শেষ প্রান্তের মায়া পর্ব-২৮ এবং শেষ পর্ব

0
398

#শেষ_প্রান্তের_মায়া
#অন্তিম_পর্ব
#বোরহানা_আক্তার_রেশমী
________________

বিয়ের পর থেকে ক’দিন আমি আরাফের বাড়িতেই ছিলাম। বিয়ের পরেরদিন শুধু মাহিদদের কাছে থেকেছি। তখন কয়েকদিন থাকতে চেয়েছিলাম ওখানে কিন্তু আরাফ সাহেব থাকতে দিলেন না। সবার অগোচরে এসে বললেন, ‘এতো কষ্ট করে বউকে পেয়েছি তাকে তো আর কাছ ছাড়া করছি না আমি। তাই এখানে কয়েকদিন থাকার ইচ্ছে টা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলেন।’

আমি আর কিছু বলিনি৷ পরে যদি এই কথাগুলো সবার সামনে বলে দেয় তখন তো আমার মান সম্মানের একদম অবস্থা খারাপ হয়ে যাবে। বিয়ের জন্য ছুটি নিয়েছিলাম গার্মেন্টস থেকে। মাহিদরা সবাই আমাকে কাজ করতে নিষেধ করলেও মানা শুনিনি। কেনো শুনবো? আমার ওপর নির্ভর করেই তো আমার ভাই বোন গুলো আছে। আরাফ একবার বলেছিলো তার এখানে সবাইকে থাকার জন্য কিন্তু কেউই রাজি হয়নি। একেই তো ছোট ফ্ল্যাট তারওপর আবার ওরা চায় না বোনের বাড়িতে পড়ে থাকতে। আমি জোড় করিনি। ওহ হ্যাঁ! আরাফ আর আমার সংসারে বাড়তি টাকার প্রয়োজন না হলেও মাহিদদের তো দরকার আছে তাই আরাফও আর নিষেধ করেনি। সে বোঝে সবটা। তার একার পক্ষে নিজের বেতনে ২ টা পরিবার চালানো যে অসম্ভব তা আমি বুঝি। মাহিদরা এখনো আমার অসুখের বিষয়টা জানে না। মূলত আমি আর আরাফই সবটা গোপন রেখেছি। ওরা জানলে ভেঙে পড়বে। দীর্ঘশ্বাস ফেলে সামনে তাকাতেই দেখলাম আরাফ আসছে। একটু আগেই গার্মেন্টস ছুটি হয়েছে। আমরা দুজন রোজই একসাথে বাড়ি ফিরি। এই যে ক্লান্তির শেষে যখন এসে দেখি আরাফ হাসি মুখে আসছে তখন যেনো সব ক্লান্তি উবে যায়। প্রশান্তিতে ভরে আসে মন। তার হাসি দেখলে আমার ঠোঁট দুটো অটোমেটিক প্রসারিত হয়ে যায়। আরাফ আমার কাছে এসে বলে,

‘অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে আছেন? সরি আজ একটু লেইট হয়ে গেছে।’

আমি কোনো কথা না বলে হাসলাম। আরাফের দিকে এগিয়ে শাড়ির আঁচল দিয়ে তার মুখ মুছিয়ে দিলাম। আরাফ বিনিময়ে হাসে। হাত শক্ত করে ধরে রাস্তা পার হয়। কিন্তু কোনোদিকে না এগিয়ে হাত ধরে রাস্তার কিনারায় দাঁড়িয়ে থাকে। আমি চোখ পিটপিট করে উনার দিকে তাকিয়ে বললাম,

‘দাঁড়িয়ে আছেন কেনো? সিহাবের স্কুলে যাবেন না? ‘ও’ একা আছে তো। ওর স্কুল ছুটি হয়ে গেছে নিশ্চয় এতক্ষণে।’

‘নাহ দাঁড়িয়ে নেই। মাহিদ এসে নিয়ে গেছে ওকে। আপনি আর আমি আজ ওদের ওখানে যাবো না।’

প্রতিদিনই আমরা সিহাবকে নিয়ে প্রথমে ও-বাড়ি যাই আর তারপর ওখানে কিছুক্ষণ থেকে বাড়ি চলে যাই। কিন্তু আজ যাবো না শুনে অবাক কন্ঠে বললাম, ‘কেনো?’

