ভালোবাসা অবিরাম পর্ব-২২

0
596

#ভালোবাসা_অবিরাম
#পর্বঃ২২
#আইরাত_বিনতে_হিমি

অজপাড়া গায়ের ক্ষেতের রাস্তা ধরে হাটছে রিমি। গন্তব‍্য নতুন ডেরা যেখানে তার প্রাণপ্রিয় ভাই আয়মান তার অপেক্ষায়। হাটতে হাটতে রিমির পা একসময় ধান ক্ষেতে পরে যায়। পায়ের দিকে তাকাতে গিয়ে দেখে একদল দারকাক তার মাথার উপর দিয়ে উরে যাচ্ছে। অজানা ভয়ে তার বুক কেপে উঠে। তবুও নিজের ভয়কে দূরে ঠেলে দিয়ে সামনে এগিয়ে যায়। হাটতেহাটতে এক বড় আম বাগানের ভিতরে সে ঢুকে পরে। এমন সময় হঠাৎ তার সামনে এক ভিক্ষুক দাড়িয়ে পরে। আচমকা ঘটে যাওয়া ঘটনায় সে ভয়ে চিৎকার দিয়ে উঠে

আহহহ কে কেহ কে

আম্মা কয়ডা ভিক্ষা দে। অনেকদিন কিছু খায়না কয়ডা খাওন দে। দেনা আম্মা।

রিমি এমন আম বাগানে ভিক্ষুক দেখে বেশ অবাক হয়।
তাই সে জিঙ্গাসা করে

চাচা এমন জায়গায় আপনি ভিক্ষা করেন কোথায়। এইখানে না আছে কোনো বাড়ি না আছে কোনো মানুষ।

মারে আমি ভিক্ষুক আর কি করুম বল। এইখানে দশেক বছর আগে একদল মানুষ আমারে হালায় দিয়া গেছিলো। সেদিন থেহেই আমি এইহানে।

আচ্ছা চাচা আপনি এইটা রাখেন ( পাচশত টাকার নোট দিয়ে)। আর আপনি কি আমাকে একটু সামনে এগিয়ে দিয়ে আসতে পালবেন।

আসফি বুঝে যায় রিমি তাকে চিনে ফেলেছে। তাই প্ল‍্যান বি এক্সিকিউট করে। সে রিমি কে জড়িয়ে ধরে আর বলে

আম্মা আফনে অনেক ভালা আপনি অনেক ভালা(আস্তে আস্তে কন্ঠস্বর চেন্স করে)

রিমি এক ধাক্কা দিয়ে আসফিকে মাটিতে ফেলে দেয় আর পিছন থেকে বন্দুক বের করে আসফির দিকে তাক করে বলে

আসফি চৌধুরী তোমার খেলা শেষ একদম চালাকি করবে না। নাহলে বন্দুক চলে যাবে।

হা হা হা হা। তাই বুঝি তা দেখি তোমার কত ক্ষমতা।

আসফি আমি তোমার প্ল‍্যান আগেই জানতে পেরে গিয়েছে। তাই তোমাকে এখানে নিয়ে আসছি। পুরো বাগান আমার লোকে ঘেরা।

আসফি বসা থেকে উঠে দাড়ায় আর বলে

ohh really জানতাম না তো। তা ডাকো তোমার লোকদের দেখি

রিমি বন্নো প্রাণীদের মতো আওয়াজ করে তার লোকদের ডাকছে কিন্তু কোনো সারাশব্দ নেই। রিমি বারংবার চেষ্টা করছে কিন্তু ফলাফল শূন্য। তাই আসফি বলে উঠলো

কি রিমি শিকদার হাওয়া ফুসস। শুনবে সবটা কি করে করেছি

কি করে করলে

শুনো তাহলে। তুমি যখন বাশতলার রাস্তা ছেড়ে আম বাগানের রাস্তা ধরলে ঠিক তখনই আমি বুঝে গিয়েছিলাম তুমি আমার প্ল‍্যান বুঝে ফেলেছো। তাই আমিও চাল চেন্স করে দিলাম। তোমার লোকদের মারার জন‍্য আমার লোক পাঠালাম। আর বাশতলার রাস্তায় পাঠালাম রাশেদকে আয়মানকে ধরতে। কিন্তু তোমার ভাইয়ের লাক ভালো তাই পালিয়েছে তবে চিন্তা করো না তাকে নিমন্ত্রণপত্র দিয়ে আমার ডেরায় আনবো। আর বাকি রইলো তোমার ব‍্যবস্থা। তোমাকে আমি এই কথা বলে আসফি রিমির ঘারে আঘাত করলো আর রিমি মাটিতে অজ্ঞান হয়ে পরে গেলো।আসফি রিমির কাছে বসে বললো

তোমায় আমি সহজে মারছি না রিমি। তিলে তিলে মারবো তোমায় প্রিয়জন হারানোর যন্ত্রণা কি তা তুমি হারে হারে টের পাবে।

