#অদ্ভুত_পূর্ণতা
writer – তানিশা
part – 1+2
— তানিশা এসেছে শুনে কাব্য আজ অফিস থেকে তাড়াতাড়ি বাসায় চলে এসেছে। রুমে গিয়ে ফ্রেস হয়ে কফি খেতে খেতে কাউকে কিছু না বলে বাসায় এদিকওদিক তানিশাকে খুঁজতে লাগলো। নীলা এসে দেখে তার ভাই কাউকে খুঁজছে। তার ভাই কাকে খুঁজছে এটা খুব ভালো করে জানে সে। নীলা এসে কাব্যর কাঁধে হাত রেখে বলল,,,
নীলা : ভাইয়া তানিশাকে খুঁজছো?
কাব্য : না,, মানে,, মা বলেছিল তানিশা নাকি এসেছে?? ( আমতা আমতা করে )
নীলা : হ্যা এখন ছাদে আছে।
কাব্য : ভালই হয়েছে,, এসেছে যখন কিছুদিন আমাদের বাসায় থেকে যাক।
নীলা : থাকার জন্যই নিয়ে এসেছি। আচ্ছা এই টপিক বাদ। আমি যে মেলার বাহানা দিয়ে ওকে এখানে নিয়ে এসেছি। আমাকে কি দিবে?? ( ভ্রু নাচিয়ে )
কাব্য : কি চাই তোর?
নীলা : এখন আমার ভাইয়ের হাসি মুখটাই যথেষ্ট। যা দরকার পরে চেয়ে নিবো। এখন ছাদে যেতে পারো। ডিস্টার্ব করার মতো কেউ নেই। ( এক গাল হেসে )
— কফির মগটা হাতে নিয়ে কাব্য সিরি বেয়ে ছাদে চলে গেলো। ছাদে গিয়ে দেখে তানিশা ছাদের রেলিং হাত দিয়ে দাড়িয়ে আছে। গাঢ় নীল রঙ্গের জামার সাথে সাদা উড়নায় অপূর্ব মানিয়েছে তানিশাকে। পড়ন্ত বিকেলের ডুবন্ত সূর্যের রক্তিম লালিমায় আকাশটা লালচে হয়ে আছে। চারদিকে পাখিদের কিচিরমিচির ডাক আর দক্ষিণা বাতাসে ছাদের একপাশে ফুটন্ত লাল গোলাপ ফুল গুলো দোলছে কোনো এক প্রফুল্লতায়। সেই বাতাসে তানিশার খোলা চুলগুলো এলোমেলো হয়ে উড়ছে । তানিশা চোখদুটি বন্ধ করে উপভোগ করছে এই রোমাঞ্চিত পরিবেশ। প্রকৃতির মাঝে যেনো আরেকটি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ফোঁটে উঠেছে আজ।
কাব্য একহাত পকেটে দিয়ে অন্য হাত দিয়ে কফিতে চুমুক দিচ্ছে আর অপলক তানিশার দিকে তাকিয়ে আছে।
মেয়েটা কখন যে এতো বড় হয়ে গেলো চোখে পরেনি। সেদিনের সেই পিচ্চি তানিশাকে আজ আর পিচ্চি মনে হয়না। কিন্তু স্বভাবটা এখনো পিচ্চি রয়ে গেছে। তবুও কেন জানি কাব্যর পুরো হৃদয় জুড়ে শুধুমাত্র তানিশাই বিচরণ করে। মনের অজান্তে যে তানিশাকে এতটা ভালবেসে ফেলবে বুঝতে পারেনি কাব্য। কথাটা ভাবতে ভাবতেই নিজের অজান্তে ঠোঁটের কোণে হাসি ফোঁটে উঠলো।
তানিশা আনমনে পিছনে ফিরতেই দেখে কাব্য তার দিকে তাকিয়ে আছে,,,
তানিশা : আরে ভাইয়া আপনি কখন আসলেন??
কাব্য : এইতো কিছুক্ষণ হলো। কেমন আছো??
তানিশা : ভালো না।
কাব্য : কেন কি হয়েছে?
