প্রীতিলতা আসবে বলে
লেখিকা:আফরিন ইসলাম
সিজন:৪
পার্ট :৩
সেই সাত জনের মধ্যে একজন ছিল ছদ্দবেশে থাকা আমার চাচা দ্বীপ চৌধুরী ৷এ পর্যন্ত আমার হাতে খুন হওয়া কর্নেল ওসমান ,ডাঃ শাকিল ,ব্যারিস্টার সোহেল ,এমপি সাঈদ ,আশরাফ খান ও তার ম্যানেজার ৷আমরা কেউ তখন জানতাম না আমাদের চারপাশে ঘুড়ে বেড়ানো এই ব্যক্তি আসলে আমার চাচা মিহান ৷বাবা মাকে মারার পর মিহান চৌধুরী বাবার সামনে যায় তারপর বলে
অতীত
কি আয়ান চৌধুরী ৷কোথায় তোর পাওয়ার ৷সব শেষ তো ৷এই আমাকে দেখ ৷আমি মিহান চৌধুরী ৷ তাহলে কি ভাবছিস যে মরে গেছে সে কে ৷সে তোর প্রানের ভাই দ্বীপ ৷মেরে দিয়েছি ওকে ৷আমিও ডায়না কে ভালোবাসতাম ৷কিন্তু ডায়না দ্বীপকে ভালোবাসতো ৷কেন রে দুই জনের চেহারা সবই তো এক ৷তাহলে দ্বীপকে কেন ভালোবাসতে গেল ৷হাজার চেষ্টা করেও ডায়নাকে দ্বীপের থেকে আলাদা করতে পারি নি ৷ শুধু সময়ের অপেক্ষাতে ছিলাম ৷ আর তুই আমাদের গোপন ব্যবসার কথা জেনে গিয়েছিলি ৷আমাদের বিরুদ্ধে প্রমান জোগার করতে ছিলে ৷আমি যে তোর ব্যবসার কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছি ৷তাও জেনে বসে ছিলি ৷মাথায় তখন কাজ করছিল না আমার ৷তখন তোকে শেষ করার চক্রান্ত করি ৷কিন্তু ঐ দ্বীপ আবারো চলে এলো আমার কাজের মাঝে ৷বাবার আর আমার প্লানের কথা জেনে গেল ৷তোকে বাচাঁতে আসছিল ৷রাস্তায় দিলাম একদম গাড়ী চাপাঁ দিয়ে ৷আর নাটক করলাম আমি মরে গেছি ৷বাবা চেয়েও কিছু করতে পারলো না ৷কি আর করবে বল ৷ সে নিজেও তো টাকার জন্য নিজের মা বাবা হারা বড় ভাইকে খুন করেছে ৷মানে তোর আসল বাবাকে খুন করেছে ৷ তারপর আমাদের মাকে টাকার জন্য বিয়ে করে নিয়ে ছিল ৷ অন্যদিকে আমি দ্বীপকে খুন করলাম ৷বিনিময়ে ডায়নাকে পেলাম ৷দিহানকেও পেলাম নিজের ছেলে হিসেবে ৷ তারপর কি হলো জানো ৷এই যে আমাদের মা সিসেস মমতা বেগম ৷উনি একদিন ভুল করেই আমার আর বাবার কথা শুনে ফেললো ৷ বুড়িটা ছেলে হারিয়ে কাতর হলেও পুরো পাগল হয় নি ৷দৌড়ে যাচ্ছিল তোকে সব বলতে ৷কিন্তু যেতে আর পারলো কই ৷তার আগেই আমার যা করার করে দিলাম ৷ আর আজ তোকে শেষ করলাম ৷
অতঃপর ডাঃ শাকিল চারুর কাছে যেয়ে বললো ৷এর জন্য আমার হাসপাতালে কোনো দামই ছিল না ৷সবাই শুধু চারু চারু আর চারু করতো ৷এমনকি হাসপাতালের সব দায়িত্ব ওর হাতে দিয়ে দিল ৷ ওর জন্য হাসপাতাল থেকে টাকা আত্মসাৎ করতে পারতে ছিলাম না ৷ ওর থেকে কোন দিক থেকে আমার যোগ্যতা কম ৷শেষ করে দিলাম ওকে ৷এবার যদি কোনো ভাবে এদের লাশ কেউ খুজেও পায় ৷তাহলে ভুয়া পোস্টমর্ডাম রিপোর্ট করে দেব ৷
