প্রণয় পর্ব-২৫+২৬

0
389

#প্রণয়
#পর্বঃ২৫
#তানিশা সুলতানা

সাদিয়া বেগম হাজারটা কল করে যাচ্ছে কিন্তু সূচক ফোন তুলছে না। এতে আরও চিন্তা হচ্ছে ওনার। সকাল সকাল মেয়েদের রুমে গিয়ে দেখে তানহা নেই। তারপর সূচকের রুমে গিয়ে দেখে সূচক নেই। এবার কি করবেন উনি?
সূচক কোথায় নিয়ে গেলো তানহাকে ভাবতে ভাবতে ওনার হাত পা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে।
ফজরের আজান দিয়েছে কিছুখন আগে। এখনো নামাজ পড়া হয় নি ওনার।
আজানের শব্দে ঘুম ভেঙেছে। মনটা খচখচ করছিলো বলে দেখতে গেছিলো কিন্তু পেলো না।

তানহা কালকে সূচকের সারকথা বলতে বলতে ঘুমিয়ে গেছিলো। এরকম একটা সময় মানুষ ঘুমতে পারে বলে সূচকের মনে হয় না। কিন্তু তার বউ তো ঘুমিয়ে ছিলো। কি আর করার তানহাকে সোজা করে শুয়িয়ে দিয়ে নিজে ইমনের রুমে চলে গেছিলো।

এই বাড়িটাও ইমনের বাবার। ইমনের দাদা বানিয়েছিলো। সে সেনাবাহিনিতে চাকরি করতো। এখানেই ওনার পোস্টিং ছিলো। ছেলে বউ নিয়ে যখন এখানে থাকতো তখন বাড়িতে গড়িয়েছিলো।খুব পুরোনো বাড়ি এটা।
ইমনের যখন দশ বছর বয়স তখন ওরা ঢাকায় যায়। দাদা মারা গেছে তিন বছর হলো।

আজানের শব্দে তানহার ঘুম ভেঙে গেছে। নামাজ পড়ে বিছানার এক কোনে বসে আছে। সূচক কোথায় গেছে ভাবছে?
ওকে একা রেখে চলে গেলো না কি? একটু একটু ভয় করছে তানহার।
এতবড় রুমে একা থাকা যায় নাকি? ফুল গুলো সব একই ভাবে আছে।

বিছানায় হাতরিয়ে ফোন খোঁজে তানহা। সূচকের ফোনটা দেখে।
হাতে নেয় একটু ফোন দেখে সময় পার করবে। সূচকের ফোন যখন এখানে তারমানে সূচক যায় নি।
অবশ্য সূচক কখনোই ওকে রেখে যাবে না।

ফোন অন করতেই দেখে বড়মার বারোটা কল। লাস্ট কল দুই মিনিট আগে।
চোখ দুটো বড়বড় হয়ে যায় তানহার। ভয়ে হাত পা কাঁপতে থাকে। তাহলে কি বড়মা জেনে গেলো?
এখন কি হবে?
ভীষণ কান্না পাচ্ছে তানহার। এতো টেনশন জীবনেও করে নি ও।

সাথে সাথে আবার কল বেজে ওঠে। তানহা চমকে ওঠে। হাত থেকে ফোনটা বিছানায় পড়ে যায়।
তারাহুরো করে বিছানা থেকে নেমে রুম থেকে বের হয়। দুটো রুম এই বাড়িতে। তার মানে অন্য রুমটাতেই সূচক থাকবে।
তানহা দৌড়ে ওই রুমে চলে যায়। দরজা খোলাই ছিলো আর লাইট জ্বালানো।

সূচক ইমনের ওপর হাত পা তুলে ঘুমচ্ছে।

“এই যে উঠুন না।

তানহা সূচকের চুল টেনে ডাকে। পিটপিট করে চোখ খুলে সূচক। বিরক্ত হয় ভীষণ। মানুষ সাধারণত হাত ধরে ডাকে। এই মেয়ে একদম উল্টো।

” ডাকছিস কেনো?