তানিশা : ফাজিল মেয়েটাকে কখন বলছি ছাদে আসার জন্য। কানকাটা পেত্নীটা এখনো ছাদে আসেনি। ভাইয়া আপনি বলেন আমাকে এখানে একা দাড় করিয়ে রাখার কোনো মানে হয়? ইচ্ছে তো করছে গিয়ে ঐ শাঁকচুন্নিটার চুল গুলো টেনে ছিড়ে দিতে আর কান দুটি কেটে দিতে। বাঁদরনী মেয়েটা গিয়ে যদি ইচ্ছে মতো কিছুক্ষণ থাপ্পড় মারতে পারতাম। থাপ্পড়ের চোটে দাঁতের মাড়ি দিয়ে রক্ত বেয়ে পরতো। আর তাকে দেখতে চুল ছাড়া টাকলী আর কানকাটা রাক্ষসীর মতো লাগতো, তখন আমি ভালো হয়ে যেতাম। ( রাগে গজগজ করে )
— কাব্য কিছুটা বিব্রত হয়ে দোলনায় বসে কফির মগটা সামনে ছোট্ট টেবিলে রেখে কিছুটা আমতা আমতা করে বলল,,,
কাব্য : কার কথা বলছো?
তানিশা : কে আবার? আপনার একমাত্র কলিজার টুকরা বোন নীলার কথা।
কাব্য : ওহহ,,
তানিশা : ভাইয়া আপনি থাকেন। আপনাকে ডিস্টার্ব করে লাভ নাই, আমি নিচে চলে যাই।
— কথাটা বলে তানিশা চলে যেতে লাগলে, কাব্য পেছন থেকে ডাক দেয়,,,
কাব্য : তানিশা শুন,,
তানিশা : কিছু বলবেন?
কাব্য : একটু বসো,, তোমার সাথে গল্প করি।
তানিশা : সত্যি গল্প করবেন? আমি নীলা আর আন্টিকে ডেকে নিয়ে আসি, সবাই একসাথে বসে গল্প করলে অনেক মজা হবে। ( খুব খুশি হয়ে )
কাব্য : না, না থাক গল্প করতে হবেনা। তুমি যাও,,
তানিশা : আরে ভাইয়া আপনি বসেন তো, আমি এক্ষণি তাদেরকে ডেকে নিয়ে আসছি।
— তানিশা দৌড়ে নিচে চলে গেলো। কোথায় ভেবেছে কাব্য তার সাথে একা বসে একটু গল্প করবে, তার সাথে একান্তে কিছুটা সময় কাটাবে। তা আর হলো না। হয়তো মনের কথাটা আজও বলা হবেনা। কিভাবে বলবে? মেয়েটা তার ৯ বছরের ছোট, সবেমাত্র ১৮ তে পা দিয়েছে। সবচেয়ে বড় কথা তার ছোট বোন নীলার বান্ধুবী। বললে যদি উল্টাপাল্টা কিছু ভেবে এই বাসায় আসা বন্ধ করে দেয়? না থাক। কাব্য এতদিন অপেক্ষা করেছে আর নাহয় কিছুদিন অপেক্ষা করবে। অপেক্ষার ফল অনেক মিষ্টি হয়। ভাবতে ভাবতে কফিতে আরেকটা চুমুক দিলো।
তানিশা গিয়ে দেখে নীলা ড্রয়িংরুমে সোফায় বসে tv দেখছে। নীলার হাত ধরে টানাটানি শুরু করে দিলো, বসা থেকে উঠিয়ে তার সাথে নিয়ে যেতে যেতে বলল,,,
তানিশা : ছাদে চল,, তাড়াতাড়ি
নীলা : দাড়া দাড়া কি করছিস? ( থেমে গিয়ে )
তানিশা : ভাইয়া বলেছে গল্প করবে।
নীলা : ভাইয়া কি বলেছে আমার সাথে গল্প করবে?
