#অনুবদ্ধ প্রণয় 💛
#ইবনাত_আয়াত
~ পর্ব. ১৫
‘উহুম! কার সঙ্গে কথা হচ্ছে? বউয়ের সাথে? কিন্তু.. শর্ত কী ছিল? বিয়ের আগ অবদি বউয়ের সঙ্গে কোন কথা বলা বা দেখা করা যাবে না। তবুও?’
আমার কথায় ভাইয়া হকচকিয়ে উঠল৷ হেসে বলল, ‘এই রে! কী-রে তুই সত্যিই আমাদের মাঝে ভিলেন হবি বল?’
‘ইয়াহ অফ কোর্স! তুমি যদি আমার কথা না মানো তো অবশ্যই ভিলেন হবো।’
‘আচ্ছা.. বউয়ের সঙ্গে কথা বললেও দোষ?’
‘অবশ্যই দোষ। বিয়ে হয়েছে, কিন্তু এখনো বউ তোমার ঘরে উঠেনি বুঝেছ? গায়ে হলুদ শেষে কাবিন নামা হবে, তারপর যা খুশি করো। আর যদি শর্ত না মানো, তাহলে.. ৫০ হাজার দিয়ে দাও। কাজ হয়ে যাবে।’
ভাইয়ার চোখ চড়কগাছ, ‘এহ! পুরো পঞ্চাশ হাজার?’
‘ইয়াপ!’
‘যাব্বাবা। ইফা রাখ। তোর ননদ যা শুরু করেছে এতে মনে হয় না, আমরা ঠিকভাবে বাসর টাও সাড়তে পারব।’
ভিডিও কলে দেখতে পেলাম ইফা আপু চোখ বড় বড় করে ফেলেছে। দ্রুত লজ্জা লুকোতে কল কে’টে দিল। আমি হাসতে হাসতে কুটিকুটি হয়ে গেলাম৷ এর মাঝে হঠাৎ কেউ বলে উঠল, ‘বউ আমার নিজের হাসবেন্ডের সাথেই কথা বলে না, তোকে তোর বউয়ের সঙ্গে কথা বলতে দিবে? আনপসিবল (ইম্পসিবল) ম্যান।’
তাহমিদকে নজরে হাসতেই হাসি মুখখানা গম্ভীর করে ফেললাম। তাহমিদ এসে ভাইয়ার পাশে বসলেন। তার কাঁধে হাত রেখে বললেন, ‘ভাই, কী আর বলব। তোর বোন টা এত জ্বালাচ্ছে আমায়। শান্তি নেই, শান্তি নেই।’
তেলেবেগুনে জ্বলে উঠলাম। তাদের সামনে এসে কোমড়ে হাত রেখে বললাম, ‘আচ্ছা? আমি জ্বালাচ্ছি আপনাকে? ভাইয়া! তোমার বন্ধুকে বলে দাও, আমার কাছে না আসতে, তাহলেই আর কখনো জ্বালাব না।’
বলেই বেরিয়ে এলাম। এদিকে শুনতে পেলাম৷ ভাইয়া বলছে, ‘কী রে? তোদের মাঝে আবার কী হলো?’
‘আর বলিস না। তোর বোন একটু রাগ করেছে। তাই কথা বলছে না।’
‘হ্যাঁ সাথে আমাকেও আমার বউয়ের সাথে কথা বলতে দিচ্ছে না।’
‘আহারে দুঃখ কই রাখি রে ভাই।’
আপনমনে হেসে ফেললাম।
____________
‘আপু… আসো না। এমন করছো কেন?’
‘দেখ রুবি আমার ইচ্ছে করছে না। প্লীক জোর করিস না।’
‘তোমার বরও ওখানে আছে। চলো না প্লীজ। প্লীজ চলো।’
‘আমি গান পারি না রুবি।’
‘তো গান পারো না তো কী হয়েছে? আসরে থাকতে সমস্যা কী? চলো নয়তো তুলে নিয়ে যাব।’
‘রুবি প্লীজ.. পরে।’
‘না এখন!!’
‘রুবি….’