পাশ থেকে মিহান বলল পোস্টমর্ডাম তো দূর ৷এদের লাশটাও কেউ খুজে পাবে না ৷
আশরাফ খান শাকিলের কাধেঁ হাত রেখে বলল
সব ডিল এই আয়ান নিয়ে নিচ্ছিলো ৷আমার ব্যবসায় শুধু লস আর লস ৷ ওর কোম্পনীতে আমার লোক ঢুকিয়ে সব তথ্য কালেক্ট করতে ছিলাম ৷ওর কোম্পানীর নাম করে গোপনে কোটি টাকা হাতিয়ে নিলাম ৷ তার মধ্যে ওর ঘরে এত সুন্দরী বউ ৷মাথাই খারাপ হয়ে যাচ্ছিলো আমার ৷ ভাবতেই পারি নি কখনো এক ঢিলে এভাবে দুই পাখি মারতে পারবো ৷আর দেখো সাথে আমার ম্যানেজার এমদাদ্ও কিছুটা এনজয় করে নিল ৷কথা গুলো বলেই ওরা হাসতে লাগলো ৷
পাশ থেকে হাসতে হাসতে সাঈদ বলল
চারু নামের এই মালটার উপর অনেক বছর আগে থেকেই নজর ছিল ৷কিন্তু এই আয়ানের জন্য কিছু করতে পারি নি ৷তার মধ্যে আমার মাদকের ব্যবসার ব্যাপারেও জেনে গিয়ে ছিল ৷আর আমার ভাই তো আছেই ৷পুলিশ পর্যন্ত যদি যায় তাহলে ওসমান আর সোহেল তো আছেই ৷সব সামলে নেবে ৷তারপর ওরা হাসতে লাগলো শয়তানি হাসি ৷
একটু পর শাকিল বলল যা করার তাড়াতাড়ি করতে হবে ৷ বাড়ীতে আগুন লাগাও তাড়াতাড়ি ৷ নইলে লাশ কোথায় গুম করবো ৷আর ফাইলটা তাড়াতাড়ি নাও ৷পাশের টেবিলে থাকা একটা লাল ফাইল ওরা তুলে নিল ৷তারপর বেড়িয়ে গেল ৷
ওরা চলে যাওয়ার পর প্রীতি বেড়িয়ে আসে আস্তে করে ৷মা বাবা কেউ আর বেচেঁ নেই ৷মায়ের শেষ চিহ্ন হিসেবে গলার চেইনটা ৷আর বাবার হাতের আংটি খুলে নেয় প্রীতিলতা ৷ মারা যাওয়া ছোট ভাইটাকে শেষ বারের মতো আদর করে দেয় প্রীতি ৷অতঃপর বেড়িয়ে যায় পেছনের গেট থেকে ৷সেই দিন ফিরে আসার এক আকুল আবেদন দেখে ছিল প্রীতি তার মা বাবার চোখে ৷বাবার চোখে দেখে ছিল নিজের স্ত্রী আর সন্তানকে বাচাঁতে না পারার কষ্ট ৷আর মায়ের চোখে দেখে ছিল চোখের সামনে স্বামী সন্তান হারানোর কষ্ট ৷রক্তমাখা হাতে ঐ দিন নিজের চোখের পানি মুছতে মুছতে প্রীতি নিজের বাড়ী থেকে বের হয়ে যায় ৷বারবার সেইদিন পেছনে ঘুড়ে তাকিয়ে ছিল ৷এই হয়তো বাবা ডেকে বলবে
প্রীতি মা একা বাইরে যেও না ৷রাস্তা হারিয়ে ফেলবে ৷কিন্তু না কেউ ডাকলো না ৷বাড়ীটার ভেতর থেকে কেউ যেন বলে উঠলো ৷ফিরে আসিস মা ৷আমাদের কাছে আবার ফিরে আসিস ৷ আমরা তোর অপেক্ষায় থাকবো ৷
