#যদি_তুমি_জানতে
#ইসরাত_জাহান_তানজিলা
#পর্ব_26
সারা সন্ধ্যা আজিজ চৌধুরীর বাসার সামনে ঘুরঘুর করে তেমন লাভ হয়নি, রুপার দেখা পাওয়া যায় নি। মেয়ে টা এত অভিমানী তুরানের আগে জানা ছিলো না। রাগ অভিমান যাই করুক সেটা ভাঙানোর তো সুযোগ দিবে, সত্যি টা বুঝার চেষ্টা তো করবে অন্তত। মেয়ে মানুষ গুলো কেন যে এত বেশি বুঝে তুরান ভেবে পায় না, একটু তেই অভিমানে ফেটে পড়ে। তাও আবার যুক্তি ছাড়া অভিমান। যুক্তি ছাড়া হোক আর যাই হোক সেটা ভাঙানোর সুযোগ তো দেওয়া উচিত। এতক্ষন রুপার জন্য ওয়েট করলেও এ পর্যায়ে বিরক্ত হয়ে গেলো তুরান। নিজের রুমে এসে পড়লো। কয়েক মাস বাদে ফাইনাল এক্সাম। তুরান জানে ওর খুব ভালো একটা চাকরি হবে। ফ্যামিলির সব অভাব ঘুচে যাবে। স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছে তুরান। জীবনে হাজার বাধা বিপত্তি অতিক্রম করে হলেও লেখাপড়া টা শেষ করতে পেরেছে। দারিদ্র্যতা, অসহায়ত্বের সাথে রীতিমতো যুদ্ধ করেছে। টাকার অভাবে না খেয়ে থেকেছে, পায়ে হেঁটেছে মাইলের পর মাইল। এখন যে সব সমস্যার সমাধান হয়েছে তাও না, কিন্তু আগের মত না খেয়ে থাকতে হয় না। টিউশনির টাকা দিয়ে দিব্যি চলে যায়। ভালো চাকরি নিবে, বোন দের লেখাপড়া করিয়ে বিয়ে দিবে, সংসারের দায়িত্ব নিবে! কত দায়িত্ব তুরানের কাঁধে। তার উপর এক অনিশ্চিত ভালোবাসায় জড়িয়েছে। রুপা মেয়েটা কখনো তুরানের পরিবার সম্পর্কে তেমন জানতে চায় নি। এসব ব্যাপারে রুপা উদাসীন। তুরান তো গ্রাম থেকে উঠে আসা দরিদ্র পরিবারের ছেলে। রুপা নিশ্চিয়ই কোন এক আলালের ঘরের দুলালী। এসব নিয়ে রুপার সাথে কখনো কথা বলা হয়নি।
তুরান নানান চিন্তা ভাবনা শেষে বইয়ের দিকে মনোযোগ দিলো। মাঝে মাঝে রুম থেকে বের হয়ে রুপার রুমের দিকে তাকায়। রুপার রুমের লাইট অফ, বারান্দায়ও দেখা যায় না রুপাকে। তুরান রুপা দের বারান্দার কাছে গিয়ে তুরান কয়েক বার শীষ বাজালো। রুপার কোন সাড়া পাওয়া গেলো না। খুব বেশি শূন্যতা অনুভব করছে রুপা আবার বিরক্তও হচ্ছে।
তুরান রাতে খাওয়া দাওয়া করে শুয়ে পড়লো। রুপার উপর রাগ হচ্ছে খুব। ঘুম আসছে না তুরানের। তবুও চোখ বুঁজে শুয়ে রইলো। এক সময় গভীর ঘুমে মগ্ন হয়ে গেলো। গভীর রাতে ঘুম ভেঙে যাওয়া তুরানের অভ্যাস। আপনা- আপনি ঘুম ভেঙে যায় এই সময় টায়। তুরান উঠে বসলো। ঘুম ঘুম চোখে কিছুক্ষণ বসে থেকে রুম থেকে বের হলো।
কি আজব! রুপার রুমের লাইট অন। এত রাতে কি করছে ও? নাকি আজ বরাবরের মতো মাঝরাতে ঘুম ভাঙে নি তুরানের? তুরান নিশ্চিত হওয়ার জন্য রুমে গিয়ে ঘড়ি দেখলো। রাত 2:31 বাজে। তুরান সতর্ক পায়ে হেঁটে রুপার রুমের কাছে গেলো। জানালা গুলোও খোলা এখন। তুরান আস্তে আস্তে জানালার দিয়ে উঁকি দিলো । রুপা টেবিলের কাছে বসা। কিছু আঁকছে বোধ হয়। এত রাত পর্যন্ত সজাগ থেকে কি করছে রুপা? খুব মনোযোগ দিয়ে আঁকছে রুপা। রুপা কে কিভাবে ডাক দিবে ভেবে পাচ্ছে না তুরান। চারদিকে শুনসান নীরবতা। সবাই গভীর ঘুমে মগ্ন । কোথায়ও কোন শব্দ নেই। এমন নীরব পরিবেশে ছোট ছোট শব্দ গুলো প্রকট শোনা যায়। তার উপর বিল্ডিং এর ভিতর কথার শব্দে গমগম আওয়াজ হয়।