ধমক দিয়ে বলে সূচক।

“বড় মা কল দিচ্ছে।

তানহা ভয়ে ভয়ে বলে। সূচক এক লাফে উঠে বসে।

” ফোন কই?

“ওই রুমে রেখে আসছি।

” ইডিয়েট

সূচক উঠে হনহনিয়ে ওই রুমে চলে যায়। তানহাও পেছন পেছন যায়।
এখনো ফোনটা জ্বলছে। সাইলেন্স করা।

সূচক তারাহুরো করে ফোনটা রিসিভ করে।

“কই তুই বাবু? তানহা কোথায়?

কর্কশ গলায় বলেন উনি।

” আমার সাথেই আছে।

সূচক শান্ত গলায় বলে।

“সকলে জেগে যাওয়ার আগে চলে আয়। তাড়াতাড়ি।

বলেই কল কেটে যায়।
তানহা কাচুমাচু হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ভীষণ ভয় করছে ওর। সূচক কপালে হাত দিয়ে কিছুখন দাঁড়িয়ে থাকে।

” প্রতিবন্ধীর মতো দাঁড়িয়ে আছিস কেনো?

সূচক ধমক দিয়ে বলে। তানহা গাল ফুলিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে। একদম তাকাবে না সূচকের দিকে।

“চল যেতে হবে। শান্তিতে তো আর থাকতে পারবো না।

এলোমেলো চুল গুলোতো হাত বুলিয়ে ঠিক করার চেষ্টা করে বলে সূচক।

তানহা কিছু না বলে গটগট করে বেরিয়ে যায়।

🥀
সকাল সকাল এতো বড় চমক পাবে একদম ভাবে নি তোহা। ওর চোখের সামনে ইমন দাঁড়িয়ে আছে মুখে এক চিলতে হাসি নিয়ে।

তোহা হা করে কিছুখন তাকিয়ে থাকে
তারপর পাশে থাকা তানহার দিকে তাকায়।

” আমাদের সাথেই এসেছে। আমরা যতদিন থাকবো উনিও থাকবে।

তানহা তোহার কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলে। তোহা মাথা নিচু করে খাবার গিলতে শুরু করে।

তোহার সামনাসামনি চেয়ারে বসেছে ইমন আর সূচক। আজকে সূচকের পাশে বৃষ্টি বসেছে। বাকি সবার খাওয়া হয়ে গেছে অনেক আগেই।

🥀
সাদিয়া বেগম বাবা মায়ের পাশে বসে আছে। সাইদুল চৌধুরী মেয়ের হাতের ওপর হাত রাখে।

“তুই আমাদের একমাত্র মেয়ে। তোর ভাইয়েরা তোকে কতো ভালোবাসে। আমাদের গোটা বংশের একমাত্র মেয়ে তুই।
সবার ইচ্ছে তোর ছেলের সাথে আমাদের বৃষ্টির বিয়ে হোক। তোর পরে এই বংশের দ্বিতীয় মেয়ে বৃষ্টি।
তুই ভালোবেসে বিয়ে করেছিস। আমরা মেনে নিয়েছে।কেউ তোকে দুরে সরিয়ে দেয় নি।
তোর ছেলের সাথে বৃষ্টির বিয়ে হলে অনেক ভালো হবে। দুজনকে মানাই ও খুব। আমি আমার অর্ধেক সম্পত্তি লিখে দিয়ে যাবো তোর বাবুর নামে।

এখন তুই বল কি বলবি?

