#একদিন_বিকালে_সকাল_হয়েছিলো
লেখিকা: শারমিন আক্তার সাথী
পর্ব: ৪৮ (অন্তিম পর্ব)
সবাই শশীকে নিয়ে হসপিটালে গেল। রেনু হসপিটালে যাওয়ার পথেই লিপিকে কল করে শশীর কথা বলল। লিপিকে বলল,
‘ভাবি আপনি হসপিটালে চলে আসুন। মেসেজে আপনাকে কিছু জিনিসের কথা বলেছি সেগুলো নিয়ে আসবে। সাথে শশী কয়েক সেট কাপড়। হসপিটালে নিলেই ওকে মাস্ট ভর্তি দিবে। ক’দিন কী থাকা লাগে তা ঠিক নেই! শশীর কিছু কাপড় নিয়ে আসবেন।’
লিপি বলল,
‘আচ্ছা।’
শশীকে হসপিটালে নেওয়া পথেই ওর জ্ঞান ফিরল। শশীর মাথাটা রাযীনের কোলে রাখা। রাযীন ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। শশী চোখ মেলে রাযীনের দিকে তাকিয়ে আবার চোখ বন্ধ করে বিড়বিড় করে বলল,
‘আমিতো জেলে, রাযীন কোথা থেকে আসবে। স্বপ্ন! সবটা স্বপ্ন।’
রাযীন নিচু হয়ে শশীর মাথায় চুমো খেয়ে বলল,
‘কিছু স্বপ্ন না। আমি তোমার কাছেই আছি।’
শশী, রাযীনের কোমর জড়িয়ে ধরে চুপ করে রইল। ও যে মুক্তি পেয়েছে সেটা মনে করার চেষ্টা করল।
হসপিটালে পৌঁছানোর কিছু মিনিট পরই লিপিও আসল। রেনু আর লিপি মিলি শশীকে কাপড় পাল্টাতে সাহায্য করল। শশী বাথরুমে গিয়ে একটু ফ্রেশ হবে কিন্তু শরীরটা এত দুর্বল যে পারছে না। রেনু ওকে ধরে ভিতরে নিয়ে গিয়ে বলল,
‘শশী ফ্রেস হওয়ার সময় খেয়াল করবে তোমার কেমন ব্লিডিং হচ্ছে। ব্লিডিং এর সাথে রক্তের চাকা যাচ্ছে কিনা? আমার প্রেগনেন্সির সময় তো জানতাম না। পরে নার্স সব বুঝিয়ে বলেছিলেন। ফ্রেশ হওয়ার সময় তলপেটে বেশি প্রেসার দিও না।’
রেনু, শশীকে ফ্রেশ করিয়ে বেডে এনে শুয়ে দিয়ে পায়ের নিচে দুটো বালিশ দিয়ে দিল। রেনুর মতে এখনও মিসক্যারেজ হয়নি। বাকিটা ডাক্তার বলতে পারবেন। কিছুক্ষণ পর একজন মহিলা ডাক্তার এসে রেনুকে চেক করলেন। ওর প্রেসার মাপলেন, রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা, সুগারের মাত্র দেখলেন। তারপর একটা আলট্রাসনো দিলেন। ডাক্তার সুর্বনা, শশীকে চেকাপ করার সময় রেনুর সাথে কথা বলে শশী সম্পর্কে বিস্তারিত জানলেন। ডাক্তার সুর্বনা, শশীকে চেক করে বাইরে আসতেই রাযীন জিজ্ঞেস করল,
‘ডাক্তার শশীর কী অবস্থা?’
ডাক্তার সুর্বনা বললেন,
‘আপনি রোগীর কী হন?’
‘হ্যাজবেন্ড।’
‘দেখুন উনি ভীষণ উইক। প্রেসার ভয়ানক মাত্রায় লো। ৮০/৪০ বুঝতে পারছেন কত লো। একজন গর্ভবতীর শরীরে মিনিমাম ১০ পয়েন্টের উপরে হিমোগ্লোবিন থাকা দরকার তার আছে মাত্র ছয়। সুগার লেভেল ঠিক আছে। তবে আল্ট্রাস্নো না করে বাচ্চার কথা বলতে পারছি না। যেহেতু ব্লিডিং হচ্ছে সেহেতু মিসক্যারেজের চান্স প্রচুর। আর ওনার কেবল ফাস্ট ট্রাইমেস্টার চলছে। এসময় মিসক্যারেজের চান্স খুব বেশি থাকে। ভিতরে উনার সাথে যিনি ছিলেন তিনি আমাকে বলেছে, উনি এতদিন খুব বাজে অবস্থায় ছিলেন। এত মানসিক চাপেও ব্লিডিং হয় অনেক সময়। বাকিটা আল্ট্রাসনো করে বলব। সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করুন। ওনার আল্ট্রাসনো আমি এখনই করব। নার্স উনাকে আল্ট্রাসনোগ্রাফি রুমে নিয়ে আসছে।’
শশীকে কেবিন থেকে বের করার পর রাযীন শশীর দিকে, আর শশী রাযীনের দিকেই তাকিয়ে ছিলো। রাযীন, শশীর হাত ধরে বলল,
‘চিন্তা করো না, এখন সব ভালো হবে।’
শশী স্মিত হাসল।
ডাক্তার সুর্বনা, শশীর আল্ট্রাসনোগ্রাফি করছেন। শশী জিজ্ঞেস করল,
‘ডক্টর আমার বেবি ঠিক আছে তো?’
ডাক্তার সুর্বনা মনিটরে চোখ রেখেই বলল,
‘হ্যাঁ। বাচ্চা ঠিক আছে।’
শশী বলল,
‘ডক্টর আমাকে একটু দেখান।’
ডাক্তার সুর্বনা মৃদু হেসে মনিটরটা শশীর দিকে একটু ঘুরিয়ে ধরল। বলল,
‘বাচ্চার হার্টবিট ঠিক আছে। দেখুন নড়াচড়া করছে।’
‘ডক্টর আমার হ্যাজবেন্ডকে একটু দেখাবেন? বিগত কিছু মাস আমাদের উপর দিয়ে অনেক ঝড় গেছে। আজ সব ঝড়ের সমাপ্তি হলো। ও এটা দেখলে ভীষণ খুশি হবে।’
ডাক্তার সুর্বনা নার্সকে বলল,
‘মালতি দি ওনার হ্যাজবেন্ডকে ভিতরে নিয়ে আসুন।’
রাযীন হুইল চেয়ারে করেই ভিতরে আসল। শশী, রাযীনকে বলল,
‘রাযীন মনিটরে দেখো, আমাদের বেবি।’
রাযীন মনিটরের দিকে তাকিয়ে রইল। শরীর তেমন বোঝা যাচ্ছে না, ছোট্ট একটা মাথা বোঝা যাচ্ছে। হালকা হালকা নড়ছে। ওর চোখের কোণটা সিক্ত হয়ে গেল। শশীর হাত জড়িয়ে বলল,
‘থ্যাংক’স আমাকে পৃথিবীর বেস্ট উপহার দেওয়ার জন্য।’
শশী হাসল।
ডাক্তার সুর্বনা বললেন,
‘বাচ্চার হার্টবিট ওকে। নড়াচড়া ঠিক আছে, এমনিওটিক ফ্লুইড ঠিক আছে, তবে বাচ্চার সাইজটা সপ্তাহ অনুসারে ছোটো। আপনার বারো সপ্তাহ চলছে, সে হিসাবে গ্রোথ হওয়া দরকার ছিলো তিন ইঞ্চির মতো আর ওজন ২৩ গ্রাম। বাট গ্রোথ একটু কম। ভ্রুনটা একটু ছোটো। হয়তো শশী আপনার তেমন যত্ন হয়নি সে জন্য।’
শশী বেশ চিন্তিত হয়ে বলল,
‘আমার বেবির কোনো ক্ষতি হবে নাতো?’
