হৃদয়ের সুখ আপনি পর্ব-০৭+০৮

0
270

#হৃদয়ের সুখ আপনি
#পর্ব-০৭+০৮
#Nishi_khatun

দাইয়ান কে যে পুলিশেরা ধরে নিয়ে গেছে তা নিয়ে চেয়ারম্যান বাড়ির কারো কোন মাথা ব্যাথা হচ্ছে না। তাদের সবার ভাব ভঙ্গি দেখে মনে হচ্ছে তারা জানতো এমন কিছু হবে।

ইফা এদিকে সেই সকাল থেকে বিলাপের সুরে কান্না করে যাচ্ছে। তার কান্না করা দেখে কারো মনে সহানুভূতির সৃষ্টি না হলেও এহেন কান্ডে বিরক্তিবোধ করছিল সকলে।

বদুরুদ্দিন সাহবের কোথায় যেনো মিটিং আছে!
তিনি সে মিটিং এটেন্ড করতে যাবে। রেহেনা বেগম তা-ই স্বামীর সকল প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র গুছিয়ে দিচ্ছেন।

বাড়ির পরিবেশ দেখে মনেই হচ্ছে না,
এ বাড়ির ছেলেকে পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে।

বদুরুদ্দিন সাহেব বাড়ির সদরদরজার সামনে এসে গলার আওয়াজ জোড়ে করে বলেন,” আমার জরুরী মিটিং আছে, আমি সেখানে যাচ্ছি। আমার বাড়িতে ফিরতে দুই তিনদিন দেড়ি হতে পারে। সবাই সাবধানে থাকবে। যদি কারো কোন সমস্যা হয় তারা তাদের সমস্যার সমাধান নিজেই করে। আমি কারো সমস্যার সমাধান করে দিতে পারবোনা। ”

ইফা সদরদরজার কাছে-ই উপস্থিত ছিলো। তা-ই সে তার শ্বশুরের বলা সব কথা স্পষ্ট শুনতে পেয়েছে।
এসব কথা শুনে আরও জোড়ে কান্নাকাটি করতে শুরু করে।

বদুরুদ্দিন সাহেব চলে যাবার পর রেহেনা বেগম বিরক্তিবোধ করছিল। তা-ই তিনি ইফার সামনে যেয়ে বলে,

-“শোনো মেয়ে! আমার বাড়ির উঠানের কোণায় বসে এভাবে বিলাপ করার দরকার নেই। তোমার যদি খুব কান্নাকাটি করার ইচ্ছা হয় বাবার বাড়িতে যেয়ে কান্নাকাটি করো। এখানে এভাবে কান্না করে আমার বাড়ির পরিবেশ দূষিত করবে না।”

ইফা ঝাঁঝালো কন্ঠে প্রতিবাদ করে ওঠে,
“এই আপনি কেমন মা! যার ছেলেকে সকালে পুলিশে ধরে নিয়ে গেলো, সে মা এমন গা ছাড়া স্বভাবের হয় কি করে?”

রেহেনা বেগম গম্ভীরতা বজায় রেখে বলে,
“ছেলে যখন আমার চিন্তাও আমার। আমি আমার অনুভূতি কী ভাবে প্রকাশ করবো তা আমার ব্যাক্তিগত বেপার। আমি কেমন স্বভাবের তা আমাকে বুঝতে দাও।”

ইফা নেকামির সুরে বলে,”হ্যা, আপনাদের সবার যে, আমার স্বামীর প্রতি কেমন অনুভূতি তা দেখতেই পাচ্ছি। সাত সকালে ছেলেকে পুলিশে ধরে নিয়ে গেছে, সেই ছেলের বাবা দুই তিনদিনের জন্য মিটিং এ চলে গেলো। বলছি যে, তার ছেলেকে কী থানা থেকে ছাড়িয়ে আনতে কেউ যাবে না?”

