সে আমার মায়াবতি পর্ব-২০+২১

0
910

#সে_আমার_মায়াবতি
#লেখনিতে_ঈশা_ইসলাম
#পর্ব_২০
সেই কখন থেকে উনি নিজের চুল খামছে ধরে পাইচারি করছে।আমি বেডে বসে দেখছি আমার এতটুকু ব্যথায় লোকটার কেমন পাগল পাগল অবস্থা। যদিও ডা. আমাকে চেকাপ করেছে। আমি ওনার কাছে যতবার যেতে চেয়েছি, ততোবার উনি আমাকে ধমকে বসিয়ে রেখেছেন।তাই কিছু একটা ভেবে একটু সাহস নিয়ে বললাম —

— মিঃ চৌধুরী শুনছেন? আ আপনি এমন করছেন কেন। আমি এখন ঠিক আছি। শুনুন না-

উনি হুট করেই থেমে গিয়ে, আমার দিকে এক পলক তাকিয়ে দ্রুত মেইড কে খবর দিলো। ওনার চিৎকারে বাড়ির সবাই হাজির হয়। আমি দড়জায় তাকাতেই দেখলাম সেই মেইডটা যে সকালে হাতে গরম কফি ফেলেছিলো। অবশ্য উনি ইচ্ছে করে সেটা করে নি। তার ভয় পাওয়া মুখটা দেখেই বলা সম্ভব। উনি ভয়ে ভয়ে মিঃ চৌধুরীর সামনে এলে উনি হুংকার ছেড়ে বললেন-

— মিস শেফালি, আপনি এতটা ইরেন্সপসেবল কিভাবে হলেন। আজ আপনার জন্য ওর হাতের কি অবস্থা দেখতে পারছেন। স্পিক আপ। ইউ সি দ্যট? ( চিৎকার করে)

আমি ওনার রাগ দেখে বিছানার চাঁদর খামছে ধরি। আচ্ছা আমি কখনো ভুল করলে উনি কি আমার সাথেও এমন করবেন? এসব ভেবে সামনে তাকাতেই দেখলাম, সেই মেইড হাজির। উনি কাপতে কাপতে বললেন-

— স্য স্যার আর হ হবে না। আমি ম্যম এর থে থেকে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি।( মাথা নিচু করে)

— সরি? আপনি সরি বললেই কি ওর হাত ঠিক হয়ে যাবে? নাকি ওর ব্যথা কমে যাবে৷ স্পিক আপ৷ আই সোয়ের আজ জদি আপনি মেয়ে না হয়ে ছেলে হতেন তাহলে আমি আপনাকে এর জন্য একচুল ছাড় দিতাম না। আজ থেকে আপনি আর এখানে জবের জন্য আসবেন না। আপনার পেমেন্ট নিয়ে আপনি চলে যেতে পারেন। ( মিঃ চৌধুরী)

— আহ আরাভ শেফালি বুঝতে পারে নি। এইভাবে ওকে তাড়িয়ে দিও না। ( আম্মু)

— নো মম , আমি এক রিসক্স আর নিতে চাই না। সো লিভ হার।

আমি ভাবতেও পারছি না। সামান্য কারনে ওনি এত রিয়েক্ট করবে। কিন্তু আমার জন্য একজন নিরঅপরাধ মানুষ না খেতে পাক, আমি চাই না। ওনার তো কোন দোস নেই, তাহলে শুধু শুধু উনি কেন শাস্তি পাবে? উনি যে এক কথার মানুষ সেটা সবাই জানে। কেউ বাধা দিবে না৷ তাই যা করার আমাকেই করতে হবে। আমি জানি না এই তেজ আর অধিকার আমার কোথায় থেকে জন্ম নিলো। মিস শেফালি ঘুরে চলে যাবার আগেই আমি বলে উঠি –

— দাড়ান আপনি!

আমার কথায় উনি সহ বাকি সবাই অবাক হয়ে তাকায়। মিঃ চৌধুরী ভ্রু কুচকে আমার দিকে তাকাতেই আমি আস্তে করে দাঁড়িয়ে ওনার কাছে গিয়ে মাথা নিচু করে বলি –

— আপনি তো বলেছেন মিঃ চৌধুরী, যে এই বাড়ি, সংসার আর প্রতিটা মানুষ আমার নিজের। তাহলে নিজের মানুষ ভুল করলে কি বাড়ি থেকে বা মন থেকে মুছে ফেলা যায়?

— কি বলতে চাও জান৷ ( হাত ধরে)

আমি ওনার চোখের দিকে তাকিয়ে বলি –

— আচ্ছা আজ যদি আমি কোন ভুল করি আপনি কি আমাকেই বের করে দিবেন?

— ঈশু পাখি তুমি আমার জিবন। আমার দিকে তাকিয়ে বলো তো আমাকে কি মনে হয় আমি তা করবো? না জান বাকি সবার কাছে এই আরাভ চৌধুরী একজন স্ট্রেট ম্যন হলেও তোমার কাছে সম্পুর্ন সে একজন দূর্বল মানুষ। প্লিজ জান ডোন্ট সে এগেইন।

আমি বুঝলাম আমি এবার ও তার জিদের উর্দ্ধে। তাই মুচকি হেসে বললাম —

— তাহলে ওনি থাকুক প্লিজ। আই প্রমিস আমিও শান্ত হয়ে চলবো। নিজের খেয়াল রাখবো। প্লিজ মিঃ চৌধুরী!

