গোধূলি বেলায় তুমি এসেছিলে পর্ব-৪৩+৪৪

0
311

#গোধূলি_বেলায়_তুমি_এসেছিলে
#আনিশা_সাবিহা
পর্ব ৪৩

শেষ অ’শ্লীল গা’লিটা শুনে এবার আপনাআপনি না চাইতেও চোখ ভরে পানি চলে এলো রূপাঞ্জনার। হৃদয়ে পেল যেন তীব্র আ’ঘাত। অসহনীয় য’ন্ত্রণা সৃষ্টি হলো দেহে। বার বার এটা মনে করিয়ে মনে দহন বাড়ানোর কি সত্যিই কোনো প্রয়োজন আছে? এতকিছু ভাবনার মাঝে এবার কানে আসে ডার্ক ম্যাক্সের কড়া কণ্ঠ।
“জবাব দে রূপা! নয়ত আমি জানি না তোর কী করব। আমার ধৈর্যের পরীক্ষা নিস না।”

“আ…আমি মা’রার সুযোগ পাইনি। পুলিশের লোক আমাদের ট্র্যাক করে ফেলেছিল।”

“মিথ্যে বলা শিখে গিয়েছিস। ডার্কের কাছে মিথ্যে বলতে এসেছিস? বুকের পাটা অনেক বড় হয়েছে তোর। একটা কথা ভুলিস না। সারা দুনিয়াকে তুই ধোঁকা দিতে পারিস। কিন্তু ডার্ক ম্যাক্সের চোখ ফাঁকি দেওয়া সম্ভব হয়। সময় আছে। আমি রাগে পা’গল হয়ে যাওয়ার আগে বলে দে। তোকে মা’রতে আমার ইচ্ছে করে না। আমাকে আমার ইচ্ছের বিরুদ্ধে নিয়ে যাস না।”

এই প্রথম ডার্ককে মিথ্যে বলেও পার পেল না রূপাঞ্জনা। তার দুটো গাল শক্ত করে চেপে ধরার সাথে সাথে মনে হলো ভেতরের দাঁত সহ সব ভেঙে গুঁড়িয়ে যাবে। হাসফাস করতে লাগল ছাড়া পেতে। অবশেষে তাকে ছেড়ে দূরে এসে উল্টে পড়ে থাকা চেয়ার ঠিক করে বসল ডার্ক ম্যাক্স। শান্ত কণ্ঠে জানতে চাইল,
“আমি জাস্ট কারণটা জানতে চাই। কী এমন কারণ? যে তুই সুযোগ পাওয়ার পরেও সেটা হাতছাড়া করলি? এটা ভুলিস না তোকে আমি যতটা চিনি ততটা তুই নিজেও নিজেকে চিনিস না।”

রূপা বড় বড় শ্বাস নিয়ে নিজেকে সামলাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। ডার্কের প্রশ্নের কাঙ্ক্ষিত উত্তরটা তার কাছে উপস্থিত থাকলেও মুখ ফুটে বলার সাহসটা হয়ে উঠল না যেন। ডার্কের চোয়াল শক্ত হলো। রেগেমেগে আগুন জ্বলে গেল ভেতরটা। তবুও থমথমে গলায় বলল,
“লাস্ট টাইম জিজ্ঞেস করছি। বল আমাকে।”

“ছোট থেকে আমাকে শেখানো হয়েছে মানুষকে কষ্ট দিয়ে কীভাবে আনন্দ লুফে নিতে হয়। যখন থেকে আমার বুদ্ধি হয়েছে তখন থেকে আমাকে বোঝানো হয়েছে কোনো জীবকে মৃ’ত্যু দেওয়ার মাঝে যে খুশি সেটা আর কোথাও পাওয়া যায় না। আপনিও হয়ত সেটাই শিখেছেন বা জেনেছেন। কিন্তু আমি কখনো এটা বুঝিনি যে কাউকে বাঁচাতেও আনন্দ হয়। কারণ এটা কখনো জানতামই না আমি। যেই বয়সে আমার মা-বাবার হাত ধরে স্কুলে যাওয়ার কথা ছিল। যখন আমার সহপাঠীদের সাথে অনেক অনেক খেলার কথা ছিল সেই বয়সে আমার হাতে রিভ’লবার তুলে দেওয়া হয়েছে। আমাকে খুব যত্ন করে হিংস্র এক প্রাণীর মতো তৈরি করা হয়েছে। যার কাছে মৃ’ত্যু দেওয়া একটা খেলা। আর সেই খেলাতে আমি বারবার জয়ী হতে যা ইচ্ছে তাই করতে পারি।”

“হঠাৎ এইসব কথা বলে তুই কি বোঝাতে চাচ্ছিস?”

“কিছু না। ইচ্ছে করল কিছু অতীতের কথা বলতে তাই বলে ফেললাম।”

“আজকে তুই অভিরূপকে বাঁচিয়েছিস?”

ডার্ক ম্যাক্সের শান্ত গলা এবং এমন প্রশ্নে কাঁপুনি ধরে গেল রূপাঞ্জনার। কী বলবে সে? তার নীরবতা দেখে ডার্ক কিছু একটা আন্দাজ করে বলল,
“ভয় পাচ্ছিস কেন এত? সাধারণ একটা প্রশ্ন করেছি। এতদিন ভিলেনের রোল প্লে করে হুট করেই সতী সাবিত্রী সাজতে চাইছিস? কারণ তো আছেই। কী সেই কারণ? ওই গায়ক তোকে একদিন বাঁচিয়েছিল বলে?”

রূপা আবারও চুপ রইল। মুখে এলো না কোনো কথা। ডার্ক ম্যাক্স এবার কোনোরূপ প্রতিক্রিয়া না করে টেবিলের শেষদিকে পড়ে থাকা কাঁচের বোতল থেকে পানি ঢেলে নিল সে। তারপর গ্লাসটা ধরল রূপার দিকে। বলল,
“হাঁপিয়ে উঠেছিস বোধহয় আমার দেওয়া যন্ত্র’ণা সহ্য করতে করতে। নে পানি খেয়ে শান্ত হয়ে নে।”

রূপাঞ্জনার তৃষ্ণাই পেয়েছিল। তবে পানির কথা মুখ ফুটে বলে উঠতে পারছিল না। তাই না চাইতেই পানি পেতেই বিলম্ব করল না সে। তড়িঘড়ি করে ডার্কের হাত থেকে গ্লাস নিয়ে ঢকঢক করে সব পানি পান করল। সঙ্গে সঙ্গেই ঘর কাঁপিয়ে হাসল ডার্ক ম্যাক্স। তার হাসির কারণ ঠিক বোধগম্য হলো না রূপার। শূন্য চোখে চেয়ে রইল তার দিকে। দুহাত দিয়ে ডার্ক নিজের চুলগুলো এলোমেলো করতে করতে বলল,
“আমাকে কতটা ভরসা করিস তুই! আমি মুগ্ধ।”

রূপা এবারও কিছুই বুঝে উঠতে পারল না। কপালে পড়ল কিঞ্চিৎ ভাঁজ। তৎক্ষনাৎ ডার্ক বলল,
“পানিতে কী ছিল জানিস? সেই কেমিক্যাল যেটা দিয়ে আমি বাজিমাত করি সেটা মিশিয়ে দেওয়া ছিল। রাই’সিন! যেটার প্রভাবে ধীরে ধীরে তুই ম’রে যাবি।”