রেহেনা বেগম তাচ্ছিল্যের সাথে বলে,
“ছেলে আমার নিজেই উকিল! সে নিজেই খুব ভালে করে জানে, প্রথম স্ত্রীর বিনা অনুমতি তে অথবা তাকে তালাক না দিয়ে দ্বিতীয় বিয়ের শাস্তি কি। সে জেনে বুঝে তো দ্বিতীয় বিয়ে করেছে। কিছুদিনের জন্য তোমার সাথে দাম্পত্যজীবন যাপন করবে, তারপর জেলে সাত বছর থাকবে। তুমি এখন এবাড়িতে সাত বছর স্বামীর জন্য অপেক্ষা করবে।”

ইফা চিৎকার দিয়ে বলে ওঠে,”কীহহহহ! বিয়ে করে কয়েকবছর ভালোমতো সংসার করলাম না। তার জন্য সাত বছর এ বাড়িতে অপেক্ষা করবো? সাত বছর এ বাড়িতে স্বামী বিনা দাশী হয়ে থাকবো?”

রেহেনা বেগম বলল- হ্যা! ইচ্ছা হলে অপেক্ষ করবে নয়তো বাড়ি থেকে চলে যাবে। এখন তো মনে হয় তোমার এমনিতে এবাড়ি থেকে চলে যেতে হবে।

ইফা বলে,”আমি কেন এবাড়ি থেকে চলে যাবো? কই কেউ তো রিমশা কে এ বাড়ি থেকে চলে যেতে বলছেন না?”

ইলমা তখন সেখানে এসে বলে,”কারণ রিমশা ভাবী ভাইয়ার প্রথম বউ। ভাইয়ার উপর তার অধিকার আপনার থেকে বেশি। ভাইয়ার যেমন এবাড়িতে অধিকার আছে, তেমন ভাবে রিমশা ভাবীর অধিকার আছে। এখন সে এবাড়িতে সাত বছর কেনো সারাজীবন থাকলেও কেউ কিছু বলবে না।”

ইফা তখন বলে,”আমি বুঝতে পেরেছি। আপনারা আমাকে মিথ্যা ভয় দেখাচ্ছেন। যাতে করে আমি আমার স্বামী কে ছেড়ে দিয়ে এবাড়ি থেকে চলে যায়। তখন দাইয়ান কে নিয়ে ঐ রিমশা ডায়নী সুখে সংসার করবে তা-ই না?”

সে সময় রিমশা ইফার সামনে এসে উঠানে থুঃথুঃ ফেলে বলে,

-“এটাকে কি বলে জানিস তো? যে স্বামী আমার মূল্যবোধ বুঝলো না, আমাকে বুঝার চেষ্টা করলো না! কিন্তু তোর দু দিনের মিথ্যা ভালোবাসার জ্বালে ফেঁসে গেলে। সে সাত বছর পর কেনো? চৌদ্দবছর পরে সাধু হয়ে ফিরে আসলেও তাকে আমি গ্রহণ করবো কিনা ভাবতে হবে না। তবে হ্যা তাকে অন্য কারো সাথে সুখো সংসার করতে দিবো না। কারণ সে শুধু আমার। আমি তাকে গ্রহণ করবো না, আমার ফেলে দিবো না। দুটোর মাঝে আজীবন ঝুলিয়ে রাখবো।”

ইফা বলে,”তুই এমন কিছুই করবি না। তোর দৌড়ানি কতদূর তা আমার জানা আছে।”

রিমশা ইফাকে ইগনোর করে ইলমার হাত ধরে বলে,
“এই তোমার না সামনে না এইচএসসি পরিক্ষা? তুমি এভাবে ঘুরাঘুরি করলে চলবে? চলো পড়তে বসবে, নাহলে ডাহা ফেল করবে। আর ঝর্ণা কই? ওর কয়েকদিন পর পরিক্ষা। পরিক্ষা দিবে না বললেই হবে? ওর ঘাড় সহ পরিক্ষা দিবে। আম্মা আপনি সংসারেে সব কাজ দেখেন। আমি মেয়ে দুটো কে সঙ্গে নিয়ে যাচ্ছি। আর যার দরকার সে আমার দৌড়ানি দেখুক! ”

রেহেনা বেগম রিমশা কে উদ্দেশ্য করে বলে,

-” যাও বউমা! মেয়ে দুটোর দায়িত্ব তোমার।
এদের ভালো করে পড়িয়ে পাশ করার ব্যবস্থা করো।
নয়তো ফেল করা মেয়েকে কেউ তার বাড়ির বউ করবে না। এযুগে উচ্চ শিক্ষিত ভালো পজিশনে থাকা ছেলের ঘাড়ে তো আর আমাদের বাড়ির অশিক্ষিত মেয়ে চাঁপিয়ে দিতে পারি না।”

