অবশেষে তুমি আমার পর্বঃ২৩

0
4525

অবশেষে তুমি আমার
পর্বঃ২৩
তাসনিম রাইসা

– ত্রিযামিনী কি বলছো উল্টা-পাল্টা।
– কি আর বলবো দেখো আমার কথায় সত্যি হবে। ঠিক দেখবা কোন ছেলের সাথে ফুষ্টি-নষ্টি করে আসবে।

– ত্রিযামিনী চুপ করো। এমন সময় কলিংবেলটা বেজে উঠে। রাজ দৌড়ে গিয়ে দরজা খুলতেই দেখে অধরা দাঁড়িয়ে আছে। অধরাকে দেখেই রাজ অধরাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দেয়। আর বলতে লাগে কোথায় ছিলে তুমি কত্তো খুঁজেছি তোমায়।

– এমন সময় তিয়াসকে পাশে দাঁড়ানো দেখেই এক ধাক্কায় অধরাকে বুক থেকে সরিয়ে দেয়। অধরা ছিটকে পড়ে যায় নিচে। রাজের চোখ দুটি লাল হয়ে যায় রাগে। অধরা বুঝতে পারছে তার সাথে খারাপ কিছু ঘটতে যাচ্ছে। তাই তার শরীর ভয়ে কাঁপছে।

– এই কোথায় ছিলি তুই?
– অধরা ভয়ে কোন কথা বলছে না।

– কি হলো কথা বলছিস না কেন? তোর জন্য আমার কত হাজার কোটি টাকার কাজ হাত ছাড়া হয়েছে জানিস? আর তুই কি না পালিয়ে তিয়াসের সাথে।

– রাজ প্লিজ বিশ্বাস করো তিয়াসের সাথে আমার কিছু হয়নি।

– বাহ্ বাহ্! প্রায় দশ ঘন্টা একসাথে থেকে এখন বলছিস কিছু হয়নি? ছিঃ লজ্জা করে না তোর গুছিয়ে মিথ্যা বলতে? একে তো আমার হাজার কোটি টাকার ডিল নষ্ট করে আসলি তার উপর আবার মিথ্যা বলছিস।

– রাজ ভাইয়া প্লিজ বিলিভ করেন, অধরা ফুলের মতো পবিত্র। চাঁদের গায়ে কলঙ্ক থাকলেও অধরার গায়ে কোন কলঙ্ক নেয়। সে শুধু আপনাকেই ভালোবাসে। তার সাথে কিছু হয়নি আমার। হ্যাঁ আমি অধরাকে ভালোবাসি নিজের থেকেও বেশি ভালোবাসি। তবে আমি চাই অধরা যায় কাছেই থাকুক সে যেন হ্যাপি থাকে। ভালোবাসা শুধু নিতে নয় দিতেও শেখায়।

– কথাগুলো বলে তিয়াস যখন চলে যাবে এমন সময় ত্রিযামিনী বললো,’ বাহ্ আপনি তো মহাপুরুষ! কি সুন্দর ভালোবাসার কাব্য রচনা করে গেলেন। কিন্তু মশায় আপনার শার্টে আর গলার নিচে লিপস্টিকের দাগগুলো কোথা থেকে আসলো?

– তিয়াস বুঝতে পারছে না তার গলায় আর শার্টে লিপস্টিকের দাগ কোথায় থেকে আসলো। সবকিছু গোলকধাঁধা মনে হচ্ছে।এখানে থাকা সসমীচীন নয়। তাই তিয়াস কাজ আছে বলে গাড়ি নিয়ে চলে গেল।

– তিয়াস চলে যেতেই ত্রিযামিনী বললো,’ দেখছো রাজ নাগরের সাথে নষ্টামি করে শার্টে আর গালে কি করছে? আর এখন এমন ভাব করছে যেন ভাজা মাছ উল্টে খেতে জানে না।

– আপু আপনি কি বলছেন এসব?
– বাহ্ বাহ তাহলে এতোসময় একসাথে কি লুডু খেলছেন?
– রাজ আর কিছু বলার সুয়োগ দিলো না। অধরাকে নিয়ে একেবারে উপরে চলে গেল। উপরে নিয়েই দরজা লাগিয়ে দিয়ে বললো,’ তোকে ভাবতাম ভালো। ছি তুই এমন একটা কাজ করবি ভাবতেও পারিনি। তিয়াসের সাথে নোংরামি।

