পর্ব ৩৭+৩৮
#আমার_আসক্তি_যে_তুমি
#Part_37
#Writer_Asfiya_Islam_Jannat
.
আজকে আমার আর রিয়ানের হলুদ সন্ধ্যা। চারদিকে কোলাহলপূর্ণ খুশির আমেজ। সকলের মুখেই মিষ্টি হাসি সাথে এক রাশ ব্যস্ততা। সকাল থেকেই বাসায় তোরঝোর লেগে পড়েছে।
রিংকি আর আরিশা বার নিচেদের ডান্স স্টেপ মনে করছে আর সাথে আমাকেও মনে করিয়ে দিচ্ছে। আর সাথে আমাদের খুনসুটি তো আছেই।
রিংকির আম্মু আর আরিশার আম্মু আমায় তো মাথায় তুলে রাখছে। কোন কাজই করতে দিচ্ছে না। এমনকি তারা নিজের হাতেই আমাকে খায়িয়ে দিচ্ছে। আমার সব কাজ তারা বেশ আলতো হাতেই করছে। রিংকি ও আরিশার বাবা দুইজনই একটু পর পর এসে দেখে যাচ্ছে আমি ঠিক আছি কিনা। আমার কিছু লাগবে কিনা। আমাকে এমন অনুভূতি করাচ্ছে যে আমি যেন তাদেরই মেয়ে। তাদের এত ভালবাসা পেয়ে যখন চোখটা অশ্রুতে ভরে আসে তখনই ওই দুই বান্দরনি সামনে এসে তা নিমিষে অদৃশ্য করে দেয় আর মুখের কোনে হাসি ফুটিয়ে তুলে। যদি কেউ আমাকে কখনো জিজ্ঞেস করতো যে আমার কাছে আসল বন্ধুর মানে কি? তখন আমি চোখ বন্ধ করে আরিশা আর রিংকির নাম নিয়ে নিতাম। সত্যিই তাদের মত বন্ধু বেশ দুর্লভ।
.
.
সূর্য হেলে পড়েছে পশ্চিমের দিকে। পাখিরা ছুটে চলেছে তাদের নীড়ের দিকে। সূর্য মামা ঘুমের দেশে তলিয়ে যেতেই জাগ্রত হয়ে উঠেছে অন্ধকার। এই অন্ধকারেই জ্বলে উঠেছে বাড়ির গায়ে লাগানো মরিচ বাতি গুলো। ঝলমল করে উঠেছে চারদিক।
কিছুক্ষণ আগেই মেকাপ আর্টিস্টরা সাজিয়ে চলে গিয়েছে। আমি রুমে বসে নিজের অর্নামেন্টসগুলো ঠিক করছি। তখনই নজর যায় আমার আয়নার দিকে। নিজেকে দেখে বিশ্বাসই হচ্ছে না এইটা আমি।
.
* পড়নে আমার লেমন কালার একটি লেহেঙ্গা। তার মধ্যে গোল্ডেন কালার জরি সুতা দিয়ে কারুকাজ করা। মুখে হেভি মেকাপ। ঠোঁটে হাল্কা মিষ্টি কালারের একটি লিপস্টিক। গোলায়, কানে ও মাথায় কাঁচা ফুলের অর্নামেন্টস। কাঁচা ফুলের গন্ধের চারদিক মো মো করছে। দুই হাতে আমার লেমন কালারের রেশমি চুড়ি। তার মাঝেই দুটো রাখি দোল খাচ্ছে। মেহেদিতে রাঙা দুইটি হাত। হাতের ও পায়ের উপরে সুন্দর করে আলতা লাগানো। নাকে একটা সরু নথ ঝুলানো। মাথায় ওরনা দেওয়া আর চুল গুলো এক পাশে খোঁপা করা ও সামনে দিয়ে কার্ল করা।
.