আরাফ কোনো উত্তর দিলো না। একটা রিকশা নিলো। আমি বার বার জিজ্ঞেস করার পরও যখন উত্তর দিলো না তখন হতাশ চোখে তার দিকে তাকিয়ে থাকলাম। রিকশা এসে থামে একটা ক্লিনিকের সামনে। উনি রিকশা ভাড়া দিয়ে এগোতে নিলে হাত টেনে ধরলাম। উনি তাকাতেই জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললাম,

‘এখানে কেনো?’

‘গেলেই তো দেখতে পাবেন। চলেন!’

উনি হাত ছাড়িয়ে নিয়ে নিজে আমার হাত ধরলেন। শক্ত করে হাত ধরেই ৩ তলায় আসলেন। ডক্টরের চেম্বারের সামনে দাঁড়িয়ে একটা লোকের সাথে কথা বললেন। সম্ভবত এপোয়েন্ট নেওয়া ছিলো তাই আমাদের ভেতরে ঢুকতে দিলেন। ডক্টর আমাদের দেখে বসতে বললেন। আরাফ কি আমার বিষয়ে কথা বলতে আসছে! হাত শক্ত করে বসে রইলাম। আরাফ নিজের ব্যাগ থেকে একটা রিপোর্ট বের করে ডক্টরকে দিলেন। তিনি রিপোর্ট দেখে বললেন,

‘রিপোর্ট দেখলাম। আপনার ওয়াইফের ব্লাড ক্যান্সার।’

‘জ্বি স্যার বাট আমি আরো একবার ওর সব টেস্ট করাতে চাই।’

আমি তাকালাম আরাফের দিকে। চোখে মুখে রাজ্যের চিন্তারা ঝেঁকে আছে। আমি উনার হাত ধরতেই এক পলক তাকিয়ে ডক্টরের সাথে কথা বলায় মন দিলেন। উনার ঠিক কি কারণে আবারও টেস্ট করতে চাওয়া তা হাজার ভেবেও খুঁজে পেলাম না। ডক্টর উনার কথা শুনে কয়েকটা টেস্ট দিলেন। এরপর উনি আমাকে নিয়ে সব টেস্ট করালেন। আমি শুধু চুপচাপ আরাফের কথা মতো টেস্ট করিয়ে নিলাম। সে আশা নিয়ে আছে যদি ভুল হয় রিপোর্ট টা। কিন্তু আমি তো জানি ওটা ভুল নয়। ডক্টর ম্যাম তো বলেছিলেন তিনি কয়েকবার টেস্ট করিয়েছে।

রিপোর্ট আসতে বেশি একটা সময় লাগলো না। আরাফ কাঁপা কাঁপা হাতে রিপোর্ট টা দেয় ডক্টরের কাছে। মানুষটা টেনশনে এলোমেলো হয়ে আছে। চোখ দুটো লাল টকটকে হয়ে আছে। মনে মনে হয়তো সহস্রবার সৃষ্টিকর্তাকে ডেকেছে। তার মুখ দেখে আপন মনেই বের হয়ে যায়, ‘ইশশ যদি সত্যিই আমার রিপোর্টটা ভুল হতো!’ কিন্তু আদৌও তা কি হয়? তা হতে তো মিরাক্কেলের প্রয়োজন, বাস্তবে তো মিরাক্কেল হয় না। দীর্ঘশ্বাস ফেলে ডক্টরের দিকে তাকাতেই তিনি কপালে হাত দিলেন। চিন্তিত কন্ঠে বললেন,

‘এর আগে টেস্ট করিয়েছেন কোথায়?’

আমি আগের হসপিটালের নাম বললাম। আরাফ ব্যস্ত হয়ে জিজ্ঞেস করে, ‘খারাপ কিছু ডক্টর? আপনাকে এতো চিন্তিত দেখাচ্ছে কেনো?’

‘আপনার ওয়াইফের রিপোর্ট তো নরমাল। শুধু একটু হিমোগ্লোবিনের প্রবলেম আছে। ওটা তেমন কোনো বড় সমস্যা না। বাট আগের রিপোর্টে তো ব্লাড ক্যান্সার!’

আমার মাথা ঘুরিয়ে আসে। নির্বাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম রিপোর্টের দিকে। স্বপ্ন দেখছি নাকি সত্যি এটা! আরাফের দিকে তাকিয়ে দেখি সে নিজেও এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। আমি ডক্টরের দিকে তাকিয়ে কাঁপা কাঁপা গলায় বললাম,

‘কিন্তু আগের রিপোর্ট! ‘

ডক্টর কপালে ভাজ ফেলে বলে, ‘সেইটাই তো ভাবছি ম্যাম। আগের রিপোর্টে যেখানে ব্লাড ক্যান্সার সেখানে এই রিপোর্টে সব নরমাল!’

