তোমার খোলা হাওয়া পর্ব-০৬

0
324

#তোমার_খোলা_হাওয়া
#পর্ব_০৬
#Sumaiya_Sumu(লেখিকা)

“উজান মন খারাপ করে রুমে গিয়ে ল্যাপটপ নিয়ে বসলো কিন্তু কিছুতেই কাজে মন বসাতে পারছে না। বারবার রুমের চারদিকে তাকাচ্ছে। ঊষা’র কথা বড্ড মনে পড়ছে। কিন্তু কেন? সে কি ঊষা’কে মিস করছে? এই অদ্ভুত অনুভুতি কেন হচ্ছে উজানের অজানা। উজান ল্যাপটপ রেখে বেলকনিতে গিয়ে দাঁড়ালো। কিন্তু এখানেও তার ভালো লাগছে না। এখানে ঊষা’র গন্ধ পাচ্ছে সে কারণ ঊষা রোজ রাতে এখানে এসে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতো। উজান কিছুক্ষণ উদাস চোখে আকাশের দিকে তাকিয়ে থেকে রুমে চলে আসলো। আজ তার পুরো বিছানা খালি তাও তার বিছানায় ঘুমাতে ইচ্ছে করছে না। উজান গিয়ে সোফায় শুয়ে পড়লো। কিন্তু ঘুম আসছে না, যতবার চোখ বন্ধ করছে ততবারই ঊষা’র চেহারা চোখের সামনে ভেসে উঠছে। উজান বিরক্ত হয়ে উঠে বসলো, উফফ এই মেয়েটা কাছে থেকেও তাকে শান্তি দেয় নি, আর এখন দূরে গিয়েও শান্তি দিচ্ছে না। কি বিপদ! উজান ফোন হাতে নিয়ে ঊষা’কে ফোন দিবে ভাবছে। কল লিষ্টে গিয়ে ঊষা’র নাম্বার টাইপ করলো কিন্তু কল দিতে পারছে না তার হাত কাঁপছে। মন বলছে, কল দিয়ে কথা বলো। আরেকদিকে বিবেক বলছে, কল দিও না। কল দিয়ে কি বলবে? মন আর বিবেকের সাথে যুদ্ধ করে শেষ পর্যন্ত মনের কথাই শুনলো উজান। ঊষা’কে কল করলো কিন্তু ওপাশ থেকে একটা মহিলার খুব বিরক্তিকর কন্ঠস্বর ভেসে আসলো, ‘আপনার ডায়ালকৃত নাম্বার’টি সংযোগ প্রদান করা সম্ভব হচ্ছে না’। উজান প্রচন্ড বিরক্ত হয়ে ফোন’টা বিছানায় ছুঁড়ে মা’র’লো। সব কিছু কেমন যেনো অ’স’হ্য লাগছে। উজান আবার গিয়ে সোফায় শুয়ে পড়লো। সারাদিনের ক্লান্তিতে এপাশ-ওপাশ করতে করতে কিছুক্ষণ পরেই ঘুমের দেশে তলিয়ে গেলো”।

‘কেমন আছো উজান? নিশ্চয়ই আমাকে ছাড়া অনেক ভালো আছো তাই না? কিন্তু জানো আমি তোমাকে ছাড়া একটুও ভালো নেই। এতোদিন অবহেলা পেতে পেতে আমি ভিতর থেকে একদম ভে’ঙে গুড়িয়ে গিয়েছি। আমি কি আর নিজেকে গড়তে পারবো? আমি তো এমনটা চাই নি? আমি চেয়েছিলাম তোমার সাথে হাতে হাত রেখে সারাজীবন কা’টা’বো কিন্তু তুমি তো আমাকে সহ্য করতে পারো না। আপন করে নিতে পারো নি আমাকে তাই দূরে সরে এলাম তোমার কাছ থেকে। এখন তুমি তোমার মনের মতো একজনকে আমার জায়গায়’টা দিয়ে দিবে তাই না? ওমা আমি কি বোকা তাই না? যেই জায়গা কোনোদিন আমার ছিলো না সেই জায়গায়’কে আমি নিজের বলে দাবি করি হাহাহা’। আমি কত’টা পা’গ’ল। আমি না তোমাকে অনেক ভালোবাসি উজান। তুমি কেন পারলে আমাকে আপন করে নিতে? যাই হোক আমি তোমার থেকে এইযে দূরে সরে আসছি না? আরও দূরে সরে যাবো দেখো। আরও দূরে সরে যাবো। একবারে আকাশের তাঁরা হয়ে যাবো হা..হাহাহা’।