ডাক্তার সুর্বনা হেসে বলল,
‘আরে ঘাবরানোর মতো কিছু হয়নি। এখন ঠিকভাবে নিজের শরীরের এবং খাওয়া দাওয়ার যত্ন নিন। তাহলেই ঠিক হয়ে যাবেন। আপনি ফলিক এসিডের কোনো মেডিসিন নিয়েছিলেন এতদিন?’
‘না। জেলে ছিলাম। সেখানে কে এসব দিবে? তাছাড়া আমি তো জানতামও না কিছু।’
‘হুম বুঝলাম। এখন যেভাবে চলতে বলব তেমন চলবেন। মালতি দি উনাকে কেবিনে দিয়ে আসুন।’
শশীকে কেবিনে দেওয়ার পর ডাক্তার সুর্বনা সবার কাছে এসে বললেন,
‘বাচ্চা ঠিক আছে। তবে যেহেতু অতিরিক্ত টেনশনে ব্লিডিং হচ্ছে, তারমানে ওনার মিসক্যারেজ হওয়ার চান্স এখনও অনেক। ওনাকে দু’দিন আমি নিজ দায়িত্বে রাখব। দু’দিন পর পর একটা ইনজেকশন দিতে হবে, যাতে বাচ্চা মিসক্যারেজ না হয়। আর হ্যাঁ আগামী দুইমাস ওনার জন্য প্রয়োজন ছাড়া হাঁটা চলা নিষেধ। ঘুমালে পায়ের নিচে বালিশ দিয়ে পা উঁচু করে রাখবেন। খাবার নিয়মিত খেতে হবে। মরনিং সিকনেস হবে এখনও কিছুদিন। তবে আমার কথামতো চললে, মা বাচ্চা দুজনেই সুস্থ থাকবে। বেশি বেশি কলমি শাক, কাঁচা কলা, রঙিন ফল খাওয়াবেন। পুষ্টিকর খাবার ওনার জন্য এখন আবশ্যক। উনার শরীর অনেক অনেক উইক। কাঁচা পেপে, আনারস, সুপারি, গাজর, কাঁচা ডিম এসব থেকে দূরে রাখবেন। এগুলো মিসক্যারেজের ঝুঁকি বাড়ায়। আরও অনেক নির্দেশনা আছে। ফুল ডায়েট চার্ট আমি দিয়ে দিব। মিস্টার রাযীন আপনি আমার সাথে ভিতরে আসুন। শশী আর আপনার সাথে আমার একান্ত কিছু কথা আছে।’
সবাই শশীকে নিয়ে চিন্তা করলেও বাবুটা সুস্থ আছে শুনে একটু হলেও স্বস্তি পেয়েছে। রাযীন, ডাক্তার সুর্বনার সাথে শশীর কেবিনে গেল। তারপর চেয়ারে বসে বললেন,
‘আগামী দুই মাস আপনারা মেলামেশা থেকে একদম দূরে থাকবেন। যদিও প্রথম এবং তৃতীয় ট্রাইমেস্টারে আমরা সব স্বামী স্ত্রীকেই মেলামেশা থেকে দূরে থাকতে বলি। কারণ বাচ্চার জন্য রিক্স হয়ে যায়। তবে দ্বিতীয় ট্রাইমেস্টারে মেয়েদের হরমোনাল অনেক পরিবর্তনের কারণে হ্যাজবেন্ডকে কাছে পেতে চায়। আপনার স্ত্রীর প্রথম ট্রাইমেস্টার শেষ প্রায়। সামনের সপ্তাহ থেকে ২য় ট্রাইমেস্টার শুরু হবে। এ সময় এ অনাকাঙ্ক্ষিত ব্লিডিং খুব সাবধানে থাকতে হবে আপনাদের। রাযীনকে বলল,
‘বাবা হচ্ছেন তবে বাচ্চা সামলানোর আগে বউকে সামলানো শিখতে হবে। হরমোনাল পরির্তনের কারণে, প্রচুর মুড সুইং হবে, মেজাজ খিটখিটে থাকবে, ক’দিন পর বারবার প্রচন্ড খিদা লাগবে, উদ্ভট আচরন করবে। মাঝে মাঝে তার উদ্ভট রূপ দেখে মনে হতে পারে এটা আপনার স্ত্রী নয় বরং অন্য কেউ। তবে তাকে মানসিকভাবে সাপোর্ট করবেন খুব। এ সময় মেয়েরা সবার কাছ থেকে মানসিক সাপোর্টটা বেশি চায়। বিশেষ করে হ্যাজবেন্ড এর কাছ থেকে। বলাহয়, মেয়েদের সাধারণ সময় তারা সব ধরণের বাজে কথা হজম করে ফেলে, কিন্তু গর্ভবস্থায় সামান্য কটু কথাও সারা জীবন মনে থাকে।’
ডাক্তার সুর্বনা, রাযীন-শশীকে আরও অনেক কথা বলে চলে গেলেন। ডাক্তার যেতেই পরিবারের লোক ভিতরে ঢুকল। সবাই শশীকে বিভিন্ন প্রশ্ন করছে। শশীর করও প্রশ্নের জবাব দিতে ইচ্ছা করছে না। তাই চোখ বন্ধ করে রইল। এমনি মাথা ঘোরাচ্ছে, তার উপর সবার এত প্রশ্ন ভালো লাগছে না। ও চোখ বন্ধ করে শুয়ে রইল।
রাযীন, শিহাবকে বলল,
‘ভাইয়া আমাকে একটু ওর পাশে বসতে সাহায্য করবেন?’
শিহাব, রাযীনকে ধরে শশীর পাশে বসতে হেল্প করল। রাযীন, শশীর মাথায় হাত বোলাতেই শশী চোখ মেলল। রাযীন, শশী একে অপরের দিকে এক ধ্যানে তাকিয়ে রইল। রেনু সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলল,
‘আমাদের বাইরে যাওয়া উচিত। ওরা একটু কথা বলুক। আমরা বরং বাইরে গিয়ে কথা বলি।’
সবাই বাইরে যাওয়ার পর শশী বলল,
‘রাযীন!’
রাযীন, শশীর হাতটা নিজের মুঠোবন্দী করে বলল,
‘বলো?’
