ক্ষ্যাত ছেলে পর্ব-০১

0
410

গল্প ঃ ক্ষ্যাত_ ছেলে
পর্ব ঃ _১
লেখক ঃ অভ্র নীল

আমি রিকশা চালাচ্ছি। পিছনে দুইজন মেয়ে বসে আছে। তাদের দেখে আমার প্রচন্ড পরিমান ভয় করছে। কারণ তাদের মধ্যে একজন আমার ক্লাসমেট। আমি এই মাটি ফাটা রোদেও মুখে গামছা পেচিয়ে আছি। যাতে তারা আমাকে চিনতে না পারে। তখন আমি বললাম–

অভ্র — আপনারা কোথায় যাবেন?

তখন ওদের মধ্যে থেকে একটি মেয়ে বলে উঠলো–

— ভ্যারসিটিতে নিয়ে চলো।

আমি তাদের ভ্যারসিটিতে নিয়ে আসলাম। কিন্তু আজ হয়তো আমার কপালটাই খারাপ ছিল। যেই আমি তাদের থেকে ভাড়া নিতে যাবো, ওমনিই বাতাসে আমার মুখ থেকে গামছাটা খুলে গেল। তখন সুমাইয়া বলল–

সুমাইয়া– এই তোমার নাম অভ্র তাই না! তুমি রিকশা চালাচ্ছো কেন?

আমি কোনো কথা না বলে তাদের থেকে ভাড়া নিয়ে বাসার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিলাম।
*****
ওইদিকে,, সুমাইয়ার বান্ধবী সুমাইয়া কে বলল–

— কি রে তুই ওই ছেলেটাকে চিনস?

সুমাইয়া– চিনব না কেন? সে ত আমাদের সাথেই পড়া শোনা করে একি ভার্সিটিতে পড়ে। আমি তার সাথে একদিন বন্ধুত্ব করার চেষ্টা করছিলাম। কিন্তু সে করে নি!

— আচ্ছা এখন চল ক্লাসে যাই।

তারপর তারা দুইজন ক্লাসে চলে যাই।
******
এইদিকে, আমি রিকশা চালাচ্ছি আর ভাবছি, সুমাইয়া তো আমাকে দেখে ফেলল, কে জানে তারা কী ভাবছে আমার ব্যাপারে! আমি সুমাইয়া কে চিনি কারণ, সে একবার আমার সাথে বন্ধুত্ব করতে এসেছিল। কিন্তু আমি না করে দিয়েছি, কারণ সে বড়লোক বাবার মেয়ে। আর কই আমি একজন রিকশাওয়ালা! তার সাথে আমার যায় না! সেটা বন্ধুত্বই হোক বা অন্যকিছু!
আচ্ছা! আমি সুমাইয়া কে তো চিনি, কিন্তু ওর সাথে ওই মেয়েটা কে ছিল? তাকে ত এই ভ্যারসিটিতে দেখি নি!

আপনারা হয়তো ভাবছেন আমি ভ্যরসিটিতে পড়ি কিন্তু রিকশা চালায় কেন? আরে ভাই বাবা-মা না থাকলে যা হয় আর কী! পৃথিবীতে আমার আপন বলতে শুধু আমার একটা ছোট বোনই আছে। তাকে নিয়েই এখন আমার পুরো পৃথিবী! তার নাম হচ্ছে জান্নাত। বয়স ১০ বছর।
আর আমার নাম হচ্ছে অভ্র। অনার্স 2nd ইয়ারের স্টুডেন্ট।
আমি খুব কষ্টে পড়াশোনা করি। সকালে উঠে রিকশা নিয়ে বের হই। তারপর ভ্যারসিটির সময় হলে ক্লাস করে আবারও রিকশা নিয়ে বের হই। আমার জীবনে এখন শুধু একটাই লক্ষ্য নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে।
তবে আমি যতটা কষ্ট পাই তার এতটুকুও আমি আমার বোনকে বুঝতে দেই না। আমি আমার বোনটাকে অনেক অনেক ভালোবাসি।

যাইহোক, আমি বাসায় আসলাম। বাসায় আসতেই আমার ছোট্ট পরীটা এসে বলল–

জান্নাত– ভাইয়া ভাইয়া! আমার জন্য চকলেট এনেছো কী,,??

আমি মিথ্যা কথা বললাম–

অভ্র– এই যা, আমিতো চকলেট আনতেই ভুলে গেছি। এখন কী হবে?

জান্নাত কন্না করতে শুরু করলো। আর বলল–

জান্নাত– তুমি সব সময় এমন করো! এ্যা এ্যা!
তুমি ভালো না তুমি পঁচা!

