিলেন। এই জন্য উনি আমাকে আবার এই ঘরে নিয়ে এসেছেন৷ কিন্তু সেটা একদম প্রকাশ করতে চাইনা রাক্ষসটা। তাই আমার কথার জালে আমাকে ফাসিয়ে দিলো। ওকে আমিও মিসেস চৌধুরী। উনি যদি চলে পাতায় পাতায় আমিও তাহলে ডাল নয় একদম শিরায় পৌছে যাবো। আমাকে তো চিনে না মিস্টার রুদ্রনীল চৌধুরী। আপনার মুখ থেকে আমি সত্যি কথা বের করেই ছাড়ব নাহলে আমার নাম দোলা না। মনে মনে বলে। এরপর সেও শুয়ে পড়ে রুদ্র পাশে৷ এখন দোলার মন খারাপ নেই৷ না আছে কষ্টের হাতছানি।

— দোলার মনটা এখন অনেক ফ্রেস লাগছে। এই মুহূর্তে মনে হচ্ছে সব সুখ তার কাছে এসে ধরা দিয়েছে। রুদ্র পাশ ফিরে শুয়ে আছে ঠিকই কিন্তু এখনো ঘুমায়নি। দুজন দুজনের বিপরীত পাশ হয়ে শুয়ে আছে। রুদ্র খুবই সাবধানে পিছু ফিরে দেখে দোলা শুয়েছে পাশ ফিরে। রুদ্র একটা মুচকি হাসি দিয়ে চোখ বন্ধ করে। এখন তার শান্তি লাগছে অনেক। ভেতরের অস্থিরতা টা আর নেই তার মধ্যে। মনে হচ্ছে শূন্যস্থান টা পূরণ হয়ে গেছে।

–চলবে……

#তুমিময়_আসক্তি
#কলমে_আলো_ইসলাম

“২২”

–” কেটে যায় ৫ দিন…
-” দোলা এখন একদম সুস্থ। পায়ের ব্যথাটা কমে গেছে। এখন সে নিজেই হাঁটাচলা করতে পারছে।
–“””” এই ক’দিন রুদ্র দোলার যথেষ্ট দেখাশোনা করেছে। অবহেলা না করে দোলার কখন কি প্রয়োজন সময় মতো দিয়েছে৷ দোলা তো রুদ্র ব্যবহারে অবাকের পর অবাক হয়েছে শুধু। এই মানুষটার মনে যে, সে জায়গা করে নিতে পারবে ভাবিনি কখনো। তবে রুদ্র সেটা কখনো ধরা দেয়নি দোলার কাছে। কোনো কাজ করার পরে ঠিকই বুঝিয়ে দিয়েছে সেটা সে দায়িত্ব থেকে করেছে৷ দোলা যেনো অন্য কিছু না ভাবে তাকে নিয়ে । দোলা রুদ্রর কথায় প্রতিবারই মুচকি হাসি উপহার দিয়েছে৷ কারণ কেউ না জানুক দোলা বুঝে গিয়েছে রুদ্র দোলাতে আসক্ত হয়ে পড়েছে। দোলার মায়ায় আটকে গেছে সে।

–”” দোলা রেডি হচ্ছে৷ আজ সে কলেজ যাবে। কলেজে কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাজের জন্য সবাইকে ডাকা হয়েছে৷ তাই দোলাও যেতে বাধ্য। কিন্তু জাহির চৌধুরী প্রথমে নারাজ ছিলেন৷ দোলা এখনো সম্পুর্ন সুস্থ নয়। তাই সে বলে দোলা যেনো পুরোপুরি সুস্থ না হয়ে বাড়ির বাইরে বের হয়। কিন্তু দোলা এখন প্রায় ভালো রকমই সুস্থ হয়ে উঠেছে এটা অনেক কষ্টে বুঝায় জাহির চৌধুরীকে।

–‘ তানিয়া তো শ্বশুর বউমার খুঁনসুটিতে বেশ মজা নিয়েছে।

–” বউমনি তোমাকে একটা কথা বলা হয়নি। তানিয়ার কথায় দোলা হিজাব আটতে আটতে বলে বলো না কি বলবে।

–” তোমার সজলের কথা মনে আছে। যে আমাদের ইনভাইট করেছিলো তার মনিমার জন্মদিনে।
— দোলা স্বাভাবিক ভাবে বলে হুম আছে তো মনে। কেনো কি হয়েছে?

