#রইলো_তোমার_নিমন্ত্রণ।
[১২]
সন্ধ্যা সাতটার মধ্যেই আরাভের দেওয়া ঠিকানায় এসে পৌঁছায় দিগন্ত। কলিং বেল বাজাতেই তাহমিদ এসে দরজা খুলে দেয়। তারপর দিগন্তকে নিয়ে ভিতরে প্রবেশ করে। দিগন্তকে ড্রয়িংরুমে বসিয়ে তাহমিদ আরাভকে ডাকে। আরাভ এসে দিগন্তের পাশে বসে ওকে ওয়েলকাম জানিয়ে তাহমিদকে বলে চা দিতে। দিগন্ত এমনিতেই এই কেইসটা নিয়ে ঝামেলায় আছে। গোটা একটা দিন কেটে গেলো এখনো পর্যন্ত কোন ক্লু পাইনি সে। এমনকি এই কেইসটা কোথা থেকে শুরু করবে সেটাও বুঝতে পারছে না। অধৈর্য হয়ে পরছে সে।বিরক্ত মুখ করে আরাভের দিকে তাকাতেই আরাভ মৃদু হেসে বলে,
” এত অধৈর্য হলে চলবে! ডিটেকটিভ। শান্ত হয়ে বসুন।”
দিগন্ত আর কিছু বললনা। তাহমিদ এসে দিগন্তকে চা দিয়ে ওর পাশেই বসে পরে। তারপর একে একে রেদওয়ান তুহিন এসে বসে দিগন্তের পাশে। দিগন্ত ভ্রু কুচকে কিছুটা সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকালো আরাভের দিকে। আরাভ বুঝতে পারছে দিগন্তের মনে কি চলছে। তাই সে চোখের ইশারায় দিগন্তকে শান্ত হয়ে বসতে বলে নিজে উঠে দাঁড়ালো। সবার দিকে এক পলক তাকিয়ে বলল,
” আমি আসছি।”
” কোথায় যাচ্ছিস? প্রশ্ন করলো তুহিন।
” এই ডিটেকটিভের মতো আরো একজন আমায় সন্দেহ করছে। তার সন্দেহ দূর করাটা ভীষন দরকার।” আরাভ গিয়ে ভূমির রুমে নক করলো। ভূমি দরজা খুলে দিতেই আরাভ ওর দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো কিছুক্ষণ। এই ড্রেসটা কেনার আগেও ভাবেনি ভূমিকে এতটা সুন্দর লাগবে এই ড্রেসে। তবে এখন মনে হচ্ছে আরাভের ড্রেস কেনাটা সার্থক হয়েছে। তারপর সদ্য শাওয়ার নিয়েছে ভূমি। মাথার চুল বেয়ে টিপটিপ পানি পরছে ভূমির গাল বেয়ে। এক ফোটা জল গড়িয়ে পরলো ভূমির গলায়। বাদামি তিলের উপর বিন্দু পরিমান পানি দেখেই আরাভের তৃষ্ণা যেন বেড়ে গেল। শুকনো ডুক গিলে সে। তারপর নিজেকে শান্ত করে ভিতরে প্রবেশ করে। এই অবস্থায় ভূমিকে সবার সামনে নেওয়া ঠিক হবে না। তাই সে নিজে টাওয়াল দিয়ে ভূমির মাথার চুল মুছে দেয়। তারপর একটা উড়না দিয়ে মাথায় ডেকে ভূমিকে নিয়ে ড্রয়িংরুমের আসে। এখানে ভূমিকে দেখে অবাক দিগন্ত। যেহেতু আরাভের সাথে আছে তাই কোন প্রশ্ন করলো না। আরাভ ভূমিকে নিয়ে একপাশে বসে। তারপর দিগন্তের দিকে একপলক তাকিয়ে প্রশ্ন করে,
” ডিটেকটিভ, আপনার কি প্রশ্ন আছে সেটা করতে পারেন।”
দিগন্ত একবার ভূমির দিকে তাকায়। তারপর বলে,
” দেড় বছর আগে আপনি যে কলেজ থেকে বহিষ্কার হয়েছেন আবার কেন সেই কলেজে জয়েন করলেন।”
” এর একটাই কারন। সত্যিটা খুঁজে বের করা।”
” ভূমির ভয়ান অনুসারে আপনি আগে থেকেই জানতেন দিয়ার মৃত্যর কথা সেটা কিভাবে?”
