#পর্বঃ১৮+১৯+২০
#অবৈধ_বিয়ে
#Sabriha_Sadi
পর্ব : ১৮
রাজ কোলে নিয়ে রানি কে ওয়াশরুমে ডুকতে লাগল।
রাজের চোখ গুলি তে এক মাতাল করা নেশা কাজ করছে। রানি এই প্রথম তার চোখের দিকে এই ভাবে তাকিয়ে আছে।
রানি হাত পা শান্ত করে দিয়ে দু হাত রাজের গলা জড়িয়ে আছে। দুজন দুজনের দিকে অপলক ভাবে তাকিয়ে আছে। যেন এই সময় কাটবার নয়। সময়ের চাকা টা যেন এখানেই থমকে যায়।
রানির মাঝে দ্বিধা কাজ করতে লাগল। রাজের নিষ্পাপ চোখের দিকে অপলক তাকিয়ে আছে যে। কি করবে সে? ভুল করছে না তো? রাজের সাথে যেনে শুনে রাজের এত কাছে যাওয়া টা কি ঠিক? রাজ কে কি আটকাবে সে? রাজ কি শুনবে তার বারণ?
রানির মাঝে এমন প্রশ্ন উঁকি দিতে লাগল।
কিন্তু রাজের চোখ? রাজের চোখের দিকে তাকিয়ে তার কেমন যেন একটা মায়াটান কাজ করছে। কিসের এত মায়াটান? রানির মাঝে এক অজানা অনুভূতি কাজ করতে শুরু করল। রাজের নেশায় আজ তারো কেমন যেন এক নেশা কাজ করতে লাগল।
রাজের মাতলামো তে একটু মাতাল হলে রানির কিই হবে? আজ না হয় একটু রাজের সাথে সেও মাতলামি করুক।
রাজ রানিকে কোল থেকে নামিয়ে দিল। কোমরের পাশে হাতটা নিয়ে এক টানে রানি কে নিজের কাছে নিয়ে এলো। রানি ছিটকে রাজের বুকে গিয়ে পড়ল।
রানির যে ভীষণ লজ্জা লাগছে। লজ্জাবতী পাতার মতো মাটিতে লুটিয়ে পরতে ইচ্ছে করছে।
রানি আর কিছু বলতে পারছে না। নিশ্বাস টা ঘন হয়ে আসছে তার।
রাজ তার প্রাণসীর কপালের চুল গুলি কানের পিছনে গুঁজে দিল। রানি হঠাৎ রাজ কে জড়িয়ে নিল। লজ্জাবতী পাতার মতোই রাজের বুকে মিশে আছে। রাজ তার প্রাণোসী কে আরে একটু শক্ত করে জড়িয়ে ধরল। মনে হচ্ছে দুইটা দেহে একটা প্রাণ। আলাদা মানুষ হলেও তাদের প্রাণ বিন্দু টা এক।
রাজ এক হাতে শাওয়ার টা ছেড়ে দিল। ঝর্ণার মতো ঝরঝরিয়ে উপর থেকে পানি পরছে আর রাজ তার প্রাণোসী কে বুকের মাঝে লুকিয়ে রেখেছে।
এইভাবেই দাঁড়িয়ে আছে দুজন।
রানি কেন যেন রাজের বুক থেকে মাথা তুলে পালাতে চাইল।
কিন্তু পারে নি। “রাজ যে তার হাত ধরেছে।” রাজ এক টানে আবার রানি কে নিজের কাছে নিয়ে এলো। রানির কপালে একটা চুমু দিল। নিজের হাতটা রানির চুলের মাঝে বিলিয়ে দিয়ে হুট করেই রানির ঠোঁটে নিজের ঠোঁট মিশাল। নিজের ঠোঁট দিয়ে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে রেখেছে তার প্রাণোসীর ঠোঁটযোগল।
অনেকক্ষণ এই ভাবে দাঁড়িয়ে ছিল তারা। শরীর ভিজে কাপড় লেপ্টে আছে।
রাজ এই রূপে তাকে নতুন দেখছে না। আগেও দেখেছে। তবে এত কাছ থেকে না। নিজের প্রাণোসী কে পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখছে মাতাল করা চোখ নিয়ে।
কোমরে জড়িয়ে ধরল রানির।
– কোনো দিন ভিজে শরীরে অন্য কারো সামনে যাবে না।
রানি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল,
– কেন?
