ভালোবাসার কাব্য গাঁথবো পর্ব-৩+৪

0
1357

#ভালোবাসার_কাব্য_গাঁথবো

(৩)
ইংলিশ ডিপার্টমেন্টের সামনে দিয়ে যাবার বকুলতলায় একদল স্টুডেন্ট এর ভিড় দেখা যায়। দুজনের হাতে গিটার। সম্ভবত গানের আসর বসাবে। ক্লাসের ফাঁকে ফাঁকে চলে স্টুডেন্টস দের এধরনের আনন্দ। চত্বরে গোল হয়ে বসা দেখে তানভীর দুতলার বারান্দায় এসে দাঁড়ায়। নজর আটকায় সবার মধ্যমনি হয়ে বসা লাবিবায়। হলুদ গাউন হিজাবে শীতের সকালে ফোঁটা গুচ্ছ গাঁদার মতো সৌন্দর্য ধরা পড়ছে। মেয়েটাকে সবার মাঝে সহজেই চিহ্নিত করা যায়। মিডিয়াম হেলদী। গুলুমুলু চেহারায় আঙুল ছোঁয়াতে ইচ্ছা করে। নামটাও কেমন যেনো! ভীষণ আদুরে,লাবি…বা! এই মেয়েটাই না সেদিন ভয় পেয়েছিলো? আজ কেমন গুন্ডি গিরি করছে! তানভীর দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতেই পাশের ছেলেটার পিঠের উপর ধুপ ধাপ কিল ছুঁড়ে সোজা হয়ে বসে। ছেলেটার নাম নাকিব। তুখোড় ছাত্র। ডিপার্টমেন্টে ফার্স্ট। লাবিবার বন্ধু। তার অপরাধ তাকে বলা হয়েছে গিটারে এক সুর তুলতে,সে তুলেছে আরেক সুর। কিল খেয়ে পিঠ বাঁকিয়ে কুকিয়ে উঠে, ‘ ও মা! ‘ এইটুকুনি আওয়াজেই তেলে বেগুনে জ্বলে উঠে লাবিবা। আঙুল তুলে শাষায়। ‘ একদম ঢং করবিনা। এই তোকে কি খাওয়ায় না? এতো হাড্ডি কেন? রড়ের মতো শক্ত। শরীরে একটু গোশতো বানাতে পারিস না? ‘
উর্মিলা দাঁত বের করে হাসে। আদর করে বলে ,
‘ ব্যাথা পেয়েছিস?’
‘ একদম না। ‘
অথচ ব্যথায় হাতের উপর আরেক হাতে চেপে ধরেছে। একটু পর পর ঘষে দিচ্ছে। চিনচিনিয়ে ব্যথা। দেখেই বুঝা যাচ্ছে। স্বীকার করতে নারাজ। বন্ধু মহলে নিজেকে শক্ত দেখাতে আগ্ৰহী। নাকিব সোজা হয়ে বসে। ভেংচি কাটে। ‘ আরেকবার মারতে আসিস। পিঠ আরো শক্ত করে রাখবো। ব্যথা পেয়ে ভ্যা ভ্যা পর্যন্ত করবি।’
‘ আগেরটা বাদ অন্য কোন গানের সুর তোল।’
‘ কোনটা বল।’
‘ তাহসানের দ্যা ফেভারিট সং অফ আওয়ার ফ্রেন্ডস।ইয়েএএএ…’
গিটারে সুর তুললো। সুরের তালে তালে সবাই একসাথে গাইতে লাগলো,

‘ তুমি আর তো কারো নও , শুধু আমার
মত দূরে সরে যাও, রবে আমার
স্তব্দ সময়টাকে ধরে রেখে
স্মৃতির পাতায় শুধু তুমি আমার
কেনো আজ এতো একা আমি, আলো হয়ে দূরে তুমি
আলো আলো আমি কখনো খুঁজে পাবো না।
চাঁদের আলো তুমি কখনো আমার হবেনা….।।’

গাইতে গাইতেই চোখ পড়লো দুতলার বারান্দায়। ইংলিশ ডিপার্টমেন্টাল হেড খবিরুল ইসলাম স্যার, দুজন প্রফেসর সহ তানভীর কে দাঁড়িয়ে থেকে গান শুনতে দেখে। খবিরুল ইসলাম স্যারের সাথে তানভীর খানের কনভারসেশন চোখে পড়ার মতো। বিনয় ঝড়ে পড়ে কথায়। চারজন পাশাপাশি দাঁড়িয়ে কি নিয়ে যেনো আলোচনা করছে আবার তাঁদের দিকে তাকিয়ে গান ও শুনছে। একে একে সবাই মাথা উঁচিয়ে তাকালে তানভীর পকেট থেকে একটা হাত বের করে থামবস্ শো করে। নিঃশব্দে হাসি বিনিময় করে সবাই। তানভীর মুচকি হেসে স্যারদের সাথে প্রস্থান করে।