সাদিয়া বেগম মন দিয়ে বাবার কথা গুলো শুনলেন। উনিও মনে মনে চায় বৃষ্টির সাথে সূচকের বিয়ে হোক। ছেলের অনেক ইচ্ছে পূরণ করার সামর্থ্য তমালের ছিলো না। ফোন থেকে শুরু করে শার্ট প্যান্টও সাদিয়া বেগম বাবার বাড়ির টাকায়। সূচক নেবে না বলে তমালের হাত দিয়ে টাকা দেওয়ায় সাদিয়া বেগম। কিছু দিন আগে কেনা বাইকটার বৃষ্টির বাবা অর্ধেকের বেশি টাকা দিয়েছে বাকিটা সূচকের বাবার।

তমাল ভাবে মামার বাড়ি থেকে দিচ্ছে এতে ওনার না করার সাদ্ধ নেই। ছেলে জেদি প্রচন্ড নিতে চাইবে না। এতে অসম্মান করা হবে ওনাদের। তাই নিজে হাতে দেয়।

” বাবা এখনো বাবু তেমন কিছু করে না। পড়ালেখাও শেষ হলো না। আগেই বিয়ের কথা তুলবো কি করে?

আমতা আমতা করে বলে সাদিয়া বেগম।

“এখন ভাবতে বলছি না। রেজাল্ট দিক। তারপর বাবুকে বিদেশে পাঠিয়ে দে। সেখান থেকে ভালো ডিগ্রি নিয়ে ফিরুক। তারপর বিয়ের কথা বলা যাবে।
এখন তোকে বলে রাখলাম।

সাইদুল চৌধুরী মুচকি হেসে বলে।

” বাবা অনেক টাকা লাগবে। এতো টাকা ও পাবেই বা কোথায়? এখানেই মাস্টার্স পড়ুক।

“টাকা নিয়ে তোকে ভাবতে না। আমার নাতি টাকার জন্য পড়াশোনা করবে না? এটা হয় না কি?
টাকা আমি দেবো।

🥀
তানহার খুব ঘুরতে যেতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু নিয়ে যাবে কে? তাছাড়া ইমন আর তোহাকেও কথা বলার একটা উপায় বের করে দিতে হবে।

তানহা সূচকের রুমের দরজার সামনে ঘুরঘুর করছে আর ভাবছে।
ভেতরে যাবে কি যাবে না?
যাওয়াই উচিৎ। সূচক এখন তানহার একমাত্র বর। তার রুমে ঢুকতে আবার ভয় কিসের?
বুকে থু থু দিয়ে দরজা ঢেলে ভেতরে ঢোকে পড়ে তানহা। সূচক ঘুমিয়ে আছে। শার্টের বোতাম খোলা। ফর্সা বুকটা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। দুই ঠোঁট একটু ফাঁকা হয়ে গেছে সেটা বালিশের জন্য। বালিশটা ওনার পিঠের নিচে পড়ে গেছে।
বেলকনির দরজা খোলা সেখান দিয়ে রোদ এসে সূচকের পায়ের ওপর পরেছে।

তানহা বেলকনির দরজা বন্ধ করে দিয়ে পর্দা টেনে দেয়। তারপর মেইন দরজা বন্ধ করে গুটিগুটি পায়ে সূচকের কাছে চলে আসে।

বুকের ওপর হাত গুঁজে ঘুমচ্ছে সূচক। তানহা সূচকের পাশে বসে আস্তে করে বুকের ওপর থেকে হাত সরিয়ে দেয়। তারপর মাথাটা একটু উঁচু করে বালিশটা টেনে বের করে ঠিকভাবে মাথার নিচে দেয়। দুই আঙুলের সাহায্যে দুই ঠোঁট এক করে দেয়।

বাহহহ এখন একদম কিউ টের বস্তা বস্তা লাগছে।
মাথায় একটু হাত বুলিয়ে সূচকের বুকের ওপর মাথা রাখে তানহা।

সূচক একটু নরেচরে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। তানহা প্রথমে ভরকে যায়। কিন্তু পরে যখন দেখে এটা ঘুমের ঘোরে করেছে তখন মুচকি হাসে।

খুব ভালো লাগছে এভাবে থাকতে। সূচকের বুকের থুপবুক আওয়াজ গুলো গুনতে পারছে তানহা। নিশ্বাসটা চুলের ভাজে পড়ছে। শরীর জারিয়ে যাচ্ছে।

নাক ঘসে দেয় সূচকের বুকে।

🥀
তোহা রুমের মধ্যে পায়চারি করছে। ছটফট করে মরে যাচ্ছে ইমনের সাথে কথা বলার জন্য। ইমন কি ওকে সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্যই কল কেটে দিয়েছিলো?
এমনটাই হবে। নাহলে এখানে কেনো আসবে?

ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে ওঠে তোহার।
হঠাৎ কেউ রুমে ঢুকে ঠাস করে দরজা বন্ধ করে দেয়। চমকে ওঠে তোহা। সাথে ভয়ও পায়।

চলবে

#প্রণয়
#পর্বঃ২৬
#তানিশা সুলতানা

“আপনি এখানে কেন এসেছেন? কেউ দেখে ফেলবে ইমন।

ইমনকে দরজার সাথে ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে তোহা চোখ দুটো বড়বড় করে বলে।

” দেখলে দেখবে।
তার ভয়ে কি তোমার সাথে কথা বলতে আসবো না?

ইমন তোহার দিকে এগোতে এগোতে বলে। তোহা ভয়ে ভয়ে খাটের এক কোণায় বসে পড়ে। হাত পা কাঁপছে। মনে হচ্ছে এই বুঝি কেউ দরজা ধাক্কা দেবে।

ইমনও তোহার পাশে বসে পড়ে। তোহার একদম পাশ ঘেসে। তোহার অস্বস্তি হয়। এভাবে লেপ্টে থাকা পছন্দ না তোহার।

“সরে বসুন

শক্ত গলায় বলে তোহা।
ইমন তোহার হাতটা মুঠো করে ধরে তোহার ঘাড়ের কাছে মুছ নিয়ে চুলের স্মেল নেয়। তোহা চোখ মুখ খিঁচে বসে।

” তুমি জানো না? গার্লফ্রেন্ড বয়ফ্রেন্ড হলে এভাবে চেপেই বসতে হয়।

তোহার নাক টেনে দিয়ে বলে ইমন।
তোহা চোখ খুলে কপাল কুচকে তাকায় ইমনের দিকে।

“তোমার ভাই আর তানহা তো কাল রাতটা এক সাথেই কাটালো। তানহা তো তোমার মতো এরকম করে না।

এক হাতে তোহাকে জড়িয়ে ধরে বলে ইমন। তোহা ঝাড়া দিয়ে ছাড়িয়ে নেয় ইমনকে। কয়েক হাত পিছিয়ে যায় ইমনের থেকে।

” আমার এসব ভালো লাগে না।

হাত মুষ্টিবদ্ধ বদ্ধ করে দাঁতে দাঁত চেপে বলে তোহা।

“ডিসগ্রাসটিং যে তুমি। ভালো লাগবে কি করে?
কোন দুঃখে যে তোমাকে ভালো লাগতে গেছিলো আমার।

বিরক্তির নিশ্বাস ফেলে অফসোসের সুরে বলে ইমন।
তোহা কিছু না বলে অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে দাঁড়ায়। অসয্য লাগছে। এতোদিন পরে দেখা হয়েছে কেমন আছো? জিজ্ঞেস করবে। ভালোমন্দ খোঁজ খবর নেবে। এটাই চেয়েছিলো তোহা।
কিন্তু হলো উল্টো।

” লিসেন তোহা
আগলে রাখতে শেখো। নাহলে হারাতে হবে যে।

ইমন পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে বলে। এবার বিরক্তির শেষ সীমানায় চলে যায় ইমন। তোহা এক ধাক্কা দেয় ইমনকে। এই ধাক্কার জন্য একদম প্রস্তুত ছিলো না ইমন। তাই দু পা পিছিয়ে যায়।