” একটা গল্প শুনবেন ডিটেকটিভ। চলুন আপনাকে একটা গল্প শুনাই। এখানেই আপনার সব প্রশ্নের উত্তর পাবেন।” আরাভ ভূমির দিকে একপলক তাকিয়ে বলতে শুরু করে।
” আজ থেকে প্রায় আড়াইবছর আগের কথা। তখন আমি মাত্র কলেজে জয়েন করেছি। কয়েকদিনের মাধ্যে আমার সকল স্টুডেন্টরা আমাকে পছন্দ করতে লাগলো। তারপর একদিন তারা বায়না ধরলো আমার কাছে পড়বে আমার বাড়িতে। আমি না করলেও ওরা শুনতে নারাজ। সেখানে ছিলো তিনটা ছেলে আর দুটো মেয়ে। সবাই মোটামুটি ভালো স্টুডেন্ট। আমি তাদের পড়াতে শুরু করি। একদিন দেখলাম আমার এক স্টুডেন্ট, ইশান সিগারেট খাচ্ছে। আমাকে দেখে সেটা লুকিয়ে ফেলল। আমিও আর কিছু বলিনি। পরপর এমন হতেই থাকলো তাই একদিন আমি তার কাছ থেকে প্যাকেট সহ সবকটা নিয়ে নেই। সিগারেটের নেশা আমার ও ছিলো তবে সেটা নিত্তান্তই খুব কম। সেদিন ইশানের কাছ থেকে নেওয়া সিগারেট আমি একটা খাই। ভালো লাগে। এর আগে যত সিগারেট খেয়েছি সেগুলোর থেকে আলাদা এক স্বাদ। তিনদিনের মধ্যে পুরো প্যাক শেষ করলাম। তারপর আবার নেশা ধরলো। অন্য সিগারেট খেলাম কোন কাজে এলো না। তাই ইশানের কাছ থেকে সিগারেট চেয়ে নিলাম। ভাবতেই পারে স্যার হয়ে স্টুডেন্টদের কাছ থেকে সিগারেট চেয়ে নেয়। কি করবো নেশা ধরেছে যে। তারপর যখন ওর কাছ থেকে জানতে চাইলাম এটা কোন ব্যান্ডের সিগারেট। তখন ইশান বলল, ” এটা আমার এক বড় ভাই আমাকে দেয়।” আমি ওকে বললাম, ” এখন থেকে প্রতিদিন আমার জন্যে এক প্যাক নিয়ে আসবে।” আমি টাকা দিতাম ও সিগারেট নিয়ে আসতো। এভাবেই চলল এক বছর। রোজ আমার এক প্যাক করে সিগারেট লাগতো। না খেলে পাগল পাগল লাগতো। অস্বাভাবিক আচরণ করতাম। তারপর আমার এক বন্ধুকে রক্ত দিতে যেয়ে দেখি আমার রক্তে ড্রা*গ। বিষয়টা ছড়িয়ে পরলো চারিদিকে। আমি তো কোন ড্রা*গ নেইনা তাহলে আমার শরীরে ড্রা*গ এলো কোথা থেকে। আমি সাইক্রিটিয়াসের কাছে কাউন্সিলিং করালাম। সব শুনে সে আমার সিগারেট খাওয়ার উপর সন্দেহ করলো। সন্দেহ আমার ও হলো। তাই সিগাটের একটা টেষ্ট করালাম। রিপোর্ট এলো, সিগারেট এ ড্রা*গস মেশানো। সিগারেট খাওয়া ত্যাগ করলম। তবে নিজের মধ্যে অস্বাভাবিক কিছু লক্ষ করলাম। সবার সাথে রুক্ষ ব্যবহার করা, ভাংচুর করা মাথা ব্যাথা নিজেকে পাগল পাগল মনে হতো। ক্লাস নিতে পারতাম। কলেজ থেকে আমাকে অপমানিত করে বহিষ্কার করে দিল। তার কিছুদিন পর ইশানের মৃত্যু। ওর মৃত্যুটাও ড্রা*গ এর কারনে হয়েছে। তখন সবার আঙ্গুল আমার দিকে। যার স্যার ড্রা*গ নেয় তার স্টুডেন্ট ও নিবে এটাই স্বাভাবিক। তবে আমি তো জানি সবটা। আমার সব সন্দেহ দূর করলো ইশানের মোবাইলের একটা এসএমএস। যেখানে লেখা ছিল, ” It’s time to die.” আর নিচে লেখা ছিলো, “DEATH” কোন নাম্বার নেই ডিজিট নেই শুধু একটা নাম, ডেট্থ। আমি চলে গেলাম রিহ্যাবে। তবে আমার মাথায় একটাই নাম চলতো, “DEATH”
” রিহ্যাবে ছয় মাস থেকেছেন কিন্তু বাড়ি ফিরেছেন আট মাস পর। বাকি তিন মাস কোথায় ছিলেন?” প্রশ্ন করলো দিগন্ত।
