শরতের এক সাঁঝবেলায় পর্ব-০৮

0
540

#শরতের_এক_সাঁঝবেলায়
#পর্বঃ০৮
#লেখিকাঃঅনন্যা_অসমি

অয়নের এধরণের বি’শ্রি কথা শুনে ঘৃ’ণা’য় প্রিসার গা কাঁপতে লাগলো তবে সে শান্ত রইলো।রে’গে গেলে স’ম’স্যা আরো বাড়তে পারে।বসে থেকেই প্রিসা বললো,

” একটা কথা কি জানেন মানুষ যেরকম অন্যকেও সেরকমই ভাবে সে।আর ভুলে যাবেন না এটা আমারও মামার বাড়ি।ভালো মতোই জানেন মামারা আমাদের কতটা ভালোবাসে।তাই চাইলেই আমি এই বাড়িতে অধিকার খাটাতে পারি।আর টাকা,পয়সা,সম্পত্তি সব এখনো আমার মামাদের।এখানে আপনার কোন ভাগ নেই।তাই এসব নিয়ে বড়াই অন্তত আমার সামনে করবেন না।আর কি বললেন আপনাদের সুখ স’হ্য হয়না বলে আমি এখন এই বাড়িতে আসিনা কথাটা যদি ভেবে থাকেন তাহলে বলি মিস্টার অয়ন খন্দকার এটা আপনি ভুল ধারণা পুষে রেখেছেন।এই বাড়িতে আসিনা কারণ আপনাকে দেখলে আমার ঘে’ন্না লাগে।” থামলো প্রিসা,একটানা কথা বলে হাঁপিয়ে গেছে সে।তবে প্রিসার এসব কথায় অয়নের কোন ভাবান্তর নেই।প্রিসা আবারো বলতে শুরু করলো, “আপনি যদি মনে করে থাকেন আমি আপনাকে এখনো ভালোবাসি তাহলে সেটাও ভুল।যেদিন আপনি আমার কাছে অ’ন্যা’য় আবদার করেছিলেন সেদিনই আপনার জন্য মনে থাকা সূক্ষ ভালোলাগাটাও মুছে গিয়েছিলো।যেটা আপনি ইগো বলছেন না ওটা ইগো না ওটা হচ্ছে আত্নসম্মানবোধ।যে ছেলে সম্পর্কের চার মাসের মাথায় একটা মেয়েকে বা’জে প্রস্তাব দিতে পারে তার মানসিকতা যে কতটা নী’চু সেটা আমার বোঝা হয়ে গিয়েছে।আপনার সাথে সম্পর্ক শেষ করার পর থেকে এখন পর্যন্ত আপনার খোঁ’চা দেওয়া কথা দ্বারাই আমি স্পষ্ট বুঝতে পেরে গিয়েছি আপনি কোনোদিনও আমার ব্যপারে সিরিয়াস ছিলেন না,যা ছিলো সব টাইম পাস।আপনি আমাকে কোনদিন ভালোবাসতেন না বিয়ে তো দূর।আমার বাবা নেই,তাই আমাকে বিয়ে করলে আপনি বিয়ের সময় এবং তার পরে দামী দামী উপহার,জিনিস এসব পেতেন না এ-কারণেও আগে পরে হলেও তো আপনি আমাকে ছেড়ে দিতেন।আর দীপ্তিকেও আপনি কেন বিয়ে করেছেন সেটাও আমার কাছে এখন পরিষ্কার।এতো কিছুর পরেও আপনি কি করে এখনো এটা ভেবে বসে আছেন যে আমি এখনো আপনার মতো লোককে ভালোবাসি।” শেষের কথাটা তাচ্ছিল্য নিয়ে বললো প্রিসা।

” সব মিথ্যা বলছো তুমি।দীপ্তিকে যেদিন বিয়ে করে নিয়ে এসেছিলাম আমি দেখেছি তুমি তখন অনেক কষ্ট পেয়েছিলে।সবাই ছিলো তাই মানসম্মানের ভয়ে কিছু বলতে পারোনি।” তুচ্ছ করে বললো অয়ন।

” এটা সত্যি যে হুট করে আপনাদের বিয়ের কথাটা শুনে খারাপ লেগেছিলো তবে তা ছিলো ক্ষাণিকের।একটা কথা কি জানেন রাস্তায় থাকা একটা কু’কু’রকে যদি আপনি নিয়মিত খাবার দেন এবং একদিন হুট করে সে হারিয়ে যায় তখন আপনার খাপার লাগবে তবে সেটা কয়েকদিন যেতেই ঠিক হয়ে যাবে।ধরে নিন আপনার ব্যপারটাও ঠিক সেরকম।”

