#অবশেষে_পূর্ণতা
#লেখক_আহম্মেদ_নীল
#পর্ব_১৯(শেষ)
‘সামিয়া ফুসকা পড়া হাতে পানি দিচ্ছিলো,এমন সময়,তার নাক থেকে আবারও অনবরত রক্ত পড়তে থাকে। চোখে তার রাতের মতো আধার নেমে আসে। সবকিছু তার কাছে ঘোলা ঘোলা লাগে। নিজের শরীরের সবটুকু চেষ্টা দিয়েও সামিয়া নিজেকে দাড় কড়িয়ে রাখতে পাড়েনা। মা বলে ওয়াশরুমে আচড়ে পড়ে যায়। সামিয়ার এমন চিল্লানো কন্ঠ শুনে নারগিস বেগম আর আতিক উঠে যায়।
-‘আতিক নারগিস বেগমের রুমে গিয়ে সামিয়াকে খুজতে থাকে। আর নারগিস বেগম যায় আতিকের রুমে। দুজন মুখোমুখি হয়ে বলতে লাগে,,সামিয়া কোথায়.? আমিতো ভাবলাম তোমার রুমে। নারগিস বেগম আর আতিক তড়িঘড়ি ওয়াশরুমে গিয়ে যা দেখলো,তা দেখার জন্য একটুও প্রস্তুত ছিলো না। সামিয়ার নিথর দেহটা পড়ে আছে ওয়াশরুমের ফ্লোরে। নাক দিয়ে রক্ত পড়ে পুড়ো ফ্লোরটা ভেসে গেছে। নারগিস বেগম হতভম্ব হয়ে যায় সামিয়াকে এভাবে পড়ে থাকতে দেখে। আতিক সামিয়াকে কাছে গিয়ে কয়েকবার ডাকাডাকির পরও সামিয়া কোন সাড়া পায়না। আতিক দ্রুত এম্বুলেন্স ডাকে,তারপর সামিয়াকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। গাড়ি থেকেই নামাতেই ডাক্তারের এসে সামিয়ার হাতটা দেখে। আই এম সরি মিস্টার আতিক হাসান, বলেই ডাক্তার চলে যায়। নারগিস বেগম বুঝতে পারে,সামিয়া চিরতরে ঘুমিয়ে গেছে। তাকে হাজারো চেষ্টা করলেও সে আর উঠবে না। আতিকের মনে পড়ে সামিয়া আর ফারিয়ার সাথে করা অন্যায়গুলোর কথা। আবার এম্বুলেন্স এ করে বাসায় নিয়ে যায় সামিয়াকে। সামিয়ার পরিবারকে কল করা হয়,একে একে তারা সবাই আসে। নারগিস বেগম ব্রেইন ক্যান্সার ধরার পরার পর সামিয়ার বাবাকে পুরো বিষয়টা জানায়,সামিয়ার বাবাও নারগিস বেগমকে বলে,সামিয়াকে বিষয়টা না বলতে।
-“তাই সামিয়ার বাবাও নারগিস বেগমকে কিছু বলে না। কারন সামিয়ার বাবাকে পুরো বিষয়টা তো নারগিস বেগম আগেই বলেছিলো। সামিয়া বাবা হাসান মন্ডল এসে দেখে মেয়ের নিথর দেহটা মেঝেতে রয়েছে। শরীরের উপর একটা দামি চাদর দেওয়া রয়েছে। মেয়ের কাছে এসেই মেয়েকে বুকে জড়িয়ে নিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়ে। অনেক আদরের একমাত্র মেয়ে বলে কথা। আতিক ও কান্না করে,আর নারগিস বেগমও কান্না করে। তবে আজ যা ঘটছে সবকিছু নারগিস বেগমের পাপের ফল হয়তো।