আকাশ ভেঙে পড়ল রূপার মাথার ওপর। থরথর করে কেঁপে উঠল আপাদমস্তক। সে বারংবার বলেছে মৃ’ত্যুকে সে ভয় পায় না। তবে আজ একথা শুনে সত্যিই মনে হচ্ছে মৃ’ত্যু আসলেই তাকে ভয় আঁকড়ে ধরল। না চাইতেও জোরে জোরে কেশে উঠল সে। ম’রণ যেন তার সামনেই। ডার্ক ম্যাক্সের কাছে ভারি মজা লাগল দৃশ্যটা। সে নির্বিঘ্নে হাসতে থাকল। রূপা গলা চেপে ধরেছে। চেষ্টা করছে কেশে কেশে পান করা পানি বের করার। কিন্তু তা কী হয়? এসব দেখে আয়েশি ভঙ্গিতে চেয়ারের দিকে হেলে চোখ বুজল ডার্ক। হাতের আঙ্গুল বের করে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে বলল,
“এটা শুধু ট্রেলার ছিল। পানিতে কিছু মেশানো নেই। তোর চোখেমুখে আতঙ্ক দারুণ লাগে।”

এতক্ষণ ধরে ছটফট করতে থাকা রূপাঞ্জনা স্থির হলো। অপলক চোখে তাকাল ডার্ক ম্যাক্সের দিকে। এই লোকটাকে মানুষ বলে গণ্য করা মুশকিল! তারপরেই রূপা ভাবে সে নিজেও কি আদেও মানুষ হতে পেরেছে? ঠোঁট চেপে বসে রইল মাথা নত করে। ডার্ক এবার জবান খুলল,
“তুই যদি ভাবিস ওই অভিরূপ তোর প্রতি ফিদা হয়ে তোকে রক্ষা করেছে তার প্রতিদান তুই দিবি তাহলে তোর ভাবনা দিন দিন অধঃপতনে যাচ্ছে রূপা। তুই তো নিজের চেহারা নিয়ে ঘুরিস না। চেহারা অন্যকারো। যদি ফিদা হয় তোর চেহারা দেখেই ও পটে গিয়েছে। নিজেকে স্পেশাল ভেবে আমার কাজে বাগড়া দেওয়া বন্ধ কর। ঢাকায় কেন এসেছি ভুলে গিয়েছিস? এখানে আসার পর পরিবর্তন লক্ষ্য করছি তোর মাঝে। তোকে লাস্ট চান্স দিলাম। দিতাম না! কারণ আমার ডাকা’তি করার সমস্ত টাকা তোর পেছনে ঢালতে হয়েছে। বিফলে যেতে দেব না কিছু। আমার চোখের সামনে থেকে দূর হ।”

রূপাঞ্জনা তাড়াহুড়ো করে ওঠার চেষ্টা করল। একটু সময় লাগায় কটমট করে তাকাল ডার্ক। নিজের হাতের কাছে থাকা সেই কাঁচের বোতল ছুঁ’ড়ে মা’রল রূপার দিকে। বেখেয়ালে এমন করায় রূপার গায়ে লাগল না সেটা। পাশেই বিকট শব্দে টুকরো টুকরো হয়ে গেল। রূপাঞ্জনা দ্রুত দাঁড়িয়ে খোঁড়াতে খোঁড়াতে ডার্কের চোখের আড়াল হতেই সেই রহস্যে ঘেরা মুখটা থমথমে হলো। বুক চিরে বেরিয়ে এল দীর্ঘশ্বাস। মাথা চেয়ারের সাথে লাগিয়ে বিড়বিড়িয়ে আওড়াল,
“নারীর মন! যতই হক জটিল। অল্পতেই গলে যায়। হাজার হাজার বছর ধরে জমে থাকা বরফের মতো হিং’স্রতা সহজেই গলে যায় যদি সেখানে কোনো পুরুষের আদুরে ছোঁয়া লাগে।”

থামলো ডার্ক ম্যাক্স। কথার মাঝে বিরতি নিয়ে আবারও বলল,
“ওকে দিয়ে আর কোনো কাজ হবে কিনা নিশ্চয়তা নেই। আমাকে যা করার করতে হবে এবার। একটা সুযোগ করেই দিয়েছে ওই জানো’য়ার মেয়েটা। সেই সুযোগটাকে কাজে লাগালে মন্দ হয় না।”

চোখটা মেলতে কষ্ট হলো রাগিনীর। তবুও জোর খাটিয়ে চোখ মেলে তাকিয়ে আবছা দেখল আশপাশ। হাত নাড়াতেও যেন হাতে কিছুটা ব্যথা অনুভব করল সে। অন্যপাশ ফিরতেই নিজের নয়নে পড়ল হালকা রশ্মি। গতকালকের কথা স্মরণে এলো। তাকে কে যেন পেছন থেকে মুখ চেপে ধরেছিল। তারপর? মনে ঝেঁকে বসল ভয়। না চাইতেও হুড়মুড়িয়ে উঠে বসল সে। পাগলের মতো আশেপাশে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করল সে কোথায়। চারিদিকে ঘোলা দেখে মাথা চেপে ধরে ডুকরে কেঁদে উঠে বলল,
“ওরা আবার ফিরে এসেছে। পিছু ছাড়ছে না আমার।”

এমতাবস্থায় রাগিনীর কানে এলো চেনা কণ্ঠস্বর।
“রাগিনী! কেমন লাগছে এখন?”

রাগিনী শান্ত হলো। কান্না পালিয়ে গেল ঢক গিলে নিজের চোখ কচলে পাশ ফিরে তাকাল। পৃথিবীর সবচেয়ে বিশ্বাসযোগ্য মানুষ তার পাশে। তার বাবা রাশেদ সাহেব। কেমন ঝিমানো দৃষ্টিতে চেয়ে রয়েছেন। চোখের চশমা খুলে রেখেছেন। রাগিনী আবার চারিপাশটা দেখল। এটা তারই ঘর। ঘড়ির দিকে চোখ গেল। এখনো ছয়টাও বাজেনি পুরোপুরি। এত ভোরে তার বাবা কী করছে? আর সে এখানে কী করে? তার মাথায় রাশেদ সাহেব স্পর্শ করতেই রাগিনী অস্থির নয়নে তাকাল। তার বাবা বললেন,
“কী বলছিলে তুমি এখনি? কারা ফিরে এসেছে?”

চোখমুখ চুপসে গেল রাগিনীর। কাঁপা সুরে উত্তর দিল,
“দু…দুঃস্বপ্ন বাবা।”

“সত্যিই কি তাই?”

