অবেলায় তোমার আগমন পর্ব-৪৮ এবং শেষ পর্ব

0
1246

#অবেলায়_তোমার_আগমন🥀
#অন্তিম_পর্বাংশ_১
#Adrrija_Aman(লেখনীতে)
[✖️কার্টেসি_ছাড়া_কপি_নিষিদ্ধ✖️]

আকাশটা আজও মেঘলা যদিও দুপুরটা রোদেলা ছিলো শ্রীজা রিকশার হুডিটা ওপড়ে তুলে রেখেছে,ঝিড়িঝিড়ি বৃষ্টি পড়ছে ঠান্ডা একটা আবহওয়া শতো মন-খারাপেও ওর মন ভালো করে তুলেছে।কিছুদূর এগিয়ে রিকশাআলা মামাটি বললো…

“আফা আইয়া পড়সি।”

শ্রীজা রিকশা থেকে নামলো সাবধানে কখন শাড়ির ভাজ এলোমেলো হয়ে যায়।রিকশাআলাকে বললো…

“মামা ভারা কতো হয়েছে?”

“৬০ টাকা।”

শ্রীজা ব্যাগ থেকে ভাংতি বের করে লোকটিকে তার পাওনা টাকা দিয়ে সামনের দিকে হাঁটা ধরলো।বালিগুলো কেমন ভেজা ভেজা হয়ে গেছে এর ওপর সে শাড়ি পড়েছে বিষয়টা খুব ভেজালের।চারপাশে দেখলো শ্রীজা,মন-মুগ্ধকর চারিপাশে কাশবন অজস্র কাশফুল ফুটপ আছে নদীর কিনারা গুলোতেও কাঁশফুলের ছড়াছড়ি বাতাসে দোল-খেয়ে যাচ্ছে তারা।পেছন দিকটায় আবার কিছু কচুগাছ রয়েছে যে স্থানটা শ্রীজা মাত্র পার করে এসেছে।কচু পাতার ওপর শিশিরের মতো বৃষ্টির কণা পড়ে আছে তাদের সৌন্দর্য এতোটাই যে কেউ বলতে বাধ্য হবে তারা জীবন্ত।শ্রীজা কিছুটা দূরে শরৎকে দাড়িয়ে থাকতে দেখালো,নদীর কিনারে একটা লম্বা নৌকাবাঁধা নৌকাটা পাল-তোলা, সাথে বসে আছেন একজন মাঝি,সিগারেট জাত কিছু একটা সেবন করছেন তিনি।সেদিক থেকে শ্রীজা নজর এরিয়ে শরৎয়ের কাছে এগিয়ে গেলো,শরৎ সবুজ রঙয়ের একটা পান্জাবি পড়েছে তাকে দেখতে খুব স্নিগ্ধ লাগছে।শ্রীজা নজর নামিয়ে নিলো.শরৎ তাকে বললো…

“তোমায় দেখতে ভালো লাগছে।”

তুমি করে ডাকায় শ্রীজা কিঞ্চিত পরিমানে অবাক হলেও তার মাঝে অস্বস্থিটা বেশি কাজ করছিলো।কিছু সময় পর সে বললো…

“শান্তনা দেবার জন্য ধন্যবাদ।এবার কোনদিকে এগোবো?পথটা বলে দিলে ভালো হতো।”

শরৎ শ্রীজার দিক থেকে নজর এড়িয়ে সামনের পথে হাটতে লাগলো।শ্রীজাও তাকে অনুসরণ করে পেছন পেছন গেলো।নৌকটার ওপর শরৎ আগে গিয়ে উঠলো,তারপর হাত বাড়িয়ে দিয়ে শ্রীজাকে উঠালো।”

শ্রীজা প্রশ্ন করলো…

“এই নৌকা পেলেন কোথায়?”

“তুই খুশি হয়েছিশ?”

শ্রীজা বললো…

“ভালো লাগছে।”

শরৎ একটা ফ্যাকাসে হাঁসি দিলো।তারপর নৌকার এক প্রান্তে গিয়ে বসলো।নৌকা চালানো শুরু করেছেন মাঝি আজ আকাশের রঙ কেমন বিচিত্র কোনো স্থানে নীল তো কোনো স্থানে স্বর্ণের মতো আবরণ ধারণ করেছে।সাথে যোগ হয়েছে মেঘলা আকাশ,আর সূর্য ডোবার অন্তিম পর্ব এ যেনো স্বর্গাকাশ।কি চমৎকার এর সৌন্দর্য,সব মিলেমিশে এক অনন্যরুপ ধারণ করেছে।

শ্রীজা এই বিষয়টা বেশ উপভোগ করছে।নৌকোটা এগিয়ে চলতে লাগলো আপন গতিতে,শ্রীজা হাটুজোড়া দুহাত দিয়ে বেঁধে রেখে বসেছে।সে মুখ ফিরিয়ে শরৎয়ের দিকে তাকালো,বললো…

“কেমন লাগছে আপনার।”

“বড্ড মনকাড়া পরিবেশ খুব ভালো লাগছে।”

শ্রীজা কথার প্রেক্ষাপট বদলে ফেললো এক মুহুর্তেই,বললো…

“আচ্ছা আপনার দির কথা মনে পরে?”

শরৎ নড়লোটা একটুও আগের মতোই বিচিত্র আকাশের দিকে তাকিয়ে বললো…

“নাহ্”

“মিথ্যে বলছেন..”

“তোর যা মনে হয়।”

শ্রীজা নৌকার এক কোণায় গিয়ে বসলো,নৌকা নড়চড় করতেই শরৎ শর্তক গলায় বললো…

“সবধানে,ধীরে ধীরে যা পড়ে যাবি নয়তো।”

শ্রীজা কোণায় বসে নীল সচ্ছ পানিতে পা ডুবিয়ে দিলো।কিছুদূর যাবার পর সে দেখতে পেলো চোখ ধাধানোর মতো এক অন্যরকম সৌন্দর্যময় দৃশ্য।শারি শারি পদ্ম আর পদ্ম পাতা দেখা যাচ্ছে স্থানটাতে মাঝি কোনদিকটা দিয়ে নৌকো ঘুড়িয়েছে তা বোঝার জো নেই।শ্রীজা তার পায়েল পড়া পা’ টা প্রথমে পদ্মপাতায় এগিয়ে দিলো তারপর খালি পাটা পদ্মপাতায় রাখলো।পাশ থেকে ছিড়ে নিলো দুটো পদ্মফুল।পা দিটো দেখতে বেশ লাগছে।পদ্মগুলোকে নৌকার একপাশে তুলে রাখলো শ্রীজা।পানি থেকে পা তুলে নিলো।শরৎকে বললো…

“কাকে বেশি ভলোবাসেন দিকে?না আমাকে?”

