#রাগে_অনুরাগে💚✨
#পর্ব_০৯
#লেখক_ঈশান_আহমেদ
নোমান মিহিরের কথা শুনে হেসে দিলো।মিহির ভ্রু কুচকে বললো,
“যতই যাই হোক তোমার কিন্তু আরাধ্যাকে গোলাপ দেওয়া একদম উচিত হয়নি।এটা দেওয়ার অধিকার শুধু মাত্র আরাধ্যার স্পেশাল ওয়ানের আছে।”
“আরে হবু জিজু আরাধ্যা গোলাপ অনেক পছন্দ করে।ওর একটা বক্স আছে।সেখানে শুধু গোলাপ ভরা।প্রায় পাঁচ-ছয় বছর আগের গোলাপও ওর কাছে আছে।আমি সেই কারণেই দিয়েছিলাম।তবে তুমি না চাইলে আর দিবো নাহ্।”
মিহির হাসি দিয়ে বললো,
“আরে আমি তো মজা করছি।তবে আরাধ্যার যদি গোলাপ পছন্দ হয় তাহলে তো ও-কে আমার তা দেওয়ার উচিত।”
“হুম হবু জিজু আজকে’ই দিয়ে রাগ ভাঙানোর ট্রাই করো।”
“আচ্ছা রাগ ভাঙানো নিয়ে পরে ভাবতেছি আগে চলো তোমাকে খাওয়াতে হবে তো।”
মিহির।নোমানকে নিয়ে একটা রেস্টুরেন্টে গেল।সেখানে গিয়ে খাবার খেয়ে বের হলো।
মিহির নোমানকে উদ্দেশ্য করে বললো,
“আচ্ছা নোমান’ আরাধ্যাকে এখন কোথায় পাওয়া যাবে?”
“যখন রুশার সাথে কথা বললাম তখন তো ওর সাথে’ই ছিলো।এখনের কথা তো ঠিক জানি নাহ্।ওয়েট আমি কল করতেছি রুশাকে।”
নোমান রুশাকে কল করলো।রুশা কলটা রিসিভ করলো।রুশা কল রিসিভ করতে নোমান বললো,
“আচ্ছা আরাধ্যা কোথায় আছে?”
“আমরা এখন আরাধ্যাদের বাড়িতে আছি।আধু ওয়াশরুমে গেছে।”
“আচ্ছা।আমি হবু জিজুকে নিয়ে আধাদের বাড়িতে আসতেছি।”
“ওয়েট হবু জিজুটা কে?”
“আরে মিহির জিজু আবার কে!”
“কি?তুমি পাগল হয়ে গেছো নাকি নোমান?আধু উনাকে দেখলেই রেগে যাবে।আর জানো তো আরাধ্যার কি রাগ!উনার তো খবর করবে।সাথে তোর আর আমারও।”
“আরে রুশা এতো চিন্তা করো নাহ্।সবটা ঠিক হয়ে যাবে।”
“তবে আঙ্কেল আর আন্টি?”
“রুশা আমি আছি তো।এতো প্যারা নিয়ো নাহ্।ফুপা আর ফুপিকে আমি ম্যানেজ করবো।হবু জিজুকে তো তার শ্বশুর বাড়ি দেখিয়ে আনা উচিত!”
“ওকে যা ভালো বুঝো করো।”
নোমান কলটা কেটে মোবাইলটা পকেটে ঢুকালো।সে দেখলো মিহির কারো সাথে মোবাইলে কথা বলতেছে।মিহির কলটা কেটে নোমানের সামনে আসলো।মিহিরকে দেখে চিন্তিত লাগছে।মিহিরকে চিন্তিত দেখে নোমান বললো,
“হবু জিজু কিছু কি হয়েছে?”
“বাবা শরীরটা একটু খারাপ।আমার এখন বাসায় যেতে হবে।আর আমি না হয় চাশমিশের রাগ কালকেই ভাঙাবো।এখন বাবাকে না দেখা পর্যন্ত আমার ভালো লাগবে নাহ্।”
“জিজু আমি কি তোমার সাথে যাবো।”
“সমস্যা নেই।তুমি বরং রুশার সাথে গিয়ে দেখা করো।আমার আর চাশমিশের ঝামেলায় তোমরা দুজন আটকে গেছো।”
“হবু জিজু আমাকে কিন্তু আঙ্কেলের খবর দিবে।”
“ওকে।”
মিহির তার বাড়ির উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিলো।বাড়িতে গিয়ে দেখলো মুবিন সাহেব উনার রুমে শুয়ে আছেন।আর মুহিত তার মাথার সামনে বসে আছে।মিহির গিয়ে মুবিন সাহেবের পাশে বসলো।তারপরে মুবিন সাহেবের এক হাত ধরে মুহিতকে বললো,
“কি হয়েছিলো বাবার?”