ইফা ঝাঁঝিয়ে বলে,”আমাকে অশিক্ষিত বলে অপমান করা হচ্ছে? আমিও এইচএসসি পরিক্ষা দিয়েছি।”

রিমশা তাচ্ছিল্যের সাথে বলে,”পরিক্ষা দিয়েছিস কিন্তু কয়েকবার পরিক্ষা দিয়েও পাস করিশ নাই।”

এরপর আর কেউ ইফার কথা শোনার জন্য অপেক্ষা করে না। তারা যে যার কাজে চলে যায়।

রেহেনা বেগম ঝর্ণার মা কে বলে,”আজকে বাড়িতে এতো রান্নার চাপ নেই। বাড়ির পুরুষেরা বাড়িতে না থাকলে রান্নার জন্য এতো তাড়া থাকে না।”

ঝর্ণার মা -হ্যা ভাবী যা সত্যি বলেছেন।
*
*
দিরহাম সেই সকালে বাড়ি থেকে বেড়িয়ে গেছিলো! সারাদিন আর বাড়িতে আসে নাই। যেহেতু বাড়িতে পুরুষ মানুষেরা ছিলো না। তা-ই আজ চেয়ারম্যান বাড়িতে বাহিরে মানুষদের আনাগোনা কম ছিলো।

দিরহাম বিকালবেলা বাড়িতে ফিরে এসে দেখে বাড়ির সব মহিলারা একসাথে বসে গল্পগুজব করছে। ইফা তাদের থেকে কিছুটা দূরে চুপচাপ মুখটা গোমড়া করে বসে আছে।
দিরহাম তখন তার মা’কে ডাক দিয়ে বলে,”আম্মা কাল রাতে কি হয়ছে কিছু শুনছো না কি?”

রেহেনা বেগম- না তো বাবা! কোন কিছু শুনব নাই তো। কেন কারো কোনো সমস্যা হইছে?”

দিরহাম বলে,” কাল রাতে না কি পাশের গ্রামের লতিকা বেগমের স্বামী ফাইম মিয়া কে বা কারা যেনো আক্রমণ করেছিল। বেচারার অবস্থা ভালে না। হাসপাতালে ভর্তি আল্লাহ জানে লোকটা বাঁচবে কি না।”

রিমশা দ্রুত বলে ওঠে,”ভাইয়া লোকটা কিছু বলেছে?
কে তার উপর আক্রমণ করেছিল? বা তাকে চিনতে পেরেছে? ”

দিরহাম – আরে ফাহিম মিয়ার তো এখনো জ্ঞান ফিরে নাই!
সে কেমনে বলবে?

ঝর্ণা ফট করে বলে ওঠে,”খারাপ মানুষদের সাথে সব সময় খারাপি হয়। যদি ভালো মানুষ হতো তাহলে কি তার সাথে এমন কিছু হতো?”

রেহেনা বেগম ঝর্ণা কে ধমকিয়ে বলে,”সাত গ্রামের খারাপ মানুষের খবর উনি নিয়ে রেখেছে এমন ভাবা। মেয়ে মানুষকে সব সময় কথা বলার আগে চিন্তা ভাবনা করে কথা বলা উচিৎ। মুখে সব সময় লাগামহীন কথাবার্তা মেয়ে গুলোর। যাও সবাই যে যার রুমে যাও।”

সবাই প্রস্থান করতেই রেহেনা বেগম দিরহাম কে উদ্দেশ্য করে বলে,”আল্লাহ জানে, আমাদের গ্রাম সহ আশেপাশের গ্রামে এসব কি শুরু হল। কয়েকদিন যেতে না যেতেই খু-ন খারাপির খবর শোনা যাচ্ছে। ”

দিরহাম বলে,”মা যে লোকগুলো মারা গেছে একজন ও কি ভালে ছিলো? তাদের সামনে কেউ কিছু না বললেও আড়ালে ঠিকি তাদের লুচ্চা, লম্পট, চরিত্র হীন এসব বলে সম্বোধন করতো। যাক একদিক দিয়ে ভালোই হচ্ছে গ্রাম থেকে এসব বিকৃত মস্তিষ্কের মানুষ গুলো কমতে শুরু করেছে।”

