#শরতের_এক_সাঁঝবেলায়
#পর্বঃ২৫
#লেখিকাঃঅনন্যা_অসমি
চারিদিকে একটা খুশি খুশি ভাব,বিভিন্ন ধরনের লাইট বৃদ্ধি করছে এই পরিবেশের সৌন্দর্যতা।মানুষের আনাগোনা শুরু হয়ে গিয়েছে ইতিমধ্যে।
মোটামুটি মানের একটা কমিউনিটি সেন্টারের সামনে দাঁড়িয়ে আছে অয়ন এবং তার বন্ধুরা।ফিসফিস করে কিছু বলছে তারা।তাদের কথার মূল বিষয় হলো তাদের বন্ধুকে নিয়ে যার আজ বিয়ে।
” কিরে ওদের কি টাকা কমতি পড়েছে নাকি?এতো কম দামী জায়গায় বিয়ে করছে যে?”
” দেখ গিয়ে টাকা সব সিন্দুকে তালা দিয়ে রেখেছে।”
কথাটা বলেই উচ্চস্বরে হেসে উঠলো সবাই।এবার অয়ন বললো, ” তা যা বলেছিস।কোথায় বিয়ে হচ্ছে,হাত খুলে টাকা খরচ করবে।তা না মিডেল ক্লাস একটা জায়গায় সব আয়োজন করেছে,কি’প্টা একটা।চল ভিতরে গিয়ে দেখি আমাদের বরমশাইকে।”
তারা সবাই একসাথে ভিতরে প্রবেশ করলো।এক বন্ধুর সাথে কথা বলছিলো অয়ন তবে পরিচিত এক কন্ঠস্বর শুনে সে থমকে গেলে।পেছন ফিরে দেখলো তার মা এবং বড় চাচী দাঁড়িয়ে আছেন।তাদের সাথে যে ছোট মেয়েটি ছিলো সে দৌড়ে চলে গেলো সবাইকে খবরটা দিতে।
” মা,চাচী তোমরা এখানে!”
” কিরে বাপ তুই না বলেছিলি তুই আসবিনা?তাহলে আবার এলি যে?”
” অয়ন তুই যদি প্রিসার বিয়ে আসতিস তাহলে তখন এতো নাটক করলি কেন?রাগ করে তো ঘর থেকেও বেরিয়ে গিয়েছিস।আর আসবি যখন আমাদের আগে বললি না কেন?”
” প্রিসার বিয়ে মানে!তোমরা এসব কি বলছো বলো তো?আমি আর আমার বন্ধুরা এসেছি আমাদের কলেজ ফ্রেন্ডের বিয়েতে,প্রিসার বিয়েতে কেন আমি আসতে যাবো?”
” আরে তোরা এসে পড়েছিস।কখন থেকে অপেক্ষা করছি তোদের জন্য।”
কন্ঠ অনুসরণ করে পেছন ফিরে তাকালো সবাই।
” জামাই বাবা তুমি ওদের চেনো?”
” আরে কি বলছেন মামী মা ওদের চিনবো না কেন?আপনাদের বলেছিলাম না আমার বন্ধুরা আসছে,ওরাই তো আমার বন্ধু।” হাসি মুখে বললো নিহাদ।নিহাদের কথা শুনে অয়ন একটা ঘোরের মধ্যে চলে গেলো।এখনো সে হিসাব ঠিক মতো মিলাতে পারছেনা।সবাইকে নিয়ে নিহাদ স্টেজের দিকে গেলো।
” এই দেখ তোদের ভাবী,সালাম দে।”
সবাই নতুন বউয়ের সাথে পরিচিত হতে লাগলো।আচমকা নিজের হাতে টান অনুভব করলো অয়ন।
” আরে অয়ন তুই ওতো দূরে দাঁড়িয়ে আছিস কেন?এই দেখি তোরা সর,ওকেও একটু পরিচিত হওয়ার সুযোগ দে।”
অয়নকে দেখে প্রিসার মুখ চুপসে গেলো,বুক কাঁপছে তার।অয়ন পলকহীন ভাবে প্রিসার দিকে তাকিয়ে আছে।লাল-সাদা লেহেঙ্গা,হালকা অলংকার,বধূসাজে প্রিসাকে দেখতে খারাপ লাগছেনা।
” কিরে এভাবে আমার বউয়ের দিকে তাকিয়ে আছিস কেন?আমার সুন্দরী বউটার দিকে নজর দিচ্ছিস নাকি?প্রিসা ও হচ্ছে আমার আরেকটা বন্ধু অয়ন।”
প্রিসা কিছু বলছেনা আর না বলছে অয়ন।অয়ন এসেছে শুনে বাড়ির সবাই অলরেডি স্টেজের কাছে এসে ভীড় করেছে।পাশ থেকে অয়নের বাবা অন্তিম সাহেব বলে উঠলেন,
” জামাই তুমি অয়নকে চেনো?”