পুরুষ মানুষের চাহনী বড্ড অন্যরকম।তারা যদি তার চাহনীর ভাষা বোঝাতে না চায় তবে সে ভাষা বোঝার ক্ষমতা বোধয় কারোরই নেই।শরৎয়ের ক্ষেত্রেও এই কাজটার প্রতিফলন ঘটেছে বোধয়।
শরৎ বললো…

“অনুকে নিয়ে আমি কিছু বর্ণনা করতে পারবো না,আর না তোকে নিয়ে।বাস্তব জীবনটা অন্যরকম বুঝলি এই জীবনে কখনো তুই সিনেমার লাভ স্টোরি বা হ্যাপি স্টোরি গুলোর মতো সর্বজয়ী হতে পারবি না।সব দিক থেকে জয় অর্জন করতে পারবি না।আমি একটা সাধারণ মানুষ কোনো সিনেমার সুপার পাওয়ার পাওয়া,বা অতিরিক্ত ভালো ভাগ্য অর্জিত হিরো বা নায়ক নই।আমি একটা সাধারণ মানুষ এটাই আমার মূল পরিচয়,আমার কথাগুলো এলো-মেলো আমি একদম পরিপাটি না।তাই আমি আমার মনের কথাগুলোকে না প্রকাশ করতে পারি না।আর সবচেয়ে বড় রিজন কি জানিস?ছেলে বা পুরুষ মানুষেরা অনুভূতী লুকোতে বড্ড পছন্দ করে।তারা আবেগ প্রকাশ করলেই বেশ সংখ্যক মানুষ তাদের স্ট্রং পার্সোনালিটির মানুষ ভাবে না।আর ভালোবাসার কথা সেটা হুট করেই মানুষের মাঝে আসে,মানুষ তো তা নিজ থেকে আয়ত্ত করতে পারে না।অনু আমার ভালোবাসা কিনা জানিনা তবে হ্যা ও আমার লাইফের প্রথম অনুভূতী ওকে আমি কখনো ভুলতে পারবো না,যতোই ও আমার কাছ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিক বা প্রতারণা করুক।আর তুই তো বর্তমান অতীতকে ছাড়া এখন চলতে পারছি তবে বর্তমানকে ছাড়া চলাটা যে কতোটা কঠিন তা ভালোই উপলদ্ধি করতে পারছি।”

শ্রীজা শরৎয়ের পানে শীতল এক চাহনী নিক্ষেপ করলো,বললো…

“যদি বলি দি প্রতারক নয়।যদি বলি সবটা ভুলের মূল কারণটাই আমি,আমিই কালপ্রিট যার অবেলার অনুভূতিদের আঘাতপ্রাপ্ত না করার জন্য দি নিজের ভালোবাসাকে বিষর্জন দিয়েছে।মৃত্যু সমতুল্য যন্ত্রনায় কাতরিয়েছে তবে টু শব্দটিও করেনি।ক্ষমা করতে পারবেন আমার মতো কালপ্রিট কে?দি তো নির্দোষ, সে নির্দোষ মানুষটাকেই কিনা দোষি করলাম আমরা?আমিও?না সবটা জেনেই।আমরা মানুষেরা একটা ভুল সব-সময় করি মুদ্রার প্রথম পিঠের চিত্রটাই দেখি,উল্টো-পিঠের চিত্রের কথা তো চিন্তাও করি না।একটা ভঙ্গুর মানুষকে আরো চুরমার করে দিলাম আমরা।আমিই মূল দোষ,আমার সব দোষ।কেনো নিজেকে গুটিয়ে রাখতে পারলাম না দির কাছ থেকে?যদি আমি এমনটা করতাম তাহলে এতো গোজামিল হতো না নাইবা সব অসম্পূর্ণ হতো।”

শরৎ চমকালো যতোটা চমকালে অবাকের শীর্ষ পর্যায় পৌঁছনো যায় ঠিক ততোটাই।অনুকে সে ভুল বুঝে এসেছে এতোদিন,আর অনু সে কিনা নির্দোষ।সকলের আড়ালে যন্ত্রনাগুলোকে ধামাচাপা দিয়ে রেখেছে।
শরৎ বললো…

“কিন্তু তুই এসব কি করে জানলি?”

শ্রীজা চোখ জোড়া বন্ধ করলো,একটা লম্বা শ্বাস ত্যাগ করে নিজের ভেতরকার সব কষ্টগুলোকে ঝেড়ে ফেলতে চাইলো,কিন্তু কষ্টরা বোধয় ইকটু বেশি শক্তিধারী, তারা হার মানতে চাইলো না।জেদের কারণে থেকেই গেলো।শ্রীজা আনমনে অজানা এক সত্তাকে প্রশ্ন করলো…

“আচ্ছা পৃথিবী এমন কেনো?”ভালোবাসাগুলো এমন কেনো?অনুভূতিগুলো এমন অদ্ভুত আর নাম না জানাই বা কি কারণে?কেনো এতো রহস্য এ ধরায়?কিছু রহস্য উন্মোচিত হলেও কিছু অপ্রকাশ্যতা নিয়ে থেকে যায় এ পৃথিবীতে।বাস্তবা এতো জটিল হয় কেনো?কেনো এ ধরার নিময় নীতি এতো অদ্ভুত?এই কি কিন্তু কেনোগুলোর উত্তরইবা কারা দিবে?এ রহস্যইবা কি করে উন্মোচন হবে?

শ্রীজা বললো…

“দির ফোনের কল রেকর্ড থেকে।ও মিহাদ ভাইকে সবটাই খুব আগে জানিয়েছে।মিহাদ ভাইও সবটা জেনেই দিকে আপন করে নিয়েছে।কিন্তু দি সে কি আদেও তার ভালোবাসাকে ভুলতে পেরেছে?”

শরৎ স্তব্ধ হয়ে রইলো।কিছু বলার মতো নেই তার।চাহনীগুলো নির্বিকার।

শ্রীজা বললো…

“জানেন শরৎ ভাই প্রেম ভালোবাসা অনুভূতি এরা সব যেনো এক একটা দৌড় প্রতিযোগীতার মতো।যারা দৌড়ে শেষ প্রান্তের নাগাল পেতে পারে তারাই সফল।আর যারা পারে না ধৈর্য কুলোয় না,প্রতারিত হয়,বা নিয়তি খারাপ থাকে তারা খুব বাজে ভাবে হেরে যায়।কেউ কেউ প্রতারণা করে ভালোবাসাও পায়।কেউ কেউ হেরে গিয়ে সবকিছু থেকে পিছিয়ে যায়।একদম হেরে যায়।সব হারিয়ে ফতুর হয়ে যায়।”

বলে একটা ফিকে হাঁসি দিলো শ্রীজা।যে হাঁসিটাই মৃত।এ হাঁসি যেনো আক্ষেপ, অভিমান,যন্ত্রনা,মেনে নেয়ার কষ্টের একটা ছোট্ট মাধ্যম।

তারপর বললো…

“আমাদের কিছু মানুষের জীবন গল্পটা গোলক ধাঁধার মতো,যে ভালোবাসে সে পায় না আর যে চায় না সে পায়।আবার যে পায়না সে চায়,একদম অদ্ভুত রকমের সব।কি যে ভয়ানক সুন্দর তা প্রকাশ করার মতো না,এই ভয়বহতাই কেড়ে নেয় জলজ্যান্ত মানুষগুলো সব সবকিছু।নিঃস্ব করে ছাড়ে মানুষগুলোকে।”

#চলবে_

#অবেলায়_তোমার_আগমন🥀
#অন্তিম_পর্বাংশ_২
#Adrrija_Aman(লেখনিতে)
[✖️কার্টেসি_ছাড়া_কপি_নিষিদ্ধ✖️]

শ্রীজা বাড়ি ফিরলো রাত করে।শরৎয়ের সাথে আজ বেশ ভালো মুহুর্ত কাটিয়েছে সে,এমনটা কোনো সময় কাটায়নি।তাই তো কৃতজ্ঞতা স্বরূপ আসার সময় ধন্যবাদ জানিয়ে এসেছিলো।শরৎ বিপরীতে এমনটা বলেছিলো…

“আবার কবে দেখা হবে?”