” মনের দিক থেকে পুরোপুরি ভেঙে পরলেও আমাকে বাঁচিয়ে রেখেছিলো ওই একটাই মেসেজ। আবার সেই সময় রিহ্যাবে ক্যারাটে শিখতাম। নিজের শরীর ও স্বাস্থ্যের দিকে নজর দিলাম। তারপর একটা খবর বের হয়েছিলো, কম বেশী সেটা সবাই জানে।
” একজন পুলিশ অফিসার ইললিগ্যাল কাজের সাথে যুক্ত থাকায় তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।” ওতে ওই ব্যাক্তির বয়ান ছিলো সে কিছুই করেনি। সব কিছু ওই “DEATH করেছে। যদিও তার কাছে কোন প্রমান ছিলো না। তাই তাকে গ্রেফতার ও পরে সাসপেন্ড করে। আমার কাছে এই খবরটাই ছিলো মেঘ নাচাইতে জলের মতো। যেহেতু আমি নিজেই নিজেকে শুধরে নিচ্ছি তাই আমার উপর কোন চাপ ছিলো না। তাই গোপনে আমি ওই জৈনক লোকটার সাথে যোগাযোগ করি। লোকটা ছিলো “রেদওয়ান”। রেদওয়ান একজন কম্পিউটার হ্যাকার। সরকারি ত্বত্তাবদানে সে মানুষের কম্পিউটার হ্যাক করে থাকে।ওর কাজ ছিলো ডার্ক নেটের উপর নজর রাখা। সেখানেই পরিচয় হয় তার DEATH এর সাথে। তারপর থেকে সে ডেত্থ এর উপর নজর রাখতো। একাদিন তার মোবাইলে এসএমএস আসলো, “I will destroy you.” আর তারপরেই সে গ্রেফতার।
দিগন্ত অবাক হয়ে তাকালো তার পাশে বসে থাকা ছেলেটার দিকে। আরাভ আবার বলতে শুরু করলো,
” এক অভাগী যেমন অন্য অভাগীর দুঃখ বুঝে তেমনি আমার দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয় রেদওয়ান। তারপর আমি রিহ্যাবে বসে কম্পিউটার ইন্টারনেট এর নানা রকমন ইল্লিগ্যাল কাজ কর্ম শিখতে লাগলাম। ছাত্র হিসাবে আমি বরাবরই ভালো তাই অল্প কিছুদিনের মধ্যে আমি সফল ও হলাম। রিহ্যাবে থেকে বের হয়ে কম্পিউটারের উপর আমি একটা কোর্স শুরু করলাম তিনমাসের। তখন দু একবার আমাকে বিঞ্জান মঞ্চ আমাকে ডেকেছে। আমি সেখানে যেতাম শুধু মাত্র নতুন কিছু জানার জন্যে। তাই তিনমাস পর বাড়ি ফিরেছি। এই এখানে দেখছেন, তুহিন সেও কম্পিউটার হ্যাকার, তাহমিদ আমার ছোটবেলায় বন্ধু একজন কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার। ওর বোনের মৃত্য হয়েছে ওই ডেত্থ এর কারনে। আর সোহান সেও একজন হ্যাকার। তুহিন সোহান কোন ইল্লিগ্যাল কাজ করতো না। ডার্ক নেটের উপর কাজ করতো আর সরকারি লোকদের সাহায্য করতো। এরা সবাই “DEATH” এর শিকার। আমরা মোট পাঁচজন। আমাদের পরিচয় অল্পদিনের হলেও আমার লক্ষ একটাই “DEATH”
“DEATH ” চরিত্রটা অদ্ভুত মায়াজাল। ও ধরাছোঁয়ার বাইরে। ওকে ধরতে আমাদের আরো অনেক পরিশ্রম করতে হবে। আমরা পাঁচজন মিলে একটা হ্যাকিং গ্রুপ তৈরী করি। “Star” গ্রুপ। আমরা অনেকদিন থেকেই Death কে ফলো করার চেষ্টা করছি। তবে ও কি চায় সেটা আমাদের কাছে এখনো স্পষ্ট নয়। সম্প্রতি ওকে অনেক ইল্লিগ্যাল জিনিসপত্র টানজেকশন করতে দেখা যায়। তবে সব কিছুতেই ও মিডিলম্যান হয়ে কাজ করে। তবে বর্তমানে সবচেয়ে বেশী যেটা টানজেকশন করেছে সেটা হলো tha death element. এটা এক প্রকার ড্রা*গ। তবে বর্তমানের প্রচলিত কোন ড্রা*গসের সাথে এর মিল নেই।”
” আচ্চার,Death এসব করে কিভাবে?” প্রশ্ন করলো দিগন্ত।
” ডার্ক ওয়েবের মাধ্যমে।”
” ডার্ক ওয়েব কি?”
