#প্রণয়াসক্ত
#পর্ব_১৩
#Sumaiya_Sumu(লেখিকা)
“আমি চোখ খুলে সামনে তাকাতেই অবাক হয়ে গেলাম। সুইমিং পুল এর পাশে একটা খালি জায়গা আছে সেই জায়গা’টাও অনেক সুন্দর। আরাফ আরও সুন্দর করে সাজিয়েছে। লাভ শেপের অজস্র বেলুন,গোলাপের পাপড়ি, ক্যান্ডেল দিয়ে চারদিক’টা খুব সুন্দর করে সাজিয়েছে। মনোমুগ্ধকর পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। মাঝখানে একটা টেবিল রাখা আর টেবিলের উপর একটা কেক। আরাফের ঠোঁটে মন মাতানো সেই হাসি আর হাতে একটা ডায়মন্ড রিং নিয়ে হাটু ভে’ঙে আমার দিকে তাকিয়ে বসে আছে। আমি নিচের দিকে তাকিয়ে দেখি আমি যেখানে দাঁড়িয়ে আছি সেখান থেকে শুরু করে আরাফ যেখানে বসে আছে সেখান পর্যন্ত গোলাপের পাপড়ি দিয়ে একটা রাস্তার মতো বানানো হয়েছে। আমি অবাক চোখে আরাফের দিতে তাকাতেই ও চোখ দিয়ে ইশারা করে বললো, ওর দিকে যেতে। আমি গোলাপের পাপড়ি দিয়ে ধীরে ধীরে হেঁটে ওর দিকে গেলাম”। আমি ওর সামনে গিয়ে দাঁড়াতেই ও চোখ বন্ধ করে বলতে শুরু করলো….
‘আমি হয়তো এতো গুছিয়ে নিজের ভালোবাসা প্রকাশ করতে পারি না কিন্তু আমি তোমাকে প্রচন্ড ভালোবাসি। বৃষ্টি ভেজা এক বিকেলে দেখেছিলাম তোমায়। নীল শাড়ি পড়া এক এলোকেশি কন্যাকে যখন আমি বৃষ্টির পানি দিয়ে শহরের ব্যাস্ত রাস্তায় খেলতে দেখেছিলাম সেদিন আমার দুনিয়া এক মুহুর্তের জন্য থমকে গিয়েছিলো। বৃষ্টিতে ভিজলে যে কাউকে এতোটা স্নিগ্ধ লাগে তা তোমাকে না দেখলে হয়তো আমার জানাই হতো না। সেদিন থেকেই আমার মনের ক্যানভাসে শুধু তোমার ছবি এঁকেছি প্রিয়তমা। এই আরাফ চৌধুরী,,যে কখনো ভালোবাসায় বিশ্বাস করতো না সেই আরাফ চৌধুরী তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছে। যেনো-তেনো ভালোবাসা নয়! আরাফ চৌধুরী তোমার মায়ায় পুরোপুরি আসক্ত হয়ে গেছে। কখনো কাউকে এভাবে ভালোবাসার কথা বলতে হবে সেটা ভাবতে পারিনি। তবে আজ বলছি আমি তোমায় বড্ড ভালোবাসি ঝ’গ’ড়ু’টে রাণী। এই আরাফ চৌধুরী তোমার প্রণয়াসক্ত হয়ে গেছে। ভালোবাসি প্রেয়সী’।
“এটা বলার সাথে সাথেই একটা শব্দ হয় আর নাতাশা আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখে পুরো আকাশ জুড়ে অসংখ্য বেলুন উড়ে গিয়ে ‘লাভ ইউ সো মাচ নাতাশা’ লেখা’টা হলো। নাতাশা এমন একটা সারপ্রাইজের জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলো না। ও এতো কিছু দেখে কথা বলার মতো ভাষা হারিয়ে ফেলেছে। খুশিতে ওর চোখ দিয়ে পানি পড়ছে। ও ভাবতেও পারেনি আল্লাহ তায়ালা ওর ভাগ্যে এতোটা সুখ রেখেছিলো। আরাফ বসা থেকে উঠতেই নাতাশা আরাফকে জাপটে জড়িয়ে ধরে বুকে মুখ লুকায়। আর আরাফ ও পরম আবেশে প্রিয়তমাকে আগলে নেয়। আর মনে মনে ভাবে সময়টা যেনো এখানেই থেমে যায়। হঠাৎ সবার করতালি’র আওয়াজে ওর ধ্যান ভা’ঙে। ওরা দু’জন দু’জনের থেকে ছিটকে কিছুটা দূরে সরে যায়। নাতাশা লজ্জায় মাথা নিচু করে আছে আর আরাফ মাথা চুলকে বোকা বোকা হাসি দিচ্ছে। সবাই করতালি দিয়ে বলছে ‘এই যুগেও এমন ভালোবাসা দেখা যায়? মন’টা একদম ভালো হয়ে গেলো। তোমরা সবসময় একে-অপরকে এভাবেই ভালোবেসে আগলে রেখো’। আরাফ সবাইকে ধন্যবাদ দিয়ে নাতাশার দিকে তাকালো। নাতাশা এখনো মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে”। আরাফ নাতাশার দিকে এগিয়ে গিয়ে বলে উঠলো…
‘আমার লজ্জাবতী রানী আর লজ্জা পেতে হবে না এবার কেক’টা কাটো’।
“নাতাশা আরাফের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে কেক’টা কে’টে আরাফকে খাইয়ে দিলো, আরাফও নাতাশাকে খাইয়ে দিলো। নাতাশা মুগ্ধ হয়ে আরাফের দিকে তাকিয়ে আছে”। আরাফ নাতাশার চোখের সামনে তুড়ি বাজিয়ে বললো…
‘কি দেখছো এভাবে’?