নিজেকে এমন রুপে দেখে বেশ লজ্জাই লাগছে। কেন জানি না। রিয়ানের কথা ভাবতেই যেন এই লজ্জাটা শত গুন বেড়ে যাচ্ছে। আমি চোখ বন্ধ করে জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছি আর নিজেকে সংযত রাখার চেষ্টা করছি।
তখনই রিংকি আর আরিশা এসে হাজির হয় রুমে। আমি চোখ খুলে তাদের দিকে তাকাই। দুইজনই আজ কমলা কালারের লেহেঙ্গা পড়েছে।
.
* আরিশার মুখে হেভি মেকাপ। সাথে হাল্কা অর্নামেন্টস। চুল গুলো সামনে দিয়ে পাফ করে সাইড দিয়ে খোঁপা করেছে সে। কপালে ছোট একটা টিকলি।
.
* রিংকির মুখেও হেভি মেকাপ। সাথে হাল্কা অর্নামেন্টস। চুলগুলো সামনে দিয়ে পাফ করে পিছন দিয়ে স্ট্রেট করে ছেড়ে দিয়েছে। কপালে ছোট একটা টিকলি।
.
.
দুইজন আমার সামনে এসে বলে,
.
— তোকে আজ যা লাগছে না ইয়ার। একদম ফুলের রাজ্যের রাজকন্যা। (আরিশা)
.
— কিসি কি নাজার না লাগে। থু থু। হাত দিয়ে রিয়ানার মাথার পাশ দিয়ে ঘুরিয়ে আরিশার দিকে তাকিয়ে। (রিংকি)
.
আরিশা এইবার ছিটকে দাড়িয়ে রিংকির দিকে এইবার ওর দিকে তেড়ে এসে বলে।
.
— তোকে তো আমি!! (আরিশা)
.
— আরেহ বাবা ব্যাস! আজকের দিনে তো ঝগড়া বাদ দে।
.
— হুহ! (আরিশা)
.
— আজকে দেখিস ভাইয়া তোর উপর ফিদা হয়ে যাবে।(রিংকি)
.
( এই কয়েকদিনে আরিশা আর রিংকি রিয়ানকে ভাইয়া বলতে শুরু করেছে।)
.
— এখন তারাতারি চল, কার এসে পড়েছে। (আরিশা)
.
.
?
.
চারদিকে আলো ঝলমল করেই চলেছে। সোনালি রঙের মরিচ বাতি দিয়ে সাজানো। ঠিক মাঝখানে একটি স্টেজ বানানো। পিছনেই বিভিন্ন রঙের নেট কাপড় সাজানো। স্টেজের সামনে নাচের জন্য অনেক খানি খালি জায়গায় রাখা হয়েছে। সাইডে বড় বড় স্পিকারের বক্স।এর পরই সারি সারি চেয়ার। এক সাইডে হাল্কা নাস্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
সকল মেহমান এসে পড়েছে। থিম কালার কমলা বলে সকলেই সেই কালারটি এই পড়েছে।
ছেলেরা পড়েছে কমলা রঙের পাঞ্জাবি আর সাদা চুড়িদার। মেয়েরা কমলা রঙের লেহেঙ্গা, কামিজ পড়েছে।
রিয়ান সব কিছু ভালো ভাবে চেক করেই চলেছে। তখনই তার নজর যায় গেটের দিকে। সেই দিকে তাকিয়েই তার দৃষ্টি স্থির হয়ে যায়। রিয়ানা ধীর পায়ে হলরুমে প্রবেশ করছে। চোখে মুখে খুশির ঝলক। রিয়ান মুচকি হেসে রিয়ানার দিকে এগিয়ে যায়।
.
আমি মাথা তুলে সামনে তাকাতেই রিয়ানকে দেখতে পাই। সে আজ আমার সাথে মিলিয়ে লেমন কালারের একটা পাঞ্জাবি পড়েছে তার উপর গোল্ডেন কালারের একটি কুর্তি। ( আমি সিউর জানি না একে কি বলে। তাই ভুল হলে তা ক্ষমা দৃষ্টিতে দেখবেন।)
সাথে সাদা চুড়িদার। চুল গুলো ব্রাশ করেছে।
আমি রিয়ানের দিকে মুচকি হেসে এগিয়ে যাই। রিয়ান আমাকে নিয়ে স্টেজের দিকে যায়। তারপর আমার একটু কাছে এসে ধীর কণ্ঠে বলে,
.