আড্ডা শেষ হতেই একে একে যার যার গন্তব্যের উদ্দেশ্যে চলে যায়। বসে থাকে লাবিবা। উর্মিলা তাড়া দেয় লাবিবাকে।
‘ চল যাওয়া যাক। উঠ। ‘ লাবিবার সাড়া না পেয়ে দৃষ্টি অনুসরণ করে দুতলার খালি বারান্দার দিকে তাকায়। উদাস ভঙিতে একধ্যানে তাকিয়ে আছে লাবিবা। উর্মিলা কাঁধে হাত রাখে। ঝাকি দিয়ে ধ্যান ভাঙায়।
‘ কি দেখিস এভাবে?বারান্দা তো খালি। আমিতো কিছুই দেখি না। ‘
লাবিবা চটপট উর্মিলার দিকে ঘুরে বসে। চোখ পিট পিট করে উর্মিলার দিকে ঝুঁকে বসে। সরাসরি চোখে চোখ রেখে বলে,
‘চার অক্ষরের নাম গুলো এতো সুন্দর হয় কেনো? যেমন: তানভীর, আনভীর, রাফসান,সাদমান, আদনান! দুই অক্ষরে জিহ্বা থেমে যায় চার অক্ষরে পূর্ণতা পায়।‌ কি কিউট না? নামেই যার বিশালতা প্রকাশ!দীগন্ত জুড়ে তারই আভাষ!’

লাবিবা চোখ দুটো বন্ধ করেই লম্বা শ্বাস টানে। স্পঞ্জের ন্যায় গাল দুটোয় মুহূর্তেই লালচে আভা ছড়িয়ে পড়ে। চেহারার দ্যুতি কি খানিকটা বেড়ে গেলো?
উর্মিলা জহুরীর চোখে পরখ করতে চাইলো। এগিয়ে গেলো। চশমাটা চোখে ঠিক করে নিলো। মুখের সামনে মুখ রাখলো। হটাৎ ই ভীষন চিন্তিত হয়ে পড়লো। চিন্তার কারণে কপালে একটি দুটি ভাজ পড়লো। এই চিন্তার কোন সমাধান পাওয়া গেলো না । প্রশ্নটা করেই ফেললো।
‘ কে সেই ভাগ্যবান? ‘ রিপ্লাই পাওয়া মাত্রই উর্মিলার গায়ে কাঁটা উঠলো। দ্বিতীয়বার লোম দাঁড়িয়ে যাওয়া গভীর থেকে ফিসফিসিয়ে অথচ দৃঢ় সেই আওয়াজ পেলো, ‘ ভীর..রররর !’
‘ তানভীর?’
‘ খান।’
‘ স্যার?’
লাবিবার ঠোঁট জোড়া প্রসারিত হলো। নিঃশ্বব্দ অথচ লাজুক কী হাসি! ব্যাগটা কাঁধে তুলেই পিচ ঢালা রাস্তায় পা চালালো। উর্মি যেনো বোকা বনে গেলো। মনে মনে আওড়ালো ,’ স্যারর…!’ মাথায় নাড়া দিতেই বলে উঠলো,’ মানে কি? কার মুখে কি নাম! লাব্বু! তাও আবার লাজুক গাল! নাম বললো তানভীর খান!’ লাবিবার যাওয়ার দিকে তাকালো। সেও পিছু পিছু দৌড় দিলো। লাবিবা এতোক্ষনে কলেজের লাইব্রেরীর সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। উর্মিলা এসে দাড়াতেই‌ লাবিবা ধাক্কা খেলো। সরে দাঁড়িয়ে কপট রাগ দেখালো।
‘ গায়ের উপরে উঠছিস কেনো? আমার দুলার হক মারার প্ল্যান আছে নাকি? ‘
‘ রাখ তোর দুলা। আগে ক্লিয়ার কর বিষয় টা কি? ‘
‘ দাঁড়া বইটা আগে নিয়ে নিই। তারপর হাঁটতে হাঁটতে বলি।’
লাবিবা খুঁজে খুঁজে অনেক গুলো বই বাছাই করলো। বাছাইকৃত বইগুলোর মধ্যে আরো বাছাই করলো। কাঙ্খিত বই না পেয়ে ইসলামিক বইগুলো খুলে দেখতে লাগলো। উর্মিলাও মুখ এগিয়ে দেখলো। একটা অধ্যায় পেলো। ‘ সপ্নের ব্যাখা ‘ । সেটা দেখেই লাবিবা বইটা কিনে বেরিয়ে এলো। হাঁটতে হাঁটতে বললো।
‘ তোকে বলেছিলাম না? হুট করেই ভোরের সপ্নে একজন এসে বীণা টিকিটে এন্ট্রি করে। আই ফিল হিম রিয়েল । সুপুরুষ সে। আমি তাকে ছুঁয়ে দেই। তার চওড়া কাঁধ লোমশ বুকের উষ্ণতায় ঢুবে যাই। বিস্তৃত এক ভ্যালিতে শুয়ে শুয়ে আকাশ দেখি সপ্ন সাজাই।’
‘ হ্যা কিন্তু তুই তো চেহারা বলতে পারিস না। ‘
‘ আজ সকালের সপ্নে কি দেখেছি জানিস? আমার বিয়ে হচ্ছে। ধূমধাম করে বিয়ে সেই সুপুরুষের সাথে। টুপি মাথায় ব্লাক শেরওয়ানি পড়ে জায়নামাজ হাতে আমার দিকে এগিয়ে আসছে। আঁধার কাটিয়ে যতোই সে আলোতে ধরা দিলো আমার চোখে সামনে সেই সুপুরুষের মুখ ততো উজ্জ্বল হতে থাকলো। আমার সামনে দাঁড়িয়ে মুচকি হেসে আমার হাতু সৌজন্য চুমু খেলো। তারপর..’

