পর্ব ৩৫+৩৬
#আমার_আসক্তি_যে_তুমি
#Part_35
#Writer_Asfiya_Islam_Jannat
.
?
রাত ১০ বেজে ৭ মিনিট। রাস্তায় গাড়ির আনাগোনা কমে এসেছে। তাই হাল্কা নিরবতা ছেয়ে আছে চারদিকে। কিন্তু কিছুক্ষণ পর পরই দূর থেকে কিছু গাড়ি শা শা শব্দে এসে হর্ন বাজিয়ে এই নিরবতা ভঙ্গ করার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। রাস্তার পাশে থাকা সোডিয়ামের লাইট গুলো এসে পড়ছে আমার উপর। হোলদে আলোতে গায়ের রঙটাও কিছুটা হলদাটে দেখাছে।
আমি স্থির দৃষ্টিতে রিয়ানের ফ্ল্যাটের দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে আছি আর বার বার তাকে ফোন দিয়েই চলেছি। কিন্তু তার ধরার দাম নেই। ঘড়িতে একবার সময়টা দেখে নিলাম। প্রায় ১৩ মিনিট ধরে তার বাসার সামনে দাড়িয়ে আছি তার সাথে দেখা করবো বলে। পাশেই রিংকি আর আরিশা দাড়িয়ে আছে। আমি এইবার না পেরে অসহায় চোখে তাদের দিকে তাকাই। তারা আমার অসহায় দৃষ্টিটা উপেক্ষা করে কেবলা মার্কা একটা হাসি দেয়। যার মানে, ” অপেক্ষা করা বাদে তাদের এখন কিছু করার নেই। ”
.
এতক্ষণের ভালো লাগাটা যেন এখন বিরক্তিতে পরিনত হলো। রিয়ানকে ফোন করে চলেছি আর নিজেকে বকে চলেছি। কেন যে এই দুই বান্দরনীর কথা শুনতে গেলাম। এখন এই দুটোকে করলার জুস খায়িয়ে উল্টিয়ে পিটাতে ইচ্ছে করতাসে। উফফ!! বিরক্তিকর। ঘোর বিরক্তিকর!!
.
.
?কিছু সময় পূর্বে?
.
.
রিয়ান কথা ভেবে আমি মন খারাপ করে বসে আছি। ঠিক তখনই আরিশা আর রিংকি আমার রুমে আসে। দুইজনে এসেই আমার দিকে তাকিয়ে একটা কেবলা মার্কা হাসি দেয়। দুইজনের এমন হাসি দেখে আমার ভ্রু জোড়া দুটো কুঁচকিয়ে আসে। আমি তাদের দিকে তাকিয়ে বলি,
.
— কি চাই?
.
— ড. রিয়ানকে মিস করছো তাই না মনু?( আরিশা )
.
— হ্যাঁ তো!
.
— ফোন ধরছে না, কথা হচ্ছে না, মনটা ছটফট করে আছে তাই না! লাইক ” ধাক ধাক কারনে লাগা, ও মোরা জিয়ারা কারনে লাগা। ” একটা কেলানি হাসি দিয়ে। (রিংকি)
.
আমি আমার পাশে থাকা বালিশটা ওর মুখের উপর ছুড়ে মারলাম। তারপর কিছুটা রাগান্বিত গলায় বলি।
.
— কাটা গায়ে নুন দিতে আসছোস! শালী বান্দরনী এইখানে আমি কষ্টে মরি আর তিনি মজা নেয়। তুই বন্ধু নামে কলঙ্ক।
.
— হুহ!! এত বড় অপমান। এসেছিলাম কষ্ট দূর করার ঔষধ দিতে এখন তো ওইটার শিষিও দিব না। (রিংকি)
.
— মানে। সরু চোখে রিংকির দিকে তাকিয়ে।
.
— মানে আমি বলছি। তোকে ড. রিয়ানের সাথে কথা বলার জন্য আমাদের কাছে একটা দারুণ আইডিয়া আছে। (আরিশা)
.
আমি এইবার পিটি চোখে আরিশার দিকে তাকাই।
.