সে আমায় বলার সুযোগ না দিয়ে নিচে নিয়ে এলো। সবাই গোল হয়ে বসে আছে। আর তাহমিদ আর ভাইয়া সোফায় বসে আছে। তাহমিদ আমার দিকে তাকিয়ে চোখ টিপ দিতেই বড় বড় চোখে তাকালাম। রুবি আমায় তাদের মাঝে বসিয়ে দিল।
‘নাও খেলা শুরু করো।’
রীনা বলল, ‘এবারের গান টা গাইবে ভাইয়া। কোন ভাইয়া? ইবনান ভাইয়া গাইবে।’
ভাইয়া বলল, ‘বউ কে ছাড়া গান গাইব? নো ওয়ে। তোদের বোন তো আমাকে বউয়ের সাথে কথাই বলতে দিচ্ছে না।’
চোখ গরম করে তাকাতেই ভাইয়া চুপসে গেল। সীমা বলল, ‘আচ্ছা তাহলে দুলাভাই! আপনি গান।’
তাহমিদ বললেন, ‘আরে আমি..’
‘নো নো। গাইতে হবে। হবেই হবে।’
এক দৃষ্টিতে চেয়ে রইলাম তার দিকে। সে আমার দিকে তাকাল। কেঁশে গলা পরিস্কার করল। তারপর ভাইয়ার হাত থেকে গিটার টা নিয়ে সুর তুলল। আমার দিকে এক পলক তাকিয়েই গাওয়া শুরু করল,
‘তোমরা কেউ কী দিতে পারো,
প্রেমিকার ভালোবাসা!
দেবে কী কেউ জীবনে উষ্ণতার,
সত্য আশা!’
ভ্রু কুঁচকে তাকালাম তার দিকে। সে গাইছেই,
‘ভালোবাসার আগে নিজেকে নিও বাজিয়ে
আমার মনের মত নিও সাজিয়ে
আমি বড় অসহায় অন্য পথে
একটি নাটক-ই দেখি মহাকালের মঞ্চে
ও আমায় ভালোবাসেনি
অসীম এ ভালোবাসা ও বোঝেনি
ও আমায় ভালোবাসেনি
অতল এ ভালোবাসা তলিয়ে দেখেনি
তোমরা কেউ কি করবে আমার জন্য অপেক্ষা?
ভালোবাসবে শুধুই আমায়, করবে প্রতিজ্ঞা
তোমরা কেউ কি করবে আমার জন্য অপেক্ষা?
ভালোবাসবে শুধুই আমায়, করবে প্রতিজ্ঞা
ভালোবাসার আগে নিজেকে নিও বাজিয়ে
আমার মনের মত নিও সাজিয়ে
আমি বড় অসহায় অন্য পথে
একটি নাটক-ই দেখি মহাকালের মঞ্চে
ও আমায় ভালোবাসেনি
অসীম এ ভালোবাসা ও বোঝেনি
ও আমায় ভালোবাসেনি
অতল এ ভালোবাসা তলিয়ে দেখেনি
এত ভিড়েও আজও আমি একা
মনে শুধু-ই যে শূন্যতা
এত ভিড়েও আজও আমি একা
মনে শুধু-ই যে শূন্যতা
আঁধারে যত ছড়াই আলো
সবই আঁধারে মিলায়
ও যে কোথায় হারালো
ব্যথা কাকে যে শুধাই…’
ওহ্ আচ্ছা? তো কিসের দুঃখ বিলাস করছিস তুই? তুই একা? তোর কেউ নেই? আর.. ও আমায় ভালোবাসেনি তাই না? এই লাইন টা তো আমার বলার কথা ছিল৷ তুই কোন উদ্দেশ্যে বললি? দাঁড়া তুই একবার রুমে আয়। তারপর মজা বুঝাচ্ছি। আয় একবার রুমে!!!
__________
তাহমিদ রুমে আসতেই তার কলার চেঁপে ধরলাম। তিনি চমকে বললেন, ‘আরে আরে কী করছো ইয়ানাত? পাগল হয়ে গেলে নাকি? এভাবে গুন্ডির মতো কেউ বরের কলার ধরে?’