রাগিনী মাথা নাড়াতেই এবার কণ্ঠস্বর বদলে গেল রাশেদ সাহেবের। কাঠকাঠ গলায় বললেন,
“মিথ্যে বলছ তুমি। তোমার চোখ বলছে তুমি মিথ্যে বলছো। আমার থেকে লুকিয়ে কী লাভ হচ্ছে তোমার? আমাকে বলো মা। আমরা সমাধানের রাস্তা খুঁজতে পারি। ঠিক কী কারণে তোমার সঙ্গেই অদ্ভুত আর বিশ্রী কান্ড ঘটছে? সব খুলে বলো আমায়।”

রাগিনী উশখুশ করতে থাকে। গলা খাঁকারি দিয়ে একবার তার বাবার দিকে তাকিয়ে চোখ নামিয়ে নেয়। অস্বস্তিতে ভরে ওঠে চোখজোড়া। রাশেদ সাহেব নিজেকে শান্ত করে তাকে আশ্বস্ত করে বলেন,
“এমন কি কোনো ঘটনা রয়েছে যা আমার হেলথ্ ভালো রাখার জন্য তুমি বলো নি? লুকিয়ে গিয়েছো কোনো কথা? আমার সাথে শেয়ার করো ভালো লাগবে।”

রাগিনী শুকনো ঢক গিলল। মুখ নিচু করে বসে থাকল। রাশেদ সাহেব পাশ থেকে গ্লাসে পানি দিলেন তাকে। রাগিনী পানি পান করল। মিনমিন করে বলল,
“আমার কথাগুলো শুনে তুমি কোনো প্রেশার নেবে না প্রমিস করো!”

“আই প্রমিস ইউ, মাই প্রিন্সেস। এখন বলো আমাকে।”

“বাবা মনে আছে তোমার? আমি যখন চট্টগ্রামে ভার্সিটি থেকে পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে সকলে মিলে ক্যাম্পিংয়ে গিয়েছিলাম তখন আমার আইডি কার্ডটা হারিয়ে ফেলেছিলাম। তার ফলে অনেক ফর্মালিটিজ পূরণ করতে হয়েছিল?”

রাশেদ সাহেব খানিকটা ভেবে মাথা দুলিয়ে সম্মতি জানালেন। রাগিনী আবারও একনাগাড়ে বলতে শুরু করল,
“ওটা আমার খামখেয়ালিপনার জন্য হারায়নি বাবা। এর পেছনে অনেক বড় একটা কাহিনী ছিল যেটা আমি তোমার কাছ থেকে লুকিয়ে যাই। কারণ তখন তোমার সবে সবে হার্টের প্রবলেম ধরা পড়েছিল। তাই আমি চাই নি তুমি আমায় নিয়ে দিনরাত চিন্তা করো।”

“ঘটনাটা কী রাগিনী?”

সূক্ষ্ণ দৃষ্টিতে রাগিনীর দিকে চেয়ে নিজের উত্তরের অপেক্ষা করলেন রাশেদ সাহেব। রাগিনী একটু দম নিলো। জানালার পানে চেয়ে দেখল নতুন সকালের আকাশ।

তখন বছরের মাঝখানের সময়। চট্টগ্রামের মতো মনোরম শহরে পড়েছিল আত’ঙ্কবা’দীদের কালো ছায়া। রাগিনীর বয়স তখন একটু কম হওয়ায় একটু বেশিই চটপটে ছিল। সবখানে তার আগ্রহ আর নাক গলানো থাকতেই হবে। তারা সেই সময় হইহই করে ক্যাম্পিংয়ে গিয়েছিল পতেঙ্গা সী বিচে। বেশি দিন নয় মাত্র তিন দিনের জন্য। দ্বিতীয় দিন ভোর বেলা যখন হয়। অর্থাৎ সূর্যদ্বয় হওয়ার আগে টেন্টের মধ্যে এত জনের মাঝে ঘুমে দম বন্ধ হয়ে এসেছিল রাগিনীর। ঘুম থেকে উঠে বাহিরে যখন আধো আলো দেখেছিল তখনই মনে এক বাসনা জেগেছিল। সমুদ্রসৈকতে গিয়ে সূর্যদ্বয় দেখার আকাঙ্ক্ষা জেঁকে বসেছিল। ফলস্বরূপ পাশে থাকা তার বান্ধবী হুমায়রাকে ডাকল সে।

“হুমু! এই হুমু! শোন না। ভোর হয়ে গিয়েছে। আর আমার ঘুমও আসছে না।”

হুমায়রা ঘুমের মাঝে বিরক্ত হলো। তারপর গায়ের চাদর টেনে মুখের কাছে ধরে বিড়বিড়িয়ে উত্তরে বলল,
“তোর আসছে না তো তুই বসে থাক। অন্যের মাথা খাস না।”

রাগিনী নাক ফুলিয়ে তুলল। তবে আশা ছাড়ল না। নাছোড়বান্দা হয়ে হুমায়রাকে ডেকে তুলল। মনে মনে শত গা’লি দিতে দিতে হুমায়রা তৈরি হলো। রাগিনী ব্যাগে পানির বোতল নিয়ে চুপি চুপি বেরিয়ে পড়েছিল সেই আশা পূরণের উদ্দেশ্যে। সেটাই সে কাল হয়ে দাঁড়াবে বুঝেছিল কি কেউ? টেন্টের জিপ খুলে বাহিরে বেরিয়েই বেশ কিছু মুখোশধারী ভয়ানক মানুষের সামনা-সামনি হয়েছিল তারা। সকলের হাতে ছিল বড় বড় মাপের ব’ন্দুক। তা দেখে দুজনেই চিৎকার দিয়ে উঠেছিল। তাদেরকে ধরে বন্দু’ক তাক করা হয়। আকাশে গু’লি ছোঁড়ার শব্দে রাগিনীকে প্যানিক অ্যা’টাক করেছিল। হুমাইরা ও সে মিলে বাঁচতে চেয়েছিল। প্রাণপণ চেষ্টা করেছিল। কিন্তু সেদিন টেরো’রিস্ট টিমের উদ্দেশ্যই ছিল ক্যাম্পিং এ আসা সমস্ত স্টুডেন্টদের শে’ষ করে দেওয়া।
“চুপচাপ শান্ত হয়ে দাঁড়িয়ে থাক নয়ত…”

এক উদ্ভট এবং হিংস্র মেয়ের এমন কথায় থেমে গিয়েছিল রাগিনীর ছটফটানি। তবে অন্তরাত্মা কাঁপছিল তার। নিজেকে শান্ত রাখতে পারছিল না কিছুতেই। উপায় খুঁজছিল নিজেকে বাঁচানোর। সকলে নিজের প্রা’ণ যেন হাতে করে নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল। যেখান থেকে বাঁচা অসম্ভব ছিল। সবকিছু সামলে যখন রূপাঞ্জনা ডার্কের আদেশ পাওয়ার জন্য ডার্ককে কল করেছিল সে। কলটা দ্রুতই রিসিভ করেছিল ডার্ক ম্যাক্স।
“ডার্ক ম্যাক্স, সব রেডি। আপনি বললে আমরা আমাদের কাজ শুরু করে দেব।”

ডার্ক ওপরপাশ থেকে খানিকটা উদ্বিগ্ন হয়ে জবাবে বলেছিল,
“তোদের আশেপাশেই আছি আমি। সব দেখেছি। কিন্তু একটা কারণে প্ল্যানিং ক্যান্সেল করতে হবে আমাদের।”

রূপা আকাশ থেকে পড়েছিল। এ কেমন কথা? সবকিছু রেডি হবার পর এমন কথা মানায়? রূপাঞ্জনা খানিকটা উত্তেজিত হয়ে বলেছিল,
“বাট অল ইজ সেট ডার্ক ম্যাক্স। আর এমন সময় এটা বললে…”

“আই সেইড ক্যান্সেল দিস প্ল্যানিং। সরে আয় তোরা।”

