ভালোবাসি?
পর্ব_১০
লেখায়ঃস্বর্ণালি_আক্তার_শ্রাবণ
?
রিশান অপাকে নিয়ে তার সৎ মা আর তিশা বেগমের রুমে রেখে বাহিরে গেলো!
অপা খুব কাঁদছিলো। তিশা বেগম আর তার পাশে একজন মহিলাকে দেখে শান্ত হয়ে গেলো।গুটিগএটি পায়ে তাদের দিকে এগিয়ে যেতেই তিশা বেগম অপাকে জড়িয়ে ধরে হু হু করে কেঁদে উঠলেন।
অপা কিছুই বুঝচ্ছে না তাই চুপ হয়ে আছে।তিশা বেগম বিছানায় বসে অপাকে তার পাশে বসালেন।
বিশ্বাস করুন মা আমার এই লোকটা সাথে কোনো বিয়েটিয়ে হয় নি।লোকটাতে তো আমি চিনিই না।আমাদের বাসায় গিয়ে কিসব পেপার দেখিয়ে বলল আমাকে নাকি বাবা দাঁড়িয়ে থেকে ছয়মাস আগে ওনার সাথে বিয়ে দিয়েছে।তারপর অনেক কাগজ পত্র দেখালো।আর জানেন আপনার ছেলে কিছু বললো না।আমাকে টানতে টানতে লোকটা নিয়ে চলে এলো তবুও আপনার ছেলে কিছুই বলল না মা।দাঁড়িয়ে রইলো শুধু! অভিমানী কন্ঠে কথাগুলো বলল অপা পলকের মাকে!
আমি জানি মা..!
লোকটা কে মা?আপনাদের এ ঘরে এভাবে বন্দী করে রেখে গেলো কেনো!
পলকের মা কিছু বলার আগেই পাশের জন বলে কেঁদে উঠলেন। মা ও আমার ছেলে।আমার আগের ঘরের সন্তান।রিয়াদের নাম শুনেছো তো?ও আমার এই ঘরের ছেলে।আর রিশান আমার আগের স্বামীর সন্তান।ও যখন জানতে পেরেছে তোমার বাবা রিয়াদের সাথে তোমার বিয়ে ঠিক করছিলো কিন্তু তোমার বাবা আর রিয়াদের বাবা শত্রুতা করে একে অপরকে মেরে ফেলেছে তখন ও সম্পত্তির কথা যেনে এসব করছে।আমাদের আটকে রেখেছে যেন রিয়াদ বা পলক এ ব্যপারে না জানে।
আর কাগজ সব বানানো নকল মা সব নকল!
রিয়াদের মায়ের কথা থামতেই অপা বলে উঠলো বাবা রাজীব আংকেল তো একে অপরকে মারে নি বাবা মেরেছে।আর বাবাকে…
অপাকে সম্পুর্ণ কথা শেষ করতে দিলেন না তিশা বেগম।চোখে ইশারা করায় চুপ করে গেলো অপা।
রিয়াদের মা বললেন হ্যা জানি তোমার বাবাকে রাজীব মারে নি তবে তার সহকারীকে মারতে বলেছেন আর তিনিই সুট করে দিয়েছেন।
দুজনেই অপরাধী মা দুজনেই অপরাধী। বলেই তিনি আঁচলে মুখ গুঁজে কাঁদতে লাগলো! অপার চোখের কোনেও পানিরা এসে ভর করেছে!
সবাই কিছু সময়ের জন্য চুপচাপ হয়ে গেলো!অপা নিরবতা ভেঙে বলল মা এখন আমরা এখান থেকে মুক্ত হবো কি করে!
জানি না রে মা।তবে আমি খুব কষ্টে পলককে সব জানিয়েছি পলক কিছু না কিছু করবেই!
রিয়াদ ও তো মুম্বাই গিয়েছে!
দুশ্চিন্তায় পড়ে গেলো সবাই।কি করতে চাইছে রিশান?
?
কাজী ডাকতে এসেই ফেঁসে গেছে রিশান।পলক তার প্রত্যেকটা মুভমেন্ট ফলো করেছে!পুরাতন গোডাউনের সামনে রিশানকে পেয়েই গোডাউনে নিয়ে যায় পলক।ইচ্ছে মত মার দেয়।রিশান পেরে না উঠে গার্ডসকে কল করে বলে ঘরের তালা খুলে দিতে!
?
গোমড়ামুখে বসে আছে অপা!পলক মায়ের কোলে মাথা রেখে শুয়ে আছে!আর মিটিমিটি হাসছে!রাত প্রায় অনেক হয়ে গেছে।তাই তিশা বেগম বললেন দুজনকে খেতে আসতে।অনেক দখল গেছে তাই বিশ্রামেরও প্রয়োজন!পলকের মাথা উঠিয়ে রেখে তিনি নিচে চলে গেলো।পলক নিজের মাথা অপার কোলে রাখল।অপা কিছুটা রাগী চোখে তাকালো পলকের দিকে!
মুচকি হেসে ঘুরে শুয়ে পড়লো পলক!নিঃশ্বাসগুলো অপার গায়ে লাগতেই কেঁপে কেঁপে উঠছে অপা।
না পারছে পলকে সরিয়ে দিতে না পারছে সয়ে যেতে!
চোখমুখ শক্ত করে পলকের চুলে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে!
তিশা বেগম নিচ থেকে ডাক দিতেই দুজন উঠলো একসাথে ওমনি ঠুস করে মাথায় বাড়ি লাগলো দুজনের।অপা ভ্রু কুচকে পলকের দিকে তাকিয়ে আবার ও জোড়ে পলকের মাথায় মাথা দিয়ে বাড়ি দিলো।পলক মাথা ডলতে ডলতে অপার দিকে এগিয়ে আসতে লাগল।অপা দৌঁড়ে নিচে চলে গেলো!
খাওয়ার সময় ও পা দিয়ে খোঁচা দিতে শুরু করলো পলক।অপা রাগী ভাব নিয়ে বলল মা দেখেছেন?আপনার ছেলে পা দিয়ে আমার পায়ে খোঁচা দিচ্ছে।
পলক কাশতে শুরু করলো।তিশা বেগম মুখ টিপে হাসছেন।তবুও শান্ত গলায় বলল তুই লাগিয়ে দে দুই একটা।থাক ঘরে যেয়ে দিস।
পলকের কাশি আরো বেড়ে গেলো।
কোনো রকম দুচারটা গিলে ঘরে চলে গেলো পলক।অপা দাঁড়িয়ে রইল টেবিলের কোনায়।তিশা বেগম ধীরে সুস্থে সব গুছিয়ে রাখলো।
অপার মাথায় হাত বুলিয়ে বলল যা ঘুমাতে যা!
অপা তিশা বেগমকে জড়িয়ে ধরল।
সরি মা!সরি ফর এভরিথিং!
দূর বোকা মেয়ে মায়ের কাছে সন্তানের কোনো দোষ থাকে নাকি?যা ঘরে যা!
মা আমি আজ তোমার সাথে ঘুমাই?
তিশা বেগম কিছু বলতে যাবে তার আগেই কোত্থেকে যেনো পলক এসে বলল মা তুমি এখনো ঘুমাতে যাও না কেন?অপা আমার মাতা ব্যাথা করছে চলো মাথা টিপে দিবে!বলেই হাত ধরে টেনে ঘরের দিকে চলে গেলো।
তিশা বেগম মুচকি হেসে নিজের ঘরের দিকে গেলেন।অপা হা হয়ে তাকিয়ে রইলো পলকের দিকে!
চলবে_