–‘ না মানে আমার তো উনার সাথে এখন প্রায় কন্টাক্ট হয়। ওই যে হসপিটালে তোমাকে দেখেছিলো। এরপর থেকে তোমার খোঁজ খবর আমার থেকে নিতো এই আর কি। তো কাল তার মনিমার জন্মদিন। আমাদের তো যাওয়ার জন্য বারবার রিকুয়েষ্ট করছে। কি করবে? যাবে? তুমি সুস্থ নও বলে মামু যে কান্ড করছে৷ আবার ব্রো জানতে পারলে আর রক্ষে নেই। কি করবো বুঝছি না৷ উনাকে নাও বলতে পারছি না মুখটা মলিন করে বলে তানিয়া।

–‘ বাব্বাহ৷ তানি রানীর ভীষণ চিন্তা দেখছি উনাকে নিয়ে। তা রেগুলার যোগাযোগ টা কি শুধু আমার খবর দেওয়ার জন্য হয় নাকি অন্য কিছুও আছে৷ ভাবান্তর হয়ে বলে দোলা রসিকতা করে।

–‘ দোলার কথায় তানিয়া লজ্জা রাঙা মুখ করে বলে বউমনি ভালো হচ্ছে না কিন্তু। তাছাড়া ওই উজবুকটার সাথে আবার অন্য কি থাকবে৷

–” কি জানি বাপু। মনের খবর বোঝা তো দায়।

— সজলের সাথে তানিয়ার সম্পর্কটা এখন বন্ধুত্ব সুলভ হয়ে উঠেছে। তানিয়া আর সজল রেগুলার কথা বলে ফোনে। এখন আর তাদের মধ্যে আগের মতো ঝগড়া হয়না। তানিয়ার প্রথমে সজলকে অদ্ভুত লাগলেও পরে বুঝতে পারে সজল অনেক ভালো আর সহজ সরল ছেলে। তানিয়া একটু একটু ভালো লাগতেও শুরু করে সজলকে। কিন্তু সজলের দিক থেকে সম্পর্কটা কি সে বুঝে উঠতে পারিনি এখনো।

–‘ আচ্ছা শুনো তানিয়া৷ আমরা এটা নিয়ে পরে কথা বলব কেমন? আমি কলেজ থেকে ফিরে আসি। আর বাবাকে মেনেজ করার দায়িত্ব আমার কিন্তু তোমার ভাইয়া৷ তিনি যদি জানে কোনো ছেলের ইনভাইটে আমরা যাচ্ছি তাহলে আবার আমাকে ভুল বুঝবে মুখটা ফ্যাকাসে করে বলে দোলা।

–‘ এর মধ্যে রুদ্র প্রবেশ করে। সকালে মর্নিং ওয়াকে গিয়েছিলো সে। তানিয়া আর দোলাকে এক সাথে তার ঘরে দেখে ভ্রু কুচকায়। তার থেকে বেশি অবাক হয় দোলাকে রেডি হতে দেখে।

–‘ কি হচ্ছে এখানে৷ আর তুমি কোথায় যাচ্ছো ? গম্ভীর কন্ঠে বলে রুদ্র৷ রুদ্রর কথায় তানিয়া আর দোলা দুজনেই চমকে উঠে দুজন দুজনের মুখের দিকে তাকায়। এরপর দুজনেই শুকনো ঢোক গিলে তানিয়া বলে আমি এখন আসছি বউমনি পরে কথা হবে তোমার সাথে। এরপর দৌড়ে বেরিয়ে যায় তানিয়া৷ রুদ্র তো তানিয়ার কাজে একটু অবাকই হয়।