” চিনবো না কেন?এরা সবাই তো আমার বন্ধু।কিন্তু আপনারা এতো অবাক হচ্ছেন কেন?অয়ন আপনাকে পূর্ব পরিচিত।”
” আরে পূর্ব পরিচিত হওয়ার কি আছে।ও আমাদের বাড়ির ছেলে আর বাড়ির ছেলেকে আমরা চিনবো না।”
” ওমা তাই নাকি!কিরে অয়ন তুই তো আমার শা’লাবাবু হয়ে গেলি।তুই আগে বলবিনা তুই সম্পর্কে আমার বউয়ের ভাই।”
অয়ন নিহাদের কথার কোন উওর দিলোনা।সে ভাবছে অন্যকিছু।তার এই নিয়ে ভয় কাজ করছে যে সেইদিন সেই ফোনকলটা যে সে করেছিলো সেটা নিহাদ বুঝতে না পেরে যায়।যদিও বা সে নিজের নম্বর থেকে ফোন করেনি তবুও ভয় কাজ করছে তার ভিতরে।অয়নের এখন নিজের উপরেই রাগ হচ্ছে কেন ফোন করতে গিয়েছে,অন্যকিছু করলেও তো হতো।
প্রিসা আর নিহাদের বিয়ের কার্যক্রম শুরু হয়ে গিয়েছে।পালক অতিথিদের দেখাশোনা করছে,অনিলা বেগম এবং রাদ বিয়ের ওখানে আছে।পালকের শশুর বাড়ি থেকে তার ফুফা শশুর ছাড়া বাকি তিনজন এসেছে।
অয়ন দূরে দাঁড়িয়ে আছে।যখন থেকে জানতে পেরেছে নিহাদের সাথে প্রিসার বিয়ে হচ্ছে তখন থেকেই সে একপ্রকার লুকিয়ে আছে।বিয়ের কাজ প্রায় শেষের দিকে।অয়ন নিজের ফোনটা বের করলো।স্ক্রিনে তার এবং প্রিসার কাছাকাছি অবস্থায় থাকা কিছু ছবি,যেগুলো সে একজনে দিয়ে এডিট করিয়েছে তবে তার মুখ ঝাঁপসা করে দেওয়া।তার পরিকল্পনা ছিলো বিয়ের কিছুক্ষণ পূর্বে সে নিহাদের নম্বরে এগুলো পাঠিয়ে দেবে যেন নিহাদ মানে বর বিয়েটা ভেঙে দিয়ে চলে যায়।তবে প্রিসার বরের জায়গায় নিহাদকে দেখে সে এটা করতে সাহস পাচ্ছেনা।কারণ সে জানে নিহাদ প্রিসাকে অবিশ্বাস করবেনা বরং সত্যি মিথ্যা যাচাই করে দেখবে।হইহুলোরের শব্দে অয়নের ধ্যান ভাঙলো।আশেপাশে তাকিয়ে সে বুঝতে পারলো বিয়ে হয়ে গিয়েছে।ছবিগুলো ডিলিট করে দিয়ে ফোনটা পকেটে ঢুকিয়ে রাখলো অয়ন।
সবাই এখন নতুন দম্পতির সাথে ছবি তুলতে ব্যস্ত।নিহাদের বন্ধুরা সবাই স্টেজে উঠে এসেছে তবে অয়ন আসেনি দেখে নিহাদ একজনে বললো তাকেও নিয়ে আসতে।তাদের একজন বন্ধু নেমে গিয়ে অয়নকে টেনে নিয়ে এসেছে।
” কিরে তোর খবর নেই কেন?দেখি আমার পাশে বস,একটা ছবি তুলি।”
না চাইতেও অয়ন জোড়পূর্বক হাসলো।অয়নকে দেখে প্রিসার অস্থিরতা বেড়ে গিয়েছে।ছবি তোলার ফাঁকে নিহাদ প্রিসার হাতে হাত রাখলো।ঘাড় ঘুড়িয়ে তার দিকে তাকালো প্রিসা।ক্যামেরাম্যান ক্যামেরা বন্দী করে ফেললো এই সুন্দর মূহুর্তটা।
.
