#রাগে_অনুরাগে💚✨
#পর্ব_১০(বোনাস পর্ব)
#লেখক_ঈশান_আহমেদ
আরাধ্য তার রুমে এসে বিছানায় মুখ গোমড়া করে বসে আছে।
“এখন কি হবে?ধূর মিহির বাবুর সাথে আজকেই ঝামেলা হলো আর আজকেই বিয়ের প্রস্তাব এলো!বিরক্ত লাগছে আমার।না এখন রাগ করে থাকলে চলবে নাহ্।কালকে মিহির বাবুকে সবটা জানাতে হবে।আমি তো উনাকে ভালোবাসি।আর আমি উনার জায়গা কাউকে দিতে পারবো নাহ্।”
—🌸—
মিহির রাতের খাবার খেয়ে বসে বসে টিভি দেখছে।মুহিত এসে মিহিরের পাশে বসে বললো,
“ভাইয়া ভাবি যদি তোর ছবিটা দেখে তাহলেই তো সব ঘেটে যাবে।”
“চাশমিশ কখনোই ছেলের ছবি দেখবে নাহ্।ও মুখে না বললেও আমি ভালো করে জানি ও আমাকে ভালোবাসে।ওর চোখে তা প্রকাশ পায়।সো চিন্তা করিস নাহ্।যা গিয়ে ঘুমা!”
“তুই কখন ঘুমাবি ভাইয়া?”
“এখনি যাবো।”
“ওকে।”
মুহিত তার রুমের দিকে চলে গেলো।মিহির টিভি অফ করে তার রুমে গেলো।
“চাশমিশ ম্যাডাম তো এমনি আমার উপর রেগে আছে।কালকে সকালে অফিসে না হয় আরেকটু রাগিয়ে দিবো।আর সন্ধ্যায় তো সবটা জানবেই।”
মিহির বিছানায় শুয়ে পড়লো।
||🌼||
সকালবেলা,
আরাধ্যা অফিসে এসে মিহিরের জন্য অপেক্ষা করতেছে।এদিক-ওদিক পায়চারি করতেছে।হঠাৎ সে দেখলো মিহির অফিসে আসছে।মিহিরকে দেখে আরাধ্যার মুখে হাসি ফুটলো।
মিহির আরাধ্যাকে আড়চোখে দেখে সোজা তার ক্যাবিনের দিকে চলে গেলো।আরাধ্যা চোখ রাঙিয়ে বললো,
“আমার সাথে অ্যাটিটিউড দেখাচ্ছে!যাক এইসব নিয়ে এখন ভাবলে চলবে নাহ্।এইসব পরে দেখে নিবো।”
আরাধ্যা মিহিরের ক্যাবিনের দরজায় নক করে বললো,
“May I come in?”
মিহির ফাইল দেখতে দেখতে বললো,
“ইয়েস কামিং।”
আরাধ্যা এসে মিহিরের টেবিলের সামনে দাঁড়ালো।মিহিরের সেদিকে কোনো হেলদোল নেই সে ফাইল দেখতে ব্যস্ত।আরাধ্যা হালকা কেশে বললো,
“আপনার সাথে আমার জরুরি কিছু কথা আছে মিহির বাবু।”
মিহির আরাধ্যার দিকে তাকিয়ে বললো,
“আমি আপনাকে স্যার বলতে বলেছিলাম।”
আরাধ্যা পাল্টা জবাবে বললো,
“স্যার না বললে কি করবেন?”
মিহির কিছু বলতে যাবে আরাধ্যা মিহিরকে থামিয়ে বললো,
“দেখুন আপনি যেটা দেখেছেন সেটা সম্পূর্ণ ভুল ছিলো।”
“আমি জানি নোমান আমাকে সবটা বলেছে?”
আরাধ্যা অবাক হয়ে বললো,
“নোমান বলেছে?”
“হুম।”
আরাধ্যা কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো,
“তাহলে তো ভালো।আপনি সবটাই জানেন।এখন আপনি কিছু একটা করুন আমাকে আজ দেখতে আসবে।”
মিহির মুচকি হেসে বললো,
“বাহ্ তা তো ভালো খবর।আমাকে দাওয়াত দিতে ভুলবেন না যেন বিয়ে ঠিক হলে!”
আরাধ্যা অবাক হয়ে বললো,
“আপনি মজা করছেন আমার সাথে?”
“আপনি মজা করতেছেন আমার সাথে?”
“মজা কেনো করবো?”
“আপনি না আমাকে ভালোবাসেন!আজকে যদি দেখতে এসে বিয়ে ঠিক করে ফেলে তাহলে আমি কি করবো?”
“বিয়ে করবেন।আর ভালোবাসতাম কিন্তু এখন আর বাসিনা।”
আরাধ্যা রাগে কাঁপছে।আরাধ্যা এসে মিহিরের কলার টেনে ধরে বললো,
“মজা পেয়েছেন আমাকে নিয়ে?একবার বলেন ভালোবাসি আবার বলেন বাসেন নাহ্।একটা কথা শুনে রাখেন আমি ওই লালটু-পালটুকে বিয়ে করবো নাহ্।তোকেই বিয়ে করবো বুঝলি!তুই বলেছিলি না রাজি না হলে কিডন্যাপ করে আমাকে বিয়ে করবি।সেটা তোর করতে হবে না আমিই করবো।জাস্ট ওয়েট এন্ড সি!”