–‘ জ্বি মানে কলেজ যাচ্ছি৷ নুয়ে যাওয়া কন্ঠে বলে দোলা।
-‘ এই অবস্থায় তোমাকে কলেজ যাওয়ার পারমিশন কে দিয়েছে? দৃঢ় কন্ঠে বলে রুদ্র৷
–‘ কলেজে যাওয়াটা খুবই দরকার। তাই আমি বাবার থেকে অনুমতি নিয়েছি। কাজটা শেষ করে চলে আসব।

–‘ ” কোনো দরকার নেই কলেজ যাওয়ার। আর যদি কোনো কাজ থেকে থাকে তো আমি সামলে নেবো। তাও এই অবস্থায় বাইরে গিয়ে নিজেকে আরো অসুস্থ করে ফিরতে হবে না। বারবার তোমার কেয়ার করার জন্য কেউ থাকবে না৷

–‘ রুদ্র যে কথাটা রাগ করে বলছে বুঝতে পারছে দোলা। দোলা কিছু না বলে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকে। মুখটা গম্ভীর করে রেখেছে৷ রুদ্র আর কিছু না বলে ওয়াসরুমে চলে যায়।

–‘ দোলা মন খারাপ করে সেখানেই একটা চেয়ারে বসে পড়ে।

–‘ কিছুখন পর রুদ্র ফ্রেস হয়ে এসে দেখে দোলা মন খারাপ করে বসে আছে। রুদ্রর খারাপ লাগে দোলাকে মন খারাপ করতে দেখে৷ রুদ্র অফিস যাওয়ার জন্য রেডি হতে শুরু করে। আর দোলা এখনো একই ভাবে বসে আছে। এর মধ্যে দোলার ফোন বেজে উঠে। বিসানার উপর ফোন থাকায় দোলা একটু নড়েচড়ে উঠে ফোন বাজতে দেখে। রুদ্রর দিকে তাকিয়ে দেখে রুদ্র তার ফোনের দিকে তাকিয়ে আছে। দোলাকে তাকাতে দেখে চোখ সরিয়ে নেয় রুদ্র।

–‘ দোলা উঠে এসে ফোন হাতে নিয়ে দেখে আশার ফোন। দোলা করুণ চোখে রুদ্র দিকে তাকিয়ে ফোন টা কেটে দেয়।

–‘ তাড়াতাড়ি রেডি হও। অফিস যাওয়ার পথে তোমাকে নামিয়ে দিয়ে যাবো আমি৷ আর হ্যাঁ কাজ শেষ হলে ড্যাড কে ফোন দিয়ে বলবে গাড়ি পাঠিয়ে দিবে। একা একা আসার চিন্তা ভাবনা ভুলেও করবে না বুঝেছো?

–‘ রুদ্রর কথায় দোলার মুখে হাসি ফুটে। মাথা ঝাকিয়ে হ্যাঁ বলে বাকিটা রেডি হতে থাকে৷ রুদ্র দোলার হাসি মুখ দেখে দোলার আড়ালে একটা মুচকি হাসি দেয়।
—” আসলে মায়ায় সব কিছু সম্ভব। মায়া থেকে ভালবাসার জন্ম হয়। কোনো কিছুর মায়ায় আবদ্ধ হয়ে গেলে সেটা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া এত সহজ নয়।
—-“” কারো মায়ায় একবার জড়িয়ে গেলে
সেটা কাটিয়ে আসা যায়না আর,
মায়া কাটাতে গিয়ে নতুন করে
মায়ায় আবদ্ধ হয়ে যায়।

—“” রুদ্র আগে বেরিয়ে যায়। এরপর রুদ্রর পেছন পেছন দোলাও আসে। রুদ্র আর দোলাকে এক সাথে সিঁড়ি দিয়ে নামতে দেখে জাহির চৌধুরী মুগ্ধ নয়নে তাকায় তাদের দিকে। এই দৃশ্যটা কেনো জানি জাহির চৌধুরীর খুব ভালো লাগছে। মনের মধ্যে সুখের বন্যা বয়ছে।