চিবিয়ে চিবিয়ে বললাম, ‘আচ্ছা? প্রেমিকার ভালোবাসা লাগবে?’
‘হোয়াট? কী বলছো এসব? বউ থাকতে প্রেমিকা কেন?’
‘তো? কাকে বলছিলেন প্রেমিকার ভালোবাসা দিতে?’
‘আরে ওটা তো জাস্ট একটা গান।’
‘গান? তাই না? গান? আপনার সঙ্গে তো গান টা মানায় না! কী জানি বললেন? প্রেমিকার ভালোবাসা দিতে? তো আমি আছি কী করতে? আর.. আমি আপনাকে ভালোবাসিনি? না-কি আপনি? কী বলুন!’
‘আরে এভাবে গুন্ডির মতো কলার চেঁপে ধরে আছো কেন। ছাড়ো তো.. নইলে আমার প্রেস্টিজ থাকবে?’
‘ওপস! শাট আপ! যা বলছি তাই বলুন।’
তিনি এবার আমার হাত ধরে ঘুরিয়ে আমাকে দেওয়ালের সাথে চেঁপে ধরলেন। চমকে গেলাম, ‘ক-কী করছেন?’
‘কেন? তুমি কী একবারো জানার চেষ্টা করেছ এ ক’দিন আমি কেমন ছিলাম? করেছ? না করোনি। কারণ আমার চিন্তা তো তোমার কভু হয়নি। আর হবেও না হয়তো।
আর প্রথমত না বলে চলে এসেছিলে। এখানে আসার পর থেকে ভালোভাবে কথাই বলছ না। কেন? কী হয়েছে? তুমি কী জানো এই চুপ থাকা টা আমার হৃদয় ক্ষত-বিক্ষত করে দিচ্ছে?’
মুখ খুললাম, ‘আচ্ছা? তো আমার কেমন লেগেছিল যখন আপনি আমার কোন উত্তর না দিয়েই চলে গিয়েছিলেন? আমার কেমন লেগেছিল যখন আপনি আমায় রিজেক্ট করেছিলেন।’
‘আমি তোমাকে রিজেক্ট করেছি? আই সোয়ের ইয়ানাত! আমি তোমাকে বলেছিলাম যে আমি পরে বলব।’
‘তখন কেন বলতে পারেন নি? কেন পরে বলতে হবে আপনাকে? আমি যে একটা মানুষ সেটা কী আপনার চোখে পড়ে না? আমারো যে অনুভূতি আছে এটা আপনি বুঝতে পারছেন না?’
তিনি করুন দৃষ্টিতে চেয়ে রইলেন তিনি। তার থেকে ছাড়িয়ে চলে যেতে লাগলাম। হঠাৎ তিনি পেছন থেকে বলে উঠেন,
‘May be I love you!’
পা জোড়া থেমে গেল। শীতল পরশ সর্বাঙ্গে ছেঁয়ে গেল। কাঁপা চাহনীতে তার দিকে ফিরলাম। এ কী বললেন তিনি?
সে করুন দৃষ্টিতে চেয়ে আছে আমার দিকে। কাঁপা স্বরে বললাম, ‘হ-হোয়াট?’ তিনি মাথা নাড়লেন। এগিয়ে যেতে নিলেও থেমে গেলাম। সে আই লাভ ইউ বলেনি। সে মেই বি আই লাভ ইউ বলেছে। মানে হয়তো! কিন্তু সে আমায় পরিপূর্ণ ভাবে ভালোবাসে না। কেন আমি এই ঠুনকো ভালোবাসায় আসক্ত হবো।
পেছন ফিরে চলে আসতে নিলেই তিনি ডাক দিলেন, ‘ইয়ানাত! কী হয়েছে? চলে যাচ্ছ কেন? একবার ফিরে দেখো?’
কিন্তু আমি ফিরলাম না। দৌড়ে নিচে নেমে এলাম। চোখে পানি। কানে একটা শব্দই বাজছে,
“May be I love you!”
[চলবে.. ইন শা আল্লাহ]