তানিশা : না বলছে,, বসো তোমার সাথে গল্প করবো। আমি বলছি সবাই মিলে একসাথে গল্প করলে অনেক মজা হবে। ( খুশি হয়ে )
নীলা : তোকে বলছে, তুই যা,, আমি যাবোনা। ( বলেই বসে পরলো )
তানিশা : তাহলে আমিও যাবোনা।
— বলেই নীলার পাশে বসে পরলো। নীলা কিছুটা বিরক্তি নিয়ে তানিশার দিকে তাকিয়ে আছে। তার ভাই এই মেয়েটাকে পছন্দ করে, তাই যেকোনো বাহানা দিয়ে কিছুদিন পর পর তাদের বাসায় নিয়ে আসে। কাব্যর খুশির জন্য। কাব্য তার সাথে গল্প করবে বলেছে কিছু তো একটা করতে হবে,,,
নীলা : আচ্ছা তাহলে চল।
তানিশা : একমিনিট,, আন্টিকে ডেকে নিয়ে আসি।
নীলা : মামনিকে ডাকার দরকার নেই।
তানিশা : কেন?
নীলা : মামনি গেলে আমি যাবনা।
তানিশা : আচ্ছা থাক আন্টিকে ডাকবো না। আন্টি তো বুড়ি হয়ে গেছে, গল্প করে আর কি করবে? আন্টি বরং বসে বসে আল্লাহর জিকির করুক। এটাই ওনার জন্য ভালো হবে। এমনিতে কিছুদিন পরে তো মরে যাবে, দোয়া করি মরার পরে আল্লাহ ওনাকে জান্নাত নসিব করে।
নীলা : আবোলতাবোল কি বলছিস??
— নীলা চোখ গরম করে তাকাতেই তানিশা চুপ করে কিছু না বলে নীলার হাত ধরে সিরি বেয়ে উপরে উঠে গেলো। তানিশা ছাদে উঠতেই নীলা বলল,,,
নীলা : তানিশা আমার মোবাইলটা নিচে ফেলে এসেছি। তুই যা আমি নিয়ে আসছি।
তানিশা : ok…
— নীলা ছাদ থেকে বেরিয়ে ছাদের দরজাটা আস্তে করে ভেতর থেকে লক করে নিচে চলে এসেছে। যেন কাব্য তানিশার সাথে একান্তে কিছুটা সময় কাটাতে পারে।
কাব্য কফিটা শেষ করে ছাদের রেলিং হাত দিয়ে আকাশপানে তাকিয়ে আছে। তানিশা ছাদে আসার আওয়াজ পেয়ে পেছনে ফিরে তাকায়। তানিশা কাব্যর কিছুটা পাশে দাড়িয়ে বলল,,,
তানিশা : আন্টি আসেনি, কিন্তু নীলা এক্ষণি চলে আসবে।
— কথাটা বলার সাথে সাথে কাব্য মুচকি হেসে দিলো। কারণ সে জানে নীলা এখন আর ছাদে আসবেনা,,,
তানিশা : কি হলো ভাইয়া? আপনি হাসছেন কেন??
কাব্য : হাসলে কি আমাকে খারাপ দেখায়?
তানিশা : না’তো,, আপনার হাসিটা অনেক সুন্দর। ঠিক আমার ছোট ভাই তন্ময়ের মত।
— সাথে সাথে কাব্যর হাসিটা উধাও হয়ে গেছে। বড় ভাই ডাকা এটা মানা যায় কিন্তু ছোট ভাই?? এটা কখনওই মানা যায়না। কাব্য প্রসঙ্গ পালটে বলল,,,
কাব্য : তোমারexam কেমন হয়েছে?
তানিশা : কেমন আর হবে? কলেজে কিছু মুখ পুড়া হনুমান, কিছু ইংরেজ রাজাকার, আর কয়েকটা শ্যামলা টাকলা উগান্ডা জাতের টিচার আছে। এই অমানুষ টিচার গুলো এটাই বুঝেনা যে এত্তো পড়াশোনা করে কি লাভ হবে?? কয়েক দিন পরে তো আমার বিয়ে হয়ে যাবে। তারপর আমার বাচ্চাকাচ্চা হবে,, তারা বড় হলে নীলার বাচ্চাদের সাথে তাদের বিয়ে দিয়ে আমরা দুজন বেয়াইন হয়ে বুড়ি হয়ে মরে যাবো। ভাইয়া আপনি বলেন এতো পড়াশোনা করে কোনো লাভ আছে??