রূপাঞ্জনা সেদিন নিজের প্ল্যান ক্যান্সেল করেছিল। তারা কোনোরকমে পালিয়ে এসেছিল। নিজের চোখের সামনে বেশ কয়েকজন মানুষকে আহত হতে দেখে তার থেকে রাগিনীর আরো বেশি ভয় লাগা শুরু হয়। রাগিনীর ফোবিয়া আরো তাকে জেঁকে বসেছিল সেখান থেকেই। সেদিন রাশেদ সাহেব টিভিতে নিউজ পেলে রাগিনীকে জিজ্ঞেস করলে রাগিনী সেদিন মিথ্যে বলেছিল যে তার কিছুই হয়নি। অর্থাৎ সে টেরো’রিস্টদের কবলে পড়েনি। পরে নিজের ভার্সিটি আইডি কার্ড খুঁজলে সেটা রাগিনী আর পায়নি। হয়ত বোতল রাখা ব্যাগেই ছিল। সেই ব্যাগটাও সে তন্নতন্ন করে খুঁজে হতাশ হয়েছিল সে। কোনোক্রমে আর ব্যাগটা মিলেনি।

রাশেদ সাহেব সবটা মনোযোগ দিয়ে শুনলেন। চিন্তা করবেন না বলে কথা দিয়ে চিন্তারা প্রগাঢ় হয়ে ধরা দিল। কপালে পড়ল গাঢ় তিনটে ভাঁজ। মেয়েকে কী বলে শান্তনা দেবেন বুঝে উঠতে পারলেন না। তবে কৌতূহল বশত প্রশ্ন করলেন,
“তুমি কীভাবে নিশ্চিত হলে যে ওরাই তারা?”

“আমার মন বলছে বাবা। তাছাড়া এই খবর তো পাওয়া গিয়েছে যে ওরা চট্টগ্রাম থেকে এসেছে আর…”

কোহিনূরের কথা মুখ ফুটে বলা হলো না রাগিনীর। মানুষটির মুখ মনে পড়তেই হৃদয়ে সৃষ্টি হলো মিশ্র অনুভূতি। লোকটা এতটাই তীব্র অনুভূতির সূচনা করে দিয়েছে যা ক্ষণে ক্ষণে রাগিনীকে মনে করিয়ে দেয়। মানবটি মনটাকে চুরি করেছে। লোকটা ভয়ানক হওয়ার সাথে সাথে চোরও বলা যায়। তবে সেই মনটাকে ফেরত পাওয়ার উপায় কী? রাশেদ সাহেবের কথায় ধ্যান ভাঙল রাগিনীর।
“আর কী রাগিনী?”

“কিছু না বাবা। আমার আর ভালো লাগছে না। আমি ভালো থাকতে চাই।”

রাশেদ সাহেব বেশ বুঝতে পারেন মেয়ের মনের অবস্থা। উনি শুধু দীর্ঘশ্বাস ফেলে মেয়ের মাথায় আলতো করে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে ভাবলেশহীন হয়ে গাঢ় দৃষ্টিতে চেয়ে থাকেন। মেয়েটা কত ভাবে তাকে নিয়ে। আর এই ভাবনা কতগুলো কথা লুকিয়ে গুপ্তধনের মতো নিজের মনের অভ্যন্তরে রেখে দিয়েছিল সে। মেয়ের ফ্যাকাশে মুখের দিকে বেশ কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বললেন,
“যা হয়েছে সব দুঃস্বপ্ন ভেবে ভুলে যাও। আমি চাই না আমার ঘর উজ্জ্বল করে রাখা মেয়েটার চেহারা এমন বিবর্ণ হক। আর আমি তো আছি। আমার মেয়ের কোনো ক্ষতি হতে দেব না।”

রাগিনী কোনো প্রতিত্তোর করে না। নীরবতা পালন করে। রাশেদ সাহেব আবারও বলেন,
“আমার দুটো কথা রাখবে?”

উৎসুক নয়নে তাকায় রাগিনী। তার বাবা শান্ত গলায় বলেন,
“জানো তো আমি চাই না আমার বন্ধু আমায় অবিশ্বাস করুক। অভিরূপের বাবার কথা বলছিলাম আমি। অভিরূপকে কিছু জানিয়ো না। আমার মান সম্মান মিশে যাবে তার কাছে। তার সঙ্গে কথা বলাও দুর্বিষহ হয়ে উঠবে। আরো একটা কথা!”

রাগিনী শুনেই গেল। আগের মতোই বাকি কথা শোনার জন্য আগ্রহ নিয়ে চেয়ে রইল।
“তোমার মনে কোথাও যদি কোহিনূরকে নিয়ে সুন্দর কোনো শব্দ হলেও ভেবে থাকো তবে ভুলে যাও। মনে রাখবে, তোমার বাবা সবসময় তোমার ভালো থাকাটাই চেয়েছে।”

ব্যস…আর বিলম্ব করলেন না তিনি। উঠে দাঁড়ালেন রাশেদ সাহেব। হনহনিয়ে বেরিয়ে গেলেন। রাগিনী তখন নিস্তব্ধ, বাকরুদ্ধ। সবটা যেন এক মূহুর্তে থমকে গিয়েছে। তার বাবাও কি কোহিনূর সম্মন্ধে সবটা জেনে গেল? থমকে গিয়েছে ভালোবাসার ফুলে ভরা সুসজ্জিত পৃথিবী। যেই ভালোবাসার ফুলগুলো সমস্ত কোহিনূরের নামে যত্ন করে রাখা হয়েছিল। সেও তো চায় সব ভুলতে। কিন্তু ভুলতে গিয়ে যে সে ভেতরে ভেতরে গুমরে গুমরে ম’রছে প্রতিটা সময়।

টেবিলের ড্রয়ার খুলে ঘড়ির বক্সটা আনলক করে সুন্দর হাতঘড়িতে হাত বুলাতে থাকে নির্জন। ঘড়িটা রাগিনীর দেওয়া। মেয়েটা যেদিন জোর করে এলোমেলো পাগল পুরুষ থেকে সাহেব পুরুষ বানাতে উঠেপড়ে লেগেছিল সেদিনকার কেনা এই ঘড়ি। ঘড়ির গ্লাসে যেন রাগিনীর প্রতিচ্ছবি দেখতে পায় নির্জন। ওইতো মেয়েটা খিলখিল করে হাসছে। আবার নাক ফুলিয়ে রেগে রেগে যাচ্ছে। কতটা মিষ্টি সে! এই মিষ্টি পেলে বোধহয় জীবনে সবরকম মিষ্টিই তুচ্ছ মনে হবে। ঘড়িতে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে মেহরাজের কণ্ঠে তড়িঘড়ি করে ড্রয়ার বন্ধ করল সে।
“স্যার, কোনো কারণে কি আপনার মনমেজাজ খারাপ?”

নির্জন ভ্রু কুঁচকে তাকায়। গম্ভীর গলায় জিজ্ঞেস করে,
“কেন?”

“রাগিনী ম্যাডামের বাবা গতকাল যা যা বললেন তাতে তো আমারই…”

“আই রেসপেক্ট হিম অ্যান্ড হি’জ ডিসিশন।”

“তাহলে কি আপনি রাগিনী ম্যাডামের কথা ভুলে যেতে চাইছেন?”