— সসস পাখি,।তুমি যা বলবে তাই হবে। ( গালে হাত দিয়ে)

ওনার এই আচরনে আমি লজ্জা পেয়ে সামনে তাকাতেই দেখি মেইডরা সহ, আপু আম্মু মায়া হা করে তাকিয়ে আছে।তাই আমি হালকা হেসে, মিস শেফালির কাছে গিয়ে বললাম-

— আমি দুঃখিত আন্টি। আসলে আমার জন্য আপনার এত কিছু সাফার করতে হলো। আন্টি আপনি কোথাও যাবেন না প্লিজ। আপনার হাতের কর্ন স্নেস্কটা আমার খুব ভালো লাগে। আপনি চলে গেলে আমি খুব মিস করবো। ( মুচকি হেসে)

মিস শ্যফালি কান্না করে দিলেন। আমার মাথায় হাত দিয়ে বললেন –

— আই উইস তুমি খুব ভালো থাকো। আমি জানি এই বাড়ির সবাই খুব ভালো। বড় স্যার ও ভালো। আমি ভুল করেছি তাই আমাকে চলে যেতে বলেছে। কিন্তু আমি এ বাড়িতে ১১ বছর আছি। বাড়ির প্রত্যকটা মানুষ খুব ভালো মা। আমি দোয়া করি তুমি সুখি হও। (মিস শেফালি)

— আন্টি এ বাড়ির মানুষ গুলো সত্যি অনেক ভালো। আল্লাহ সত্যি আমার কপালে খুব সুখ লিখে দিয়েছে। কিন্তু এবার আমার খুব ক্ষিদে পেয়েছে। ( ঠোঁট ফুলিয়ে)

আমার কথায় সবাই হালকা হাসলেও, মেইড রা মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। আমিও মুচকি হাসলাম। এর মাঝেই মায়া আর আপু আমাকে বেস্ট অফ লাইক জানালো। আম্মু কাছে এসে কপালে চুমু দিয়ে বললেন –

— আমি জানি না মা কি ভালো কাজ আমি করেছি যার জন্য এমন লক্ষি একটা মেয়ে পেয়েছি। আমার যে ছেলে কাজ ছাড়া থাকতে পারতো না। সে আজকাল সময় পেলে কাজ করে। সবচেয়ে বড় কথা এত মেয়েদের ছবি দেখিয়েছি, কত মেয়েরা বিয়ে করতে চেয়েছে সে ফিরেও তাকায় নি। আজ তোমার এক্সিডেন্ট এ আমরা বুঝতে পেরেছি আমার রাগি ছেলেটাও কারো প্রতি দূর্বল।যার কথায় শেষ কথা হয় তার কথা আজ তুমি পালটে দিলি মা। তুই যে পাথরের বুকে ফুল ফুটিয়েছিস রে। আমার ছেলে যে তার ঈশু পাখিতেই মুগ্ধ। ভালো থাকিস তোরা আজিবন।

আম্মুর কথায় লজ্জা পেলাম। আসলেই তো এই ঘারতেরা লোকটা এত নরম হয়ে যাচ্ছে কেন দিন দিন? আস্তে আস্তে সবাই চলে গেলো। একটু পর যেহুত গেস্ট আসবে তাই যে যার কাজে গিয়েছে। আচ্ছা উনি কি আমার ওপর রাগ করেছে? তাহলে আমার সাথে কথা বলছে না কেন? নিজের ভাবনায় নিজেই অবাক হলাম, আমি কি সত্যি ওনার প্রতি দূর্বল নাকি ভালোবাসতে শুরু করেছি মিঃ চৌধুরী কে?

আমি আর কিছু না ভেবে ওনার সামনে গিয়ে দাড়াতেই উনি ল্যপটপ নিয়ে সোফায় বসে গেলেন। আমি কি সত্যি ওনাকে আমার অজান্তে কষ্ট দিয়ে ফেললাম? তাহলে আমার সাথে কথা বললো না কেন?আমি গুটিগুটি পায়ে ওনার সামনে গিয়ে শাড়ির আচল পেচাতে পেচাতে বলি–

— শুনছেন? আপনি কি রাগ করেছেন আমার ওপর?

——–

— আব আমি আসলে চাই নি ওনি আমার জন্য কষ্ট পাক। মিঃ চৌধুরী শু শুনছেন।

এবার আর মানতে পারলাম না, চোখের কার্নিস বেয়ে নোনাজল গড়িয়ে পরলো।
তাই আবার বলে উঠলাম —

— আমি কি খুব বি বিরক্ত করি আপনাকে? আচ্ছা আ আপনার কথা শুনি নি তাই রাগ করেছেন? আ আচ্ছা আমি চলে যাবো চাচ্চুর কা কাছে।

——————

এদিকে এনা দড়জার বাহিরে দাঁড়িয়ে সব দেখছিলো। সবাই আমার প্রশংসা করাতে সহ্য না করতে পেরে জ্বলে উঠে। কিন্তু মিঃ চৌধুরীর করা ব্যবহারে তার চেহারায় সয়তানি হাসি ফুটে ওঠে। নিজেই বলতে লাগে –

— বাহ এক ঢিলে দুই পাখি। আহারে বেচারি ঈশা, সবার কাছে প্রশংসার রানি হলেও নিজের রাজার কাছে যে কিছুই না গো? ইশ আফসোস হচ্ছে তোমার জন্য, আহারে শেষ এ কিনা বাড়ির সকলের চোখে ভালো হওয়ার জন্য নিজের স্বামীর কাছেই হেরে গেলে? ঠিক এই ভাবেই এভাবেই তোমার থেকে আরাভ মুখ ফিরিয়ে নিবে দেখে নিও। ( সয়তানি হেসে)

আমি আর কিছু না বলে সামনে এগিয়ে যাওয়ার সময় কেউ হেচকা টানে তার বুকে নিয়ে ফেলে। আমি হাতে ব্যথা পেলেও দাত চেপে সহ্য করে নেই। সেই চিরচেনা মানুষটার স্পর্শ পেয়ে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কেঁদে উঠলাম – উনি খুব যতনে আমাকে আগলে নিলেন। কপালে চুমু দিয়ে বললেন –