শ্রীজা হেঁসে বলেছিলো…

“ধরে নিন এটাই শেষ দেখা।”

শরৎ বিচলিত হয়ে পরেছিলো কিন্তু কিছু বলতে পারেনি।তা দেখে শ্রীজা উত্তর দিয়েছিলো…

“সময় থাকতে মূল্যবান জিনিসকে চিনতে শিখুন,নিজের করে রাখতে শিখুন।নয়তো তারা অদূরে হারিয়ে যাবে হাঁসি মুখে।”

কথাটা বলে সে বাড়ির সামনে নেমে পরে।আর রিকশা চলতে থাকে নিজ গতিতে আবারও জানা শোনা এক গন্তব্যস্থলে।শরৎ অবাকপানে চেয়েছিলো শুধু।শ্রীজা শুধু দীর্ঘঃশ্বাস ফেলেছিলো শরৎয়ের নিশ্চুপতায়।পৃথিবী বিচিত্র। বিচিত্র পৃথিবীর সকল সৃষ্টি।সে সৃষ্টির মধ্যে সেরা হচ্ছে মানুষ।মানুষও বিচিত্র নানা রকমের,নানা বরণের।মানুষ চেনা বোধয় সবচেয়ে কঠিন,কঠিন মানুষ বোঝা।শরৎ লোকটাও তাই কেমন যেনো শক্ত ইকটু বললে ভুল হবে বরং অনেকটাই কঠিন।কখনো তার অনুভূতী বুঝে উঠতে পারেনি শ্রীজা,না কান্না দেখেছে না প্রাণখোলা হাঁসি।আজীব!
বাড়ি ফিরতেই সর্বপ্রথম মায়ের দিকে ভালো করে লক্ষ করলো শ্রীজা।তিনি যেনো অগ্নিমূর্তি রূপ ধারণ করেছেন।শ্রীজার ঘরের এক কোণায় আলমারির সামনে দাড়িয়ে আছেন তিনি।হাতে কিছু পেপার্স।মায়ের অবস্থান খেয়াল করার পর বিষয়টা কঠিন লাগলো না শ্রীজার।বুঝতে পারলো মুহূর্তেই।খাটে হেলান দিয়ে বসে দেয়ালের দিকে এগিয়ে গিয়ে প্যানের স্পিডটা বাড়িয়ে দিয়ে আবারো ধপাস করে শুয়ে পড়লো বিছানায়।
কিছু সময় বাদে বললো…

“বুঝলে মা যা গরম পড়েছে।ঘরে থাকাই মুশকিল।আমার মতে দি দের মতো তুমিও প্রতিটা বেডরুমে একটা করে এসি ফিট করে দাও,তখন সবার শান্তি আর শান্তি।কি যে আরাম, আহ্।”

শ্রীজা তার মাকে নিশ্চুপ দেখে,এবার বাজে কথা বাদ দিয়ে বললো…

“ভালোই হয়েছে বুঝলে,ব্যাপারটা তুমি আগে আগে জেনে গেলে্,নিজ থেকেই।আমি কি ভেবেছিলাম জানো?আচ্ছা আমিই বলি,তোমার রিয়েকশন দিতে হবে না।আমি ভেবেছিলাম আমি ফিরেই তোমাকে সব জানাবো। সময় পাইনি বুঝলে,বিষয়টা এতো দ্রুত ঘটে গেলো,কী আর করতাম।যাগ্গে…”

বাকিটা বলার অবস্থায় ছিলো না শ্রীজা।তার আগেই তার মা বা গালে চর দিয়ে বসলেন।ব্যাপারটা আগ থেকেই আন্দাজ করতে পেরেছিলো শ্রীজা,ভেজা চোখে মাকে জড়িয়ে ধরে আদুরে গলায় বললো…

“কালই তো চলে যাবো,আজ মারছো।ভালো তো,খুব সুন্দর উত্তম একেবারে।আমিও জার্মানি গিয়ে দেখবো,বাংলাদেশে বসে কি করে মা’রো আমাকে,হুহ।”

বলেই মুখ ফিরিয়ে নিলো শ্রীজা।শ্রীজার মা রাগী গলায় বললেন…

“বের হ আমার বাড়ি থেকে।মা বাবাকে না জানিয়ে একেবারে জার্মানিতে চলে যাচ্ছেন তিনি,খুব বড় হয়ে গিয়েছেন।এতোটাই বড় হয়ে গিয়েছেন যে নিজে নিজে পাসপোর্ট ভিসা সব গুছিয়ে নিচ্ছেন।বাবা মায়ের সিদ্ধান্ত জানার প্রয়োজনটিও নেই তাদের।ভালো তো খুব ভালো,আমার ধারে কাছেও ঘেষবি না।এই আমি বলে গেলাম।”

কথাগুলো বলে উনি চলে যেতে নিলে শ্রীজা পথ আটকে দিয়ে বললো…

“আরে মা একটা কাজে যেতে হবে আমার।ইমার্জেন্সি আছে।বোঝো ইকটু প্লিজ,আর গেলে তো একটা ছোট খটো ট্যুরও হয়ে যাবে।”

শ্রীজার মা কিছু বললেন না,শব্দ করে হেটে চলে গেলেন তিনি।যাওয়ার সময় বললেন…

“খেতে চলুন মহাসয়া ।”

খাবার টেবিলে শ্রীজার মা সালিশ বসালেন,বিচারক তার স্বামী।কিন্তু ফলাফল শূন্য।উল্টো শ্রীজার বাবা শ্রীজাকে জার্মানিতে যাবার আগে বিভিন্ন টিপস্ দিতে লাগলেন।কিভাবে কি করবে কি কি কেনাকাটা করবে,কিভাবে চলা ফেরা করবে।কদিন পর পর ফোন করতে,ইত্যাদি।
বললেন…

“আসার সময় ওখান থেকে কিছু ইউনিক শো-পিস নিয়ে আসবি বুঝলি।পারলে ওখানকার খাবার দাবার নিয়ে আসিস আমার জন্য।নিশ্চই ভালোই হবে।আর ঘ্যানঘ্যানানি থেকে মুক্তির জন্য কানে তুলোর বদলে যদি কোনো বিকল্প আধুনিক জিনিস বের হয় অবশ্যই দু জোড়া আনবি।এ তুলো কাজের না কোনো।বাপরে,কানদুটোকে আটাশ বছরে যা করেছে না।কি আর বলবো।জল-জ্যান্ত একটা এফ-এম রেডিও পালছি বুঝলি।শা’লার প্রেমটা যে কোন দুঃখে করতে গিয়েছিলাম।”