‘ তারপর?’

‘ আম্মুর ডাকে ঘুম ভেঙ্গে গেলো। চোখ খুলে আমি আর কথা বলার শক্তি পেলাম না। আমার গা মরঘাম দিচ্ছিলো। বিছানা সহ ভিজে যায়। আর আমি হা করে হাপড় টানছিলাম একটু পর পর। আম্মু আমাকে পানি খাইয়ে দিয়ে আব্বুকে ডেকে আনে। গোছল করিয়ে দেয়। ব্রেকফাস্ট করার পর আমি সুস্থ হই । ডক্টর জানায় টাইফয়েড থেকে উঠার পর আমার শরীর দূর্বল জন্য এসব দুঃসপ্ন দেখি। কিন্তু আমি জানি আজ দূর্বলতার কারণে নয় আমার কিশোরী বয়স থেকেই এই সুপুরুষ আমার সপ্নে আসে।আর আমি সপ্নে একটুও ভয় পাইনি। বরং অনেক খুশি ছিলাম। কিন্তু কেনো যে আমি অসুস্থ হয়ে পড়লাম বুঝতে পারিনি। তবে সন্দেহ হচ্ছে। আম্মু বার বার জিজ্ঞেস করছিলো আমি তানভীর খান কে? আমি নাকি তানভীর খানের নাম নিয়েছি। কিন্তু আমার সত্যিই খেয়াল নেই কে ছিলো সেই সুপুরুষ? বরাবরের মতো আজো ভুলে গেছি। কিন্তু তার নাম যে তানভীর খান এটা বুঝতে পেরেছি। নামটা মাথায় বার বার রিমেম্বার হচ্ছিলো । ক্যাম্পাসে পোস্টারে নামটা চোখে পড়তেই খেয়াল হলো আমাদের প্রিন্সিপাল মি.তানভীর খান। এই নামে একমাত্র তাকেই আমি চিনি।আর কাউকে নয়। ‘

‘ তুই কি এখন প্রিন্সিপালের পেছনে পড়বি?’

‘ পেছনে কিরে? আমি তার সামনেও নাই পেছনেও নাই। কার সাথে কি তুলনা করিস? ডলফিনের মতো বড় মানুষটাকে দেখলেই আমার বাচ্চা খরগোশ মনটা খোদা খোদা করে।রেগে গেলে কী হুংকার যে ছাড়ে! সিংহের বাচ্চা! কলিজা শুকিয়ে কাঠ হয়ে যায়! ব্যাটা বুড়ো নিশ্চিত দুই তিনটা বাচ্চার বাপ । ‘

‘ এই যে মিস! আস্তে। কাকে বুড়ো বলছিস? ‘

‘ কেনো? প্রিন্সিপাল কে। বুড়ো না হলেও মাঝ বয়সী তো। কখনো দেখেছিস কোন ইয়াং পারসন কোনো ভার্সিটির প্রিন্সিপাল হয়? ডায়েট প্ল্যান করে জিম করে ঐরকম ইয়াং লুক বড়লোকেরা এখন প্রায় সবাই ধরে রাখে। বয়স ই বুঝা যায়না।’