” আমাদের যে ইন্টারনেট রয়েছে তার মাত্র ফোর পার্সেন্ট আমরা সাধারণ মানুষ ব্যবহার করে থাকি। এটাকে সারফেস ওয়েব বলা হয়। যেটা মূলত গুগোল ক্রোম ইউসি ব্রাউজার বা মোজিলা এর মাধ্যমে যে কোন সময় ব্যাবহার করি। আর বাকি ইন্টারনেটের যে অংশ রয়েছে সেটা হলো ডিপ ওয়েব। এই ডিপ ওয়েবে আরো গোপন ভাবে রয়েছে ডার্ক ওয়েব।ডিপ ওয়ের মূলত গোপনীয়তা রক্ষার জন্যে ব্যবহার করা হয়। সরাসরি ইন্টারনেটের রিসার্চ করলে এটা আমরা পাইনা। কোন নিদিষ্ট লিংকের
মাধ্যমে ডিপ ওয়েবে আমরা কাজ করতে পারি। ই-মেইল রেকর্ড রক্ষা থেকে শুরু করে রিসার্চ ওয়াক এর গোপনীয়তা রক্ষা করা সমস্ত কিছু ডিপ ওয়েবের মাধ্যমে হয়ে থাকে। ব্যাংক তাদের গোপনীয়তা রক্ষার জন্যে ডিপ ওয়েব ব্যবহার করে থাকে। এতদূর পর্যন্ত আমরা নরমাল বাউজারের মাধ্যমেই কাজ করতে পারতাম। কিন্তু ডার্ক ওয়েব ক্ষেত্রে নরমাল ব্রাউজার কাজ করে না। ডার্ক ওয়েব শুধু মাত্র (TOR) ব্রাউজার অপেন হয়। এই ব্রাউজারের ওয়েবসাইট ডট ওনিয়ন নামে হয়। আমরা যেমন ডট কম/ডট ইন ব্যবহার করি।
ড্রাক ওয়েবের কোন ব্যাক্তি যখন ওয়েবসাইট এক্সেস করে তখন যে ব্যক্তি ওয়েবসাইট ভিজিট করছেন বা যার ওয়েবসাইট ভিজিট করছে দুটোর ক্ষেত্রে সঠিক আইপি এড্রেস পাওয়া যায় না। অনেকগুলা আইপি এড্রেসের মাধ্যমে ডার্ক ওয়েব কাজ করে থাকে। আই আসল আইপি এড্রেসকে ট্রাক করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পরে। ফলে যারা ডার্ক ওয়েবে কাজ করে তাদের আসল পরিচয় সামনে আসা অসম্ভব। আর এই সুযোগটাকে কাজে লাগিয়ে ডার্ক ওয়েবের মাধ্য সমস্ত প্রকার ইল্লিগ্যাল কাজ হয়ে থাকে। ড্রা*গ পাচার অস্ত্র পাচার পর্নোগ্রাফি টেরোরিস্ট কার্যকলাপ সমস্ত আলোচলা হয়ে থাকে এই ডাক ওয়েবে। এককথাশ খুবই ভয়ানক এই ডার্ক ওয়েব। আমাদের মতো সাধারণ মানুষ যদি (TOR) -এ শুধুমাত্র ওয়েবসাইট সার্চ করার জন্যেও যেয়ে থাকে তাহকে হয়তো তাতে তার নিজেস্ব সমস্ত তথ্য হ্যাক হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এই ধরণের dark web বা dark website গুলোকে visit করাটাও কিন্তু অপরাধ (illegal) যার জন্যে আপনার ওপরে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে।,,,,, [তথ্যসূত্রঃ গুগল]
চলবে,,,,,,,,,
#Mahfuza Afrin Shikha.