“এটাকে রিলেশন বলে না ইমন। এটাকে চাহিদা বলে। আমার সাথে রিলেশন করতে হলে আমার হাতটাও টাচ করা যাবে না পারমিশন ছাড়া।
থাকলে থাকবেন না থাকলে যেতে পারেন।

তোহা সোজাসাপ্টা বলে দেয়। ইমন চোয়াল শক্ত করে তাকায় তোহার দিকে।

“গু*ষ্টি কি*লাই রিলেশনের।
হনহনিয়ে বেরিয়ে যায় ইমন। তোহা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে। নদীর পারে ঘরে বাঁধার স্বপ্ন দেখেছিলো ও। যা কখনোই সম্ভব না। জোর করেও সম্ভব করানো যাবে না।

” একটা ছেলের জন্য জীবনটা কেমন ছারখার হয়ে গেলো।

বালিশের মুখ গুঁজে ফুঁপিয়ে ওঠে তোহা। এই অসম্ভব যন্ত্রণার শেষ কোথায়? কোথায় গেলে ভুলে যাওয়া যাবে এই মানুষটাকে? কি করে কখনো মনে পড়বে না তাকে?
একটু শান্তি কোথায় পাওয়া যাবে?
শান্তির যে বড্ড অভাব।

🥀🥀
সূচকের ঘুম ভেঙে গেলে বুকের ওপর ভারি কিছু অনুভব করে। দুই হাতে জড়িয়ে রেখেছে ওকে। বুকের ওপর শ্বাস পড়ছে তার।
সূচক মুচকি হাসে। এই নিঃশ্বাসের শব্দ যে ওর খুব পরিচিত।
এই চুলের গ্রাণটা যে ওর হৃদপিণ্ডে গেঁথে আছে।
হাজার হাজার মানুষের মধ্যে থেকেও চোখ বন্ধ করে খুঁজে বের করতে পারবে এই পিচ্চিটাকে।

সূচক তানহার মাথায় সময় নিয়ে চুমু খায়।

দরজায় খটখট আওয়াজ শুনে সূচক বিরক্ত হয়। এই সময়ই আসতে হবে?

তানহার আস্তে করে শুয়িয়ে দিতে যায় বালিশে কিন্তু তার আগেই তানহা জেগে যায়। ঘুমঘুম চোখে পিটপিট করে তাকায় সূচকের দিকে। সূচককে এতে কাছে দেখে এক লাফে বসে পড়ে তানহা। ঘুম ছুটে পালিয়েছে।

“সরি সরি সরি
আআআআমি আসলে মশা মারতে এসেছিলাম।

তানহা মুখের ওপর পড়ে থাকা চুল গুলো কানের পেছনে গুঁজে রিনরিনিয়ে বলে।
সূচক তানহার কথায় পাত্তা দেয় না। হাই তুলে বিছানা থেকে নামে।

” কেউ এসেছে। তুই ওয়াশরুমে যা আমি দেখছি।

তানহা গোল গোল চোখ করে তাকায় সূচকের দিকে।

“যেতে বলছি।দ্রুত যা

ধমক দিয়ে বলে সূচক।
তানহা এক দৌড়ে ওয়াশরুমে ঢুকে যায়।
সূচক চোখ ডলতে ডলতে দরজা খুলে। দরজার বাইরে সাদিয়া বেগম আর বৃষ্টি দাঁড়িয়ে আছে। বৃষ্টি শাড়ি পড়ে সেজেগুজে এসেছে।

সূচক এক পলক তাকিয়ে চোখ ফিরিয়ে নেয়। কি কালার শাড়ি পড়েছে সেটাও ওর চোখে পড়ে না।

” মা ডাকছো কেনো?