বলেই কপালে হাত দিয়ে আফসোস করতে লাগলেন উনি।

শ্রীজার মা তো রেগে বোম,রেগে চোখ দুটো বড় বড় করে বললেন…

“কি? আমি এফ এম রেডিও?আটাশ বর ধরে সহ্য করছো।আজই চলে যাবো বাপের বাড়ি থাকবো না আমি।চলেই যাবো।থাকো বাপ মেয়েতে।”

দুষ্টু মিষ্টি ঝগড়ার মধ্য দিয়ে শেষ হলো খাওয়া দাওয়ার পর্ব।

★__★

সকাল ৮ টা বেজে ৩০ মিনিট রিদা,সামি,আঁচল,নুপূর,শ্রীজা,শ্রীজার মা বাবা,রিদা আর সামির ফেমেলি মেম্বারসহ অনু এসেছে এয়ারপোর্টে।তাদের এগিয়ে দিতে।শ্রীজা মুলতো রিদা আর সামির সাথে যাবে্।সামি আর রিদা সেটেল হয়ে যাবে সেখানে।এমনটাই জানিয়েছপ শ্রীজা তার মা বাবা কে।শ্রীজার মা বাবা তেমন কিছু বলেননি মেয়েকে।তারা চায় তার মেয়ের ইচ্ছে পূরণ হোক।যদি কিছু দূরত্ব তার মেয়ের মুখে হাঁসি ফোটায় তাহলে তা মঞ্জুর।শ্রীজার মা নানান আচার,খাবার রান্না করে দিয়েছে শ্রীজাকে সাথে গরম কাপড় চোপড় তার মতে সেখানে বারো মাসই ঠান্ডা থাকে।তাই গরম কাপড় নিতেই হবে।কিছু শুকনো খাবারও দিয়ে দিয়েছেন তিনি।ফোনে টাকা লোড করেও দিয়েছেন।শ্রীজার বাবা তাকে কিছু টাকা দিলো সেখানে হাত খরচের জন্য যদিও শ্রীজার কাছে পর্যাপ্ত টাকা আছে,তবুও।অনু তাকে বিভিন্ন বিষয় বুঝিয়ে দিচ্ছে সেখানে কিভাবে চলতে হবে কার সাথে কি রকম বিহেভ করতে হবে কি কি থেকে দূরে থাকতে হবে ইত্যাদি।সেও বোনের জন্য নানান জিনিস পত্র তৈরি করে এনেছে।নিজের হাতের কাজ করা একটা রুমাল আর গলার মাফলার তৈরি করে এনেছে সে।যার নিচে সুঁতো বোনা ‘বনু’ ওপরে দুটো মেয়ের ছবি তৈরি করা।আরো কতোকি।অবশেষে ১০ টা বাজলো।বিদায়ের সময় শ্রীজার মা বেশি কাদঁলেন,অনু তাকে সামলাতে লাগলো।নির্দয় পাসানের মতো সবাইকে কাঁদিয়ে শ্রীজা প্লেনে চড়লো।সাথে সামি আর রিদা।শ্রীজা কাঁচের সচ্ছ জানালা ভেদ করে ক্রমেই ছোট হতে থাকা এলাকা,এরপর,শহর,শহরের পর বিভাগ এরপর দেশটাকে দেখতে লাগলো।কিছু সময় বাদেই তার চোখে দৃশ্যমান হলো মেঘ আর মেঘ।সাদা রাশি রাশি মেঘ।এ যেনো মেঘের রাজ্য।

__________

চারকোণা একটা বড় ঘর।সাদা সাদা টাইলস্।সাদা পর্দা দিয়ে ঢাকা চারিপাশ।অন্ধকারাচ্ছন্ন পুরো ঘর, টেবিলের একপাশের একটা চেয়ারে বসে আছেন একজন মাঝ বয়সি লোক পাশের চেয়ারে শরৎ।টেবিলে আছে নানান ফাইল বই পত্র।কলম, মার্কার আরো নানান জিনিস।পেছন দিকটা বড় বুকশেল্ফে বই আর বই।কিছু কিছু আজগুবি জিনিস যা কতো নাম না জানা জিনিস।লোকটা একটা ফাইলে কলম দিয়ে কিছু লিখছিলো,লিখা বন্ধ করে শরৎকে জিঙ্গেস করলো…

“আপনার স্ত্রীর নাম কি যেনো ছিলো?”

শরৎ মাথা নিচু করে ছিলো।সে অবস্থায়ই চুপচাপ উত্তর দিলো…

“শ্রীজা,শ্রীজা।”

“সে কি সত্যিই আপনাকে ছেড়ে চলে গেলো কেনো?”

শরৎ হুট করে রেগে গেলো।প্রচন্ড রূপে রাগলো।রক্তগরম চাহনী নিক্ষেপ করলো সাইক্রিয়াটিস্ট নামক লোকটির ওপর।একটানে ফেলে দিলো টেবিলে থাকা সব বই।চিৎকার করে বললো…

“ও আমাকে ছেড়ে যায়নি কতোবার বলবো?কতো জনকে বলবো?কতোবার বলবো?আমার সাথেই আছে ও,আমার সাথে আছে।আমার সাথে সব-সময় কথা বলে।ইকটু আগেও, ইকটু আগেও ও এসেছিলো।আপনি দেখেননি? *** ডক্টর আপনি।*** ওপর ডিগ্রি নিয়েছেন।ফা’লতু কোথাকার।”

ডক্টরটি তার চোখের চশমা ঠিক করে,শরৎয়ের বাহু চেপে ধরলেন।ওকে থামাবার জন্য,ভুলবশত আনমনে বলে উটলেন…

“আহরে বেচারা বউ পাগল।বউয়ের জন্য সব শেষে মানসিক রোগ।মেয়েগুলোও কি আজ কালকার স্বামী…”

কিছু বলতে পারলেন না তিনি।বুকসেল্ফের কাছে গিয়ে পড়ছেন আচমকা ধাক্কায়,চোখ থেকে -৩ পাওয়ারের চশমাটা পড়ে গেলো
ঘোলা ঘোলা দেখতে লাগলেন সব।

#চলবে_

#অবেলায়_তোমার_আগমন🥀
#অন্তিম_পর্ব
#𝙰𝚍𝚛𝚛𝚒𝚓𝚊_𝙰𝚖𝚊𝚗✍︎(লেখনীতে)
[✖️কার্টেসি_ছাড়া_কপি_নিষিদ্ধ✖️]

“ডক্টর দেখাবি না মানে?জীবনকে কি তুই এতোটাই তুচ্ছ ভাবিস শ্রীজা?”