–‘ দুজনকে একসাথে বেশ লাগছে তাই না মামু? তানিয়ার কথায় জাহির চৌধুরী ছলছল চোখে বলে, আমি চাই ওরা এক সাথে থাকুক সারাজীবন। আমার অবুঝ ছেলেটাকে দোলা আগলে রাখুক সব সময়। তানিয়া তার মামার কথায় একটা দীর্ঘশ্বাস রেখে তৃপ্তিকর হাসি দেয়।

—“” রুদ্র এসে নাস্তা করতে বসে যায়। দোলাও এসে বসে রুদ্রর পাশের চেয়ারে। এরপর নাস্তা করতে থাকে সবাই। এইদিকে একজন দোলা আর রুদ্রকে একসাথে দেখে রাগে ফুসছে। নাকের ডগা লাল টকটকে হয়ে গেছে রাগের কারণে। সাপ যেমন ফণা তোলে ফোস ফোস করে রাগে তার মধ্যেও এমন হচ্ছে। কিন্তু সেটা কেউ বুঝতে পারছে না সে ছাড়া।

–‘ দোলা মা সাবধানে থাকবি। একদম দৌড়ঝাপ করবি না বাইরে গিয়ে। জাহির চৌধুরীর কথায় দোলা মুচকি হাসে।

-“” মামু এটা কেমন কথা? বউমনি কি ছোট বাচ্চা নাকি, যে কলেজ গিয়ে সবার সাথে দৌড়ঝাপ করে ছুটাছুটি করবে। কাজে যাচ্ছে কাজ শেষ হলে ফিরে আসবে৷ তাছাড়া বউমনি এখন যথেষ্ট সুস্থ আছে। দোলাও সায় দেয় তানিয়ার সাথে।

–‘ তোমাকে আর সাক্ষী দিতে হবে না তার হয়ে। ওর থেকে একটা বাচ্চাও অনেক ম্যাচুরিট, কথাটা বলে রুদ্র আবার নিজের মতো খেতে শুরু করে আর দোলা বাংলার পাঁচের ন্যায় মুখ করে বসে থাকে। তানিয়া আর জাহির চৌধুরী মুখ চেপে হাসি দেয় একটা দোলার মুখোভঙ্গি দেখে।

–” নাস্তা শেষ করে তারা দুজনে একসাথে বেরিয়ে যায়। এখন বিপত্তি বাধে দোলা সামনে বসবে নাকি পেছনে। যদি সামনে বসে তাহলে রুদ্র কিছু বলবে ভয়ে দোলা সামনে যেতে চাচ্ছে না৷ আবার পেছনে বসলে যদি সিনেমার ডায়লগ দিয়ে বলে আমি তোমার ড্রাইভার না সামনে এসো।

— উফফ বাবা কি ঝামেলা পড়লাম। কোথায় বসব এটাই বুঝতে পারছি না৷ ওই রাক্ষসটাকে দেখো গাড়িতে উঠে বসে আছে৷ কিছু বলছেও না। ধুর আমি পেছনেই বসব যা হয় হোক বলে দোলা পেছনে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতে যাবে তখনই রুদ্র গাড়ির সামনের দরজা খুলে দেয়। দোলা চমকে উঠে রুদ্র দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলে, বড় বাঁচা বেঁচে গেছি। ভাগ্যিস পেছনে যায়নি। নাহলে রাক্ষস টা নির্ঘাত কথা শোনাতে ছাড়তো না আমাকে। এরপর দোলা রুদ্রর সাথে সামনে বসে। দোলা সিটবেল্ট লাগালে রুদ্র গাড়ি স্টার্ট দেয়।

–”’ আশা একা একা হেঁটে আসছে রাস্তা দিয়ে। কলেজ যাবে একটাও রিকশা পাচ্ছে না৷ আবার দোলাও কল না ধরে কেটে দিয়েছে৷ সব কিছু মিলিয়ে ভীষণ বিরক্ত আশার।