সূচক চোখ মুখ কুঁচকে বলে।

“বৃষ্টিকে নিয়ে ঘুরে আয়।

” ঠিক আছে তানহা তোহাকে রেডি হতে বলো। আমি ফ্রেশ হয়ো আসছি।

“শুধু বৃষ্টিকে নিয়ে যাবি। ওদের নিতে হবে না।

কড়া গলায় বলে সাদিয়া বেগম।

” সরি মা তাহলে যাচ্ছি না।

হতাশার নিঃশ্বাস ফেলেন সাদিয়া বেগম। বৃষ্টি বিরক্ত হয়।

“ফুপি ওরাও যাক।

দাঁতে দাঁত চেপে বলে বৃষ্টি।

” তাহলে তোমরা যাও এখন। আমি রেডি হয়ে আসছি।

সূচক মুখের ওপর ঠাস করে দরজা বন্ধ করে দেয়।
বৃষ্টি হাত মুষ্টিবদ্ধ করে ফেলে। বৃষ্টিকে ইগনোর করলো?

সাদিয়া বেগমও ছেলের কান্ডের হতাশ হয়।

“উঁকি ঝুঁকি মারতে হবে না। বেরিয়ে আয়।

সূচক আলমারি থেকে শার্ট প্যান্ট বের করতে করতে বলে। তানহা গুটিগুটি পায়ে বেরিয়ে আসে। ভীষণ কান্না পাচ্ছে ওর। খুব ভালো করেই বুঝতে পারছে বড়মা বৃষ্টিকেই পছন্দ করছে সূচকের জন্য। সব সময় ওদের এক সাথে রাখতে চাইছে। বড়মা এই বাড়ি আসার পর থেকে তানহার সাথে তেমন কথাও বলছে না।
বড়মা তো এমন ছিলো না। তাহলে কি হলো?

ঠোঁট কামড়ে কান্না আটকানোর চেষ্টা করে তানহা। কিন্তু পারে না। টপটপ করে পানি গড়িয়ে পড়ে। মাথাটা নিচু করে ফেলে।

সূচক আলমারি বন্ধ করে পেছন ফিরে দেখে তানহা কান্না করছে। বুকের ভেতরটা ধক করে ওঠে ওর। খাটের ওপর জামাকাপড় নামিয়ে তানহার সামনে গিয়ে দাঁড়ায়।

” কি হয়েছে কাঁদছিস কেনো?

তানহার থুতনিতে হাত দিয়ে মাথাটা একটু উঁচু করিয়ে আদুরী গলায় বলে সূচক।
সূচকের আদর পেয়ে তানহা শব্দ করে কেঁদে ওঠে। শক্ত করে জড়িয়ে ধরে সূচককে।

“আমি আপনাকে খুব ভালোবাসি। আপনাকে ছাড়া বাঁচতে পারবো না আমি। আমাকে ছেড়ে দিয়েন না প্লিজ। মরেই যাবো আমি।

ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে বলে তানহা। সূচক ফোঁস করে শ্বাস টেনে তানহার মাথায় হাত রাখে।

” সব ঠিক হয়ে যাবে তানহা। আমি আছি তো।

“আমি বুঝতে পারছি বড়মা তোমার আশেপাশে আমাকে সয্য করতে পারছে না।

সূচকের গলা জড়িয়ে মুখের দিকে তাকিয়ে বলে তানহা। দুচোখ ভর্তি পানি। সূচক দুই গালে হাত দিয়ে বুড়োআঙুল দিয়ে চোখের পানি মুছিয়ে দেয়।

” আজ সয্য করতে হয়ত পারছে না। একদিন মা ই তোকে আমার পাশে পাশে থাকতে বলবে দেখে নিস।

তানহার নাক টেনে দিয়ে একটু হাসার চেষ্টা করে বলে সূচক।

“এরকম দিন আসবে?

