ভালোবাসা অবিরাম পর্ব-২৫+২৬

0
620

#ভালোবাসা_অবিরাম
#পর্বঃ২৫
#আইরাত_বিনতে_হিমি

চৌধুরী বাড়ির ড্রয়িং রুমে বসে আছে বাড়ির সকল সদস‍্য তাদের মধ‍্যে বিরাজমান পিনপতন নিরাবতা। আসফি মিষ্টির হাত ধরে সবার সামনে দাড়িয়ে আছে আর রুমানা চৌধুরী তাদেরকে বাধা দেওয়ার জন‍্য তাদের সামনে ছুরি নিয়ে দাড়িয়েছে তার একটাই কথা

– আসফি তুমি যদি এই বাড়ির চৌকাঠ মারাও। তাহলে আমি কিন্তু এই ছুরি দিয়ে নিজের গর্দান ফেলে দিবো।

তার কথায় বাড়ির সবায় হতভম্ব। কে কি করবে কিছুই বুঝতে পারছে না। কিন্তু তার সামনে অটল হয়ে দাড়িয়ে আছে আসফি। তারও এক কথা

আপনি আমাদের যেতে না দিলে আমি ওদের সবাইকে খুন করে ফেলবো। আপনি তো নিজেকে হত‍্যা করবেন। আমি তো এদের সবাইকে হত‍্যা করবো এবার আপনিই বলেন কি করবেন।

তখন রুমানা চৌধুরী কোনো উপায় না পেয়ে পথ ছেড়ে দেয়। আর আসফি আদি আর মিষ্টিকে নিয়ে বাড়ি থেকে বাহির হয়ে যায়। তারপর তারা আরিয়ানদের বাসায় উঠে। আখি মিষ্টিকে নিয়ে রুমে যায়। এইদিকে আরিয়ান আর আসফি কাজি নিয়ে আসে তারপর তাদের বিয়ে দিয়ে দেয়। বিয়ের কাজ শেষে আসফি চলে যেতে চায় কিন্তু আরিয়ানের জোরা জুরিতে যেতে পারে না। তাই সেও এই বাসায় থেকে যায়। রাতে খাবার টেবিলে সবায় যখন একসাথে খাবার খাচ্ছিলো তখন আখি খাবার নিয়ে উপরে চলে যায় তা দেখে আদি জিঙ্গাসা করে

আরিয়ান আখি খাবার নিয়ে কোথায় যাচ্ছে।

উপরের রুমে ঐখানে একটা মেয়ে আছে যার কথা তোদের বলেছিলাম ওকেই খাইয়িয়ে দিতে যায়।

ওহ আচ্ছা। ওর কান্ডিশন এখন কেমন

ভালো না। আগের মতোই আছে। মেডিসিন চলছে আর কি। আসফিকে বললাম ট্রিটমেন্ট করতে ওহ তো করলো না। তাই আমরা ওকে বাহিরে নিয়ে যাবো।

ওহ আচ্ছা।

এইদিকে আসফি শুধু খাচ্ছে। আর ওদের কথা শুনছে। ওপর থেকে চিৎকারের শব্দ শুনে সবাই এক সাথে উপরে তাকায়। আসফি বলে উঠে

কি হলো আখি চিৎকার করছে কেন।

জানি না। আমাদের এখনি উপরে যেতে হবে। নিশ্চয় আরুর কিছু হয়েছে। ( আরিয়ান )

এই কথা বলে আরিয়ান উপরে দৌড় দেয়। আর তার সাথে সাথে সবায় আরুর রুমে যায়। তাদের সাথে আসফিও যায়। আরিয়ান গিয়ে আখিকে বলে

আখি কি হয়েছে।

আরিয়ান দেখো আরু যেনো কেমন করছে।

কেমন করছে দেখি। আরু আরু আর ইউ ওকে। কোথায় সমস্যা হচ্ছে তোমার আরু।

আরিয়ান আরু রেসপন্স করছে না।

ভাই আসফি প্লিজ একটু সামনে এসে ওকে চেক প্লিজ। এইভাবে একজন মারা যাবে আর তুই চেয়ে চেয়ে দেখবি প্লিজ কিছু কর।