আরাধ্যা কথাটা বলে মিহিরের কপাল ছেড়ে হনহন করে হেঁটে ক্যাবিন থেকে বের হয়ে চলে গেলো।মিহির হা হয়ে তাকিয়ে আছে।মিহির টেবিল থেকে পানি গ্লাস নিয়ে পানি খেয়ে চেয়ারে বসলো।
“চাশমিশ এতো রাগী!হয়তো মাথা ঠিক নেই এতোকিছুর কারণে।আমি কি বেশি করে ফেলতেছি?আরে নাহ্ আজকেই তো সবটা জানতে পারবে।”
মিহির একটু আগের ঘটনা ভেবে হেসে দিলো।
“কলার টেনে ধরার স্টাইলটা কিন্তু জোস ছিলো!”
/🍂/
আরাধ্যা’ মিহিরের ক্যাবিন থেকে বের হয়ে সোজা তার বাড়িতে চলে এসেছে।কারণ রাগে তার মাথা গরম হয়ে গেছে।আরাধ্যা তার রুমের বিছানায় মুখ মলিন করে বসে আছে।
“কেনো মিহির বাবু এমন করলো?উনিও আমার সাথে মজা করলো?যতোই যাইহোক আমার উনার সাথে এমন বিয়েইভ করা ঠিক হয়নি।উনার কাছে ক্ষমা চাইতে হবে।”
আরাধ্যা’ মোবাইলটা হাতে নিয়ে মিহিরকে কল করলো।
মিহির তার ক্যাবিনে চুপ করে বসে আছে।পিয়ন এসে বলে গেছে আরাধ্যা অফিস থেকে চলে গেছে।তাই মিহিরের মুড অফ হয়ে আছে।
হঠাৎ মিহিরের মোবাইলে একটা কল আসলো।সে দেখলো আরাধ্যা কল করেছে।মিহিরের মুখে হাসি ফুটলো।মিহির কলটা রিসিভ করলো।মিহির কলটা রিসিভ করতেই আরাধ্যা বললো,
“আই এম সরি স্যার।আমি আপনার সাথে অনেক মিস বিয়েইভ করে ফেলেছি।পারলে মাফ করে দিবেন।”
মিহিরকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই আরাধ্যা কলটা কেটে দিলো।মিহির মোবাইলটা হাতে নিয়ে অবাক হয়ে বসে আছে।
“চাশমিশ তো আমাকে কিছু বলতেই দিলো নাহ্।এই মেয়েটা আসলেই পাগলি।”
মিহির মোবাইলটা পকেটে ঢুকিয়ে উঠে দাঁড়ালো।অফিস থেকে বের হয়ে মিহির তার বাড়িতে গেলো।মিহির বাড়িতে গিয়ে দেখলো মুবিন সাহেব বসে বই পড়তেছেন।মিহির গিয়ে উনার পাশে বসলো।মিহিরকে দেখে মুবিন সাহেব বইটা বন্ধ করে দিকে তাকালো।
“কি রে বাবা এতো তাড়াতাড়ি অফিস থেকে চলে আসলি যে!”
“কাজকে তেমন কাজ নেই বাবা।ভালো লাগছিলো না তাই চলে আসছি।”
“আমার বউমার সাথে কি আবার ঝামেলা হয়েছে?”
মিহির সবটা মুবিন সাহেবকে বললো,
“যাক আমার বউমা তাহলে রাগী আছে।কিন্তু তোর এগুলো করা ঠিক হচ্ছে নাহ্।মেয়েটা অনেক কষ্ট পাচ্ছে আমার মনে হয়।”
“বাবা সন্ধ্যায় তো সবটা ক্লিয়ার হয়ে যাবে।আমি জাস্ট ওর সাথে একটু মজা করতে চাচ্ছি।”
“তুই যা ভালো বুঝিস কর।”
“কিন্তু বাবা মুহিত কোথায়?”
“মুহিত ভার্সিটিতে গিয়েছে।চলে আসবে একটু পরে।”
“ওকে বাবা তুমি বই পড়ো।আমি ফ্রেশ হয়ে আসতেছি।”
“আচ্ছা যা।”
মিহির তার রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিচে আসলো।সে নিচে এসে দেখলো মুহিত চলে এসেছে।
“যাক মুহিত যখন চলে এসেছে।তাহলে আমরা তিনজন একসাথে দুপুরের খাবার খেয়ে নেই।”
–
–
–
সন্ধ্যাবেলা,
আরাধ্যা তার রুমে রেডি হয়ে বসে আছে।বাইরে বসে থাকা লোকগুলো সামনে তার একবারেই যেতে মন চাচ্ছে না।তার শুধু মিহিরের কথা মনে পড়ছে।
মুবিন সাহেব’ হিমু সাহেব আর রুমা বেগমকে সবটা জানিয়ে দিলেন।হিমু সাহেব সবটা শুনে বললেন,
“মিহির বাবা তুমি এই কাজটা করে ভালো করেছো।কারণ আরাধ্যা কখনো আমাদের বলতে পারতো নাহ্ ও যে তোমাকে ভালোবাসে।আমাদের মেয়ে তো আমরা চিনি ও-কেমন!”