‘কতদিন যাবত তোমার হৃদস্পন্দন শুনি না। আমার পাশে শুতে পারবে? আমার শরীরে ওঠার মতো শক্তি নেই।’
রাযীন, শশীর পাশে শুয়ে ওর দিকে ঘুরল। শশী অনেকক্ষণ রাযীনের দিকে তাকিয়ে থেকে, রাযীনের চোখে চুমো খেলো। তারপর রাযীনের বুকের মুখ লুকালো। রাযীনও গভীরভাবে শশীকে আলিঙ্গন করল। শশীকে জড়িয়ে ধরে রাযীন বলল,
‘আমার কারণেই তোমাকে এত কষ্ট পেতে হলো।’
শশী, রাযীনের বুকে মুখ লুকিয়েই বলল,
‘তোমার কারণে কীভাবে?’
‘আমার সম্পত্তি নেওয়ার জন্য অর্ক আমাকে মারতে চাইল, তোমাকে টার্গেট করল। এতসবের জন্য কোথাও না কোথাও আমিই কারণ।’
‘কারণ হয়তো তুমি কিন্তু এতে তোমার কোনো দোষ নেই। তুমি তো অর্ককে এসব করতে বলোনি। ও নিজে এসব করেছে। তাহলে কেন নিজেকে দোষী করছো? এখন চুপ থাকো তো, আমাকে তোমার হৃদস্পন্দন শুনতে দাও।’
শশী আবার রাযীনের বুকে মুখ লুকিয়ে রাখল। কিছুক্ষণ পর মাথা তুলে রাযীনের শার্টের বুকের কাছের দুটো বোতাম খুলে রাযীনের নগ্ন বুকে নাক ঘষে মুখ লুকালো। রাযীন মৃদু হেসে কপালে চুমো আঁকল। এভাবে কতটা সময় একে অপরকে জড়িয়ে আছে, জানে না ওরা। তবে দু’জনই শান্তিতে ঘুমিয়ে পড়ল। কতদিন পর অশান্ত মনদুটো শান্তি পেলো। বেশি শান্তি পেলে, শান্তির মোলায়েম পরশে ঘুম চলে আসে। কতদিন তো দুজন র্নিঘুম রাত কাটিয়েছে।
অনেকক্ষণ ওদের কোনো সারা শব্দ না পেয়ে মিতু বলল,
‘রেনু তুমি একটু ভিতরে গিয়ে দেখো তো ওদের কথা বলা হয়েছে কিনা?’
রেনু খানিক জড়তা নিয়ে ভিতরে ঢুকে মুগ্ধ হলো। দু’জন একে অপরকে গভীরভাবে জড়িয়ে ধরে গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। রেনু দুজনার কিছু ছবি তুলে, বাইরে এসে বলল,
‘ওরা দুজনই ঘুমিয়ে পড়েছে।’
নূর ইসলাম বললেন,
‘এটা কেমন কথা? হসপিটালে ঘুমিয়ে পড়ছে!’
রেনু লজ্জা পেলো বলতে। শিহাব সেটা বুঝে বলল,
‘বাবা কত ঝড়ের পর দু’জন একত্র হলো। কত র্নিঘুম রাত কেটেছে ওদের। আমি আর রেনু বরং এখানে থাকি, আপনারা সবাই চলে বাড়ি গিয়ে রেস্ট নিন। সবার উপর দিয়েই এতদিন ধকল গেছে। তাছাড়া ডাক্তার তো বলল,
শশীকে দু’দিন এখানে রাখবেন। শুধু শুধু হসপিটালে এত লোক না থাকাই বেটার। ওদের ঘুম ভাঙলে শশীর খবর জানাব। সবাই শিহাবের কথায় সম্মতি জানিয়ে চলে গেল।
শিহাব, রেনু একটা বেঞ্চে বসল। রেনু ওর ফোনে তোলা ছবিগুলো শিহাবকে দেখিয়ে বলল,
‘ইশ দুজনকে কী সুন্দর লাগছে! ঠিক দু’জন না তিনজন ওখানে।’
শিহাব, রেনুকে ফিসফিস করে বলল,
‘আমরা কবে দু’জন থেকে তিনজন হব? আমরা কবে থেকে নতুন কাউকে আনার প্ল্যান করব?’
রেনু মাথা নিচু করে লজ্জাময় হেসে বলল,
‘আপনি চাইলে আজ রাত থেকেই।’
শিহাব হাসল।
৬৫!!
জাহিদ, সজলকে কল করে বলল,
‘কীরে কোথায়?’
‘এইতো বাসায় আসলাম।’
‘কোর্টে গিয়েছিলি?’
‘হ্যাঁ। আমাকে সাক্ষী দিতে হয়েছিলো তো।’
জাহিদ দুষ্টু হেসে বলল,
‘শশীর পক্ষে না বিপক্ষে?’
সজল হেসে বলল,
‘তোর মনে হয়, আমি শশীর বিপক্ষে সাক্ষী দিতে পারব?’
‘তা অবশ্য ঠিক। শুনলাম শশী অসুস্থ হয়ে পড়েছে, তুই ওদের সাথে যাসনি?’
‘আমার যাওয়াটা কী ঠিক হতো? এখন শশীর, সজলের না বরং রাযীনকে প্রয়োজন। রাযীন ভাই খুব ভালো মানুষ। শশীকে ওমন করে কেউ ভালোবাসতে পারবে না। কেউ না।’
‘তুইও না?’
‘আমার ভালোবাসায় ঘাটতি ছিলো বলেই না, আমি শশীকে পেলাম না। যদি রাযীন ভাইর মতো আমার ভালোবাসা নিখাদ হতো, তবে শশীকে আমি পেতাম। কিন্তু পেলাম না। আর আমার ভালোবাসায় সেই শক্তি থাকলে শশী এত সহজে আমাকে ভুলে রাযীনকে পাগলের মতো ভালোবাসতে পারত না। আসলে আমি আর শশী কখনও একে অপরের জন্য ছিলামই না। আমাদের প্রেমটা ভুল সময়ে ভুল মানুষের সাথে হয়েছিলো। শশী বরাবরই রাযীনের জন্য ছিলো। আমি প্রথমে ওর জীবনে এসে ওকে পেতে চেয়েছিলাম কিন্তু সৃষ্টিকর্তার মর্জির বাইরে কেউ কিছু কী করতে পারে? ওরা সুখে থাকুক, আর কোনো ঝড় ওদের জীবনে না আসুক।’
‘হুঁ।’
‘শোন শশীর খবর নিয়ে আমাকে জানাস। অামার ওখানে যাওয়া বা কল করা ঠিক হবে না। বিষয়টা শশীর জন্য অস্বস্তিকর হবে। আমি ওদের জীবনের কাটা বা হাড্ডি কোনোটাই হতে চাই না।’
‘এখন কী করবি ভবিষ্যতে?’
‘যে প্রতিষ্ঠা পাবার জন্য শশীকে ছাড়লাম, সে প্রতিষ্ঠাতে হাসিল করব। তাকে নিজের প্রেমিকা বানিয়ে নিব।’
‘বেস্ট অফ লাক।’
‘ধন্যবাদ।’
৬৬!!