– রাজ প্লিজ বিলিভ করো। আমার সাথে তিয়াসের কিছুই হয়নি। আমার না অনেক খিদে পেয়েছে। আমাকে কিছু খেতে দিবে?
– তাই বুঝি? তিয়াস খেতে দেয়নি? এতোক্ষণ একসাথে ছিলে অবশ্যই কিছু না কিছু খেতে দিয়েছি। খাবার না হোক অন্য কিছু তো।

– রাজ স্টপ নিজের মতো সকলকে ভাববে না। আমার ভাবতেও লজ্জা করে তোমার মতো একটা খারাপ মানুষ আমার স্বামী? যে কিনা ব্যবসার জন্য নিজের স্ত্রীকে অন্যের হাতে তুলে দেয়। নিজের স্ত্রী রেখে অন্য মেয়ের সাথে সারারাত কাটায়। অন্য রুমে তার স্ত্রী ফুঁপিয়ে কান্না করে। সত্যি বলতে তুমি ভালোবাসাটা কি বুঝো না। তোমার চেয়ে তিয়াস হাজারগুণ বেশি ভালোবাসে আমায়। তিয়াস চাইলেই বাজে কিছু করতে পারতো আমার সাথে।বাধা দেওয়ার ক্ষমতা ছিল না আমার। কিন্তু তিয়াস আমাকে ছুঁয়েই দেখেনি। নিঃস্বার্থভাবে ভালোবেসে গেছে।
– হাহা তার জন্যই তো তিয়াসের সাথে সময় কাটিয়ে বাসায় ফিরলি। আমি যা করতে পারি না তা তিয়াস করে তাই না?

– অধরা ঠাস করে রাজের গালে চড় বসিয়ে দেয়!

– রাজ গালে হাত দিয়ে মাথাটা নিচু করে বললো,’ তুমি আমাকে মারলে? একদম অসহায়ত্বের দৃষ্টি নিয়ে তাকালো রাজ।

– অধরা কিছু বলতে যাবে তার আগেই রাজ রুম থেকে চলে গেল। নিচ থেকে খাবার এনে অধরাকে দিয়ে বললো,’ খেয়ে নাও। ”

– রাজ আমি বুঝতে পারিনি। নিজের রাগ কন্টোএ করতে পারিনি। তাই চড় দিয়ে ফেলছি। আমাকে ক্ষমা করে দাও।

– আশ্চর্য আমি কোন কষ্ট পায়নি খেয়ে নাও।

– অধরা খাওয়া শেষ করতেই রাজ বললো,’ তোমাকে ডির্ভোস দিয়ে আনিশাকে বিয়ে করবো। যে মেয়ের কাছে তিয়াস ভালো। তিয়াসের সাথে যে মেয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা একান্তে থাকতে পারে তার জন্য তিয়াসই পারফেক্ট।

– হ্যাঁ হ্যাঁ তিয়াসই পারফেক্ট। তিনমাস শেষ হোক আমি তিয়াসকেই বিয়ে করবো।

– কি দাঁড়া তোকে বিয়ে করাচ্ছি। এই বলে অধরাকে ধাক্কা দিয়ে বিছানায় ফেলে দেয়।

– অধরা খুব করে চাচ্ছে রাজ তাকে চড় দেয় যেন। রাজকে চড় দেওয়াই তার ভেতরটা পুড়ে যাচ্ছে। কিন্তু রাজ অধরাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়ে শাড়ির আচলটা খুলে ফেলে। ঠোঁট জুড়া অধরার ঠোঁটে মিশিয়ে দেয়। তারপর অধরা বাঁধা দিলেও রাজ জোর করে তার রাগ মেটায় অধরার শরীরে। অধরা কিছুক্ষণের মাঝে ঘুমিয়ে যায়।

– রাজ অধরাকে কয়েকটা ডাক দেওয়ার পরও যখন অধরা অচেতন তখন রাজ বুঝতে পারে খাবারের সাথে মেশানো ঘুমের ওষুধটা কাজে লেগেছে।