— তানিশার কথা শুনে কাব্য আবুলের মতো তাকিয়ে রইলো। কিছু বলার মতো ভাষা খুঁজে পাচ্ছে না। তানিশার হঠাৎ মনে পরলো নীলা তো এখনো আসেনি। তানিশা কাব্যকে বলল,,,
তানিশা : ভাইয়া দেখছেন ফাজিল মেয়েটাকে কখন বলছি আসার জন্য, এখনো আসেনি। চোখ থাকা কানিটা মনে হয় এখনো মোবাইল খুঁজে পায়নি। মোবাইল কিভাবে খুঁজতে হয় এখন আমি তাকে শিখাতে হবে? আজকে ওর একদিন কি আমার একদিন। আজকে ওর মোবাইলের বারটা বাজিয়ে ছাড়বো। ফাজিল, চোখ থাকা কানি, শাঁকচুন্নি, দাড়া আমি আসছি।
— কথাটা বলতে বলতেই ছাদের দরজার কাছে গিয়ে দরজা ধাক্কা দিতেই দেখে দরজা ভিতর থেকে লক করা। দরজা নিজে নিজে লক হলো কিভাবে? এই চিন্তা করে তানিশা দরজার সাথে ধাক্কাধাক্কি শুরু করে দিলো। তানিশার এমন কান্ড দেখে কাব্য বলল,,,
চলবে,,,
( ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।)
#অদ্ভুত_পূর্ণতা
writer – তানিশা
part – 2
কাব্য : কি হয়েছে? এভাবে দরজা ধাক্কাচ্ছো কেন?
তানিশা : দরজা মনে হয় নিজে নিজে ভিতর থেকে লক হয়ে গেছে।
কাব্য : তেমন কিছুনা নীলা হয়তো ভুলে লক করে চলে গেছে।
তানিশা : ওকে ডাকেন দরজা খোলার জন্য। ও আমার ডাক শুনবে না।
কাব্য : ও এখন movie দেখতে বসছে। হাজার বার ডাকলেও শুনবে না। সমস্যা নেই ওর movie…. দেখা শেষ হলে নিজেই এসে দরজা খোলে দিবে।
তানিশা : এতক্ষণ আমি এখানে একা একা বসে থাকবো নাকি?
কাব্য : তুমি একা কই? আমি তো আছি।
তানিশা : আপনি থেকে কি হবে? নীলা’তো নাই। আমি কথা বলবো কার সাথে?? ( মন খারাপ করে )
কাব্য : সবসময় তো আর নীলা থাকবেনা। ওর তো একদিন বিয়ে হয়ে যাবে তখন কি করবে?
তানিশা : তখন নীলার দেবরকে পটিয়ে আমিও বিয়ে করে ফেলবো। তারপর আমি আর নীলা সবসময় একসাথে থাকবো।
— কাব্য এবার চুপ করে দাড়িয়ে আছে। এই মেয়ে তার থেকে একধাপ এগিয়ে। কাব্যকে চুপ করে দাড়িয়ে থাকতে দেখে তানিশা বলল,,,
তানিশা : আচ্ছা ভাইয়া আপনি বিয়ে করেন না কেন?
কাব্য : একজনকে খুব ভালবাসি কিন্তু এখনো বলতে পারিনি।। যদি বিয়ে করতে হয় তাকেই করবো।
তানিশা : আপনি যথেষ্ট সুদর্শন একটা ছেলে। ঐ মেয়েকে বলে দেখেন ঐ মেয়ে নাচতে নাচতে বিয়ের জন্য রাজি হয়ে যাবে। আমার মনে হয় শুধু নাচবে না তিড়িংবিড়িং লাফাতে লাফাতে রাজি হয়ে যাবে।
কাব্য : really…??