মাস খানিক পর,
রাযীন অনেকটাই সুস্থ এখন। নিজে নিজে ধীরে ধীরে হাঁটতে পারে। শশীও এখন অনেকটা সুস্থ। রাযীন নিজের সাথে সাথে শশীরও খুব খেয়াল রাখছে। মিতু, রাযীন, রোমিসার যত্নে শশী মাত্র এক মাসেই আবার আগের মতো সুন্দর, প্রাণবন্ত হয়ে উঠল।
বিগত একমাস যাবত শশী বিছানায় থাকতে থাকতে ভিষণ বিরক্ত। কিন্তু কিছু করতেও পারছে না, বিছানা থেকে সহজে নামতেও পারছে না। কিছু করতে গেলেই মিতু, রাযীন ধমকে বসিয়ে রাখে। এদিকে রাযীন নিজে ঠিকমতো সুস্থ হওয়ার আগেই শশীর দেখাশোনা, ঘরে বসে অফিসের কাজ দুটোই সামলাচ্ছে। রায়হান রহমান এতবার নিষেধ করলেন, অফিসের কাজ আপাতত আমি দেখছি কিন্তু রাযীনের এক কথা,
‘কাজের মাঝে থাকলে দ্রুত সুস্থ হবো। তাছাড়া আমি বাবা হচ্ছি। বাচ্চার দায়িত্ব নেওয়ার আগে নিজেকে দায়িত্ববান হতে হবে।’
সকালবেলা,
বারান্দায় বসে, রাযীনকে একজন মহিলা ট্রেনার ব্যায়াম করাচ্ছে। শশী আড় চোখে বারবার তাকাচ্ছে ওদের দিকে। ট্রেনার চলে যাবার পর রাযীন তোয়ালে দিয়ে ঘাম মুছতে মুছতে এসে, শশীর কোলে শুয়ে পড়ল। শশী তিক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে বলল,
‘তোমাকে আগে যে, ভাইয়া ব্যায়াম করাতো সে কোথায়?’
‘সে কিছুদিনের জন্য একটা কাজে ঢাকা গেছে। তার বদলে এই আপুটাকে দিয়ে গেছেন।’
শশী বলল,
‘মেয়ে ট্রেনার না দিয়ে ছেলে ট্রেনার তো দিতে পারত?’
‘মেয়েতে কী সমস্যা?’
শশী, রাযীনের নাক চেপে বলল,
‘তোমার কেন সমস্যা হবে, তোমার তো মজা লাগে। সুন্দরী ফিট একটা মেয়ে তোমার এখানে ওখানে স্পর্শ করছে। খুব মজা লাগছে না। আর তার সামনে স্যান্ডোগেঞ্জি কেন পরছো? মেয়েটাকে তোমার হাতের শক্ত পেশি দেখাতে হবে?’
‘আরে নাক ছাড়ো তারপর বলছি।’
শশী নাক ছেড়ে দিয়ে বলল,
‘বলো?’
রাযীন ঠোঁট টিপে হেসে বলল,
‘শশী, তুমি জেলাস ফিল করছো?’
‘একশবার করছি। কেন করব না? আমার শরীরে কোনো ছেলে ওভাবে টাচ করলে তোমার খারাপ লাগত না তেমন আমারও লাগে। রাযীন নামের এই ছেলেটা, তার শরীর মন সব কেবল আমার। আমি কেবল তাকে স্পর্শ করব।’
রাযীন এবার শব্দ করে হেসে শশীকে জড়িয়ে ধরে বলল,
‘আহা বউ যখন জেলাস ফিল করে, তখন সত্যি কত ভালো লাগে।’
শশী মুখ ভেংচালো। রাযীন গভীরভাবে শশীর ঠোঁট ছুঁয়ে দিলো। শশী, রাযীনের কানের কাছে মুখ নিয়ে বলল,
‘ডাক্তারের বিধি নিষেধ কবে শেষ হবে?’
রাযীন হাসল। ফিস ফিস বলল,
‘কেন?’
শশী লজ্জা পেয়ে বলল,
‘কিছু না।’
রাযীন আরো গভীরভাবে শশীকে জড়িয়ে ধরে বলল,
‘আই লাভ ইউ।’
‘আই লাভ ইউ টু।’
কিছুক্ষণ নীরবতায় কাটানোর পর শশী বলল,
‘রাযীন!’
‘হুঁ।’
‘কোথাও ঘুরতে নিয়ে চলো। ঘরে থাকতে থাকতে বোর হয়ে যাচ্ছি। দূরে কোথাও ঘুরতে ইচ্ছা করছে।’
‘সেটা সম্ভব না ম্যাডাম।’
শশী মুখ বাঁকালো। রাযীন বলল,
‘তার জন্য আপনিই দায়ী।’
রাযীন বলল,
‘কেন?’
রাযীন, শশীর পেটে চুমো খেয়ে বলল,
‘শশী আমাদের প্ল্যান কী ছিলো?’
‘কী ছিলো?’
‘তুমি আমি প্রথমে অনেক দেশ, অনেক জায়গায় ঘুরব তারপর বেবি নিব। কিন্তু তুমি প্ল্যানটা সাকসেস হতে দিলে না। ঠুস করে বেবি নিয়ে ফেললে।’
শশী রাগ করে আবার রাযীনের নাক চেপে ধরে বলল,
‘আমি নাকি তুমি? প্রথম বলেই ছক্কা। আর ছক্কা তাও কোন ছক্কা, যে ছক্কায় ম্যাচ জিতে গেল। আবার কথা বলো…।’
রাযীন হাসল। শশী আবার বলল,
‘উইথ আউট কোনো প্রটেকশন তুমি আমার কাছে এসেছিলে কেন?’
রাযীন বলল,
‘আরে সেদিন বিকালে ওমন কিছু হবে আমি কী জানতাম নাকি? যা হলো সবটা ঘোরের মধ্যে। আর তারপর তো কোনো পদক্ষেপ নেয়ার মতো চান্সই পাইনি। তুমি যেমন চান্স পাওনি তেমন আমিও।’
শশী মুখ ভার করে বলল,
‘তাহলে আর কী করার? থাকি ঘরে বসে।’
রাযীন, শশীর পেটে চুমো খেয়ে কোমর জড়িয়ে ধরে বলল,
‘আর তো কয়টা মাস। আমাদের বেবিটা সুস্থভাবে পৃথিবীতে আসুক, তুমি সুস্থ থাকো, তারপর আমরা তিনজন মিলে ওয়াল্ড টুর দিব।’
শশী, রাযীনের চুলে হাত বুলাতে বুলাতে বলল,
‘যদি বেবি হওয়ার সময় আমার কিছু হয়ে যায়?’
রাযীন, শশীকে আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলল,
‘আমি জানি, সৃষ্টিকর্তা এতটা র্নিদয় আমাদের প্রতি হবেন না। কম তো কষ্ট পাইনি আমরা। এবার যা হবে সব ঠিক হবে। এখন এসব বাজে কথা রেখে আমাকে কত্তগুলা চুমা দাও তো?’