#রইলো_তোমার_নিমন্ত্রণ।
[১৩]
“দ্যা ডেথ এলিমেন্ট সম্পর্কে আর কোন তথ্য পাওয়া যায়নি। না মানে এটার সাথে তো বর্তমান প্রচলিত কোন ড্রা*গ এর মিল নাই। তাহলে এই ড্রা*গ আসলো কোথা থেকে।” প্রশ্ন করলো দিগন্ত।
” তাহমিদের বোন মিমি, দিয়া ইশান সহ আরো কুড়িজন মানুষের মৃত্যর কারন এই ডেথ এলিমেন্ট।এই ড্রা*গসের সিমটমের সাথে আমরা অন্য একটা ড্রা*গসের মিল পেয়েছি। যেটা এক নিষিদ্ধ ড্রা*গ। বাংলাদেশ সহ সারা বিশ্বে এই ড্রা*গ নিষিদ্ধ।”
” কি আছে এই ড্রা*গস এ?”
” ডিটেকটিভ। সেটা তো আপনার কাজ। আপনি খুঁজে বের করুন। আমাদের কোন সাহায্য লাগলে অবশ্যই বলবেন। আর হ্যাঁ, আমাদের কাজ ইল্লিগ্যাল হলেও আমরা কোন ইল্লিগ্যাল কাজ করিনি। আমরা কারো পারসোনাল ইনফরমেশন চুরি কিংবা বিক্রি করিনি। তাই আমি চাইনা আমাদের এই টিমের কথা বাহিরে কেউ জানুক।ডিটেকটিভ, আপনি আপনার টিমকেও বলবেন না। আর হ্যাঁ, আপনার যদি কোন হেল্প লাগে তাহলে অবশ্যই আমাদের এখানে আসতে পারেন।”
উঠে দাঁড়ালো আরাভ। সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলল, “ফলো মি” তারপর সে একটা রুমের ভিতরে প্রবেশ করে। ভূমি আরাভের সাথে না গিয়ে সে চলে আসে রুমে। যেখানে সে কিছুক্ষণ আগে ছিলো। আরাভের স্পেশাল রুম, যেখানে পুরো রুমটাই নানা রকম পেপার কাটিং ও ছবি দিয়ে ভর্তি। রুমের এক পাশে বড় একটা পিসি রাখা। তার অপজিট পাশে দেয়ালের সাথে একটা সাদা পর্দা রাখা। আরাভ দিগন্তকপ সবটা দেখালো। তারপর ড্রয়িংরুমে এসে দিগন্তকে বসিয়ে নিজে রুমের দিকে পা বাড়ালো ভূমির খুঁজে। দরজা সামন্য খুলতেই দেখতে পেল ভূমি বিছানায় বসে কিছু ভাবছে। চোখমুখ ফ্যাকাশে। সামনের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে কিছু ভেবে চলেছে সে। আরাভ ভাবলো, সত্যটা জানার পর হয়তো সে ফেডআপ। তাই আর ভূমিকে না ঘাটিয়ে চলে গেল রান্নাঘরে। প্রথমবার ভূমি ও দিগন্ত ওদের বাসায় এসেছে না খাইয়ে চলে যেতে দেওয়া যায় কি?