অন্তর কেঁপে উঠল নির্জনের। দুরুদুরু করল মন। চেয়ারের হ্যান্ডেল শক্ত করে চেপে ধরল। রাগিনী নামক নামটা গেঁথে গিয়েছে যে। এটা কীভাবে ভুলবে? যেই হাসিতে সে মাতাল হয়েছে বার বার সেই হাসি মুখটাকে মন থেকে কী করে মুছবে? সবকিছু কী এতই সহজ? সে এখনো মন থেকে ক্ষণে ক্ষণে চায় রাগিনী তাজরীন নামক সবচেয়ে অমূল্য কাঠগোলাপের গন্ধে মেখে থাকতে।

চলবে…

#গোধূলি_বেলায়_তুমি_এসেছিলে
#আনিশা_সাবিহা
পর্ব ৪৪

“যদি প্রিয়জনদের ভালোর জন্য সেই প্রিয়জনকে ভুলে যেতে হয় তাহলে এই কাজটা করাই শ্রেয়।”

হাফ ছেড়ে আনমনে কথাগুলো বলল নির্জন। মেহরাজ শুনে খুব একটা সন্তুষ্ট হলো না। এই প্রথম তার স্যার কি-না প্রেমে পড়েছে! কাউকে ভালবাসতে পেরেছে। কোনো নারী তার মনে জায়গা করতে পেরেছে। সামান্য একটা সিক্রেট অফিসার হওয়ার কারণে কিনা সব শেষ হয়ে যাবে? এটা কিছুতেই মানতে পারল না সে। মুখ কালো করে বলল,
“আমার মনে হয় রাগিনী ম্যাডামের বাবা একটু বেশি বেশি করছেন।”

“নাহ। উনি ঠিক করছেন। আমিও তো একই কাজ করেছি নয়নের সাথে।”

স্থির চোখে তাকাল মেহরাজ। চোখেমুখে রাজ্যের বিস্ময়। কৌতূহলী হয়ে রইল নির্জনের মুখের দিকে চেয়ে। নির্জন ধীরগতিতে চেয়ারে ঠেস দিয়ে বসে টেবিলে হাত রাখল।
“যখন আমার মা-বাবা দুজনেই মা’রা গেলেন তখন থেকে আমার মাথায় শুধুমাত্র একটা চিন্তাই ঘুরত আর তা হলো নয়নকে আমি কীভাবে নিরাপদে রাখব। আমার বাবা পুলিশ হওয়ার কারণে শত্রুর কমতি ছিল না। তারপর আমি সিক্রেট টিমে জয়েন করার পর ভয়টা বাড়ে। নয়ন তখন খুব একটা বড় নয়। মাত্র স্কুল পাশ করেছিল। ওর কথা ভেবে আমি তো ওকে দূরে করে দিয়েছি। ওর ইচ্ছের বিরুদ্ধে আমি ওকে লন্ডন পাঠাই। ও প্রথম কয়েকদিন কল করে বেশ কান্নাকাটি করে। কিন্তু আমার মনকে গলতে দিই নি। কারণ জীবনে নয়ন আমার একমাত্র দুর্বলতা ছিল। যাকে আমি কোনো মতেই হারাতে চাইছিলাম না। আমার জীবনে নয়ন ছাড়া আর কেউ অবশিষ্ট ছিল না। তাই প্রয়োজনে ওকে আমার থেকে দূরে করে দিয়েছি। সে মেনে গেল ঠিকই। কিন্তু গত এক বছর ধরে সে বারবার দেশে আসার সুযোগ খুঁজছে।”

“তার কারণটা বোধহয় ইন্সপেক্টর রায়ান স্যার।”

মাথা চুলকে ফট করে কথাটা বলে ফেলল মেহরাজ। নির্জন তাকে সম্মতি জানিয়ে বলল,
“হুমম। ঠিক যে কারণে ওকে আমি লন্ডনে পাঠিয়ে দিয়েছি। ও আবারও সে আতঙ্কের দিকে ছুটছে। দেশে এত এত ছেলে থাকতে তার ইন্সপেক্টর রায়ানকে পছন্দ হলো‌। ও ভাবে আমি ওর পছন্দ করা মানুষকে পছন্দ করি না। নয়ন জানেনা আমি সব সময় ওর সুরক্ষা নিয়ে কতটা ডেসপারেট। মেয়েটা এখন অনেক বড় হয়ে গিয়েছে। নিজে নিজে পছন্দ করা শিখেছে। সে এখন নিজের ভাইকেও বলে দেয় নিজের ভালবাসার মানুষকে কিভাবে কনফেস করতে হয়।”

“স্যার আপনার একটা ডিসিশন কিন্তু উনার মন ভেঙে দিতে পারে।”

“আমি শুধু চাই ও ভালো থাক। আমার উপর যে আগুনের আঁচ আসে সেটা যেন কখনো ওর উপর না পড়ে। আমি ভাই হয়ে তার সঙ্গে এমনটা করছি। তাহলে একজন দায়িত্বশীল বাবা হয়ে কেন রাগিনীর বাবা এ কাজ করবে না বলতে পারো।”

মেহরাজ দীর্ঘশ্বাস ফেলে। এজন্যই সে বোধহয় অফিসার নির্জন আহমেদকে এতটা সম্মান করে। কারণ মানুষটা সব থেকে আলাদা। নির্জনের কড়া গলা শোনা যায় এবার।
“কাজে মন দাও মেহরাজ। ঘটনা কতদূর এগোল?”

“মাওয়া ঘাটের নদীর নিচে একটা বি’স্ফোরণ ঘটেছে স্যার। এই ঘটনা গতকালকের। অভিরূপ আর ওই মেয়েটাও কালকে ওই সময়ের আশেপাশেই ওখানে উপস্থিত ছিল। তারা বিদায় নেওয়ার কিছুক্ষণ পরেই এই কাহিনী হয়।”

নির্জন কিছুটা আশ্চর্য হয় বটে। কী হচ্ছে এসব? কেনই বা হচ্ছে? অভিরূপকে মা’রবে বলে রাগিনীকে সরানো হলো। কিন্তু ঘটল ঠিক উল্টোটা! অভিরূপের কোনোরূপ ক্ষতি হলো না। নির্জন চুপ করে ভাবনায় ডুবেই রইল। মুখে এলো না কোনো কথা। বেশ কিছুক্ষণ নীরবতা পালনের পর সে শক্ত গলায় বলল,
“শহরে যতগুলো প্রাইভেট হসপিটালে প্লাস্টিক সার্জারি করা হয় সেগুলোতে খোঁজ নাও। আর নেওয়া যাচ্ছে না। সবকিছু এক জায়গায় ঘুরপাক খাচ্ছে। এর একটা বিহিত হতে হবে। শহরের কেউ সেফ নয়।”

“ইয়েস স্যার।”

নির্জনের কথায় বাধ্য মতো উত্তর দিল মেহরাজ। বেরিয়ে গেল সঙ্গে সঙ্গেই। তার যাবার পরেই ড্রয়ারটা একবার খুলল নির্জন। চকচক করে উঠল ঘড়ি। গ্লাসে যেন আবারও রাগিনীরই প্রতিচ্ছবি। কী সুন্দর হাসছে! ঘড়ির গ্লাসে সুন্দর করে হাত ছুঁইয়ে দিল আরো একটা বার। নিজ মনেই বলল,
“তুমি আমার সামনে থাকলে তো পাগল করে দাও। আর এখন না থাকলে দেখছি আরো বেশি পাগল করে দাও। তোমার থেকে কি পরিত্রাণ নেই?”