তানিশা : আরে ভাইয়া বিশ্বাস না হলে একবার বলে দেখেন।
কাব্য : যদি বলি তোমাকে?
তানিশা : আমাকে?
— বলেই তানিশা হাসতে শুরু করলো। হাসতে হাসতে ফ্লোরে বসে পরলো। বসা থেকে শুয়ে ফ্লোরে গড়াগড়ি করা শুরু করে দিলো। অবশ্য কাব্য এটা জানে যে তানিশা একটু সাইকো টাইপের মেয়ে। তানিশার হাসি থামছে না কাব্য এটা কি বলল? কাব্য বুঝি এমন মেয়ে পছন্দ করবে? তানিশা কোনোরকমে নিজের হাসি থামিয়ে শুয়া থেকে উঠে বলল,,,
তানিশা : sorry… আমার অনেক হাসি চলে আসছিল তাই হাসতে হাসতে শুয়ে পরছি।
কাব্য : it’s ok… তোমার ans টা কি হবে বললে নাতো?
তানিশা : আমার জায়গায় যেকোনো মেয়ে থাকলে অবশ্য হ্যা বলে দিতো। কিন্তু আমার উত্তর না হবে। কারণ আমি তো আপনাকে বিয়ে করবো না, আমি বিয়ে করবো নীলার দেবরকে।
— বলেই তানিশা একগাল হপসে দিলো। কাব্য আর কথা বাড়ালো না। এই মেয়ে নীলাকে ছাড়া কোনো কিছু ভাবতেই পারেনা। কাব্যর গল্প করার মুড নষ্ট হয়ে গেছে। সাথে সাথে নীলাকে কল করে বলছে ছাদের দরজাটা খোলার জন্য। নীলা এসে দরজা খুলে দিতেই কাব্য নিচে চলে গেলো। নীলা এসে তানিশাকে বলল,,,
নীলা : কিরে ভাইয়া এভাবে চলে গেলো কেন? কিছু হয়েছে নাকি??
তানিশা : আমি কি জানি? আমাকে বলছিস কেন?
নীলা : ভাইয়া আর তুই তো এখানে ছিলি। তো কাকে বলবো?
তানিশা : আমি ছিলাম তো কি হইছে? আমি কি শেওড়া গাছের সাদা পেত্নী হয়ে ওনার ঘাড় মটকাইছি নাকি? কোন কানকাটা পেত্নীর প্রেমে পরছে, আর ঐ কানকাটা লাইলি পেত্নীকে মিস করতে করতে ওনি মজনু হয়ে এখান থেকে চলে গেছে। তাতে আমার কি দোষ?
নীলা : কানকাটা পেত্নীটা কে একদিন নিজেই টের পাবি।
তানিশা : কে আবার? তোর হবু ভাবি।
নীলা : তাও ঠিক,, আচ্ছা চল নিচে যাই।
তানিশা : তার আগে বল তুই এতক্ষণ আসলি না কেন?
নীলা : কাল সকালে কি পরে মেলায় যাবো সেটা নিয়ে চিন্তা করছিলাম।
তানিশা : দেখ তুই আমাকে মেলার লোভ দেখাবিনা, আমি কিন্তু মেলার লোভ সামলাতে পারিনা। আমি জানি তুই কথা কাটানোর চেষ্টা করছিস।
নীলা : আচ্ছা হয়েছে,, এবার নিচে চল। নাহয় কালকে মেলায় যাওয়া হবেনা।
— পরেরদিন সকালে তানিশা আর নীলা মেলায় যাওয়ার জন্য তৈরি হয়ে গাড়িতে কাব্যর অপেক্ষায় বসে আছে। কাব্য এসে দেখে দুজনেই গাড়ির পেছনের সিটে বসে আছে। যেটা কাব্যর মোটেও পছন্দ হয়নি,,,
কাব্য : দুজনে পেছনে বসেছো কেন?
তানিশা : পেছনে বসলে কি হয়েছে?
কাব্য : আমি কি গাড়ির ড্রাইভার নাকি? একা একা সামনে বসবো?? একজন সামনের সিটে এসে বসো।
তানিশা : গাড়ি তো ড্রাইভারই চালায়। আপনি ড্রাইভার না? তাহলে গাড়ি কিভাবে চালাবেন??
