প্রীতিলতা আসবে বলে ৪ পর্ব-০৯

0
1249

প্রীতিলতা আসবে বলে
লেখিকা:আফরিন ইসলাম
সিজন :৪
পার্ট : ৯

নিজের বাড়ীতে দ্রুত বেগে প্রীতিলতা প্রবেশ করলো ৷পুলিশের গাড়ী তাকে দিয়ে গেছে ৷জনগনের চাপে পরে উচ্চ মহল প্রীতিকে দুই দিনের জন্য মুক্ত করেছে ৷এই দুই দিনের মধ্যে তাকে সব কাজ করতে হবে ৷আর সে যাতে কাউকে খুন করতে না পারে তাই তার বাড়ীকে পুলিশ পাহারা দিবে ৷প্রীতিলতাকে বাড়ীতে আসতে দেখে মেয়েরা অবাক ৷প্রীতি কারো সাথে কোনো কথা বলল না ৷দৌড়ে নিজের ঘরে চলে গেল ৷ঘরটা ধুলোয় ভরে আছে ৷প্রীতি মেয়েদের তার ঘরে আসতে নিষেধ করে ছিল ৷তাই হয়তো তারা আসে নি ৷অন্য দিকে প্রীতি গ্রেফতার হওয়ার পর পুলিশ তার ঘরটা একদম শেষ করে দিয়েছে ৷পুরো ঘর অগোছালো হয়ে পরে আছে ৷প্রীতি নিজের ঘরের দরজা বন্ধ করে দিল ৷ প্রীতি তার ল্যাপটপ অন করলো ৷যেটা এতদিন পুলিশের কাছে ছিল ৷কিন্তু তারা কোনো তথ্য বের করতে পারে নি এর থেকে ৷প্রীতি ল্যাপটপ অন করলো ৷যেটা এতদিন কেউ অন করতেই পারে নি ৷প্রীতি প্রচন্ড দ্রুত বেগে কাজ করতে করতে বলল

হাতে সময় নেই ৷না জানি মেয়ে গুলো কেমন আছে ৷ওদের বাচাঁতে হবে ৷নইলে সবার জীবন শেষ হয়ে যাবে ৷ আমি ওদের শেষ হতে দিতে পারি না এই ভাবে

প্রীতিলতা ল্যাপটপে কাজ করতে করতে উঠে দাড়ালো ৷ ৷তারপর নিজের জানালার কাছে গেল ৷জানালার পর্দা লাগানোর পাইপটা খুলে নিল ৷তারপর পাইপের ভেতর একটা আঙ্গুল ঢুকিয়ে দিল ৷একটু খানি কাগজের টুকরো বেড়িয়ে এলো ৷প্রীতি আস্তে আস্তে কাগজ গুলো বের করতে লাগলো ৷চিকন পাইপের ভেতর থেকে চার পাচঁটা কাগজ বের হয়ে আসলো ৷ যা অতি সুন্দর করে ভাজ করে ঢুকানো হয়েছে ৷প্রীতিলতা কাগজ গুলো সুন্দর করে আবার পরে নিল ৷ তারপর টুকরো টুকরো করে ফেলে দিল ৷ পকেট থেকে নিজের ফোন বের করে পুলিশ কমিশনারকে কল করলো ৷ওপাশ থেকে ফোন রিসিভ হতেই প্রীতি বলল

স্যার যত তাড়াতাড়ি পারেন পুলিশ ফোর্স তৈরি করুন ৷ওপর পক্ষ হয়তো এখনো জানেনা আমি মুক্ত হয়েছি ৷আমাদের গোপনে সবটা করতে হবে ৷আপনি শুধু বাহিনী তৈরি করুন ৷

