ভালোবাসাময় প্রহর পর্ব-১২

0
384

#গল্পের_নাম_ভালোবাসাময়_প্রহর
#লেখনীতে_Alisha_Rahman_Fiza
পর্ব:১২

তন্নি অধরাকে ফ্রেশ হতে সাহায্য করলো কাজ শেষে তন্নি অধরাকে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে বললো,

~আপু,আমি বাসায় চলে যাচ্ছি কালকে মা-বাবার সাথে আসবো।

তন্নির কথায় অধরার মনটা খা/রা/প হয়ে গেলো সে মুখটা মলিন করে বললো,

~আজকের রাতটা তুই থেকে যা আমার তাহলে একা একা লাগবেনা।

তন্নি হেসে বললো,

~একা একা লাগবে কেন সবাই আছে তোমার আর আমাবস্যার রাতও তো আছে তাই না।

অধরা বললো,

~প্লিজ থেকে যা।

তন্নি কিছু বলবে তার আগেই রক্তিমের মা হাতে প্লেট নিয়ে প্রবেশ করলো আর তন্নিকে উদ্দেশ্য করে বললেন,

~আজ রাত তুমি এখানেই থাকবে তোমার মায়ের সাথে আমি কথা বলে নিয়েছি।

তন্নি বললো,

~ঠিক আছে আন্টি।

রক্তিমের মা বললেন,

~তন্নি,তুমি নিচে চলে যাও সবার সাথে বসে নাস্তা করো আমি অধরাকে খাইয়ে দিচ্ছি।

তন্নি আচ্ছা বলে নিচে চলে গেলো রক্তিমের মা অধরাকে খাইয়ে দিতে লাগলো অধরা সেসময় বললো,

~আমার জন্য আপনাদের সবার কষ্ট হয়ে যাচ্ছে আপনি সব কাজ একাই করছেন আর এখানে আমি বিছানায় শুয়ে আছি।

অধরার কথা শুনে রক্তিমের মা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললেন,

~দেখো অধরা পুরো জীবন তুমি এ সংসারের হাল টানবে কারণ এই সংসারটা তোমার আমি এই সংসারে অতিথি মাত্র জীবনের অনেকগুলো বসন্ত পার করে ফেলেছি হয়তো আর কিছু কালের জন্যই তোমাদের সাথে আছি।তখন তোমাকেই সব দেখতে হবে তাই এখন নিজের জীবনটাকে উপভোগ করো জানো অধরা আমি যখন বিয়ে করে এ বাসায় আসি আমার শাশুড়ি পুরো সংসারের ভার আমাকে দিয়ে দেয় কোনোদিন তোমার শশুড়ের সাথে কোথাও ঘুরতেও যেতে পারিনি।এখন অনেক অফুরন্ত সময় কিন্তু যেতে মন চায় না ছেলেদের ছেড়ে তাই আমি চাই তুমি নতুন জীবনটা একটু উপভোগ করো এরপরে তো সবকিছু তোমারই।

অধরা শাশুড়ির কথা শুনে তাকে জড়িয়ে ধরে বললো,

~মা,আপনি খুব ভালো ভাবে এ সংসারটাকে আগলে রেখেছেন আমিও যাতে এভাবেই আগলে রাখতে পারি। আমার দ্বারা যাতে আপনাদের মনে কোনো কষ্ট না পান তার জন্য দোয়া করবেন।

রক্তিমের মা অধরার মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন,

~ইনশাল্লাহ মা তাই হবে।

দিবার মা দিবার সামনে সেই কখন থেকে বসে আছে আর বকবক করছে। দিবা বিরক্ত হয়ে বললো,

~মা,অনেক হয়েছে আর কিছু করার প্রয়োজন নেই আমি বুঝে গেছি রক্তিম আমার না আমি এখন একা থাকতে চাই।

দিবার মা বললেন,

~এসব কী বলছিস?তোর শরীর ঠিক আছে তো?

দিবা কার্বাড থেকে নিজ কাপড় বের করতে করতে বললো,

~দেখো মা আমি আর এসবে নেই মাথা আর নষ্ট করে লাভ নেই আর বাবার ম্যাটার টাও তুমি সামলিয়ে নিয়েছো এখন এসব করে লাভ নেই।

দিবার মা মেয়ের কথায় অবাক না হয়ে পারলেন না সে বললেন,

~আসলেই তুই পা/গ/ল হয়ে গেছিস।

দিবা বললো,

~দেখো মা অধরা আর রক্তিম কোনো দিন আলাদা হবে না তাদের জন্য কেন আমি নিজ জীবন নষ্ট করবো। আর রোদ্দুর আমার সাথে সব ঠিকঠাক করতে চায় সব চেয়ে বড় কথা সে আমাকে বিয়ে করতে চায় আমরা বিয়ের পর আমেরিকা শিফ্ট হয়ে যাবো সব ঝামেলা থেকে মুক্ত।

দিবার মা বললেন,

~তুই বিয়ের সিদ্ধান্তও নিয়ে ফেলেছিস।

দিবা বললো,

~হ্যাঁ মা আর আগামী কাল রোদ্দুর আসবে তোমাদের সাথে কথা বলতে।

দিবার মা রেগে গিয়ে বললেন,

~তাহলে আমাকে এতো সব কেন করতে বললি?