আরিয়ানের কথায় আসফি সামনে চোখতুলে তাকায় আর যা দেখতে পায় তাদের পা থমকে যায় গলা দিয়ে আওয়াজ বের হয়ে না। সে যেনো পাথর হয়ে গিয়েছে। আস্তে আস্তে হেটে হাত বাড়িয়ে আরুর সামনে যায় আর বলে

নি নি নি নিলু। আ আ আ আমার নি নিলু। ওর কি কি কি হয়েছে। নি নি নিলু এই নিলু এমন করছো কেন। নিলু আমার দিকে তাকাও আমি তোমার আসফি নিলু নিলু। শুনতে পাচ্ছো। (কাদতে কাদতে বলে)

পাশ থেকে আদি বলে

নিলু। নিলুকে কোথায় পেলি তোরা।

আদি আদি নিলু রেসপন্স করছে না। ইট এনি কস্ট ওকে হাসপাতালে নিতে হবে। তুই গাড়ি বের কর।

ওকে আমি যাচ্ছি। তুই নিলুকে নিয়ে আয়।

তারপর আসফি নিলুকে কোলে তুলে নেয়। কোলে করে গাড়িতে নিয়ে আসে। নিলুর মাথা নিজের কোলে রেখে বারবার বলে

নিলু তোমার কিছু হতে পারে না। আমি তোমার কিছু হতে দিব না। নিলু চোখ খুলো ওপেন ইউর আইস। না আমি তোমায় পেয়ে হারাতে পারবো না। নিলু প্লিজ চোখ খুলে রাখার চেষ্টা করো।

আজ আসফি চৌধুরী পাগলের মতো করছে। তাকে এতোটা পাগলামি করতে কেউ দেখেনি যতটা পাগলামি সে আজ করছে। পাগলের মতো নিলু নিলু বলে চিৎকার করছে। হাসপাতালে এসে হাসপাতাল মাথায় করে নিয়েছে। বেশ কয়েকজন ডাক্তারকে অলরেডি বোকাবাজি করা শেষ। নিলুকে সিসিইউতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আসফি বাহিরে বসে আছে। তার সামনে দুজন বড় নিউরলজীস্ট ডাক্তার এসে দাড়ায় আর তাকে বলে

স‍্যার পেসেন্টের অবস্থা সচনীয়। ব্রেনে খুব বাজে ভাবে আঘাত পেয়েছে ইমার্জেন্সি অপারেশন না করলে কোনো দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। আসফি ডাক্তারের কথা শুনে তার কলার চেপে ধরে বলে

এই সৌরভ মুখ সামলে কথা বলো ওর কিছু হবে না।

আসফির এমন অবস্থা দেখে পাশ থেকে আদি আর আরিয়ান তাকে ছাড়িয়ে আনে। এতক্ষণে আরিয়ান আদির কাছ থেকে সব জানতে পারে যে আরুই নিলু আসফির ওয়াইফ। আসফিকে তারা ধরে এনে সিটে বসায় আর বলে আসফি তুই কিছু কর

আমি যে সাহস পাচ্ছি না।

কিহ আসফি চৌধুরী ভয় পাচ্ছে। ( আদি )

হ‍্যা ভয় পাচ্ছে নিজের ভালোবাসার ঐরকম কাটাছিরার দৃশ্য দেখতে ভয় পাচ্ছে। আসফি চৌধুরী এই হাত দিয়ে অনেক মানুষের ব্রেন অপারেশন করেছে কিন্তু আজ ভয় পাচ্ছে।

ভয় পেলে চলবে না আসফি আরুকে বাচাতে হবে। প্লিজ তুই রাজি হো আমরা সবাই তোর সাথে থাকবো।( আখি )

ঠিক আছে ওটি রেডি কর আমি নিজের জীবন দিয়ে হলেও ওকে বাচানোর ট্রাই করবো। হে আল্লাহ্ আমার ভালোবাসাকে আমার কাছে দিয়ে তুমি কেরে নিয়ো না। প্লিজ কেরে নিওনা।