রেহেনা বেগম বিরক্তির সাথে বলে,”হ্যা! যে বা যারা আগাছা নিধন করতে নেমেছে তারা যদি একবার ধরা পড়ে তাদের সোজা ফাঁশিকাঠে ঝুলতে হবে। তখন তার পরিবারের সদস্যদের কী হবে ভেবে দেখেছিস? ”

দিরহাম বলে,”মা, কেউ যদি সমাজের নোংরা পরিষ্কার করতে যায়, তাহলে তার গায়ে একটু আকটুনোংরা লাগবে এটা স্বাভাবিক। তার মানে এই না তারা খারাপ লোক বলে গণ্য হবে।”

রেহেনা বেগম- বাবা ঐ সব পড়ের বাড়ির ক্যাচাল বাদ দাও। নিজের বাড়িতেই কি হচ্ছে বুঝতেছি না। এক বউ বর কে জেলে ভরে দিলো তো আরেক বউ বাড়ি মাথায় তুলে রাখছে। আল্লাহ জানে আমার সংসারের কী হবে।

দিরহাম বলে,”মা তোমার ছেলে যদি বুড়া বয়সে এসে মানুষ চিনতে ভুল করে। সমাজের রক্ষক হয়ে যদি ভোক্ষকের মতো কাজ করে তাহলে তাকে শিক্ষা পেতে হবে। এখন তোমরা যদি নিজের ছেলেকে তার ভুলের জন্য উচিৎ শিক্ষা না দিতে পারো তাহলে তো অন্যকে সে দায়িত্ব নিতেই হবে। এখন রিমশা যখন সে দায়িত্ব নিয়েছে তখন তোমরা ওকে একটু সাপোর্ট করো তাহলে দেখবে ভালো কিছু হবে।”

রেহেনা বেগম বলে,”দেখা যাক আল্লাহ ভাগ্যে কি লিখে রাখছে আমার ছেলেটার। সে কাঁচ আর হীরার মধ্যে তফাৎ করতে পারে কি না।”

#হৃদয়ের_সুখ_আপনি
#পর্ব-০৮
#Nishi_khatun

ইফা দুদিন ধরে স্বামী কে ছাড়া অনাথের মতো শ্বশুর বাড়িতে পড়ে আছে। তার স্বামী যে জেলখানাতে বন্দী, তা নিয়ে এবাড়িতে কারো কোন মাথাব্যথা নেই। কেউ দাইয়ান কে ছাড়িয়ে আনার জন্য কোন তোরজোড় করছে না।
দাইয়ান কে নিয়ে কারো কোন অনুভূতি নেয়।

বাড়ির সবার ভাব দেখে মনে হচ্ছে তাদের ছেলে শ্বশর বাড়িতে বেড়াতে গেছে। এমনকি তাদের বাড়িতে কোন সমস্যা নেই।

এদিকে আজ দুদিন অন্যদিনের তুলনায় বেশি কাজ করতে হচ্ছে। রেহেনা বেগম তাকে একদণ্ড বিশ্রাম নিতে দিচ্ছে না। একটুপর পর নানারকম কাজ হাতে ধরিয়ে দিচ্ছে। রেহেনা বেগমের ভাব দেখে ইফার মনে হচ্ছে সে এবাড়ির কাজের মেয়ে। তাকে মাসের শেষে মোটা অংকের টাকা বেতন দেয়।
ইফাকে শুধু রেহেনা বেগম না, বাড়ির সবাই কমবেশি হুকুম করছে। আর ইফা যদি কাজ করতে অনীহা প্রকাশ করে তাহলে তাকে বাড়ি থেকে চলে যেতে বলছে।

ইফা একবার প্রতিবাদ করে রেহেনা বেগমের উদ্দেশ্যে বলে,

“আমাকে কি কাজের বেডি রহিমা মনে হচ্ছে আপনাদের? সারাক্ষণ এভাবে কাজের হুকুম করছেন?
কই রিমশা কে তো একটু কোন কাজের কথা বলছেন না?
আমার সাথে কেনো এমন জাহিলের মতো ব্যবহার করছেন।”