প্রীতিলতা যে মুক্ত হয়েছে তা পাবলিক করা হয় নি ৷জনগনকে প্রীতি শান্ত থাকতে বলেছে ৷আর যাদের সন্তান হারিয়ে গেছে তাদের উদ্দেশ্যে ধৈর্য ধরতে বলেছে ৷তারা তাদের সন্তান পাবে এমন শান্তনাও দিয়েছে ৷কিন্তু পুলিশ জানে প্রীতিকে ছাড়া তারা কিছু করতে পারবে না ৷তাই বাধ্য হয়ে প্রীতির কথা মেনে নেয় ৷আর দুই দিনের জন্য গোপনে তাকে ছাড়া হয় ৷কিন্তু খবরটা পাবলিক করতে প্রীতি নিষেধ করে ৷কেননা তাহলে পাচারকারীরা আরো সাধধান হয়ে যাবে ৷ প্রীতিলতা তার ল্যাপটপ নিয়ে আবার কাজ করতে লাগলো ৷একটা সময় তার মুখে বিশ্ব জয়ের হাসি ফুটে ওঠে ৷তারপর একা একা বলে ওঠে

এবার তুমি কোথায় যাবে ৷তুমি যেখানে যাবে আমি সেখানেই যাবো ৷তোমার অজান্তেই তোমার ফোন ,ল্যাপটপ ,কম্পিউটার সব কিছু আমার দখলে ৷এবারের লুকোচুরি খেলাটা বন্ধ করা উচিত ৷আমার চোখ ফাকিঁ দিয়ে আর এক পা তুমি নড়তে পারবে না ৷ এবার তুমি দেখবে হ্যাকার চাইলে কি কি করতে পারে ৷ একজন মানুষের স্বাভাবিক জীবন নিজের মুঠোয় কি করে আনতে হয় তা আর যাই হোক হ্যাকার জানে ৷ তোমার জীবন আমি নরক করে দেব দুই দিনে ৷প্রীতিলতা এবার ল্যাপটপ অফ করে দিল ৷

রাত ঘড়িতে আট টা ৷প্রীতি কমিশনারের সাথে কথা বলছে ৷

স্যার আমাদের এখনই বের হতে হবে ৷মেয়েদের জীবন ঝুকিতে আছে ৷

আমাদের ফোর্স রেডি ৷তোমার কথা মতো সব কিছুর ব্যবস্থা করা আছে ৷

আমিও রেডি স্যার ৷আমি আসছি এখনি ৷প্রীতিলতা নিজের কোমরে দুইটা বন্দুক ভরে নিল ৷নিজের পায়ের ভেতর লুকিয়ে নিল ধারালো অস্ত্র ৷নিজেকে সঠিক ভাবে সজ্জিত করে আয়নায় দেখে নিল ৷আয়নায় নিজের প্রতিবিম্বটাতে একবার হাত বুলিয়ে নিল ৷তারপর বলল

আমার ছায়া তুই কখনোই আমার হইলি না ৷তোর সাথে হয়তো আর দেখা হবে না ৷তোর দিকে তাকিয়ে হয়তো নিজেকে আর পাপী মনে হবে না ৷তোর দিকে তাকিয়ে হয়তো নিজেকে আর কুৎসিত মনে হবে না ৷কেন যেন আজ তোকে প্রান ভরে দেখতে ইচ্ছে করছে ৷কিন্তু সময় আজকেও হাতে নেই ৷প্রীতিলতা নিজের প্রতিবিম্বটা ছুয়ে নিজের ঘর থেকে বের হয়ে যায় ৷ নিচে নামতেই দেখে মেয়ে গুলো দাড়িয়ে আছে ৷প্রীতিলতা ওদের দেখে হাসে ৷কেন যেন আজ ওদের বড্ড কাছে টানতে ইচ্ছে করছে ৷কেন যেন বলতে ইচ্ছে করছে তোমরা ভালো থেকো ৷প্রীতিকে দেখে একটা মেয়ে বলল

কোথায় যাচ্ছো আপু ৷ সারাদিনে আমাদের সাথে একটু কথাও বলো নি ৷ আমাদের সাথে অভিমান করেছো ৷

মেয়েটার মাথায় প্রীতিলতা হাত বুলিয়ে দেয় ৷তারপর বলে
না রে পাগলি আমি অভিমান করি নি ৷আজ জীবনের সব থেকে বড় কাজটা আছে ৷সেই কাজটাই করতে যাচ্ছি ৷তারপর প্রীতিলতা নিজের পকেট থেকে একটা চাবি বের করলো ৷ চাবিটা একটা মেয়ের হাতে দিয়ে বলল