” তুমি আমাকে রাস্তার কু’কু’রের সাথে তুলনা করেছে?” রে’গে জিজ্ঞেস করলো অয়ন।প্রিসা আস্তে ধীরে বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো। ” না,আপনার সাথে তাদের তুলনা করলে তাদেরকে অপমান করা হবে।তারা আপনার থেকে অনেক গুণ ভালো অন্তত দয়া দেখানো মানুষটার বিশ্বাসী থাকে।” কথাটা বলেই শব্দ ছাড়া নিচে নেমে গেলো প্রিসা।এদিকে প্রিসার কথা শুনে রাগে অয়ন হাত মুষ্টিবদ্ধ করে ফেললো।

বসার ঘরে একটা সিঙ্গেল সোফায় বসে আছে প্রিসা।অন্য একটা সোফায় তার মা সহ কয়েকজন মহিলা এবং আরেকটা সোফায় তার কাজিনবৃন্দ।এদের মাঝে প্রিসা প্রচুর বিরক্তবোধ করছে কিন্তু উঠে যাওয়ার জন্য কোন বাহানা পাচ্ছে না সে।এই বিপদ থেকে তাকে উদ্ধার করতে তার ফোনটা বেজে উঠলো।ফোন পেয়ে প্রিসা স্বস্থির নিশ্বাস নিলো।তাড়াতাড়ি উঠে বারান্দায় খোলামেলা জায়গায় গিয়ে ফোনটা রিসিভ করলো।

” হ্যালো পালকসাহেবা।”

” জ্বি স্যার।জরুরি কিছুর জন্য ফোন দিয়েছেন কি?”

” আপনি এখন কোথায়?”

” কোন সমস্যা হয়েছে কি স্যার?আমি তো এখন নিজে বাসায় নেই,মামার বাসায় এসেছি।”

” ও আচ্ছা।তাহলে এখন থাক।আপনি বরং এনজয় করুন।কাজ না হয় কাল অফিসে এলে বুঝিয়ে দেবো।”

” জরুরি কিছু হলে বলুন স্যার।এটা গুরুত্বপূর্ণ কিছু নয়।”

” না থাক,কালকেও করা যাবে।আপনি বরং এনজয় করুন।বিরক্ত করার জন্য দুঃখিত।”

” কোন সমস্যা নেই।আমি কোন ধরণের বিরক্ত হয়নি বরং খুশি হয়েছি আপনার ফোন পেয়ে।”

” সত্যি আপনি আমার ফোন পেয়ে খুশি হয়েছেন?” আচমকা রাদের মুখে হাসি ফুঁটে উঠলো তবে তা পালক বুঝতে পারলো না।

” জ্বি।আমি এতো এতো মানুষের মাঝে খুবই বিরক্তবোধ করছিলাম।উঠে আসবে তার জন্যও কোন বাহানা তৈরি করতে পারছিলাম না আর সেইসময় আপনি ফোন করলেন।আপনার ফোন করার কারণেই এখন একটু খোলা জায়গায় এসে স্বস্তি বোধ করছি।”

” ও আচ্ছা।”

” খাবার খেয়েছেন আপনি?”

” না এখনো না।খাবার এখনো আসেনি,এলে তারপর খাবো।আপনি খেয়েছেন?”

” না এখনো রান্না চলছে।তবে আপনি যে বললেন আবার এলে খাবেন।বাসায় কি খাবার রান্না হয়নি আপনাদের?”

” কেউ নেই তো কে রান্না করবে।তাই বাইরে থেকেই অর্ডার করেছি।আচ্ছা আমি তাহলে এবার রাখি,কাল দেখা হবে।শুভ রাত্রি।”

” শুভ রাত্রি।সাবধানে থাকবেন।”

রাদ সম্মতি জানিয়ে ফোনটা রেখে দিলো।কেন যেন এটা ভেবে পালকের একটু খারাপ লাগছে যে সে এতো এতো বাড়ির খাবার খাবে অন্যদিনে রাদ বাইরে থেকে কখন খাবার আসবে তার অপেক্ষায় বসে আছে।পালকের মন হঠাৎ করে বললো রাদের জন্য বাসায় রান্না করা খাবার পাঠিয়ে দিতে তবে ক্ষাণিকবাদেই সে এধরণের ভাবনার জন্য নিজেকে ছিঃ ছিঃ করলো।বারান্দায় আরো কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে পালক আবারো বসার ঘরে যখন আসবে তখন রান্নাঘরে একবার উঁকি দিলো।তবে উঁকি দিতেই তার কপাল কুঁচকে গেলো।রাদিয়া বেগম তাড়াহুড়ো করে রান্না করছে এবং দীপ্তি হাতে হাত রেখে দাঁড়িয়ে আছে উনার কাছে।এই দৃশ্যটা পালকের বোধগম্য হলো না।তবে সেদিকে সে বিশেষ গুরুত্ব দিলো না।