শ্রীজা কিছু না বলে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে গায়ের চাদরটা ইকটু টেনে বেলকণির দিকে হাটা ধরলো,নিচু গ্রিল দু হাত দিয়ে ধরে খোলা আকাশ দেখতে লাগলো।রিদার কিছুটা রাগ লাগলো শ্রীজার এমন নিজের প্রতি অনিহা দেখে,সে বেলকণির দিকে এগিয়ে গিয়ে শ্রীজার সামনে দাড়ালো।মাথা ঠান্ডা করে শ্রীজাকে বুঝ দিতে লাগলো…

“অনুআপু,আংকেল,আন্টি,চারু,নুপুর,আচঁল আমি আমরা সবাই তোকে কতোটা ভালোবাসি তুই কি আদেও জানিস?নাকি জেনা শর্তের তোর কাছে আমাদের ভালোবাসার কোনো মূল্যহীন?নিজের ক্ষতি করে এতোগুলো মানুষের মনে আঘাত করতে পারবি তুই?বল পারবি?জীবন হেলা-ফেলা করার মতো কোনো জিনিস না,তোর বুঝতে হবে ব্যাপারটা।আমি সব সব ব্যাবস্থা করেছি তুই আজই আমার সাথে হসপিটালে যাবি।নিচে তোর সামি ভাইয়া গাড়ি নিয়ে অপেক্ষা করছে।তুই চল আমার সাথে।”

শ্রীজা হাত ছাড়িয়ে নিলো, আবার মুখ ফিরিয়ে নিলো।ভাঙা গলায় বললো…

“যা ইচ্ছে কর তুই!শুধু টাকা পয়সা নষ্ট।কজন ভালো হতে পেরেছে?এসব রোগ হলে?১০০ পার্সেন্টের ৯০ পার্সেন্টই কোনো ফলাফল পায় না,পরিণাম মৃ’ত্যু।কি দরকার এসব করে?এটা নিয়ে মুড অফ করে বসে থাকলে যতোটা সময় হাতে আছে সেটাও উপভোগ করতে পারবো না।কই ভাবলাম এখানে এসে ইকটু শান্তিতে থাকবো মা বাবা কিছু জানবে না।আর জেনে গেলেও প্যারা দিতে পারবে না।আমি তো দেখছি কোনো শান্তিই নেই আমার উল্টো তুই প্যারা দিচ্ছিস।এমন করলে আমি এখানে থাকবোই না বলে দিলাম।”

“তোরটা ওতোটাও গুরুতর না।আর টাকার চিন্তা করছিস তুই?মানুষের থেকে টাকা বেশি বড় না।আল্লাহ্ আমাদের যা দিয়েছে আলহামদুলিল্লাহ, তা দিয়ে খুব চালিয়ে নিয়ে বসে থাকতে পারবো।রোগটা একদম ফাস্ট স্টেজে শ্রীজা।তোর নিয়তি দেখ।এই সময়টাতে এতো দ্রুত তুই জানতে পেরেছিস।আর ডক্টর যতোটুকু সময় বলেছে তাতে তোর ট্রিটমেন্ট করে রোগকে আলবিদা বলে বসে থাকা যাবে।চল এখনি।”

শ্রীজা বললো…

“কিছুই হবে না।শুধু শুধু শান্তনা দিয়ে লাভ নেই।”

রিদার রাগ লাগলো,মেয়েটা বুঝতেই চাইছে না। সে সত্যিই বলছে।ও শ্রীজাকে শান্তনা দিচ্ছে?আজব কথাবার্তা…

“তুই যদি আমার কথা না শুনিস,তাহলে আমি সত্যিই ভাববো তুই আমার কেউ না।খালামণি যদি অসুস্থ থাকে তাহলে পুঁচকুকে কে দেখে রাখবে বল তো?আমি কি একা পারবো?তোর ভাই অফিসে ঘুরে বেরায়।তার মধ্যে তুই এতো প্যারা দিচ্ছিস।আমি নিজেই একটা অসুস্থ মানুষ।আর তোকে নিয়ে টানছি তাও তুই শুনছিস না।”

শ্রীজা অবাক হলো,ভীষন অবাক।মনে একটা অজানা আনন্দের আশঙ্কা বয়ে যাচ্ছে।শ্রীজা সব ভুলে প্রশ্ন করলো…

“কি কিসব বলছিস?পুঁচকু মানে?তুই?”

“হুম,ভেবেছিলাম তো তোদের সারপ্রাইজ দিবো আগে তোর ট্রিটমেন্ট করানো শুরু করি তা না হলে অসুস্থ হয়ে পড়বি।কিন্তু?তুি দেখ,কি করছিস তুই।তোর কারো কথা ভাবতে হবে না।ওর কাথা সেলাইয়ের জন্য হলেও তোর যেতে হবে। চল..”

“কিন্তু যদি ফলাফল ভালো না হয়।”

রিদা আশ্বাস দিয়ে বললো…

“কেনো হবে না?কলকাতার অভিনেত্রী 𝙰𝚒𝚗𝚍𝚛𝚒𝚕𝚊 𝚂𝚑𝚊𝚛𝚖𝚊 কে চিনিস তুই?সে এতোদিন যদি মরনব্যাধির সাথে বসবাস করে শেষে ট্রিটমেন্ট নিয়ে ভালো হয়ে উঠতে পারে,তুই কেনো পারবি না?ভয়কে ভয় পেলে ভয়েরা আমাদের ভয় দেখায়।আর ভয়কে ভয় না পেলে তারা সাফল্য হয়ে আসে।বুঝলি পাগল।”

শ্রীজা ভেজা চোখে বললো…

“সত্যি?”

রিদা গলার মাঝখানটায় ডান হাতের দু আঙুল দিয়ে আলতো করে ধরে,আলাভোলা কন্ঠে বাচ্চাসুভল চাহনী নিক্ষেপ করে বললো…

“তিন সত্যি।পাক্কা।”

শ্রীজা আবেগ আপ্লুত হয়ে জড়িয়ে ধরলো রিদাকে,তার মনে এখন কোনো ভয় নেই একটা জোড়ালো শক্ত বিশ্বাস জন্মেছে ঐন্দ্রিলা যদি পারে সে কেনো পারবে না?অঞ্জয় দত্ত যদি পারে,সে কেনো পারবে না?অবশ্যই পারবে।

আনন্দ,বিশ্বাস,ভালোবাসা,শ্রদ্ধা,উৎসাহ,
আশা,আশ্বাস সব মিলে একাকার হয়ে নেত্রপল্লব পেড়িয়ে গড়িয়ে পরতে লাগলো আনন্দ-অশ্রু।

___★___

দিন পেড়িয়ে যায়।তারপর সময় আসে রাতের,রাতের পর একটা দিন কাটে।এরপর সপ্তাহ্। মাসগুলো কাটে চোখের পলকে।এমন করে কেটে যায় বছরগুলো।কতোগুলো বছর।কতোটা সময়,কতোটা দীর্ঘতা সময়ের।কি নিয়ম সময়ের!একটা সুন্দরতম মেনে নেয়া বা না নেয়ার মতো নিয়ম।