রাজ উত্তর দিল,
– আমি বললাম তাই।
– কেন বললেন?
– কারণ ভিজে শরীরে তোমাকে দেখার শুধু আমার অধিকার আছে আর কারো না। এই ভাবে শুধু তোমাকে আমিই দেখতে চাই। ভিজে শরীরে আমার প্রাণোসী কে যে মস্ত ভয়ানক অপ্সরী মনে হয়। যা দেখলে মাতাল করা নেশা চরে উঠে নিজের মাঝে।
রানি রাজের এমন কথায় অবাক হওয়ার সাথে বেশ লজ্জা পেল। কি যা তা বলে এই লোক টা? এই লোকটার য়ত অদ্ভুত কথা।
সে মনে হয় ঘোর থেকে সবেমাত্র ফিরল।
নিজেকে রাজের কাছে এই ভাবে নিজেই একবার দেখল।
– আপনি বাহিরে যান, আমি চেইন্জ করে আসছি।
– কেনো প্রাণোসী? আমার সামনে করলে কি হবে?
রানি অনেক টা চিৎকার সুরু বিরক্তি নিয়ে বলল,
– যা বললাম তা করবেন নাকি আমি চলে যাবো।
রাজ কি মনে করে যেন বেরিয়ে এলো ওয়াশরুম থেকে।
রানি চুল মুছতে মুছতে ওয়াশরুম থেকে এলো।
– যান। কাপড় গুলি চেইন্জ করে নিন।
-……
– কি হলো?
রাজ কিছু না বলেই রানি হাত থেকে টাওয়াল টা নিয়ে ওয়াশরুমে ডুকল।
– আরে এটা তো আমার টাওয়াল। আপনার টা কোথায়?
-….. (রাজ শুধু কেমন করে যেন রানির দিকে একবার তাকাল।)
তারপর দরজাটা সজোরে লাগিয়ে দিল।
– আপনার টাওয়াল কি হয়েছে? হাতি নিয়েছে? নাকি চুরে ডাকাতি করেছে?
আরে কি বলছি আমি এই সব? চোর ডাকাতি করবে কেন। দুর পাগলের সাথে থেকে আমার মাথাটাও যাচ্ছে। যত্ত সব আজাইরা কাজ।
ছাগল কোথা কার। (রাগ নিয়েই বলল কথা গুলি)
আয়নার সামনে গিয়ে চুল গুলি ঠিক করে, চোখে একটু কাজলের ছোঁয়া দিল।
কাজল পরতে যে তার সব চেয়ে বেশি ভালো লাগে। কাজল কালো চোখই তো রূপের ছটা। “কাজল কালো চোখ দেখে যে কতো মানুষ কবি হয়ে উঠেছে, তা বলা বাহুল্য। ”
রানি তার চোখে কাজল মেখে রান্নাঘরে চলে গেল।
চলবে…..
