#অনুবদ্ধ প্রণয় 💛
#ইবনাত_আয়াত
পর্ব: ১৬ [সামথিং স্পেশাল 😁]
বিয়ের তোরজোর চলছে। আজ গায়ে হলুদ। আপন কাজে মত্ত সবাই। হইচই, হৈ-হুল্লোড়ে ব্যস্ত সবাই। নাচানাচি, ঘুরাঘুরি, গান বাজনা আরো কত কী?
রঙ বেরঙের শাড়ি পড়তে ব্যস্ত সবাই। সাজতে ব্যস্ত। লাল ব্লাউজের সঙ্গে সাদা শাড়ি পড়েছি আমি। প্রসাধনী ছাড়াই তৈরি হয়েছি। বাকিরা মেক-আপ করতে ব্যস্ত।
নিজের রুমে ফিরে এলাম। এই মুহুর্তে তাহমিদ নেই। বন্ধুর সঙ্গে হৈ-হুল্লোড়ে ব্যস্ত সে। কাল থেকেই তার সঙ্গে একদম কথা বলিনি। রাতে বিছানায় শুয়েছিলাম একসাথে। কোলবালিশ টা মাঝখানে বর্ডার হিসেবে দিয়েছি। তার থেকে মুখ ফিরিয়ে ঘুমিয়েছি। সে অনেক কথা বলার চেষ্টা করেছে। কিন্তু আমি বরাবরই এড়িয়ে গেছি।
ভাবনার মাঝেই সামনে তাকাতেই তাহমিদ কে দেখতে পেলাম। ভাইয়া, তাহমিদ আর তার বন্ধুরা মিলে হাসাহাসি, হাতাহাতি করছে। হেসে ফেললাম তাদের কান্ডে। এখন তারা একদম বাচ্চা হয়ে গেছে। কিছুক্ষণ বাদে খেয়াল করলাম ভাইয়ার একটা ফ্রেন্ড তাকিয়ে আছে আমার দিকে৷ আমি সেটা লক্ষ করতেই দূরে সরে গেলাম। শুনতে পেলাম সে ভাইয়াকে বলছে,
‘ইবনান! ওটা কী তোর বোন?’
ভাইয়া বলল, ‘কোনটা?’
‘ওই যে সাদা শাড়ি পড়ল সে। একটু আগে এদিকে এলো। তুই না বললি তোর একটা বোন আছে। ওটা?’
‘হবে হয়তো!’
‘আমি তো ক্রাশ খেয়ে গেলাম। এত কিউট লাগছিল। অপ্সরীর মতো।’
‘এই চুপ! ওর দিকে নজর দিস না। লাভ নেই। ও এখন আমাদের তাহমিদের প্রিয়া।’
সবাই চমকে চিল্লিয়ে উঠল, ‘কীহহ?’
‘আরে আস্তে আস্তে।’
‘তাহমিদ সত্যি ও তোর গার্লফ্রেন্ড?’
তাহমিদের গম্ভীর কণ্ঠ শুনতে পেলাম, ‘আমার গার্লফ্রেন্ড না, আমার ওয়াইফ।’
‘হোয়াট? বিয়ে হয়ে গেছে তোর? আর তুই আমাদের বললি না? তাহমিদ এটা কী হলো?’
ভাইয়া বললো, ‘হুট করেই হয়ে গেছে ইয়ার। অনেক লম্বা কাহিনী। অন্য একদিন বলব।’
দীর্ঘশ্বাস ফেলে উপরে উঠে এলাম। কোথাও ভালো লাগছে না। কিছুক্ষণ বসে বসে সাজানরত কাজিনদের কান্ড দেখলাম। পুরো জন্ম কাটিয়ে দিলেও এদের সাজা শেষ হবে না। বিরক্তিকর। বাহিরে যাব। একটু রাতের হাওয়া লাগিয়ে আসি শরীরে।
বের হয়ে গলি দিয়ে আসার সময় হঠাৎ পাশের খালি রুম টা থেকে এক বলিষ্ঠ হাত টেনে রুমের ভেতরে নিয়ে দরজা আটকে দিল। ভয়ে শরীর হিম হয়ে এলো আমার। কাঁপা স্বরে অকপটে বলে উঠলাম, ‘ক-কে! কে?’
সে আমায় ছেড়ে দিতেই পা বাড়াব, ওমনি লাইট জ্বলে উঠল। তাহমিদের মুখশ্রী অবলোকন করতেই ভয় মিলিয়ে গেল। স্বস্তির শ্বাস নিলেও রে’গে বললাম, ‘কী সমস্যা? আপনি.. এভাবে আমায় নিয়ে এলেন কেন এখানে? জানেন কত ভয় পেয়ে গেছিলাম?’
তিনি এসে আমায় দেওয়ালের সাথে চেঁপে ধরলেন। আমায় উপর থেকে নিচ স্ক্যান করে বললেন, ‘এভাবে সেজেছো কেন?’
চোখ বড় বড় করে বললাম, ‘সেজেছি কেন মানে? কোথায় সেজেছি আমি?’
‘শাড়ি পড়েছো কেন?’