তখন আমি তাকে বুকে জড়িয়ে নিয়ে পেছন থেকে চকলেট বের করে বললাম–

অভ্র– আরে পাগলি থাম থাম! এই নে, আমি চকলেট নিয়ে আসছি।
এবার ত কান্না বন্ধ কর!

জান্নাত তখন একটা বিজয়ের হাসি দিয়ে। আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আমার গালে চুমু দিয়ে বলল-

জান্নাত– ভাইয়া তুমি খুবই ভালো।

অভ্র– আচ্ছা যা! এখন আমি ভ্যারসিটিতে যাবো। আর শোন কারও সাথে যেন মারামারি করবি না! আচ্ছা!

জান্নাত– আচ্ছা!

এটা বলে সে দৌড়ে বাইরে চলে গেল৷
আমি গোসল করে, রেডি হয়ে, ভ্যারসিটি চলে আসলাম।
ভ্যারসিটির সবাই আমাকে একনামে চিনে, আর সেটা হলো ক্ষ্যাত! আমি তাদের কথা শুনে কষ্ট পেলেও তাদের বুঝতে দেই না! একটা কথা মনে রাখবেন, মানুষকে কখনো নিজের দূর্বলতার কথা বলবেন না! কারণ, মানুষ যদি জানে এই কাজে আপনি দূর্বল , তখন মানুষ ওই কাজটাই আপনাকে করতে দিবে। এতএব সাবধান!
ভ্যারসিটির স্যারেরাও আমাকে তেমন একটা ভালো চোখে দেখে না! তবে আমি পড়াশোনায় মোটামুটি ভালো তাই স্যারেরা আমার নাম কমপ্লেন করতে পারে না!

যাইহোক আমি ক্লাসে ঢুকলাম। দেখি প্রথম সিট ফাঁকা তাই আমি সেখানে বসে পড়লাম।

একটু পর স্যার ক্লাসে আসল। আর আমাকে দেখে বলল–

স্যার– এই আমি না তোমাকে এই জায়গায় বসতে বারণ করছি। তারপরেও কেন এখানে বসেছো? আর তুমি প্রতিদিন একটি শার্ট পড়েই কেন ভ্যারসিটিতে আসো! তোমার কী অন্য কোনো শার্ট নেই৷ যাও পেছনে যাও!

আমি কোনো কথা বললাম না! মাথা নিচু করে পেছনের বেঞ্চ গিয়ে বসে পড়লাম। স্যারের কথা শুনে আমার চোখ দিয়ে ইতি মধ্যে অশ্রু গড়িয়ে পড়েছে। আমি সেটা মুছে ক্লাসে মনোযোগ দিলাম।

ক্লাস শেষ করে আমি ক্যাম্পাসের মধ্যে দিয়ে হাটছি। তখন পেছন থেকে কে যেন ডাক দিল–

— অভ্র, এই অভ্র, দারাও!

আমি দাড়িয়ে পেছন ফিরলাম। দেখি সুমাইয়া ও তার ফ্রেন্ড। আমি তাদের দেখে আবারও হাটতে শুরু করলাম। তখন সুমাইয়া আমার সামনে এসে বলল–

সুমাইয়া– এই তুমি কই যাচ্ছো? আর তোমার এতো ভাব কেন? তোমাকে সেই কখন থেকে ডাকছি তুমি শুনছো না কেন? একে হয়তো তুমি চিনো না! ওর নাম হচ্ছে । সানজিদা ও হচ্ছে আমার বেস্ট ফ্রেন্ড। এখন বলো তুমি কী আমার সাথে বন্ধুত্ব করবে না!

অভ্র– না!

সুমাইয়া– কেন? করলে সমস্যা কই?

অভ্র– ভ্যারসিটির সবাই জানে আমি একটা ক্ষ্যাত। আর এই ক্ষ্যাতের সাথে আপনি বন্ধুত্ব করবেন কেন?

সুমাইয়া– আমার মন চাইছে তাই। আর গরিবরা কী মানুষ না! তুমি কী আমার সাথে বন্ধুত্ব করবে?

অভ্র– না! সরি।

এটা বলে আমি বাসায় চলে আসি।

তারপর আবারও রিকশা নিয়ে বের হলাম।

সারা বিকেল রিকশা চালিয়ে মাত্র ৩০০ টাকা পেলাম। সেখান থেকে চাল তারপর আরও যাবতীয় জিনিস নিয়ে বাসায় এসে রান্না করতে লাগলাম।

চলবে…?