রাত দশটা নাগাত সবার ডিনার শেষ হলে দিগন্ত বিদায় নিয়ে বেড়িয়ে যায়। তারপর আরাভ ভূমিকে নিয়ে বের হয়। গন্তব্য ভূমিদের বাড়ি। গাড়িতে বসে ভূমি কোন কথা বলে না। পুরো রাস্তাটাই বাহিরের দিকে মুখকরে বসে ছিলো। আরাভ ড্রাইভ করলেও আড় চোখে ভূমিকে দেখছিল বারংবার। কিন্তু কোন কথা বলে নি। হঠাৎ গাড়ি ব্রেক করতেই সামনের দিকে ঝুকে যায় ভূমি। নিজের ভাবনায় এতটাই বিভোর ছিলো বুঝতে পারেনি। প্রশ্নের দৃষ্টিতে আরাভের দিকে তাকাতেই আরাভ বাহিরের দিকে ইশারা করে বলল,
” তোমার বাড়ি এসেগেছে।”
ভূমি বাহিরের দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসার চেষ্টা করে। তারপর আরাভের দিকে একপলক তাকিয়ে গাড়ি থেকে নেমে সোজা বাড়ির ভিতরে চলে যায়। আরাভ বিস্ফারিত নয়নে তাকিয়ে থাকে ভূমির চলে যাওয়ার দিকে।ভিতরে যাওয়া তো দূরে থাক যাওয়ার আগে গুড নাইট বলার ও প্রয়োজন মনে করলো না। অবাক হয়ে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে মৃদু হাসলো আরাভ।এবং বিড়বিড়ায়, ” ব্রেনে এতটা চাপদিও না নীলাদ্রিতা। পরে দেখবে তোমার মাথা চেপ্টা হয়েগেছে।” গাড়ির স্টিয়ারিং ধরে বসে রইলো সে। দৃষ্টি উপরের দিকে ভূমির রুমের বারান্দায় ঝুলন্ত উড়নার দিকে।
বাড়ির ভিতরে পা রাখতেই ড্রয়িংরুমে দেখা মিলল, ইউনুস হোসাইন রোজিনা হোসাইন ও তন্ময়ের। সবার হাতের চায়ের কাপ। সামনে টেলিভিশনে চলছে বাংলাদেশ ও ইন্ডিয়ার ক্রিকেট ম্যাচ। ইউনুস হোসাইন ও তন্ময় মনোযোগ দিয়ে খেলা দেখছে।রোজিনা হোসাইন বিরক্ত চোখে তাদের দিকে তাকিয়ে আছেন।এই খেলার জন্যে তার সিরিয়াল দেখতে পারছেন না তিনি। ভূমি তীক্ষ্ণ চোখে বাবা আর ভাইয়ের দিকে তাকালো। কিছুক্ষণের মধ্যেই তাদের মধ্যে চলবে নীরব যুদ্ধ। একজন আরেক জনের দিকে ক্রুর দৃষ্টিতে তাকাবে। বাংলাদেশ যত খারাপ খেলুক না কেন ইউনুস হোসাইন সবসময় তার পক্ষে। আর তন্ময় সে রোজ তার দল পরিবর্তন করবে। যেদিন যে দেশ জিতবে সেই দেশের পক্ষ সে নিবে। ভূলেও বাংলাদেশের সাপোর্ট নিবে না। বরং উল্টে বলবে, খেলা বুঝোনা তাই বাংলাদেশ ক্রিকেট টিম সাপোর্ট করো। খেলা বুঝলে কখনো করতে না। এই নিয়ে দুজনের মাঝে চলে নিরব ধন্ধ।দীর্ঘশ্বাস ফেলে নিজের রুমের দিকে পা বাড়ালো ভূমি। ড্রয়িংরুমে উপস্থিত সকলে তার দিকে অবাক হয়ে তাকালো। ইউনুস হোসাইন তন্ময়ের দিকে চোখের ইশারা করতে তন্ময় মাথা নেড়ে বাহিরের দিকে পা বাড়ায়।
বাড়ির সামনে আরাভের গাড়ি দেখে স্মিত হেসে এগিয়ে যায় তন্ময়। আরাভের দৃষ্টি তখনো ভূমির বারান্দার দিকে স্থির। তন্ময় এসে জানালার নক করতেই সামনে তাকায় আরাভ। একগাল হেসে বাহিরে বের হয়ে আসে।তন্ময় বলে,
” কেমন আছেন ভাইয়া?”
” ভালো। তোমার কি অবস্থা। পড়াশুনা কেমন চলছে?”