শশী হাসল। রাযীনের ফোনে একটা ভিডিও কল আসল। রাযীন কল রিসিভ করতেই দেখল স্ক্রিনে অর্ক। রাযীনের প্রচন্ড রাগ হলো। অর্ক বলল,
‘কল কাটিস না। আমার কথা আছে তোর সাথে।’
রাযীন বেশ রেগে বলল,
‘কিন্তু আমার কোনো কথা নেই তোর সাথে।’
‘তোর বলতে হবে না। আমি যা বলি শোন।’
রাযীন চুপ। অর্ক বলল,
‘সরি ফর এভরিথিংক।’
তাচ্ছিল্য হেসে রাযীন বলল,
‘তোর সরিতে সব ঠিক হয়ে যাবে? আমি আবার আগের মতো সুস্থ হয়ে যাব? তুই যে শারিরীক আঘাত আমাকে করেছিস, তা সারাজীবন আমাকে বয়ে বেরাতে হবে। হয়তো অনেকটা সুস্থভাবে জীবন যাবন করতে পারব কিন্তু আগের শারিরীক সক্ষমতা আমার মাঝে কখনও আসবে না। তুই আমাকে যা শারিরীক, মানসিক যা কষ্ট দিয়েছিস সেটা ভুলতে পারলেও তোর কারণে আমার পরিবার যা সাফার করছে, তা জীবনে ভুলতে পারব না। শশী কি অমানসিক কষ্ট পেয়েছে। বাবা-মা কী পরিমাণ কষ্টে দিন কাটাচ্ছিল। তুই তো আমার অনাগত সন্তানকে পর্যন্ত মারতে চেয়েছিলি। তারপরও তোকে ক্ষমা করব? তোর সরি একসেপ্ট করব? ভাবলি কী করে?
তবুও আমাদের সবার সব কিছু বাদ দিলাম কিন্তু একজন মানুষের সাথে তুই ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ করেছিস। আমার ছোট্ট বোনটার মনটা নিয়ে খেলেছিস। মিথ্যা ভালোবাসার আঘাতে আমার চঞ্চল বোনটাকে তুই র্নিজীব করে দিয়েছিস। যে মেয়েটা ঘরের প্রাণ ছিলো, সে আজ যেনো প্রাণহীন হয়ে সারাদিন রুমে বসে কাঁদে। যার জন্য ঘরের সবাই প্রফুল্ল থাকত, সে আজ প্রফুল্লতা ভুলে গেছে।’
অর্ক চোখ বেয়ে কয়েক ফোটা অশ্রু গড়িয়ে পড়ল। তারপর বলল,
‘আমার সব মিথ্যা থাকলেও রোমিসার প্রতি ভালোবাসা মিথ্যা ছিলো না। আমি সত্যি ওকে খুব ভালোবাসি।’
‘আর নাটক করিস না অর্ক! এতসব করে কী পেলি তুই? কেন করলি? টাকার জন্য? অর্ক টাকা তো তুই, নিজের ট্যালেন্ট দিয়েই বহু আয় করতে পারতি। তোর মনে আছে, বছর দুই আগে তুই আর আমি এফডিসিতে গিয়েছিলাম কিছু ফ্লিমস্টারদের সাথে দেখা করতে? তখন একটা ফ্লিমে হিরো নির্বাচন করার জন্য অডিশন নিচ্ছিল, তুই এমনি দুষ্টুমি করে অডিশন দিয়েছিলি। সেই ফ্লিমের ডিরেক্টর তোর সৌন্দর্য প্লাস অভিনয়ে এতটাই মুগ্ধ হয়েছিলো যে, তোকে সাথে সাথে তার ফ্লিমে কাজের অফার দিয়ে বসে। তুই তো তখন না করে দিয়েছিলি। তুই চাইলে ফ্লিম লাইনে তোর ক্যরিয়ার গড়তে পারতি। সেখানে অল্পতে সফলতা তোর কাছে ধরা দিত।
ফ্লিম লাইন বাদ দিলাম। পড়ালেখায় তোর চেয়ে ভালো কে ছিলো আমাদের বংশে? এসএসসি আর এইচএসসিতে তুই আমাদের বোর্ডের প্রথম দশজনার মধ্যে ছিলি। অনার্স করার জন্য সিঙ্গাপুরের নামকরা একটা ভার্সিটিতে চান্স পেলি ফুল স্কলারশীপে। এত ট্যালেন্টেড তুই। তুই চাইলে নিজ প্রচেষ্টায় আমাদের চেয়েও অনেক ধনী হতে পারতি। হ্যাঁ হয়তো তখন তোকে অনেক বছর পরিশ্রম করতে হতো কিন্তু সফলতা তোর কাছে সহজেই ধরা দিত। কিন্তু তুই শর্টকাট চুজ করলি। আমরা পুরো পরিবার তোকে নিয়ে গর্ব করতাম। বলতাম আমাদের একটা ভাই আছে যে শুধু দেখতেই সবার চেয়ে সুন্দর না, ট্যালেন্টের দিক থেকেও আমাদের সবার চেয়ে এগিয়ে।’
অর্ক বলল,
‘আমার এতকিছু থাকার পরও, তারপরও সবাই তোদের পরিবারকে তেল দিয়ে চলত। তোর টাকার কাছে আমার সবগুণ ঢাকা পড়ে গেছিলো।’
রাযীন বলল,
‘তোকে আমার কিছু বলার নেই। কিন্তু তুই সবাইকে হতাশ করলি। সবচেয়ে বেশি হতাশ করলি তোর বাবা-মা আর বড় ভাইকে। আল্লাহর অশেষ রহমত যে বড় আব্বুর তেমন কোনো ক্ষতি হয়নি। এ যাত্রা বেঁচে গেছেন তিনি।’
অর্ক দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল,
‘অামি তোর ভাষণ শুনতে কল করিনি। আমি রোমিসার সাথে কথা বলবো। ওকে ডেকে দে। ও আমার কল রিসিভ করে না, আমার কণ্ঠ পেলেই কেটে দেয়।’
‘দিব এক শর্তে আগে বল তুই পালালি কী করে?’
অর্ক দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল,
‘রোমিসার কারণে?’
রাযীন অবাক হয়ে বলল,
‘কী? রোমিসা তোকে হেল্প করেছে পালাত?’