😀😊)
#অবৈধ_বিয়ে
#Sabriha_Sadi
পর্ব : ১৯
রাজ ওয়াশরুম থেকে টাওয়াল দিয়ে চুল মুছতে মুছতে বের হলো।
খারাপ টেবিলে গিয়ে দেখে রানি কাজ করছে। রাজের তখন একটু রাগ হয়েছিল, রানি ওইভাবে তাকে বের হতে বলেছিল বলে। তাই তেমন কথা না বলে, চেয়ারে গিয়ে বাসার জন্যে পা বাড়াল।
রানি তার দিকে মুখ তুলে তাকাল। রাজের চোখ তখনই তার উপর পড়ল।
“চোখ যেন তার আটকে আছে, এক জোড়ো কাজল কালো চোখে।”
রাজ যেন তার চোখ গুলি রানির দিক থেকে আনতে পারছে না। কি এক মায়াটান তাদের। অদ্ভুত মায়াটান। রাজ টা যেন পা বাড়াতে পারছে না। ঠাঁই দাঁড়িয়ে আছে।
রানি তার এমন চাওনি দেখে বুঝতে পারছে না কি বলবে।
অন্যদিকে বেহায়া রাজ যে তার প্রাণোসীর দিক থেকে চোখ সরাতেই পারছে না। “বেহায়া মনের অধিকারী রাজের বেহায়া চোখ দুটি সারাক্ষণ যাকে দেখতে চায় তার পানেই রয়েছে।” চোখের পলক যেন পড়ছে না প্রাণোসীর দিক থেকে। সাধারণ সাদা কালো একটা নরমাল থ্রী পিজেই যেন অসাধারণ সে। চোখে কালো কাজলের ছটা। ভিজে চুল গুলি কোমর ছাড়িয়ে পড়ে আছে। সামনে অল্প চুলও পড়ে আছে কপালে। এটা কি কোনো মেয়ে নাকি পরী? রাজ আর পারছে না।
বুকে বা পাশে হাত রাখল। সাদা কালো টা যে তার বেশ পছন্দের। কিন্তু এই রূপে তার প্রাণোসী কে দেখলে ঠিক থাকে কি করে? হার্ট অ্যাটাক হবে না তো নিজের প্রাণোসী কে এই অসাধারণ রূপে দেখে?
রাজ রানির দিকে হা করে তাকিয়ে হাটছে। সামনে কি আছে না আছে, তার হয়তো খেয়ালই নেই।
এই ভাবে প্রাণোসীর দিকে তাকিয়ে সে বেশি সময় হাটতে পারল না। সামনের উঁচু এক জায়গায় পা আটকে থুপ করে পড়ে গেল। তার পরেও তার বেহায়া চোখ গুলি রানির দিকে।
রাজের এই অবস্থা দেখে রানি খিলখিলিয়ে হেসে দিল।
রাজ লুকিয়ে এমন হাসি অনেক দেখেছে। কিন্তু এত কাছে করে দেখতে পায়নি। এটার সুযোগ সে পাবে ভাবেও নি।
রানি খিলখিল করে পেটে হাত দিয়ে হাসছে। রাজের বুকের ভিতর উথালপাতাল শুরু হয়ে গেল। তার প্রাণোসী এই ভাবে হাসছে।
মুখে এক চিলতে হাসি নিয়ে তারাতরি করপ রানির কাছে গেল। রানি তখনো বোকার মতে হাসছিল।
রাজ রানির দুই লাগে আস্তে করে হাত রাখল। রানির হাসি টা আস্তে আস্তে হাওয়াই মিঠার মতো মিলিয়ে আসছিল। রাজ তার ঠোঁট দুটি নিজের প্রাণসীর কপালে ছুঁয়ে দিল। আর এক দণ্ড কোনো কিছুর অপেক্ষা না করে প্রাণোসী কে প্রাণে নিয়ে নিল। বুকে চেঁপে ধরে আছে রানি কে।
রানি রাজের বুকের ধুকধুক করা শব্দ যেন নিজের কানে শুনতে পারছে। এ শব্দ দিয়ে যেন সে শব্দের মহল বানাতে পারবে।
রানির কেমন এক অজানা অনুভূতি হচ্ছে। মায়াটান কাজ করছে। রাজ কে ছেড়ে দিতে ইচ্ছে হচ্ছে না। কিন্তু তার এমন কেমন হচ্ছে সেটার উত্তর খুঁজে পাচ্ছে না। সে তো রাজ কে নিজের স্বামী হিসেবে মানে না। তাহলে এমন কেন হতে লাগল তার সাথে? ভুল হচ্ছে কি? তার যে মায়াটান কাজ করে। কিন্তু কিসের মায়াটান? রাজ কে নিয়ে যে তার অনেক প্রশ্ন। সে গুলির হবে কি? রাজ তো মারামারি করে। তাকে ভালোবাসা যায় কি করে? রানি রাজের বুকে কান পেতে শব্দের মহর গুনতে লাগল, আর কথা গুলি ভাবতে লাগল।
রাজ তার মায়াপরী কে ছেড়ে দেয়।
রানি আরো অবাক হলো রাজের চোখের দিকে তাকিয়ে। রাজের চোখে পানি? উনি তো কাঁদছে। কেন কাঁদছে উনি?