— হ্যা জান রাগ করেছি আমি। খুব রাগ করেছি, কারন কি জানতে চাও তবে শোনো এই পিচ্চি মেয়েটা আমার রাগের কারন। সে আমাকে প্রতি মুহুর্তে একটা নতুন ঈশু পাখির প্রতিবিম্ব দেখায়। আচ্ছা বলো তো আমি তো একজনকেই ভালো বাসি। তাহলে এত ঈশু পাখিকে সামলানো যে বড্য দায় গো পরি। আজ আমার জান নিজে থেকে অধিকার দেখিয়েছে। সে তার প্রেমিক পুরুষ এর মনে আরেক অনূভুতির বেড়াজাল সৃষ্টি করেছে। প্রেমে পরেছি জান আমি আবার প্রেমে পরেছি।

আমি হ্যবলার মতো লোকটার দিকে তাকিয়ে আছি। কি বলে উনি? এদিকে আমি অভিমানে হারিয়ে ফেলেছি নিজেকে আর উনি আমাকে নিয়ে কাব্য রচনা করছেন। উনি ঠোঁট কামরে হেসে আমাকে উচু করিয়ে ঠোঁটে গভির চুমু দিলেন আর আমি বরফ হয়ে জমে আছি। উনি কি করলো আমার সাথে?
আমি তাকাতেই বললো-

— এই মেয়ে এভাবে তাকাবে না বললাম? নাহলে কিন্তু!

— না নাহলে ( ভয় পেয়ে)

— আবার জড়িয়ে ধরে চুমু খাবো ( চোখ টিপ দিয়ে)

লোকটা আমাকে ফ্লাইং কিস ছুড়ে দিয়ে ল্যপটপ নিয়ে বারান্দায় চলে গেলো –
আমি ভাবছি উনি এমন বাচ্চামো করছেন কেন? নিজের ভাবনায় হেসে দিলাম। একটু পর যেহুত গেস্ট আসবে রেডি হতে হবে। এমনিতেই শাড়ি পড়তে পারি না তার ওপর হাতের এই অবস্থা তাই চাই না লোকটা আর আমাকে জ্বালাতন করুক এজন্য কাবার্ড থেকে শাড়ি নিয়ে আপুর রুমে চলে গেলাম।
আমি চলে যাওয়ার পর পর্দার পেছন থেকে এনা বেরিয়ে এসে রাগে ফুসতে লাগলো।আমাকে মিঃ চৌধুরীর ইগনোর করা দেখে যেই না হেসেছিলো ওমনি ওনার সব আশাকে জল ঢেলে দিয়ে মিঃ চৌধুরীর আমাকে কাছে টেনে নেয়াতে উনি রেগে ফুসে ওঠেন। আমাকে বকতে বকতে চলে যান নিজের রুমে৷
আপুর রুমে যাওয়ার পর মায়া আর আপু মিলে আমাকে সাজিয়ে দিয়েছে। সাথে নিজেরাও রেডি হয়ে নিয়েছে। একটা অফ হোয়াইট কালার শাড়ি স্টোন পাথরের গহনা পরিয়েছে৷ এবার ডাক এলে নিচে নেমে যাই। নিচে নামতেই দেখি উনি বুকে হাত দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। ওনার এই অবস্থা দেখে হাসি পেলেও চেপে রেখেছি। এর মাঝেই কেউ আমাকে টেনে গালে হাত দিয়ে বলতে শুরু করলেন –

— আমার পরি মা। তুই কেমন আছিস। আমার মা। আমার পরি তো তুই রে!

আমি ওনাকে চিনি না, তাই এদিক সেদিক তাকাতেই দেখলাম একটা লোক এগিয়ে এসে বললো –

— আহ শাহানা কি করছো। ও আমাদের মেয়ে তবে তোমার পরি নয়। বোঝার চেষ্টা করো।( মিঃ রহমান)

— ওহহ আসলে মা আমাকে ক্ষমা করবে, জানো আমারও তোমার মতো একটা মেয়ে ছিলো। কিন্তু হারিয়ে ফেলেছি( কেঁদে দিয়ে)

আমি বুঝলাম ওনার কথাই আব্বু সকালে বলেছেন। তাই আমি আন্টির হাত ধরে বললাম –

— আমি আপনার মেয়ে আন্টি। এই তো মায়া আর সামিয়া আপু ওরাও আপনার মেয়ে৷ কে বলেছে আপনার মেয়ে হারিয়ে গিয়েছে।

আন্টি হেসে দিলেন। আংকেল ও সায় জানালেন। আম্মু আব্বু ও খুশি হলেন। আমাকে আর আপুকে নিয়ে বসালে, আন্টি আমাকে আর আপুকে কতগুলো গিফট বক্স দিলেন। আমি ধন্যবাদ দিলে আমার দিকে আন্টি অনেক টাইম তাকিয়ে থেকে বলে ওঠে

— আমি কি তোমাকে পরি বলে ডাকতে পারি মা।!

আমি মিঃ চৌধুরীর দিকে তাকালে উনি চোখ দিয়ে ইশারা দিলেন। আমিও সায় জানালাম।
তখন একটা ছেলে এসে বললো – আমিও আমার বোনটাকে তাহলে পরি বলবো। আমি তাকাতেই বললেন

আমি ফায়াজ। আর
উনারা আমার বাবা মা। আসলে, আমার বোন পরি ছোট বেলায় হারিয়ে যায়। খুব আদরের ছিলো। তাই বাবা মা শোক কাটাতে পারে নি।অনেক খোজার পরে যখন পায় নি তখন আমাকে নিয়ে পারি দেয় আমেরিকায়। তাই মাঝে মাঝে বিডি এলে আংকেল এর বাড়ি আসি। আব্বু আর আংকেল ক্লোজ ফ্রেন্ড৷ আমার পিচ্চি বোন আর তোমার মাঝে খুব মিল। তাই মা গুলিয়ে ফেলেছে। আমাকে কি ভাইয়া বলা যায় না?