রেহেনা বেগম তাচ্ছিল্যের সাথে বলে,
“আজব মেয়ে তুমি দেখছি! রিমশা আমার বাড়ির বউ, তোমার মতো সতীন হয়ে সে আসে নায়। তুমি জেনে বুঝে রিমশা’র সংসারটাতে আগুন লাগিয়েছ। তোমার মতো মেয়েদের সাথে আরো খারাপ হওয়া উচিত। আমাদের মানবিকতা আছে বলে, ছেলে জেলে যাওয়ার পরেও তোমাকে এবাড়িতে থাকতে, পড়তে, খেতে দিচ্ছি। তারপরেও তুমি আর কি চাইছো?
বাপু তুমি এভাবে থাকতে পারলে থাকো, নয়তো আসতে পারো। এখন আর দাইয়ান নেয়, তোমার এতো নাটকীয়তা আর সহ্য করতে পারবোনা। তুমি ভালো করে-ই জানো আমরা তোমাকে কোনদিন ও এবাড়িতে সুখে সংসার করতে সাহায্য করবো না”

ঝর্ণার মা পাশে থেকে তাচ্ছিল্যের সাথে বলে,”ভাবী এই মেয়ের সাথে এতো কথা বলছেন কেন? এখন যেহেতু দাইয়ান বাড়িতে নেয়, তা-ই ইফার আর ঐ ভালো ঘরে থাকার দরকার নেয়। ইফাকে আমাদের পাশের ফাঁকা ঘরে থাকার ব্যবস্থা করে দেন।রিমশা যেমন স্বামী ছাড়া আলাদা ঘরে থাকে ঠিক তেমন।”

রেহেনা বেগম ঝর্ণা’র মায়ের কথায় তাল দিয়ে বলে,
“আরে হ্যা তা-ই তো। অযথা জিনিষপত্র দিয়ে ভরা রুমটাতে ওর আর থাকার দরকার নাই। যেখানে আমার ছেলে থাকছে না,
সে ঘরে ইফা একলা কারে নিয়ে শুয়ে থাকবে?”

ইফা চিৎকার দিয়ে বলে,
“আপনারা দেখছি গিরগিটির থেকেও খারাপ। ছেলে দুদিনের জন্য বাড়ি থেকে চলে যেতে-ই তার স্ত্রীর সাথে খারাপ ব্যবহার করছেন। ”

রেহেনা বেগম শান্ত কন্ঠে আস্তে করে বলে,
“তোমার মতো বেইমান মেয়েকে এর থেকে বেশি সম্মান করা যায় না।”

ইফা একটু দমে যায়, তবুও উঁচু গলায় কথা বলা বন্ধ করে না।

বাড়ির বড় বউ তখন বারান্দায় ছিল।
সেখানে থেকে বলতে শুরুকরে,
“তোমার সাথে খারাপ ব্যবহার কেনো করবে না বলো?
যদি তুমি দাইয়ানের সাথে প্রেম করে বিয়ে না করতে।
তাহলে রিমশা কখনো-ই থানাতে যেয়ে বিচার দিতো না।
আর বিচার না দিলে তো দাইয়ান ঠিকি বাড়িতে থাকতো।
তুমি যেমন রিমশা’র কাছ থেকে ওর স্বামী কে হাতিয়ে নিয়েছ, তেমন করে না হলেও কৌশলে তোমার কাছ থেকে দাইয়ান কে দূরে সরিয়ে দিয়েছে। সোজা হিসাব।”

ইফা বুঝতে পারছে এদের সাথে তর্ক করে লাভ হবে না।
এদের কেউ তাকে সাহায্য করবে না। সবাই হয়তো অতীতটা জানে। এবাড়ির কেউ তাকে এখানে রাখতে চাইছে না।
তবে ইফা এতো সহজে-ই হেরে যাওয়ার পাত্রী না।
সে ঠিকি তার স্বামী কে ছাড়িয়ে আনবে।
দরকার হলে নিজের পুরাতন সম্পর্ক জোড়া তালি দিবে।
*
*
পরেরদিন সকালে ইফা রিমশা’র বাবার বাড়িতে চলে যায়। রিমশা’র মা ইফাকে দেখার সাথে সাথে তাদের বাড়ির সদরদরজা মুখের উপর বন্ধ করে দেয়।
ইফা জোড়ে জোড়ে দরজাতে নক করতে থাকে।
তবুও রিমশা’র মা দরজা খুঁলে দেয় না।