.
ফুলে সজ্জিত বিছানায় বসে আছে প্রিসা।খানিকটা সময় আগেই তাকে এখানে বসিয়ে রেখে গিয়ে কয়েকজন মেয়ে।প্রিসার ধারণা ছিলো নিহাদ আরে ঘন্টাখানেক পরে আসবে কিন্তু তাকে ভুল প্রমাণিত করে দিয়ে সেই মূহুর্তে দরজা টেলে ভিতরে প্রবেশ করলো নিহাদ।এতো তাড়াতাড়ি নিহাদ এসেছে দেখে প্রিসা খানিকটা অবাক হলো বটে।
” এভাবে কি দেখছো রাণী?আমি জানি তো তোমার বরটা সুন্দর,তাই বলে আজকেই সব একসাথে দেখে ফেলবে।আরো দিন তো বাকি আছে,সেইদিনগুলোর জন্য কিছুটা জমিয়ে রাখো।”
” আপনি অয়নকে আগে থেকেই চিনতেন তাই না?”
বিছানায় বসছিলো নিহাদ,প্রিসার কথা শুনে থমকে গেলেও পরমুহূর্তে হেসে বসে পড়লো।দু’পা ভাঁজ করে বিছানার উপর বসলো সে।প্রিসার দিকে খানিক ঝুঁকে সে বললো, ” জ্বি আমি অয়নকে আগে থেকেও চিনতাম।এমনকি এটাও জানতাম তোমার প্রাক্তন প্রেমিক অয়ন আমারই বন্ধু।”
নিহাদের এতো সহজ উক্তি শুনে প্রিসার চোখ বড় বড় হয়ে গেলো।সে ভাবতে পারছেনা নিহাদ আগে থেকেই এই বিষয় সম্পর্কে অবগত।
” তাহলে আপনি এতোদিন বললেন না কেন?”
” হু…..এমনি।আচ্ছা তুমি কি কখনো এটা ভেবেছো আমি কিভাবে তোমাকে চিনতে পেরেছি আর কেনই বা তোমার স্কুলে টিচার হিসেবে যুক্ত হয়েছি।”
প্রিসা চিন্তা করলো।হ্যাঁ তার মনে এসব প্রশ্ন এসেছিলো তবে অন্য চিন্তার ভিড়ে তা হারিয়ে গিয়েছে।
” কিভাবে চিনতে পেরেছেন আমাকে?নিশ্চয়ই স্কুল থেকেই চিনবেন।কারণ এর আগে তো আমাদের দেখা হয়নি।”
নিহাদ মুচকি হাসলো।দু’হাতে প্রিসার গাল দুটো টেনে দিলো।
” মোটেও না রাণীজি।তোমাকে আমি তার আগে থেকেও চিনতাম।তোমার সাথে আমার দ্বিতীয়বার দেখা হয়েছিলো রাস্তায়,যেদিন তুমি আমার বোন নিরাকে প্রটেক্ট করেছিলে।আমি রাস্তার অপরপাশেই ছিলাম,তোমাকে দেখে এগিয়ে আসিনি।”
আজকে প্রিসা খানিক পরে পরেই অবাক করা তথ্য জানতে পারছে।নিহাদ আরো খানিকটা ঝুঁকে প্রিসার মুখে হালকা ফুঁ দিলো।তৎক্ষনাৎ চোখজোড়া বন্ধ হয়ে গেলো প্রিসা।
” অয়নের রিসেপশনে তোমাকে আমি প্রথমবার দেখেছিলাম।”
চোখ খুলে ফেললো প্রিসা।সে ঠিক শুনেছে কিনা বুঝতে পারছেনা।
” কি বলেছেন আবার বলুন তো।”
