ভূল করেছি পর্ব-০২

0
444

#ভূল_করেছি
#Imran_khan
#পর্ব_2

আমি রুমের ভেতরে গিয়ে দেখি, তিতলী ব্যাগে কাপড় ঢুকাচ্ছে । আমি সোজা তার সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে বলতেছি, তিতলি কি নাটক শুরু করে দিয়েছো তুমি আগে তো এমন ছিলে না , ইদানীং এমন করতেছ কেন ? আমার মাকে দেখতে পারতেছ না , আবার আমার সঙ্গে খুব খারাপ ব্যবহার করতেছো ।

সে তার মত দেখি কাপড় গোছাচ্ছে ।

কি হলো তিতলি , আমার প্রশ্নের জবাব দাও ?

আমি কোন জবাব দিতে পারব না । তুমি তোমার মাকে নিয়ে থাকো আমি আমার বাবার বাসায় চলে যাব ।

এভাবে বলতেছ কেন ? তুমি ভালো করে জানো যে পৃথিবীতে আমার মা ছাড়া আর কেউ নেই। আর এটাও জানো মাকে ছাড়া আমি শুন্য।

ইমরান আমি আর পারছি না, তোমার মাকে সামলাতে । তুমি সিদ্ধান্ত নেও যে , হয় এ সংসারে আমি থাকবো না হয় তোমার মা থাকবে দুইটার মধ্যে যেকোনো একজন সংসারে থাকবে ।

আমি তোমার মানসিকতা দেখে অবাক হচ্ছি তিতলি। আমার মাকে তুমি বৃদ্ধাশ্রমে রেখে আসতে বলতেছো । মানুষ কতটা নিচে নামলে এমন কথা বলতে পারে । তাহলে কি আমি ভুল মানুষকে এতদিন ভালোবেসেছি। যে কিনা আমার নিজের মাকে বৃদ্ধাশ্রমে রেখে আসতে বলতেছে । আমি বেঁচে থাকতে কখনো আমার মা বৃদ্ধাশ্রমে যাবে না ।

তাহলে তুমি তোমার মাকে নিয়ে পড়ে থাকো আমি চললাম বাবার বাসায়।

তিতলি এবার কিন্তু বেশি বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে । অফিস থেকে আসার পর থেকে দেখতেছি তোমার কাহিনী । ঠিকমতো আমার মাকে দেখতেছ না আবার সংসারের কাজকর্ম করতে সমস্যা কি তোমার ?

আমি মুক্তি চাই, বন্দি খাঁচার ভেতর থেকে বাইরে যেতে চাই । খোলা আকাশের নিচে ঘুরে বেড়াতে চাই। আমাকে মুক্ত করে দাও তুমি ।

তিতলির আজেবাজে কথা শুনে মেজাজটা আরো খারাপ হয়ে গেলো । ও যে এত নিচে নেমে গেছে বুঝতে পারিনি। আমি ওর গালে আমার শরীরে যত শক্তি আছে সব শক্তি দিয়ে তাকে একটা থাপ্পর মারলাম সে গিয়ে বিছানায় ছিটকে পড়ে গেল ।
তুই যে কতটা বেহায়া আজকে বুঝতে পারলাম । তোকে বিয়ে করে আমি ভুল করেছি । যে মেয়ে স্বামীর মাকে দেখতে পারে না সে কখনো একজন আদর্শ স্ত্রী হতে পারে না । যা তোকে আমি মুক্ত করে দিলাম। তুই কই যাবি যা। তোর উপর কোন দাবি রাখবো না ।

তুমি আমাকে মারতে পারলে ।

তোকে আমি মারব না তো আদর করবো এখন । কখন থেকে বাজে বকতেছিস ।

আমি বাজে বকতেছি । আজকে তুমি ওই বুড়ি জন্য আমাকে থাপ্পর মারলে ।

আমার মাকে বুড়ি বলার জন্য আবারো আরেকটা থাপ্পড় মারলাম। কাকে তুই বুড়ি বলতেছিস সে আমার জন্ম দিয়েছে ।তোকে আদর করে বাঁদর হয়ে গেছিস । প্রথম থেকে যদি তোকে শাসন করতাম তাহলে এই দিনটা দেখতে হতো না । আর কি বলতেছিস তুই আমার মাকে বুড়ি ? শুনে রাখ একদিন রক্তের তেজ কমে যাবে সেদিন তুইও বুড়ি হয়ে যাবি থাকবে না তোর রূপ যৌবন । আজকে তুই রক্তের তেজে সুতো কাটা ঘুড়ির মতো উড়তে চাচ্ছিস যা । একটা কথা মনে রাখবি ঘুড়ি যতই সুতা কাটা থাকুক না কেন আকাশে কিন্তু বেশিক্ষণ উড়তে পারে না , আবার মুখ থুবরে নিচে পড়ে যায় ।