কাব্য : hello madam… আমি কি আপনাদের permanent… ড্রাইভার নাকি? শুধুমাত্র লিফট দিচ্ছি আপনাদের। এটা আমার গাড়ি দয়া করে সামনে এসে বসুন।
নীলা : তানিশা তুই সামনে যা,,
তানিশা : আমি যাবোনা।
কাব্য : ok…দুজনে গাড়ি থেকে নামুন আমি তাহলে অফিসে চলে যাই।
তানিশা : না ভাইয়া আমি সামনে আসছি তো। শাঁকচুন্নিটাকে আগেই বলছিলাম আমি সামনে বসবো। কানিটা আমার কোনো কথাই শুনেনা। ( গাড়ি থেকে নামতে নামতে )
নীলা : ঐ তুই কখন বললি সামনে বসবি? আমি তোকে আগেই বলছি সামনে গিয়ে বস।
তানিশা : বেশি কথা বললে চুল টেনে ছিড়ে ফেলবো মিথ্যাবাদী, শাঁকচুন্নি কোথাকার।
নীলা : আমার চুল টেনে ছিড়ে ফেলবি? আয় তুই,, তোর চুলগুলো সব তোর মাথায় থাকবে ভেবেছিস??
তানিশা : তুই আমার চুল ছিড়ে ফেলবি? তোর শ্যাম্পুর বোতলে হেয়ার রিমুভার ঢুকিয়ে দেবো তারপর দেখবি তোর মাথা ন্যাড়া হয়ে সন্ন্যাসী হয়ে রাস্তাঘাটে ঘুরবি। ( কাব্যর পাশের সিটে বসে )
নীলা : কি বললি? আমার মাথা ন্যাড়া হয়ে সন্ন্যাসী হয়ে রাস্তাঘাটে ঘুরবো??
তানিশা : হ্যা,, সাথে ভিক্ষা করেও খাবি। ( মুখ ভেঙ্গচি কেটে )
নীলা : কিহহ? তোর সাহস তো কম না? ( প্রচন্ড রেগে )
— কাব্য আবুলের মতো তাকিয়ে দুজনের ঝগড়া দেখছিল। কি হচ্ছে কিছুই মাথায় ঢুকছে না। সামান্য একটা কথা নিয়ে কেউ এভাবে ঝগড়া করে? এবার কাব্যর রাগ উঠে গেলো,,,
কাব্য : এই তোমরা দুজন আমার গাড়ি থেকে নামো। ( রেগে গিয়ে )
— নীলা তানিশা দুজনে কাব্যর দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারছে এই মুহূর্ত কাব্য রেগে গেছে। তাই নীলা করুণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,,,
নীলা : আমরা আবার কি করলাম?
কাব্য : দুজনেই গাড়ি থেকে নামো।
তানিশা : আরে ভাইয়া আমরা তো দুষ্টামি করছিলাম। তাইনা নীলা?
নীলা : হ্যা,, আমরা তো দুষ্টামি করছি।
কাব্য : আমি দুজনকেই গাড়ি থেকে নামতে বলছি।
তানিশা : আমাদের কি মেলায় নিয়ে যাবেন না? ( করুণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে )
— কাব্য তানিশার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে, কতটা নিষ্পাপ আর মায়াবী দেখতে। হয়তো মেয়েটা একটু বেশি ঝগড়াটে, তাতে কাব্যর কিছু যায় আসেনা। অনেক শখ, আহ্লাদী হয়ে এসেছে মেলায় যাওয়ার জন্য। কাব্য তার সামান্য এই শখটুকু পূরণ করতে পারবেনা?? তাহলে কিসের ভালবাসা? কাব্য তার নিজের রাগটা এক পাশে রেখে বলল,,,
কাব্য : একটা শর্ত আছে।
তানিশা : কি?
কাব্য : গাড়িতে একে অপরের সাথে একটা কথা যেন না হয়। is that clear…??