” আমি অয়নের রিসেপশনে তোমাকে প্রথমবার দেখেছিলাম।আমি সেইদিন শুধু জানতাম তোমরা কাজিন কিন্তু পরে জানতে পেরেছি অয়ন তোমার প্রাক্তনও।অয়নের স্বভাব সম্পর্কেও আমি আগে থেকেই অবগত।তাকে আগে থেকে চিনতাম বলেই তো সেদিন আমার বুঝতে সমস্যা হয়নি অচেনা নম্বর থেকে অয়নই ফোন করেছিলো কিন্তু অয়ন চিনতে পারেনি।কারণ আমি আমার অন্য আরেকটা সিম দিয়ে তোমার এবং তোমার পরিবারের সাথে যোগাযোগ করতাম।অয়নকে আমি কলেজ লাইফ থেকে এরকমই দেখে এসেছি।আমরা কয়েকজন বলতাম কিন্তু আমাদের মধ্যেও কয়েকজন তার মতো ছিলো।কি করতাম বন্ধু ছিলো তাই ছাড়তে পারিনি।আমি জানতাম অয়ন আমার বিয়েতে আসবে তাই আমি আমার হবু বউয়ের নাম বা ছবি আমার কোন বন্ধু বা তাকে বলিনি।কেন বলিনি তা জানিনা তবে অয়নকে সারপ্রাইজ দিতে ইচ্ছে করছিলো।অয়ন আগে থেকে জানতে পারলে হয়তো আমাকে তোমার ব্যপারে খারাপ কথা বলতো তাই আমি সব লুকিয়ে গিয়েছি।অনেক কথা হলো এবার যাও এসব ভারী কাপড়,গহনা খুলে হালকা কিছু পড়ে এসেছো।মেকাপ করে একেবারে ভুত বানিয়ে দিয়েছে আমার রাণীটাকে।ওই পার্লারে তালা দিতে হবে দেখছি,একটুও ভালো মেকাপ করতে পারেনা।”
পার্লারকে বকতে বকতে নিহাদ বিছানা থেকে নেমে গেলো।প্রিসাকে তার ব্যাগটা এগিয়ে দিয়ে সে ওয়াশরুমে চলে গেলো।নিহাদ চলে গেলেও প্রিসা এখনো থম মেরে বসে আছে।যে অয়ন থেকে সে দূরে দূরে থাকতে চাইছে সেই অয়ন কিনা তার বরের বন্ধু আবার সবকিছু সে আগে থেকেই জানতো।ভাবতে পারছেনা,প্রিসা আর কিছু ভাবতে পারছেনা।
চলবে………
#শরতের_এক_সাঁঝবেলায়
#পর্বঃ২৬
#লেখিকাঃঅনন্যা_অসমি
নতুন সকাল,নতুন দিন,নতুন কোন সম্পর্কে সূচনা।সকালে স্বভাবগত প্রিসা তাড়াতাড়ি উঠে পড়েছে।গোসল করে পরিপাটি হয়ে রুমে থেকে বেরিয়ে এলো সে।নিহাদরা একটা ফ্ল্যাটে থাকে,যেটা তাদের নিজেদের।প্রিসা ভেবেছিলো এখনো কেউ উঠেনি কিন্তু রান্নাঘরে এসে দেখলো তার শাশুড়ী মুনতাহা বেগম রান্না করছেন।
” শুভ সকাল মা।”
মুনতাহা বেগম পেছন ফিরে তাকালেন এবং মিহি স্বরে প্রিসাকেও শুভ সকাল বললেন।প্রিসা এগিয়ে এসে উনার পাশে দাঁড়ালো।
” মা আমি বরং বাকি কাজগুলো করি,আপনি যান।”
” না আপাতত তার দরকার নেই।তুমি নতুন এসেছো,এখনো ঘরের ঠিকঠাক কিছু জানোনা।আরো কিছুদিন যাক,সবার সাথে মিশো,চেনো-জানো তারপর না হয় আস্তে আস্তে ঘরের কাজে হাত দেবে।”
” সমস্যা নেই মা,আমি ঘরের কাজ সব পারি।আপনি শুধু আমাকে জিনিসগুলো কোথায় রাখা আছে তা একটু দেখি দিলেই হবে।”
” এতো করে যখন বলছো তখন না হয় আজ চা’টাই তুমি বানাও।আমি জিনিস নামিয়ে দিচ্ছি,সাবধানে কাজ করো।”