‘ প্রিন্সিপাল স্যার নাউ থার্টি টু।’
‘ পাগল তুই।’
‘ তুই পাগল। গুনে গুনে তোর থেকে দশ বছরের বড়ো। ‘
‘ রিয়েলি? কিভাবে পসিবল? ‘
‘ এই কলেজের সাবেক প্রিন্সিপালের নাতনী প্রেজেন্ট প্রিন্সিপাল। আলহাজ্ব মাজহারুল ইসলাম স্যারের মৃত্যুর পর তার পরিবারের যোগ্য তানভীর খান স্যার তার দায়িত্ব গ্ৰহন করেন। বলতে পারিস এই কলেজ তাদের নিজেদের ই কলেজ। সেজন্য ই এতো অল্প বয়সে তানভীর স্যার এখানকার প্রিন্সিপাল। ‘
‘ তুই কিভাবে জানলি?’
‘ আমরা আসার দুই বছর আগে আপু এই কলেজে ছিলো আর তখনই মাজহারুল স্যার মৃত্যু বরণ করেন আর তানভীর স্যার জয়েন করেন। তানভীর স্যারের এখানে আসা নিয়ে কম জল ঘোলা হয়নি। কলেজের পরটে পরটে চলেছে রাজনীতি। আর এখন সব কিছুই স্যারের মুঠো বলে। দক্ষ হাতে সবটাই আয়ত্ত্ব করে নিয়েছেন। ‘
‘ নিজেদের কলেজ বলেই বুঝি এতো পাওয়ার?’
‘ পাওয়ার আসে ভেতর থেকে আর যোগ্যতা থেকে। সাবেক প্রিন্সিপালের নাতনী তকমা নিয়ে অনেক বাজে সিচিয়ুশনে পড়েছেন। এজন্য নিজের যোগ্যতা সর্বত্র বিচরণ করে দেখিয়ে দিয়েছেন। আর এমনিতেও প্রোফাশনাল লাইফে তাদের পার্সোনাল লাইফকে মনে হয়না তাদের ফেমেলির কেউ টেনে আনে। তানভীর স্যারের ফ্যামিলি সম্পর্কেও আমরা কিছুই জানি না। প্রিন্সিপাল আলহাজ্ব মাজহারুল ইসলাম মারা যাবার পর ভাইস প্রিন্সিপাল যদি ঝামেলা না করতো তাহলে মনে হয়না এটা নিয়েও জল ঘোলা হতো। এখন খেয়াল করলে দেখতে পারবি ভাইস প্রিন্সিপাল কেমন সবসময় প্রিন্সিপালের নেওটা হয়ে থাকে। ‘
‘ তুই তো অনেক কিছুই জানিস। আমি তো কিছুই জানিনা। ‘
‘ তোর মতো বাপ থাকলে দুনিয়ায় বইয়ের ভাষা ছাড়া বিশ্বাস কর আমিও কিছুই জানতাম না। ক্যাম্পাসে থাকিস কতক্ষন ক্লাস ছাড়া? ‘
‘ আব্বুকে কেনো টানছিস? এই শোননা।এখন বাসায় ফিরতে হবে ‌। বইটা তোর কাছে রাখ। আমি কালকে এসে পড়বো । এই বই বাসায় কেউ দেখলেই হলো!’
‘ এটা দিয়ে কি হবে? ‘
‘ আম্মু বলেছে নিজের বিয়ে সপ্নে দেখলে আশেপাশে মানুষ মরে।কথাটা কতটুকু সত্যি বইয়ে খুঁজে দেখতে হবে। ‘
‘ ধ্যাত এসব কিছুনা। মানুষ এমনিই বলে। আচ্ছা দোস্ত তুই এতো বিয়ে নিয়ে ভাবছিস ! তুই তো বিয়ে করবি না। তাহলে ঐ সুপুরুষ কে ভাগিয়ে দিতে পারিস না?’
‘ সপ্নে কি আর মানুষের হাত থাকে?’
‘ না।’
তৎক্ষণাৎ পাশ কেটে শা শা করে একটা কার চলে যায়। গল্প করতে করতে খালি রাস্তার মাঝ বরাবর হাটছিলো তারা। গাড়ির হর্ণ পেয়ে দ্রুত সরে যায়। উর্মিলা ভয়ে বুক চেপে ধরে। চিৎকার করে। ‘ দোস্ত আরেকটু হলেই তো ইন্তেকাল ফরমাইতাম। ‘ লাবিবা সাথে সাথে ঘুরে দেখতে পায় পেছনে প্রিন্সিপালের কালো গ্লাসের চকচকে সাদা নোহা কারটা। ফুল স্পিডে ধেয়ে যাচ্ছে। যতদূর দেখা যায় ততদূর পলকহীন তাকিয়ে রয় লাবিবা। অন্যমনস্ক অসাবধানতায় হাতের বইটা পড়ে যাচ্ছিলো। হুড়মুড়িয়ে কোনভাবে আটকায়। বুকের সাথে চেপে ধরে। ফের পেছনে তাকায়। গাড়িটা আর দেখা যাচ্ছে না। ভর দুপুরে খা খা করছে জনমানবহীন রাস্তা।