“কথাগুলো বলতে বলতে উষা যেনো গভীর অন্ধকারে মিলিয়ে গেলো। উষা’র নাম ধরে চি’ল্লি’য়ে ধরফরিয়ে উঠে বসলো উজান। এই শীতের সময়ও সারা শরীর ঘেমে গেছে তার। উজান চারপাশে কয়েকবার চোখ বুলিয়ে বুঝার চেষ্টা করলো আসলে কি হয়েছে! ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো ভোর ৪.৩০ বাজে। তার মানে সে এতোক্ষণ স্বপ্ন দেখছিলো। কিন্তু উষা’কে নিয়ে এমন ভয়ঙ্কর স্বপ্ন কেন দেখলো? সে কি উষা’কে একবারে হারিয়ে ফেলতে চলেছে? উজান আর কিছু ভাবতে পারলো না। বসা থেকে উঠে এক গ্লাস পানি খেলো। দূর থেকে হালকা হালকা ফজরের আযানের ধ্বনি ভেসে আসছে। উজান আর দেরি না করে ওজু করে মসজিদে চলে গেলো। নামাজ পড়ে আল্লাহর কাছে অঝোর ধারায় কেঁদে ক্ষমা চাইতে লাগলো। সে আজ বুঝতে পারছে উষা’র সাথে কতটা অন্যায় করে ফেলেছে। নামাজ শেষ করে বাসায় এসে ফর্মাল ড্রেসআপ করে গাড়ি নিয়ে বের হয়ে গেলো। উদ্দেশ্য উষা’র বাবার বাড়ি যাবে। উষা’কে ফিরিয়ে আনতে হবে। উষা’র কাছে মাফ চাইবে সে। নিজের গন্তব্যে পৌঁছে গাড়ি থেকে নেমে বাসার ভিতরে গিয়ে কলিংবেল দিলো কিন্তু কেউ দরজা খুলছে না। হঠাৎ নিচের দিকে তাকিয়ে দেখে দরজায় তালা ঝুলছে। উজানের মন আরও খারাপ হয়ে গেলো। ভিতরে ভিতরে আরও অস্থির হয়ে উঠলো। কেউ বাসায় নেই কেন? কোথায় গেছে সবাই? ফোন বের করে আবার উষা’র নাম্বারে কল দিলো কিন্তু নাম্বার বন্ধ। উজানের কিছুই ভালো লাগছে না। উদাসীন হয়ে হাঁটতে হাঁটতে গাড়িতে এসে বসলো। সিটের সাথে হেলান দিয়ে কিছুক্ষণ চোখ বন্ধ করে রইলো। উষা কি তাহলে তাকে ছেড়ে সত্যি চলে গেলো? এখন সে উষা’কে কি করে ফিরে পাবে? উষা যে তার জীবনে কতটা মূল্যবান ছিলো সেটা বুঝতে পারছে। এখন কি করবে সে? উজান বাসায় ফিরে এসে ওর মায়ের রুমে গেলো। উজানের মা খাটে বসে বসে একটা বই পড়ছিলেন”। উজানকে দেখে বললেন….

‘কিরে এই সময় চলে আসলি যে? শরীর ঠিক আছে তো’?

‘উজান কোনো কথা না বলে হাঁটু গেঁড়ে নিচে বসে ওর মায়ের কোলে মাথা রেখে হাউমাউ করে কেঁদে উঠলো’। ছেলেকে এভাবে কাঁদতে দেখে তিনি অস্থির হয়ে বলে উঠলেন…

‘কি হয়েছে বাবা? তুই এভাবে কাঁদছিস কেন? কি হয়েছে আমাকে বল’?

‘মা আমার উষা’কে আমার কাছে ফিরিয়ে এনে দাও’।

‘কেন? আবার অবহেলা করতে’?