আবার সেই এয়ারপোর্ট,আবার অনুভুতী তবে সব নতুন, রয়েছে অনেক আশা।খুব খুব বিশ্বাস।অনেকগুলো ভালোবাসা।ভালোবাসাদের দেখার প্রয়াশ প্রচন্ড নার্ভাসনেস। কিছু কিছু ভয়।যদি তাকে ছাড়া তার ভালোবাসারা অন্য কারো হয়?যদিও সে আগে চাইতো এমনটা।কিন্তু এখন তা চায় না।সব ভুলে আবার সবটা শুরু করতে চায় নতুন ভাবে।খুব তো হলো জীবন নিয়ে শাস্তি নিয়ে খেলা-খেলি।আর কতো?এটা তো জীবন,সে তো সমাজের অংশ দরকার কি এতো বিচ্ছেদের?বিচ্ছেদ কখনোই সুখ বয়ে আনে না।যারা বলে বিচ্ছেদ সুখের তারাও বিচ্ছেদ ভয় পায়।ওপড়ে ওপড়ে কেউ কেউ খুব বেশি জ্ঞান দেয় তবে বাস্তবে সবার সামনে তার নিজের বলার শক্তি,জ্ঞানের কোঠা শূন্য।সব ভুলে নতুন করে সাজালে তার সৌন্দর্যতা আরো বাড়ে।কেউই পার্ফেক্ট না,হয়তোবা কেউ কেউ নিজের ভালোবাসা প্রকাশ করতে ব্যার্থ।কিন্তু তাদের দূরে ঠেলে না দিয়ে তার মনের কথা মন দিয়ে বুঝে নিতে হয়।সব কথা কি মুখে বলা যায়?কিছু কথা বলে চোখ,কিছু কথা বলে মন।বোঝার ক্ষমতাটা শুধু অর্জন করতে হয়।এক হাতে তালি বাজে না,তেমনই একার অনুভুতীতে বিচ্ছেদ হয় না,আর না হয় ভালোবাসা।নিশ্চুপ অনুভুতীদের বোঝা উচিৎ।কিছু আশা পূরণ না হওয়াই ভালো।যা আছে তাদের ভালোবাসাই শ্রেয়।যারা আছে তাদের নিয়ে ভালো থাকার চেস্টা করলেই ভালো থাকা যায়।তা না হলে তা লোভের ঘরে গিয়ে পরে।যারা চেস্টা করে তাদের ফিরিয়ে দেয়াটাও নিজের ব্যার্থতা, এক প্রকার বেনামি দোষ।শক্ত হয়ে প্লেনের গদিটাতে বসে আছি পাশেই রিদা।পেছনের সিটে সামি ভাই আর রিসা রিসা হচ্ছে রিদা আর সামি ভাইয়ের মেয়ে,গুলুমুলু হয়েছে বেশ।মাশাল্লাহ্ তো বলতেই হয়।খরগোশের মতো দাঁতগুলো দিয়ে কামঁড়াতেও শিখেছে সে।আবার আধো আধো শব্দে পাঁকা পাঁকা কথা।সে তো তার বাবাকে এখনও ছাড় দিচ্ছেন না, যে স্থানে অন্যান্য বাচ্চারা প্লেনে চড়ে নাজেহাল অবস্থা করে বসে সেখানে মহাশয়া দিব্যি আনন্দে বাবার সাথে দীর্ঘ কৌতুহলী আলাপন চালিয়েই যাচ্ছেন।কি অদ্ভুদ।ভেবে হাসঁলো শ্রীজা।
বিমান ল্যান্ড করলো।নামলো মাতৃভূমির বুকে।জন্মস্থানের প্রতি আলাদা আবেগ,ভালোবাসা দেশের প্রতি নিজের কাছের মানুষের প্রতি ভালোবাসার আবেগে চোখের কোণে জল জমে এলো শ্রীজার।ভালো লাগার জল ভালোবাসার জল।

__★__

এয়ারপোর্টে পৌঁছে বাবা,মাসহ বাকিদের খুঁজতে খুঁজতে বেশ সময় পেরিয়ে গেলো।কষ্টও হলো কিছুটা রিসা ঘুমিয়ে পড়েছে।মায়ের কোলে তার এখানকার আবহওয়া মানিয়ে নিতে কষ্ট হচ্ছে বেশ মিনিট দুয়েক পর পরই কাঁদছে,আবারও ঘুমোচ্ছে।
শ্রীজাদের খুঁজে পেলো অনু,শ্রীজা বলে প্রায় লাগাতার ১২ মিনিট ডাকার পর সে ফিরে তাকিয়েছে।অনুকে দেখামাত্রই জড়িয়ে ধরলো শ্রীজা।সবচেয়ে বোঝে তাকে এই মানুষটাই বোধয়।নাহলে বোনের জন্য,নিজের এতো কঠিন অনুভূতিকে কি করে বিষর্জন দেয়?দির ভালোবাসাকেও ভালো রাখতে হবে তার।দির বিশ্বাসকে যে ভাঙা যাবে না্।যত্নে রাখতে হবে।এসব ভেবে এয়ারপোর্টের চারপাশ ঘুরে দেখলো শ্রীজা।শরৎকে দেখলো না সবাই এসেছে প্রায় সবাই,শরৎয়ের বাবাও এসেছে আসেনি শরৎ আর মামনি।কেনো এলো না?তারা কি তার ওপর রেগে আছে?
মায়ের সাথে দেখা হওয়া মাত্রই মা কান মুলিয়ে ধরলো।মেজাজটা খারাপ লাগছিলো কিন্তু পরে ভাবলো মায়ের শাষনেও তো ভালোবাসা লুকিয়ে আছে।শ্রীজার মা বললেন…

“বদমাশ মেয়ে,পাকামো করে রোগ নিয়ে জার্মানি যাওয়া হয়েছে না।মায়ের কোল খালি করার খুব শখ তার।ভালো হয়েছে সাথে রিদা ছিলো।ওর থেকে কিছু শেখ,ওর মাঝে শাষন শাষন একটা ভাব আছে।কি ভালো একটা মেয়ে।আর আমার ঘরে দেখো,দুটো বা’দঁর হয়েছে।বাপই তো বনমা’নুষ তার ঘরে যে বা’দঁর হয়েছে এটাই অনেক।”

“উফ মা ছাড়ো, সবাই দেখছে তো।”

“আহারে সবাই দেখছে বলে তার সম্মান কমে যাচ্ছে।ওরে সম্মানীয় মহীয়সী নারীটারে।”

আরো কতো কথা।মায়ের কথার সূত্র ধরে বাবার দিকে নজর দিলো শ্রীজা,বিষ্ময়কর একটা চাহনী নিক্ষেপ করলো।তার বাবা কি করে…,সে বলেই ফেললো…

“বাবা তুমি কি করে এতো রোগা হয়ে গেলে?আমি ভাবতেই পারছি না।”

শ্রীজার মা কিছুটা ভাব নিয়ে বললেন…

“হেহ্ আমার কামাল সব,এই পেটুক লোকটাকে আমিই তো লাইনে আনলাম।”

শ্রীজার বাবার কেনো যেনো কিছুটা অপমান বোধ হলো।কিঞ্চিত অভিমানে তিনি মুখ ঘুরিয়ে নিলেন।

বাবা মায়ের সাথে বেশ কিছুক্ষন আলাপ আলোচনার পর শ্রীজা নুপূর আচঁলকে দেখলো রিসাকে নিয়ে মাতামাতি করতে তারা রিদাকে নানান ভাবে লজ্জা দিয়ে যাচ্ছে।এক পর্যায় নুপূর বললো….