খাবার টেবিলে বসে আছে পালক,প্রিসা,তাদের মা এবং আরো কয়েকজন।দীপ্তি সবাইকে আস্তে আস্তে খাবার তুলে দিচ্ছে।এদিকে যতবার দীপ্তি খাবার তুলে দিচ্ছে সবার পাতে রাদিয়া বেগম ততবারই বলছে সব খাবার নাকি দীপ্তি একহাতে রান্না করেছে।এতো প্রশংসা শুনে সবাই তো বাহ্ বাহ্ করছে তবে পালক সন্দিহান দৃষ্টিতে তাদের দু’জনের দিকে তাকিয়ে আছে।একটু আগেই সে নিজের চোখে দেখেছে একটা এখন শুনছে আরেকটা।তার কোথাও একটা খটকা লাগছে তবে সেটা নিজের মধ্যেই রেখে খেতে লাগলো।
____________________________________________

কিছুদিন পরেই বাচ্চাদের ক্লাস টেস্ট শুরু হবে।যার কারণে সব টিচাররা মোটামুটি প্রশ্ন তৈরি,সিট ঠিক করা ইত্যাদি কাজ নিয়ে ব্যস্থ আছে।সবার মতো প্রিসাও এসব নিয়ে ব্যস্থ।পরীক্ষা নিয়ে কিছু কথা বলার জন্য হেডমিস্ট্রেস এর রুমে যখন সে প্রবেশ করবে সেই মূহুর্তেই আচমকা কেউ তার সামনে চলে এলো।ধাক্কা খেতে খেতেও সে নিজেকে সামলে নিলো।মাথা তুলে সামনে থাকাতেই প্রিসা দেখলো নতুন একজন মানুষকে যাকে সে আগে কখনো দেখেনি।প্রিসা মানুষটিকে সরি বলে তাড়াতাড়ি ভেতরে চলে গেলো।

প্রায় ২০ মিনিট পর প্রিসা হেড মিস্ট্রেস এর রুম থেকে বেরিয়ে এলো।বেরিয়ে কয়েক কদম সামনে যেতেই পেছন থেকে একটি পুরুষালী কন্ঠ শুনে সে দাঁড়িয়ে গেলো।পেছন ফিরে দেখলে সেই মানুষটা যার সাথে তার একটু আগেই ধাক্কা খেতে খেতেও বেঁচে গিয়েছে।

” জ্বী আমাকে বলছেন?”

” এখানে আপনাকে ছাড়াতো আর কাউকে দেখতে পাচ্ছিনা।” দু’কদম সামনে এসে লোকটি বললো।লোকটির কথায় প্রিসা কিছুটা বিব্রত হলো।

” আপনি মিস ঈশানী প্রিসা।এম আই রাইম?”

” ইয়েস।কিন্তু আপনি কে?কোন বাচ্চার অভিভাবক?তবে এই সময়ে তো অভিভাবকদের আসার কোন অনুমতি নেই।”

” আপনার প্রশ্নের মাঝেই উওর আছে।” মুচকি হাসি মুখে রেখেই বললো লোকটি।প্রিসা খানিক চুপ করে ভেবে দেখলো আসলেই সে বোকার মতো প্রশ্ন করেছে।

” আপনি অভিভাবক না হলে কে?আর আমাকেই বা ডাকলেন কেন?”

লোকটি আরো এক কদম সামনে এসে প্রিসার দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বললো,

” হাই।আই এম নিহাদ হোসেন।এই স্কুলের নতুন টিচার।”

ভদ্রতার খাতিরে প্রিসা নিহাদের সাথে হাত মিলালো।

” নাইস টু মিট ইউ মিস্টার নিহাদ।”

” আপনার সাথেও দেখা হয়ে মনটা ভালো হয়ে গেলো।আপনি যদি কিছু মনে না করেন আমাকে কি কেজি ডি সেকশন এর ক্লাসটা একটু দেখিয়ে দেবেন?আমি তো নতুন কিছুই ভালো মতো চিনি না।”

” অবশ্যই।আপনি চলুন আমার সাথে।”

প্রিসা ক্লাসের দিকে যেতে লাগলো।চোখের চশমাটা হাত দিকে আরেকটু পেছনে ঠেলে নিহাদও প্রিসার পেছনে হাঁটতে লাগলো।

চলবে………