“হঠাৎ করে বুকে ব্যাথা শুরু হয়েছিলো।তারপরে ডক্টর কাকুকে কল করলাম।উনি এসে দেখে গেছেন।বললেন বাবা নাকি অনেক অনিয়ম করছে।ঔষধ ঠিকভাবে খায় না মাঝে মাঝে।”
মিহির অবাক হয়ে বললো,
“কিন্তু আমি তো বাবাকে তিনবেলা নিয়ম করে ঔষধ দেই।”
মুবিন সাহেব একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন,
“তুই ঠিকই ঔষধ দিস।কিন্তু আমি মাঝে মাঝে সেগুলো না খেয়ে ফেলে দেই।আমার ভালো লাগে না রে ঔষধ খেতে।আমার ইচ্ছা করে তোদের মায়ের কাছে চলে যেতে।”
মুহিত উঠে দাঁড়িয়ে বললো,
“হ্যাঁ মা তো অনেক আগেই চলে গেছে।এখন তুমিও চলে যাও।”
মুহিত কথাটা বলে রাগে হনহন করতে করতে মুবিন সাহেবের রুম থেকে চলে গেলো।
মিহির’ মুবিন সাহেবের হাতটা বুলাতে বুলাতে বললো,
“কেনো বাবা আমাদের কাছে থাকতে ভালো লাগে না?মাকে তো অনেক আগেই হারিয়েছি।তোমাকে হারালে আমাদের দুজনের হবে বাবা!আমরা তোমাকে অনেক ভালোবাসি।আমি না হয় একটু বড় ছিলাম তবে মা যখন মারা যায় তখন তো মুহিত অনেক ছোট ছিলো।তুমি ওর সামনে এই সমস্ত কথা কেনো বলো?তুমি একজন স্ট্রং ম্যান।তুমি আমাদের বাবা।তুমি আমাদের কাছে সবচেয়ে আপন।তোমাকে ছাড়া আমরা দুই ভাই একদম অসহায়।”
মিহির কথাগুলো বলে কেঁদে দিলো।মুবিন সাহেব আস্তে করে উঠে বসে মিহিরকে জড়িয়ে ধরে বললো,
“আমি আর এমন করবো নাহ্ বাবা।আমি ঠিকভাবে ঔষধ খাবো।তোদের আর কষ্ট দিবো না এইসব কথা বলে।”
এভাবে কিছুক্ষণ জড়িয়ে ধরে থাকার পরে মিহির চোখের পানি মুছে মুবিন সাহেবকে ছেড়ে বললো,
“তবে মিস্টার মুবিন সাহেব আপনি কিভাবে ঔষধ গুলো ফেলে দিতেন?”
“তুই তো আমাকে ঔষধ দিয়ে পানি আনতে যেতে।তোর খেয়াল আছে আমি কিন্তু সব সময় আগে থেকে মুখে ঔষধ ঢুকিয়ে রাখতাম তোকে এটা বলতাম।আসলে কিন্তু নাহ্।আমি ঔষধ শার্টের পকেটে রেখে তোর থেকে খালি পানিটা খেতাম।পরে তুই সামনে থেকে চলে গেলে সেই ঔষধ বাড়ির পিছনের কুয়াতে ফেলে দিতাম।ওখানে কেউ যায় না।তাই কেউ বুঝবেও নাহ্।”
মুবিন সাহেবের কথা শুনে মিহির জোরে হেসে দিলো।হাসি থামিয়ে বললো,
“বাহ্ এতো বয়স হয়েছে কিন্তু মাথা থেকে দুষ্টামি বুদ্ধি যায়নি।ওকে আমিও এরপরে থেকে একদম ভালোভাবে চেক করবো আপনি ঔষধ খান নাকি!এখন ঘুমান আমি ফ্রেশ হয়ে আসতেছি।”
মিহির তার রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিলো।মিহির ফ্রেশ হয়ে নিচে গিয়ে দেখলো মুহিত’ মুবিন সাহেবকে জড়িয়ে ধরে বসে আছে।মিহির তা দেখে মৃদু হেসে বললো,
“যতই রাগ করুক সেই বাবার সাথে আবার ভাব হয়েই যায়।”
মিহির তাদের সামনে গিয়ে বললো,
“এই যে আপনাদের পিতা-পূত্রের ভালোবাসা বিনিময় শেষ হলে আমি একটা কথা বলবো।”
মুহিত’ মুবিন সাহেবকে ছেড়ে বললো,
“হ্যাঁ ভাইয়া বলো কি বলবে!”