‘দেখতে দেখতে সামিয়ার শেষ বিদায় নেওয়ার সময় ঘুনিয়ে এলো। হাসান মন্ডল মেয়েকে কোথাও নিয়ে যেতে দিবে না,,মেয়েকে যে বড্ড বেশি ভালোবাসে হাসান মন্ডল। অনেকে তাকে বুঝিয়ে বলে,মৃত্যুর স্বাদ যে সবাইকে একে একে গ্রহণ করতে হবে। এই পৃথিবীতে কেউ যে সারাজীবন থাকতে পারবে না। হাসান মন্ডল কান্নারত অবস্থায় মেয়ের জানাজা করার কাজটা করতে নিয়ে যায়,মসদিজে। জানাজার কাজটা শেষ করে সামিয়াকে নিয়ে যায়,তার আসল ঠিকানা,যেখানে আমাদের আলস বাড়ি বলা হয়। কবরের ভিতরে ঘুটঘুটে অন্ধকারে জায়গায় সামিয়াকে রেখে আসে। সবাই চলে আসলেও হাসান মন্ডল মেয়ের কবরের কাছে বসে চিৎকার করে কান্না করতে থাকে। তার চিৎকার আর কান্নার আর্তনাদ শুনে,বসন্তে গজানো গাছের নতুন পাতাগুলোও কাপতে থাকে। (লেখক_আহম্মেদ_নীল)হয়তো তারা মেয়ে হারা একটা বাবার আর্তনাদগুলো বুঝতে পারে,মাটিতে দিতে যাওয়া সকল মানুষ জোর করে হাসান মন্ডলকে নিয়ে আসে। হাসান মন্ডল যে বড্ড বেশি অসহায় আজকে। তার একমাত্র মেয়ে আজ আর নেই,চিরতরের মতো বিদায় নিয়েছে।
“দেখতে দেখতে মাস খানিক পার হয়ে যেতে লাগে। সবকিছু এখন স্বাভাবিক আছে। তবে নারগিস বেগমের মনে একরাশ ভয় ছেলের জন্য। আতিক এর রুমে গিয়ে ছেলের পাশে বসতেই,আতিক বললো,কিছু বলবে মম.? ছলছল নয়নে নারগিস বেগম বললো,আতিক বাবা আজকে থেকে তুই আমার চোখের সামনে থাকবি,তোর অফিসে যাওয়া লাগবে না। কি বলো মম এগুলো.? তোমার মাথা কি একেবারে গেছে.? না বাবা আমি তোকে হারাতে পারবো না। তুই ছাড়া যে এই পৃথিবীতে আমার কেউ নেই। মম আজকে যা কিছু হচ্ছে, সবকিছু তোমার জন্য আর আমার জন্যই। ফারিয়ার সাথে আমরা যে অন্যায় করেছি তা আমরা একে একে ফেরতে পাচ্ছি। সৃষ্টিকর্তা ছাড় দেয় কিন্তুু ছেড়ে দেয়না। নারগিস বেগম আতিক এর পা ধরে বলে,আতিক আমরা ফারিয়ার কাছে যাবো। তারপর ওর পা ধরে ক্ষমা চেয়ে নিবো। ও যদি মাফ করে দেয় তাহলে আমরা একটু হলেও শান্তি পাবো। মম তোমার এসব ন্যাকামো কথা বাদ দাও,ফারিয়ার সাথে আমরা যত বড় অন্যায় করেছি,এটা ক্ষমার অযোগ্য। একটা মেয়ের সংসার ভেঙেছো তুমি,এর ক্ষমা হয়না।
-‘আতিক ১ সপ্তাহ ঘুমায় নি। সামিয়ার এমন অকাল মৃত্যু তাকে অনেকটা হতাশ করিয়ে তুলে। না ঘুমানোর কারনে সে একপ্রকার মানসিক রোগী হয়ে গেছে, চোখর নিচে কালি জমে গেছে না ঘুমানোর কারনে।(লেখক_আহম্মেদ_নীল) মম আমি একটু বাইরে যাবো। তখুনি নারগিস বেগম আতিক এর পা ধরে বলে,বাবা তুই কোথাও যাবিনে। মম প্লিজ পা ছাড়ো,আমি তোমার কথা না শুনলে হয়তো আজ সুখে থাকতে পারতাম,এমন একটা কঠিন সময়ের সম্মুখীন হতে হতো না। বলেই সজোরে পা টা ঝামটি মেরে নারগিস বেগমের কাছ থেকে সড়িয়ে নেয়। তারপর গাড়ি নিয়ে চলে যায়।এদিকে নারগিস বেগম ফ্লোরে বসে বসে কান্না করতে থাকে বাচ্চাদের মতো। তার কান্না গুলো বোবা কান্নাতে রুপ নেয়। নারগিস বেগম নিজের করা সকল ভুলগুলো বুঝতে পারে,তবে ভুলগুলো হয়তো আর কখনো সুধরাতে পারবে না।