প্রীতি খালি পায়ে দৌড়াতে লাগলো ৷লক্ষ্য তার একটাই ভাই আবেশকে বাচাঁতে হবে ৷ভাইকে সবটা জানাতে হবে ৷কিন্তু স্কুলের গেটের কিছুটা কাছে যেতেই প্রীতি দেখতে পেল মিহান ভাইকে গাড়ীতে তুলেছে ৷প্রীতি তার ছোট পায়ে গাড়ীর পেছনে ছুটতে লাগলো ৷কিন্তু বেশি দূর যেতে পারলো না ৷রাস্তায় পরে থাকা ইটের সাথে বেধে নিচে পরে গেল ৷ রাস্তায় পরে গাল কেটে রক্ত বের হতে লাগলো ৷কিন্তু আজ আর কেউ এসে বাবার মতো প্রীতিকে আদর করে তুললো না ৷প্রীতিও আর সব সময়ের মতো কাদঁলো না ৷ প্রীতি মায়ের চেইনের সাথে থাকা লকেটের মধ্যে মেমোরি কার্ডটা রাখলো ৷তারপর বাবার আংটিটা চেইনের ভেতর ঢুকিয়ে নিল ৷ চেইনটা গলায় পরে নিল সে ৷ অতঃপর আবার দৌড়াতে লাগলো বাড়ীর দিকে ৷দৌড়াতে দৌড়াতে প্রীতি বাড়ীর কাছে পৌছে গেল ৷কিন্তু গেট পেরিয়ে আর ভেতরে ঢুকতে পারলো না ৷বাড়ীর পেছনে কিছু দিন আগেই আয়ান একটা গর্ত করে ছিল কাজের জন্য ৷ঐ গর্তের মধ্যে তার মা বাবা আর ভাইকে ফেলা হচ্ছে ৷ওরা এখন ছয়জন আছে ৷কিন্তু এর মধ্যে এক জনের চেহারা প্রীতি দেখতে পেল না ৷বাকিরা সবাই তার মা বাবাকে হত্যা করেছে ৷শেষে যখন তার বাবাকে লাথি মেরে গর্তের মধ্যে ফেলে দেওয়া হলো ৷তখন প্রীতি আর নিজেকে আটকাতে পারে নি ৷আব্বু বলে একটা জোড়ে চিৎকার করে ওঠে ৷পেছনের গেট ধরে কাদঁতে থাকে প্রীতিলতা ৷আর এতক্ষনে ওরাও প্রীতিকে দেখে ফেলে ৷ওরা প্রীতিকে দেখে দৌড়ে আসে ৷প্রীতি ওদের আসতে দেখে আবার দৌড় লাগায় ৷এবার নিজেকে বাচাঁনোর এক প্রানপন চেষ্টা করে যায় সে ৷
প্রীতি দৌড়াতে থাকে খুব জোড়ে ৷কেননা পেছনে কালো রংয়ের গাড়ীটা যে ধেয়ে আসছে ৷প্রীতি পেছনে তাকিয়ে গাড়ীটা দেখে ৷অনেকটা দূরে আছে গাড়ীটা ৷কিন্তু হঠাৎ করে প্রচন্ড স্প্রীডে আসা একটা গাড়ীর ধাক্কায় প্রীতি ছিটকে পরে রাস্তার পাশে ৷গাড়ী থেকে নেমে আসে মিহান চৌধুরী ৷প্রীতিলতা তখন রক্তাক্ত অবস্থায় পরে আছে রাস্তায় ৷প্রীতির পেছনে আসা কালো গাড়ীটাও চলে এসেছে ৷কর্নেল ওসমান আর আশরাফ চলে এসেছে ৷মিহান চৌধুরীর হাতে একটা লোহার রড ৷ ওরা হাসছে প্রীতিকে দেখে ৷প্রীতি অতি কষ্টে বলে ওঠে
আমায় মেরো না কাকু ৷আমায় ছেড়ে দাও ৷আমার খুব কষ্ট হচ্ছে ৷মাথায় খুব ব্যথা করছে ৷আমাকে আর ভাইকে ছেড়ে দাও ৷আমরা কাউকে কিছু বলবো না ৷আমাদের ছেড়ে দাও কাকু ৷প্রীতি দুই চোখের পানি ছেড়ে দিল ৷ মা বাবা হারা মেয়েটার সামনে দাড়িয়ে কর্নেল ওসমান বলল
খুব বাচাঁর শখ না ৷ছেড়ে দিতে বলছিস তো ৷যা তোকে ছেড়ে দিলাম ৷মিহানের হাত থেকে লোহার রডটা নিয়ে সজোরে আঘাত করলো প্রীতির মাথা বরাবর ৷আঘাতের পর পর প্রীতির আওয়াজ বন্ধ হয়ে গেল ৷প্রীতির বাচঁতে চাওয়া চোখ দুটো বন্ধ হয়ে গেল ৷কান আর মুখ থেকে বেড়িয়ে এলো লাল রক্ত ৷
চলবে