‘তুমি সত্যি আমাকে এতো ভালোবাসো’?
‘অসম্ভব ভালোবাসি জান। কেন বিশ্বাস হয় না’?
‘মাঝে মাঝে বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়। আমার কপালে এতো সুখ সইবে তো’?
‘বাজে কথা বলছো কেন? খারাপ কিছুই হবে না দেখো’।
‘হুম’।
‘আচ্ছা সারপ্রাইজ কেমন লাগলো’?
‘অসম্ভব সুন্দর’।
‘আচ্ছা চলো আজকে সম্পূর্ণ রাতের শহর’টা তোমাকে দেখাবো’।
‘কিন্তু বাসায় আম্মু টেনশন করবে তো’।
‘করবে না। আম্মুকে আমি ফোন করে বলে দিয়েছি আমাদের ফিরতে দেরি হবে’।
‘ঠিক আছে চলো’।
“অতঃপর আমি আর আরাফ একটা রিক্সা নিয়ে সম্পূর্ণ রাতের শহর ঘুরে দেখলাম। পাশে ভালোবাসার মানুষ থাকলে সবকিছুই যেনো ভালো লাগে। ঘুরাঘুরি শেষ করে রাত ১১.৩০ মিনিটে আরাফ আমাকে বাসায় নামিয়ে দিয়ে গেলো। আমি আমার কাছে থাকা এক্সট্রা চাবি দিয়ে দরজা খুলে ভিতরে প্রবেশ করলাম। বসার ঘরে গিয়ে আম্মু সোফায় বসে ঝিমাচ্ছে। আমি গিয়ে আম্মুকে ডেকে আম্মুর রুমে ঘুমাতে পাঠিয়ে দিলাম। তারপর আমি রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিলাম। অনেক ঘুম পাচ্ছে। আরাফকে নিয়ে ভাবতে ভাবতে কখন যে ঘুমের দেশে তলিয়ে গেলাম বুঝতেই পারি নি”।
“ফজরের আযানের ধ্বনি কানে ভেসে আসায় ঘুম ছুটে গেলো। তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠে নামাজ আদায় করে নিলাম। তারপর একটু কুরআন তেলাওয়াত করলাম। কুরআন তেলাওয়াত করতে করতে ৭ টা বেজে গেছে তাই ফ্রেশ হয়ে কলেজের জন্য রেডি হয়ে নিলাম। আম্মু বললো আজকে থেকে নাকি সবাইকে দাওয়াত দেওয়া শুরু করবে। কার্ড বানানো হয়ে গেছে। আমাকে বললো, কলেজের সবাইকে দাওয়াত দিয়ে ফেলতে। আমিও সবগুলো কার্ড গুছিয়ে ব্যাগে ঢুকিয়ে নিলাম। এর মধ্যে আরাফের কল এলো”। আমি মুচকি হেসে কল ধরতেই ওপাশ থেকে ভেসে এলো…
‘তুমি রেডি? আমি কিন্তু বাসার নিচে দাঁড়িয়ে আছি। তাড়াতাড়ি এসো’।
‘আচ্ছা আসছি’
“আম্মুকে বলে বাসার থেকে বের হয়ে গেলাম। তারপর আমি আর আরাফ একসাথে কলেজে গেলাম। দাওয়াতের বিষয়টা আরাফকে বললাম। ও বললো যে,ওর ফ্যামিলিও সবাইকে দাওয়াত দেওয়া শুরু করে দিয়েছে। ক্লাস শেষ করে আমি আর আরাফ মিলে সবাইকে দাওয়াত দিয়ে দিলাম। সবাই আমাদের শুভেচ্ছা জানালো। যখনই সেই ছোট ছোট ড্রেস পড়া মেয়েটা মানে তৃণা আপুকে দাওয়াত দিতে যাবো তখনই আরাফের ফোন একটা কল এলো। আরাফ আমাকে বললো ‘তুমি যাও। আমি ২ মিনিটের মধ্যে আসছি’। আমিও ওর কথা মতো তৃণা আপুর কাছে গিয়ে হাসি মুখে কার্ড দিয়ে বললাম…
‘আসসালামু আলাইকুম আপু’।
‘ওয়া আলাইকুমুস সালাম। এটা কিসের কার্ড’?