— শুন আমরা এক কাজ করি সোজা ড. রিয়ানের বাসার নিচে হানা বলি। তারপর তাকে ফোন করে নিচে আসতে বলি। যদি না আসতে চায় তাহলে বলবি তুই উপরে চলে আসবি। তখন সে নিচে এসে পারবেও না। তারপর তোর তাকে দেখাও হয়ে গেল প্লাস কথা বলাও। কি জোস না আইডিয়াটা আইডিয়াটা? (আরিশা)
.
— আসল কথা লুকাইয়া গেলি কেন? বল না যে তুইও ড. সিয়ামের সাথে দেখা করতে বের হবি। তখন এই কথা শুনে আইডিয়াটা আমিই দিয়েছিলাম। কেউ ক্রেডিট দেয় না রে। কত স্বার্থপর বান্ধবী। (রিংকি)
.
— আবে চুপ! কথায় কথায় খালি সেন্টি নেস কেন? এখন চুপ থাক। তা রিয়ানু আইডিয়া কেমন লাগলো?
.
আইডিয়াটা আমার কাছে মন্দ লাগেনি বলে আমিও রাজি হয়ে যাই। বিয়ের আগে একদিন পাগলী প্রেমিকা হতে কোন মন্দ নয়। তার উপর এমন কিছু করার অভিজ্ঞতাও আমার নেই। তাই এক রাশ আনন্দ নিয়ে ছুটে পড়ি বনানীর দিকে।
.
.
?
.
প্রায় ১৬ বার ফোন করার পর গিয়ে রিয়ান ফোনটা ধরলো। ধরার সাথে সাথেই রিয়ান ঝাঁজালো কণ্ঠে বলে উঠে।
.
— কি হয়েছে?? এত ফোন দিয়ে জ্বালাচ্ছেন কেন? কাজ নেই কি আপনার? আপনার কাজ না থাকলেও আমার অনেক কাজ আছে। তাই আপনার সাথে কথা বলার সময় আমার নেই। বাই! (রিয়ান)
.
— আরেহ আরেহ শুনেন তো! আমি আপনার বাসার নিচে দাড়িয়ে আছি। প্লিজ একটু নিচে আসুন।
.
রিয়ান এইবার বিষ্ময়কর কন্ঠে বলে উঠে,
— আপনি আমার বাসার নিচে মানে? (রিয়ান)
.
— নিচে মানে নিচে। আপনি একটু দয়া করে নিচে নামবেন নাকি আমি উপরে আসবো?
.
রিয়ান আমার কথা বিশ্বাস না করতে পেরে সে বারান্দায় এসে নিচে উঁকি দেয়। তারপর আমাকে দেখতে পায়। সাথে আরিশা আর রিংকিকেও। রিয়ান এইবার বলে,
.
— তুমি দাড়াও আমি আসছি!
.
কথাটা শুনার সাথে সাথে মনটা খুশিতে নেচে উঠলো। আমি আরিশা আর রিংকির দিকে তাকিয়ে বলি।
.
— আসছে।
.
তারা শুনে এইবার স্বস্তির নিশ্বাস নিল তারপর আমাকে বলে,
.
— বইন এইবার আমি যাই। আমরাটা অনেকক্ষণ ধরে ওয়েট করছে। আমি একবারে বাসার নিচে চলে আসবো নে। বাই! (আরিশা)
.
এই বলে আরিশা দেয় দৌড়। রিংকি এইবার আমার দিকে তাকিয়ে বলে,
.
— বইন আমি আবার কাবাব ম্যায় হাড্ডি হতে চাই না। আমি পাশের ওই পার্কেই আছি। তোদের প্রেময়ালাপ শেষ হলে ফোন দিস কেমন!
.
এই বলে রিংকিও উল্টো পথে হাটা ধরে। আমি এইবার রিয়ানের জন্য পথ চেয়ে দাড়িয়ে থাকি।২ মিনিটের মধ্যেই রিয়ান এসে হাজির। চোখ মুখে রাগের আভা স্পষ্ট ফুটে রয়েছে। রিয়ান কিছুটা রেগে বলে,
.