‘কিন্তু ডক্টর ম্যাম তো বলেছিলেন তারা আমার রিপোর্ট টা কয়েকবার টেস্ট করিয়েছে। তাহলে?’

ডক্টর আমাকে আরো একবার টেস্ট করাতে বললেন। আগের স্যাম্পল বাদ দিয়ে নতুন করে আবার স্যাম্পল নিলেন। তারপর রিপোর্ট আসলো প্রায় অনেকটা সময় পর। আরাফ আর আমি বার বার একে অপরের দিকে তাকাচ্ছিলাম। টেনশনে উনার কপালের ঘাম ছুটছে। আরাফ আমার হাত শক্ত করে ধরলেন। এতক্ষণে সে একটাও কথা বলেনি। এবারও রিপোর্ট টা নরমাল আসলেন। এবার ডক্টর সিউর হয়ে বললেন আমাার আগের রিপোর্ট টা ভুল। রিপোর্ট টা দেখেই আমার চোখের কোণ দিয়ে অটোমেটিক পানি গড়িয়ে পড়লো। ভাঙা ভাঙা ভাবে বললাম,

‘ম্যাম যে বলেছিলেন আমার রিপোর্ট টা বার বার টেস্ট করা হয়েছিলো সেইটা!’

‘অনেক সময় হসপিটালে ভীড়ের কারণে একজনের স্যাম্পলের সাাথে অন্যেরটা গুলিয়ে যায়। এবং রিপোর্ট খারাপ আসলেও সেই স্যাম্পলই বার বার টেস্ট করা হয় এবং এর কারণেই আপনার রিপোর্টে বার বার ব্লাড ক্যান্সার এসেছে।’

‘তাহলে আমার বমির সাথে রক্ত যাওয়াটা এবং বিশেষ সময়ে যে ব্লিডিং টা!’

‘ওটা স্বাভাবিক। অনেক সময় গাইনী কিছু কারণে ব্লিডিং বেশি হয়। বোমিটিং টা হয়তো আপনার অসুস্থতার জন্য। আর আপনার হিমোগ্লোবিনের যে প্রবলেমটা তার জন্য ট্রিটমেন্ট নিলে এবং ব্লাড নিলেই সুস্থ হয়ে যাবেন।’

ডক্টর প্রেসক্রিপশন করে দিলেন। আরাফ পুরোটা সময় স্তব্ধ হয়ে ছিলেন। যখন চেম্বার থেকে বের হলাম খেয়াল করলাম আরাফের শরীর অস্বাভাবিক ভাবে কাঁপছে। উনার হাত ধরে বললাম,

‘আরাফ কি হয়েছে? ঠিক আছেন?’

উনি আমার কথার উত্তর দিলেন না। কিছুক্ষণ আমার দিকে তাকিয়েই হুট করে জড়িয়ে ধরলেন। হুট করে ধরায় ভারসাম্য হারিয়ে পড়ে যেতে নিয়েও নিজেকে সামলে উনাকে ধরলাম। আরাফের পিঠে হাত রাখতেই খেয়াল করলাম ঠান্ডা কিছুর স্পর্শ। ভিজে যাচ্ছে আমার কাঁধ। আরাফ কাঁদছে! অবাক হলাম। ব্যস্ত গলায় শুধালাম,

‘কি হয়েছে আরাফ? কাঁদছেন কেন? কথা বলেন!’

আরাফ বাচ্চাদের মতো কান্না করতে শুরু করলেন। ভাঙা গলায় বললেন, ‘উপরওয়ালা বোধহয় আমার দোয়া কবুল করেছেন মায়া। আমার থেকে কেড়ে নেননি আপনাকে।’

আমার জন্য কাঁদছে আরাফ! অজান্তেই চোখ থেকে টপটপ করে জল গড়ালো। শক্ত করে জড়িয়ে ধরলাম আরাফকে। এই মানুষটাকে আজীবন এভাবেই চাই আমি। এই মানুষটা আমার সাথে এভাবেই জুড়ে থাকুক। এভাবেই ভালোবাসুক আজীবন। জীবনে হাজারটা কষ্টের পর একটুকরো সুখ পেয়েছি। ভালোবাসা পেয়েছি। জীবন এভাবেই চলুক। সময় যাক। শত খারাপ সময়ের পর যেনো এই মানুষটার হাত ধরেই বাঁচতে পারি। যেনো এই মানুষটাকে নিয়েই আমি বছরের পর বছর কাটাাতে পারি।
______