” ভালোই। আপুর কি কিছু হয়েছে। দেখলাম কেমন হয়ে আছে। কারো সাথে কথা না বলে নিজের রুমে চলে গেলো।”
আরাভ মৃদু হেসে বলল,
” কি যে হলো সেটা আমিও বুঝতে পারছিনা বুঝলে শালাবাবু।”
” ওওও আচ্ছা। ভিতরে আসুন। বাবা অপেক্ষা করছে।”
” আজ না। আমাকে বাড়ি ফিরতে হবে তাড়াতাড়ি। অন্যদিন আসবো। আজ আসি কেমন। বোনের খেয়াল রেখো। আসি।”
” ভিতরে আসলে ভালো লাগতো।”
” অন্যদিন অবশ্যই আসবো।”
বলেই তন্ময়ের সাথে হাত মিলিয়ে গাড়িতে গিয়ে বসে। উপরের দিকে তাকিয়ে দেখে বারান্দায় এখনো উড়না ঝুলছে। মৃদু হেসে গাড়ি স্টার্ট দেয় আরাভ। কিছুক্ষণের মধ্যে চোখের আড়াল হয়ে যায় গাড়ি আর তন্ময় ফিরে আসে বাড়ির ভিতরে।
তন্ময় ভিতরে এসে ইউনুস হোসাইনের দিকে তাকিয়ে মাথা নাড়ালো। ইউনুস হোসাইন স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেন। এই মেয়েটার মাথায় কখন কি চাপে বুঝা দায়। টেলিভিশনের দিকে তাকিয়ে দেখেন, এখনো তিন ওভার খেলা বাকি। উঠে দাঁড়ালেন তিনি। এই খেলা দেখার চেয়ে মেয়ের মুখোর হাসি অনেক দামি। ধীর পায়ে ভূমির রুমের দিকে চলে যান তিনি। দরজা খোলাই ছিলো। নক করে ভিতরে ডুকে দেখেন বিষন্ন মুখে বিছানায় বসে কিছু ভাবছে ভুমি। ভূমি ভাবনা এতটাই গভীর ছিলো যে বাবার উপস্থিতি টেরও পেল না। ইউনুস হোসাইন মেয়ের পাশে বসে মাথায় হাত রাখলেন। কেপে উঠলো ভূমি। পাশ ফিরে নিজের বাবাকে দেখে স্বস্তির শ্বাস ফেলল। ইউনুস হোসাইন বললেন,
” এভাবে মন খারাপ করে বসে আছিস কেন?”
” দায়িত্ব আর পরিবারের মধ্যে কোনটা বেছে নিবে তুমি?”
” আগে দেখবো দায়িত্বটা কেমন? এতে মানুষের ভালো হবে নাকি খারাপ হবে। আমার এইটুকু দায়িত্ব পালনে যদি আমার পরিবার শান্তি পায় তাহলে আমি দায়িত্ব-ই বেছে নিবো।”
” পরিবার নয় বাবা। এতে দেশ, দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের এমনি হাজারো মানুষের জীবন রক্ষা হবে। তবে তোমার পরিবারের কোন লাভই হবে না।”
” মানুষ মরণশীল। প্রত্যেককে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহন করতে হবে। এটা চিরন্তন সত্য। কে কবে কখন মারা যাবে সেটা কেউ বলতে পারে না। আমি এখন আছি কাল নাও থাকতে পারি। থাকবো না পরিবারের পাশে। ভাববো না পরিবারের কথা। এমন সাধারণ মৃত্যুর চেয়ে আমি যদি হাজার মানুষের প্রান বাঁচিয়ে যাই তাহলে সেটাই আমার জন্যে গর্বের।”
” মানে তুমি দায়িত্ব বেছে নেওয়ার কথা বলছো।”
” যদি এমনটা হয় তাহলে।”
” থ্যাক ইউ বাবা। আমার কনফিউশন দূর করে দিলে।”
ইউনুস হোসাইন ভূমির মাথায় হাত বুলিয়ে আদরে দৃষ্টিতে মেয়ের দিকে তাকিয়ে রইলো। ভূমি বলল,
” তুমি সত্যিই ম্যেজিসিয়ান বাবা। সব সময় আমার কনফিউশন, আমার কষ্ট সব ভ্যানিস করে দাও। আমার সুপার হিরো তুমি।”
” সব বাবাই তার কন্যার কাছে সুপার হিরো।”
” তুমি স্পেশাল।”
শব্দ করে হাসলো ইউনুস হোসাইন। ভূমি উঠে দাঁড়িয়ে ব্যাগ থেকে মোবাইল বের করে হাসি মুখে বলল,
” দু-মিনিট। আসছি। তারপর আমরা ছাদে বসে গল্প করবো। বাবা আজ তুমি কফি বানাবে। অনেক দিন তোমার হাতের কফি খাইনা।”
বারান্দায় চলে গেল ভূমি। ইউনুস হোসাইন হাসিমুখে মেয়ের ঘর থেকে বিদায় নিলেন। মেয়ের মুখের এই হাসিটার জন্যে পৃথিবীর সমস্ত সুখ বিসর্জন দিতে পারেন। ভূমি বারান্দায় গিয়ে কল করলো আরাভের নাম্বারে। আরাভ তখন মাত্র-ই বাড়ির রাস্তায় গাড়ি ডুকালো। প্রথম বার রিং হতে হতে গাড়ি নিয়ে বাড়ির গেটে প্রবেশ করলো। দ্বিতীয়বার রিং হতে গাড়ি পার্কিং এ ডুকালো। তৃতীয়াবার রিং হতেই কল রিসিভ করলো আরাভ। ওপাশ থেকে ভূমির মিষ্টি গলা,
” বাড়ি পৌঁছে গেছেন,,উহঃ সরি পৌঁছে গেছো?”