— এত রাতে কোন আক্কেলে এইখানে এসেছেন? মাথার সব তার ছিড়ে গিয়েছে নাকি!
.
— আপনি যদি নিখোঁজ হয়ে থাকেন তাহলে আমি এই বা কি করবো?
.
— এমন পাগলামোর মানে কি?
.
— ভালবাসা মানেই পাগলামি! আর যেখানে ভালবাসার মানুষটি অভিমান করে বসে আছে তাকে মানাতে তো একটু খানি পাগলামি না করলে চলেই না।
.
— ইউ আর জাস্ট ইম্পসিবল! এখন যদি আপনার পাগলামো করা শেষ হয়ে থাকে তাহলে নিজ বাসায় যান।
.
— তার আগে বলুন আমার সাথে কেন যোগাযোগ করছেন না? কেন দূরে সরিয়ে রেখেছেন?
.
— তার উত্তর আপনি ভালো করেই জানেন। আর এখন বাসায় যান অনেক রাত হয়েছে।
.
এই বলে রিয়ান উল্টো ঘুরে হাটা শুরু করলেই আমি তাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরি আর কেঁদে দেই।
.
.
?
.
— আসলেই মেয়েরা লেট লতিফ। তার জীবন্ত প্রমাণ তুমি! (সিয়াম)
.
— এই একদম বাজে বকবেন না। আমি কি স্বাদে দেরি করেছি নাকি? কিছু কাজ ছিল বলে দেরি হয়েছে। (আরিশা)
.
— আমার সাথেই দেখা করার সময় তোমার কাছে এত কাজ কোথ থেকে আসে? (সিয়াম)
.
— আসমান থেকে টপকে টপকে পড়ে। হুহ! (আরিশা)
.
— থাক আর মুড অফ করতে হবে না। লুক হোয়াট আই হ্যাভ ফোর ইউ। (সিয়াম)
.
এই বলেই সিয়াম এক বক্স চকলেট আরিশার সামনে ধরে। আরিশা তা দেখেই খুশিতে লাফ দিয়ে উঠে। সিয়াম তা দেখে আনমনেই হেসে উঠে। আর বলে,
— পাগলিটা!
.
.
?
.
রিংকি পার্কে হাটছে আর নিজের সাথেই বকবক করেই চলেছে।
.
— হুহ! সবাই মিঙ্গেল আমি একাই সিঙ্গেল। এই অন্যায় কেন করলা তুমি আল্লাহ। আমারও মিঙ্গেল বানাইয়া দাও না। আমি কেন একা একা চিরকুমারী থাকুম। আমার মত কিউট ইনোসেন্ট মাসুম মেয়ের উপর একটু রেহেম করো।
.
এইসব বলতে বলতে হাটছিল তখন রিংকি কাউরো সাথে ধাক্কা খায় আর নিচে পড়ে যায়। নিচে পড়েই রিংকির কথার বুলি ফুটি উঠে।
.
— আবে কোন কানা রে! দেখে হাটতে পারেন না? আহহ! আমার কোমর।
.
— আরেহ মিস বকবক! প্লিজ স্টোপ ইউর বকবক!
.
— কে রে! বলেই রিংকি মাথা তুলে তাকাতেই দেখে ব্রিটিশ বান্দর। রিংকি বলে উঠে।
.
— আরেহ ব্রিটিশ বান্দর আপনি! তাহলে আপনি সেই কানা! (রিংকি)
.
— হোয়াট ডু ইউ মিন বাই কানা?
.
— কানা মিন্স অন্ধ। যা আপনি। ব্লাইন্ড ম্যান! (রিংকি)
.
— ইউউ!!
.
— অহহ সাথে মেনারলেস ও।(রিংকি)
.
— কিভাবে??
.
— এতক্ষণ ধরে একটা মেয়ে নিচে পড়ে আছে যাকে নাকি আপনি ধাক্কা দিয়েছেন তাকে তুলছেনও না পর্যন্ত। সে কি ঠিক আছে কিনা তা তো পরের ব্যপার।(রিংকি)
.