তুমি আমাকে অকারণে মারতেছো আমি আর এ বাসায় থাকব না ।

তোর মত বেহায়া মেয়ে কে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়া দরকার । তুই যে কেমন বেহায়া তার প্রমাণ দেখাচ্ছি দাঁড়া , নিজের পকেট থেকে ফোনটা বাহির করে ফেসবুকে লগইন করলাম । তারপর তার বাজে পিক যেগুলো পোস্ট করছিলো ফেসবুকে সেগুলো তার সামনে ধরে বলতেছি এগুলো বেহাপনা নয়তো কি ?

এটা বেহাপনা নয় , এটাকে ফ্যাশন বলে ! আর তুমি সেটা বুঝবে না তাই এ ব্যাপারে কথা না বললেই ভাল হয় ।

কোনটা ফ্যাশন আর কোনটা ফ্যাশন নয় সেটা কি এখন আমাকে শেখাবে ? ছোট কাপড় পরে ফেসবুকে পোস্ট করা এটাকে বুঝি ফ্যাশন বলে । এইজন্য বলছি তুই একটা বেহেয়া মেয়ে । কোনটা ফ্যাশন আর কোনটা বেহায়াপনা সেটাই বুঝিস না । তুই একটা থাটক্লাস মেয়ে । এখনেই তুই আমার বাসা থেকে বের হয়ে যায় । দুচোখে তোকে দেখতে ইচ্ছা করতেছে না ।

আমাকে বলতে হবে না , আমি এখনিই চলে যাচ্ছি।

চলে যাচ্ছিস যা, কিন্তু যদি কোন দিন আবার ফিরে আসিস আমার কাছে তাহলে কখনো তোকে মেনে নিবো না এটা মনে রাখিস ।

আমিও চাইনা আর তোমার সংসার করতে । এই কথা বলি তিতলি তার ব্যাগটা নিয়ে রুম থেকে বাইরে চলে যাচ্ছে।

ও যত দূরে যাচ্ছে বুকের বা পাশে কেন যেন চিনচিন ব্যথা হচ্ছে । আসলে সত্যিকারে ভালোবাসা কেউ বুঝেনা । ঠিক বুঝতে পারতেছি , ভালোবেসে একে বিয়ে করে কি ভুল না করেছি ? বিয়ের আগে মানুষ থেকে শুনতাম যে , ভালোবেসে বিয়ে করলে নাকি বেশীদিন সম্পর্কটিকে না আজকে মনে হচ্ছে কথাটা সত্য হলো।

এদিকে তিতলি ইমরানের বাসা থেকে বাইরে এসে রিকশায় চড়ে তার বাবার বাসার উদ্দেশ্য যাচ্ছে আর মনে মনে ভাবতেছে আজকে থেকে আমি মুক্ত বন্দী খাচা থেকে । এই কথা ভেবে তিতলির মন ভরে যাচ্ছে । কেন যে ওর মায়ায় পরে বিয়ে করতে গেলাম । একটা ফকিন্নি ছেলে আমার মত এত সুন্দরী একটা মেয়ে পেয়েছে এটাই ওর ভাগ্য । আমাকে বলে আমি নাকি বেহায়া । কত মেয়ে আছে ফেসবুকে আপলোড করতে আমি করলে কি নাকি বেহায়াপনা?
প্রায় 30 মিনিট পর তিতলি তার নিজের বাসার সামনে চলে আসে । তিতলি রিক্সা থেকে নেমে রিক্সাওয়ালার ভারা মিটিয়ে দিয়ে তার বাসার সামনে চলে যায় । বাসার সামনে গিয়ে প্রথমে কলিং বেলের চাপ দেয়। পরে দরজা খুলে দেয় তিতলির মা ।

হঠাৎ করে ভর দুপুর বেলা রহিমা বেগম তার মেয়েকে দেখে অবাক হয়ে যায় ।

আমাকে দেখার কি আছে মা? আমি তোমার মেয়েকে চিনতে পারতেছ না বুঝি !