রাজের কান্না ভরা চোখের দিকে তাকাতেই রানির বুক টা কেমন করে উঠল। বুকের ভিতরটা মুঁচড় দিয়ে উঠল। একটা অজানা ব্যথা লাগছে বুকে। গলাটাও শুকিয়ে আসছে।
ভাবতে লাগল,
– উনি কাঁদছে কিন্তু আমার কেন এমন হচ্ছে? আমার কষ্ট লাগছে কেন? আমার গলাটাই বা এই ভাবে তৃষ্ণায় খরা হয়ে যাচ্ছে কেন? কিসের মায়াটান কাজ করে উনার প্রতি? আমি কি পাল্টে যাচ্ছি? উনার ব্যবহার কি সত্যিই উনার প্রতি আমাকে দুর্বল করে দিচ্ছে? উনি কাঁদছে কেন? আল্লাহ কোন গোলকধাঁধায় আমাকে ফেললে? এত প্রশ্নের উত্তর আমাকে কে দিবে? কে? আল্লাহ দয়া করে আমাকে আমার সব প্রশ্নের উত্তর জানার সুযোগ করে দাও।
রানির যেন বুক ফেটে কান্না আসছে। কিন্তু চোখ দিয়ে যেন পানি আসছে না। এমন অদ্ভুত কাজ কেন হচ্ছে তার সাথে? উত্তর জানা নেই।
রাজ কিছু না বলেই চোখে পানি নিয়ে সেখান থেকে চলে আসতে চাইল।
রানি রাজের হাত টা ধরল। রাজ পিছন পিরেই বলল,
– রানি হাত টা ছাড়ো।
– না।
– প্লিজ।
– “শুনেছিলাম, ছেলেরা কখনো কাঁদে না। তাদের নাকি কাঁদতে বারণ। তারা নাকি অনেক কষ্টে চোখের পানি ফেলে। যখন তারা তাদের অসীম বুকে কষ্ট গুলি জমা রাখতে রাখতে আর না রাখতে পারে না। তখন নাকি তারা খুব কাঁদে। অনেক কান্না করে। কষ্ট গুলি সহ্য করতে করতে না পাড়বার কান্না অনেক কষ্ট হয়। ছেলেদের আমি তেমন কাঁদতে দেখিনি। তবে জানেন, ছোট থাকতে মাঝে মাঝে বাবা কে দেখতাম, বেলকুনিতে কাঠের চেয়ারে বসে চোখপ চশমা টা খুলে চোখের পানি মুছতে। কখনো বা মার ছবি নিয়ে বিকেলে বেলকুনিতে দাঁড়িয়ে নীরবে চোখের পানি ফেলতে। আমি শুধু দেখতাম, কিছু বলতাম না। আমি জানতাম বাবা মার জন্যে কাঁদে। মায়ের না থাকাটা বাবা উপরে বুঝতে না দিলেও বিতরে বুঝতে পারত। মায়ের না থাকায় বাবা নিজেই অনেক কষ্ট পেতো। ভালোবাসত অনেক মা কে। ভালোবেসে বিয়ে করেছিল তারা। মায়ের না থাকা বাবা মানতে পারত না। আমি বাবা কে ওমন রূপে দেখে কাঁদতাম। কারণ আপন বলতে শুধু পৃথিবীতে বাবাই ছিল আমার। বাবা তো মায়ের জন্যে কষ্ট পেয়ে কাঁদতো। ছেলেরা যেহেতু কষ্ট না পেলে তাদের দামী চোখের পানি ফেলে না। তাহলে আপনি কেন এমন করছেন? আপনি কেন সেই দামী জিনিসের অপচয় করছেন। আপনি কাঁদছেন কেন? আপনার কিসের কষ্ট?”