তুরান আস্তে শিষ বাজালো রুপার দৃষ্টি আকর্ষনের জন্য। রুপা বোধ হয় শুনতেই পায় নি। তুরান কিছুক্ষণ চুপ থেকে চাপা গলায় বলল,
-‘ রুপা।’
রুপা চারদিকে তাকালো। হঠাৎ জানালার কাছে তুরান কে দেখতে পায়। রুপা ক্ষ্যাপা বাঘিনীর মত তেড়ে এসে ঠাস করে জানালাটা আটকে দেয়। তুরান হাঁ করে তাকিয়ে রইল।
-‘ রুপা আমার একটা কথা শুনবে তো প্লীজ। এভাবে তুমি আড়াল হয়ে থাকলে আমি তোমার রাগ ভাঙাবো কিভাবে?’
রুমের ভিতর থেকে কোন সাড়া পাওয়া গেলো না। তুরান আবার বললো,
-‘ রুপা বাবু সরি। ওই মেয়েটা আমার ফ্রেন্ড। কথা বলা একদমই উচিত হয়নি ওর সাথে। তুমি যে এত অবুঝ বুঝি নি । এই যে কানে ধরেছি দেখো আর এমন হবে না।’
তুরান সত্যি সত্যি কানে ধরলো। ভাবলো হয়তো জানালা খুলবে রুপা। কিন্তু তেমন কিছুই হলো না। তুরান বুঝতে পারলো রুপা যতটা পাগলি টাইপের, ঠিক তত টাই শক্ত মেজাজের ।
রুপার রাগ ভাঙানোর জন্য তুরান একটার পর একটা কথা বলেই যাচ্ছে বিশেষ কোন লাভ হলো না। কোন রকম সাড়া দিচ্ছে না রুপা।
অনেকক্ষণ পর রুপার গলার শব্দ শোনা যাচ্ছে। রুপা চাপা স্বরে বলছে,
-‘ আমি অবুঝ আর যাই হই সেটা নিয়ে কারো ভাবতে হবে না। কালকের পর আর খুঁজে পাবেন না আমায়। পাগলা গারদে দিয়ে আসবে আমায় । সবার সামনে আপনি আমায় পাগল প্রমান করলেন। ভার্সিটি থেকে যান, টিউশনি তে যান ।কত মেয়ের সাথে এভাবে কথা বলেন , সেলফি তুলেন। কই কখনো তো আমার একটা ছবি তুললেন না! আমি তো অমন সুন্দর না, ফর্সাও না।’
ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠে রুপা। তুরান রীতিমতো ঘামতে শুরু করে। অন্য সময় হলে হয়তো হাসতো রুপার এমন কথা শুনে কিন্তু এখন তুরানের পা নিচের মাটি সরে যাচ্ছে বোধ হয়। কিসের জন্য পাগলা গারদে দিয়ে আসবে রুপা কে? রুপা হয়ত একটু এবনরমাল তাই বলে কি মেন্টাল নাকি? নাকি রুপা মিথ্যা বলে ইমোশনাল ব্লাকমেইল করছে? যদি সত্যি হয়!
তুরান তীব্র কষ্ট অনুভব করছে। গলা ধরে আসছে তুরানের, কথা বলতে পারছে না। তুরান খানিকক্ষণ চুপ থেকে কষ্টে জর্জরিত গলায় বললো,
-‘ রুপা তুমি মিথ্যা বলে মজা করবে না। কেন পাগলা গারদে রাখবে তোমায়? এমন যদি সিদ্ধান্ত কেউ নিয়ে থাকে তাহলে আমি তোমায় নিয়ে এখন পালিয়ে যাবো।’
রুমের ভিতর থেকে কোন সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না। তুরান পাগলের মত বিলাপ করতে করতে বললো,
-‘ রুপা কথা বলো! কথা বলছো না কেন? তুমি বুঝতে পারছো না আমার মনের অবস্থা? তুমি যা শাস্তি দিবা আমি তাই মাথা পেতে নিবো। আমার ভুল হয়েছে খুব। তুমি কি আমায় ভালোবাসো না? তুমি কি আমায় ছাড়া থাকতে পারবে?’