দিবা বললো,

~আমি করতে বলেছি?তুমি নিজ থেকে এসব করেছো তোমার লাভের জন্যই করেছো তোমার তো মামার অফিসে লোভ ছিল। অধরাকে মে/রে রক্তিমকে শোকে ফেলে সব কিছু হাতিয়ে নিতে চেয়েছিলে তুমি কী মনে করো জানি না আমি।

দিবার মা দিবা ঠা/স করে এক চ/ড় মে/রে বললেন,

~এতো কথা তোর মুখে শোভা পায় না।

দিবা গালে হাত রেখে বললো,

~এই পা/পে/র শাস্তি তুমিও পাবে আর আমিও পাবো।

বলেই সে বাসা থেকে বের হয়ে গেলো দিবার মা সোফার ওপর বসে রা/গে ফুসতে লাগলো।দিবা আজ যা বলেছে সত্য বলেছে সে তো অধরাকে মে/রে ফেলতে চেয়েছিলো অধরার শো/কে যখন রক্তিম পা/গ/ল হয়ে যেতো তখন সব কিছু নিজের করে নিতো সে।কিন্তু হলো পুরো উল্টো অধরা বেঁচে গেলো তাই সে নিজ প্লান উল্টিয়ে ভু/য়া রিপোর্ট বানালো যাতে দিবার বিয়ে রক্তিমের সাথে হয়ে যায় কিন্তু হলো না কিছুই মাঝখান দিয়ে দিবাও হাত থেকে চলে গেলো।

রক্তিম নাস্তা খেয়ে রুমে এসে দেখে অধরা ঘুমিয়ো পরেছে হয়তো মেডিসিনের কারণে।রক্তিম দরজাটা লক করে অধরার মাথার কাছে বসে তার চুলে হাত বুলাতে লাগলো সে অধরার কপালে ঠোঁট ছুইয়ে দিলো। অধরা কপালে উষ্ণ ছোয়া পেয়ে পিটপিট করে চোখ খুলে দেখলো রক্তিমকে। অধরা হকচকিয়ে উঠতে যাবে তখনই সে হাতে ব্যাথা অনুভব করলো আর সাথে সাথে মুখ দিয়ে আহহ শব্দ বের হয়ে আসলো।রক্তিম অধরার এ অবস্থা দেখে ঘাবড়ে গেলো আর অস্থির হয়ে বললো,

~কী হয়েছে তোমার কোথায় ব্যাথা লেগেছে?

অধরা রক্তিমকে এমন করতে দেখে বললো,

~হাতে একটু ব্যাথা করছে তাই আর কি।

রক্তিম কোনো কথা না বলে ডাক্তারকে ফোন করে এ সমস্যার কথা জানালো।ডাক্তার রক্তিমে একটি মেডিসিনের নাম বলে দিলো রক্তিম সেই মেডিসিনটি অনলাইনে অর্ডার করে দিলো।এরপর অধরার কাছে বসে বললো,

~ডাক্তার বলেছে এই মেডিসিনটা নিলে ব্যাথা কমে যাবে তুমি এখন ঘুমানোর চেষ্টা করো।

অধরা মুচকি হেসে চোখ বন্ধ করে নিলো রক্তিম তার পাশে বসে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো।রাত তন্নির রুমে এসেছে আড্ডা দেওয়ার জন্য এখানে এসে সে দেখলো সাদিয়া বিছানায় শুয়ে আছে তন্নি আশেপাশে কোথাও নেই তাই সে সাদিয়াকে জিজ্ঞেস করলো,

~আপু,তন্নি কোথায়?

সাদিয়া বললো,

~ওই তো বারান্দায় ওর ফ্রেন্ড হয়তো ফোন দিয়েছে ওর সাথেই কথা বলছে।

রাত বারান্দায় গিয়ে দেখলো তন্নি বাহিরের দিকে মুখ করে তাকিয়ে আছে আর ফোনে কথা বলছে। রাত একটু কাছে যেতেই শুনতে পেলো তন্নির কথা তন্নি বলছে,

~আমি তো চাই আপনার সাথে প্রতিদিন দেখা করতে কিন্তু কী করি বলুন বাসায় এতো কিছু চলছে যে।

অপরপাশের কথা রাত শুনতে পেলো না তন্নি কথা বলছে আর হাসছে।রাত আর সেখানে দাড়ালো না বারান্দা থেকে বের হয়ে সোজা রুমের বাহিরে চলে গেলো আর মনে মনে বললো,

~তন্নি কিছু তো একটা করছে আমার ওর জন্য ভ/য় হচ্ছে সব কিছু জানতে হবে আমার।

অধরা ঘুমিয়ে পরতেই রক্তিম নিজ ফাইল নিয়ে বসে পরলো তার মাথায় এখন নানান চিন্তা ঘুরছে তখনই ঘরের দরজায় টোকা পরলো।রক্তিম দরজা খুলতেই দেখতে পেলো রাতকে রাত বললো,

~ভাইয়া একটু কথা ছিলো।

রক্তিম বললো,

~ছাদে যা আসছি।

রাত আর রক্তিম ছাদে দাড়িয়ে আছে রাত তাকে সব বললো তন্নির ব্যাপারে।রক্তিম সব শুনে বললো,

~রাত তুই তন্নির ওপর নজর রাখ এই বয়সে মানুষ অনেক ভু/ল করে আমি তন্নিকে সেফে রাখতে চাই।

রাত বললো,

~জ্বী ভাইয়া।

রক্তিম আরো কিছু বলতে নিবে তখনই তার ফোন বেজে উঠলো পকেট থেকে ফোন বের করে দেখলো থা/না থেকে ফোন করেছে সে ফোন রিসিভ করতেই অপরপাশ থেকে বললো,

~আমরা ট্রাক ড্রাইভারকে পেয়ে গেছি আপনি অতি দ্রুত চলে আসুন।

রক্তিম এ খবর শুনে বাকা হেসে ওকে বলে ফোন রেখে দিলো রাত জিজ্ঞেস করলো,

~কী হয়েছে ভাইয়া?

রক্তিম রাতের দিকে তাকিয়ে বললো,

~জালে ছোট মাছ ফে/সে/ছে এখন বড় মাছের পালা।

চলবে