–” রাজ গাড়ি নিয়ে ওই রাস্তা দিয়ে আসতে ছিলো। রাস্তায় আশাকে দেখে তার মুখে অটোমেটিক একটা হাসি চলে আসে। আসলে আশাকে প্রথম দেখায় রাজের ভালো লেগে যায়। সেদিন দোলার সাথে রাজ আশাকে দেখে পছন্দ করে ফেলে। রাজের মনোযোগ সেদিন আশার দিকে ছিলো। কিন্তু না দোলা আর না আশা কাউকে বুঝতে দেয়নি রাজ

–‘ রাজ আশার পাশে এসে গাড়ি ব্রেক করে। হঠাৎ গাড়ি পাশে থেমে যাওয়ায় আশা চমকে উঠে। ভয়ার্ত চোখে সামনে তাকাতেই রাজ বেরিয়ে আসে গাড়ি থেকে। আশার প্রথমে একটু রাগ হলেও রাজকে দেখে যেটা গলে পানি হয়ে যায়.।

–” আশা কৌতুহলী হয়ে রাজের দিকে তাকিয়ে আছে। আর রাজ মুখে মিষ্টি একটা হাসি ঝুলিয়ে বলে আরে আপনি? আপনি দোলা ভাবির বন্ধু কি যেনো নাম… একটু ভেবে বলে রাজ।

–‘ আশা খাতুন। সাথে সাথে বলে উঠে আশা।
-‘ ওহ হ্যাঁ আশা। তা আপনি এইদিকে। কোথায় যাচ্ছেন?
-” বেটা কি চোখে অন্ধ নাকি৷ দেখছে বই হাতে কলেজ যাচ্ছি তাও জিজ্ঞেস করে কোথায় যাচ্ছি। ঝালমুড়ি বিক্রি করতে যাচ্ছি। যাবি আমার সাথে। কিন্তু কথা গুলো মনে মনে বলে আশা। মুখে বলার আর সাহস হয়ে উঠে না।।

–“” আমি এই এলাকাতেই থাকি। কলেজে যাচ্ছি। কিন্তু আজ একটাও রিকশা দেখছি না রাস্তায়। তাই সামনে এগিয়ে যাচ্ছি যদি রিকশা পায় একটা। মুচকি হাসি দিয়ে বলে আশা।

–‘ আশার কথায় রাজের চোখ দুটো যেনো চকচক করে উঠে। না চাইতেই যেনো হাতে আকাশের চাঁদ পেয়ে গেছে সে।

–‘ ওহ। তাহলে চলুন আমি আপনাকে পৌছে দিই। আমি তো এই রাস্তা দিয়ে যাবো। রাজের কথায় আশা আমতাআমতা করে বলে না না থাক,তার আর দরকার হবে না৷ আমি চলে যাবো রিকশা ধরে।

–‘ আরে সংকোচ করছেন কেনো। তাছাড়া আপনি তো আমার পরিচিতই একটা মানুষ। রাজের কথায় আশা আহ বলে উঠে ।

–‘ রাজ মুখের হাসিটা আর একটু চওড়া হকরে বলে না মানে আপনি যেহেতু দোলা ভাবির ফ্রেন্ড তো সে হিসেবে তো আপনি আমার রিলেটিভের মধ্যেই পড়েন৷ সেটাই বললাম আর কি.।

–” ওহ আচ্ছা।
— তাহলে চলুন এবার। রাজের কথায় আশা রাজের দিকে তাকায়। এরপর একটু ভেবে আশা রাজের সাথে যেতে রাজি হয়।

–“” রুদ্র অফিসে বসে ল্যাপটপে কাজ করছে৷ এর মধ্যে রাজ প্রবেশ করে হাসি মুখে৷ রুদ্র রাজকে দেখে সন্দিহান চোখে তাকায়৷ রাজের হাবভাব কেমন লাগছে রুদ্র কাছে।
–” কি ব্যাপার মনে হচ্ছে বেশ ফুরফুরে মেজাজে আছিস? কারণটা কি ব্রো? প্রেমে ট্রেমে পড়লি নাকি। ল্যাপটপের দিকে তাকিয়ে বলে কথাটা রুদ্র৷।
–‘ এইদিকে বেচারা রাজ শকড হয়ে বড়বড় চোখ করে তাকিয়ে আছে রুদ্রর দিকে। রুদ্রর থেকে এমন কথা শুনবে কখনোই এক্সপেক্ট করেনি রাজ।