তুরান কিছুক্ষণ চুপ থেকে তীব্রতর হতাশ হয়ে বললো,
-‘ আরে তুমি পাগলা গারদে থাকবে কেন? কি আজব কথা! আমি তোমায় বিয়ে করে নিয়ে যাবো।’
তুরান জানালায় আঘাত করে জোরেসোড়ে। ক্ষুব্ধ গলায় বলল,
-‘ আমার কথা কানে যাচ্ছে না তোমার? বাড়াবাড়ি করছো কিন্তু তুমি। আরে কি এমন হয়েছে যে তুমি এমন করছো? তুমি এমন চুপ থাকলে আমি কেমন করবো?’
তুরান এবার আর নিজেকে শান্ত রাখতে পারলো না। শরীরের সমস্ত শরীর দিয়ে জানালায় আঘাত করলো। চেঁচিয়ে বললো,
-‘ মজা নিচ্ছো তুমি আমার সাথে? তোমায় সামনে পেলে এখন আমি তোমার হাত-পা ভেঙে দিতাম। মুখে কথা বলতে কি এমন প্রবলেম তোমার? পাগল পেয়েছো আমায়?’
আজিজ চৌধুরী আর সাহেলা বেগম দৌড়ে রুপার রুমের দিকে আসছে। আজিজ চৌধুরী চেঁচিয়ে বললো,
-‘ কে ওখানে কে? ‘
তুরান কোন রকম দৌড়ে পালালো।
চলবে…
#যদি_তুমি_জানতে
#ইসরাত_জাহান_তানজিলা
#পর্ব_27
সারা রাত ঘুম হলো না তুরানের। এ রকম সিচুয়েশনে ঘুম আসে না। রুপার আচরণে খুব বেশি বিরক্ত হয়েছে তুরান। এতটা অবুঝ হলে কিভাবে চলে? আর অন্য দিকে দুঃশ্চিন্তা আর হতাশায় তুরানের অবস্থা শোচনীয়। কিসের জন্য পাগলা গারদে রাখবে রুপাকে? এ রকম কোন সিচুয়েশন হলে রুপাকে নিয়ে দরকার হলে পালিয়ে যাবে। রুপা যদি বিষয়টা তুরানের সাথে শেয়ার না করে তাহলে তুরানের কি করার আছে? কিন্তু রুপা কথাটা সত্যি কিনা মিথ্যা বলেছে এটাই এখন ভাবার বিষয়। সাহেলা বেগম আর আজিজ চৌধুরী যথেষ্ট সচেতন আর টাকাওয়ালা মানুষ। তাঁরা কি রুপা কে পাগলা গারদে দিয়ে আসবে? তাছাড়া রুপার তো গার্ডিয়ান আছে। তুরানের মাথায় কিছুই খেলছে না। রুপার সাথে কথা না বললে কিছুই জানা যাবে না। রাতের সেই ভয়ংকর পরিস্থিতির কথা ভেবে শিউরে উঠে তুরান। একবার যদি সাহেলা বেগম আর আজিজ চৌধুরীর কাছে ধরা খেয়ে যেতো তাহলে যে কি হতো কে জানে!