— অহহ মাই গুড নেস! যে মেয়ে নাকি এতক্ষন ধরে বসেই আমার সাথে ঝগড়া করা শুরু করে দিয়েছে সে নাকি আবার ঠিক নেই। হাও ফানি!
.
রিংকি এইবার চট করে দাড়িয়ে গিয়ে তেরে এসে বলে।
— এই ব্রিটিশ বান্দর! একদম বাজে বকবেন না। আমি কখন ঝগড়া করলাম হ্যাঁ! (রিংকি)
.
— একেই বলে পায়ে পা লাগিয়ে ঝগড়া করা। বাই দ্যা ওয়ে আপনার সকল ব্যথা দেখি ৫ মিনিটেই হাওয়া হয়ে গেল। Strange!
.
— তাতে কি হ্যাঁ? আমার ব্যথা আমার সব। যখন ইচ্ছা আসতেই পারে আর চলে যেতেও পারে। তা আপনার মত ব্রিটিশ বান্দর বুঝবে না। হুহ! (রিংকি)
.
— আই হ্যাভ আ ন্যাম ওকে! ডোন্ট কল মি ব্রিটিশ বিনদর ওর হোয়াট এভার ইট ইজ!
.
— অহহ তাই নাকি? তা শুনি তো একটু আপনার নামটা কি ব্রিটিশ বান্দর জি!(রিংকি)
.
— ইশান আশরাফ!
.
— হাহ! এই নামের চেয়ে ব্রিটিশ বান্দর বেশি সুট করে আপনাকে। (রিংকি)
.
— ইউউউউ!!
.
ব্যাস লেগে গেল তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ।
.
.
.
#চলবে#আমার_আসক্তি_যে_তুমি
#Part_36
#Writer_Asfiya_Islam_Jannat
.
?
রিয়ান আমার কান্না শুনে ভ্যাবাচেকা খেয়ে যায়। আমার কান্না যে তার সবচেয়ে বড় দূর্বলতা। আমি ফুপিয়ে ফুপিয়ে কেঁদেই চলেছি। আর বলছি,
— প্লিজ রিয়ান আমাকে ক্ষমা করে দিন না। আমি জানি আমি অনেক বড় ভুল করে ফেলেছি। কিন্তু তখন আমার ভালো মন্দ বুঝার হেদায়েত জ্ঞান ছিল না। পুরোপুরি ভাবে ভেঙে পড়ে গিয়েছিলাম আমি। তখন কাউরো কথা মাথায় আসছিল না। চারদিকে শুধু অন্ধকার এই দেখছিলাম। বার বার এইটাই মনে হচ্ছিল আমি মরে গেলে সব ঠিক হয়ে যাবে।
আর সেই বসেই আমি এমন একটা স্টেপ নেই। আমি তখন নিজের মধ্যে ছিলাম রিয়ান। কিন্তু পড়ে বুঝতে পেরেছি যে আমি আপনাকে ঠিক কতটা কষ্ট দিয়ে ফেলেছি। আমার এই একটা কাজে আমার আশের পাশের মানুষের উপর কি প্রভাব পড়তো বুঝেছি। আপনার কি হতো তাও বুঝেছি।
আ’ম সরি রিয়ান। আ’ম রেইলি ভেরি সরি। প্লিজ এইবার এর মত ক্ষমা করে দিন। আর কোন দিন এমন হবে না সত্যি। প্লিজজ! বলে আবারও ফুপিয়ে উঠি।
.
রিয়ান এইবার সহ্য না করতে পেরে আমার দিকে ঘুরে দাড়ায়। তারপর আমার গালে হাত রেখে মুখটা একটু উঁচু করে। আমি অশ্রু ভেজা নয়নে তার দিকে তাকিয়ে আছি। চোখের পাপড়ি গুলোতে অশ্রুগুলো মুক্তা আকার ধারণ করে ঘাবটি মেরে বসে আছে। সোডিয়ামের আলোতে ভেজা গাল দুটো চিকচিক করছে। নাকটা একদম লালচে হয়ে আছে। যেন রং তুলির হাল্কা ছোঁয়া এসে লেগেছে নাকটিতে। ঠোঁট উল্টিয়ে রাখার কারনে মুখটা বাচ্চাদের মত হয়ে উঠেছে।
রিয়ান এইবার আলতো হাতে আমার কান্না মুছে দিতে থাকে। তারপর ঠোঁটের শেষ প্রান্তের রেখাটা হাল্কা প্রসারিত করে ধীর কণ্ঠে বলে,
.