“তুই এক বাচ্চার মা হয়ে গেলি রিদা?আর আমাদের দেখ আমরা এখনো।”

রিদা বললো…

“হয়েছে,খুব হয়েছে আর কতো মিথ্যে বলবি তুই?নিজের স্কুলের প্রিন্সিপালের ছোট ছেলের সাথে যে লাগাতার দু বছর ধরে লাইন মারছিস তা খুব ভালো করে জানা আছে আমার।আর আচঁল তুইবা কতো স্বার্থপররে লুকিয়ে চুড়িয়ে এংগেজমেন্টটাও শেরে নিলি।মানে বলার প্রয়োজনও বোধ করলি না।কি সুন্দর কথা বলিস না আর।তোরা যে আমাদের কতো আপন তা খুব জেনেছি,বুঝেছি।”

আচঁল বোঝানোর জন্য বললো..

“আরেহ্।”

শ্রীজা এবার ভঙ্কর রাগা রাগলো,বললো…

“কি আরেহ?আসলি কেনো দেখা করতে?কোনো প্রয়োজন তো ছিলো না তোর।কি দরকার ছিলো আমাদের মতো তুচ্ছদের সাথে দেখা করার কে হই আমরা?কেউ না।যাচ্ছে তা কর,সর এখান থেকে।”

শ্রীজা শরে যেতে নিলে আচঁল জড়িয়ে ধরে বললো…

“আরে বেবি রাগিস কেন?তুই জাস্ট একবার বল, ওই সামাদের বাচ্চারে নিয়া আরো ১০ বার এংগেজমেন্ট করমু।”

নুপূর মুখ বাঁকিয়ে বললো…

“সামাদের বাচ্চা?তোর হবু জামাইয়ের নামই না সামাদ।সামাদের বাচ্চা তো তোরওও..”

আচঁল দু হাত একত্রিত করে বললো…

“মাফ কর বইন,দোহাই লাগে।”

শ্রীজা হাঁসি চাপিঁয়ে বললো…

“আলকা পাম দিস না তো।হয়েছে।”

“কসম দোস্ত,তিন সত্যি।”

মান অভিমান হাঁসি ঠাট্টা করে কথা বলতে লাগলো তারা।

গাড়িতে উঠবার কিছু মুহূর্ত আগেই চারু দেখলো।একটা মেয়ে স্থূলকায়, স্বাস্থ্য ভালো।পেটটা কিছুটা না অনেকটাই উঁচু হয়ে আছে।পেটের এক কোণে হাত দিয়ে হেঁটে আসছে তার দিকে।পাশেই একটা ছেলে শরৎয়ের থেকে বয়সে দুই তিন বছরের ছোটই হবে।মেয়েটাকে দেখে চেনা চেনা লাগলো।পাশের ছেলেটাকে দেখে বিষ্মিত হলো শ্রীজা ছেলেটা নাদিম আর পাশেরজন চারু চারুকে দু হাত ধরে হেঁটে আসছে নাদিম শ্রীজার দিকে।চারু প্রেগন্যান্ট?তাইতো দেখছে সে।শ্রীজা শুনেছিলো চারু নাদিমের বিয়ের কথা আরো তিন বছর আগে তার চলে যাবার প্রায় এক বছর পরই ওদের বিয়ে হয়।ভালো লাগলো শ্রীজার চারুকে সুখী দেখে।চারুর মুখে একটা উজ্জলতা দেখা যায়।সেই ছোট্ট মেয়েটা আজ নিজ গর্ভে একটাল নব্যপ্রাণকে লালনপালন করছে কি অদ্ভুদ। শ্রীজা দেখে চারু কাঁদতে কাঁদতে এগিয়ে এলো,চারুকে শ্রীজাই জড়িয়ে ধরলো,থামতে বললো বারে বার।চারু হিচকি তুলছে তো তুলছে থামার কোনো নাম নেই।এক পর্যায় নাদিম তাকে বকতে লাগলো।মানে আছে এতো বেশি কাঁদার কাদাঁটাও এখন চারু আর তার বাচ্চার জন্য হার্মফুল।সে কি জানে না?চারুকে শ্রীজা নানান কথা বলতে লাগলো।চারুও গাড়িতে বসে কতোশতো কথা বললো।নাদিম তো তাকে আসতেই দিচ্ছিলো না, আট মাস চলছে বাবুর, সময় প্রায় শেষের দিকেই এই সময়ে জার্নি করাটা অনেকটা ভয়াবহ।তবুও চারু জেদ, ধরলো সে আসবেই।তাই নাদিম নিয়ে এলো।খুব সাবধানে।বলে হাঁসতে লাগলো চারু,বললো,,, নাদিম এখন তাকে নিয়ে প্রচন্ড ভয়ে থাকে।অথচো চারু তার কোনো ভয় লাগে না।পুরুষ মানুষ এতো ভীতু হলে চলে? শ্রীজা একপর্যায় জিঙ্গেস করেই বসলো…

“তোর ওই হিটলার ভাইয়ের কি খবররে।আমাকে দেখতেও এলো না।”

চারু মুখটা পানশুটে করে নিলো।বললো…

“এভাবে বলো না।তুমি যাওয়ার পর যা কান্ড ঘটালো,তারপরও এভাবে বলতে পারবে?”

শ্রীজা অবাক হলো বিষ্ময় নিয়ে প্রশ্ন করলো…

“কি কান্ড ঘটিয়েছে আবার।”

চারু বলতে লাগলো…

“তুমি যাবার পর সে কি কান্ড করছিলো।পাগলামিই শুরু করেছিলো রিতিমতো,ভাংচুর,অফিস না যাওয়া।ঠিক করে না খাওয়া।হুট হাট রেগে যাওয়া।তিন চার ঘন্টারও বেশি শাওয়ার নিয়ে জ্বর বাঁধাতো কিছু দিন পর পরই,আবার কি উল্টো-পাল্টা প্রলাপ বকতো।তাও তোমাকেই নিয়ে।একঘরে হয়ে গিয়েছিলো,কখনো বেরোতেই চাইতো না।প্রায়শই বলতো…

“সব দোষ নাকি?তার।যখন তোমার রোগের কথা জানলো তখন তো ভুল ভাল পিল খেয়ে হসপিটালে ভর্তি হলো।আমি পর্যন্ত বুঝাতে লাগলাম সে এসব কি করছে?টিন-এজারদের কান্ড-কলাপ।সে আমার ওপর ভীষণ রাগলো।তারপর নাদিম ভাইকে ভুলিয়ে-ভালিয়ে সাইক্রিয়াটিস্টদের কাছে নিয়ে যেতো প্রথম জনের মাথা ফাটালো।দ্বিতীয়জনকে তো বুকসেল্ফের সাথে ধাক্কা দিয়ে ঘাড়েগর্দানেরই যা তা অবস্থা তারপরও এখন আছে কোনো রকমে।ভালোই আছে আপাততো।তবে ছয় সাত মাস পরপরই সমস্যা দেখা দেয় ডক্টরকে জিঙ্গেস করার পর তিনি বললেন এটা সারতে কিছুটা সময় লাগবে।তবে সেরে যাবে।যা চায় তা দেয়াই ভালো,আবদার পূরণ করা উচিত সে সময়,যদি তা ক্ষতিকর না হয়।”

চারু হঠাৎ শ্রীজার হাত চেঁপে ধরে বলতে লাগলো…

“ভাবি আমার মনে হয় তুমি যদি ভাইয়ার সাথে দেখা করো।তার সাথে আগের মতো থাকো।ভাইয়ার যা প্রবলেম আছে আপাততো ৯৯ পার্সেন্টই সেরে যাবে।প্লিজ চলো ভাবি।আর পাসান হয়ো না।আর কতো?অনেক তো হলো।এবার সব অবসান হোক।”