‘দুই লাইন বেশি বোঝা তোর অভ্যাস। আমি বলেছি রোমিসার কারণে, রোমিসা হেল্প করেছে তা তো বলিনি।’
‘না পেচিয়ে বুঝিয়ে বল।’
‘রোমিসার ইগনোর করাটা। যে মেয়েটা অর্ক বলতে পাগল। সে মেয়েটা হুট করে অর্ককে ইগনোর করা শুরু করল? তখনই বিষয়টা আমার মাথায় আসল। রোমিসার সাথে শেষ যেদিন দেখা হয়েছিলো, সেদিন ওর চোখের বিষন্নতা, ঘৃণা আমাকে স্পষ্ট বুঝিয়ে দিয়েছিলো আমি ধরা পড়ে গেছি। রোমিসা মুখে কিছু বলেনি, কিন্তু ঐ যে বললাম, আমার সব মিথ্যা হলেও রোমিসার প্রতি ভালোবাসাটা মিথ্যা না। ওর চোখের ভাষা বুঝি। যখনই ওর চোখে ভালোবাসার বদলে ঘৃণা দেখলাম তখনই বুঝে গেছিলাম আমার সব প্ল্যান শেষ। এত বছর যাবত করা প্ল্যানটা একটা প্রেম কাহিনী শেষ করে দিলো। ভালোবাসা সত্যি সর্বনাশারে রাযীন। যদি আমার মনটা রোমিসাকে সত্যি সত্যি ভালো না বাসতো, তাহলে আজ তুই জীবিত হতি না, শশী ভাবি তোর পাশে হতো না। আর আমি পালাতক হতাম না। একটু ভালোবাসা আমার এত বছর ধরে গড়া শক্ত অর্কটাকে অল্পতেই হারিয়ে দিলো।’
রাযীন, দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল,
‘তুই এখন সিঙ্গাপুর?’
‘হ্যাঁ। নাম্বার দেখে বুঝলি?’
‘হ্যাঁ।’
‘কিন্তু তোদের দেশের আইন এদেশে এসে আমাকে কিছুই করতে পারবে না। আমি বহু আগেই এখানের সিটিজেনশীপ পেয়েছিলাম। সিঙ্গাপুরের সিটিজেনশীপ নেওয়া অনেক ঝামেলার কিন্তু তবুও আমি পেয়েছি। এখন তোরা সহজে আমাকে কিছু করতে পারবি না। শীঘ্রই আমি সুমি আপা আর দুলাভাইকেও ছাড়ানোর ব্যবস্থা করব।’
রাযীন দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল। বলল,
‘ফোন রাখ।’
‘আমি তোর শর্তমতো সবটা বলেছি। এখন তুই তোর কথা মতো, আমাকে রোমিসার সাথে কথা বলতে দে।’
রাযীন ট্যাবটা নিয়ে রোমিসার রুমে গেল। রোমিসা বিছানায় শুয়ে বই পড়ছিলো। রাযীনকে দেখে বলল,
‘ভাই কিছু বলবা?’
‘তোর সাথে একজন কথা বলবে। প্লিজ তার সাথে একটু সময় কথা বল। রাগ করে কেটে দিস না।’
‘কে? অর্ক?’
‘কীভাবে বুঝলি?’
‘গত তিন সপ্তাহ যাবত কল করে করে আমার ফোন, ট্যাব নষ্ট করে দিয়েছে। দে দেখি কথা বলার পর ওর কল করার অত্যাচার কমে কিনা?’
রাযীন ট্যাবটা রোমিসার হাতে দিয়ে চলে গেল। রোমিসা, অর্কের দিকে তাকিয়ে বলল,
‘বলো?’
‘কেমন আছো?’
রোমিসা কঠিন গলায় বলল,
‘আমি কেমন আছি সেটা জানতে এরকম কল করে করে টর্চার করছো?’
‘আই লাভ ইউ।’
‘আর কিছু বলবে?’
‘তুমি কিছুই বলবে না ছোটোপাখি?’
রোমিসা কিছুক্ষণ চুপ করে রইল। তারপর বলল,
‘অর্ক তুমি দেশে ফিরে এসো। আইনের কাছে নিজেকে সমার্পন করো।’
অর্ক কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল,
‘যে লাক্সজারিয়াস লাইফের জন্য আমি এত কিছু প্ল্যান করলাম, সে লাইফ হয়তো পাবো না, কিন্তু তারমানে এই নয় যে আমি জেলে মতো জঘণ্য জায়গার ভাত খাব!’
‘তুমি জেলের নামই শুনতেই পারছো না। অথচ শশীভাবি কীভাবে থেকেছেন তিনটা মাস? তারমধ্যে তিনি প্রেগনেন্ট অবস্থায় কত কষ্ট সহ্য করছে। তুমি তার বাচ্চাকেও মারতে চেয়েছিলে। যে বাচ্চাটা এখন পর্যন্ত জন্মই হয়নি তাকে মারার কথা বলতে তোমার গলা একবারও কাঁপল না?’
‘এক্সাক্টলি হি ইজ নট এ সিঙ্গেল লাইফ। হি ইজ জাস্ট এ ফেটাস। তার আলাদা করে কোনো জীবন ছিলো না। পরগাছার মতো অন্যের শরীর আঁকড়ে ধরে বেঁচে ছিলো। সে কারণে সে মরে গেলে কারও তেমন কিছু আসত যেতো না?’
রোমিসা চোখের জল মুছে বলল,
‘অর্ক তোমার মধ্যে কোনো মানুষ নেই। জানোয়ার হয়ে গেছ তুমি।’
‘হয়তো। আচ্ছা একটা কথা বলি? আমি যদি নিজের ভুল শুধরে জেল খেটে ফিরি তবে কী তুমি আমাকে আগের মতো ভালোবাসবে? গ্রহণ করবে অমায়?’
‘হয়ত আগের মতো ভালোবাসবো না, তবে গ্রহণ করার চেষ্টা করব। তোমার হয়ে বাবা আর ভাইয়ের কাছে সুপারিশও করার চেষ্টা করব যাতে, তোমার শাস্তি কমিয়ে দেয়।’
অর্ক একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল,
‘তুমি কনফিউশনে আছো। যেদিন আমাকে নিয়ে, তোমার মন থেকে সকল কনফিউশন দূর হবে, সেদিন আমাকে কল করো। আই লাভ ইউ।’
তারপর কল কেটে দিলো অর্ক। রোমিসা ট্যাবটা বুকে চেপে ধরে কাঁদতে লাগল। কাঁদছে অর্কও খুব। কিন্তু কেউ কারও কান্না দেখছেও না বুঝছেও না। শুধু কষ্টটা অনুভব হচ্ছে।
৬৭!!
তুমি রেনু না?
রেনু মহিলার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল। তারপর সালাম করল,
‘আসসালামু আলাইকুম।’
‘ওয়ালাইকুম আসসালাম।’
‘কেমন আছেন?’
‘জি ভালো।’
‘আমাকে চিনতে পেরেছো?’
‘জি। আপনি, রিয়াজুলের মা।’
‘বাহ্! আমি তো ভেবেছিলাম না চেনার ভান করবে।’
‘না চেনার ভান কেন করব?’
‘আমার পরিবারের যে ক্ষতি করছো, তারপর আমাকে চেনার মুখ তোমার আছে?’
রেনু দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে শিহাবের দিকে তাকিয়ে বলল,
‘শিহাব, উনি রিয়াজুলের মা। আমার প্রাক্তন শাশুড়ি। আর রিয়াজুলের মাকে বলল, আন্টি উনি আমার হ্যাজবেন্ড।’
রিয়াজুলের মা শিহাবের দিকে অনেকক্ষণ এক ধ্যানে তাকিয়ে রইলেন। তারপর বললেন,
‘শুনেছিলাম তোমার বিয়ে হয়েছে কোনো এক টাকাওয়ালা বুড়োর সাথে। এখন দেখছি ছেলেটা যথেষ্ট ইয়াং।’
‘যাক এনাকেও আবার আমার ছেলের মতো খেয়ে ফেলো না।’
এবার শিহাব নিজেকে আটকাতে পারল না। কতক্ষণ যাবত দেখছে মহিলা রেনুকে অপমান করেই যাচ্ছে। শিহাব বলল,
‘আন্টি রেনু কি আপনার ছেলেকে কাঁচা চিবিয়ে খেয়েছিলো?’