আঁচল গুঁজে প্রিসা চা বানাতে লেগে পড়লো।বানানোর আগে মুনতাহা বেগম বলে দিয়েছেন যেন রং চা বানানো হয়,তারা দুধ চা সবসময় খায় না।খানিকের মধ্যেই প্রিসা লক্ষ্য করলো মুনতাহা বেগম ফ্রী টাইপের মানুষ নন,অনেকটা মাঝামাঝি ধাচেঁর তিনি।কথা বলার সময় নিহাদের মুখে একটা হাসির আভাস থাকে কিন্তু অন্যদিনে মুনতাহা বেগম ভালো ভাবেই কথা বলছেন ঠিকই তিনি উনার কথায় কেমন যেন একটা গাম্ভীর্যের ছোঁয়া বিদ্যমান।চা হয়ে গেলে প্রিসা চারটা কাপে চা ঢেলে বাকিগুলো ফ্লাশে রেখে দিলো।তারপর মুনতাহা বেগমের সাথে সাথে বাকি কাজগুলোও এগিয়ে দিলো।
প্রিসা রুমে এসেছিলো নিহাদকে জাগাতে কিন্তু এসে দেখলো নিহাদ আগেই উঠে গিয়েছে।রুমের সাথে লাগোয়া ছোট বারান্দায় দাঁড়িয়ে ছিলো সে।
চায়ের কাপটা বাড়িয়ে দিয়ে প্রিসা প্রশ্ন করলো, “স্কুলে যাবেন?”
না’বোধক মাথা নাড়িয়ে চায়ের কাপে চুমুক দিলো নিহাদ।
” কেন?আর কি স্কুলে যাবেন না?”
” কেন যাবোনা?অবশ্যই যাবো তবে এখন নয় পরের সপ্তাহ থেকে।”
” আর আমি?আমাকে কি আর চাকরি করতে দেবেন না?” খানিকটা ভীত গলায় প্রশ্ন করলো প্রিসা।
” না দেবো না।এখন তোমার বিয়ে হয়েছে।এখন তোমার কাজ হচ্ছে ঘর সামলানো আর আমাদের সবার আ’দেশ পালক করা।চাকরি করার কথা মাথা থেকে ঝেঁড়ে ফেলো।” বলেই আবারো চায়ের কাপে চুমুক দিলো নিহাদ।নিহাদের কথা শুনে প্রিসা থমকে গেলো।সে বিশ্বাস করতে পারছেনা সে যা শুনেছে তা নিহাদ নিজ মুখে বলেছে।বিয়ের আগে তাদের এই বিষয়ে ফোনে একবার কথা হয়েছিলো তখন নিহাদ মত দিয়েছিলো কিন্তু এখন সেই নিহাদের মুখে ভিন্ন কথা শুনে প্রিসা অবাক না হয়ে পারলোনা।
” নিহাদ আপনি এসব কি বলছেন!আমাদের তো আগেও এই বিষয় নিয়ে কথা হয়েছিলো।আপনি এভাবে নিজের কথা থেকে সরে আসতে পারেন না।”
” আরে ধুর তুমি এখনো ওই কথা মনে রেখে বসো আছো।দেখো,তখন আমার মাথায় শুধু তোমাকে বিয়ে করার চিন্তা ছিলো তাই তোমার কথায় হ্যাঁ বলে দিয়েছি।এখন তো তুমি আমার বউ,তাই এখন বা’রণ করলেও তুমি কিছু করতে পারবে না।এখন এসব ইমোশনাল কথা বলা বন্ধ করো,সকাল সকাল মুডটা নষ্ট করোনা।এই নাও কাপ,যাও মায়ের কাজে সাহায্য করো।”