‘আজব আজ ভাইয়ার গায়ে হলুদ আমি শাড়ি পড়ব না? তা ছাড়া আমি তো সব সময়ই শাড়ি পড়ি আপনার সামনেই।’
‘ঠিক আছে। কিন্তু ছেলেদের থেকে দূরে থাকবে। বিশেষ করে আমার ফ্রেন্ড দের থেকে। এমনিতেই কীসব বলছিল তোমাকে দেখে। ওদের সামনে যাবেনা।’
‘কেন? গেলেও বা আপনার কী? ওরা অন্তত ক্রাশ খেলো। আপনি তো তাও না। আপনার জন্য তো সাজাই বেকার। তার থেকে অন্যদের জন্য সাঁজি। এতে ক্ষতি কী? পড়ে থাকুন নিজের অতীত নিয়ে। কভু আমায় বুঝতে পারবেন না।’
হঠাৎ সে আরো জোড়ে চেঁপে ধরল দেওয়ালে। বুঝতে পারলাম না তার মনোভাব, উদ্দেশ্য। সে অদ্ভুত এক দৃষ্টিতে অপলক চেয়ে আছে আমার দিকে। তার চোখে আজ অন্যরকম দৃষ্টি। হঠাৎ ঘোরলাগা কণ্ঠে বললেন,
‘বাঁধিব আমি তার মনে ঘর,
রাখিব তারে বাঁধানো বাসরে,
যদি সে নাহি চায় এই প্রেম,
তবে আমিই ভাসাব তারে প্রণয়ের সাগরে!’
চমকালাম, এক দৃষ্টিতে চেয়ে রইলাম তার নেত্রপল্লবের দিকে। সে কী বুঝাতে চায়?
সে আবারো বলল, ‘তবে কী সত্যিই আমি তোমাতে আসক্ত হয়ে গেলাম? তোমার বিরহবেদনায় ব্যাথিত হলাম? তবে কী.. হৃদস্পর্শিনী আমার মনে ঘর বেঁধে ফেলল?’
‘সত্যি কী তাই? আপনার মন চুরি করে নিলাম আমি? কিন্তু আমি যে ব্যর্থ! আপনি কভু আমায় বুঝবেন না।’
তাকে ছাড়িয়ে চলে আসতে নিলেই সে পূণরায় দেয়ালে মিশিয়ে ফেললো আমায়। আহত গলায় বলল, ‘তোমায় বুঝেছি তো সেই কবেই, তবে বলতে পারিনি প্রিয়া। আর দুঃখ দিও না আমায়। এই ক’টা দিন আমি পারিনি তোমার অবহেলা নিতে। আর ক’দিন এভাবে থাকলে আমি পাগল হয়ে যাব ইয়ানাত। এমন করো না আমার সাথে। দয়া করো!’
নেত্রকোণে জমা জল আড়াল করে বললাম, ‘ছাড়ুন আমায়..’
‘যতদিন না আমার সঙ্গে ঠিকভাবে কথা বলছো ততদিন এভাবেই নিজের কাছে বেঁধে রাখব তোমাকে।’
‘তবে কথা বললে ছেড়ে আবারো অতীত নিয়ে পড়ে থাকবেন? তার চেয়ে বরং অবহেলাই করি?’
‘ইয়ানাত?’
করুন কণ্ঠে শুধালেন তিনি। বরাবরই তার এই দৃষ্টি, এই কাতুরে গলা বুকে তীরের মতো বিঁধছে। মাথা নিচু করে রইলাম। তার দিকে এই মুহুর্তে তাকাতে বারংবার ব্যার্থ হচ্ছি। তিনি বললেন, ‘আর কত? এই দূরত্ব কী কভু ঘুচবে না?’
‘হয়তো না।’
ভাঙা গলায় কথা টি বলে তাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে চলে আসতে নিলেই সে পেছন থেকে বলে উঠে,
‘ভালোবাসি হৃদস্পর্শিনী! সত্যি খুব ভালোবাসি। এই বদ্ধ মনের চিলেকোঠার অনুভূতি আজ বাঁধ মানতে পারছে না প্রিয়া। ভালোবেসে ফেলেছি তোমায়। আমার হৃদয় তুমি কবেই হরণ করে নিয়েছো হৃদহরণী। আজ মন থেকেই দিয়ে দিলাম।’
শীতল হাওয়া বয়ে গেল চারপাশ দিয়ে। এ আমি কী শুনছি? এটা কী স্বপ্ন? না-কি বাস্তব? ঘোর যেন কাটছেই না, মানে কী.. সত্যি.. তাহমিদ?
পেছন ফিরলে তার মায়াময় মুখ টা নজরে এলো। সে উত্তরে আশায় চেয়ে আছে। হাতে চিমটি কাটতেই সে হেসে ফেলল। অদ্ভুদ মুগ্ধতা জড়িত তার হাসি। সে হেসে বলল, ‘এটা বাস্তব বউ! তুমি কোন স্বপ্ন দেখছো না। আর স্বপ্নে কেউ নিজেকে চিমটি কাটে না।’
অশ্রুমিশ্রিত চোখে বিস্ময় নিয়ে হেসে বললাম, ‘মানে? আ.. আহ.. আমি কিছু.. বুঝতে পারছি না! আপনি.. কী বললেন একটু.. আগে?’
তাহমিদ নেশান্বিত দৃষ্টিতে চেয়ে বললেন, ‘ভালোবাসি!’
এ যেন স্বর্গে পৌছে গেলাম আমি। আচমকা দৌড়ে তার বুকে ঝাঁপিয়ে পড়লাম। কেঁদেই ফেললাম যেন, ‘কেন এই কথা টা আমায় আগে বললেন না? কেন আগে আমায় ভালোবাসতে পারলেন না? কেন এই ক’টা দিন আমায় কষ্ট দিয়ে ধুঁকে ধুঁকে মে’রেছেন?’
সে বলল, ‘তবে আজ তো তোমায় নিজের করে নিয়েছি। কভু হারাতে দেব না। তুমি শুধু একান্তই আমার।’
[চলবে.. ইন শা আল্লাহ]