যারা নিজেদের মেয়ে বোনের জন্য এত কষ্ট পাচ্ছে তাই আমি চাই নি তাদের নিরাশ করতে। আমিও হাসি মুখে বললাম —

— ভাইয়া৷ ফায়াজ ভাইয়া৷

ওনার চোখ থেকে দুই ফোটা অশ্রুকনা ঝরে পরলো।বাকিদের ও সেইম অবস্থা।
আবার ফায়াজ ভাইয়া বলে ওঠলো,-

— সরি রে বোন, বিয়েতে আসতে পারি নি। কারন একে বারেই বিডিতে সেটেল্ড হয়ে যাচ্ছি। বিসনেস ওয়ার্ক সব এখানেই হবে তাই আমার বোনের বিয়েতে থাকতে পারি নি৷ তবে তার জন্য এইসব এনেছি। আর তোমাদের জন্য ও৷ চকলেট , গিফট সব আমাদের হাতে দিয়ে দেয়। আমরাও গ্রহন করলাম। তারপর খাবার পালা আরম্ভ হলে, সবাই খেয়ে নিলো।এর মধ্যে মিঃ চৌধুরী লাজ লজ্জার মাথা খেয়ে সবার সামনে আমাকে খায়িয়ে দিয়েছেন। সবাই ব্যপারটা স্বাভাবিক ভাবে নিলেও এনার মুখে আমি আমার জন্য রাগের সংবরন স্পষ্ট দেখেছি।খাওয়া শেষ হতেই মেইড গিফট নিয়ে রাখার জন্য আমাকে ডেকে আনলে, দেখিয়ে দেই। কিন্তু বিপত্তি বাধে যাওয়ার সময়। উনি সামনে এগিয়ে আমাকে কোলে নিয়ে হুট করেই ওনার কোলে বসিয়ে দেয়। আমাকে অবাক করে দিয়ে শাড়ি ভেদ করে পেট জড়িয়ে ধরে৷ ওনার স্পর্শতে আমার সাড়া শরির কেপে ওঠে। আমার কাধে মাথা রেখে ছোট ছোট চুমু দিতে থাকে।ওনার এই স্পর্শে আমার অস্বস্তি আরও বেড়ে গেলো। আমি ওনার হাতের ওপর হাত দিয়ে সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করলেও উনি হাত চেপে ধরে। ধির কন্ঠে বলে ওঠে —

— জান আমি তোমাকে বারন করেছিলাম না – সাদা ড্রেস পরবে না।

— কে কেন আমাকে কি খারাপ লাগছে? ( মন খারাপ করে)

উনি হেসে আমার ঘারে চুমু খেয়ে বলে ওঠে

— মোহনিয় মায়াবতি কি জানে তার এই রুপ আমাকে কতটা পাগল করে তোলে। আমি যে প্রেমিক পুরুষ তার দ্বহনে শেষ হই। আর সাদা ড্রেসে তাকে যে আমার একদম ছুতে ইচ্ছা করে। সে কেন এত বাচ্চা ( চুমু দিতে দিতে)

আমি ওনার চুমু তে কেপে কেপে বলে ওঠি

— আ আমি মোটেও বাচ্চা নই।

— আচ্ছা তাহলে তো তাকে ভালোবাসতে কোন মানা নেই তাই না মায়াবতি?

— আব মিঃ চৌধুরী প্লিজ ছাড়ুন না প্লি প্লিজ আমার

বাকি কথা শেষ করার আগেই এনা হুট করেই নক না করেই আমাদের ঘরে ঢুকে যায়। আর চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে। আমি ওনাকে দেখে প্রথমে অবাক হলেও ঠোঁট টিপে হাসি। আর কেউ না জানুক আমি বুঝতে পেরেছি ওনার আমার বড়ের ওপর নজর আছে। আমি সেটা কিছুতেই মানতে পারছি না। আর যাই হোক আমার মিঃ চৌধুরী কে অন্য কাউকে কেড়ে নিতে দিবো না। আচ্ছা এটাই কি পবিত্র বন্ধন। মাত্র ক- দিনেই ওনার প্রতি দূর্বল হয়ে গিয়েছি। আর যাই হোক এই মানুষটা আমার শুধুই আমার।

#চলবে____________

#সে_আমার_মায়াবতি
#লেখনিতে_ঈশা_ইসলাম
#পর্ব_২১
— কারো ঘরে আসতে হলে যে নক করে আসতে হয়, এতটুকু কমনসেন্স কি তোর নেই এনা?

এনার অপ্রত্যাশিত ভাবে চলে আসাতে আমি চমকে উঠলেও মিঃ চৌধুরী মোটেও চমকায় নি। ওনার কথায় এনা আমার থেকে ঘার ঘুরিয়ে
মিঃ চৌধুরীর দিকে তাকালে মিঃ চৌধুরী আবার বলে ওঠে-

— প্রাইভেসি বলে যে একটা ওয়ার্ড আছে সেটা কি তুই কমপ্লিটলি ভুলে যাচ্ছিস?

— আ আরাভ না আসলে আমি বুঝতে পারি নি। আগে তো তোমার ঘরে এসে আমরা একসাথে গল্প করতাম তাই –

যদিও কথার টোনে আমি বুঝতে পেরেছি যে উনি কথা গুলো আমাকেই শুনিয়ে বলছেন, কিন্তু এই লোকটা আমাকে না ছেড়ে আরও শক্ত করে চেপে ধরে আছে। আমি মুচরোমুচরি করতেই আরেকটু কাছে নিয়ে আসে। এক হাত দিয়ে নিজের চুল ব্রাশ করছে, আরেক হাত দিয়ে আমার পেটে স্লাইড করছে। ওনার এই স্পর্শ আমি মুখ বুঝে সহ্য করছি। তাই আরও জ্বালাতন শুরু করেছে লোকটা। উনি এবার এনার দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলে –

— আগে আমি একা ছিলাম। কিন্তু এখন আমি ম্যরিড। সে যাই হোক এখন তুই যেতে পারিস। ( মিঃ চৌধুরী)

মিঃ চৌধুরীর কথায় এনা রাগি চোখে আমার দিকে তাকিয়ে, বলে ওঠে-

— আমি শুনেছিলাম বাংলাদেশ এর কালচার ভিন্ন আর খুব শালিন। কিন্তু এখানে তো দেখছি তোমার বউ আমাকে দেখার পরেও তোমার কোল থেকে উঠছে না৷ ( এনা)