বাড়ির ভেতরে থেকে রিমশা’র মা সোজা কর্কশ গলায় বলে,
-“আমরা দুধকলা দিয়ে কালসাপ পুষেছিলাম। সেই কালসাপ যে বড় হয়ে, আমার মেয়ের সংসারে ছোবল দিবে ভাবতেও পারি নাই। তোর মতো কালসাপের কোন স্থান নেই আমার বাড়িতে। তুই আর কোনদিন এখানে স্থান পাবি না। ”

ইফা বুঝতে পারে রিমশা’র মা প্রচুর রেগে আছে।
এখানে তার চাল-ডাল কিছুই গলবে না।

তা-ই সে নিজের মা নিলুফার বেগমের কাছে যেয়ে তাকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে।
নিলুফার তার মেয়েকে ছাড়িয়ে একটু দূরে সরে দাঁড়িয়ে বলে,

-“তুই এখানে কেনো এসেছিস? রিমশা’র সংসারটা ভেঙ্গেও তোর শান্তি হয়নি? এখানে আবার কি দরকার তোর? ”

ইফা কান্না থামিয়ে বলে,
“মা গো রিমশা আমার স্বামী কে পুলিশের কাছে ধরিয়ে দিয়েছে।”

নিলুফার বেগম- আলহামদুলিল্লাহ্‌ বলেন!
তারপর ইফার গালে ঠাটিয়ে একটা থাপ্পড় দিয়ে বলে,
-” আমার স্বামী বলতে লজ্জা করছে না? দাইয়ান শুধু মাত্র রিমশা’র স্বামী। তোর মতো ডায়নীর স্বামী কেন হতে যাবে? আমার আম্মাজান তার স্বামী কে শিক্ষা দিচ্ছে, সে যে ভুল করেছে তার জন্য এরকম শিক্ষা ঠিক আছে।”

ইফা ওর মায়ের পা জড়িয়ে ধরে বলে,
-“আম্মা তুমি এমন কথা বলিও না! তুমি তো আমার নিজের মা, তাহলে ঐ রিমশা’র হয়ে ওকালতি কেন করছো? তুমি রিমশা কে একটু বুঝিয়ে বলো, উনাকে যেনো থানা থেকে আমার জন্য ছাড়িয়ে আনে।”

নিলুফার বেগম পা ঝাঁড়া দিয়ে সরে এসে বলেন,
-“রিমশা যা করেছে একদম ঠিক কাজ করেছে। নিজের স্বামী কে উচিৎ শিক্ষা দিয়েছে। আজকে যদি আমি তোর মতো কলঙ্কী মেয়েকে সাপোর্ট করি। তাহলে সমাজের প্রতিটা মেয়ে আরেকটা মেয়ের সংসার ভাঙ্গার সাহস পেয়ে যাবে। আমি মা হয়ে নিজের মেয়ের প্রতি কোন সহানুভূতি দেখাচ্ছি না। কারণ তুই আমার সেই ভালো মেয়ে না। এতো ভালোই যদি হইতি, তাহলে কখনোই তাদের সাথে বেইমানি করতে পারতিস না। যাদের নুন খেয়ে বড় হয়েছিস। ”

ইফা চেঁচিয়ে বলে,
“কী এমন খারাপ করেছি আমি? একটু সুখে থাকার জন্য না হয় আমি রিমশা’র স্বামী কে পাটিয়ে বিয়ে করেছি। তাতে এমন কি ক্ষতি হয়েছে বলবে?”

নিলুফার বেগম বলে,
“তুই এক নাম্বারের স্বার্থপর, বেইমান মেয়ে! যে বাড়িতে গেছিস তাদের সাথেও তো বেইমানি করে রেখেছিস। সে খবর কি তোর বর জানে? মনে তো হয় না যে জানে, যদি জানত তাহলে তোকে কোনদিন নিজের বউ করতে সঙ্গে নিয়ে যেতো না।”

ইফা জোড়ে বলে,”মা! তুমি কিন্তু বেশি বাড়াবাড়ি করছো! সাহায্য করার হলে করো নয়তো রিমশা’র বাবা- মা কে বলো তাদের মেয়েকে বোঝাতে।”