কেটেছে অনেকগুলো দিন। নিয়মিত ওষুধ নেওয়ার জন্য মোটামুটি আমি এখন সুস্থই। জীবন এখনো আগের ছন্দেই চলছে। শুধু আরাফের জোড়াজুড়িতে আরো একবার পড়ালেখার মুখ দেখা হয়েছে। তার কথা কলেজ না গেলেও অন্তত পরীক্ষার সময় যেনো পরীক্ষা টা দিয়ে আসি। আর তাছাড়া মাহমুদা তো আছেই হেল্প করার জন্য। কয়েকদিন থেকে মাহিদদের কাছে এসে থাকছি। আরাফের সাথে অনেক জোড়াজুড়ির পর সে আসতে দিয়েছে। তবে অভিমানে গাল ফুলিয়ে আছে এখনো। প্রতিদিনই আসে। কিন্তু আমার সাথে ঠিকভাবে কথা বলেনা। তার নাকি বউ ছাড়া ঘুম হয় না। সোহান ভাই ফাজলামি করে জিজ্ঞেস করেছিলো,

‘কি ভাই মুখের ওই দশা কেন? বউ এখানে বলে কি বাসায় মন টেকে নাা?’

জনাবের সরাসরি উত্তর, ‘বউ ছাড়া আমার রাতে ঘুম হয় না সোহান ভাই। যদি বউকে হারিয়ে ফেলি!’

একথা নিয়ে তিন্নি আমাকে পচাতে পচাতে শেষ করে ফেলেছে। বিকেলের দিকে বসে তিন্নি, মাহমুদা, মাইশা আর তিন্নির মেয়ে স্নেহার সাথে আড্ডা দিচ্ছিলাম। যদিও মেয়েটা আড্ডার ‘আ’ টাও বোঝে না তাও ওকে আড্ডায় রেখেছি মানে সেও আছে আমাদের আড্ডায়। এর মধ্যে হাজির হলেন আব্বা-মা। তাদের দেখে চমকালাম। অনেক দিন পর তাদেরকে দেখে বুকের বাম পাশে ব্যাথা করতে শুরু করে। অনেক কষ্টে নিজেকে সামলে দাঁতে দাঁত চেপে সেখানেই পড়ে রইলাম। মা মাইশাকে কাছে টেনে আদর করলেও মাহমুদা বা আমি এগোলাম না। তিন্নি কিছু না বলে স্নেহাকে নিয়ে দাড়িয়ে রইলো। আব্বা কাছে এসে বললেন,

‘আব্বা-মায়ের ওপ্রে এখনো রাইগা থাকবি? নাহয় করছে তারা একটা ভুল তাই বইলা এখনো তাদের পর কইরা দিবি!’

মাহমুদাা আমার মুখের দিকে তাকালো। আমি ওর দিকে একবার তাকিয়ে বললাম, ‘ছেলেমেয়ের কাছে আসছেন তাদের সাথে থাকেন। তারা পর করেনি। আমি তো আপনাদের মেয়ে না তাই পর করার কথা আসেই বা কোথা থেকে!’

‘এখনো রাইগা থাকবি মা? মাফ কইরা দে আমাগো।’

আমি হেঁসে দিলাম। আব্বার দিকে তাকিয়ে বললাম, ‘রাগ কার ওপর করবো? আপনাদের ওপর! নাহ নাহ। আপনাদের ওপর আমার রাাগ নেই। কোনো অভিযোগও নাই। আপনারা যা করছেন তা না করলে বোধহয় এতো ভালো জীবনসঙ্গী পেতাম না। আপনারা তাড়িয়ে দিয়েছেন বলেই তো বাস্তবতা চিনেছি।’

আব্বা মাথা নিচু করে বললেন, ‘আমগোরে এত্তোই পর কইরা দিছোস যে বিয়া করলি একটাবার জাানাইলিও না!’

‘পর করিনি তো। আমার কাছে আমাার আব্বা-মা মৃ’ত। তারা অনেক আগেই মা’রা গেছে। আমি আমার অতীতকে অতীতেই ফেলে এসেছি। আপনারা যা করেছেন তারপর আমি পারবো না ক্ষমা করতে। আপনারা আমার কাছে মৃ’ত ছিলেন, আছেন আর সবসময় মৃ’তই থাকবেন।’

‘তুই এতোডা কঠিন হইতো পারবি?’