— কি মিন করতে চাইছিস তুই? আর বউটা আমার। বাড়ি আমার। ওর যখন ইচ্ছে আমার সাথে যা ইচ্ছে তাই করবে। এর জন্য তোকে কইফিয়ত দিতে হবে? প্লিজ এনা তুই অন্তত্য এই জেনেরাসনের মেয়ে হয়ে টিপিকাল কথা বলিস না। ( মিঃ চৌধুরী)

— আব আরাভ আমার না ঘুরতে যেতে ইচ্ছা করছে। তুমি তো বলেছিলে বিডি আসলে আমাকে! ( এনা)

— সেটা আগের কথা ছিলো। আর তোর ঘুরতে যেতে ইচ্ছা করছে, ড্রাইভার আছে, নিয়ে যাবে। যা ঘুরে আয়। নাহলে মায়া কে নিয়ে যা। ( মিঃ চৌধুরী)

— আমি তো তোমার সাথে যাবো। এসো না প্লিজ। দেখো আমরা তো আগেও যেতাম। আমরা তো লং ড্রাইভ এ যেতাম। বারে যেতাম, চলো না আজ যাই।

না অনেক হয়েছে এই এনা ফেনার কথা। আর না৷ সেই কখন থেকে আমার সামনে দাঁড়িয়ে আমার মিঃ চৌধুরী কে নিয়ে কি করেছে তার বিবরন দিচ্ছে। আমি বুঝতে পেরেছি ওনি আমাকে ইচ্ছে করে এগুলো শোনাচ্ছে। তাই আমি আর সহ্য না করে বলে উঠলাম –

— এনা আপু আপনি তো দেখছেন আমরা সময় কাটাচ্ছি। তারপর ও বার বার ওনাকে কেন ডাকছেন? ওনি যাবে না এখন। আর আমাদের প্রাইভেসি দরকার। আপাদত আপনি যেতে পারেন। আর হ্যা হুটহাট কারো ঘরে যাওয়ার আগে নক করে নিবেন।

আমার কথা শুনে এনা তো অবাক হয়েছে। তার চেয়ে বেশি অবাক হয়েছে মিঃ চৌধুরী। উনি আমাকে এতটা তেঁতে উঠতে দেখে এনাকে চোখের ইশারায় চলে যেতে বললেন। এনা হাত মুঠ করে চলে গেলো। আমার কি হয়েছে সেটাই বুঝলাম না। এতটা রেগে গেলাম কেন। উনি আমাকে কোলে নিয়ে নিলেন। কিন্তু আমি ওনার দিকে না তাকিয়ে নিচে তাকিয়ে ছিলাম। বেডে বসিয়ে আমার গালে হাত গলিয়ে বলে উঠলেন —

— জান কি হয়েছে তোমার? আর ইউ ওকে? এভাবে আমার পরিটা রেগে গেলো কেন? তবে যাই বলো ইস তোমাকে এখন পুরো ঝাসি কি রানী লাগছে।

কিন্তু আমি ওনার কথায় সায় দিলাম না। ওনি আরেকটু কাছে টেনে নিয়ে চুল ঠিক করতে করতে বললেন-

— কি হয়েছে ঈশুপাখি? আর ইউ জেলাস? ( ঘার কাত করে)

— না আমি জেলাস না। আপনি এনা ফেনার সাথে কথা বলবেন না। আর মিশবেন ও না।

আমি নিজেই অবাক। হায় আল্লাহ আমি কার সামনে কি বলে ফেললাম? উনি ঠোঁট কামরে হেসে আমার গালে ঠোঁট বুলিয়ে বলে উঠলেন-

— আম ইমপ্রেস। এটা কি আমার ঈশু পাখি তুমি ছিলে?
ওফফ জান সেই আগুন চোখ রাগি চেহারা। আমার যে খেয়ে নিতে ইচ্ছে হয়। ক্যন আই কিস ইউ জান –

বলেই আমাকে কিছু বলার সুযোগ সময় না দিয়ে ঠোঁট এ ঠোঁট ডুবিয়ে দিলেন। আমি যখন বুঝতে পারলাম, তখন হাতপা ছুড়াছুড়ি করলেও কাজ হলো না। ওনি প্রায় ২ মিনিট আমাকে কিস করে শ্বাস নিয়ে বললেন –

— টেস্ট গুড জান। পুরাই গোলাপজামুন। ( এক চোখ টিপ দিয়ে)

আমি কোন মতে শ্বাস নিয়ে দাঁড়িয়ে বললাম –

— অসভ্য আপনি। দিন দিন আপনি ভারি অসভ্য হয়ে যাচ্ছেন মিঃ চৌধুরী।

বলে এক মুহুর্ত দেরি না করে ঘর থেকে দৌরে বের হয়ে গেলাম। উনি বুকে হাত দিয়ে মুচকি হেসে বলে উঠলেন-

— তোমার জন্য আমি শুধু অসভ্য না জান। অসভ্যের লেভেল পার করতে পারি।

এদিকে এনা রাগে গজ গজ করতে করতে ঘরে এসে চোখ বন্ধ করলে আমার আর মিঃ চৌধুরীর খুনঁশুটির কথা মনে করে ফ্লাওয়ার ভাজটা ছুঁড়ে মারলেন। রাগে রি রি করতে করতে বললেন —

— আহহহ পারছি না আমি এসব সহ্য করতে। ঈশাআআ ছাড়বো না তোমায়। আমার আরাভ কে কেড়ে নিয়ে খুব সুখে আছো তাই না? আমার আরাভ আমাকে বলে তোমার জন্য প্রাইভেসি লাগবে? জাস্ট ওয়েট করো আমি তোমাকে ছুঁড়ে আরাভ এর লাইফ থেকে ফেলে দিবো।
আরাভ শুধু আমার।শুধুই আমার।

এনা কাদঁতে কাদঁতে নিচে বসে কথাগুলো বললো।
আমি ঘর থেকে বের হয়ে,
বসার ঘরে গেলে দেখলাম আন্টি, আংকেল, ফারাজ ভাইয়া সহ বাড়ির সকলে আছে৷ আমি গেলে মায়া আমাকে ইশারা দিয়ে খোচাতে শুরু করে। সবাই আড্ডা দিতে থাকলে, মায়া আমাকে সাইডে নিয়ে গিয়ে আমার গালে হাত ধরে বলে–

— হ্যা গো আমার ভাইয়ের ঈশুপাখি তো কেমন আদর করলো ভাই আমার?