#চলবে

#ভালোবাসা_অবিরাম
#পর্বঃ২৬
#আইরাত_বিনতে_হিমি

আসফির গোপন ডেরায় আহত শরীরে পরে আছে রিমি। সে কোনো কথা বলতে পারে না এখন। তার মুখে অজস্র ব‍্যথা তাকে কাতর করে তুলেছে। দুবেলা মুখের এই অবস্থার জন‍্য ভালোভাবে খেতে পারে না। তাই এই দুদিনে অনেক বেশি অসুস্থ আর রোগা হয়ে পরেছে। রিমি খাচার ভেতরে গোঙ্গাচ্ছিল এমন সময় সে সামনে একটি ছায়া দেখতে পায়। সে আস্তে আস্তে চোখ মেলে তাকায় ইশারায় বোঝায় “আপনি”

তখন সেই ব‍্যক্তি তার কাছে যায় আর বলে

রিমি চুপ করো আমি তোমায় এখান থেকে নিয়ে যেতে এসেছি। আমি তোমায় হসপিটাল নিয়ে যাবো। একটু দাড়াও আমি তালা ভাঙ্গছি।

রিমি ইশারায় বোঝায় তাকে

চলে যান আপনি ধরা পরে যাবেন। ওরা যেকোনো সময় চলে আসবে।

Don’t worry. আমি ওদের ঘুমের স্প্রে দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে রেখে এসেছি।

এই কথা বলে সামনে থাকা ব‍্যক্তি তালা ভেঙ্গে রিমিকে ঐখান থেকে বাহির করে নিয়ে যায়। আর একটি হসপিটালে ভর্তি করে।

ওটি রুমে ৩ ঘন্টা ধরে নিলুর অপারেশন করছে আসফি। প্রচন্ড ভয় উত্তেজনা নিয়েও সে নিলুর ওটি করছে। নিজের ভালোবাসাকে বাচানোর আপ্রাণ চেষ্টা করছে। দীর্ঘ ৫ ঘন্টা পর নিলুর ওটি শেষ করে আসফি বাহির হয়। বাহিরে এসে দেখে বাড়ির সবাই ওটির সামনে দাড়িয়ে আছে শুধু একটি মানুষ অনুপস্থিত যা দেখে তার মাথা গরম হয়ে গিয়েছে। তবুও নিলুর কথা মাথায় রেখে যথেষ্ট সংযত হয়ে সবাইকে বললো

ওটি সাকসেশফুল হয়েছে। Don’t worry.আশা করছি ২৪ ঘন্টার মধ‍্যে জ্ঞান ফিরে আসবে।

এই কথা বলে আসফি নিজের কেবিনে চলে আসে। নিজের এপ্রোন খুলে ছুরে মারে আর রাশেদকে কল করে বলে

হ‍্যালো রাশেদ কোথায় তুমি

স‍্যার আমি তো একটু বাহিরে এসেছি।

গোডাউনে যাও। আমি যদি ভুল না করি রিমি পালিয়েছে। তাড়াতাড়ি খোজ লাগাও ওকে কোন হসপিটালে admit করেছে। আর দেরি করলে চলবে না। সময় চলে এসেছে ওদেরকে শেষ করে দেওয়ার। নিজেরে সে অনেক চালাক মনে করে।

ওকে স‍্যার। স‍্যার ভাবীর কি খবর।

out of dangerous

আল্লাহ্ রক্ষা করছে।

হসপিটালে রিমিকে নিয়ে বসে আছে আফজাল শিকদার, আয়মান শিকদার আর সেই আগ্নুতক ব‍্যক্তি। রিমির অবস্থা খুবই খারাপ। আইসিইউ তে admit করে রেখেছে। রিমির পালস দ্রুত চলছে। সে শ্বাস নিতে পারছে না। ভীষণ কষ্ট হচ্ছে তার ভীষণ কষ্ট। হঠাৎ করেই তার শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ হয়ে যায়। ডাক্তার বার বার চেক করে। বুক পাঞ্চ করে। কিন্তু সে কোনো রেসপন্স করে না। সর্বশেষ ডাক্তার কাপড় দিয়ে তার মুখটা ঠেকে দেয় আর বাহিরে চলে আসে। ডাক্তার কে দেখে আয়মান তাড়াতাড়ি এগিয়ে যায় আর বলে

ডাক্তার আমার বোন

সরি মিস্টার শিকদার she is no more

নাহ আপনি মিথ‍্যে বলছেন।

এই কথা বলে আয়মান ডাক্তারের কলার চেপে ধরে আর বলে

I kill you doctor i kill you. আপনি আমার বোনকে খুন করছেন। আপনি বলেন আমার বোনের কিছু হয় নাই বলেন।