নিহাদের দিকে তাকিয়েই কাপটা নিলো প্রিসা।তার চোখজোড়াতে অবিশ্বাস্যের ছাপ।সে আশা করেনি নিহাদ বিয়ের পর প্রথম সকালেই তার মতামত বদলে ফেলবে,এ যেন এক অন্য নিহাদ দাঁড়িয়ে আছে তার সামনে।একটা ঘোরের মধ্যে চলে গিয়েছে প্রিসা,তার মুখ দিয়ে আপাতত কোন কথা বের হচ্ছেনা।পেছন ফিরে দু’কদম এগোতেই আঁচলে টান অনুভব করলো সে।ঘাড় ঘুড়িয়ে দেখলো নিহাদ তার আঁচলে নিজের মুখ মুছছে।একমুহূর্তের জন্য মনে হলো আঁচলটা টান দিয়ে তার হাত থেকে ছাড়িয়ে নিতে কিন্তু সে করলোনা এরকমটা,তাকিয়ে রইলো।আঁচল টেনে প্রিসাকে আবারো নিজের সামনে এনে দাঁড় করালো নিহাদ।
” এতো তাড়াতাড়ি আমাকে অবিশ্বাস করে নিলে রাণী?” আহ’তকন্ঠে বললো নিহাদ।প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে তার দিকে তাকালো প্রিসা।হালকা হেঁসে প্রিসার মাথায় এক হাত রেখে নিহাদ বললো,
” তোমাকে পাওয়ার জন্য আমি কতটা পথ যে পাড়ি দিয়েছি সেটা হয়তো তুমি জানোনা রাণী।আমার পরিবারের পর বর্তমানে তুমিই একমাত্র আমার সব।আমি কথা দিয়ে কথা থেকে সরে আসিনা,আমার বাবা-মা সবসময় এক কথার মানুষ ছিলেন,এখনো আছেন।তাদের সন্তান হয়ে আমি কি করে নিজের কথা পরিবর্তন করতে পারি আর যদি মানুষটা তুমি হও তাহলে তো কখনোই তা সম্ভব নয়।তোমার সাথে একটু মজা করেছিলাম,ভেবেছিলাম তুমি হয়তো আমাকে ব’কা দিয়ে বলবে, ‘ একদম মজা করবেন না।আমি জানি আপনি মিথ্যা বলছেন।’ কিন্তু তুমি তো আমাকে অবিশ্বাস করলে।” একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে নিহাদ আবার বললো, ” যাইহোক কি করার।আমার কথায় ক’ষ্ট পেওনা,পরের সপ্তাহ থেকে তুমিও আগের মতো স্কুলে যাবে।আর চিন্তা করোনা বাড়িতে আগেই আমি এই ব্যপারে কথা বলেছি।কারো সমস্যা নেই।দুঃখিত তোমার সাথে মজা করে উচিত হয়নি।তুমি বরং মায়ের সাথে গল্প করো,আমি নিরাকে স্কুলে দিয়ে আসছি।” আঁচলটা আস্তে করে হাতের বাঁধন মুক্ত করে প্রিসাকে পাশ কাটিয়ে চলে গেলো নিহাদ।
প্রিসা বোকার মতো তাকিয়ে রইলো।যতক্ষণে সে পুরো বিষয়টা বুঝতে পেরেছে ততক্ষণে নিহাদ নিরাকে নিয়ে চলে গিয়েছে।হতাশ হলো প্রিসা।চায়ের কাপটা ধুয়ে রেখে রুমে চলে এলো সে।এখন তার রা’গ হচ্ছে,নিজের উপরও আবার নিহাদের উপরও।নিহাদ তো তাকে কিছু বলারই সুযোগ দিলোনা,তার আগেই ভুল বুঝে অভিমান করে চলে গেলো।ঘন্টাখানেক নিহাদের ফেরার অপেক্ষা করলো প্রিসা,কিন্তু যখন দেখলে নিহাদ ফিরছেনা তখন ফোন দিলো কিন্তু নিহাদ রিসিভ করলোনা।
.
.