— মায়া কি হচ্ছে৷ কি বলছিস তুই৷ আর মিঃ চৌধুরীর মতো লুচু কথা বলছিস কেন। অবশ্য বোনটা কার দেখতে হবে তো?

— কি বললি আমি অসভ্য। আর বড় ভাইয়া যে সারাদিন ঈশু পাখি ঈশু পাখি করে তার বেলায়? রাতে বুঝি খুব আদর করে তাই না?

— মায়া ভালো হচ্ছে না কিন্তু। এটা ঠিক না মোটেও৷ একে তো উনি হুটহাট কোলে নিয়ে নেয়। তার ওপর কিস করে বসে। ( কাদোঁ কাদোঁ মুখে)

— আহা তাহলে তো তোদের স্টোরি জমে ক্ষির। ( মায়া)

— হ্যা আয় আমিও আবির ভাইয়া কে বলি তোকেও একটু এমন স্পেশাল কেয়ার নিতে। ( মুখ টিপে হেসে)

— ঈশা ( চোখ গরম করে)

— এই মায়া বলছি যে এই এনা সাবানের ফেনা কোথায় রে? দেখছি না অনেক্ষন হলো?

— হুম জিনিসটা আমিও খেয়াল করেছি। কিন্তু তোরা চলে যাওয়ার পরপর তো চলে গেলো৷ কেন কিছু হয়েছে?

— না আসলে তখন!

আমি তখনকার কথা খুলে বলতেই মায়া বললো-

— এই আমার না মনে হয় এনা আপু বড় ভাইয়াকে পছন্দ করে। আমিও তোর মতো খেয়াল করেছি , তোকে এনা সহ্য করতে পারে না৷

আর কিছু বলার আগে সামিয়া আপু এসে দু- জনকেই সন্ধ্যার স্নেক্স এর জন্য ডেকে দিয়ে যায়। তাই সবাই মিলে খাওয়ার এক পর্যায়, আড্ডা দিতে শুরু করে। কিন্তু এর মাঝে মিঃ চৌধুরী কে একটি বারও দেখি নি। আচ্ছা ওনি কি সাবানের ফেনার সাথে গল্প করছে নাকি? বিভিন্ন খেয়াল চিন্তার মধ্যেই সন্ধ্যা পার হয়ে গিয়ে রাত ঘনিয়ে এলো – আন্টি আংকেল যেতে চাইলেও আম্মু আব্বুর রিকোয়েস্টে আজকের রাতটুকু থাকবেন। বাড়ির সবার সাথে মিশে যাবার সাথেই যে আন্টি, আংকেল আর ফারাজ ভাইয়ার সাথে যে এত কম সময়ে এতটা মিশে যাবো ভাবতে পারি নি৷রাতে খাওয়ার পালা এলেও মিঃ চৌধুরী নিচে নামে নি। আমি যেতে চাইলেও আম্মু বলে উনি স্টাডি রুম এ কাজ করছেন এখন হাযার ডাকলেও আসবেন না।
কিন্তু মানুষটা এত টাইম না খেয়ে ছিলো, এখনো কি খাবে না? লজ্জায় বলতেও পারছি না। মায়া হয়তো আমার অবস্থাটা বুজতে পেরেছে তাই সবাইকে মিথ্যা বলে আমাকে উপরে নিয়ে এসেছে।

— মায়া এইখানে কেন নিয়ে আসলে।

— আমি জানি ঈশা তুমি বড় ভাইয়াকে ছাড়া খাবে না। তাই তোমাকে নিয়ে আসলাম।

— কিন্তু তুই ও তো ডেকে নিয়ে যেতে পারতি । সবাই কি ভাব্বে এখন –

— বড় ভাইয়াকে আমরা কেউ ডাকলে কখনো কাজ ছেড়ে আসবে না। তাই তুই গিয়ে দেখ না যদি আসে। নাহলে তোর জামাই না খেয়ে থাকবে আমার কি হাহ্।

— ব্লেক মিল করছিস? ( চোখ ছোট ছোট করে)

— হি হি হি( মায়া)

— কিন্তু আমার ভয় লাগছে। আম্মু বলেছে উনি কাজের সময় কাউকে এলাও করে না। আমাকে যদি বকা দেয়?

— সেটা তো ভেবে দেখি না। তবে একবার গিয়ে দেখা উচিত।

— হুম যাচ্ছি।

মায়া স্টাডি রুমের সামনে আমাকে দাড় করিয়ে চলে যার। আমি আস্তে করে সামনে এগিয়ে গিয়ে দড়জায় নক করলে উনি, গম্ভির কন্ঠে বলে ওঠে —

— কাম ইন।

আমি আস্তে করে ঘরে প্রবেশ করলে উনি আমার দিকে এক পলক তাকিয়ে ভ্রু উচিয়ে বলে

— কি হয়েছে জান?

— আব আসলে আপনি খেতে যাবেন না? সবাই ওয়েট করছে।

— সত্যি করে বলো তো সবাই ওয়েট করছে নাকি তুমি??

— না না সবাই।

— সত্যি জান?

— হুম।

কিন্তু জান আমি এখন একটা মিটিং করবো। কাল তোমাকে নিয়ে যাওয়ার জন্য মিটিং ডেট আজকে ফিক্স করেছি। তুমি খেয়ে নাও। আর ঘুমিয়ে পরো। আমার লেইট হবে।

— কে কেন লেইট হবে?