— বলেছিলাম না তোমার চোখের অশ্রু আমার সহ্য হয় না। এইটা আমার দূর্বলতা। তাহলে কেন তা বার বার আমার সামনে তুলে ধরো!
তোমার চোখের এক ফোটা জল আমার হৃদয়ের মাঝে হাজারো খনন করে দিয়ে যায়। কেন বুঝো না ভালবাসি বলেই সব সময় তোমায় হারানোর ভয় কুড়ে খায়। তোমাকে ছাড়া এক মিনিটও আমি কল্পনা করতে পারি না সেখানে তুমি আমার থেকে শত দূরে চলে যেতে নিয়েছিলে। কি অবস্থা হয়েছিল তখন আমার আমি বলে বুঝাতে পারবো না।
তুমি যা করেছ এর জন্য কি আমার রাগ জায়েজ না? তোমাকে কেন জানি ক্ষমা করতে পারছি না। তোমার কাছে আসলেই আমার সেইদিনের ঘটনাটা চোখের সামনে ভেসে আসে। ভেসে আসে তোমার নিস্তেজ মলিন মুখটা। কিভাবে ভুলি সেইসবকে বল!
আমার একটু সময়ের প্রয়োজন এইসব ভুলতে তোমাকে ক্ষমা করতে। প্লিজ গিভ মি সাম টাইম।
.
এই বলে আমার চোখের পাতায় নিজের ঠোঁট বুলিয়ে দেয়। তারপর স্বরে আসে। আমি কিছু না বলে তার দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকি। রিয়ান আমার কানের পিছে চুল গুলো গুছিয়ে দিতে দিতে বলে,
— এখন বাসায় যাও। অনেক রাত হয়ে গিয়েছে। আমি কি বাসায় পৌঁছিয়ে দিব?
.
— না লাগবে না। রিংকি পাশের পার্কেই আছে। ওকে ফোন দিচ্ছি।
.
— হুম!
.
.
?
.
— ওই ব্রিটিশ বান্দর! আপনার সাহস তো কম না এত রাতে একটা মেয়েকে একা মেয়ে তার সাথে ঝগড়া করছেন। তাও আবার মেয়েদের মত। লজ্জা করে না?(রিংকি)
.
— আমি ঝগড়া করছি নাকি আপনি? আপনার লজ্জা করে না এত রাতে একটা ছেলের সাথে ঝগড়া করতে? (ইশান)
.
— ওই ওই!! আর বলতে পারলো না ঠিক তখনই রিংকির ফোন বেজে উঠলো। রিংকি এক রাশ বিরক্তি নিয়ে ফোন তুলে দেখে রিয়ানার ফোন। রিংকি এইবার ফোন তুলতেই রিয়ানা বলে তাকে চলে আসতে। রিংকি হ্যাঁ সূচক উত্তর দিয়ে ফোনটা চট জলদি কেটে দেয়। তারপর ইশানের দিকে তাকিয়ে বলে,
.
— ঝগড়াটা তুলা রাখলাম। পরে আবার যেদিন দেখা হবে সেইদিন আবার কান্টিনিও করবো নে। এখন তাড়া আছে বাই।
.
এই বলে রিংকি ইশানকে কিছু না দ্রুত পায়ে যেতে শুরু করে। হুট করে পিছে ঘুরে একটু খানি চেঁচিয়ে বলে,
.
— আর হ্যাঁ আমি মোটেও ঝগড়া করি না।হুহ!
.
এই বলে দৌড়ে চলে যায়। আর ইশান সেই দিকে তাকিয়ে থাকে তারপর আনমনে বলে উঠে।
.
— She is totally mad man.
.
.
??
.
.