Come down মিস্টার শিকদার come down.শান্ত হন আপনি সবই নিয়তির খেলা। হয়তো সে এই কয়দিনের জন‍্যই দুনিয়া এসেছিলো। আপনি আল্লাহর কাছে দোয়া করেন যেনো ওনার আত্মা শান্তি পায়।

পাশ থেকে এইসব শুনে আগ্নুতক ব‍্যক্তি ফ্লোরে বসে পরে আর চিৎকার দিয়ে বলে

রিমি রিমি তোমার কিছু হতে পারে না। তুমি আমায় ছেড়ে যেতে পারো না।

এই কথা বলে সে কেবিনে দৌড় দিয়ে চলে আসে আর রিমিকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে।

রিমি রিমি চোখ খুলো। এইভাবে আমায় ছেড়ে যেও না। রিমি প্লিজ চোখ খুলো। তোমার জীবনের অবসান এতো তাড়াতাড়ি ঘটতে পারে না।

পাগলের মতো কান্না করছে আর প্রলেব বকছে এই আগ্নুতুক। তাকে এমন হালে দেখে আফজাল শরীফ দূর থেকে চোখের পানি মুজছে। আয়মান আগ্নুতুকের কাছে আসে আর বলে

প্লিজ কেদো না এইভাবে। তুমি কাদলে আমাদের কষ্ট হয়। একই বোন হারানোর ব‍েদনা তার মধ‍্যে যদি তুমি ভেঙ্গে পরো তাহলে আমি আর আব্বু কোথায় যাবো বলো।

এইবার আগ্নুতুক চোখ মেলে তাকালো তার চোখ দিয়ে যেনো পানি নয় আগুন ঝরছে। যে আগুনে সে পুড়িয়ে ভষ্ণ করে দিবে আসফি চৌধুরীকে। সে আয়মান আর রিমির হাত ধরে বললো

আয়মান তোমায় আর রিমিকে ছুয়ে কোথা দিচ্ছে ঐ চৌধুরী মহলে আমি আগুন জালিয়ে দিব। আসফি চৌধুরীকে ধ্বংস করে দিবো। ওহ যেমন আমার প্রিয়জন কেরে নিয়েছে আমি ওর প্রিয়জন কেরে নিবো। নিলুকে ফিরে পাওয়ার আনন্দের যে জোয়ারে তুমি ভাসছো সেই জোয়ারের পানিতেই তোমাকে ডুবিয়ে মারবো। আর যদি না পারি তাহলে আমিও…

আসফি, আদি, আরিয়ান হসপিটাল ক‍্যান্টিনে বসে চা খাচ্ছে। আর নিলুকে নিয়ে আলোচনা করছে এমন সময় আরিয়ান আসফিকে জিঙ্গাসা করে

আসফি একটা কথা জিঙ্গাসা করবো

করে ফেল এত ফরমালেটির প্রয়োজন নাই।

নাহ মানে তুই কি আমায় সঠিক answer দিবি

আমি বোধহয় আন্দাজ করতে পারছি তুই আমায় কি জিঙ্গাসা করবি

হুম হয়তো

তাও সিওর হয়ে নি। বল কি বলবি

আসফি তুই রিসাদ ভাইকে মেডিসিনের বদলে poisonous দিস কেন

সময় হলে জানতে পারবি এখনো সময় হয়নি জানার।

নাহ আমরা জানতে চায়। ( আদি )

সবকিছুতে আগ্রহ থাকা ভালো না আদি।

প্লিজ আমাদের বল। আমি জানি তুই কোনো কারণ ছাড়া এই কাজ করিস নি। ( আরিয়ান )

এইটা যখন বুঝতে পেরেছিস। তাহলে আমার উপরে ভরশা রাখ। আমি এখন উপরে যায় দেখি নিলুর কি খবর জ্ঞান ফিরলো কি না।

আচ্ছা।

আসফি নিচ থেকে উপরে আসে আর এসে দেখে কেবিন ফাকা যা দেখে সে চিৎকার দিয়ে বলে

নিলু কোথায় গেলো

#চলবে