বিয়ের দিন রাতে নূরজাহান আর আয়নার সাথে রাদ তাদের বাড়িতে ফিরে গিয়েছিলো।পালক তার মায়ের সাথে বাসায় গিয়ে যেহেতু তাদের কাছের বেশি আত্নীয় ছিলোনা তার কারণেই সব গুছিয়ে পালক বিকেলের মধ্যেই তার শশুর বাড়ি ফিরে এসেছে।
ঘন্টাখানেক আগেই বাড়িতে এসে পৌঁছেছে পালক।ফ্রেশ হয়ে দ্রুত বাড়ির কাজে লেগে পড়েছে সে।
” কি পালক বাপের বাড়ি থেকে তাহলে ফিরেছো।আমি তো আরো ভেবেছিলাম তুমি ফিরবে না।”
” আরে ফুফা কি বলছেন,আমাকে ছাড়া থাকতে পারবেন আপনারা?” হেসে বললো পালক।
” আমরা নাহয় মানিয়ে নেবো কিন্তু তোমার বর কি পারবে?হাহাহা……”
পালক খানিকটা লজ্জা পেলো।
” ফুফা আপনি বসুন আমি আপনার জন্য শরবত বানিয়ে আনছি।বাইরে থেকে এসেছেন নিশ্চয়ই ক্লান্ত আপনি।”
দ্রুত স্থান ত্যাগ করলো পালক।কয়েক মিনিট পর শরবতের গ্লাস নিয়ে এসে দেখলো আদিব সাহেব বাইরের পোশাক পরিবর্তন করে ঘরের পোশাক পড়ে নিয়েছেন।পালককে দেখে তিনি ফোনটা উল্টো করে রাখলেন।শরবতের গ্লাস এগিয়ে দিলো পালক।গ্লাস নেওয়ার সময় আদিব হোসেন প্রশ্ন করলেন,
” নূর কোথায়?বাইরে গিয়েছে নাকি?”
” জ্বি,মামণি আয়নাকে নিয়ে বাইরে গিয়েছে।চলে আসবে কিছুক্ষণের মধ্যে।”
আদিব সাহেব কিছু বললেন না তবে উনার হাবভাব দেখে পালকের সন্দেহ হলো যে উনি কিছু বলতে চাইছেন।বুঝতে পারলেও পালক নিজ থেকে জিজ্ঞেস করলোনা।চলে আসবে সেই সময়ই আদিব হোসেন তাকে ডাকলেন।
” একটু বসো তোমার সাথে কিছু কথা আছে।”
আদিব হোসেনের ডান পাশের সোফাতে বসলো পালক।অপেক্ষা করছে তিনি কি বলবেন তা শোনার জন্য।
” দেখো বউমা তুমি তো জানো রাদের শরীরটা বেশি ভালোনা।অনেকবার ডাক্তার দেখাতে হয়,প্রতিদিন নানা ধরণের ঔষধ খেতে হয়,ডাক্তার তো এর পাশাপাশি বলেছে তাকে হাঁটার চেষ্টা করতে,ব্যয়াম করতে কিন্তু সারাদিন অফিস,ক্লাইন্ড,হিসাব-নিকাশ,ব্যবসার লা’ভক্ষ’তি এসবের রাদ কোন কিছু ঠিক মতো মেনে চলে না।তুমি তো এতোমাস আছো এই বাড়িতে তুমি নিজেও জানো রাদ সবকিছু ঠিকঠাকভাবে মেনে চলছে না।সকালে অফিসে যায়,ফিরতে ফিরতে সন্ধ্যা পার হয়ে যায়।বাড়িতে এসেও অফিসের কাজ নিয়েই থাকে।তুমিই বলো এতো অনিয়ম করলে কি চলে?কত বলি কিন্তু আমার কথা তো সে শোনার পাত্র নয়।”
পালক মনোযোগ দিয়ে উনার কথা শুনতে লাগলো এবং বোঝার চেষ্টা করলো আসলে উনি কি বলছেন।
” দেখো বউমা আমি একটা পরামর্শ দিচ্ছি।রাদ এবং তুমি কয়েকমাস এসব থেকে ছুটি নাও,একান্তে সময় কাটাও,রাদকে ডাক্তারের বলা সব কিছু নিয়ম মতো কাজ করাও।দেখবে ও কয়েকমাসেই সুস্থ হয়ে যাবে।আমি নিশ্চয়ই তোমাদের খারাপ চাইবোনা।তাই বলছি আমার কথাটা তুমি ভেবে দেখো।রাদকে আমি আগেও বলেছি কিন্তু সে আমার কথা শোনেনি।এবার তুমিই বোঝাও মা।শরীর থাকলে তবেই না এসব কাজে আসবে।ভেবে দেখো আমার কথাগুলো।”
আদিব হোসেন উঠে চলে গেলেন।পালক পড়ে গেলো চিন্তায়।কি করবে এখন সেটাই ভাবছে।
চলবে……