চলবে __

®লাবিবা তানহা এলিজা

#ভালোবাসার_কাব্য_গাঁথবো

(৪)
শাহাজালাল হসপিটালের রিসিপশনে এসে দাঁড়িয়েছে লাবিবা। তার পাশেই উর্মিলা। হাতে ড. তামিম খানের কার্ড। লাবিবার আজ ভীষণ মাথা ব্যথা। রাত জেগে এস্যাইমেন্ট করেছে সকালেও ঘুমতো পারেনি। নিতু ইসলাম কার্ড টা হাতে দিয়েই উর্মিলার সাথে তৎক্ষনাৎ লাবিবাকে হসপিটালে পাঠিয়েছে। রিসিপশনিষ্টকে জিজ্ঞেস করলে বলেন, ‘ ফিফথ ফ্লোরে রিসিপশনে যান। তামিম স্যার সেখানেই বসে। ‘
লাবিবা উর্মিলা লিফটের সামনে এসে দাঁড়ায়। লিফট এইটথ ফ্লোরে। পাঁচ মিনিট অপেক্ষা করতে হয়। ফিফথ ফ্লোরে এসে উর্মিলা জিজ্ঞেস করে,
‘ সাইকলোজিষ্ট ড. তামিম খান কখন বসবেন?’
‘ সাইকলোজিষ্ট মানে? ‘
চেঁচিয়ে উঠে লাবিবা। উর্মিলা কার্ড এগিয়ে দিয়ে বলে,
‘ এখানে তো তাই লেখা আছে। ‘
‘ ম্যামের কি আমাকে পাগল মনে হয়? পাগলের ডাক্তারের কাছে পাঠিয়েছে। ‘
‘ ম্যামের ভাগিনা যে পাগলের ডাক্তার তুই জানতিস না?’
‘ আমি কিভাবে জানবো? আমি কি জানতে চেয়েছিলাম? কার্ডটাও তো তোর হাতে ছিলো। তুই এতোক্ষন বলতে পারলিনা? চল এখান থেকে।’
রিসিপশনের মেয়েটি লাবিবাকে উদ্দেশ্য করে উর্মিলাকে বলে,
‘ ইনিই বুঝি পেশেন্ট? একটু সামলানোর চেষ্টা করুন প্লিজ। চেঁচামেচি যেনো না করে।’
লাবিবার মাথা গরম হয়ে গেছে। মেয়েটার উপর চেঁচিয়ে উঠে,
‘ কেউ পেশেন্ট না বুঝেছেন? আর আমি মোটেই চেঁচামেচি করছিনা। এই উর্মি চল। ‘
হাত ধরে টেনে নিয়ে আসতে চায়। উর্মিলা আটকে দিয়ে বলে,
‘ আরে আরে এতো হাইপার হচ্ছিস কেনো? ম্যামের ভাগিনা।না বোঝে তো আর তোকে পাঠায়নি। দেখা না করে গেলে কি মনে করবেন বল?’
‘ আর মনে করার বাকি আছেই টা বা কি? পাগল মনে করেন ম্যাম আমাকে ‌। আমি পাগল! ‘
কথাটা বলেই থেমে গেলো। অসহায় চোখে তাকালো উর্মিলার দিকে। পেছন থেকে কে একজন জিজ্ঞেস করল,’ কে পাগল?’
মানুষটিকে দেখে লাবিবা উর্মিলা দুজনেই সোজা হয়ে দাঁড়ালো। মুখে আওড়ালো,
‘ স্যা স্যা স্যার…’
‘ হুম। কে পাগল?’
‘ আমি। না ও পাগল। ‘
উর্মিলা চমকে উঠে বললো,
‘ না স্যার। আমি না ও পাগল।’
লাবিবা প্রতিবাদ করলো।
‘ একদম না। ও পাগল। ‘
দুজনের দুই কথায় তানভীর বেশ বিরক্ত হলো। সামান্য রেগেও গেলো।
‘ ক্লাস নেই তোমাদের? ক্লাস টাইমে হসপিটালে কি করছো? ‘
‘ আমরা তো ক্লাস ই করছিলাম স্যার। নিতু ম্যাম আমাদের পাঠালো। ম্যামের ভাগিনা! পাগলের ডাক্তার মি.তামিম খান। লাবিবাকে উনার কাছে ট্রিটমেন্ট নিতে হবে। ‘
‘ কেনো?’
‘ কারণ ম্যাম মনে করেন লাবিবা পাগল আর ওকে পাগলের ডাক্তার দেখানো উচিত।’
তানভীর লাবিবার দিকে কঠিন দৃষ্টিতে তাকালো। পরক্ষনেই কঠিন স্বরে আহ্বান করলো।
‘ কাম উইথ মি। ‘