রাজ আর মুখ ফিরিয়ে থাকতে পারল না। রানি কে বুকের মাঝে চেঁপে ধরে ডুকরে কেঁদে উঠল সে।
#অবৈধ_বিয়ে
#Sabriha_Sadi
পর্ব : ২০
রানি কে জড়িয়ে ধরে বাচ্চাদের মতো কান্না শুরু করে দিল।
রানি হা করে শুধু বোকার মতো দাঁড়িয়ে আছে। একটা ছেলেও এই ভাবে কাঁদে তা কখনো দেখেনি।
কিন্তু রানির মনের ভিতরেও কেমন করছে। বুকের মাঝে চিনচিন ব্যথা হচ্ছে। সে অনুভব করতে পারছে, রাজের চোখের পানি দিয়ে তার পিঠ ভিজে যাচ্ছে।
কিসের কষ্ট লোকটার? এই ভাবে কান্না করছে কেন? রাজের বুকে মাথা রেখেও রানির বুকে কষ্ট লাগছে কেন? তার বুকে মাথা রাখলে তো সে একটা অজানা অনুভূতি অনুভব করে। একটা স্নিগ্ধতা বিরাজ করে। রানি যে এখন আর পারছে না। নিজের বুকের চিনচিন ব্যথাও সহ্য করতে পারছে না। আর রাজের কান্নাও।
রানি রাজের বুক থেকে সরে এলো। চোখ মুখ লাল করে ফেলেছে মানুষটা। দেখলে মনে হয় চিনতে পারবে না অন্য কেউ।
– কি হয়েছে আপনার?
-….
(রাজ কিছু না বলে কান্নাই করছে)
– কি হলো বলুন। কি হয়েছে? তখন থেকে এই ভাবে কান্না করছেন কেন?
-…..
রাজ কিছু না বলেই চোরের মতো চলে যেতে নিলেই রানি তার সামনে দাঁড়ায়।
– আমার প্রশ্নের জবাব দিন।
– কি প্রশ্ন তোমার? কেন জবাব দিব তোমায়? তুমি তো আমাকে নিজের স্বামী হিসেবে মানো না তাহলে?
রাজের কথা গুলি যেন তার বুকের চিনচিন ব্যথাটা আরো বাড়িয়ে দিচ্ছে লোকটা তো ভুল কিছু বলে নি। ঠিকি বলেছে। কথা গুলি তো মিথ্যে নয়।
– কি হলো বলো?
– কিছু না। আপনি কাঁদছেন কেন?
– আমি কান্না করলেই বা তোমার কি? তোমার তো কিছু না। তাহলে জিজ্ঞাস করছো কেন?
– আপনাকে আমি যা জিজ্ঞেস করেছি তার উত্তর দিন। কেন কাঁদছেন আপনি? (রানি চোখ লাল করে খুব জোরে প্রায় চিৎকার করে কথাটা বলল)
রাজে একটু না বেশ অবাক হলো। রানির নতুন রূপ দেখছে কি সে?
– আমার মুখের দিকে না তাকিয়ে যা বললাম তার জবাব দিন। (চিৎকার করে)
– এমনি।
– এমনি কথাটা না শুনিয়ে আসল কথা আপনি বলবেন কি বলবেন না।
– না বললে?
– বলবেন না তো আপনি? (খুব জোর কন্ঠে বলল কথাটা)
– ওকে ওকে। আগে খাও পরে বলব।
– না। আগে বলুন।
– প্লিজ আগে গেয়ে নাও পরে বলব। প্লিজ।
– বলবেন তো?
– হুম।
– ৩ সত্যিই?
