অবশেষে তুমি আমার পর্বঃ১৯

0
4728

অবশেষে তুমি আমার
পর্বঃ১৯
তাসনিম রাইসা

আর বলে এই মেয়ে দুনিয়াতে কি ছেলের অভাব পড়ছে? আমার স্বামীকেই জড়িয়ে ধরতে হয়!

– অধরার কথা শেষ হওয়ার আগেই রাজ অধরাকে কষে একটা থাপ্পর দিয়ে বলে, ‘ আনিশা আমার কে জানিস?
– তোর কি করে সাহস হয় ওর গায়ে হাত তুলতে? আর কিসের স্বামী আমি তোর?
– আনিশা তোমাকে বলছিলাম না পার্টির জন্য একটা মেয়ে আনছি। এই সেই মেয়ে যাকে ক্লাইন্টদের মনোরঞ্জনের জন্য নিয়ে আসছি!

– জানেমন সরি! এমন কিছু ঘটে যাবে স্বপ্নেও কল্পনা করতে পারিনি!

– না ঠিক আছে সুইর্টহার্ট!

– এই তুই চেয়ে চেয়ে কি দেখছিস? আনিশাকে সরি বল।
– রাজ তুমি এসব কি বলছো? আর উনিই বা কে? জানো রাজ পৃথিবীর কোন মেয়েই তার স্বামীর ভাগ অন্য কাউকে দিতে চায় না। ওই মেয়েটাকে কেন তোমাকে জড়িয়ে ধরবে? জানো তোমার পাশে আমি কাউকে সহ্য করতে পারি না রাজ। আমি সত্যিই তোমাকে অনেক ভালোবাসি রাজ।

– এই তোর ড্রামা বন্ধ করবি?

– রাজ বিশ্বাস করো আমি কোন ড্রামা করছি না। ওই মেয়েটা যখন তোমাকে জড়িয়ে তখন আমার নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছিল! আমি সত্যিই মরে যাবো রাজ তুমি যদি অন্যের হয়ে যাও। আমি শুধু জানি তুমি আমার। তুমি ছাড়া যে আমার কেউ নেই।

– রাজ অধরার গালে ঠাস করে চড় বসিয়ে দিয়ে বলে,’ এই বললাম না তোর নাটক বন্ধ কর! আনিশাকে সরি বল।


– রাজের চড়ের চেয়ে তার কথাগুলো অধরাকেকে আরো বেশি কষ্ট দিচ্ছে! বুকের ভেতরটা দুমড়ে – মুচড়ে যাচ্ছে! চোখের পানি মুছতে মুছতে অধরা আনিশাকে বললো,’ সরি বোন আমার ভুল হয়ে গেছে। ‘

– what! তোর মতে মেয়ে আমাকে বোন ডাকার সাহস কিভাবে পায়? আরে জানিস আমি কে?

– সরি ম্যাডাম ভুল হয়ে গেছে! আমাকে ক্ষমা করে দেন। আপনাকে না চিনে চড় মেরে ফেলেছি। আমার সরি বলাতে যদি আপনার মন ভালো না হয়। তাহলে আপনি যতগুলো মন চায় চড় আমার গালে দিয়ে দেন। কথাগুলো এক প্রকার কান্না জড়ানো কন্ঠেই বললো অধরা! চোখ থেকে মুক্তোর দানার মতো পানি গড়িয়ে পড়ছে। রাতের কথাগুলো মনে পড়ে আরো বেশি কান্না পাচ্ছে অধরার। একটা মানুষ মুহূর্তে মুহূর্তে কেমন করে এতো রুপ পাল্টে ফেলে!

– এই তুই এখানে দাঁড়িয়ে থাকবি? না হোটেল রুমে যাবি? আমাদের ফিরতে লেট হবে। চলো জানেমন!

– হুম সুইর্টহার্ট আজ সারাবেলা দু’জনে ঘুরবো। সমুদ্রে সাতার কাটবো!
– হুমম চলো।

– রাজ আর আনিশা চলে গেল। অধরার হৃদয়ের আকাশটা এক মুহূর্তে কালো মেঘে ছেয়ে গেল। সাগরের ঢেউ কিনারায় এসে বারি খাচ্ছে আর গর্জন করে উঠছে। অধরার মনে হচ্ছে সাগরের চেয়েও বেশি কষ্ট তার। সাগর তো তার কষ্টটা চিৎকার করে বলতে পারছে। সে তো তাও পারছে না। জানে না নিয়তী কে রেখেছে তার ভাগ্যে!