রুশা পাশে থেকে বললো,
“আমি বরং আধুকে নিয়ে আসি।ও তো একদম শকট হয়ে যাবে।”
রুশা কথাটা বলে আরাধ্যার রুমের দিকে চলে গেলো।রুশা কিছুক্ষণ পরে আরাধ্যাকে নিয়ে আসলো।আরাধ্যা তো মিহির আর মুবিন সাহেব দেখে অবাক হয়ে গেছে।যে তার চশমা খুলে ভালো করে মুছে আবার চোখে পড়লো।নাহ্ সে ঠিকই দেখতেছে।
মিহির আরাধ্যাকে দেখে চোখ মারলো।আরাধ্যা চোখ রাঙিয়ে মুখ ফিরিয়ে নিলো।সব কথাবার্তা ঠিক হয়ে গেলো।হিমু সাহেব বললেন,
“যাক তাহলে বিয়ে ঠিক।”
“বাবা আমি মিহির বাবুর সাথে একটু আলাদা কথা বলতে চাই।”
রুমা বেগম বললেন,
“তুই তো মিহিরকে চিনিসই।তাহলে আবার আলাদা কি কথা বলবি!”
“একটু হিসাব বাকি আছে আম্মু।”
আরাধ্যা মুবিন সাহেবকে উদ্দেশ্য করে বললো,
“হবু শ্বশুর মশাই আপনি যদি অনুমতি দেন তাহলে আমি মিহির বাবুর সাথে একটু আলাদা কথা বলবো।”
মিহিরের বোঝা হয়ে গেছে আরাধ্যা কেনো তার সাথে আলাদা কথা বলবে।তার কপালে যে শনি আছে তা সে হারে হারে টের পাচ্ছে।
মুবিন সাহেব কিছু বলার আগে মিহির বললো,
“আরাধ্যা আমরা না হয় পরে কথা বলে নিবো।আজকে আর কি বলবে!”
আরাধ্যা দাঁতে দাঁত চেপে বললো,
“আমি তো আজকেই বলবো মিহির বাবু।”
মুবিন সাহেব বললেন,
“মা তুমি মিহিরকে নিয়ে যাও।যা কথা আছে বলো গিয়ে।”
আরাধ্যা মুচকি হেসে মিহিরকে নিয়ে তার রুমের দিকে গেলো।রুমের দরজা লক করে মিহিরের দিকে তাকালো।আরাধ্যা মিহিরের সামনে এসে দাঁড়িয়ে বললো,
“আমাকে কষ্ট দিতে খুব ভালো লাগে তাই-না!আজকে আপনার মাথা ফাটিয়ে ফেলবো।”
“আরে চাশমিশ আমার মাথা ফাটিয়ে দিলে তো আমি মরেও যেতে পারি।আমি মরে গেলে তো তুমি বিধবা হয়ে যাবে।”
“যা হওয়ার হবে তাও আমি আজ আপনার মাথা ফাটাবো।”
আরাধ্যা ফুলদানি হাতে নিয়ে যেই মিহিরের মাথায় মারতে যাবে সেই মিহির আরাধ্যার হাত ধরে ফেললো।আরাধ্যার হাত থেকে ফুলদানি ছাড়িয়ে তার টেবিলের উপর রাখলো।তারপরে আরাধ্যাকে হেঁচকা টান দিয়ে তার বুকে নিয়ে আসলো।আরাধ্যাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।আরাধ্যাও চুপটি করে মিহিরের বুকে মাথা দিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরলো।
“অনেক রাগারাগি হয়েছে এখন একটু শান্ত হও মিস.চাশমিশ।আর বিয়ের জন্য প্রস্তুতি নেও।”
“আমাকে এভাবে কষ্ট দিলেন কেনো আপনি?”
“সরি।আর কখনো কষ্ট দিবো নাহ্।প্রমিস করলাম।আর হ্যাঁ এখন তো বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে।সো এখন তো তুমি করে বলতে পারো।”
আরাধ্যা মিহিরকে ছেড়ে বললো,
“বিয়ের পরেই তুমি ডাকবো।তবে হ্যাঁ আপনি চাইলে তুইও ডাকতে পারি।”
“দরকার নেই তুমি ডাকার।আজকে তো ডেকেছি তোমার রাগ কোন পর্যায়ে চলে গেলে তুমি তুই করে বলো।”
মিহিরের কথা শুনে আরাধ্যা খিলখিল করে হেসে দিলো।হাসি থামিয়ে আরাধ্যা বললো,
“ওটার জন্য আই এম রেলি সরি।”
“আরে বাদ দাও তো।এইসব ছোটোখাটো ব্যাপার হয়েই থাকে।”
#চলবে……………..
[ভূল-ভ্রান্তি ক্ষমার চোখে দেখবেন।]