– কি? (অবাক হয়ে)
– হুম। বলুন ৩ সত্যি খেয়ে বলবেন।
– ওকে ৩ সত্যি।
– ঠিক আছে।
– তুমি বসো আমি ২ মিনিটে ওয়াশরুম থেকে আসছি।
– ঠিক আছে।
রাজ রানি এক সাথে চেয়ারে বসল। রানি মুখে ভাত নিয়ে খাওয়ার আগেই তার মুখের সামনে অন্য একটা ভাত ভরা হাত চলে এলো।
তাকিয়ে দেখে রাজ তার মুখের সামনে ভাত দরে রেখেছে।
চোখ গুলি করুণায় ভরা। মায়া লাগে। সে কারণেই মায়াটান কাজ করে। রানি তার চোখের দিকে তাকিয়েই হা করে বসল। রাজ রানির মুখে ভাত দিল।
তারপর নিজের খাওয়া শুরু করল। রাজ মাঝে মাঝেই তাকে খাওয়ার মধ্যে খায়িয়ে দিচ্ছে নিজ হাতে।
রানি তার নিজ কাজে নিজেই অবাক হচ্ছে। কেন এমন করছে সে রাজের সাথে? এই ব্যক্তিটার সাথে সে কি করে এমন স্বাভাবিক আচরণ করতে পারছে? নিজের কাজ গুলি নিয়ে নিজেই ভাবছে রানি।
– জানো রানি, স্বামী স্ত্রী এক সাথে এক প্লেটে খাবার খেলে নাকি ভালোবাসা বাড়ে। তাদের মাঝে মায়া মততা বৃদ্ধি পায়। সম্পর্ক আরো মজবুত হয়। আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সঃ) তার বিবিদের সাথেও তেমন করতেন। তিনি বিবিদের সাথে এক প্লেটে খাবার খেতেন। আয়শা (রঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছেন এমন অনেক কথা। তিনি খাদিজা বিবির কোলে মাথা রাখতেন। খাদিজা বিবি ইন্তেকাল করার পর, তিনি আয়শা (রঃ) এর উরু তে মাথা রাখতেন। আয়শা (রঃ) গ্লাসের যে জায়গায় ঠোঁট লাগিয়ে পানি খেতেন আমাদের নবীও ঠিক সেই জায়গায় ঠোঁট লাগিয়ে পানি পান করতেন। উনি তো স্বামী স্ত্রীর মাঝে ভালোবাসার কত কথাই বলে গেছেন। কিন্তু দুঃখ আমরা পথভ্রষ্ট হয়ে পরছি।
(খাওয়ার মাঝেই রাজ কথা গুলি বলল)
রাজের এমন কথা শুনে সে খাওয়া রেখে এক দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে আছে। রানির গাল বেয়ে দুই ফোটা পানি গড়িয়ে পড়ল।
একটা মানুষ কতটা রূপ ধারণ করতে পারে? এক মানুষের মাঝে আল্লাহ কত রূপ দিলে তুমি? এতটা অদ্ভুত হয় কি করে উনি? উনার মাঝে তো রূপের ছড়াছড়ি। এই ভালো তো এই খারাপ। এই রাগি তো এই শান্তশিষ্ট। আল্লাহ তুমি উনার মাঝে কি রেখেছো? আল্লাহ আমাকে জানার সুযোগ করে দাও তুমি। মনে মনে কথা গুলি বলতে লাগল।
রাজ তাকিয়ে দেখে রানির চোখে পানি।
– রানি, প্লিজ চোখের পানি ফেলো না। তুমি কি জানো না, খাওয়ার সময় আজরাইলও জান কবজ করতে আসে না। আল্লাহ মানা করে দিয়েছে খাবার সামনে রেখে চোখের পানি ফেলতে। খাবার সামনে নিয়ে কাঁদবে না কখনো। প্লিজ ওই হিরে গুলি ফেলো না।
তারপর নিজ হাতেই রানির চোখের পানি মুঝে দিল।
রানি ভাবতে লাগল, আল্লাহ এই মানুষটার মাঝে কোন রহস্য লুকিয়ে রেখেছে? উনি এতটা রহস্যময় কেন?
– ওই জানো, বাবা না আমার সামনে মা কে নিজের হাতে ভাত খায়িয়ে দেয়।
– কি?
– হুম। বাবা এখনো মাকে খাবার খায়িয়ে দেয়। সাথে আমিও থাকতাম। আমাকে আর মাকে বাবা নিজের হাত করে খায়িয়ে দিত। অনেক মজার পরিবার আমাদের। আমরা তিন জনেই সেখানে মজা করে আনন্দে থাকতাম। “তারপর এক ঘটনা আলাদা করল আমাকে। নিয়ে এলো এখানে।”
– কি ঘটনা?
– কিছু না। বাদ দাও। চুপ করে খাও।
– বলুন না প্লিজ।
– রানিইই। (অনেকটা ধমক সুরু বলল)
রানি আর কথা বড়াল না। চুপচাপ বসে খেয়ে নিল বাকি খাবারটা।
চলবে….