মানুষ যত বড়োই হক না কেন! মনটা সবসময় অবুঝের ন্যায় থেকে যায়। যখন সেখানকার উন্মাদনার পরিমাণ বাড়ে তখন নিজেকে সামলানো দায় হয়ে যায়। বিশেষ করে মন সবসময় চেয়ে বসে নিষিদ্ধ জিনিস! যার প্রতি হক নেই। যার প্রতি অধিকার ফলানো কখনো সম্ভব নয়। নির্জনের ক্ষেত্রেও তাই। রাগিনীকে সে নিজ অধিকারে কখনো পাবে না। আর এভাবে পেতে চায়ও না। মস্তিষ্ক কথাগুলো ঠিকঠাক বুঝলেও মনকে কীভাবে বোঝানো যায়?

একই ব্ল্যাঙ্কেটের নিচে উপুড় হয়ে গভীর ঘুমে নিমগ্ন অভিরূপ আর নোমান। দুজনেই বেশ ক্লান্ত। গতকাল একটা কনসার্টের আয়োজন হয়েছিল অভিরূপ এই দেশে আসার উপলক্ষ্যে। সেখানে এটেন্ড করতে হয়েছি আর কি! অভিরূপ যাবে না আর নোমান ছাড়বে না। শেষমেশ দুজনে ফিরেছিল রাত বারোটার পরপর। তখন থেকে দুজন ঘুমিয়েই চলেছে। ঘড়িতে সকাল দশটা ছুঁইছুঁই। দরজায় টোকা পড়ল। এমন ঠকঠক শব্দে অভিরূপ নড়েচড়ে ওঠে। ঘুমটা হালকা হয়ে আসে। ফের এমন শব্দে ঘুমটা ভেঙেই যায় তৎক্ষনাৎ। পিটপিট করে দরজার দিকে চেয়ে আবারও সটান হয়ে শুয়ে পড়ে। পাশ ফিরে তাকিয়ে দেখে নোমান এখনো ম’রার মতো ঘুমাচ্ছে। শয়তানি বুদ্ধিটা খেলে যায় অভিরূপের মাথায়। তার ঘুম তো ভেঙেছে। তবে কি নোমান শান্তিতে ঘুমোতে পারবে? কখনোই না। কোনোমতেই না। সে আবারও ঘুমের ভান ধরে চোখ বুজল। পা দিয়ে নোমানকে ঠেলা দিয়ে বলল,
“দেখ তো কে এসেছে!”

ঘুমন্ত নোমান বেশ বিরক্ত হয়। ঘুম জড়ানো আর ঝিমানো কণ্ঠে প্রতিত্তোরে বলে,
“তুই দেখ না!”

“আমি ঘুমাচ্ছি। তুই দেখ।”

“তো কথা বলছিস কীভাবে? আমার শরীর চলছে না। উঠে গিয়ে দেখ।”

দুজনেই দুজনের কথায় অটল। তাদের কথোপকথনের মাঝে আবারও দরজায় কড়া নাড়লো কেউ। নোমান নির্বিকার ভঙ্গিতে তখনও ঘুমে। মুখ হালকা হা করে ঘুমাচ্ছে সে। অভিরূপ এবার জোরে লা’থি মা’রতেই চোখমুখ জড়িয়ে অন্যপাশ ফিরে নোমান। অভিরূপ এবার হাফ ছেড়ে পুরো ব্ল্যাঙ্কেট নিজের গায়ে টেনে নেয়। নোমানের ঘুম এবার পুরোপুরি ভাঙে। অভিরূপের দিকে তাকিয়ে তার চুল ধরে টান মে’রে ক্ষিপ্ত হয়ে বলে,
“জীবনে কি ভালো হবি না?”

অভিরূপ ব্ল্যাঙ্কেটে মুখ লুকিয়ে গুনগুন করে বলল,
“উমম…বাংলাদেশের ট্রেন্ডিং এ একটা গান শুনেছিলাম জানিস। মনে পড়ছে না। ওহ ইয়েস, ‘আমি তো ভালা না ভালা লইয়াই থাইকো।’ তুই তোর ভালা নিয়েই থাক। যা গেট খোল।”

অভিরূপের কণ্ঠে এমন আঞ্চলিক ভাষায় গান শুনে বেশ হাসি পায় নোমানের। ছেলেটা আর শুধরাবে না। না পেরে সে উঠে গেল দরজার দিক। দরজার লক খুলতেই আবিষ্কৃত হলো এক স্নিগ্ধ মুখ। রাগিনীকে দেখে নোমান বিনয়ের সাথে বলল,
“গুড মর্নিং।”

“গুড মর্নিং। ঘুম ভাঙেনি বুঝি আপনাদের?”

“এইতো! গতকাল রাতে আসতে অনেক দেরি হলো না! তাই ঘুমটা দেরিতেই ভাঙছে।”

রাগিনী হালকা হাসল। অতঃপর বলল,
“অনেক দেরি হচ্ছিল তো। ব্রেকফাস্ট নিয়ে বসে ছিলাম। তাই ভাবলাম একটু দেখে আসি।”

রিনরিনে গলা শুনে হুড়মুড়িয়ে উঠে বসে অভিরূপ। উঁকি দিয়ে তাকায় কণ্ঠ ভেসে আসার পথে। রাগিনীর মুখের একাংশ দেখা যাচ্ছে। নিজের চোখমুখ হাত দিয়ে কচলাতে লাগল সে। মুখ পুরোটাই তৈলাক্ত হয়ে গিয়েছে। দ্রুত সে টাওয়াল নিয়ে ছুটল ওয়াশরুমে।

“আপনার বন্ধুর বোধহয় ঘুম ভাঙেনি এখনো!”

রাগিনীর প্রশ্নে বড় শ্বাস নিয়ে নোমান জবাবে বলল,
“সে আর বলতে! তুমি দরজায় নক করছো আর ও রুমে আমার সঙ্গে যুদ্ধ বাঁধিয়ে দিয়েছে দরজা কে খুলবে তার জন্য। আমার ঘুমটা নষ্ট করে এখন নিজে হয়ত আবার ঘুমাচ্ছে।”

রাগিনীর হাসিটা প্রগাঢ় হয়। হাতে থাকা চায়ের কাপ আর প্লেট এগিয়ে দিয়ে বলে,
“উনার জন্য আদা আর তুলসীপাতার চাও এনেছিলাম। গলা ভালো রাখার জন্য নাকি এটা অনেক দরকার।”

“সেটা তো ঠিক আছে। শুধু গায়ক সাহেবের কথা ভাবলে হবে? তোর বন্ধুর কথা মাথায় আসেনি বুঝি?”