তাচ্ছিল্যের সুরে হেঁসে বললাম, ‘কোনো আব্বা যদি তার মেয়েকে মে’রে রক্তাক্ত করতে পারে আর আমি সামান্য কঠিন হতে পারবো না!’

আব্বা-মা আর কোনো কথা বললেন না। তারা থাকা সময়টাতে আমি দরজা আটকে বসে রইলাম৷ আরাফ, মাহিদ ফিরলেই আমি ব্যাগ গুছিয়ে আরাফের সাথে বের হলাম। মাহিদ একদফা চেচামেচি করলে ওকে শান্ত করলাম৷ ওদের সাথে তো আর খারাপ কিছু করেনি। যা হয়েছে আমার সাথে হয়েছে। আরাফ উনাদের দেখে আমাকে আর একা ছাড়লো না। জোড় দিয়েই বললেন বাড়ি যেতে। আব্বা-মা আরাফের সাথে কথা বলতে আসলে ভদ্রতার খাতিরে সে টুকটাক কথা বলেছে। আমি আরাফের সাথে বের হয়ে আসলাম। আমি আমার অতীত থেকে বেড়িয়ে এসেছি৷ ওই অতীত আর সামনে পড়তে দিবো না। আমি তাদের প্রত্যেকটা ব্যবহার মনে রেখেছি। আমি তাদের নিজের কাছে মৃ’ত মেনে রেখেছি। হ্যাঁ হয়েছি আমি পা’ষাণ, নি’ষ্ঠুর। তবে আমি এমনই ভালো।
__

মধ্যরাতে আরাফের জন্য কফি বানিয়ে ব্যালকনিতে আসলাম। আরাফ আমার মুখের দিকে তাকিয়ে বললো, ‘কষ্ট হচ্ছে?’

আমি মুচকি হেঁসে বাহিরে নজর দিয়ে বললাম, ‘নাহ। কষ্ট হচ্ছে না। আর হয় না কষ্ট। তাছাড়া এখন আরাফ সাহেব আছে না কষ্ট উপশমের জন্য!’

আরাফ হেঁসে কফিটা রাখে। পেছন থেকে জাপ্টে ধরে কাঁধে থুতনী রাখে। ঘাড়ে চুমু খেয়ে বলে, ‘আমি কিন্তু এখনো অভিমান করে আছি। আপনি আমার অভিমান দেখেও চুপচাপ ওখানে থেকেছেন। এজন্য আরো আরো আরো বেশি অভিমান জমেছে।’

আমি পেছনে ফিরলাম। আরাফের কপালে চুমু দিয়ে গলা জড়িয়ে ধরে বললাম, ‘তা এখন আমি কি করতে পারি সাহেবের জন্য? কি করলে তার মান ভাঙবে শুনি!’

আরাফ ঠোঁটে দুষ্টু হাসি এনে ফিসফিস করে বলে, ‘বাবা ডাক শুনাতে হবে।’

আমি চট করে উনার গলা ছেড়ে দিলাম। আরাফ দুষ্টু হেঁসে চেপে ধরলেন। কাতুকুতুতে হেঁসে ফেললাম। হাসতে হাসতেই বার বার বললাম, ”নাহ একদম নাহ।’
আরাফ কবির মতো করে বলে,
‘আপনি আমার শুরু
আপনিই আমার শেষ,
আপনাকে নিয়ে স্বপ্ন
আপনাকে নিয়েই দুঃস্বপ্ন,
আপনি আমার হাজার চাওয়ার ভীড়ে একটুকরো সুখ
আপনিই আমার যত ভুলের একটুকরো দুখ,
আপনাতেই শান্তি
আপনাতেই শাস্তি,
আপনাতেই আমার যত চাওয়া পাওয়া
আপনিই আমার শেষ প্রান্তের মায়া।’

ব্যালকনিতেই একজোড়া দম্পতি তাদের খুনশুটি শুরু করে। খিলখিল হাসির শব্দে মেতে ওঠে পরিবেশ। মুহুর্তেই মিশে যায় একে অপরে। আজীবনই যেনো এভাবেই থাকে তাদের দিনগুলো। হাজারটা কষ্টের পর দুজনই সুখ পেয়েছে। ভালো থাাকুক শেষ প্রান্তের মায়ারা। প্রকৃতির কাছে যারা নিঃশেষ হয়ে যায় তারা ওপারে নিজের মানুষটাকে পাক। আরাফ-মায়ার মতো তারাও কখনো না কখনো এক হবে।