‘ওর কারণেই আমার ছেলে মারা গেছে?’
‘কীভাবে? ও কি আপনার ছেলেকে গাড়ির নিচে ধাক্কা দিয়েছিলো।’
‘ওর ভাগ্যে ছিলো। কিছু মেয়েদের ভাগ্যে স্বামীর অকাল মৃত্যু লেখা থাকে।’
‘তাহলে তো আমি বলতে পারি, আপনি আপনার ছেলে খেয়েছেন।’
‘কী যা তা বলছো?’
‘আপনার কপালেও আপনার ছেলের অকাল মৃত্যু লেখা ছিলো।’
শিহাবের কথায় সায় দিয়ে হামিদ কাজি বললেন,
‘শিহাব একদম ঠিক বলছে। যেদিন রিয়াজুল মারা যায়, সেদিনও আপনি আমার মেয়েকে যা তা বলে অপমান করেছিলেন কিন্তু আমি এই ভেবে চুপ ছিল যে, ছেলের শোকে আপনি এসব বলছেন। আপনার তখন ভুল সঠিক বিবেচনা করার মত অবস্থায় ছিলেন না। আজ কোন সাহসে আমার মেয়েকে অপমান করছেন? রিয়াজুল আপনার ছেলে। আপনার গর্ভ থেকে তার জন্ম হয়েছিলো, সে কারণে তার ভাগ্য তো আপনার সাথে বেশি জুড়ে থাকার কথা, আমার মেয়ের সাথে নয়। সে হিসাবে বলতে গেলে আপনি আপনার ছেলের মৃত্যুর জন্য দায়ী, আমার মেয়ে নয়। রিয়াজুলের মা কী বলবে ভেবে পেলেন না। তিনি আর এক মুহূর্তও সেখানে দাঁড়ালেন না। রেনু, শিহাব এসেছিলো রেনুর চেকাপ করাতে। রিসেন্টলী রেনু কনসিভ করেছে। পথে হামিদ কাজির সাথে দেখা হওয়ায় তিনিও ওদের সাথে হাসপাতালে আসলেন। তারপরই রিয়াজুলের মায়ের সাথে দেখা। রেনু ছোট্ট একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল,
‘আর কত আমার অতীত আমাকে তাড়িয়ে বেড়াবে?’
শিহাব বলল,
‘তাড়ালেও সমস্যা নেই। আমরা সবাই আছি তোমার সাথে।’
রেনু হাসল।
৬৮!!
শশী, রেনু, লিপি তিনজন বিছানায় বসে আছে। সামনে হাসি বেগম চেয়ার পেতে বসে চোখ বড় বড় করে তিনজনার দিকে তাকিয়ে আছে। সবাই নীরব। নীরবতার অবসান ঘটিয়ে শশী বলল,
‘মা।’
হাসি বেগম বেশ রাগ করে বললেন,
‘চুপ। কোনো কথা বলবি না। তোরা তিনজন কী চাস বল? আমাকে একটুও শান্তি দিবি না তোরা?’
রেনু মুখ টিপে হেসে বলল,
‘কেন মা আমরা কী করেছি?’
হাসি বেগম ধমক দিয়ে বললেন,
‘চুপ। আবার জিজ্ঞেস করে কী করেছি? শশীর আট মাস চলছে, রেনুর তিন মাস, লিপিও নাকি কনসিভ করেছে। এখন বল আমি একা কী করে সামলাবো? আচ্ছা তোরা তিনজন কী এসব পরিকল্পনা করে করেছিস?’
শশী বলল,
‘আমারটা সবাই জানে। নতুন করে কী বলবো? তোমার বউমাদের জিজ্ঞেস করো?’
রেনু বলল,
‘আমার তো আগেই প্ল্যান ছিলো, শশী স্বাভাবিক জীবনে ফিরলেই আমি বেবি নিব। লিপি ভাবিকে জিজ্ঞেস করুন।’
লিপি বলল,
‘আমি কিছু জানি না। আমরাটা কোনো রকম প্ল্যান ছাড়াই হয়ে গেছে।’
হাসি বেগম রেগে বললেন,
‘এখন তোমরা কেউ কিছু জানো না। সব তো আমি একা জানি। বলি রেনুরটা নাহয় বুঝলাম শিহাবের এখন বাচ্চা দরকার। বয়স তো কম হয়নি ওর। শশী আর লিপি তোরা হিসাব করে চলবি না?’
শশী মনে মনে বলল,
‘আমরাটা যে, কেমনে হইছে তা তো তোমাকে বলতে পারি না। বললে কিডনীতে স্টোক খাবা। তোমার সুপার ফাস্ট জামাই একবারেই আমাকে মা বানিয়ে দিয়েছে। তাও শশীর ঠোঁট টিপে হাসি চেপে বলল,
‘মা আল্লাহ দিলে কী আর করা হয়ে যায় আরকি।’
হাসি বেগম রাগ করে বলল,
‘ঢঙের কথা বলবি না। তোর আর রাযীনের বয়স অনেক কম। তোরা আর পাঁচ বছর পর বাচ্চা নিলেও ঠেকত না। কিন্তু তোদের তো সবার চেয়ে ফাস্ট হবে। আমার বাড়িতে তো বাচ্চা নেওয়া প্রতিযোগিতা লাগছে।’
শশী মনে মনে বলল,
‘চিন্তা তো তা-ই ছিলো, পাঁচ বছর পর। কিন্তু…! কবি এখানে নীরব।’
মুখে বলল,
‘মা এখন যা হয়ে গেছে, এখন কী আর করার?’
হাসি বেগম লিপিকে বলল,
‘তোর তো অলরেডি একটা বিচ্ছু আছে তারপর আবার কেন লাগবে? তোর একটাই তো দশটার বরাবর?’
লিপি বলল,
‘উমম মা। আসলে আমি বুঝতে পারিনি। মেবি পিলসে কোনো গন্ডোগোল ছিলো। নয়তো আমি খেতে ভুলে গেছিলাম হয়তো।’
হাসি বেগম মাথায় হাত দিয়ে বললেন,
‘গন্ডোগোল তোরা করলেও ভুগতে তো আমার হবে! শশী আমার মেয়ে। রেনুর মা, বেয়ান ক’দিন যাবত অসুস্থ। তাকে যে বলবো বেয়ান ক’দিন এসে এখানে থাকুন তা-ও বলতে পারব না। আর লিপির তো…!’