— আজ তোমার থেকে চোখ সরানোটা দায় সমান হয়ে উঠেছে আমার জন্য রিয়ুপাখি। যতই দেখছি মন আর ভরছে না। এত মোহনীয় কেন তুমি? কেন বার বার আমি তোমাতে আসক্ত হয়ে পড়ি?
.
— ভালবাসেন বলে তাই। মুচকি হেসে।
.
অতঃপর দুইজনেই স্টেজে গিয়ে বসি। সকলেই এইবার এসে কৌশল বিনিময় করতে থাকে।একটু পর ফোটোগ্রাফার এসে আমাদের সাইডে নিয়ে যায় ছবি তুলার জন্য।
.
.
?
.
— ওই ব্রিটিশ বান্দর! (রিংকি)
.
— জ্বি বলেন মিস বকবক। (ইশান)
.
— সব স্টেপ মনে আছে তো? স্টেপে যাতে কোন ভুল না হয়। ভুল হলে কিন্তু তোমার খবর আছে। ভেংচি কেটে।
.
— অহহ হ্যালো! ইশান যে কাজ করে তা একদম পার্ফেক্টলি করে। ভাব নিয়ে।
.
— রিংকিও যা করে তা একদম পার্ফেক্টলি করে। হুহ!
.
— যানা আছে কত পার্ফেক্টলি করো! আড়চোখে তাকিয়ে।
.
— কি বললা!! একটু চেঁচিয়ে।
.
— নাথিং! বাই দ্যা ওয়ে তোমার থেকে আমি কিন্তু কিছু পাই।
.
— কি পাও? সন্দেহ দৃষ্টিতে ইশানের দিকে তাকিয়ে।
.
— আমার ইয়ারফোন! কালকে কিন্তু তুমি ভুলে ওইটা নিয়ে গিয়েছিলে।
.
— উপস সরি! একদম ভুলে গিয়েছিলাম। আচ্ছা পরের বার নিয়ে আসবো নে।
.
— হু!
.
[ এই কয়েকদিনে দুইজনের মধ্যে বন্ধুত্ব হয়ে যায় যার জন্য এখন তারা “তুমি” করে কথা বলে। ]
.
.
?
.
— সিয়াম হাতটা ছাড়ুন না প্লিজ! সবাই আছে এইখানে কেউ দেখে ফেলবে! অসহায় ভাবে সিয়ামের দিকে তাকিয়ে। (আরিশা)
.
— উহু! আগে আমি আমার চাওয়া জিনিসটা চাই। ওইটা না পাওয়া পর্যন্ত নো ছাড়াছাড়ি। (সিয়াম)
.
— আপনি কি জানেন? আপনি কতটা অসভ্য?
.
— শুধুই তোমার জন্য প্রিয়। চোখ টিপ দিয়ে।
.
— হুহ! অসহ্য।
.
— আই নো। এখন আমার জিনিসটা দাও। তা না হলে আমার থেকে ছাড়া পাবে না।
.
আরিশা এইবার না পেরে সিয়ামের গালে কিস করে। সিয়াম এইবার ওর হাত ছেড়ে দেয় আরিশা ছাড়া পেতে দৌড়ে চলে যায়। সিয়াম সেই দিকে তাকিয়ে হেসে দেয়।
.
.
?
.
— এটেনশন এভরি ওয়ান! সকলের অনেক বরিং লাগছে তাই না? কিন্তু এই বরিংনেসটা আর থাকবে না।
হলুদে এসেছেন আর নাচ গান হবে না এমন কিভাবে হয়? এখনই শুরু হতে চলেছে আমাদের নাচ ও গানের পর্ব। প্রথমেই হবে গ্রুপ ডান্স। So let’s get started!! (ইশান)
.