– অধরা আর ঘুরে ঘুরে সমুদ্রের সৌন্দর্য দেখলো না। সেখান থেকে হোটেলে এসে পড়ে। বার্থরুমে গিয়ে শাওয়ার ছেড়ে চিৎকার দিয়ে কাঁদতে থাকে। কেন এমন হয় তার সাথে। সে তো কোন অপরাধ করেনি। কেন বাবার পাপের শাস্তি সে পাচ্ছে?শাওয়ারের পানির সাথে চোখের পানিগুলোও ঝরে যাচ্ছে। বুকের বা পাশটা চিন-চিনে ব্যথা করছে। মনে হচ্ছে হৃদপিন্ডে কেউ খুব যত্ন করে ছুরি চালিয়ে দিয়েছে।

– অধরা গোসল শেষ করে ভেজা চুল শুকাতে শুকাতে কালকের কথাগুলো মনে পড়ে। কাল গোসল শেষে অধরা যখন তার চুল শুকাতে ব্যস্ত এমন সময় রাজ জড়িয়ে ধরে বলে,’ আমি তোমাকে কোনদিন ছেড়ে যাবো না। ” সত্যি কি কথাটা মন থেকে বলেছিল। এসব ভাবতেই চোখের কার্ণিশ বেয়ে সদ্য কাজলের বাঁধটা অতিক্রম করে কয়েক ফোটা জল গড়িয়ে পড়ে।

– অধরা বিকেলে কিছু না খেয়ে ঘুমিয়ে যায়। ঘুম ভাঙে কারো দরজা নক করার শব্দে। অধরা ঘুমে ঢুলুমুলু খেয়র দরজা খুলেই দেখে রাজ আর আনিশা দাঁড়িয়ে আছে। আনিশা রাজের হাতটা ধরে রাজেে পাশাপাশি দাঁড়িয়ে আছে।

– রাজ আর আনিশাকে এভাবে দেখে বুকের ভেতরটা ছ্যাঁত করে ওঠলো।

– দরজায় দাঁড়িয়ে থাকতে দিবি নাকি!
– অধরা মাথা নিচু করে সরে দাঁড়ায়!
– রাজ রুমে এসেই অধরাকে বলে তোর কিছু এই রুম থেকে নেওয়ার থাকলে নিয়ে পাশের রুমে যা। পাশের রুমটা একটু ছোট।

– পাশের রুমে কেন?
– কেন বুঝিস না? আমি আর আনিশা থাকবো এই ঘরে।
– অধরা কি বলবে কিছু বুঝতে পারছে না। কলিজাটা ফেটে যাচ্ছে। রাজকে জড়িয়ে ধরে ফুঁপিয়ে কান্না করলে মনটা মনে হয় হালকা হতো।
– এই কি হলো টাইম ওয়েস্ট করিস না। আমার জানেমন আমার সাথে মিট করার জন্য আমেরিকা থেকে দেশে ফিরে সোজা কক্সবাজার এসেছে। বুঝতে পারছিস বিষয়টা! ওহ্হো তোদের মতো মেয়ে তো টাকা ছাড়া অন্য কিছু বুঝে না।

– অধরা রাজকে কোন কিছু না বলে একটা ব্যাগ নিয়ে পাশের রুমে চলে গেল। অধরা রুম থেকে বের হতেই রাজ দরজাটা লাগিয়ে দিলো।

– রাতে হোটেলের কর্মচারী খাবার দিয়ে গেলেও খাবারটা ওভাবেই রেখে দেয় সে। মনটা কেমন করছে। পৃথিবীর কোন নারীই হয়তো এতটা কষ্ট সহ্য করতে পারবে না। তারই সামনে তার হাসবেন্ড অন্য একটা মেয়ের সাথে রাত কাটাবে ।

– এদিকে এশার আযান হয়ে যায়। অধরা সুন্দর করে অযু করে নামাযে দাঁড়িয়ে যায়। সে বুঝতে পারে আল্লাহ ছাড়া এ পৃথিবীতে কেউ নেই।আল্লাহই উত্তম সাহায্যকারী।

– অধরা চোখের পানি ফেলতে ফেলতে নামায শেষ করে মোনাজাতে কাঁদতে কাঁদতে বলতে লাগে,’ হে আল্লাহ একটা বাচ্চা যখন কান্না করে সে কান্না দুনিয়ার কোন মা সহ্য করতে পারে না। সমস্ত কাজ ফেলে দৌড়ে সন্তানকে কুলে তুলে নেয়। ও আল্লাহ তুমি তো তোমার বান্দাকে দুনিয়ার মায়েদের চেয়ে কোটিগুণ বেশি ভালোবাসো। আল্লাহ আর কত কাঁদলে আমার স্বামী আমার হবে? আমি যে এভাবে পারছি না। মা নেই বাবাও নেই। আমি যে এতিম অনাত। তুমি না বলেছো যার কেউ নেই তার তুমি আছো। ও আল্লাহ আমি আর সহ্য করতে পারছি না। তুমি আরো কষ্ট দাও তবে সহ্য করার শক্তি দাও আমাকে। ও আমার আল্লাহ তুমি তো জানো রাজকে সেই শৈশব থেকেই হৃদয়ে জায়গা দিয়েছি। সেই ছোট থেকেই তোমার পবিত্র কালাম পড়ে বিয়ে করেছি। তুমি তাকে আমার করে দাও না। ও আল্লাহ দেখ আমি কাঁদছি। তোমার কি একটু দয়াও হয় না। আমি ছাড়া তোমার তো কোটি কোটি বান্দা আছে, কিন্তু তুমি ছাড়া আমার তো কেউ নেই। তুমি ফিরিয়ে দিলে কার কাছে যাবো? তুমি ফিরিয়ে দিয়ো না আল্লাহ। হে রহমানির -রাহিম, আমার মাঝে ছোট্ট একটা প্রাণের উদয় হচ্ছে। সমস্ত বিপদ-আপদ থেকে তুমি তাকে হেফাযত করো। আমার সতিত্বের হেফাযতের দায়িত্ব তুমি নিয়ে নাও। আমার কলিজার টুকরা বোনটাকে তুমি সুস্থ রেখো। এই বলে মোনাজাত শেষ করে শুয়ে পড়ে। কিছুতেই ঘুম আসছে না। বুকের ভেতরটা জ্বলে -পুড়ে যাচ্ছে। সহ্য করতে পারছে না। রাজ আর শাকচুন্নীটা না জানি রুমে কি না কি করছে।