লিপি মন খারাপ করে ফেলল। লিপির মা বছর দুই আগে গত হয়েছেন। হাসি বেগম লিপিকে ধমক দিয়ে বলল,
‘খবরদার মন খারাপ করবি না। আমি একাই একশ তোদের জন্য। শুধু ঘরের কাজের আরও দুজন কাজের লোক খুঁজতে বলিস, তোদের ঐ গাঁধা বর দুটোকে। কোথায় এ বয়সে আমার বউরা আমাকে দেখবে, তা না তারাই উল্টা আমার সেবা নেওয়ার ব্যবস্থা করছে। তোদের দেখা শোনার কথা তো বুঝলাম, সেটা আমি সামলে নিব। কিন্তু এই যে তিন বিচ্ছু আসবে, একটা তো অলরেডি আছে তাদের কীভাবে সামলাবো? আর আমি ভালো করে জানি আমার ছেলে-মেয়ের, সন্তারা মোটেও শান্ত হবে না। দুষ্টুর হাড্ডি হবে। আমার ছেলে-মেয়েরা তো একটাও কোনো পদের না। ওরা ছোট থাকতে আমাকে কম জ্বালিয়েছে যে, তাদের ছাওয়ালরা কম জ্বালাবে?’
শশী বলল,
‘আমার দেখাশোনা তোমাকে করতে হবে না। আমার জন্য রাযীন আর আমার শাশুড়িই যথেষ্ট। তুমি তোমার বউদের দেখো।’
হাসি বেগম বললেন,
‘শোন শশী, সবসময় নিজের স্বামী আর শাশুড়িকে নিয়ে বেশি গর্ব করবি না। আমার ছেলেরাও কম বউ পাগল না। শিহাবকে দেখ না, সারা দুনিয়া একদিকে আর রেনু একদিকে। সাজ্জাতও, লিপির খুব খেয়াল রাখে।’
রেনু লজ্জা পেয়ে বলল,
‘না না মা তেমন কিছু না।’
হাসি বেগম বললেন,
‘আমাকে আর বলতে হবে না। তোদের বয়স পেরিয়ে তবেই শাশুড়ি হয়েছি। ছেলে মেয়ে তিনটা তো আকাশ থেকে পড়েনি।’
লিপি, রেনু, শশী মুখ চেপে হাসল।
৬৯!!
চাঁদনী রাত,
রেনু বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে। শিহাব, রেনুর হাতে হাত রেখে বলল,
‘ভালোবাসি।’
রেনু লজ্জা পেয়ে বলল,
‘আমিও।’
নয় মাসের বাচ্চা পেটে রেনুর বেশিক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে কষ্ট হচ্ছে দেখে শিহাব চেয়ারে নিজে বসে রেনুকে কোলে বসিয়ে ওর ঘন কালো চুলে নাক ডুবালো। আর দুই সপ্তাহ বাকি রেনুর।
লিপির কোমর প্রচন্ড ব্যথা করছে। সাত মাস চলছে ওর। সাজ্জাত হট ওয়াটার ব্যাগ দিয়ে ওর কোমরে সেক দিয়ে দিচ্ছে। হাত পায়ে মালিশ করে দিচ্ছে। লিপি মনে মনে বলছে,
‘আমাদের সম্পর্ককে আরেকটা সুযোগ দিয়ে খারাপ করিনি। সাজ্জাত সত্যি আমায় আগের থেকেও বেশি ভালো বাসছে। হয়তো ওর অতীত আর আমাদের জীবনে প্রভাব ফেলবে না। লিপি, সাজ্জাদের হাত ধরে বলল,
‘ভালোবাসি সাজ্জাদ।’
সাজ্জাদ মৃদু হেসে লিপি কঁপালে ঠোঁট ছোঁয়াল। তারপর বলল,
‘তোমাকে দেখলে আজকাল মনে হয় তুমি আমার সেই কিশোরী বউ যাকে প্রথম বিয়ে করে ঘরে এনেছিলাম। খুব ভালোবাসি তোমায়।’
রাযীন-শশীর, পাঁচ মাসের ছেলে ‘রাশিদ রহমান শাবাব ঘুমে বিভোর। তাকে বিছানার পাশের দোলনায় ঘুম পারিয়ে রেখে দুই কপোত কপোতি ভালোবাসায় বিভোর। রাযীন, নগ্ন শশীকে আষ্টে পিষ্টে জড়িয়ে ধরে নাকে নাক ঘষে বলল,
‘আই লাভ ইউ।’
‘আমার উত্তর পরে দিব। আগে বলো, আমাকে জাপানের চেরি ব্লাসাম দেখতে কবে নিয়ে যাবে?’
রাযীন, শশীর গালে হাত বুলিয়ে বলল,
‘তুমি বললে ক’দিনের মধ্যেই ব্যবস্থা করে ফেলব।’
‘তাহলে নেক্সট মান্থ করবা। এমাসে তো রেনু ভাবির ডেলিভারি ডেট আছে।’
‘ওকে ম্যাডাম। এখন আরও একটু শক্ত করে জড়িয়ে ধরো তো।’
শশী গভীর আবেশে রাযীনের বুকে মুখ লুকালো।
পরশিষ্ট্যঃ
চার বছর পর,
আজ রোমিসার বিয়ে। রোমিসা রাজি না থাকলেও পরিবারের কথা ভেবে রাজি হয়েছে। পারিবারিক ভাবেই বিয়েটা হচ্ছে। কিন্তু বিয়ের ঠিক একঘন্টা আগে কিডন্যাপ হয় রোমিসা।
শেষ কথাঃ
স্নিগ্ধময় বিকালেও ভালোবাসা হয়, জীবনের মোড় ঘোরে, নতুন করে জীবনে চলার পথ হয়। বিকাল যেমন ধীরে ধীরে রাতে পরিণত হয়, রাত তেমন ধীরে ধীরে সকালে পরিণত হয়। প্রতিটা বিকাল-ই গিয়ে সকালের সাথে বন্ধুত্ব করে, ভালোবাসে। বিকালের নরম আলো যেমন, ধীরে ধীরে কালো হয়, তেমনি আঁধার রাত ধীরে ধীরে আলোময় সকাল হয়। ঠিক জীবনের মতো। জীবনে যখন দুঃখ আসে, তা কখনও কখনও ধীরে ধীরে গভীর দুঃখতে পরিণত। কিন্তু বিকালের নরম রোদ যেমন ধীরে নিকষ কালো রাত হয়, তেমনি নিকষ কালো রাত, স্নিগ্ধ সকালে পরিণত হয়। গল্পের প্রতিটা চরিত্রে সু্খ এসেছিলো, বিকালের নরম আলোর মতো দুঃখও এসে তার গভীর থেকে গভীরতম হয়েছে কিন্তু সে গভীর রাত কেটে যেমন সকাল হয়, তেমনি গভীর দুঃখ কেটেও সু্খ আসে। যেমনটা এসেছে শশী-রাযীন, শিহাব-রেনু, লিপি-সাজ্জাদের জীবনে। এ কারণেই গল্পের নাম “একদিন বিকালে সকাল হয়েছিলো”। জীবনে সুখ-দুঃখময় বিকাল আসলে সুখময় সকালও আসবে।
সমাপ্ত