সকলেই এইবার করতালিতে মেতে উঠে। এইবার একে একে সকলেই এসে পড়ে। আর নিজের জায়গা নিয়ে নেয়। নিলা+ হিমেল , রিনা + সিয়াম, মাইশা + জ্যাক, শুভ+ দোলন, আরিশা+ ড. সিয়াম, রিংকি+ ইশান। এদের সকলের সামনে গিয়ে দাড়ায় রিয়ান আর রিয়ানা। এইবার স্পিকারে এইবার গান বাজতে শুরু করে।
.
.
?
Ho avi gayi Raat…
Ane bhulo badhi Baat….
Prem niya mausom che…
Aabh aao mere pass..
Reh jao mere saath….
Prem niya mausom che…(২×)
.
রিয়ান রিয়নাকে পেছন দিয়ে ঘুরে এসে ওকে জড়িয়ে ধরে, সাথে সাথে বাকিরাও।
.
.
Mil jaye mujhko aagar saath tera
To bhulu main sara jahaan….
Chogada tara… Chabila tara…
Rangila tara Rang bher juwe tari vaat re…
Ho Chogada tara… Chabila tara…
Rangila tara Rang bher juwe tari vaat re…
.
রিয়ানা রিয়ানের দু কাধে হাত রেখে স্টেপ করলো। তখনই গান চেঞ্জ হয়ে যায়। আর ওরা এইবার জায়গা চেঞ্জ করে।
.
.
Munda thoda.. offbeat hai
Par kudiya de naal.. bohat sweet hai (x2)
.
রিয়ানা রিয়ানের গাল টেনে উল্টো ঘুরে স্টেপ করে। বাকিরাও একই ভাবে করে।
.
Dhongi sa ye bada dheeth hai
Viral hogya ye Tweet
Par phool wool karne mein cool
Tu badi tezz katari hai
Shagan teri ki, lagan teri ki
Humne kardi taiyari hai
Nachde ne saare ral-mil ke
Aaj hil-dul ke
Le saare ke saare nazare (x2)
.
রিয়ান এইবার রিয়ানাকে ঘুরিয়ে স্টেপ করতে থাকে। তখন আবার গান চেঞ্জ হয়ে যায় আর বাকিরা সাইডে সরে চলে যায়। আর রিয়ানা ও রিয়ান একা রয়ে যায়। রিয়ান এইবার রিয়ানার কোমরে হাত রাখে আর রিয়ানা রিয়ানের কাধে হাত রাখে।
.
.
Kehte Hain Khuda Ne Iss Jahan Mein Sabhi Ke Liye
Kisi Na Kisi Ko Hai Banaya Har Kisi Ke liye
Tera Milna Hai Uss Rab Ka Ishaara Maanu
Mujhko Banaya Tere Jaise Hi Kisi Ke Liye
Kehte Hain Khuda Ne Iss Jahan Mein Sabhi Ke Liye (২×)
.
রিয়ান রিয়ানাকে ঘুরিয়ে নিজের পিঠের সাথে ঠেকালো আর স্টেপ করলো।
.
Kuch Toh Hai Tujhse Raabta
Kuch Toh Hai Tujhse Raabta
Kaise Hum Jaane Hume Kya pata
.
রিয়ান এইবার রিয়ানার মিডল ফিঙ্গার ধরে ওকে ঘুড়ায় তারপরে ওর কোমর জড়িয়ে উপরের দিকে তুলল।
.
এইবার সকলেই করোতালিতে মেতে উঠে। রিয়ান রিয়ানাকে নামিয়ে দেয় তারপর তারা সাইডে চলে আসে।
এরপর আরিশা, রিংকি আর রিয়ানা ডান্সফ্লোরে আসে। তিনজনই কালো চশমা পড়া থাকে। তারপর গান বাজতে শুরু করে।
.
.
Hoga Handsome Sona Sabse
Mere Dil Ko Gaya Lekar
Meri Neend Churali Usne
Aur Khwaab Gaya Dekar
Hoga Handsome Sona Sabse
Mere Dil Ko Gaya Lekar
Meri Neend Churali Usne
Aur Khwaab Gaya Dekar
.
হাত গুলো একসাথে করে ঘুমের ভানের মত করে এই পাশ আর ওইপাশ করে স্টেপ করে।
.