নিজের মেয়েকে চিনতে পারব না কেন কিন্তু তুই আসবি আগে ফোনে জানিনা কেন আর জামাইবাবু কই । তুই একাই আসলি যে।

মা আমি কি দরজার সামনে দাঁড়িয়ে সব কিছু বলবো আগে ভিতরে যেতে দেও তারপর সব কিছু বলতেছি ?

আচ্ছা আয় ভিতরে ।

তারপর তিতলি বাসার ভিতরে ঢুকে পড়ে । বাসার ভিতরে ঢুকে সোজা সোফায় গিয়ে বসে ।

মেয়ের বসা দেখে রহিমা বেগম তার পাশে গিয়ে বসে পড়ে। তার মেয়েকে অবাক করে দেখে আছে রহিমা বেগম ।

মা তুমি এভাবে আমাকে দেখতেছো কেন । আমি কোন ভিন্ন গ্রহের মানুষ না যে চীন্তে পারতেছো না ।

এবার বল কি হয়েছে ? তোর বিয়ে হওয়া দুই বছর হচ্ছে প্রায় কখনো জামাইকে ছাড়া আসতি না কিন্তু আজকে একাই আসলি আবার ভরদুপুরে ফোন না করে ।

মা আমি , ও বাসা থেকে একবারে চলে আসছি । আমি আর ওর সাংসার করতে চাইনা ।

সংসার করতে চায় না এমন কথা শুনে রহিমা বেগম তার মেয়ের মুখে অবাক হয়ে যায় তিনি । সাধারণ ভাবে আবারো প্রশ্ন করে রহিমা বেগম তার মেয়েকে ।
হুট করে বলতেছি সংসার করবি না, কিন্তু কেন কি হয়েছে ?

আমি ওর মাকে বৃদ্ধাশ্রমে রেখে আসতে বলেছি এজন্য সে আমাকে মেরেছে । দুই বছর অনেক সহ্য করেছি আর না এই জন্য আজকে বলেছি হয় তোমার মাকে বৃদ্ধাশ্রমে রেখে আসবে না হয় আমি বাবার বাসায় চলে যাব। সে তার মাকে বৃদ্ধাশ্রমের রাখবে না বলে দিয়েছে এজন্য আমি তাকে ছেড়ে চলে এসেছি একবারে ।

রহিমা বেগম তার মেয়ের মুখ থেকে এমন বাজে কথা শুনে ঠাস করে একটা চড় মেরে দেয় তার মেয়ের গালে।

মা তুমি আমাকে মারলে কেন !

তুই এখনি আমার বাসা থেকে বেরিয়ে যা। তোকে আমি এই শিক্ষা দিয়ে বড় করেছি সি তোকে দেখলে আমারও ঘৃণা হচ্ছে । জামাইবাবা ঠিকই বলেছে তুই একটা বেহায়া মেয়ে । তুই এখনই আমার বাসা থেকে বেরিয়ে যা।

মা আমি এখান থেকে কই যাব ?

তোর দুচোখ যেখানে যায় সেখানে যায় । কিন্তু এই বাসা থেকে বেরিয়ে যা ।

মা, তুমি এমন করে বলতেছে! আমি কি দোষ করেছি ?

কি দোষ করেছি তুই জানিস না , আজকে যদি আমরা বুড়ো হয়ে বিছানায় পড়ে থাকতাম তাহলে তো আমাদের কেউ তুই বৃদ্ধাশ্রমে রেখে আসতি তাই না ।

তোমাদের কেন বৃদ্ধাশ্রমে রেখে আসব মা । সেটা আমি কখনো করতে পারবোনা ।

আমাদের যদি বিদ্বাশ্রমের রাখতে না চাস , তাহলে তুই কিভাবে তোর শাশুড়ি মাকে বৃদ্ধাশ্রমে রাখতে চাস । আমরা যদি তোর পিতা-মাতা হই সেও তো একজন তোর মার মত তাকে কিভাবে বৃদ্ধাশ্রমে রেখে আসতে বলিস ।

#চলবে ,,?