” পার্কিং এ বসে আছি। এখন কল করলে?”
” কিছু বলার ছিলো?”
” হুম বলো।” গাড়ি থেকে নেমে দাঁড়ালো আরাভ। ওপাশ থেকে ভূমি বলল,
” আমিও তোমার সাথে কাজ করতে চাই।”
” মানে!”
” ওই ডেথ এর বিরুদ্ধে আমিও তোমাদের সাথে কাজ করতে চাই।”
” একদম-ই না।” এসব তোমার মাথায় আসে কি-ভাবে?”
” আমি অনেক ভেবে চিন্তে এই ডিসিশন নিয়েছি। আমি তোমাদের সাথে কাজ করবো। চাইলে আমি কলেজে নজর রাখবো। কারা ড্রা*গ সাপ্লাই করে, নজর রাখবো।”
” ভূলেও এই কাজ করবে না। এতে কতটা রিক্স তুমি জানো। আজ যেটা বলেছো সেটা যেন তোমার মুখে আর না শুনি। শক্ত গলায় বলল আরাভ। ওপাশে ভূমি চুপ। আরাভ কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বড়করে শ্বাস নিয়ে নরম সূরে বলে, ” তোমার জিবন নিয়ে বাজি খেলতে পারবো না আমি।”
” নিজের খেয়াল রাখবো।”
” ডেথ এর ক্ষমতা সম্পর্কে তোমার ধারনা নাই। এটা অস্ত্রের লড়াই নয় ভূমি। অস্ত্রের লড়াইতে শত্রু ক্ষমতা সম্পর্কে ধারনা করা গেলেও বুদ্ধি লড়াইতে শত্রুর ক্ষমতা সম্পর্কে ধারনা করা যায় না। আর এখানে ডেথ, সে নিজেই এক মৃত্যু। তার পথের যে বাধা হবে তার মৃত্যু নিশ্চিত।”
” আর তোমাদের বুঝি কিছু হবে না।”
” ডেথ এর মতো আমাদেরও কোন পরিচয় নাই। তাই আমাদের চেনা তার পক্ষে সম্ভব নয়। আর তুমি ডেথ এর কথা মাথা থেজে ঝেড়ে ফেলে দাও।ডেথ এর বিরুদ্ধে কাজ করার কথা সেটা কল্পনাও করো না। চুপচাপ ঘুমাবে এখন। আমি রাখছি।”
ভূমিকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে কল কেটে দেয় আরাভ। মোবাইলটা পকেটে পুরে সামনের দিকে পা বাড়ায়। বিড়বিড়াতে থাকে,
” কলেজে নজর রাখবে। কি সাহস। সাহন নয় দুঃসাহস। না হলে এমন কথা ভাবতো না। আর ওকি জানেনা। ও। এসবের মাঝে থাকলে আমি ঠিকমতো কাজ করতে পারবো না। সারাক্ষণ ওর চিন্তা আমার মাথায় ঘুরতে থাকবে। কাজ করবে না তো। আমার সব কাজ ভণ্ড করে দেওয়ার ধান্দা। তখন থেকে ভেবে ভেবে এই সলিউশন বের করছে ম্যাডাম ”
চলবে,,,
Mahfuza Afrin Shikha.