আজ থেকে এই বাড়ীটা তোমার দায়িত্বে ৷আমি মদি আর না ফিরে আসি ৷তাহলে ঘরটা বিনা বাধায় ব্যবহার করো ৷আমি না থাকায় তোমাদের কোনো অসুবিধা হবে না ৷আমি সব ব্যবস্থা আগেই করে রেখে ছিলাম ৷ভালো থেকো সবাই ৷আর পারলে এই খারাপ মানুষটাকে ক্ষমা করো ৷জীবনে রাস্তা অনেক কঠিন ৷কেন যেন মনে হচ্ছে এইবার আর ফিরবো না ৷আমি আসি ৷মেয়ে গুলো প্রীতিকে ঝাপটে ধরে হাউমাউ করে কাদঁতে লাগলো ৷প্রীতি নরম হলো না ৷ওদের ছাড়িয়ে হাটাঁ দিল বাইরের দিকে ৷মেয়ে গুলো চেয়েও আটকাতে পারলো না ৷আস্তে আস্তে প্রীতিলতা তাদের দৃষ্টির বাইরে চলে গেল ৷

প্রীতিলতা গাড়ীতে বসে আছে ৷ড্রাইভার তার কথা অনুযায়ী গাড়ী চালাচ্ছে ৷ দিক নির্দেশনা অনুযায়ী গাড়ী থামলো একটা নিরব জায়গায় ৷ রাত গভীর হয়ে গেছে ৷ প্রীতিলতা আগে থেকেই সবাইকে গাড়ীর লাইট ব্যবহার করতে বারন করে ছিল ৷প্রীতিলতা কিছু ফোর্সদের বলল

আপনারা বাংলো থেকে দূরের গাছে নিজেদের নিশানা নিয়ে থাকবেন ৷কোনো ভাবে নিচে থাকা ফোর্সদের ওপর হামলা হলে বা কোনো সমস্যা হলে ৷আপনারা বিনা বাধায় গুলি ছুড়বেন৷তারপর তিনজন অফিসারকে বলল

আমি আপনাদের সকল ইনফরমেশন দেব ৷আপনারা সেই অনুযায়ী কাজ করবেন ৷ওরা যেন কোনো ভাবেই বুঝতে না পারে ওকে ৷আমি নিজে বাংলোর ভেতরে যাবো ৷আমার কোনো বিপদ হলে আমি জানাবো ৷ আর আমার সাথে অফিসার শান্ত ও তার তিন সহকর্মী যাচ্ছে ৷ প্রীতিলতা অন্ধকার বাংলোর দিকে এগিয়ে গেল ৷বিশাল একটা পুরনো বাংলো পরিত্যাক্ত জায়গায় দাড়িয়ে আছে ৷ভেতরে একটু আধটু আলো ৷কোনো সাড়া শব্দ নেই ভেতরে ৷শান্ত প্রীতিকে বলল এটা কোথায় নিয়ে এসেছেন আমাদের ৷এই নিরব বাংলোতে তিনশ নারী শিশু আটকে রেখেছে কেউ ৷এটা পাগলেও বিশ্বাস করবে না ৷ সেটাই যদি হতো তাহলে এখানে যথেষ্ট পাহারা থাকতো ৷

বাইরে পাহারা নেই বলে ভেতরটাকে দূর্বল ভেবো না ৷এর ভেতরে শুধু চাপা আর্তনাদ আছে ৷যেটা কিছুক্ষন পরে নিজের চোখেই দেখতে পারবেন আপনি ৷প্রীতিলতা দুইজন অফিসারকে বলল

আপনারা নিচে থাকুন সাবধানে ৷আমরা তিনজন উপরে যাবো এখন ওকে ৷প্রীতিলতা উপরে উঠার নিয়ম ওদের দেখিয়ে দিল ৷তিনজন বিশ মিনিটের ভেতরে দুইতলায় পৌছে গেল ৷ভেতরটা অন্ধকার বেশ ৷প্রীতিলতা নিজের পকেট থেকে কিছু একটা বের করলো ৷তারপর পাশের দেওয়ালে লাগিয়ে দিল ৷শান্ত কিছু বলতে গেলে প্রীতি তাকে থামিয়ে দিল ৷

চলবে….