তানিশা : okay ভাইয়া।
— কাব্য এবার গাড়ি ড্রাইভ করতে শুরু করেছে। জানালার কাঁচ গুলো নামানো, তানিশা বাহিরে তাকিয়ে আছে। মেরুন রঙ্গের ঘাগরার সাথে কানে ঝুমকা, হাতে চুড়ি পরেছে। মেয়েটা চুড়ি পরতে একটু বেশি পছন্দ করে। হয়তো সাজতে ভাললাগে তার। তানিশা কি জানে খোলা চুল গুলো যখন বারবার তার মুখের উপর এসে পরে, আর সে বারবার হাত দিয়ে কানের নিচে গুজে দেয়, তখন তাকে দেখতে কতটা সুন্দর দেখায়? ভাবছে আর সামনের ছোট আয়না দিয়ে কাব্য তানিশাকে আড়চোখে দেখছে। যতবার দেখছে ততবার যেন কাব্য তানিশার প্রেমে পরে যাচ্ছে। আর কাব্যর কান্ড দেখে নীলা মিটমিট হাসছে। এক পর্যায়ে নীলা মুখ খোলে বলে ফেললো,,,
নীলা : ভাইয়া আমি যে গাড়িতে বসে আছি সেদিকে কি তোমার কোনো খেয়াল আছে?? ( মিটমিট হাসতে হাসতে )
— নীলার কথায় কাব্যর হুশ ফিরতেই কাব্য কিছু বলতে যাবে, তার আগেই তানিশা নীলার দিকে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে বলল,,,
তানিশা : খেয়াল থাকবেনা কেন? তুই যে আস্ত একটা জীবন্ত জলহস্তিনী বসে আছিস তোকে বুঝি ভাইয়া চোখে দেখবেনা?? পাগলনী ছাগল কোথাকার।
নীলা : এই আমি তোর সাথে কথা বলছি নাকি? আমি ভাইয়াকে জিঙ্গাসা করছি তোকে না।
তানিশা : তুই এমন ভাবে বলছিস, মনে হচ্ছে ভাইয়া শুধু আমাকে দেখছে তোকে না। মানে আমি হাতি তুই মশা, তোকে তো দেখা যায়না। দিনদিন যে খেয়ে হাতি হচ্ছিস সেদিকে আন্টির কোনো হুস নেই। তোকে বিয়ে দিবে কিভাবে সেই চিন্তায় আমি দিনদিন শুকিয়ে শুটকি হয়ে যাচ্ছি।
নীলা : আমার বিয়ে নিয়ে চিন্তা তুই করছিস কেন? তুই কি আমার ভাইয়ার বৌ?
তানিশা : ভাইয়া আমাকে ছোট বোনের মতো দেখে।
নীলা : মোটেও দেখেনা।
তানিশা : ভাইয়া গাড়ি থামান।
নীলা : গাড়ি থামাবে কেন?
তানিশা : ছাগলনী রাস্তা থেকে তোর জন্য কয়েকটা কাঁঠাল গাছের ডাল নিবো। কাঁঠাল পাতা চিবুতে চিবুতে অন্ততপক্ষে তোর মুখটা বন্ধ থাকবে এই জন্য।
নীলা : ভাইয়া দেখছো এই মেয়ে কি বলে?? তারপরও কি তুমি বলবা তোমার এই মেয়েকেই পছন্দ??
— কাব্য খুব জোরে গাড়ি থামিয়ে রেগে গিয়ে বলল,,,
কাব্য : just shut up… দুজনেই গাড়ি থেকে নামো।
নীলা : আমরা আবার কি করলাম? আমরা তো দুষ্টামি করছিলাম। তাইনা তানিশা?
তানিশা : হ্যা,, আমরা তো দুষ্টামি করছিলাম।
কাব্য : যদি তোমাদের দুষ্টামি শেষ হয় নামতে পারো।
তানিশা : আমাদের কি তাহলে মেলায় নিয়ে যাবেননা??
কাব্য : আমরা already মেলায় চলে এসেছি।
চলবে,,,
( ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।)