সমাপ্তি..
(আসসালামু আলাইকুম। ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। পাঠক/পাঠিকার জন্য কিছু কথা,
১) হঠাৎ অন্তিম পর্ব দেখে হয়তো অনেকেই চমকাবেন। তার জন্য দুঃখিত। গল্পটা একটা সীমার মধ্যেই ইতি টেনেছি। গল্পটার জন্য আমার ইচ্ছে ছিলো স্যাড এন্ডিং কিন্তু পাঠক/পাঠিকার এতো এতো রিকুয়েষ্ট ফেলতে পারিনি। পিচ্চি একটা মানুষ তো তাই কারো অনুরোধ ফেলতে পারি না🥹। তো মূলকথা হলো যে, গল্পে আমি কমবেশি শিক্ষামূলক অনেক কিছুই রেখেছিলাম তা অনেকেই বুঝবে আবার অমনোযোগীতার জন্য অনেকে এড়িয়ে যাবে। আমাদের দেশে এমন হাজার মায়া আছে যারা যৌ’তুকের জন্য শ্বশুরবাড়িতে অ’ত্যা’চা’রের শিকার। আবার ডিভোর্সীর জন্য সমাজ তাদের হেয় করতে করতে একদম নীচ করে ফেলে। আমাদের দেশের মেয়েদের জন্য পড়ালেখাটা ভীষণ জরুরি। সব মেয়ের জীবন যে মায়ার মতো হবে এমন কোনো কথা না থাকলেও সবাই যে সুখী হবে এমনও কোনো কথা নেই। ইদানীং সময়ে ডিভোর্সের সংখ্যাটা বেশি। তাই আমি মনে করি মেয়েদের জন্য নিজেকে সাবলম্বী করাটা ভীষণ জরুরি। আমি গল্পে সবরকম চরিত্র তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। সবার বাবা মা মায়ার বাবা-মায়ের মতো হয় না। এই যে মিতার বাবা-মা তাকে সাপোর্ট করেছে আবার একই ভাবে মায়াকে তার ভাই বোন সাপোর্ট করলেও মিতা তার ভাই বোনের সাপোর্ট পায়নি। সবাই তিন্নির মতো প্রতিবেশী পায় না। মিতা, সোমা, হেনা আপা এদের মতো বন্ধুও হয় না। নিজের লড়াই নিজেকেই লড়তে হয়। ভেঙে না পড়ে অবশ্যই সব পরিস্থিতিতে আল্লাহর ওপর ভরসা রাখতে হবে। তিনি কষ্ট দিলে তিনিই সুখ দেওয়ার মালিক। ‘আরাফ’ চরিত্রটা গল্পের স্বার্থে দিয়েছি আসলে বাস্তবে আরাফের মতো কাউকে পাওয়া যায় না। ডিভোর্সী মেয়ের যদি অবিবাহিত কারোর সাথে বিয়ে হয় তা নিয়ে যেনো সমাজে একটা হাসাহাসির কলরব পড়ে যায়। তবে সমাজের কথা ভেবে কখনোই নিজেকে সরানো যাবে না। মানুষ বলবেই তাই বলে নিজেকে দুর্বল করলে কোনো কালেই চলবে না। আমরা অসুস্থ হলে কেউ ওষুধ এগিয়ে দিবে না অথচ ম’রে গেলে শোক প্রকাশ করবেই। তাই সমাজকে এড়িয়ে চলতে পারলেই জীবন সুন্দর। অনেক কিছু বলে ফেলেছি এবার যাই গা।

২)গল্পের শেষটা হয়তো এলোমেলো হয়েছে তার জন্য দুঃখিত। সবাই একটু মানিয়ে নিবেন। আর আপনাদের জন্য যে স্যাড বাদ দিয়ে হ্যাপি এন্ডিং দিলাম তার জন্য চক্কেত দিবেন আর সাথে নাইস/নেক্সট বাদ দিয়া ইয়া বড় বড় মন্তব্য দিবেন নাইলে কানমু হু!
সবশেষে, এটাতে যেভাবে পাশে ছিলেন ভবিষ্যতেও এভাবে পাশে থাকবেন। আল্লাহ হাফেজ। সবাই ভালো থাকবেন। টাটা)