–‘ রাজের উত্তর না পেয়ে রুদ্র রাজের দিকে তাকাতেই দেখে রাজ তার দিকে অদ্ভুত চাহনি নিয়ে তাকিয়ে আছে।

–‘ কি হলো এমন করে কি দেখছিস? আমাকে দেখতে কি এলিয়েনের মতো লাগছে নাকি থমথমে গলায় বলে রুদ্র।
–‘ দোস্ত তুই সুস্থ আছিস৷ দেখি তোর জ্বর টর আসেনি তো বলে রুদ্রর কপালে হাত দেয় রাজ।

–‘ আহ কি করছিস ইডিয়ট। আমার কেনো জ্বর আসতে যাবে৷ আইম ফাইন।

–‘ রুদ্রনীল চৌধুরীর মুখে প্রেমের কথা। ও মাই আল্লাহ। এটাও আমাকে বিশ্বাস করতে হবে ভাবিনি।

–‘নাটকবাজিটা কম কর আর কাহিনি কি সেটা বল। এমন রোমান্টিক মুডে ব্যাপার কি? আমি নিশ্চিত কোনো মেয়ের প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছিস তুই?

–‘ তুই বুঝলি কি করে। ভাবুক হয়ে বলে রাজ।

–‘ আরে বুঝি বুঝি৷ আমি কি ছোট বাচ্চা নাকি যে এইটুকু বুঝব না।

–‘ এর আগে তো বুঝতিস না। আর না কখনো এই ধরনের কথা বলেছিস । তাহলে আজ হঠাৎ? তবে এর পেছনে সব ক্রেডিট যে দোলা ভাবির বুঝতে পারছি। কি ব্যাপার ব্রো ভাবির প্রেমে পড়ে গেছিস না হ্যাঁ। রাজ হাস্য চেহারায় বলে।

–‘ রুদ্র রাজের দিকে ছোট ছোট চোখ করে তাকিয়ে বলে কি যা-তা বলছিস৷ আমি কেনো প্রেমে পড়তে যাবো৷ তাছাড়া আমি কি এমনি এইসব কথা বলতে পারিনা তোকে। তুই আমার বেস্ট ফ্রেন্ড । তোকে সব কিছুই বলতে পারি আমি জোর গলায় বলে রুদ্র।

–‘ অবশ্যই তুই আমাকে সব কথা বলতে পারিস৷ সে রাইট তোর আছে। সাথে এটাও বলতে পারিস আমাকে যে, তুই ভাবির প্রেমে পড়েছিস। কিন্তু সেটা স্বীকার করতে চাস না।

–‘ রুদ্র গভীর চাহনি রাজের দিকে তাকায়। এরপর মুচকি একটা হাসি দিয়ে বলে আচ্ছা বাদ দে। তা হঠাৎ আগমনের কারণ?

–‘ রাজ রুদ্রর কথায় সত্যি টপিক ঘুরিয়ে দেয়। কারণ রুদ্র যেটা চাইনা বলতে সেটা জোর করে রাজ কখনোই শুনবেনা। তার বিশ্বাস আছে রুদ্রর প্রতি। রুদ্র যে কোনো কথা আগে রাজকে বলবে তারপর অন্য কেউ।

–‘ আচ্ছা শুন যে কাজে আসা। আমরা যে প্রজেক্ট টা নিয়ে কাজ করছি শেয়ারে তার একটা সিগনেচার লাগবে তোর। ওই নে ফাইল৷ সব দেখে সাইন করে দে বলে রাজ একটা ফাইল এগিয়ে দেয় রুদ্রর দিকে।

–‘ রুদ্র কোনো কিছু না দেখে সাইন করে দেয়। রাজ অবাক হয়ে বলে একি, না দেখে সাইন করলি যে?