– রাজ অধরাকে টান দিয়ে বিছানা থেকে তুলে বুকে টেনে নেয়। গালে মুখে চুমু দিয়ে বলতে লাগে,’ কলিজার টুকরা তুমি কি একটুও বুঝো না কতটা ভালোবাসি। তুমি কি শুধু আমার রাগ -অভিমানটাই দেখ? আমি যে তোমার পাশে কাউকে সহ্য করতে পারি না। পারি না তোমাকে নিয়ে বাজে কিছু সহ্য করতে নিজেকে শেষ করে দিতে ইচ্ছে করে। ও কলিজার টুকরা জানো তোমাকে কত জায়গায় খুঁজেছি। মনে হয়েছিল তোমার কিছু হয়ে গেলে আমি বাঁচবো না। পাগল হয়ে যাবো। আমি পারি না সবার মতো ভালোবাসা সো অফ করতে! সত্যিই কি কলিজার টুকরা তিয়াস আমার চেয়ে তোমাকে বেশি ভালোবাসে?তোমার মুখে যখন তিয়াস নামটা শুনি সত্যিই তখন বুকের ভেতরটা দুমড়ে -মুচড়ে যায়।

রাজ শক্ত করে অধরাকে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে আছে। চোখের পানি টপটপ করে গড়িয়ে পড়ছে। ছোট্ট বাচ্চা যেমন ভয় পেয়ে কাউকে আঁকড়ে ধরে। ঠিক তেমন করে রাজ অধরাকে জড়িয়ে ধরে আছে বুকের ভেতরে এক প্রশান্তির হাওয়া বয়ে যাচ্ছে। মনে হচ্ছে এভাবে যদি সারাজীবন বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে রাখতে পারতো। কিন্তু না মা -বাবার রক্তমাখা চেহারাটা এখনো যে তাকে ঘুমাতে দেয় না। ফুপির সে চাঁদমাখা মুখটা যে এখনো ভেসে উঠে স্মৃতিপটে। এতোটা ভালোবাসার পরেও ভালোবাসার মানুষটিকে নিজের করে পাওয়া যায় না। রাজ মনে মনে ভাবে এই কয়েকমাসের স্মৃতি নিয়েই সে বাকিটা জীবন কাটিয়ে দিবে। জীবন কি অদ্ভুত। যে অধরা তার মাকে পতিতা বলেছিল সে অধরা তাে বুকে। সে একটি কথায় তার আর অধরার মাঝে অদৃশ্য দেয়াল তুলে দিয়েছে।

– দেখতে দেখতে সকাল হয়ে যায়। অধরা এখনো রাজের বুকে। ঘুমে ঢুলুমুলু চোখ খুলতেই অধরা রাজকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ।
– অধরা ঘুম ভেঙে গেছে ভেবেই রাজ অধরাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয়। চোখের সামনে তিয়াসের শার্টে লিপস্টিকের দাগ ভেসে ওঠে।

– রাজ আর রাগ সংবরণ করতে পারে না। অধরাকে বলে দেয় তোর কত বড় সাহস আমার বুকে ঘুমাস?
আরে তোর মতো ছোটলোকের সাহস কি করে হয়?
এর পর যদি কোনদিন আমাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমাস তাহলে পেটে একটা লাথি দিয়ে মা হওয়ার সখ মিটিয়ে দিবো। আর হ্যাঁ কয়েকদিনের মাঝে আমি আর আনিশা বিয়ে করছি। তোর না তিয়াস আছে তার কাছেই যাবি। তবে চুক্তি শেষ না হওয়া পর্যন্ত তুই শুধু আমার।

– রাজ প্লিজ বিলিভ করো আমি তোমাকেই ভালোবাসি। অামি তোমাকে ছাড়া বাঁচবো না। সত্যি মরে যাবো। আনিশাকে বিয়ে করার আগে আমাকে নিজ হাতে মেরে আমার লাশের উপর দিয়ে তাকে বিয়ে করবে।

– এই তোর ড্রামা বন্ধ করবি? তোর মতো ছোটলোকের সাথে মজা করা যায়। রাত কাটানো যায় ঘরের বউ করে রাখা যায় না। তোর আর নিষিদ্ধ পল্লীর মেয়ের মাঝে কোন পার্থক্য নেই। তোরা টাকার জন্য সব করতে পারিস।

– অধরা চোখের পানি ছেড়ে দিয়ে বললো,’ রাজ আমার বোনকে বাঁচাতে আমি সব করতে পারি সব। তবে আমি সবকিছুর উধ্বে তোমাকে ভালোবাসি। আর শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত তোমাকে ভালোবেসে যাবো।

– রাজ আর কিছু না বলে বাসা থেকে বের হয়ে যায়।

– রাজ বের হয়ে গেলে ত্রিযামিনী এসে বলে,’ কিরে রুমেই থাকবি নবাবের মেয়ে? রান্নানা কে করবে?

