#প্রিয়মুখ
#ফারিহা_জান্নাত
#পর্ব০৩
বাড়ির সবাই এসেছে গাড়ির সামনে ওদেরকে রিসিভ করতে।ঝুমুরের দুই চাচা হাসান আর মারুফ এগিয়ে আসলো গাড়ির সামনে।
…..হাসান,মারুফ কেমন আছো তোমরা?
হাসিবের বাবা হাসিবের সাথে দুই চাচার পরিচয় করিয়ে দিয়ে বলে…
….হাসিব তোমার মনে আছে তোমার এই দুই আংকেলের কথা কত আদর করতো তোমাকে?
….না বাবা আমার তো শুধু বড় আংকেলের কথা মনে আছে।
হাসিবের কথা শুনে মুখের হাসি বন্ধ হয়ে গেলো সবার।
হাসিবের বাবা কানের কাছে এসে ফিসফিস করে বলে..
…..হাসিব কি হচ্ছে এসব?ওরা কি ভাববে বলতো।
….বাবা প্লিজ।( কথাটা বলেই হাসিব ভিতরে চলে গেলো)
হাসিবের বাবা কোনো রকম বিষয়টা সামলে নিয়ে ব্যবসার কথা বলতে বলতে ভিতরের রুমে আসলো।সবাইকে ড্রইং রুমে বসতে বললো ঝুমকার বাবা। সামনে রাখা আছে এক গাদা খাবার দিয়ে টেবিল সাজানো।
ঈশিকা বার বার বাহিরের সিঁড়ির দিকে তাকাচ্ছে। হাসিবের মা বিষয়টা খেয়াল করলো….
…..কি হয়েছে ঈশিকা বাহিরে কি দেখো?
…মা দেখো কি সুন্দর আলপনা এঁকেছে। আমি কখনো এত সুন্দর আলপনা দেখিনি।
…..হুমমম সেটাই তো দেখছি ভীষণ সুন্দর হয়েছে যে এঁকেছে সেই অনেক লক্ষী একটা মেয়ে।
এমন সময় ছোট চাচী আর বড় চাচী সবার জন্য শরবত নিয়ে আসলো।বড় চাচী মেয়ের সুনাম পাওয়ার জন্য তড়িঘড়ি করে বলে উঠলো…
….আলপনা তো আমার মেয়ে ঝুমকা এঁকেছে।
….তাহলে আমি ঝুমকা আপুর কাছ থেকে আলপনা আঁকা শিখবো।
সাজেদা অনেক কষ্টে হাসি চেপে রেখেছে।
হাসিবের মা ঝুমকার মায়ের দিকে তাকিয়ে বলে উঠে…
….আরে ভাবী যে কেমন আছেন?সাজেদা কেমন আছো?
….এই তো ভাবী ভালো আছি।
হাসিব শুধু বার বার দরজার সামনের দিকে তাকাচ্ছে মনে হচ্ছে কাউকে খুঁজছে।
….ভাইয়া কাকে খুঁজছো?আর তোমার মুখে হাসি নেই কেন?
ঈশিকার কথায় চমকে উঠে হাসিব।
…..কাউকে না।হাসি নেই কারণ হাসার মতো কিছু ঘটছে না তাই।(বিরুক্ত ভাব নিয়ে কথাগুলো এক নিঃশ্বাসে বলে গেলো)
হাসিবের মা বললো…
….সাজেদা বড় ভাবী আর ঝুমুর কোথায় দেখছি না যে।
….আরে ভাবী ঝুমুরকে দেখার কি দরকার ঝুমকাকে দেখতে আসছেন ঝুমকাকে দেখেন। আমি ঝুমকাকে নিয়ে আসছি।
কথাটা তড়িঘড়ি করে বলেই ঝুমকাকে নিয়ে আসার বাহানা দিয়ে রুম থেকে বের হয়ে গেলো।
হাসিবের মা বিষয়টা বুঝতে পারলো কিন্তু কিছু তো করার নেই।হাসিবের দিকে তাকাতেই হাসিব ইশারা করলো হাসিবের কাছে আসার জন্য।
……কিরে কিছু বলবি?
….মা কাজটা কিন্তু মোটেই ঠিক হচ্ছে না। আমি ঝুমকাকে না ঝুমুরকে ভালোবাসি সব জেনেও তোমরা এসব কেন করছো?
