#তুই_অন্যর_সাথে_ঘর_বাঁধো
#তাসনিম_তামান্না
একহাতে প্রেগন্যান্সি কিট আর অন্য হাতে ভালোবাসার মানুষটার অন্য মেয়ের সাথে ঘনিষ্ঠ ছবি। রুনা স্তব্ধ হয়ে বসে আছে। ওর এখন কি করা উচিত প্রেগ্ন্যাসির জন্য খুশি হওয়া উচিত না-কি ভালোবাসা স্বামী নামক মানুষটা প’র’কি’য়া’য় লিপ্ত বলে কাঁদা উচিত?
বাচ্চার জন্য রুনা কত কেঁদেছে কিন্তু আজ যদিওবা সুখবর টা পেলো তার সাথে দুঃখ কষ্ট দুয়ারে চলে এলো।
কাল রাতে রুনার স্বামী শাহেদ বাসায় ফেরে নি অফিসে কাজে চট্টগ্রাম গিয়েছে। সে প্রায় এমন রাতে বাইরে থাকে কাজের জন্য রুনা অবশ্য স্বামী কে কখনো সন্দেহ করে নি। বেশি ভালোবাসত কি-না। ভালোবাসার কোনো ফাঁক রাখতে চাই নি। কিন্তু এসব দেখে রুনা ভেঙ্গে গুড়িয়ে গেলো নিমিষেই। এখন কি করা উচিত সেটা রুনা ভেবে পাচ্ছে না। চুপচাপ শুয়ে পড়লো। সকালে আর খাওয়া হলো না। রুনার শ্বশুর-শ্বাশুড়ি নেই। শাহেদ বাড়ি ফিরলো সন্ধ্যার দিকে রুনার চোখ-মুখ শুকনো সারাদিন কিছুটি মুখে তোলে নি।
–কী হয়েছে? তোমাকে এমন দেখাচ্ছে কেনো? শরীর খারাপ?
–কিছু হয় নি। ফ্রেশ হয়ে আসো খেতে দি।
খাওয়া দাওয়া শেষ করে শাহেদ শুয়ে ফোন টিপছিল। রুনা নিজেকে দমাতে না পেরে বলল
–তোমার সাথে কথা ছিল…!
–কী কথা?
রুনা ছবি ভিডিও গুলো শাহেদ কে দেখিয়ে বলল
–এগুলো কী সত্যি?
শাহেদ শান্ত কন্ঠে বলল
–তোমার কী মনে হয়? তুমি এগুলো বিশ্বাস করছ?
–বিশ্বাস করতাম।
–এখন করো না?
রুনা কাঠকাঠ জবাব দিলো
–নাহ!
শাহেদ দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে বলল
–যদি বলি এগুলো সত্যি তাহলে কি তুমি আমাকে ছেড়ে চলে যাবে?
রুনার কান্না ঠেলে বের হতে চাইলো। কিন্তু রুনা নিজেকে সামলিয়ে নিয়ে শক্ত কণ্ঠে বলল
–অবশ্যই! চরিত্রহীন পুরুষের সাথে থাকার চেয়ে একা থাকা অনেক ভালো।
শাহেদ প্রস্তুতি নিয়ে বলল
–দেখ রুনা আমি তোমাকে ভালোবাসি! কিন্তু আমার একটা সন্তান ও চাই। অনেক তো চেষ্টা করলাম কিন্তু কিছু হলো না। সে দিন পার্টিতে নিজের ওপরে নিজের কন্ট্রোল ছিল না। ড্রিংক করছিলাম। আর তখনি আন্নির সাথে আমি ইনটিমেন্ট হই। তোমাকে তখন বলি নাই তুমি কষ্ট পাবে বলে কিন্তু ও জানায় ও প্রেগন্যান্ট…
শাহেদ থামলো। রুনার কাঁদছে নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারলো না চোখ দিয়ে অনর্গল অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে। এতো ভালোবাসার পর মানুষটা তাকে এভাবে ধোঁ*কা দিল? রুনা চোখ মুছে বলল
–ডিভোর্স দিচ্ছ কবে?
–আমি সব রেডি করে ফেলছি। শুধু তোমাকে বলতে পারছিলাম না।
রুনার কাছে সবটা স্বচ্ছ কাচের মতো পরিষ্কার হয়ে গেলো
–তার মানে এটা একটা প্ল্যান ছিল। যে ভিডিও গুলো আমি দেখলে। আপনি যেনো সবটা জানতে পারেন?
–বলতে পারো!
শাহেদের এমন গা ছাড়া ভাব দেখে রুনার বুকটা ফেটে যাচ্ছে। কিভাবে পারছে এগুলো বলতে? ওর কি একটুও কষ্ট হচ্ছে না। নিজের মধ্যে একটুও অনুতাপ নেই?
–পেপার দাও সাইন করে চলে যাচ্ছে
শাহেদ একটু অবাক হলো। ও ভেবেছিল রুনা ওর কাছে থাকতে চাইবে। ওকে জড়িয়ে ধরে কান্না কাটি করবে। কিন্তু না শুধু নিরবে কেঁদে গেলো। পরক্ষণেই খুশি হয়ে গেলো যদি কোনো ঝামেলা ছাড়ায় সবটা হয় তাহলে ওরই ভালো।
রুনা শাহেদের বাড়ি থেকে নিজের সব জিনিস পত্র নিয়ে বের হয়ে এসেছে। রুনা কাঁদতে কাঁদতে ভাবলো। কোনো বেইমানের কথা ভেবে আর কাঁদবে না। সে এখন আর একা নয়। সাথে আর একজন ও আছে তার সুস্থতার জন্য হলেও তাকে সুস্থ থাকতে হবে।
রুনা পার্কে বসে ঠান্ডা মাথায় ভাবলো কি করা যায়? বাপের বাড়ি সে ফিরছে না। ফিরলেই আরেকটা অশান্তি। অনেক ভেবে বান্ধবী লোফার কাছে ফোন দিলো কয়েক বছর আগে তার স্বামী মারা গেছে। তারপর আর সে বিয়ে করে নি। ফোন দিয়ে সব বলল লোফার আশ্বাস দিয়ে তার কাছে চলে যেতে বলল। শুরু হলো নতুন লড়াই। যেহেতু রুনা অর্নাস পাস তাই চাকরির ও খুঁজে পেলো।
তারপর চলে গেলো অনেক গুলো বছর…
নিজের একটা বাড়ি করেছে। সেখানে রুনা আর রুনার মেয়ে থাকে। মেয়ে মায়ের কষ্ট বুঝতে পারে। কিন্তু বাবাকে ঘৃণা করতে পারে না। দুজনকেই সে ভালোবাসে।
রুনা খবর পেয়েছে শাহেদ তাকে খুঁজেছে। ওর বউয়ের নাকি চরিত্রের সমস্যা। কাউকে ঠকিয়ে কেউ সুখি হতে পারে না। রিভেঞ্জ অফ নেচার বলেও তো একটা কথা আছে নাকি?
সমাপ্ত