তামিমের কেবিনের সামনে দাড়াতেই একজন বিনা বাক্যে দরজা খুলে দিলো। কেবিনে ঢুকে পড়লো তানভীর। তামিমকে কিছু না বলার সুযোগ দিয়েই বললো,
‘ নিতু ম্যাম আমার কলেজের দুটো পাগল পাঠিয়েছে। মি. তামিম খান ওরফে পাগলের ডাক্তার এদেরকে পাগলকে চিকিৎসা দিন। ‘
তামিম লাবিবা উর্মিলার দিকে তাকায়। দুজনেই দরজা ধরে উকি ঝুকি দিচ্ছে। ওদের এভাবে দেখেই তামিম চেচালো।
‘ আমি পাগলের ডাক্তার। পাগল তো নই। ওখান থেকে এভাবে উঁকি ঝুঁকি দেবার মানে টা কি? ‘
লাবিবা উর্মিলা সাথে সাথেই হুড়মুড়িয়ে রুমে প্রবেশ করলো। একটু লজ্জাও পেলো। এভাবে রিয়েক্ট করা উচিত হয়নি। তারাই বা করবেটা কি? একেতো পাগলের ডাক্তার। তার উপর হুট করেই প্রিন্সিপালের সামনে পড়া। তারপর ভয়ের চোটে দুজনের উল্টাপাল্টা কথা! তানভীর চেয়ার টেনে বসলো। তামিমের রাগান্বিত মুখটা দেখে অন্যদিকে তাকিয়ে হাসলো। তার ভাই টা যে এই পাগলের ডাক্তার কথাটা শুনলেই রেগে যায়।দেশ বিদেশ এতো পড়াশোনা করে এসে যদি শুনতে হয় পাগলের ডাক্তার পাগল তাহলে রেগে যাওয়াটা খুব একটা অপ্রকৃত নয়।
তামিম বিনা বাক্যে ড্রয়ার থেকে মেডিসিন বক্স বের করে টেবিলের উপর থাবা বসিয়ে রাখলো। থমথমে গলায় বললো,
‘ তোমাদের মেডিসিন নিয়ে যাও। খালামনিকে বলে দিবে পরিচয় দিয়ে যেনো নেক্সট টাইম আমার কাছে কোন পাগল কে না পাঠায়। ‘
লাবিবা হাত বাড়িয়ে বক্সটা হাতে নিলো। কভার খুলে দেখলো বক্স ভর্তি কয়েক পদের ট্যাবলেট। এতো কেনো? আর কিসের ট্যাবলেট! তাকে তো সমস্যার কথাটাও জিজ্ঞেস করলো না। সত্যি সত্যি পাগলের ঔষধ দিলো নাতো? লাবিবা চটপট বক্সটা আগের জায়গায় রেখে দিলো। প্রতিবাদী কন্ঠে জানালো,
‘ স্যার আপনি কি পাগলের মেডিসিন দিচ্ছেন? আমরা কিন্তু পাগল না। ‘
তামিম উত্তর দিলো না। প্রেসক্রিপশনটা লেখা শেষ করে লাবিবার দিকে এগিয়ে দিলো। আঙুলে ইশারা করে কড়া গলায় বললো, ‘ আউট ‘ ।
ডাক্তারের রাগান্বিত গলা শুনে লাবিবা ভড়কে গেলো। মিন মিন করে বললো,
‘ স্যার একচুয়েলি আমার মাইগ্ৰেন প্রব্লেম আছে। আমি পাগলের মেডিসিন নিতে পারবো না। ‘
‘ কিন্তু আমি আপনাকে পাগলের মেডিসিন দিবো। প্লিজ আপনারা বের হন আর ফার্মিশিতে গিয়ে জিজ্ঞেস করে নিবেন মেডিসিন গুলো কিসের। না সিউর হয়ে কিন্তু একদমি যাবেন না। পরে না আবার পাগলের মেডিসিন নিয়ে আবার সুস্থ হয়ে যান। ‘
তানভীর আর লুকিয়ে চুরিয়ে হাসতে পারলো না। সবার সামনেই এক ঝলক হেসে নিলো। লাবিবা একবার তামিমের দিকে আরেকবার তানভীরের হাসির দিকে তাকিয়ে জমে গেলো। ভেতরে ভেতরে খচখচানি চেপেও রাখতে পারলো না। মিনমিনিয়ে ঠিকই প্রশ্ন ছুড়লো,
‘ পাগলের ডাক্তার ও মাথা ব্যথার ট্রিটমেন্ট করে?’
সাথেই তামিমের ধমক খেলো। লাবিবাকে কিছু না বলে তামিম নিতু ইসলামকে কল দিলো। রিসিভ হতেই কিছু না বলতে দিয়ে নিজেই বললো,
‘ খালামনি নেক্সট কাউকে আমার কাছে তুমি পাঠাবে না। আসছে থেকে কি পাগলের ডাক্তার ডাক্তার করে যাচ্ছে। আমি এই ট্যাগ নিয়ে আর চলতে পারবোনা। দরকার পড়লে ডাক্তারি ছেড়ে দিবো।’
‘ কেনো? কি করেছে লাবিবা? ‘
তামিমের চোখে জল চলে এলো,
‘ এতোক্ষন তাহলে কি নালিশ দিলাম তোমাকে? ধ্যাত।’
ফোন কেটে দিয়ে দেখে তানভীর ছাড়া কেউ নেই।
‘ কোথায় গেলো?’
‘ চলে গেছে মি. পাগলের ডাক্তার। ‘
‘ তানভীর!’
‘ ও আচ্ছা। সরি। তো যাওয়া যাক।’