ফযরের আজান দেওয়ার সাথে সাথে ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নেয় তুরান। চোখ গুলো ভয়ংকর রকমের লাল হয়ে আছে। মুখটা ফ্যাকাশে দেখাচ্ছে আর চিন্তার সূক্ষ্ম রেখা দেখা দিচ্ছে কপালে। শরীরও খুব ক্লান্ত লাগছে তুরানের।
তুরান যে স্টুডেন্ট পড়ায় কালকে তাঁদের পরীক্ষা। সুতরাং আজকে পড়াতে না গেলে টিউশনি থাকবে না তাও শিওর তুরান। যাওয়ার আগে রুপার সাথে কথা বলে সম্পূর্ণ টা না জানলে কিছু তেই মন শান্ত হবে না তুরানের। নাকি সাহেলা বেগমের কাছে জিজ্ঞেস করবে? পরক্ষনে নিজের বিবেকের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে যায় তুরান! সাহেলা বেগমের কাছে এসব জিজ্ঞেস করা অযৌক্তিক। এমনিতেই ব্যাচেলর দের কেউ বাসা ভাড়া দিতে চায় না, সামান্য দোষ ত্রুটি পেলেই বাসা থেকে নামিয়ে দিতে দুইবার ভাবে না । কারন তাঁদের ভাড়াটিয়ার অভাব নেই, কিন্তু ব্যাচেলর দের এমন বাসার খুব অভাব।
তুরান উদ্ভ্রান্তের মত রুম থেকে বের হয়। রুপার দেখা পাওয়া যায় কিনা এই ভেবে। রিলেশনের এই পর্যায়ে এসে তুরান বুঝেছে আর যাই হোক একটা ম্যাচিউর মেয়ের সাথে প্রেম করা উচিত। রুপার অবুঝ পাগলামি গুলো ভালোলাগে তুরানের, কোন কিছুতেই বিরক্ত হয় না তুরান। তাই বলে এমন অযোক্তিক পাগলামি করবে। তুরানের ব্রেনের উপর খুব বেশি ডিপ্রেশন সৃষ্টি হচ্ছে।
রুপা বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে। হাতে চায়ের মগ। খুব স্বাভাবিক ভঙ্গিতে চা খাচ্ছে। রুপার ভাব দেখে বুঝা যায় সে খুব নিশ্চিতে আছে। রুপার এমন কান্ড দেখে অবাক না হয়ে পারে না তুরান। ইমোশনাল ব্লাকমেইল করছে রুপা? রুপা কে ঠিক বুঝে উঠতে পারছে না তুরান। তুরান বিভিন্ন ভাবে রুপা কে ইশারা করার চেষ্টা করলো, কিন্তু রুপা ফিরে তাকাচ্ছে না। হয়ত রুপা কথা বলতে চাচ্ছে না তাই কোন রেসপন্স করছে না। তুরান বরাবরের মতো একটা চিরকুট ছুঁড়ে ফেললো বারান্দার দিকে। এভাবে চিঠি দিলে রুপা খুব বেশি খুশি হতো। তুরান চরম অবাক হয়ে গেলো! রুপা ফ্লোর থেকে কাগজটা তুলে ছিঁড়ে টুকরো টুকরো করে ফেলে দিলো। আর তুরানের দিকে বিরক্তিকর দৃষ্টিতে তাকালো। নতুন রুপা কে দেখছে যেন তুরান। একটা মানুষ সামান্য একটা বিষয় নিয়ে এত রাগ করতে পারে জানা ছিলো না তুরানের।
তুরানের রাগ হলো ,ঠিক রাগ না খানিকটা অভিমানও। রাগ ,অভিযানের মিশ্রন যাকে বলে। এতটা ইগ্নোর করা কি রুপার ঠিক হয়েছে? তুরান হতাশ হয়ে রুমে চলে গেলো। তুরানের এখন মনে হচ্ছে রাতে রুপা যে বলেছিলো যে ওকে পাগলা গারদে রেখে আসবে বিষয়টা মিথ্যা।
তুরান রুপার এমন অনাকাঙ্ক্ষিত আচরনে খুব বেশি কষ্ট পায়। তুরান তাড়াহুড়ো করে রেডী হয়ে টিউশনির উদ্দেশ্য রওয়ানা হয় । টিউশনি শেষে ভার্সিটি তে যাবে সেখান থেকে দুপুরের পর আসবে। তুরান বারান্দার দিকে না তাকিয়ে সোজা চলে গেলো।
রুপা বারান্দায় দাঁড়িয়ে তুরানের চলে যাওয়া দেখছে। তুরান চলে যাওয়ার পর রুপা ফ্লোর থেকে কাগজের টুকরো গুলো তুলে মিলানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু পারল না । রুপার নিজের গালের উপর দুইটা চড় দিতে ইচ্ছে করলো । কি দরকার ছিল ঢং করে কাগজটা ছিঁড়ে ফেলার? রুপা মনে মনে বেশ মজা পাচ্ছে। তুরান তাহলে সত্যিই বিশ্বাস করেছে যে রুপা কে পাগলা গারদে রেখে আসবে। পাগলের মত করেছিলো তুরান । একটুর জন্য ধরা খায় নি! আনমনে হাসছে রুপা। এবার বুঝো রং ঢং করে মেয়েদের সাথে কথা বলার ফল! রুপা মনে মনে কঠিন প্রতিজ্ঞা করলো যে এরকম শাস্তি আরও দুই দিন অব্যাহত থাকবে। জীবনে আর যেন কখনো মেয়েদের সাথে কথা বলা তো দূরের কথা তাকানোর সাহসও যেন না পায়! রুপা কে চিনতে ভুল করেছে। এবার বুঝুক মজা!