নিলুফার বেগম- তুই তাদের সামনে দাঁড়ানোর মুখ রেখেছিস আমার? উঁহু, রাখিস নাই। তাছাড়া তুই যদি ভালো চরিত্রের মেয়ে হইতি তাহলে তোর হয়ে রিকুয়েস্ট করতাম।
কিন্তু তুই তো আগে থেকেই খারাপ। এখন না হয় দাইয়ান কে পটিয়ে পাটিয়ে চেয়ারম্যান বাড়ির বউ হয়েছিস। কিন্তু কিছুদিন আগেও তো মেম্বারের সাথে তোর কতো ভালো সম্পর্ক ছিলো? তা কি তুই অস্বীকার করতে পারবি? এসবের পরেও তুই ভাবছিস রিমশা এতো সহজেই তোকে ওর স্বামী দিয়ে দিবে?”

ইফা- আমি আমার স্বার্থের জন্য যা ইচ্ছা তা-ই করতে পারি। রিমশা’র স্বামী কেন, দরকার হলে আরো অন্যকারো স্বামী কে হাতিয়ে নিবো। তবুও আমি বড়লোক, টাকাপয়সা আওয়ালা স্বামী নিয়ে সুখে থাকতে চাই। ”

নিলুফার বলে,”হ্যা, তো যা না, শ্বশুর বাড়িতে যা! স্বামী ছাড়া সেই সুখে থাকবি তুই। আমি মনে প্রাণে চাইছি তোর আর দাইয়ানের ছাড়া-ছাড়ি হয়ে যাক। রিমশা তার লড়াই এ বিজয়ী হোক।”

ইফা রাগে গরগর করে বলে,”তোর মতো মা না থাকাই ভালো। জীবনে কোনদিন শান্তিমত রাখতে পারিশ নাই। আবার আমি শান্তিমত থাকতে চাইছি তাতেও খুশি না। নিজের মেয়ের থেকে অন্যের মেয়ের প্রতি দরদ বেশি তা-ই না? তুই থাক তোর পরোপকার নিয়ে। আমি নিজেই যাচ্ছি নিজের উপকার করতে।”

ইফা প্রস্থান করতেই নিলুফার বেগম মুখে শাড়ির আঁচল গুঁজে কান্না করতে শুরু করে। সারাজীবন কার জন্য সে এতো কষ্ট করেছে? তার সারাজীবনের কষ্টের মেয়েটা এই মূল্য দিলো?
*
*
এদিকে রিমশা’র মা মেয়েকে ফোন করে জানিয়ে দেয় ইফা এখানে এসেছিল সে খবর।

রিমশা তার বাবা- মা কে চিন্তা মুক্ত থাকতে বলে। রিমশা’র বাবা- মা’র মেয়ের উপর পূর্ণ ভরসা আছে। তারা জানে তাদের মেয়ের জন্য কোনটা উচিৎ হবে। তাদের মেয়ে সঠিক কাজ করবে।

অন্যদিকে ইফার আর বুঝতে বাকি রইলো না, তাকে সাহায্য করার লোকের বড়ই অভাব। ইশশ আজ যদি সে অবিবাহিত থাকতো তাহলে সাহায্য করার জন্য কতো ছেলে লাইনে দাঁড়িয়ে যেতো। কেন যে ঝোঁকের বসে দাইয়ান কে বিয়ে করতে গেলো? এখন যদি সত্যি ওর সাত বছরের জন্য জেল হয়ে যায় তাহলে তো সমস্যা। স্বামী ছাড়া সে কাকে নিয়ে বাহাদুরি করবে? আর ঐ বাড়ির মানুষেরা তাকে কোনদিন ও শান্তিতে থাকতে দিবে না। কয়দিন দাইয়ান ছিলো বলে চুপচাপ কাজকর্ম করেছে। এখন তো সে নেই। আর আসবে কি না তা নিয়েও সন্দেহ আছে।
তাহলে এখন নিজের নতুন ব্যবস্থা করা দরকার।
গঠনমূলক মন্তব্য না করলে আর গল্পটা কন্টিনিউয়াস করবোনা।কাদের জন্য গল্প দিবো? যারা নেক্সট নাইচ ছাড়া কিছুই বলে না তাদের জন্য? এতো কষ্ট করে গল্প লিখে আপনাদের কাছ থেকে অনেক বড় কিছু তো চাই না! সামান্য একটু গল্প সম্পর্কে মন্তব্য করবেন। এতটুকু করতে পারেন না?

চলবে…..