রেস্টুরেন্টে বসে আছে ফ্লোরা। তানভীর, তামিমকে দেখে দাঁড়িয়ে যায়। তারা বসার পর ফ্লোরা বসে। মৃদু আওয়াজে বলে,
‘ হাই!’
‘ হ্যালো।’
‘ হাই তানভীর ‘
তানভীর রিপ্লাই না দিয়ে চেয়ার টেনে টেবিলে হাতের উপর হাতে ভাজ রেখে বলে,
‘ ভাইয়া আমরা মনে হয় আলোচনা শুরু করতে পারি।’
তানভীরের ইগনোরে মনখুন্ন হয় ফ্লোরা। পাত্তা না দিয়ে হালকা হাসে। জিজ্ঞেস করে,
‘ কি খাবে? অর্ডার দেওয়া যাক। ‘
‘ ভাইয়া আমি শর্ট টাইম নিয়ে এসেছি। ‘
‘ তানভীর! আমি জানি তুমি আমার সাথে কথা বলতে চাও না। কিন্তু কি করবো বলো? এবার মনে হয় আমার তোমার সাথে কথা বলা উচিত। আই এম অবলাইজড। ‘
তামিম গলা কাশি দিয়ে পরিস্থিতি নরমাল করতে ইশারা করে। সিরিয়াস হয়ে বলে,
‘ তানভীর। ফ্লোরা ওয়ান্ট টু ব্যাক ইন মাই লাইফ। আমার সংসার করতে চায়। আর সারাজীবন আমার সাথেই থাকতে চায়। এ ব্যপারে তোর মতামত কি?’
‘ আমার জানামতে মিস ফ্লোরা কিছুক্ষন পর পর ই তার চাওয়া পরিবর্তন করে তাই উনার চাওয়াটাকে আমি ইমপর্টেন্স দিতে পারলাম না। তুমি কি চাও সেটা বলো ভাইয়া। ‘
তামিমকে কিছু বলতে না দিয়ে ফ্লোরা বলে,
‘ তানভীর তোমার ভাইয়া আমাকে জানিয়েছে তোমরা যেটা ডিসিশন নিবে সেটাই ও মেনে নিবে। ‘
‘ সাত বছর আগে এই ডিসিশনটা নিলে জীবনটা এতোটা এলোমেলো থাকতো না। ভুল মানুষের হাত ধরে লাইফ থেকে তিনটি বছর হারিয়েছে বাকিটা তার শাস্তি ভোগ করছে। আবার সেই ভুল কে জীবনে জায়গা দিতে চাইছে। সবার সামনে কথা বলার ক্ষমতা টুকুও এখন তার নেই। মেরুদণ্ডহীন পুরুষ। ‘
এক্স ওয়াইফের সামনে ভাইয়ের থেকে এতোটা তিরষ্কার পেয়ে নড়েচড়ে উঠে তামিম। বিন্দুমাত্র প্রতিবাদ জানায় না। যেখানে বড় ভাই হয়ে তানভীরকে তার গাইড করার কথা সেখানে সেই তার চরম ভূলের জন্য ছোট ভাইয়ের থেকে তিরষ্কার সাদরে গ্ৰহণ করছে। নিশ্চুপ দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে তামিম। তানভীর একহাত চেয়ারের উপর রেখে হেলে বসে। সোজাসুজি ফ্লোরার দিকে দৃষ্টি রাখে। দুধে আলতা রংয়ে পয়ঁত্রিশ বছর বয়সী এক অপরাধী মুখে বসে থাকা মহিলা। রুপ,যৌবনের তেজস্বীতা যার পরিচয় দিয়ে যায়। মডেলিং ই ছিলো যার ধ্যান জ্ঞান। এই মডেলিং এর জন্য বিসর্জন দিতে পিছ পা হয়নি চৌদ্দ বছরের ভালোবাসা, স্বামী,তিন বছরের সংসার, নিজ আত্মসম্মান। আজ এতো বছর পর সে জানাচ্ছে ব্যাক করতে চায় তাও আবার প্রাক্তনের কাছে। তাচ্ছিল্য হাসে তানভীর। বাম ভ্রু নাচিয়ে বলে,
‘ তো মিস ফ্লোরা! কি কারণে আপনার এই চাওয়া টা সৃষ্টি হলো? ডিরেক্টর সাহেব বুঝি অন্য কোনো মডেলকে এন্ট্রি দিয়েছে?’