– অধরা কিছু না ভাবতে পেয়ে রাজের রুমের দরজায় নক করে। দরজায় কয়েকবার নক করতেই আনিশা উড়না টানতে টানতে দরজা খুলে বলে এই ছোটলোকের বাচ্চা এতো রাতে কেন দৃষ্টাব করিস?
– ম্যাডাম রাজ কোথায়?

-এই ছোটলোকের বাচ্চা এতো রাতে তুই বিরক্ত করতে আসছিস? শোন রাজ শুধু আমার ভুল করেও তোর ভাববি না। এখন ডিস্টাব না করে ঘুমা। কত সুন্দর রোমান্টিক মুহূর্তে এসে! সিট!

– অধরা এইবার আনিসার পায়ে পড়ে যায়। আর বলতে লাগে, ‘ ম্যাডাম প্লিজ আমার রাজকে আপনি আমাকে ভিক্ষা দেন। প্লিজ আপনি ওর জীবন থেকে সরে যান। আমি যে আমার কলিজার টুকরাকে ছাড়া বাঁচবো না।

– এমন সময় রাজ এসে অধরাকে ধাক্কা দিয়ে রুম থেকে বের করে দিয়ে বলে,’ তুই যদি আরেকবার ডিস্টাব করিস তাহলে তোর গর্ভের বাচ্চাকে কালই এর্বারশন করাবো। এখন যা তো আমাদের ইনজয় করতে দে। অধরা আর কিছু না বলে রুম এসে পড়ে। রুমে এসে ব্যাগ থেকে রাজের শার্টটা বের করে গায়ে জড়িয়ে নেয়, রাজের একটা ছবি বুকে নিয়ে কাঁদতে থাকে আর বলে, ‘ ও কলিজা আর কতো কষ্ট দিবে? আমি যে আর পারছি না। এর চেয়ে বরং গলাটেপে মেরে ফেল আমাকে। তবুও কষ্ট পাবো না। ও কলিজার টুকরা তুমি না আমাকে ছোটবেলা খুব ভালোবাসতে। তবে আজ কেন আমাকে এইভাবে দূরে সরিয়ে দিচ্ছো? রাজের ছবিটার কপালে ছোট্ট করে একটা চুমু দিয়ে বুকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগল।

– পরের দিন সন্ধ্যা বেলা রাজ অধরাকে একটি শর্ট ড্রেস আর হাই হিল জুতো দিয়ে বললো, ‘ এই গুলো পড়ে নাও। রাতে বিদেশী ক্লাইন্ট আসবে। আমার হাজার কোটির ডিল! একবার যদি কাজটা পেয়ে যায়। আমি হবো বাংলাদেশের নাম্বার ওয়ান বিজনেস ম্যান। তোমার একটা ছবি তাদের কাছে পাঠিয়ে দিয়েছি। বাকিটা তুমি মনোরঞ্জন করে দিতে পারলেই হলো। আমার জন্য পারবে না এইটুকু করতে সুইর্টহার্ট!

– অধরা রাজের কথা শুনে কাঁদতে পারছে না। মানুষ কতটা নীচ হলে নিজের স্ত্রীকে পণ্য বানাতে পারে এসব ভেবেই অধরার ঘৃণা হচ্ছে। তবুও করুণ কন্ঠে রাজকে বললো,’ রাজ তোমার যা ইচ্ছে করো, আমি পারবো না এসব ছোট্ট ড্রেস পড়তে।আর তুমি তো জানো আমি প্রেগন্যান্ট! এতো উঁচু জুতো পরতে পারবো না।

-তাই বুঝি! আমি প্রেগন্যান্ট বললেই ভাবছিস ছাড় পেয়ে যাবি? দরকার পড়লে বাচ্চা নষ্ট হয়ে যাবে। শোন সময় এক ঘন্টা, এর মাঝে এসব পড়ে যদি রেডি না হস তাহলে পরশু রাতে তোর সাথে যা যা হয়েছে তা দেশবাসী দেখবে। আমি জানতাম তুই রাজি হবি না। তাই শাওয়ার নেওয়া থেকে শুরু করে।

চলবে”””’