তুরান চলে যাওয়ার কিছুক্ষণ ও সাহেলা বেগম আর আজিজ চৌধুরীও চলে গেলো । বাসায় একা একা শূন্যতা অনুভব করছে রুপা। তুরানকে অনেক বেশি মিস করছে কিন্তু তুরানের উপর রাগ কমছে না । রুপার রাগটা খুব দীর্ঘস্থায়ী। হঠাৎ রুপার নিজের রুমটা গোছাতে ইচ্ছা করলো। এর আগে কখনো এমন ইচ্ছা করে নি। সব সময় সাহেলা বেগম রুম গুছিয়ে দিয়েছে। রুম গুছিয়ে টাইম পাস করতে চাচ্ছে বোধ হয়। বোরিং সময় গুলো সহজে কাটতে চায় না। রুপা রুম গুছিয়ে গেটের সামনে গেলো । যদিও রুপার গেটের বাইরে বেরুনো নিষেধ। দাড়োয়ান কে বুঝিয়ে কোন রকম বের হলো। সামনেই ফুসকা পাওয়া যায়। হঠাৎ রুপার কে জানি ইচ্ছা করছে ফুসকা খেতে ।
সাহেলা বেগম হসপিটাল থেকে এসে যখন দেখবে রুম পরিপাটি করে গোছানো তখন একদম সারপ্রাইজড হবে। রুপা রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে ফুসকা খাচ্ছে। হঠাৎ তুরান কে দেখে চমকে যায় । এত তাড়াতাড়ি ফিরে আসছে কেন তুরান? অসুস্থ দেখাচ্ছে তুরান কে।
তুরানও হঠাৎ রুপা কে দেখতে পায় । তুরান আস্তে আস্তে হেঁটে রুপার কাছে আসে। রুপা খাওয়া থামিয়ে আড় চোখে তুরানের দিকে তাকাচ্ছে। কেমন যেন উস্কখুস্ক দেখাচ্ছে তুরান কে। তুরান কথা না বলে রুপার পাশে দাঁড়িয়ে রইলো। রুপা হয়ত আশা করেছিলো তুরান কিছু বলবে। কাউকে সামনে রেখে এভাবে একা একা খাওয়া বিষয়টা বেশ বিব্রতকর। কিন্তু রুপা তো প্রতিজ্ঞা করছে তুরানের সাথে কথা বলবে,এখন সাধবে কি করে?
রুপা কি যেন ভেবে বলে,
-‘ খাবেন?’
তুরান দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে বললো,
-‘ না তুমি খাও।’
-‘ এত তাড়াতাড়ি ফিরলেন যে?’
-‘ ভার্সিটি তে যায় নি। শরীর খারাপ লাগছে খুব। টিউশনি করে এসে পরেছি।’
তুরান পকেট থেকে মানিব্যাগ বের করে ফুসকাওয়ালার টাকা টা শোধ করে গেটের ভিতরে ঢুকে গেলো। রুপার দিকে একবার তাকালো না । তুরানের এমন আচরণে বুকের মাঝে চিনচিনে ব্যথা অনুভব করলো রুপা। তুরান কখনো এমন আচরণ করে নি। নাকি তুরানের শরীর খারাপ লাগছে বলে? তুরানের এমন সামান্য অসুস্থতায় রুপা কষ্ট অনুভব করলো। রুপা ফুসকার প্লেট টা রেখে দ্রুত বাসায় চলে গেলো ।
বাসায় বসে ছটফট করতে লাগলো রুপার । কথা বলতে ইচ্ছে করছে তুরানের সাথে। রুপা দ্রুত তুরানের রুমের দিকে গেলো । রুমের দরজা ভিতর থেকে লক করা, এমনকি জানালা গুলোও সব আটকানো। রুপা কলিং বেল চাপ দিলো, ভিতর থেকে কোন রেসপন্স নেই। রুপা ডাকতে লাগলো তুরান কে। তুরান রাতের ঘটনার জন্য প্রতিশোধ নিচ্ছে নাকি?
প্রায় দুই ঘন্টা তুরানের রুমের কাছে দাঁড়িয়ে রইলো রুপা। দরজায় কতগুলো লাথিও দিলো , কিন্তু কোন সাড়া নেই। তুরান কি সেন্সলেস হয়ে গেলো নাকি? একটু পরে রুপার মনে হলো সেন্সলেস হলে কেউ দরজা- জানালা বন্ধ করে হয় না। এ তো দেখছি আমার থেকে এক কাঠি সরেস শয়তানিতে।
সাহেলা বেগম কে বাসায় আসতে দেখে রুপা নিজের রুমে চলে গেল।
চলবে…