— কি ব্যপার বলো তো, আমাকে ছাড়া কি থাকতে পারছো না?( বাকা হেসে)

—- অসভ্য। আপনি ভিশন অসভ্য হয়ে যাচ্ছেন মিঃ চৌধুরী।

— তাই? তবে কিছু না করেই কেন অসভ্য হবো? কিছু তো!

—ছি থামুন আপনি।

— ঈশা সবাই ওয়েট করছে। তুই কি যাবি না? আমি জানতাম বড় ভাইয়া যাবে না।( মায়া)

আমি মায়ার কথায় অসহায় চোখে তাকালাম। ও একই কাজ করে আমাকে নিয়ে গেল৷ লোকটা কি পরিমান কাজ পাগল সেটা আমি হারে হারে টের পাচ্ছি। কিন্তু আমার খেতে ইচ্ছে করছে না৷ তাই সবাই কে মাথা ব্যথার কথা বলে চলে এসেছি ঘরে৷ শাড়ি পরে ঘুমানো প্রায় অসম্ভব ব্যপার আমার জন্য তাই ফ্রেশ হয়ে একটা সেলোয়ার সেট পরে নিলাম। ভাবতে ভাবতে মোবাইল এ চোখ গেলে দেখলাম তুবার মেসেজ। কাল যাবো কিনা, কখন যাবো, হাযারটা মেসেজ করেছে। কিন্তু লোকটার কাছে এলে যে আমি কিছুতেই মন দিতে পারি না। কেন হচ্ছে এমন।

— বাহ দুই দিনের মেয়ে হয়ে, আরাভ কে বস করে নিয়েছো?

বিসাক্ত কথাটা অনুসরন করে দড়জার দিকে তাকাতেই দেখলাম এনা দাঁড়িয়ে আছে৷ উনি আমার সামনে এসে মুখ বেকিয়ে বলে উঠলেন —

— ভালোই তো অবলা নারি সেজে থাকো আরাভ এর সামনে। ( এনা)

— কি বলতে চাইছো তুমি?

— এটাই যে সোজাসোজি ছেড়ে দাও ওকে। নয়তো আমি ছাড়বো না তোমাকে। ( এনা)

এবার ওনার উদ্যেশ্যটা আমার কাছে আরও ক্লিয়ার হলো তাই আমিও মুচকি হেসে বললাম —

— আমি আগেই বুঝতে পেরেছি তুমি মিঃ চৌধুরীকে পছন্দ করো। কিন্তু এটা মনে রেখো উনি এখন বিবাহিত। আর কি বললে একটু আগে? বস করেছি? ভুল। ইউ আর টোটালি রং। না তো আমি ওনাকে ছাড়বো আর না উনি নিজে আমাকে ছাড়বে। তাই বলছি তুমি যাই করো না কেন, আমাদের মাঝে তৃত্বীয় ব্যক্তি হবার চেষ্টা করবে না।

— এত কনফিডেন্স? বাহ ভালো। আমিও দেখবো কয়দিন তুমি আরভ কে আমার থেকে দূরে রাখো।আমি কেড়ে নেব আমার ভালোবাসাকে।

ওনার সব সহ্য হলেও আমার সামনে দাঁড়িয়ে আমার স্বামীকে ভালোবাসি বলায় সহ্য করতে না পেরে চিৎকার করে বলে উঠি —

— যাস্ট শাট আপ। তুমি একটা থার্ড পারসন আমাদের মাঝে। তাই ভুলেও এই কথাটা বলার চেষ্টা করবে না। আর তুমি কি ভেবেছো সকালের ঘটনাটা আমি দেখি নি?( আমি)

— মা মানে। কি ব বলতে চাইছো তুমি? ( কপালের ঘাম মুছে।

আমি ওনার ভয় পাওয়া আর অস্থিরতা দেখে হালকা হেসে বললাম-

— কি বলতে চাইছি বুঝতে পেরেছেন নাকি যেনেও না জানার ভান করছেন?( আমি)

— ঈ ঈশা দেখো তু তুমি মিথ্যা বলছো।আমি সকালে কফি ফেলি নি। ওইটা! ( এনা)

— আমি কখন বললাম যে তুমি কফি ফেলেছো? আমি তো কিছুই বলি নি এনা। ( আমি)

— তুমি মিথ্যা বলে আমাকে ফাসাতে চাইছো? ( এনা)

—মোটেও না আমি মনে করিয়ে দিচ্ছি যে, মিঃ চৌধুরী আমার এক ফোঁটা কষ্ট হলে কি করতে পারে সেটা নিশ্চয়ই তুমি দেখেছো। তাই বলছি আমি শান্ত,লজ্জাবতি, চুপচাপ আমার স্বামীর সাথে৷ বাহিরের লোকের কাছে না। আমি চাইলেই তোমার কথা বলতে পারতাম সবাইকে কিন্তু বলি নি। তাই ভেবো না আমি ভিতু। (আমি)

— আমি ছাড়বো না তোমাকে। আমার সাথে লাগতে এসে ভালো করলে না তুমি মেয়ে। এর ফল তোমাকে পেতেই হবে। ( এনা)

— আরে ওও এনা সাবানের ফেনা, লাগতে হয় সমানে সমানে। আমাকে বাচ্চা ভেবে ভুল করো না। ( আমি,)

— ইউউউ ( এনা)

আর কিছু না বলেই রাগে গজ গজ করতে করতে চলে গেলেন। কিন্তু আমি ভাবছি আমি তো ওনাকে আন্দাজের ওপর কথাটা বলেছি কিন্তু উনি সত্যি আমার ক্ষতি করতে চেয়েছে? ভাবতে ভাবতেই চুল বেধে ফেললাম। ঘরির দিকে তাকিয়ে দেখি দশটার বেশি হয়েছে। কিন্তু ওনার আসার নাম নেই। তাই বাধ্য হয়ে মায়ার রুমে গেলাম৷ গিয়ে দেখি মেয়েটা আবির ভাইয়ার সাথে কথা বলছে। তাই আপুর রুমে হাটা দিলাম। কিন্তু সেখানে গিয়ে যে এমন অপ্রত্যাশিত সিন দেখতে হবে কল্পনা করি নি। সায়ন ভাইয়া আপুকে জড়িয়ে ধরে কিস করছে। আমি চিৎকার দিতে গেলেই কেউ আমার মুখ চেপে ধরে। আর তখন শুনতে পাই মিঃ চৌধুরীর কন্ঠ —