“কালকে সন্ধ্যায় তোর ভাবিকে দেখতে তার বাসায় যাবো।বাবা আমি তোমাকে একটা নাম্বার দিচ্ছি তুমি তাদের সাথে বুঝিয়েছে সবটা বলবে যে আমরা এমন তাদের বাড়ি যাবো।কিন্তু তোমার আর আমার নাম বলবে নাহ্।আমাদের নামের জায়গায় বলবেন তোমার নাম রায়হান সাহেব আর তোমার ছেলের নাম রশিক হাসান লালটু।”
নাম শুনে মুবিন সাহেব আর মুহিত দুজনেই হেসে দিলো।মিহিরও হাসছে তাদের সাথে।”
“ভাইয়া তুই আর নিজের জন্য নাম পেলি নাহ্!”
“আরে তোর হবু ভাবিকে সারপ্রাইজ দিবো বুঝলি তাই এমন নাম!”
মুবিন সাহেব বললেন,
“কিন্তু মিথ্যা বললে কেমন হবে না বিষয়টা।”
“বাবা গিয়ে তুমি আসল পরিচয় দিয়ে দিবে তাহলেই হলো।”
–
–
–
আরাধ্যা তার রুমের বেলকনিতে বসে রাতের আকাশ দেখছে।তার মনটা অনেক খারাপ।মিহির তাকে অবিশ্বাস করলো।এটা সে কিছুতেই ভেবে নিতে পারছে নাহ্!”
রুমা বেগম আরাধ্যার রুমে এসে দেখলেন আরাধ্যা বেলকনিতে বসে আছে আনমনে আকাশের দিকে তাকিয়ে।রুমা বেগম এসে আরাধ্যার কাঁধে হাত রাখলেন।আরাধ্যা চমকে উঠলো।পিছনে ফিরে দেখলো রুমা বেগম দাঁড়িয়ে আছেন।
আরাধ্যা মৃদু হেসে বললো,
“আম্মু তুমি এসেছো!আমি হঠাৎ ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম।”
“তুই এমন চুপচাপ বসে আছিস কেনো মা?”
“এমনি আম্মু ভালো লাগছে নাহ্।”
“আচ্ছা নিচে চল।তোর বাবা তোকে কিছু কথা বলবে।”
“কি বলবে বাবা?”
“চল তো আগে।তারপরেই তো শুনতে পাবি।”
“ওকে চলো।”
আরাধ্যা’ রুমা বেগমের সাথে নিচে গেলো।আরাধ্যাকে দেখে হিমু সাহেব বললেন,
“মা তোর সাথে কিছু কথা ছিলো।”
“হ্যাঁ বলো বাবা।”
“এক লোক কল করেছিলো।উনার নাম রায়হান হাসান।তার ছেলের নাম রশিক হাসান লালটু।ছেলেটা অনেক ভালো।পড়াশোনাতেও ভালো।তাদের নিজেদের ব্যবস্থা আছে।উনার ছেলে তোকে জানি কোথায় দেখেছে!সেই ছেলের তোকে অনেক পছন্দ হয়েছে।কিভাবে যেন নাম্বার জোগাড় করে আমাকে কল করেছে!”
আরাধ্যা হিমু সাহেবের কথা শুনে চমকে গেলো।সে নিজেকে স্বাভাবিক করে বললো,
“তোমরা আবার বিয়ে নিয়ে কথা বলতেছো?আমি তো আগেই বলেছি আমি এখন বিয়ে করবো নাহ্।কয়দিন যাক।আর কি নাম বললে লালটু?এমন একটা নামের ছেলেকে বিয়ে করবো।নাম শুনেই তো মনে হয় মস্তান।”
রুমা বেগম হাসি দিয়ে বললেন,
“আরে নাহ্ রে।ছেলের ছবি তো আমরা দেখেছি।তোর বাবার মোবাইলে পাঠিয়েছে।ছেলে অনেক সুন্দর।আর নাম দিয়ে কি বা আসে যায়!”
হিমু সাহেব মোবাইলটা এগিয়ে দিয়ে বললো,
“ছেলের ছবিটা দেখলে।”
আরাধ্যা মুখ ঘুরিয়ে বললো,
“তোমরা দেখো বসে বসে।আমার এতো দেখার ইচ্ছা নেই লালটু-পালটুকে!”
হিমু সাহেব মোবাইলটা পকেটে ঢুকিয়ে বললেন,
“দেখ মা দেখতে আসলেই তো বিয়ে হয়ে যায় না।আমাদেরও একটা মতামত আছে।কালকে সন্ধ্যায় আসুক দেখে যাক।তুই রাজি হলেই বিয়ে হবে নাহলে নাহ্।”
“তোমাদের যা খুশি করো তোমরা!”
আরাধ্যা রাগে ফুসতে ফুসতে তার রুমের দিকে চলে গেলো।
#চলবে………………..