তানহার কান্না থেমে যায়। ভাবুক ভঙ্গিতে প্রশ্ন করে।

” হুমম আসবে। আমি কথা দিলাম।
এবার যা রেডি হয়ে নে। আবারও কেউ চলে আসবে আমাদের এক সাথে দেখলে সমস্যা হবে।

তানহা সূচকের মুখের দিকে এক পলক তাকিয়ে ছেড়ে দেয় সূচকের গলা।
তারপর মাথা নিচু করে বেরিয়ে যায়।

🥀
নীল রংয়ের একটা গাউন পড়েছে তানহা। একটুও সাজুগুজু করে নি। চুল গুলো বিনুনি গেঁথে নিয়েছে। ঠোঁটে একটু লিপজেল দিতেও ভয় করে। যদি আবার সূচক কিছু বলে।
ফোন নেওয়ার প্রয়োজন মনে করলো না। ফোন দিয়ে কি করবে? সূচক তো সাথেই থাকবে।

তোহাও গাউন পড়েছে। সাথে হিজাব বেঁধেছে। একটু আগেই সাদিয়া বেগম চিপ চিপে করে তেল দিয়ে দিয়েছে ওর মাথায়।
যেতেই চাই ছিলো না কিন্তু ও না গেলে তানহাও যাবে মা তাই যাচ্ছে।
বৃষ্টি একদম ঝাকানাকা সেজেছে। পাতলা সিল্কের কালো শাড়ি, ছোট হাতার ব্লাউজ সাথে ভারি মেকাব। ভালোই লাগছে মেয়েটাকে। ফর্সা গায়ে কালো শাড়িটা দারুণ মানিয়েছে।

সূচকের রেডি হতে বেশি সময় লাগে। রাস্তার পাশে সূচকের জন্য অপেক্ষা করছিলো ওরা তিনজন।
তানহা তো ভেবেই ফেলেছিলো ঘাসের ওপর বসবে। কারণে দাঁড়িয়ে থাকতে খারাপ লাগছে।
বসতে যাবো তখনই সূচকের দেখা মেলে। ইমন আর সূচক এক সাথে আসছে।

সূচকও নিল শার্ট পড়েছে। এটা দেখে তানহার মুখে হাসি ফুটে ওঠে। ইমনকে দেখে তোহার যাওয়ার ইচ্ছেটা একেবারে মরে যায়। কিন্তু কিচ্ছু করার নাই।

বৃষ্টি ওদের গাড়ি নিয়ে যাওয়ার কথা বলে। সূচক না করে দেয়। সে রিকশায় যাবে।

“পাঁচজন কি করে রিকশায় যাবে তুমি?

বৃষ্টি কোমরে হাত দিয়ে নাক ফুলিয়ে জিজ্ঞেস করে।

” সেটা তোকে ভাবতে হবে না।

সূচক ধমক দিয়ে বলে। রাগ হয় বৃষ্টির। এই ছেলেটা এমন কেনো?

তানহা চোখ দিয়ে গিলে খাচ্ছে সূচককে। এতো কিউট কেনো লাগছে ছেলেটাকে?
ইচ্ছে করছে টুপ করে গিলে ফেলতে।
ইমন আড়চোখে একপলক তাকায় তোহার দিকে। তোহা মাথাটা নিচু করে রেখেছে। এই ছেলেটার দিকে তাকাতে ইচ্ছে করে না।

কয়েক মিনিটের মধ্যে বিহান তিনটে রিকশা নিয়ে হাজির হয়।এক টাতে ও বসে আছে।
সূচক বৃষ্টিকে চোখের ইশারায় রিকশা দেখায়।

“আমি কিন্তু তোমার সাথে বসবো বলে দিলাম।

বৃষ্টি বলে।

” কিন্তু আমি তানহার সাথে বসবো।

বলেই সূচক একটা রিকশায় উঠে বসে।

“ইমন আর তোহা একটায় আয়। আর বৃষ্টি তুই বিহানের সাথে আয়।

বলেই তানহার দিকে হাত বাড়িয়ে দেয় সূচক।

রাগে থরথর করে কাঁপছে বৃষ্টি। তানহার মুচকি হেসে সূচকের হাতটা ধরে রিকশায় বসে পড়ে।

চলবে