___★___

চারু বিছানায় বসে আছে।পানির পিপাসা পেয়েছে তার।পানিটা টেবিলের কাছ থেকে এগিয়ে নিয়ে নিলো সে।তখনই শরৎ এলো ভালো মন্দ জিঙ্গেস করলো।বললো সাবধানে থাকতে আরো কতো কি।আবার চলে গেলো।শরৎ কেনো এসেছে তা চারু জানে শ্রীজা তাকে জোড় করে বসিয়ে রেখেছে্।শরৎয়ের ঘরেই বসে আছে চারু।ইচ্ছে করে করছে এসব শ্রীজা কারণটা শরৎকে জ্বালানো আজ সকালেই এসেছে শ্রীজা এ বাড়িতে চারু যতোটুকু খেয়াল করেছে শ্রীজা ইচ্ছে করেই শরৎকে জ্বালাচ্ছে।শরৎ তার সাথে দেখা করতে চাইলেও করছে না।চারুকে আজ শাড়ি পড়িয়ে দিয়েছে শ্রীজা।চোখে মুখে হালকা মেকআপ,শ্রীজাও পরেছে নীল পারের সাদা শাড়ি।অনলাইন থেকে কিনেছে শ্রীজা এতো সাঁজগোজ ছবি তোলার জন্য,চারুর প্রেগ্ন্যাসির সময়টাকে স্মরনীয় করে রাখার জন্য।হাঠাৎ চারু খেয়াল করলো তার ঘরে কেউ এসেছে।হ্যা একজন পুরুষ মানুষ,মানুষটা তার চেনা নাদিম।কিন্তু ওর আবার কি কাজ।নাদিম আসতেই চারু প্রশ্ন করলো…

“কি সমস্যা তোমার?এখানে এলে যে।কিছু লাগবে?”

নাদিম দু হাত ধরে চারুকে উঠালো,তারপর বললো…

“সমস্যা আমার না সমস্যা তোমার।বড় ভাইয়ের ঘরে এসে তার বউকে জ্বালাচ্ছো কি সাহস তোমার।আমাকে ঘুমোতে দিচ্ছোনা।এতো সাঁজগোজ করেছো কেনো?এমনি ১২ টা বাজাচ্ছো তুমি আর তোমার ছেলে মিলে আমার,আমাকে রোজা রাখিয়ে সামনে লোভনীয় সব খাবার আইটেম রাখা হচ্ছে।কি করে পারো তুমি?ছিহ্।আজকে তো তোমার হচ্ছে..!”

এই বলে নাদিম চারুকে জোড় করে ঘরে নিয়ে গিয়ে ধাম করে দরজা লাগিয়ে দিলো।শরৎ দরজা লাগানোর আওয়াজ পেতেই ঘরে ঢুকে পরলো।ছিটকিনি লাগিয়ে বেলকণির দিকে এগিয়ে গেলো।দেখলো শ্রীজা বেলি ফুল গাছ থেকে ফুল ছিড়ে বেণিতে গাঁথছে।শরৎ চুপিচুপি পায় এগিয়ে গিয়ে শ্রীজাকে জড়িয়ে ধরলো।আচমকা কোনো পুরুষালী শক্ত বন্ধনে আবদ্ধ হবার পরই শ্রীজা ভয়াবহভাবে চমকে উঠলো।গায়ে কাটা দিয়ে উঠলো।শরীর কিছুটা কেঁপে উঠলো।ফিরে দেখলো চেনা শোনা একটা মানুষ।শ্রীজা ভয়ানক রাগলো।সে কি ভীষণ রাগ।শরৎয়ের বুকে বা হাত মুষ্টিবদ্ধ করে আলতো করে আঘাত করে বললো…

“ভয় পেয়েছি না।সাহস কতো একটা মেয়ের ঘরে এভাবে না বলে কয়ে ঢুকে গেলেন।ছিহ্।নির্লজ্জ পুরুষ মানুষ।”

শরৎ শ্রীজাকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললো…

“প্রেমিক পুরুষেরা তার স্ত্রীর কাছে নির্লজ্জই হয়।কেনো?অন্য নারীর কাছে হবো নাকি?”

শ্রীজা বললো…

“আমি তা কখন বললাম?এখনি এমন করছেন।যা ব্যামো বাঁধিয়েছেন,মাস ছয়েক পর পর যদিই আমায় ভুলে যান।তখন না জানি কেমন করবেন।”

শরৎ শ্রীজাকে গ্রীলের সাথে আলতো করে চেপে ধরলো,শ্রীজা গ্রীলে হাত চেঁপে আকাশের সৌন্দর্য দেখতে লাগলো।আর শরৎ তার প্রিয়তমার সৌন্দর্য।শরৎ বললো…

“মানুষ দোষকে ভোলে দোষের কারণকে না।তুই আমার সে দোষের কারণ তোকে তো মৃত্যুর আগ পর্যন্তও মনে থাকবে।”

“তাই।”

“একদম তাই।একটা জিনিস খেয়াল করেছিস?”

“কি?”

“নাদিম আমার দুই তিন বছরের ছোট,মিহাদও ছোট,সামি সময় বয়সি।সবগুলো বাচ্চার মুখ দেখে ফেলছে।আর আমি?নিরামিষের মতো বিবাহিত সন্ন্যাসী হয়েই দিন কাটাচ্ছি্।কি বিচ্ছিরী একটা অবস্থা।”

শ্রীজা ভীষন লজ্জা পেলো।কিন্তু গাল দুটো লাল হলো না।বললো…

“তো আমি কি করবো?”

শরৎ স্বাভাবিক কন্ঠেই বললো…

“কি করবি আবার?যা করার তোকেই করতে হবে।সব তোর জানা।এই বছরেরই ইনা,মিনা,টিনা,চিঙ্কু,মিঙ্কু,টিঙ্কুর মুখ থেকে আব্বা ডাক শুনতে চাই।অবশ্যই আমি তাদের সত্যিকারে বাপ হবো।দায়িত্ব তোর।”

শ্রীজা বললো…

“বললেই হলো।”

বিড়বিড় করে বললো। “নির্লজ্জ লোক।”

শরৎ কিছু বললো না।চুপটি করে কার্য হাসিল করতে লাগলো।নিশ্চুপ সম্মতি পেয়ে।কথা বাড়িয়ে কি লাভ?সে কি সন্নাস্যি থাকবে নাকি?প্রখর ঠান্ডা বাতায় এসে গায়ে লাগতে লাগলো শ্রীজা আর শরৎয়ের।চাঁদও বুঝি লজ্জা পেয়ে মেঘের বুকে মুখ লুকালো।
ওপড় তলায় বক্সে কে জেনো গান বাজাচ্ছে….

“তোমায় ছোঁয়ার ইচ্ছে আমায় ভীষণ পীড়া দিচ্ছে…!”

(বাকিটা নিজ দায়িত্বে শুনে নিন,কারণ আমি শুধু এই লাইনটাই জানি🌚)

__সমাপ্ত__