রাগিনী তড়িঘড়ি করে পাশের চায়ের কাপ এগিয়ে দিয়ে নোমানের উদ্দেশ্যে মিষ্টি কণ্ঠে বলে ওঠে,
“কেন নয়। আপনার জন্যও চা নিয়ে এসেছি।”

“তাও ভালো। আমি তো ভেবেছিলাম সবাই আমার কথা ভুলেই গিয়েছে।”

দুজনের কথোপকথনে এবার অন্য এক কণ্ঠস্বর ভেসে এলো। গলাটা অভিরূপের। স্পষ্ট ব্যস্ত কন্ঠ।
“কে এসেছে রে নোমান? তুই উঠে পড়েছিস! যাক তোকে ঘুম থেকে উঠানোর জন্য কারোর আসা সার্থক হয়েছে।”

নোমান কিছুটা চটে গিয়ে তাকায় অভিরূপের দিকে। কিছু বলার আগেই অভির ভেজা চোখমুখ, ঘাড়ে টাওয়াল দেখে হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে রইল সে। এটা তো আশ্চর্যজনক কান্ড! ম্যাজিক হয়ে গেল নাকি? কিছুক্ষণ সময় নিয়ে বুঝতে হলো ব্যাপারটা। রাগিনীর দিকে আঁড়চোখে তাকাল সে। চোখ সরু করে জিজ্ঞেস করল,
“ব্যাপার কী? ঘুম থেকে কখন উঠলি কখন আর ফ্রেশ হলি কখন?”

টাওয়াল দিয়ে হাতমুখ মুছতে থাকা অভিরূপ বাঁকা হেঁসে বলে,
“আমাকে কি তোমার মতো অলসের দোকান মনে করিস? তোকে তো আমি কখন থেকে ডাকছি! তুই-ই তো ওঠার নাম নিচ্ছিস না।”

নোমান বিস্ময়ে কিংকর্তব্যবিমূঢ়! হতবাক! কী সুন্দর করে ছেলেটা পাল্টি খাচ্ছে। কেউ দেখলে বলবে সে মিথ্যে বলছে? ভাবলেশহীন হয়ে চেয়েই রইল সে। কথা বলার আর সুযোগ পেল না। অভিরূপ রাগিনীর উদ্দেশ্যে বলে বসল,
“সরি রাগিনী! আসলে ওকে ঘুম থেকে ওঠাতে গিয়ে দেরি হয়ে গিয়েছে তার কারণে তোমাকে কষ্ট করে আমাদের ঘরে আসতে হলো।”

আরেক দফা বিস্মিত হলো নোমান। এই ছেলে যদি গান করা বাদে অ্যাক্টিং-এ চান্স নিতো এতদিনে হয়ত আরো বেশি ফলোয়ারস করে ফেলত! কী মা’রাত্মক অভিনয়! নোমানের বেশ ইচ্ছে করল এরই মাঝে তার অভিনয়ের দফারফা করতে। কিন্তু কী আর করবে! ছেলেটা খুব আশা নিয়ে অভিনয় চালিয়ে যাচ্ছে। এর মধ্যে পানি ঢেলে না দেওয়ায় ভালো। শুধুমাত্র সে অভিরূপের ঘাড় থেকে টাওয়াল টেনে নিয়ে চোখ গরম করে টাওয়ালের ঝাপটা লাগিয়ে ওয়াশরুমের দিকে চলল।

তখন সন্ধ্যে। পাখির সব নীড়ে ফেরার ব্যস্ততা। অফিসে দিনরাত পরিশ্রম করা মানুষগুলোও ক্লান্তি শেষে নিজের বাড়ি এবং বিছানা খুঁজে চলেছে। সকলেই শান্তি চায়। এক ফালি চাঁদ দেখা দিয়েছে। তার কিছুটা দূরত্বেই জ্বলজ্বল করছে সন্ধ্যাতাঁরা। রাস্তার দুপাশে হলুদ রঙের সোডিয়ামের আলোয় আলোকিত। দেখা যাচ্ছে হরেকরকমের গাড়ি। নির্জন গাড়িটা ঘুরিয়ে মেইন গেট দিয়ে বাড়ির নিচে পার্ক করে। গাড়ির দরজা খুলে চাবি ঘোরাতে ঘোরাতে বাড়ির সদর দরজার কাছে গিয়ে কলিংবেল প্রেস করে। কিছুক্ষণের মধ্যে খুলে যায় দরজা। ভেতরে দুই ধাপ রাখতেই হুড়মুড়িয়ে দুর্যোগের মতোই আগমন ঘটে নয়নতাঁরার। বাচ্চাদের মতোই নির্জনের গলার পেছনটা আঁকড়ে ধরে ভাইয়ের সাথে ঝুলে পড়ে সে। প্রথমে থতমত খেয়ে পড়তে নিলেও নিজেকে সামলে উঠে ধাতস্থ হয়ে রাগি চোখে নয়নের দিকে তাকায় সে। কিন্তু সে জানে মেয়েটার কোনো ভ্রুক্ষেপ হবে না। তাই সোজা চলতে শুরু করে আর গমগমে সুরে বলে,
“এখন আর ছোটো আছো? বড় হয়েছো, বয়স হয়েছে। ওজন বেড়েছে তো। এভাবে গলায় ঝুলে পড়লে চলে আগের মতো?”

“তুমিও বড় হয়েছো। আগের থেকে দেহ বেড়েছে। ওজন বেড়েছে তাহলে সমস্যা কোথায়?”

“তোমাদের দুজনের সঙ্গে কথায় আমি কখনোই পেরে উঠব না।”

অতিষ্ঠ হয়ে জবাবে বলল নির্জন। চাবিটা ড্রয়িংরুমের একটা টেবিলের উপর রাখল। নয়ন দাঁত বের করে হেঁসে বলল,
“একজন তো আমি। আরেকজন বুঝি রাগিনী ভাবি?”

“কী ভাবি ভাবি করছো! বিয়ে হয়েছে এখনো?”

“ইউ নো না বিগ ব্রাদার! আমি এডভান্সড। তুমিই তো বলো আমি ডেলিভারি ডেটের দুই দুই মাস আগে পৃথিবীতে হাজির হয়েছিলাম তোমাকে জ্বালানোর জন্য।”

নির্জন হাফ ছেড়ে পকেট থেকে বড় চকলেটের প্যাকেটটা বের করে নয়নতাঁরাকে নিজের কাছ থেকে ছাড়িয়ে তা তার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলে,
“ঘাট হয়েছে আমার। এখন রেহাই দাও।”

নয়ন হেঁসে প্যাকেটটা সঙ্গে সঙ্গে ছিঁড়ে চকলেট বের করে কামড় দিয়ে মুখ দিয়ে অদ্ভুত আওয়াজ বের করে খেতে খেতে। যেন অমৃত খাচ্ছে। নিজের গা থেকে কোট খুলে সোফায় রাখে নির্জন। হাতের ঘড়িটা খুলতে খুলতে জিজ্ঞেস করে,
“তোমাকে ফোন করেছিলাম কয়েকবার। ফোন বন্ধ দেখাচ্ছে কেন?”

থতমত খেয়ে তাকায় নয়নতাঁরা। চোখে দেখা যায় রাজ্যের আতঙ্ক। খাওয়াটা বন্ধ হয়। আমতা আমতা করায় নির্জন ক্ষীণ দৃষ্টিতে তাকায়। নয়ন জোরপূর্বক হেঁসে বলার চেষ্টা করে,
“চার্জ দিই নি হয়ত।”

“ফোন অন্যের কাছে থাকলে চার্জ দেবে কী করে?”