‘ না। আমি নিজেই চলে আসছি। সেই জীবনে সুখ নেই তানভীর। একটা মেয়ে বাইরে ঠিক কতটা ফেলনা, কতটা হেয় তাদের কে করা হয় প্রতিটা পদে পদে বুঝেছি আমি। পর্দায় হাসি মুখটা থাকলেও ভেতরে গুমরে গুমরে মরেছি। টাকার নেশায় নয় সেলিব্রেটি হবার নেশায় নিজের সবটা হারিয়েছি। বাবা মা আত্মীয় স্বজন ভালোবাসাকে ছেড়ে দিনের পর দিন কাটিয়েছি। আমি…আমি সত্যিই হাঁপিয়ে গেছি। সেই ছন্নছাড়া জীবনের থেকে নিজের সংসার অনেক ভালো। সংসার জীবনে সবাই পাশে থাকে। নিঃসঙ্গ দিন পার করতে হয়না। বিপদে পড়ে আর্তনাদ করার আগেই প্রিয়জনরা পাশে দাঁড়ায়। আমি একটা ভুল সপ্ন নিয়ে বেঁচে ছিলাম। আমি পুরোপুরি তা ত্যাগ করতে চাই। হারিয়ে যাওয়া সংসার ফিরে পেতে চাই। ভালোবাসার মানুষটার হাত ধরে এগিয়ে যেতে চাই। ‘
‘ আপনার চাওয়ার লিস্টে তো আমি বাদ পড়ে গেলাম মিস ফ্লোরা।’
চমকে তানভীরের মুখ পানে তাকায় ফ্লোরা, তামিম দুজনেই। ফ্লোরা ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠে। হাত জোড় করে বলে,
‘ আমাকে ক্ষমা করে দাও প্লিজ। আমি আমার কৃতকার্যের জন্য ক্ষমা চাইছি। তোমাকে আমি ভাই ছাড়া অন্য কোন নজরে কখনোই দেখিনি। তামিম যখন আমাকে ছাড়তে চাইছিল না বার বার আমি অপারগ হচ্ছিলাম। কোন প্ল্যান ই সাকসেসফুল হচ্ছিলো না তখন আমি সেদিন রাতে তোমার ঘরে গিয়েছিলাম। তোমার সাথে…. তোমার সাথে.. আমি উচ্চারণ করতে পারছিনা সরিইই। তোমার সাথে অসভ্যতা করে নিজেকে দোষী সাব্যস্ত না করলে তামিম আমাকে কোনদিন ছেড়ে দিতো না। তুমি আমার দেবর। ভাই সমতুল্য। ‘
‘ ইটস পাস্ট বিউটিফুল লেডি। এই মুহূর্তে আমি আপনাকে সেই জায়গায় দেখতে চাইছিনা। যদিও আপনি আমার সিনিয়র। দেখতে কিন্তু তা মনে হয়না। আমি জানি আপনি কেনো ব্যাক চাইছেন। একটু সোজাসুজি বলি। মিস ফ্লোরা দীর্ঘ পাঁচ বছরের অপবিত্র নোংরা শরীর আর কুৎসিত মনটার খান বাড়িতে কোন জায়গা হবে না। সব কিছু হারিয়ে আমার ভাই এখনো সিংগেল দেখে যে সুযোগ নেবার চেষ্টা করছেন আমি এবং আমার ফ্যামিলি তা হতে দিবে না। আপনাকে আমাদের শুরু থেকেই পছন্দ না। ভাইয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে শেষ পর্যন্ত বাধ্য হয়েছিলাম। যে ভাইয়ের কষ্ট সহ্য করতে না পেরে আপনাকে আমার ফ্যামিলি গ্ৰহণ করেছিলো সেই আপনিই আমার ভাইয়ের সুন্দর জীবনটাকে কাটা দিয়ে ভরিয়ে তুলেছেন। আমার ভাইয়ের জীবন থেকে সেই কাটা তুলা হয়ে গেলেও ক্ষত এখনো আছে। সেই ক্ষতের পাশে আর ক্ষত আমরা হতে দিবো না। উই আর সরি। ‘
‘ আমি তোমার ভাইকে ভালোবাসি।’
‘ আপনার ভালোবাসার প্রয়োজন ফুরিয়ে গেছে মিস ফ্লোরা। ফুরায় নি?’
শেষ প্রশ্নটা তামিমের দিকে ফিরে জিজ্ঞেস করে তানভীর। তামিম চুপচাপ উঠে দাঁড়ায়। ফ্লোরা কন্দ্রনরত মুখটা একবার দেখে হন হন করে বেরিয়ে যায়। ফ্লোরা জোরে ডাকে।
‘ তামিম। তামিম আমি এখনো তোমাকে ভালোবাসি। তামিম। ‘
‘ উনি ফিরবে না মিস। ডেকে লাভ নেই। ভাইয়ের বিয়ে দিবো। যদি এ শহরে থাকেন বছর ঘুরতে না ঘুরতেই হয়তো খবর পেয়ে যাবেন চৌধুরী বাড়ির বংশধর আসছে। এবার কোনো মডেল টেডেলের ছলচাতুরি এক্সকিউজ কোনটাই ছাপ ফেলবেনা। একজন প্রকৃত মেয়ে বউ হয়ে আসবে । হাজব্যান্ড কে ভালোবাসা আর বাচ্চা জন্ম দেওয়ার মাঝেই একজন নারীর সার্থকতা। ফিটন্যাস ধরে রাখার বাহানায় লক্ষ লক্ষ পুরুষের কুনজরের শীর্ষে যাওয়া না। ‘

চলবে,

®লাবিবা তানহা এলিজা