সকাল ১০ বেজে ৩৭ মিনিট,
পাখির কিচিরমিচির শব্দ এখন তেমন আসছে না। শহরটাও যেন হয়ে উঠেছে জীবন্ত। যান্ত্রিক কোলাহলে পুরিপূর্ণ হয়ে উঠেছে চারদিক। লোক ছুটে চলেছে নিজের কর্মস্থলে।
আমি বারান্দায় দাড়িয়ে এক হাতে কফি নিয়ে এইসব কোলাহল দেখতে ব্যস্ত। তারপর এই কোলাহল থেকে নিজের নজরটা ঘুরিয়ে রুমের দিকে অগ্রসর হই। রুমে এসেই একবার চারদিকে চোখ বুলিয়ে নেই।
আরিশা রুমের মধ্যে বসেই হাতে একটা নিউজপেপার নিয়ে পড়ছে আর চায়ের পেয়ালে চুমুক দিচ্ছে। রিংকি এতক্ষণ মরার মত ঘুমাচ্ছিল আরিশা ওকে কিছুক্ষণ আগেই টেনে উঠিয়ে ফ্রেশ করিয়ে নাস্তা করতে পাঠিয়েছে।
কালকে বেশ রাত পর্যন্তই গল্প করা হয়েছিল বলে আজ উঠতে দেরি হয়ে গিয়েছে।
আমি গিয়ে টেবিলের উপর গ্লাস রেখে সোফায় বসতে যাব তখনই রিংকির চিৎকারে ভ্যাবাচেকা খেয়ে যাই।
রিংকি এক দৌড়ে রুমে আসে। তারপর আমায় ধরে ঘুরা শুরু করে। আমি কোনমতে নিজেকে সামলিয়ে নিয়ে নিজেকে রিংকির হাত থেকে ছাড়িয়ে নেই। তারপর ওর দিকে কৌতূহলি দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলি,
.
— কিরে এত খুশি কেন?
.
— মনে হয় জামাই পেয়ে গিয়েছে? চায়ের পেয়ালায় চুমুক দিতে দিতে। (আরিশা)
.
— আরেহ ধুর! ড. রিয়ান মাত্রই সব ফাংশনের ডেট ও টাইম সেন্ড করেছে আর বলে সকল প্রিপারেশন নিয়ে নিতে। আর ৩ দিন পরেই হলুদ গাইসসস!!! (রিংকি)
.
কথাটা শুনার সাথে সাথে আরিশাও চমকে উঠে। তারপর অবাক করা দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকায়। আমি এইবার অসহায় চোখে আরিশার দিকে তাকাই। যার অর্থ এই যে, ” এই বিষয়ে আমি কিছু জানি না। ”
.
— আর আজকে থেকে ডান্স প্র্যাকটিস। সো গেট বি রেডি গার্লস। ইট ইজ টাইম টু ডিস্কো। খুশিতে আপ্লুত হয়ে। (রিংকি)
.
— আরেহ আরেহ বললেই হলো নাকি? কত কিছু করতে হবে জানিস? আমাদের ড্রেস কিনতে হবে, অর্নামেন্টস কিনতে হবে, বাসা বাড়ি সাজাতে হবে, লোক হায়ার করতে হবে, মিষ্টি ও ডালা সাজাতে হবে, আরও কত কি? এত তারাতারি কিভাবে কি! (আরিশা)
.
— টেক আ চিল পিল ইয়ার। ড. রিয়ান সবকিছুর ব্যবস্থা করে ফেলেছে। কালকের মধ্যে আমাদের সকলের ড্রেস, অর্নামেন্টস এন্ড ডালা সব এসে পড়বে। রাতের মধ্যে ডেকোরেশনের লোক এসে লাইটিং আর সাজানোর কাজ করে দিয়ে যাবে। আর বাকি সব কিছুর এই ব্যবস্থা ড. রিয়ান করে ফেলেছে। গোট ইট! (রিংকি)
.
— অহ মাই গুডনেস! ড. রিয়ান একা হাতে এত কিছু কিভাবে সামলাচ্ছে কে জানে। রিয়ানা তুই অনেক লাকি রে যে তুই এমন একটা বর পেয়েছিস। ইউ আর সো মাচ লাকি ইয়ার। আ’ম জেলাস! (আরিশা)
.
