#ভাগ্য
সাদমান হাসিব সাদ
আজ আমার বিয়ে,,
কিভাবে এই বিয়ে ঠিক হলো জানিনা, কারণ এর আগে অনেকে আমার দেখে গেছে কিন্তু কেউ ছেলের বউ হিসেবে আমাকে পছন্দ করেনি।
আজ আমার যার সাথে বিয়ে হচ্ছে তার নাম আদিব, দেখতে অনেক সুন্দর, আমি জানি সে আমাকে পছন্দ করেনি, কিন্তু তার মা বাবা আমাকে পছন্দ করেছে।
আদিব আমাকে পছন্দ না করার পিছনে যুক্তি আছে, আমি দেখতে অতিব কালো, আদিবের মত স্মার্ট হ্যান্ডসাম ছেলের পক্ষে আমাকে পছন্দ না করাই যুক্তিযুক্ত।
আদিবের মা বাবা আমার রুপ দেখে না হয়তো আমার ভালো কিছু দিক দেখে ছেলের বউ বানাতে চেয়েছে, আমি কওমি মাদ্রাসায় লেখাপড়া করেছি, বড় হবার পর থেকে বাড়ির বাহিরে বের হলে বোরকা পড়ে বের হয়েছি, কোন বেগানা পুরুষ আমার চেহারা দর্শন করতে পারেনি।
ছোট থেকে নামায রোজা, ধর্মীয় আচার ব্যবহারে নিয়মকানুন মনোযোগ দিয়ে মেনে চলছি।
এই দিকগুলো বিবেচনা করেই হয়তো আদিবের মা বাবা ছেলের বউ করতে রাজী হলো।
আদিব আমাকে স্ত্রী হিসেবে কতটা ভালোবাসবে জানিনা, আমি চাইব আমার সমস্ত মন প্রাণ উজাড় করে তাকে ভালোবাসতে তার আদেশ নির্দেশ মেনে চলতে।
যে শ্বশুর শাশুড়ী আমাকে ছেলের বউ করে নিয়ে যাচ্ছে তাদের সেবাযত্ন করতে, তাদের মনমতো চলতে।
বাসর রাতে আমি স্ত্রী হিসেবে নয় রক্ষিতা হিসাবে স্বামীর কাছে গ্রহণযোগ্য হলাম।
আদিব আমাকে বলে দিল,
দেখো তোমার মতো মেয়ে আমার স্ত্রী হবার যোগ্য না, মা বাবার মুখের দিকে চেয়ে তোমাকে বিয়ে করতে বাধ্য হয়েছি।
তুমি আমার রক্ষিতা হয়ে থাকতে পারো, স্ত্রী হয়ে থাকতে পারবেনা, চাইলে কালই চলে যেতে পার।
আমি তাকে বলেছি, বিয়ে যখন হয়েছে তখন এই বাড়িই আমার বাড়ি, আপনি আমাকে রক্ষিতা ভাবেন আর যাই ভাবেন আপনি আমার স্বামী, কালিমা পড়ে আপনার সাথে আমার বিয়ে হয়েছে, আমি এই বাড়ি থেকে কোথাও যাচ্ছি না।
কথা শেষ না হতেই আদিব তার পুরুষত্ব জাহির করতে ঝাপিয়ে পড়ে আমার উপর।
অমানবিক জুলুম করে প্রমাণ করে দেয়, আমি তার রক্ষিতা। আমার চোখের জল তার নজরে আসেনি, কেন আসবে আমার কষ্ট তার কাছে কিছুই না, সে ব্যস্ত তার কামনার নেশায়।
সকালে বিছানা থেকে উঠতে গিয়ে বুঝতে পারছি, আমি আদিবের কাছে সত্যিই রক্ষিতা, না হলে কেউ স্ত্রীর সাথে এমন নিষ্ঠুর অত্যাচার করতে পারে না।
আমার মা বাবা খুব খুশি ভালো ঘরে আমাকে বিয়ে দিয়ে, বৌভাতে এসে আমাকে জিজ্ঞাস করেছিল, মা তুই কেমন আছিস।