–‘ তোর ফাইলে আমি কবে দেখে সাইন করি শুনি। রুদ্রর কথায় রাজ মুচকি হাসে। রুদ্র যে তাকে এত ভরসা করে বিশ্বাস এর জন্য রাজ সত্যি গর্বিত। এমন একটা বন্ধু পেয়ে আর তার বিশ্বস্ত কেউ হয়ে ওঠার জন্য।

–“”” তানিয়া আর দোলা চিন্তিত মুখে বসে আছে ছাদে৷ কাল সজলের বাড়ি যাবে৷ কিন্তু জাহির চৌধুরীকে কি বলবে৷ আর রুদ্র৷ সেতো সব চেয়ে বড় ঝামেলা। তাকে মেনেজ করা সোজা কথা না।

–”” দোলা আর তানিয়া গালে হাত দিয়ে বসে আছে। সজলকে যে না করবে তারও উপায় নেই। অলরেডি কথা দিয়ে দিয়েছে তানিয়া৷।।

–” ও বউমনি। কিছু একটা উপায় তো বলো দোলাকে ঝাকিয়ে বলে তানিয়া।। দোলা করুণ চোখে তাকিয়ে বলে সেটাই তো ভাবছি। তোমার রাক্ষস ভাইকে কি করে মেনেজ দিই। বাবাকে নাহয় এটা ওটা বুঝিয়ে দিলাম কিন্তু তোমার ভাইয়া। তার তো শকুনের চেয়েও তীব্র নজর হতাশ সুরে বলে দোলা।

—”’ একি বউমনি। তুমি ব্রোকে শকুনের সাথে তুলনা করলে। তানিয়ার কথায় দোলা জিভ কেটে বলে আরে সেটা তো কথার কথা বলেছি। বাদ দাও। আমাদের অন্য কিছু নিয়ে ভাবলে হবে না। মেইন পয়েন্টে ফোকাস দিতে হবে বলে দোলা আবার ভাবতে থাকে।

–‘” এই পেয়েছি বলে দোলা লাফিয়ে উঠে। দোলার কান্ডে তানিয়া চমকে উঠে বুকে থু থু দিয়ে বলে কি করছো আস্তে। এইভাবে কেউ লাফায়। আমি তো ভয় পেয়ে গেছি।

–‘ আরে শুনো আমার প্ল্যানটা। তাহলে সব ভয় দৌড়ে পালাবে। তানিয়া আগ্রহ নিয়ে এগিয়ে এসে বলে শুনি তোমার প্ল্যান।

–”’ জন্মদিনের পার্টি তো রাতে। তো আমরা যেহেতু রাতে যেতে পারবো না৷ কিন্তু দিনে তো যেতেই পারি। তাহলে তো আর কোনো চিন্তাই থাকে না৷ আমাদের তো উদ্দেশ্য নিমন্ত্রণ রক্ষা করা৷ তো আমরা যখনই যায় সেটা হলেই মিটে গেলো। দোলার কথা কিছুই বুঝতে পারে না তানিয়া। তাই ফ্যালফ্যালে চোখে তাকিয়ে থাকে দোলার দিকে।

–‘ কি বুঝলে না তো?
-‘ দোলার কথায় তানিয়া মাথা নাড়িয়ে জানায় সত্যি সে বুঝেনি। দোলা একটা হতাশার নিশ্বাস ত্যাগ করে বলে আমরা সজলের বাড়ি দুপুরে যাবো। তুমি সজলকে ফোন দিয়ে জানাবে যে, সন্ধ্যায় আমাদের যাওয়া হবে না৷ তাই আমরা দুপুরে গিয়ে তার মনিমার সাথে দেখা করে আসবো।

–‘ তানিয়ারও ভালো লাগে দোলার প্রস্তাবটা। তাই সে মুখে চওড়া হাসি এনে বলে ওকে ডান। তাহলে আমি যায় বলে আসি বলেই তানিয়া ছুটে চলে আসে ছাদ থেকে। আর দোলা মুচকি হেসে ছাদে দাঁড়িয়ে বিকালের প্রকৃতি দেখছে।

–“‘ চলবে….।