আমি প্রতিউত্তরে শুধু মিষ্টি একটা হাসি উপহার দেই। তারপর বলি,
.
— ড. সিয়ামও অনেক ভালো রে। এমন ছেলেও খুবই কম। ইউ আর অলসো লাকি।
.
— হুহ! আজ সিঙ্গেল বলে কেউ আর আমাকে বলে না যে রিংকু রে তুইও লাকি রে এমন একজনকে পেয়েছিস। ন্যাকা কান্না করে। (রিংকি)
.
— আবে স্টার জলসার দোকান নিজের নটাংকি বন্ধ কর। (আরিশা)
.
— হুহ!! মেরি উদাসিমে মাজাক কারনি ওয়ালি তেরা মু কালা। (রিংকি)
.
— তোরে তো আমি!
.
— চুপপ!! কত ঝগড়া করতে পারস তোরা। উফফফ! রিংকি তুই পরের আপটেড দে তো।
.
— হুহ! বিকেলের দিকে ড. রিয়ানের বাসায় যেতে হবে। তাদের সেখানে নাকি হলুদের ডান্স পারফর্মেন্সের জন্য প্রেকটিস করা হবে। একসাথে নাকি দুই পক্ষ মিলে কাপল ডান্স করবে। তাই আমাদের এক সাথেই প্রেকটিস করতে হবে। আর আমরা যে আলাদা স্পেশাল ডান্স দিব তা এইখানে প্রেকটিস করবো। গট ইট! (রিংকি)
.
— হুম। (রিয়ানা+আরিশা)
.
— আ’ম সো এক্সাইটেড। (রিংকি)
.
.
?
.
রিয়ানের বাসার ছাদের মধ্যে দাড়িয়ে আছি। রিয়ানের সকল কাজিনরাও এইখানে উপস্থিত। আমি আশার সাথে সাথেই সকলেই আমায় ঘিরে দাড়ায়। তারপর আমার সাথে কথা বলতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। আমার কাছে নিলা আর রিনাকে (ছোট ফুপুর মেয়ে) বেশ লেগেছে। তাদের চেহারা এক হলেও স্বভাব পুরো বিপরীত। এইখানে সবাই মিশুক। ওদের সাথে কথার তালে তালে জানতে পারি যে রিয়ানের বড় ফুপু লন্ডন ফিরে চলে গিয়েছে। আরিয়ান যা করেছিল তা সকলের মধ্যে জানাজানি হওয়ার ফলে তিনি লজ্জায় কাউরো সাথে মুখ দেখাতে পারে নি। তাই চলে গিয়েছে। কিন্তু আমার এইসব শুনে মনের ভিতরে বিন্দুমাত্র খারাপ লাগে নি।
এর মধ্যে রিয়ান এসে পড়ে আর প্রেকটিস শুরু করার জন্য বলে।
তাই সকলেই নিজেদের পার্টনার চুস করে নেয়। নিলা+ হিমেল ( ছোট ফুপুর মেয়ে + ছোট খালার বড় ছেলে), রিনা + সিয়াম ( ছোট ফুপুর মেয়ে + ছোট খালার ছোট ছেলে), মাইশা + জেক (ছোট খালার মেয়ে+ রিয়ানের বন্ধু), শুভ+ দোলন (বড় খালার ছেলে আর বউ)।
আরিশা এইবার নিজের পার্টনার খুঁজছিল তখন পিছন থেকে ড. সিয়াম বলে উঠে,
.
— কি আমাকে খুঁজছো বুঝি? ( সিয়াম)
.
আরিশা তখন চমকে পিছে তাকায় অতঃপর ড. সিয়ামকে দেখে স্বস্তির নিশ্বাস নেয়। তারপর মুচকি হেসে বলে,
.
— তা আপনি বুঝি আমার পার্টনা? (আরিশা)
.
— ডু ইউ হ্যাভ এনি ডাউড? ভ্রু নাচিয়ে। (সিয়াম)
.
— নো। মুচকি হেসে। (আরিশা)
.