-“আতিক হাই স্পিডে গাড়ি চালাতে থাকে,,হঠাৎ গাড়ির নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে। ব্রেক কষলেও রক্ষা হয়না আতিকের। সামনে থাকা ট্টাকের সাথে ধাক্কা লাগে। ছিটকে পড়ে রোডের উপর,পিছন থেকে আসা আরেকটা গাড়ি আতিককে পিসে চলে যায়। আতিকের দেহটা খন্ড বিখন্ড হয়ে পড়ে থাকে রাস্তার পাশে। কয়েকজন মানুষ এসে আতিকের খন্ড বিখন্ড দেহটাকে দেহে বলে,,এত নিষ্ঠার মৃত্যু এর আগে আমরা কখনো দেখিনি। (লেখক_আহম্মেদ_নীল)তারপর মিডিয়ার কিছু লোক এসে তা নিউজ তৈরি করে। এমন সময় নারগিস বেগম টিভি অন করে দেশের খবর দেখছিলো,এমন সময় আতিকের মুখটা দেখে নারগিস বেগম প্রথমে ভাবে হয়তো চোখে ভুল দেখছে। সাথে সাথে সে দৌড়ে চলে যায়,ছেলেকে দেখার জন্য। বাড়ির সামনে বের হতেই দেখতে পেলো একটা এম্বুলেন্স দাড়িয়ে আছে। নেহাল আতিকের খন্ড বিখন্ড দেহটাকে লাবিয়ে আনছে।
‘কয়েকজন মিলে বাসার ভেতরে রাখে আতিককে। নারগিস বেগম কাঠ হয়ে দাড়িয়ে থাকে। তার চোখ দিয়ে একফুটাও পানি বের হচ্ছে না। চোখের অশ্রুগুলোও হয়তো নারগিস বেগমকে অভিশাপ দিচ্ছে। নারগিস বেগম আতিক এর মুখে থাকা চাদরটা উঠাতেই,সে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। সেদিনের পর থেকে ছেলে হাড়ানোর শোকে পাগল হয়ে যায় নারগিস বেগম।পথে পথে আতিককে খুঁজতে থাকে। রাস্তার পাশে যাকে সে দেখে আতিক ভেবে ডাকতে থাকে আর চিৎকার করে কান্না করতে থাকে। হয়তো নারগিস বেগমের করা সকল পাপের কারনে আজ সে সব হারিয়েছে। হয়তো এগুলোই ছিলো প্রকৃতির বিচার। যা থেকে কেউ কখনো রক্ষা পায়না।
(লেখক_আহম্মেদ_নীল)
___________________
“আতিক যেদিন মারা যায়,সেদিনি জন্ম হয় একটা নিষ্পাপ ফুটফুটে শিশুর। ডাক্তার এসে নীলকে সুখবর দেয়,তাদের পুত্র সন্তান হয়েছে। ইমতিয়াজ চৌধুরী আর সাদিয়া বেগম তো মহা খুশি আজ তারা দাদু, দিদা হয়েছে। এর চেয়ে মহা খুশির দিন আর কি আসবে তাদের মাঝে। হয়তো না। ফারিয়ার জ্ঞান ফিরলে,নীল রুমে যায়,তারপর ছেলেকে কোলে তুলে নেয়। ফারিয়া নীলকে দেখে কান্না করে দেয়,ফারিয়ার চোখ দিয়ে পানি পড়তে থাকে। হয়তো এটা পরম সুখের কান্না।নীল ফারিয়াকে দেখায় তাদের আদরের সন্তানকে।