‘না মা। আমি অন্যায় করেছি। আমি উষা’র কাছে মাফ চাইবো। আমার উষা’কে ফিরিয়ে এনে দাও’।

“এভাবে কিছুক্ষণ কাঁদতে কাঁদতে উজান হঠাৎ চুপ হয়ে গেলো। আস্তে আস্তে উঠে রুমে চলে গেলো। এভাবেই সময় পার হতে লাগলো”।

—————-

কে’টে গেছে ৩ মাস। উজান এই ৩ মাসে উপলব্ধি করতে পেরেছে সে ঊষা’কে কতটা ভালোবাসে ফেলেছে। উষা’কে ছাড়া সে কতটা অসহায়। এই ৩ মাসে একদিনও ঊষা’র সাথে যোগাযোগ করতে পারে নি। উজান নিজেকে একদম ঘরবন্দী করে নিয়েছে। বাসার কারো মন-মেজাজ ভালো নেই। কি থেকে কি হয়ে গেলো এসব? ঊষা’ই বা এভাবে কোথায় হারিয়ে গেলো? উষা’র বাবার বাড়িতে অবশ্য সবাই গিয়েছিলো সেখানে উষা’র বাবা-মা’কে পেলেও উষা’কে পায় নি। উষা’র খোঁজও কেউ দেয় নি। সবাই অনেক জোড়াজুড়ি করেছিলো উষা’র কথা জানার জন্য কিন্তু উষা’র বাবা-মা উষা’র খোঁজ দেয় নি। তারা বলেছে উষা যদি মনে করে তাহলে নিজের থেকেই ফিরে আসবে। সবাই হতাশ হয়ে ফিরে এসেছিলো। হঠাৎ একদিন উজানের নামে একটি পার্সেল আসে। উজান রুমে গিয়ে পার্সেল’টি খুলে দেখে তার ভিতর ডিভোর্স পেপার। আর তাতে ঊষা’র সাইন। এই দৃশ্য দেখে উজানের মাথায় র’ক্ত উঠে যায়। ঊষা’র এতো সাহস হয় কিভাবে ওকে ডিভোর্স পেপার পাঠায়। উজানের কেন যেনো মনে হচ্ছে এখন ঊষা’র বাবার বাড়ি গেলে ঊষা’কে পেতে পারে। যেই ভাবে সেই কাজ! উজান কাউকে কিছু না বলে গাড়ি নিয়ে বের হয়ে গেলো। ফুল স্প্রিডে গাড়িয়ে চালিয়ে নিজের গন্তব্যে চলছে উজান। রাগে ফুসফুস করছে সে। নিজের গন্তব্যে এসে গাড়িয়ে থেকে নেমে হনহন করে বাসার ভিতরে গিয়ে দরজা ধাক্কাতে লাগলো। হ্যা যা ভেবেছিলো তাই, ঊষা এখানেই। দরজায় এমন ধাক্কানোর আওয়াজ শুনে ঊষা বিরক্ত হয়ে এসে দরজা খুলতেই উজান’কে দেখে আঁতকে উঠে। মানুষ’টার চেহারা কেমন শুকিয়ে গেছে, চোখের নিচে কালো দাগ পড়ে গেছে, চুলগুলো উষ্কখুষ্ক। আগের সেই পরিপাটি ভাব নেই। মানুষ’টা এমন হয়ে গেছে কেন? তাহলে কি মানুষ’টা ভালো নেই? এদিকে এতোদিন পর ঊষা’কে দেখে যেনো নিজের চোখের তৃষ্ণা মিটাচ্ছে উজান। ঊষা’কে দেখে সব রাগ মাটি হয়ে গেছে। দু’জন দু’জনের চোখের দিকে তাকিয়ে আছে। ঊষা’র চোখ টলমল করছে। ভিতরের সব রাগ, অভিমান যেনো পানি হয়ে যাচ্ছে। নিজেকে অনেক কষ্টে কন্ট্রোল করছে। মুখ দিয়ে একটা কথাও বের হচ্ছে না, সব যেন দলা পাকিয়ে যাচ্ছে। ঊষা’র বাবা-মা ভিতর থেকে এসেছিলেন কে এসেছে দেখার জন্য। যখন দেখলেন উজান এসেছে তখন দু’জনেই ভিতরে চলে গিয়েছেন। ওদের একটু আলাদাভাবে কথা বলার সুযোগ করে দিয়েছেন। আজকেই ওরা নিজেদের মান-অভিমান মিটিয়ে সব ঠিক করে নিক। ঊষা’কে অবাক করে হঠাৎ করে উজান ওর সামনে হাঁটু গেঁড়ে বসে ওর হাত দু’টো টেনে নিয়ে মুঠো করে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে উঠে। ঊষা নিজেকে আর সামলাতে পারলো না। ওর দুচোখ বেয়ে অশ্রু ঝড়ে পড়তে লাগলো”।

#চলবে…

(ভুল-ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। গল্প নিয়ে সবার মতামত দিয়ে যাবেন ধন্যবাদ🥀)