– অধরা কিছু না বলে কিচেনে চলে যায়। কিচেনে রুটি বান্নাচ্ছে এমন সময় ফোনটা বেজে ওঠলো। ফোনটা রিসিল করতেই বুঝতে পারলো ইশু ফোন করছে। ইসু কান্না করে দিয়েই বললো,’ আপু তুই এমন কেন একটিবারো আমাকে দেখতে আসলি না? তোকে দেখার জন্য মনটা ব্যাকুল হয়ে যাচ্ছে। আমি মারা গেলেও বোধহয় দেখতে আসবি না। জানিস আপু আমার না খুব কষ্ট হচ্ছে। হঠাৎ শরীরটাও খারাপ লাগছে অনেক। মনে হয় বাঁচব না।

– চুপ একদম বাজে কথা বলবি না বোন। তুই ছাড়া কে আছে আমার। আমি যে অগ্নিপরীক্ষা দিচ্ছি। আর কয়েকটা দিন অপেক্ষা কর। আমি আসবো। আর তোর কিচ্ছু হবে না। তোর বোন আছে না।

– এমন সময় ত্রিযামিনী পিছন থেকে এসে চুলের মুঠি ধরে বললো,’ কি নাগরের সাথে কথা বলছিস? এদিকে রুটি পুড়ে যাচ্ছে। এই বলে গরম রুটির পাত্রে অধরার হাতটা চেপে ধরে মুহূর্তে হাতে ফসকা পড়ে যায়। অধরা মা বলে চিৎকার দিয়ে ওঠে।

– কি খুব লাগছে তাই না? শোন তুই যদি বাসা থেকে না যাস তাহলে এরকম ছ্যাঁক তোর পেটে দিমু। এখনো সময় আছে রাজের জীবন থেকে সরে যা।

– অধরার হাত খুব জ্বলছে। দৌড়ে বার্থরুমের গিয়ে শাওয়ার ছেড়ে দিয়ে চিৎকার দিয়ে কাঁদতে লাগলো। মনে হচ্ছে জীবনটা বের হয়ে আসবে।

– এদিকে ত্রিযামিনী আর তার মা প্লান করছে অধরার খাবারে বিষ দিয়ে অধরাকে মেরে ফেলবে। আর ফেঁসে যাবে রাজ। যেই ভাবা সেই কাজ, ত্রিযামিনী তার বন্ধুকে দিয়ে বিষ আনিয়ে অধরার খাবার সাথে মিশিয়ে দেয়।
– এদিকে অধরা বার্থরুম থেকে বের হলেই, ত্রিযামিনীর মা ঠাস করে ত্রিযামিনীর গালে চড় বসিয়ে দেয়। আর বলতে লাগে ছিঃ আমার লজ্জা লাগছে তোর মতো মেয়ে গর্ভে ধরেছি। রাজ আর অধরা ছোট থেকে ভালোবাসে আর তুই আজ অধরার হাতটা পুড়ে দিলি।

– মি কি বলছো এসব?
– চুপ আমাকে মা বলবি না। তোর মতো খারাপ মানুষ আমার মেয়ে হতে পারে না। তোর একটু মায়া লাগে না গর্ভবতী মেয়েটারে এমন অত্যাচার করতে। অধরা মা আমার ভুলের জন্য তোর কাছে ক্ষমাচাচ্ছী আমাকে ক্ষমা করে দে। আমাকে একবার মা ডাকবি?
– অধরা মিসেস রাহেলা জড়িয়ে ধরে কান্না করে দেয়। কান্না জড়ানো কন্ঠে মা বলে ডেকে উঠে আর বলে মা আমি সব কষ্ট ভুলে গেছি।

– আচ্ছা অধরা মা আমার খেয়েছ কিছু?
– না মা।

– মিসেস রাহেলা অধরার ডান হাত দেখে বললো,’ আল্লাহ হাতের কি অবস্থা হয়েছে। দাঁড়াও আজ তোমার মা তোমাকে খাইয়ে দিবে।অধরা বিছানায় বসে আছে। মিসেস রাহেলা বিষ মেশানো খাবার অধরার সামনে রেখে বসলো। অধরার চোখ থেকে টপটপ করে পানি পড়ছে।মায়ের কথা বারবার মনে পড়ছে। মিসেস রাহেলা অধরার চোখের পানি মুছে দিয়ে বললো, কোন অজুহাত চলবে না সব খাবার খেতে হবে। আমি খাইয়ে দিচ্ছি।

– চলবে””””’