‘এটা আমার বিয়ের কার্ড। আরাফ আর আমার বিয়ে ঠিক হয়েছে’।
‘তৃণা আপু কিছুক্ষণ তীক্ষ্ণ চোখে আমার দিকে তাকিয়ে থেকে বলে উঠলেন, কিহ! তোমার আর আরাফের বিয়ে মানে? আরাফ তো কোনো মেয়ের সাথেই তেমন কথা বলে না। আর যেখানে আরাফ আমার মতো একটা মর্ডান মেয়েকে রিজেক্ট করে দিলো সেখানে তোমার একটা থার্ড ক্লাস মেয়ের মধ্যে এমন কি দেখে ফেললো? ওহ্ হ্যা বুঝেছি, তোমাদের মতো থার্ড ক্লাস মেয়েরা তো পারে শুধু নিজেদের এই রূপের মোহে বড়লোক ছেলেদের ফাঁ’সা’তে। তুমিও তো তাই করেছো। বড়লোক পেয়ে আরাফের গলায় ঝুলে পড়েছো’।
‘তৃণাআআআআ’।
“হঠাৎ এমন বিকট চিৎকারে আমি আর তৃণা আপু দুজনেই কেঁপে উঠে সামনে তাকালাম। তাকিয়ে দেখি আরাফ র’ক্ত চক্ষু নিয়ে তৃণা আপুর দিকে তাকিয়ে আছে। আমি কখনো আরাফের এই রূপ দেখি নি। আমার কাছে আরাফকে অচেনা মনে হচ্ছে। ভয়ে আমার গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে। আরাফ হনহন করে এগিয়ে তৃণা’কে একটা চ’ড় মে’রে দিলো। তৃণা তাল সামলাতে না পেরে মাটিতে পরে গেলো”। আরাফ হাত ধরে টেনে তৃণা’কে উপরে তুলে বললো…
‘তোমার সাহস কি করে হয় আমার স্ত্রী’কে বাজে কথা বলার? ওর সাথে আমার বিয়ে হয়ে গেছে এখন শুধু অনুষ্ঠান হবে। ও থার্ড ক্লাস না, তুমি হচ্ছো সবচেয়ে বড় থার্ড ক্লাস। যে মানুষকে সম্মান দিতে জানে না সে যত বড়লোক’ই হোক মনের দিক থেকে সে সবসময় ছোট লোক। তোমার সাথে কথা বলতেও আমার রুচিতে বাঁধে। আর আমি ওর মোহে পড়ে নেই। আমি ওকে আমার নিজের জীবনের থেকেও বেশি ভালোবাসি। ফারদার যদি ওকে নিয়ে কোনো আজে-বাজে কথা শুনি আমার থেকে কিন্তু খারাপ কেউ হবে না মাইন্ড ইট’।
“এটুকু বলেই আরাফ আমাকে টেনে নিয়ে কলেজ থেকে বের হয়ে গেলো। আরাফ এখনো রাগে গজগজ করছে। আমি ভয়ে কিছু বলছি না। আরাফ আমাকে একটা নদীর পাড়ে নিয়ে আসলো। জায়গা’টা অনেক নিরিবিলি। মনটা একদম ফুরফুরে হয়ে যায়। মানুষ-জন নেই বললেই চললে, অল্প কয়েকজন আছে। হঠাৎ আরাফ আমাকে একটা গাছের সাথে চেপে ধরে আমার ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে দিলো। এমন একটা কাজের জন্য আমি মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না। আমার চোখ খিঁচে বন্ধ করে আছি। আরাফ নিজের সব রাগ আমার ঠোঁটের উপর ঝাড়ছে”।
#চলবে…