মুখে একটু হাসি এনে বলেছি, আমি অনেক ভালো আছি।
আমার মলিন মুখ, চোখের নিচে ঘুম না হওয়া কালো দাগ দেখেও মা বাবা বুঝতে পারেনি আমি কতটা ভালো আছি।
তাদের ধারণা বড় ঘরে বিয়ে দিয়েছে মেয়ে তো সুখেই আছে।
বিয়ের পর বাবার বাসায় দুইবার গিয়েছি, বাবা এসে একবার নিয়ে গিয়েছে আমি একা যাই বাবার সাথে আদিব যায়নি, অনেক জোড়াজুড়ি করেছে বাবা। আদিব বাবার মুখের উপর বলে দিয়েছে,
আপনি আপনার মেয়েকে নিয়ে যান, আমাকে জোর করবেন না আমি আপনার মেয়েকে কখনো স্ত্রী মনে করি না, আর শ্বশুরবাড়ি যাবো প্রশ্নই আসেনা।
আদিবের কথা শুনে বাবার চোখে পানি চলে আসে, আমি একাই বাবার সাথে যাই, কয়েকদিন থাকার পর আমার শ্বশুর আমাকে নিয়ে আসেন।
শ্বশুরবাড়ি আসার সময় মা আমাকে ধরে খুব কান্না করে, বলে মা রে কি করবি তোর ভাগ্যে আছে এমন স্বামী, তাকে নিয়েই তোকে জীবন কাটাতে হবে, আল্লাহ আল্লাহ কর হয়তো আদিব একদিন তোকে ভালোবাসবে, কি আর করবি মেয়েদের ভাগ্যই এমন, শত জ্বালা যন্ত্রণা সহ্য করে স্বামীর সংসার করতে হয়।
প্রায় এক বছর হতে চলল আমাদের বিয়ের, এই এক বছরে আদিব আমাকে কখনো স্ত্রীর চোখে দেখেনি, তার সেই রক্ষিতা হয়েই আছি, রাত কিংবা দিন নয় যখন ইচ্ছা ললসা মিটাতে ঝাপিয়ে পড়ে আমার উপর আমার কষ্ট তার চোখে পড়ে না।
বাধা দিতে গেলে গায়ে হাত তুলে, একরাতে নেশা করে বাসায় এসে খুব অত্যাচার শুরু করে, আমি প্রতিবাদ করাতে খাট থেকে লাথি মেরে আমাকে ফ্লোরে ফেলে দেয়, আমার পায়ে আঘাত লাগে,আমি ব্যথায় চিৎকার করে উঠি।
আদিব বলে,
আমার চাহিদা পূরণ করতে না পারলে আমার খাটে তোর জায়গা হবেনা, থাক ফ্লোরে পড়ে, সারারাত সেখানেই থাক খাটে শুইতে আসবি না।
আমার কান্না তার মনকে নরম করতে পারেনি, একবারও জানতে চায়নি আমি কেন কান্না করছি সারারাত বসে ছিলাম খাটে মাথা দিয়ে পা ব্যথায় উঠতে পারিনি।
সকালে ঘুম ভেঙে আদিব বলল, চা এনে দিতে, আমি অনেক কষ্টে চা করে নিয়ে আসি।
শাশুড়ী মা আমার পায়ের দিকে চেয়ে জানতে চায় কি হয়েছে, আমি বলেছি বাথরুমে পড়ে গিয়েছিলাম।
শাশুড়ী মা শ্বশুরকে বলে ওষুধ এনে দিয়েছে।
আমি কয়েকদিন পা নিয়ে ঠিকমত হাটতে পারিনি, তা দেখেও আদিব একটি বার জিজ্ঞাস করেনি বা ওষুধ এনে দেয়নি, সেই অবস্থায় আমার উপর সে স্বামীত্ব দেখিয়েছে।
চলবে,,,