ভালোবাসা_কেবল_শুরু
পর্ব-১০
#লিখা – নীলকন্ঠী
.
বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নেমে এলো রাত্রির বুকে, ধীরে ধীরে সময় টাও পেরিয়ে যাচ্ছে। রাফানের আসার নাম নেই। কাঁদতে কাঁদতে রুহি ঘুমিয়ে পড়েছিলো। ঘুম থেকে উঠে দেখলো ৮ টা বেজে গেছে। প্রচন্ড খুদায় পেটে ইঁদুর দৌঁড়োনো শুরু করেছে কিন্তু আপাতত খাওয়ার কোন ইচ্ছা ই নেই।
কষ্ট নাকি মানুষের মন কে পাথর বানিয়ে দেয়। রাফানের ক্ষেত্রে হয়ত তাই হয়েছে। কিন্তু তার এমন ডিসিশনে রুহির তো রাফানের প্রতি ভয় কাজ করছে। আদি কে হারানোর ভয়। আম্মু কে আর কখনো না দেখার ভয়। কেন এমন হলো রুহির সাথে! সব্বাই কে বেশি ভালো বাসে বলেই সবাই ওকে কষ্ট দেয়। রাফান তো রুহি কে সবচেয়ে ভালো বোঝে, তাহলে কেন বোঝে না এমন করে বরং দুরত্ব তৈরি হচ্ছে। ভালোবাসা জোর করে হয়না।
৮.৩০ টা বাজেই রাফান খাবারের প্যাকেট নিয়ে ঢুকলো রুহির রুমে। প্যাকেট টেবিলের উপর রাখতে রাখতে বলল, ” যাও ফ্রেশ হয়ে আসো। ”
রুহি শোয়া থেকে বসে রইলো কিন্তু নড়লো না। রাফান এবার একটু ধমকেই বলল
–যাও ফ্রেশ হয়ে এসো। খাবার এনেছি।
–আমি খাবো না। খিদে নেই আমার।
–যেটা বললাম সেটাই করো। আর যেন বলতে না হয় আমার।
এবার রুহি ফুঁপিয়ে উঠলো। “আমি বাসায় যাবো। প্লিজ আমাকে বাসায় যেতে দাও ” বলেই হাঁও মাঁও করে কান্না জুরে দিলো।
রাফান এর ভীষণ রাগ হচ্ছে। এমন তো হওয়ার কথা না, রুহি তো রাফানের সংগ পছন্দ করে। কিন্তু এখন উলটো ভয় পাচ্ছে। চিন্তিত ভঙ্গীতে রাফান রুহির কান্না মাখা মুখের দিকে তাকিয়ে আছে।
সকাল থেকেই আদির মনে কু ডাক ডাকছে। কি এক অজানা ভয় কাজ করছে। আগামী কাল কেই গায়ে হলুদ। মেয়েটার সাথে সেদিনের পর আর কথা হয়নি। আম্মুর কাছ থেকে ওই বাসার সম্পর্কে খোঁজ নিচ্ছে। কিন্তু মন সায় দিচ্ছে না ।
ভাবতে ভাবতেই রুহি কে ফোন দিলো। ফোন টা সুইচ অফ পেয়ে এক রাশ অভিমান ভর করলো বুকে। তারপর আবার মনে মনে ভাবলো
“কি ভাবো, তুমি আসবে না? তোমাকে তো নিয়ে আসবোই ।অপেক্ষার আর মাত্র ২ রাত। তারপর দেখি কিভাবে দুরে থাকো।”
হুর মুর করেই আদির কাজিন গুলো রুমে ঢূকে গেলো। চাঁদার জন্য আদি কে ধরলো। ওদের কত কাজ। এর মাঝে আদির এক কাজিন বড় আপু সবাই কে বের করে দিয়ে আদির সাথে একা কথা বলতে চাইলো।
আদি তোমার শাশুড়ি আম্মু কে দেখতে যেতে হবে। এখুনি চলো। আদি তখনও বুঝেনি ওই বাসায় কি ঘটেছে।
আপু আর আসমা বেগম কে সাথে নিয়ে আদি রাত ১০ টায় রুহির বাসায় গেলো। বাসায় তখনও তেমন কোন মেহ মান আসেনি, কাছের অল্প সংখ্যক আত্মীয় ছাড়া।
রুহির আম্মুর মাথায় পানি ঢালা হচ্ছে ৩০ মিনিট যাবত। মহিলা শুধু বিলাপ বকেই যাচ্ছে। আর স্পষ্ট করে কিছু বলতেই পারছে না। আদি ভাবলো হয়তো শেষ মুহুর্তে রুহি বেঁকে বসেছে বিয়ের প্রোগ্রাম ক্যান্সেল করার জন্য।
রাহেলা বেগমের মাথায় হাত রেখে আদি বলল,” আম্মু রুহি কোথায়? আমি ওর সাথে কথা বলে দেখি।”
খপ করে হাত জোরা ধরেই রাহেলা বেগম হাও মাও করে কান্না জুরে দিলো।
–কার সাথে কথা বলবা বাবা, আমার মেয়ে টা তো সেই যে কলেজে গেলো আর বাসায় ফিরলো না ।আমি ভাবলাম বান্ধবী দের সাথে হয়ত বিয়ের শপিং করছে। কিন্তু বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা হয়ে গেলো। ওতো এভাবে আমাকে না বলে কোথাও যায় না।আমি দিশেহারা হয়ে গেলাম বাবা।
আদির মাথায় আকাশ ভেংগে পড়লো। ওর রুহির ব্যপারে আরো সতর্ক হওয়া প্রয়োজন ছিলো। মেয়েটি কি ইচ্ছা করেই ঘাপটি মেরে বসে আছে কোথাও। এমন যদি হয় তাহলে রুহি কে ভয়ানক শাস্তি পেতে হবে ।কোন ভাবেই রুহিকে হারাতে চায় না আদি।
–আপনি শান্ত হোন। আগে ওর বান্ধবী দের কাছে খোঁজ নিয়ে দেখি। তারপর ভাবা যাবে কি করতে হবে ।আপনি শান্ত হোন প্লিজ।
অন্যকে যতই শান্ত করুক না কেন, নিজের বুকে যে ঝড় বইছে সেটাকে কিভাবে শান্ত করবে আদি। এই মুহুর্তে মাথা কাজ করছে না এক দম ই । তারপর ও যথা সম্ভব শান্ত রাখার চেষ্টা করতে লাগলো আদি। এই মুহুর্তে রুহি কোথায় আছে! ও ঠিক আছে তো। অজানা ভয় ঝেঁকে বসেছে মনে। হাজার ও চিন্তার মাঝেই আল্লাহর কাছে শুধু রুহি কেই চাইলো আদি।
চলবে …..