-‘এভাবে আরো কয়েকটা বছর কেটে যায় চোখের নিমিষেই। ইসলামরক নিয়ম অনুসারে বিয়েটা সম্পুর্ন হয় ফারিয়া আর নীলের। ফারিয়া বুঝতে পারেনা এত তারাতাড়ি কেমন বছর পার হয়ে গেলো। দেখতে দেখতে ছয়টা বছর বাতাসের মতো কখন যে পার হয়ে গেলো তা কেউ বুঝতে পারলো না। নীল ছেলের নাম রাখে আদিত্য।(লেখক_আহম্মেদ_নীল) দেখতে একদম ফারিয়ার মতো,তবে দুষ্টমির দিক থেকে নীলের মতো। আদিত্য বয়স সাত বছর। এবারর দ্বিতীয় শ্রেনীতে টপ রেজাল্ট করেছে আদিত্য।
-“রাত প্রায় ১ টা বেজে গেছে। এখনো নীল বাসায় ফিরিনি। ইদানীং নীলের অফিসের কাজে একটু চাপ যাচ্ছে, তা ফারিয়া বুঝতে পারে। আদিত্য তার দাদু আর দিদার ঘরে ঘুমিয়ে পড়েছে।ফারিয়া নীলের জন্য খাবার টেবিলে অপেক্ষা করতে করতে ওখানে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়ে। হঠাৎ নিজেকে হাওয়ায় ভাবতে দেখে,সাথে সাথে চোখজোড়া খুলে নীলের কোলে নিজেকে আবিষ্কার করে।ফারিয়া চিৎকার করতে নিলেই,নীল তার ঠোঁটে আঙুল দিয়ে বলে,একদম শব্দ করবে না। নীল ফারিয়াকে পাজাকোলে উপরের রুমে নিয়ে চলে যায়। একটু পর একটা প্যাকেট হাতে দেয় ফারিয়ার হাতে। ফারিয়ে দেখে একটা নীল শাড়ি।(লেখক_আহম্মেদ_নীল) শাড়িটা অনেক দামি ফারিয়া বুঝতে পারে। অনেকটা সুন্দর লাগে শাড়িটা। ফারিয়া শাড়িটার দিকে তাকিয়ে কিছুক্ষণ স্হির হয়ে দাড়িয়ে থাকে। তারপর চেন্জিং রুমের দিকে যেতে গেলেই,নীল তাকে বাধা দিয়ে বলে, উহু। আজকে আমি আমার বউটাকে আমি নীল হাতে শাড়ি পড়িয়ে দিবো নিজ হাতে।
‘কথাটি বলে,নীল ফারিয়াকে নীজ হাতে শাড়ি পড়িয়ে দিতে লাগে। ফারিয়ার নরম পেটে নীলের হাতের ছোয়া পেয়ে শরীরটা কেপে উঠে। নীল শাড়ি পড়ানো শেষ হলে নীল ফারিয়ার দিকে অপলক দৃষ্টিতে কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকে।নীল শাড়িতে ফারিকে এক অন্যরকম সুন্দর লাগছে। (লেখক_আহম্মেদ_নীল)চিকন ঠোঁটজোড়া গোলাপী আকার ধারন করেছে। ফারিয়া নীলের স্পর্শে পাগল হয়ে উঠেছে। নীল নিজেকে আর নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে ফারিয়াকে পাজাকোলে নিয়ে বেডের ওপর ছুইয়ে দেয়। তারপর একটু একটু করে ফারিয়ার ঠোঁটে কাছে নিজের ঠোঁট নিয়ে যেতে লাগে। ফারিয়া চোখ বুঝে নেয়। নীলের ঠোঁটের স্পর্শে ফারিয়া আরো নীললে বুকের সাথে চেপে ধরে। ফারিয়া আজ তার ভেতরে জমে থাকা সকল ভালোবাসা নীলের মাঝে উজাড় করে দিবে। নীলকে আজ একটুও বাধা দিবেনা ফারিয়া।
“একটু একটু করে নীলের সাথে নিজেকে মিশিয়ে দিলো ফারিয়া। নীল আর ফারিয়া ডুব দিলো ভালোবাসার রাজ্যে। নীলের আর ফারিয়া আজ তাদের ভালোবাসাটাকে “অবশেষে_পূর্ণতা” দিয়ে স্বার্থক করলো। এভাবেই তাদের ভালোবাসা চলতে থাকে।
____________সমাপ্ত________________