— মে আই! হাত আরিশার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে। আরিশা এইবার হাসি মুখে তার হাতটির উপর নিজের হাত রাখে।
.
.
?
.
রিংকি পাশে দাড়িয়ে রাগে ফুসছে আর বলছে,
.
— আমার কষ্ট কাকে বলি আমি! ভাইরে ভাই রিয়েল লাইফে সিঙ্গেল মানলাম কিন্তু এখন কি কাপল ডান্সও সিঙ্গেল থাকুম? এ কেমন অন্যায়? আল্লাহ তুমি আমার মত এত কিউট ইনোসেন্ট মাসুম মেয়ের সাথে এমন অন্যায় সহ্য করবা না আমি জানি। তাই তারাতারি আমার পার্টনার পাঠিয়ে দাও না। প্লিজজ! (রিংকি)
.
তখনই পিছন থেকে কেউ বলে উঠে,
— Excuse me!
.
রিংকি পিছেই ঘুরে সামনে তাকিয়ে অবাক হয়ে যায়। তারপর বলে,
.
— আরেহ ব্রিটিশ বান্দর আপনি!! এইখানে কি করছেন? নিশ্চয়ই আমাকে ফলো করতে করতে এইখানে এসেছেন! (রিংকি)
.
— হোয়াট দ্যা হেল! আপনি এত বাজে বকেন কিভাবে একটু বলবেন প্লিজ! (ইশান)
.
— হুহ!! বাই দ্যা ওয়ে আপনি আমায় ফলো করছেন কেন?(রিংকি)
.
— ফোর ইউর কাইন্ড ইনফরমেশন আমি রিয়ানের ফ্রেন্ড। লন্ডন থেকে এসেছি। তাই ওর বাসাতেই থাকছি। আর এইখানে ডান্স প্রেকটিসের জন্য জয়েন হয়েছি। হুহ! (ইশান)
.
— তার মানে আপনি আমার ডান্স পার্টনার! এই আমি কোন ব্রিটিশ বান্দরকে নিজের ডান্স পার্টনার হিসাবে চাই না। (রিংকি)
.
— আমিও মিস বকবক টাইপ কোন মেয়েকে নিজের ডান্স পার্টনার হিসাবে চাই না। (ইশান)
.
— এত বড় অপমান!! ইউউ!! (রিংকি)
.
— ইউউ! (ইশান)
.
— আরেহ আরেহ গাইস কি হচ্ছে এইখানে? (রিয়ান)
.
— ব্রো আই ডোন্ট ওয়ান্ট টু ডান্স ওইথ হার। প্লিজ! (ইশান)
.
— ড. রিয়ান আমিও এর সাথে ডান্স করতে পারবো না। (রিংকি)
.
— লুক ইউ গাইস হ্যাভ টু এডজাস্ট। এইখানে সকলেই তাদের পার্টনার চুস করে ফেলেছে। সো প্লিজ ক্রোমোজমাইজ। ফোর মি প্লিজ! (রিয়ান)
.
— এনেথিং ফোর ইউ ব্রো। (ইশান)
.
— আচ্ছা ভাইয়া। এই যে ব্রিটিশ বান্দর এইদিকে আসেন। (রিংকি)
.
— ডোন্ট কল মি এট দ্যাট নেম। (ইশান)
.
— ওকে ইশান জি আসেন এইদিকে আসেন। দাঁতে দাঁত চেপে। (রিংকি)
.
— হুহ! (ইশান)
.
.
?
.
রিয়ান এইবার সকলকে ডান্স টিচারের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়। সে সকলের সাথে হাই হ্যালো করে নিজের কাজে লেগে পড়ে। তিনি একেক করে স্টেপ দেখিয়ে দিচ্ছেন আর সকলেই তা ফলো করছে। রিয়ান এইবার আমার কাছে এসে আমার দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলে,
— মে আই! (রিয়ান)
.
আমি এইবার স্মিত হেসে তার হাতে আলতো করে হাত রাখি আর নিজেদের ডান্স স্টেপ বুঝে নিয়ে ডান্স করতে শুরু করি।
.
.
.
#চলছে