Ab Yeh Naina Bole Yaar
Bole Yahi Lagataar
Koi Chahein Kitna Roke
Karoongi Pyaar
.
রিয়ানের দিকে কিসের মত ইশারা করে।
.
Mere Saiyaan Superstar
Mere Saiyaan Superstar
Main Fan Huyi Unki
O Mere Saiyaan Superstar ( ২×)
.
গান শেষ হতেই সকলে করতালিতে আবার মেতে উঠে। রিয়ান তো একদম হা হয়ে রিয়ানার দিকে তাকিয়ে থাকে। রিয়ান কখনো রিয়ানাকে এমন লুকে দেখে নি। আর ও যে এত ভালো নাচতেও পারে তাও ওর জানা ছিল না। রিয়ান তো এইবার পুরা ফিদা।।
অন্য দিকে সিয়াম আর ইশানও হা হয়ে আছে। সিয়াম তো আরিশাকে দেখে আর ইশান রিংকিকে দেখে। কেন জানি ইশানের রিংকির দিক থেকে চোখই সরছে না।
.
.
?
.
নাচের পর্ব শেষে সকলেই খাবারের জন্য বসে পড়ে। নাচের সময় আমার ওরনাটা কিছুটা সরে যায়। তাই আমি আরিশাকে বলে ওয়াসরুমের দিকে চলে আসি।
সকলে যেহেতু খাওয়াতে ব্যস্ত তাই ওয়াশরুমটা তখন একদম ফাঁকা ছিল। আমি আয়নার সামনে দাড়িয়ে ওরনা ঠিক করছি। তখন আয়নায় আবছার মত দেখলাম কালো কিছু একটা দ্রুত গতিতে আমার পিছন দিয়ে গেল। আমি পিছে তাকাতেই দেখি কেউ নেই।
আমি মনের ভুল মনে করে আবার ওরনা ঠিক করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ি। তখন কানে কিছু পড়ার শব্দ কানে আসতেই আমি পিছনে ঘুরি। তখন দেখি কেউ একটা লোহার রড নিয়ে আমার দিকে আঘাত করতে চলেছে। আমি সাথে সাথে এক চিৎকার দিয়ে ভয়ে হাত সামনে নিয়ে চোখ দুটো বন্ধ করে ফেলি।
#Part_38
#Writer_Asfiya_Islam_Jannat
.
?
কানে কিছু পড়ার শব্দ কানে আসতেই আমি পিছনে ঘুরি। তখন দেখি কেউ একটা লোহার রড নিয়ে আমার দিকে আঘাত করতে চলেছে। আমি সাথে সাথে এক চিৎকার দিয়ে ভয়ে হাত সামনে নিয়ে চোখ দুটো বন্ধ করে ফেলি।
অতঃপর কোন সারা শব্দ না পেয়ে ধীরে ধীরে চোখ খুলতে শুরু করি। সামনে তাকিয়ে দেখি কেউ নেই। আমি অবাক হয়ে চারদিক দেখতে লাগলাম৷ না কেউ নেই।
.
— এইটা কিভাবে সম্ভব? মাত্রই তো এইখানে একজন ছিল। তাহলে কি ওইটা আমার মনে ভুল ছিল।
.
তখনই দরজা ঠেলে আরিশা ওয়াশরুমে আসে। আর আমার কাছে এসে বলে,
.
— কিরে! হয়নি তোর। ভাইয়া তোকে কখন থেকে খুঁজছে। তারাতারি আয়!
.
— হুম হয়ে গিয়েছে। কিন্তু..
.
— কি কিন্তু মিন্তু লাগিয়ে দিয়েছিস। তারাতারি আয় না বইন।
.
— হুম চল।
তারপর হাটা শুরু করি আর বার বার আশে পাশে চোখ বুলাতে থাকি। কেন যেন মনে হচ্ছে এইখানে কেউ আছে।
.
.
?
.