….আমাকে না বলে তোর বাবাকে গিয়ে বল।
….বাবাকে তো বলবই কিন্তু মা আজ আংটি বদল হচ্ছে তোমাদের সম্মানের দিকে তাকিয়ে আমি এখনও কিছু বলছি না কিন্তু পরে যদি আংটির মতো মেয়ে বদল না হয় আমি কাউকে ছেড়ে কথা বলবো না।
একটুপর ঝুমকাকে নিয়ে আসলো ছোট চাচী।ঝুমকাকে হাসিবের পাশে বসিয়ে দিয়ে ছোট চাচী এক মুহূর্ত না দাঁড়িয়ে থেকে চলে আসলো অনুষ্ঠান ছেড়ে।
ওদিকে ঝুমুর শুয়ে শুয়ে শুধু কেঁদেই চলছে। একটুপর ঝুমুরের মা রুমে আসলো …
….ঝুমুর দরজা খোল।
ঝুমুর চোখ মুছে আস্তে আস্তে উঠে দরজা খুলে দিলো।
….কি রে মা তোর এই অবস্থা করে রেখেছিস কেন?কান্না করতে করতে তো বালিশ ভিজিয়ে ফেললি।চোখের কি অবস্থা করলি।
ঝুমুর মাকে জড়িয়ে ধরে জোরে কান্না করে দিলো।যেন অনেক দিনের জমানো কষ্ট আজ ঝেড়ে ফেলতে চাচ্ছে।
….ঝুমুর আমি তোকে ভালো জীবন দিতে পারিনি আমাকে তুই ক্ষমা করে দিস মা।আমি পারি নি তোকে আগলে রাখতে আমি যে এক ব্যর্থ মা।
কথাগুলো বলে নিজেও কান্না করে দিলো।
ঝুমুরের ছোট চাচী ঝুমুরের রুমে এসে দেখে মা মেয়ে দুজনে কান্না করছে।
…..মা মেয়ে কান্নায় করতে পারবে সারাজীবন।
….ছোট চাচী তুমি অনুষ্ঠান ছেড়ে চলে আসলে কেন?(চোখের পানি মুছতে মুছতে)
…নাটক দেখতে ইচ্ছে করছে না তাই। (রাগ হয়ে বলে)
….সাজেেদা থাক এসব কথা নিয়ে আর যেন বাড়াবাড়ি না হয়। আমি যেন এসব নিয়ে আর কোনো কথা না শুনি।
…..কি বলছো ভাবী?তোমার মেয়ের ছোট বেলার ঠিক করা হবু বরের সাথে ওদের মেয়ের বিয়ে হচ্ছে আর তুমি চুপ করে থাকবে।
…..হ্যাঁ সাজেদা ঝুমুরের চাচাদের দোষ দিয়ে কি হবে, ঝগড়া করে কি হবে? ওরা সবাই জানে হাসিব নিজেও জানে ওরা যখন ঝুমকাকে বিয়ে করাতে চাচ্ছে তখন আমাদের তো আপত্তি থাকার কথা না।
…..হুমম চাচী মা ঠিক কথায় বলেছে শুধু শুধু এসব নিয়ে অশান্তি না করাই ভালো হবে।
….তোরা মা মেয়ে যেটা ভালো বুঝিছ কর।(মন খারাপ করে চলে গেলো)
….মা মাথা ধরে আছে এক কাপ লেবুর চা করে এনে দাও না।
ঝুমুরের মা ঝুমুরের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে চলে গেলো চা করতে।
নিচে হঠাৎ সোরগোল বেড়ে গেলো হাত তালির শব্দ আর অনেক হাসাহাসির শব্দ শুনা যাচ্ছে।
ঝুমুর বুঝতে পারলো আংটি বদল হয়ে গেছে। নিজেকে যথেষ্ট শান্ত রাখার চেষ্টা করলো।নিজে নিজে বলতে লাগলো….
….আর ভাববো না তোমাকে নিয়ে হাসিব।তুমি সুখে থেকো আমার বোনকে নিয়ে। আমি আমাকে নিয়ে ভাববো এখন থেকে।
কিছুক্ষণ পর ছোট চাচী চা নিয়ে এসে ঝুমুরের হাতে দিলো।
…..একি চাচী তুমি চা আনলে যে।মা কোথায়?
….আমি উপরে আসছি দেখে ভাবী চায়ের কাপটা আমাকে দিয়ে রান্না ঘরের দিকে গেলো।
চা খেতে খেতে চাচীকে জিজ্ঞেস করলো…
….চাচী ঝুমকার আংটি বদল কি হয়ে গেছে?
….হুমমম আর শুনলাম বিয়ে নাকি ১মাস পরে হবে। হাসিবরা নাকি বিয়ের আগ পর্যন্ত এখানে থাকবে,বিয়ের কেনাকাটা আর কি সব ব্যবসার কথা বললো তোর চাচা। এসব ঝামেলা শেষ করে তারপর নাকি বাড়ি যাবে।
….ও আচ্ছা বলে চা চুমুক দিলো ঝুমুর। (কিছুটা বিরুক্ত ভাব নিয়ে)
….আচ্ছা ঝুমুর আমি রান্না ঘর থেকে ঘুরে আসি তুই থাক।
মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বললো।মনে মনে ঝুমুরের ভীষণ রাগ হচ্ছে। হাসিবরা এত দিন এখানে থাকবে আমি কত দিন লুকিয়ে থাকবো।আমাকে ওরা দেখলেই তো আবার বড় চাচী শুরু করবে আমাকে নিয়ে বিশ্ব যুদ্ধ। ধুর ভালো লাগে না। ঝামেলা কবে যে শেষ হবে।
চলবে…..