চৌধুরীর বাড়ির ড্রয়িং রুমে বসে আছে আখি আরিয়ান আর রুমানা চৌধুরী। রুমানা চৌধুরীর কাছে এই বাড়ির সব কথা শুনে তাদের চোখে পানি চলে এসেছে। তাদের প্রাণপ্রিয় বন্ধুর জীবনে এত দুর্গতি দেখে তারা সত‍্যি ব‍্যথাতুর। এমন সময় বাড়ির মেইন ডোর দিয়ে আসফির প্রবেশ আসফিকে দেখে তারা আসফির কাছে যায়। আসফিও যেনো এতদিন পর নিছের বন্ধুদের দেখে বিশ্বাস করতে পারছে না। তাই আবেগে প্রফুল্ল হয়ে বন্ধুদের জড়িয়ে ধরে আর বলে

বিশ্বাসই হচ্ছে না। এতোদিন পর তোরা।

রুমানা চৌধুরী তাদের দিকে তাকিয়ে বললো

তোমরা উপরে যাও আমি কফি পাঠিয়ে দিচ্ছি

ওকে বড় আম্মু

আসফির রুমের বেলকনিতে বেতের মুরায় বসে আছে আখি আরিয়ান আর আসফি। হাতে তাদের গরম কফি। তাদের মধ‍্যে থেকে আসফি আরিয়ানের পিঠে হাত রেখে বলে

কিরে মামা এখনো কি ঝুলে আছিস

আরে না বিয়ে সেরে ফেলেছি। ( আরিয়ান)

কিরে আখি বিয়ে করে ফেললি আর আমরা জানি না।

আরে না কেউই জানে না। (আখি)

ওহ আচ্ছা

আসফি একটা কাজে তোর কাছে আসা।( আরিয়ান)

কি কাজ

তারপর তারা অরুর কথা আসফির কাছে খুলে বলে। তাদের কথা শুনে আসফি বলে

তো আমি কীভাবে সাহায্য করতে পারি।

কেন চিকিৎসা দিয়ে। ( আখি)

সরি গাইস আমি এই পেশা ছেড়ে দিয়েছি

হোয়াট ( আরিয়ান)

হুম

তাহলে নিজের ভাইয়ের চিকিৎসা কেন করছিস। ( আখি)

উনি আমার ভাই চিকিৎসা তো করতেই হবে।

বাহ আসফি চৌধুরীর মুখে এই কথা। যেই আসফি চৌধুরীর কাছে কিনা চিকিৎসা জাড়া আর কোনো কাজই ছিলো না। যায কাছে কিনা patients ই ছিলো সবচেয়ে বড় priority আর সে কিনা আজ এইসব বলছে। বড্ড স্বার্থপরের মতো কথা বলছিস না আসফি।(আরিয়ান)

হ‍্যা হ‍্যা আমি স্বার্থপর। নিলুর accident এর পর আমি স্বার্থপর হয়ে গিয়েছি। যেই হাত দিয়ে আসফি চৌধুরী এখন মানুষ মারে সেই হাত দিয়ে আসফি চৌধুরী আর মানুষ বাচাবে না। যদি কোনোদিন নিলু ভিরে আসে সেইদিন দেখা যাবে।

আসফি আমরা সবটাই জানি। কিন্তু তুই কি এইটা ঠিক করছিস।(আখি)

আমি আর কিছু শুনতে চাই না তোমরা এখন আসো

কিহ

হুম প্লিজ লিভ মি এলোন প্লিজ আমায় একা থাকতে দাও। request করছি

ওকে ফাইন আমরা চলে যাচ্ছি।

এই কথা বলে তারা চলে যায়। দরজার আরালে দাড়িয়ে সব কথা শুনছিলো রেখা চৌধুরী। ছেলের এমন আচরণ দেখে কাদতে কাদতে নিজের রুমে চলে যায়।

ছাদে দাড়িয়ে আকাশ দেখছে আসফি। আজ চাদ উঠেনি। তা দেখে আসফির মন খারাপ। কেননা আজ তার চন্দ্রকান্তা তাকে দেখতে আসে নি। আকাশের দিকে তাকিয়ে আসফি বলে

নিলু খুব কি প্রয়োজন ছিলো আমায় একা করে চলে যেতে। খুব প্রয়োজন ছিলো আকাশের চাদ হওয়া। নিলু আমার ভালোবাসায় কি কমতি ছিলো যে তুমি আমায় ছেড়ে চলে গেলে। নিলু আমার একা ঘুম হয় না। আমি খেতে পারি না। নিলু আমার ভীষন কষ্ট হয়। আমি তোমায় ছাড়া থাকতে পারি না। নিলু আমি যে তুমি বিহীন ভীষন একা ভীষন অসহায়।

এইকথা বলে আসফি কাদতে কাদতে নিচে বসে পরে

#চলবে