রিয়ানের কাছে আসতেই রিয়ান সকলের নজরে ফাকি দিয়ে আমাকে রিসোর্টের উপরতলার একটি রুমে নিয়ে আসে। আমি হাবলার মত তারদিকে তাকিয়ে থাকি। বুঝার চেষ্টা করি আসলে তিনি করতে কি চাচ্ছেন। কিন্তু তাতে আমি ব্যর্থ হয়ে তাকে জিজ্ঞেস করি,
.
— এইখানে আমাকে কেন এনেছেন?
.
— আমাদের ফিউচার বাচ্চাদের নাম ঠিক করতে। শান্ত চাহনিতে।
.
এই কথাটা শুনার সাথে সাথে আমার কাশি উঠে যায়। রিয়ান টেবিলে থাকা পানির বোতলটা আমায় এগিয়ে দেয়। আমি তারাতারি পানিটা খেয়ে ফেলি। তারপর তার দিকে তাকাই। তার চাহনি এখনো শান্ত। আমার বুঝতে আর দেরি নি যে রিয়ান আমার এই কথা প্রচন্ড রেগে গিয়েছে। আমি স্মিত হেসে বলি,
.
— ইয়ে মানে! আপনাকে না আজকে অনেক বান্দর থুরি সুন্দর লাগছে।
.
আমার এমন কথায় রিয়ান মাথায় হাত দিয়ে বলে,
.
— তোমার কিছু হবে না। ইউ আর জাস্ট ইম্পসিবল।
.
— হুহ!
বলে চারদিকে চোখ বুলিয়ে দেখতে থাকি। বেশ সাজানো গুছানো রুমটি।
তখন হুট করেই রিয়ান আমার হাত ধরে টান দিয়ে তার একদম কাছে নিয়ে আসে। আমি এইবার তার দিকে বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে থাকি। রিয়ান এইবার আলতো হাতে আমার কোমর জড়িয়ে ধরে আর আমার কানের সামনে মুখ এনে বলে,
.
— আমার কাছে আসলে কেন খালি পালাই পালাই করো। আমাকে পছন্দ নয় নাকি আমার স্পর্শগুলোকে।
.
— ততেমন ককিছু ননা! পপ্লিজ ছছাড়ুন।
.
— এতো তারা কিসের? যে কাজ করতে তোমায় এইখানে এনেছি তা তো আগে করে নি।
.
— মমমানে!
.
রিয়ান কিছু না বলে আমার দিকে ঝুঁকে আসে। রিয়ানকে ঝুঁকে আসতে দেখেই আমি সাথে সাথে চোখ বন্ধ করে ফেলি।
রিয়ান পাশের টেবিল হতে হলুদের কোটা থেকে হাল্কা হলুদ উঠিয়ে আমার গালে ছুঁয়ে দেয়।
গালে তরল জাতীয় কিছু অনুভব করাতেই চট করে চোখ খুলে ফেলি। তারপর গালে হাত দেখি হলুদ। আমি এইবার বিষ্ময়কর চোখে তার দিকে তাকিয়ে থাকি। সে আবার আমার কানে সামনে এসে ধীর কন্ঠে বলে,
.
— তোমাকে সর্বপ্রথম হলুদ দেওয়ার অধিকার শুধুই আমার। নিজের রিয়ুপাখিকে হলুদকুড়িতে পরিনত হতে সর্বপ্রথম দেখার অধিকারটাও আমার। আর আমি আমার অধিকার কাউরো সাথে শেয়ার করি না। এই বলে রিয়ান সরে আসে।
.
আমি এইবার মুচকি হেসে হলুদের কোটা থেকে হলুদ নিয়ে রিয়ানের গালে ছুঁয়ে দেই। তারপর মুচকি হেসে বলি।
.
— তাহলে আপনাকেও সর্বপ্রথম হলুদ দেওয়ার অধিকারও আমার।
.
— হুহ!
.
.
?
.