এবার মুখটা বেলুনের মতো চুপসে যায় নয়নতাঁরার। খাওয়াটা যেন জন্মের মতো বন্ধ হয়। ঢক গিলে কিছু বলার আগেই নির্জন থমথমে সুরে বলল,
“মনের সঙ্গে ফোনও দান করে দিচ্ছো আজকাল? ফোনের চার্জারটাও দিয়ে আসতে ইন্সপেক্টর রায়ানকে।”

“আসলে ভাইয়া…”

“আসলে নকলে কিছু বুঝি না আমি। তোমার ভার্সিটি থেকে কল এসেছিল আমার কাছে। ক্লাস করছ না। কয়েকদিন পর এক্সাম। এক্সামে কী লিখবে?”

ভাইয়ের ধমকে চোখমুখ ছোট হয়ে এলো নয়নতাঁরার। নির্জন থামল না। অনবরত বলতে শুরু করল,
“নিজের ভালোটা বুঝতে শিখো নি আমি জানি। অন্তত আমাকে তোমার ভালো নিয়ে ভাবতে দাও। কালকে তোমার জন্য আমি ফ্লাইটের টিকিট বুক করব।”

নয়নতাঁরার মুখটা ভার হয়ে যায়। কাঁদো কাঁদো হয়ে নির্জনের দিকে তাকায়। যেদিন রায়ান তাকে বখাটে ছেলেদের সামনে থেকে সরিয়ে এনেছিল সেদিনই সে ইচ্ছে করে ফোনটা গাড়িতে রেখে চলে এসেছিল যাতে রায়ানের সঙ্গে আবারও তার দেখা হয় ফোনটা দিতে এসে। মনে মনে রায়ানকে বেশ বকতে থাকে নয়ন। লোকটা তো বেশ ব’জ্জাত! পেটে পেটে শ’য়তানি লুকিয়ে। তার ভাইকেই কেন ফোনের কথাটা বলতে হবে? সব পরিকল্পনা ভেস্তে গেল! তবে এই মূহুর্তে বুদ্ধিমানের কাজ তার বিগ ব্রাদারকে গলানো। সেই অনুযায়ী অসহায় হয়ে উঠে দাঁড়িয়ে সে বলল,
“এমনটা করতে পারবে তুমি? তোমার বিয়েটা অবধি আমায় খেতে দেবে না? এটা আমার সঙ্গে অবিচার হচ্ছে না?”

ভ্রু কুঁচকালো নির্জন। বিস্ময়ের সুরে বলল,
“বিয়ে! কীসের বিয়ে?”

“তোমার আর ভাবির বিয়ে! আমি তোমার একমাত্র সিস্টার। আমি না থাকলে বিয়ে জমে? নাকি লুকিয়ে বিয়ে টিয়ে সেরে ফেলেছো?”

“আজেবাজে কথা বন্ধ করবে তুমি?”

বিরক্ত হয়ে বলল নির্জন। নয়নের মাঝে কোনো ভাবান্তর দেখা গেল না। সে নিজের মতোই বলল,
“এখন কিন্তু আমার ডাউট হচ্ছে। দেখো! আজ কিন্তু আমি তোমার ল্যাপটপ থেকে একটা সুন্দর দেখে লেহেঙ্গা অর্ডার দিয়েছি তোমাদের বিয়েতে পড়ব বলে।”

বি’স্ফোরিত চোখে তাকায় নির্জন। মেয়েটার মাথায় সত্যি কোনো সমস্যা আছে। অস্ফুটস্বরে বলে,
“কী বলছো!”

“হু বেশি না। আট হাজার দাম। আস্তে আস্তে সব কিনে রাখতে হবে তো। বলা যায় না কখন কোনদিক থেকে সুসংবাদ আসে। তাছাড়া আমার একাউন্ট তো ব্লক করে রেখেছো এখনো।”

“আমি কোনো টাকা দিতে পারব না। তবে হ্যাঁ এখন ইচ্ছে করছে তোমায় পা’গলাগা’রদে রেখে আসতে। ওটার জন্য টাকা ইনভেস্ট করতে পারি!”

চোখ দুটো সরু করে নয়নতাঁরা। বুকে হাত জড়িয়ে ভাইয়ের পাশে বসে ঠেলা দিয়ে জিজ্ঞেস করে,
“পাগ’লামির কী দেখলে?”

“বিয়ে বিয়ে করে পাগ’ল হচ্ছো। কীসের বিয়ে নিয়ে এত ভাবছ?”

“তোমার আর রাগিনী ভাবির বিয়ে!”

নির্বিকার হয়ে উত্তরে বলল নয়নতাঁরা। সঙ্গে সঙ্গে নির্জন বলে উঠল,
“কোনো বিয়ে হবে না।”

বলেই মূহুর্ত না থেমে উঠে দাঁড়াল সে। হনহনিয়ে যেতে লাগল নিজের ঘরের দিকে। নয়নও কী কম যায়? সেও ধড়ফড়িয়ে দাঁড়িয়ে ফের তার ভাইকে জ্বালাতে পেছন পেছন ছুটল।

রাতটা কম হয়নি। প্রায় সাড়ে দশটা। বাতাসের বেগটা বেড়েছে। তীব্র হয়েছে। গাড়ির জানালা খোলা থাকার ফলে বাতাস ছুঁতে পারছে নির্জনকে। পাশেই ড্রাইভিং সিটে মেহরাজ। সে নির্বিঘ্নে গাড়ি ড্রাইভ করতে ব্যস্ত। নির্জন অধৈর্য হয়ে প্রশ্ন করে,
“কোথায় যাচ্ছি আমরা বলো তো! আমাকে বললে কাজ আছে। খুব ইম্পরট্যান্ট কাজ। আমি না এলে হবেই না। তাই এলাম। সেই তখন থেকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছো আমায়?”

“স্যার, কখনো কখনো তো ভরসা করুন আমায়। সঠিক জায়গায় যাচ্ছি আমরা।”

“জায়গার নামটা বলতে সমস্যা কোথায়?”

মেহরাজ সহজ গলায় বলল,
“ওখানে গেলেও তো দেখতে পাবেন।”

নির্জন দাঁত চেপে বসে রইল। এমনিতেই তার ভালো লাগছে না। তার ওপর মেহরাজের এমন কান্ড! সহ্য হয় এসব? গাড়িটা যখন রাগিনীদের বাড়ির রাস্তায় মোড় নিল তৎক্ষনাৎ চকিতে তাকাল নির্জন। পাশ ফিরে মেহরাজের দিকে কপাল কুঁচকে তাকাল। মেহরাজ নীরব। নির্জন অস্থির হয়ে বলল,
“এটা তো রাগিনীদের বাড়ির রাস্তা।”

মেহরাজ তবুও কিছু বলল না। গাড়ি থামল। রাগিনীদের বাড়ির ঠিক পেছনদিকে। নির্জন তড়িঘড়ি করে বলল,
“এখানে কেন নিয়ে এলে? গাড়ি ঘুরাও।”

“না স্যার। আপনি রাগিনী ম্যাডামের সাথে দেখা করে আসুন।”

“মাথা খারাপ নাকি তোমার?”

আশ্চর্য হয়ে বলে নির্জন। মেহরাজ বরাবরের মতো মুখ ফস্কে বলে ফেলে,
“একদমই না। আপনার মাথা যেন খারাপ না হয় সেই ব্যবস্থা করছি।”

চলবে…