— রোমেন্স করছিস ভালো কথা। দড়জা চেক করে নিবি তো। তোদের জন্য না আমার পিচ্চি বউ টা খারাপ হয়ে যায়।

আপু লজ্জায় অন্যদিকে ঘুরে গেলো।ভাইয়া মাথা চুলকোচ্ছে।আমি হাত দিয়ে ওনাকে ধাক্কাচ্ছি ওনি সরছেও না। আমাকে এক হাত দিয়ে উচু করে রুম এ নিয়ে এলেন। এতক্ষন পর মুখ ছাড়লে আমি নিশ্বাস নিতে নিতে বেডে বসে পরি। ওনি হন্তদন্ত হয়ে পানি এনে আমাকে খাওয়ালে আমি তবুও নিঃশ্বাস নিতে পারছি না। উনি আমাকে জড়িয়ে ধরলে আমি আস্তে আস্তে শান্ত হই। তারপর মাথা তুলে তাকিয়ে আস্তে করে বলে ওঠি–

— আপ আপনি না বললেন দেরি হবে? তাহলে এখানে কি করছেন?

— কি করবো জান। মিটিংটা কোনমতে শেষ করলাম। আমার যে বউ বউ পাচ্ছে।

— মা মানে ( ভয় পেয়ে)।

— মানে পরে বোঝাচ্ছি আগে বলো তুমি ওদের ঘরের সামনে কি করছিলে?জান তুমি রোমেন্স শিখছিলে? সেইম অন জান। ঘরে জামাই থাকতে তুমি ওদের রোমেন্স দেখছো? চাইলে আমি তোমাকে ট্রেইলার দে!

— মিঃ চৌধুরী প্লিজ থামুন, কি করছেন। ( কানে হাত চেপে)

— আচ্ছা বলবো না। আগে বলো খাও নি কেন?

— আপনি কিভাবে বুঝলেন?

— এই বাড়ির প্রতিটা কোনায় কি হয় সেটার খবর আমি রাখি৷ আর এটা তো আমার জন্য অনেক কিছু । তুমি এত টাইম না খেয়ে আছো কেন।

আমি ভয় পেয়ে গেলাম ওনার কথায় আচ্ছা উনি কি আমার আর এনার বলে কথা গুলো শুনেছেন৷

— জান। চলো ডিনার করে মেডিসিন খেতে হবে।

— মিঃ চৌধুরী আমি মেডিসিন খাবো না। আমার খুব খারাপ লাগে এগুলো খেতে। প্লিজ

— কোন কথা নয় চলো তুমি৷ ঈশু পাখি কি চায় সবার সামনে আমি তাকে কোলে নেই। ( সয়তানি হেসে)

— না না আমি হাটতে পারি। খাবো সব খাবো। ( ঝট করে উঠে)

উনি আর আমি টেবিলে গেলে মোটামুটি সবাই অবাক হয়। এত দ্রুত কাজ শেষ হওয়ার কথা সবাই জিজ্ঞেস করতে উনি আমার দিকে তাকায়। আমি ভাবছি ঠোঁটকাটা লোকটা কি এখানেও মান সম্মান রাখবে না বড়দের সামনে। কিন্তু উনি কাজের যুক্তি দেখিয়ে বিষয়টা বুঝিয়ে বলেন। নিজেও খাচ্ছে, আমাকে হাতে তুলে নিজের হাতে খায়িয়ে দেয়। আমি সত্যি অবাক হই ওনার আচরনে, এতটা ভালো কি আদ্বোও কেউ বাসতে পারে৷ খাওয়া শেষ করে নিজের হাতে মুখ ফ্রেশ করে দিলে আন্টি আংকেল এর চোখে আমি একরাশ সম্মান আর ভালোবাসা দেখি ওনার জন্য।
সত্যি আমি ভাগ্যবতি। যে কিনা আমাকে এতটা আগলে রাখে। এর মাঝেই উনি কানে ফিসফিস করে বলেন –

— ভাবনার রানী মিসেস চৌধুরী আপনি যাকে নিয়ে ভাবছেন, সে আপনাকে নিয়ে সারা জিবন ভেবে যাবে। এতটা আগলে রাখবে যে কেউ ছুঁতে পারবে না। আমার জন্য হলেও তোমাকে আমার চাই জান।

আমি বুঝতে পেরেছি লোকটা পাগল, আর তার পাগলামি ঘিরে আমি আছি। আমি তাই ওনার চোখে চেয়ে বললাম-

— চলুন না আমরা জোস্ন্যা বিলাস করি। আমার না খুব ইচ্ছা, যাবেন মিঃ চৌধুরী?

আমি কিছু বলার আগে উনি আমাকে একহাত দিয়ে ধরে ছাদে নিয়ে এলেন। আর আমরা একসাথে দোলনায় বসে জোস্ন্যা বিলাস করছি। কিন্তু উনি আমার দিকেই তাকিয়ে আছে।

— এদিকে কি দেখছেন? ( আমি)

— আমার চাঁদ কে দেখছি। যে আমার সামনে বসে জোস্ন্যা ছড়াচ্ছে। আর আমি তার উজ্জল জোস্ন্যা কুড়োতে ব্যস্ত।

আমি ওনার কথায় হালকা হাসলে আমার টোল গালে চুমু খেয়ে জড়িয়ে ধরে। আর বিরবির করে বলে

— আমার মায়াবতি যে শুধু আমাকে মুগ্ধ করে। কেন সে এতটা মায়াবি। কেন তার চাহনি এতটা মায়াবি আমাকে কি বলবেন মিসেস চৌধুরী। আমার শুভ্রে পরি। ভালোবাসি।

#চলবে____________