স্টেজের মধ্যে বসে আছি। একেক করে সকলেই এসে হলুদ ছুঁয়ে দিচ্ছে। একটু আগেই আরিশা আর রিংকি এসে আমায় ভূত বানিয়ে দিয়ে দৌড়ে পালিয়েছে। আমি রাগে ফুসতে ফুসতে টিস্যু দিয়ে সেগুলো মুছতে ব্যস্ত হয়ে পড়ি। আর রিয়ান আমায় দেখে মুচকি হাসতে শুরু করে। আমি এইবার চোখ গরম করে তার দিকে তাকাই।
.
.
আরিশা দৌড়াতে গিয়ে সিয়ামের সাথে ধাক্কা খায়। সিয়াম আরিশাকে দেখে দুষ্টু হাসি দেয় তারপর হলুদ মাখা হাতটা ধরে ওর গালে লাগিয়ে দেয়। আরিশা বড় বড় চোখ করে সিয়ামের দিকে তাকিয়ে বলে,
.
— এইটা কি করলেন?
.
— শুনেছি যে বউয়ের গায়ের লাগানো হলুদটা যদি কোন কুমারী মেয়েকে লাগিয়ে দেওয়া হয় তাহলে তার বিয়ে খুব তারাতারি হয়ে যায়। এর মানে তোমার আমার বিয়েও খুব জলদি হয়ে যাবে। মুচকি হেসে।
.
— আপনি! আপনি না অনেক বড় একটা অসভ্য।
এই বলে আরিশা দৌড়ে পালায়।
.
.
রিংকি হলুদ মাখা দুই হাতে ওয়াশরুমের সামনে দাড়িয়ে আছে। গেটটা খুলতেই পারছে না সে। আশে পাশে কেউ নেইও যে বলবে। তখনই ওয়াশরুমের দরজা খুলতে শুরু করে। রিংকি তা দেখে খুশি হয়ে দ্রুত পায়ে ওয়াশরুমের ভিতরে যেতে নিলে ওর হাত দুটো কাউরো বুকের মধ্যে গিয়ে ঠেকে আর ওর হাতের হলুদ তার জামাতে লেগে যায়। রিংকি তা দেখে বলে,
.
— সরি সরি আসলে আমি দেখি নি। বলে মুখ উঁচু করতেই দেখে ইশানকে।
ইশান ভ্রু কুচকিয়ে বলে,
.
— হোয়াট দ্যা হেল! দেখে চলতে পারো না?
.
— না পারি না।
.
— তুমি কোন দিন ঠিক মত জবাব দিতে পারো না তাই না? Such a mannerless person.
.
— কি বললা?? সাহস তো কম না এখনই আমার সরি ফিরত দিন। আপনার মত ব্রিটিশ বান্দর আমার সরি এর যোগ্য না।
.
ইশান এই কথায় রেগে গিয়ে রিংকির হাত ধরে ওর গালে হলুদ লাগিয়ে দিয়ে বলে,
.
— ট্যাক ইউর সরি ব্যাক। ইউ নিডেড দিস মোর দ্যান মি।
.
— ইউউউ!!
ব্যাস লেগে গেল আবার তৃতীয় বিশ্ব যুদ্ধ।
.
.
?
.
বিছানায় শুতেই শরীরটা ছেড়ে দেয়। সকল ক্লান্তি এসে ভীড় করে দুই নয়ন জুড়ে। আজ সারাদিনের যে পরিমান দখল গিয়েছে তা বলার বাহিরে।
আরিশা আর রিংকি পাশেই মরার মত ঘুমাচ্ছে। ওদের দুইজনের দেখাদেখি এখন যেন ঘুমের নেশাটা একদম আঁকড়ে ধরে। তাই এইবার নিজের নয়ন দুটো আর খোলা রাখতে না পেড়ে তলিয়ে যাই ঘুমের রাজ্যে।
.
.
সকালে আরিশা আর রিংকির চেঁচামেচিতে ঘুমটা ভেঙে যায়। পিটি করে চোখ খুলে তাদের দিকে তাকাই। তারপর আরমোড় ভেঙে বিছানা থেকে উঠে ওদের দিকে ভালো মত করে তাকাই। তাকিয়ে যা দেখি তাতে আমি হা হয়ে থাকি।
.
.
#চলবে