#প্রেমের_মরা_জলে_ডুবে
#তানিয়া
পর্ব:১০
শুভ্র প্রাণহীন দেহের ন্যায় বসে আছে লেকের পাড়ে। এমন কিছু সত্যির মুখোমুখি হবে সেটা শুভ্র কখনো ভাবে নি।ছোট থেকে যেই মেয়েটাকে সে ভালোবেসেছে, ভেবেছে প্রিয়তমা,প্রথম প্রেম হিসেবে আজ সে কিনা তাকে এভাবে ঠকালো।এমনভাবে তাকে ঠকানোর কাঠগড়ায় দাঁড় করালো।শুভ্র একরোখা আর গম্ভীর প্রকৃতির পুরুষ। শত কষ্টে কখনো তার চোখে জল আসে না।তাছাড়া ছোট থেকে সে এমন স্বভাবের ছিল যে কেউ তাকে বকা দিবে বা আঘাত করবে এমন কোনো পরিস্থিতি আসেনি।তাই কষ্ট কি জিনিস সেটা পায় নি।এ প্রথম তার ভেতরটা দুমড়ে মুচড়ে গেলো আসল সত্যিটা জেনে।এভাবেও কেউ অভিনয় করতে পারে সেটা শুভ্র জানতো না।তুরফা তাকে এভাবে ঠকালো,নিজ স্বার্থে ব্যবহার করলো তাকে, তিমিরকে এমনকি দুইটা জীবন নষ্ট করতে একটুও পিছপা হলো না।এতদিন শুভ্র শুধু তিমিরের দোষটা দেখে তাকে আঘাত করে এসেছে কিন্তু জানতে চাই নি এ রহস্যের কিনারা কোথায়?হয়তো জানতো না সত্যটা আজ যদি সরাসরি তুরফা তাকে না বলতো।
শপিং মল…..
শুভ্রকে দেখেই তুরফা চমকে উঠে। এভাবে শুভ্রর সামনে পড়ে যাবে ভাবতে পারে নি তুরফা।শুভ্র তাকিয়ে আছে রাশেদের দিকে আর তুরফা শুভ্রর দিকে।শুভ্র প্রশ্ন সূচক দৃষ্টি নিয়ে প্রশ্ন করলো তুরফাকে,
কেমন আছো তুরফা,এ ছেলে কে?
আসলে ও আামর বন্ধু। আমরা একি ডিপার্টমেন্টে তবে ও আমার এক ইয়ার সিনিয়র।
শুভ্র তুরফার কথাটা বিশ্বাস করলো না।কারণ বন্ধু বা বিএফ এটা চেনার মতো বোধ বুদ্ধি শুভ্রর আছে। শুভ্রর চোয়াল শক্ত হলো,যেখানে সে তুরফাকে নিয়ে চিন্তায় থাকে,তুরফার কষ্ট ভাবে সেখানে তুরফা দিব্যি বন্ধু নামক মানুষটার সাথে ঘুরছে।এদিকে শুভ্র ডাকলেও ব্যস্ততার অযুহাত দেখায়।শুভ্রর চাহনিতে তুরফা বুঝলো শুভ্রর মতো বুদ্ধিবান পুরুষ ব্যাপারটা আচ করে ফেলেছে।তুরফা আর মিথ্যার আড়াল হলো না,সে এবার সরাসরি শুভ্রকে জানিয়ে দিলো যে রাশেদই তার বয়ফ্রেন্ড এবং খুব তাড়াতাড়ি সে রাশেদকে বিয়ে করবে।তুরফার কথা শুনে শুভ্রর পা থেকে মাটি সরে গেলো।সে বিস্ময় হয়ে চেয়ে রইলো তুরফার মুখের দিকে।
শুভ্র অনেক হয়েছে নাটক, অনেক হয়েছে আড়াল আবডাল আর না। আজ তোমাকে কিছু সত্যি জানিয়ে দিই।তুমি ছোট থেকে আমাকে যা ভেবেছো আমি তার এক ইঞ্চিও তোমাকে ভাবি নি।আমি তোমাকে বন্ধুর কাতারে রেখেছি সবসময়। বলতে চেয়েছি বন্ধু হিসেবে তুমি পারফেক্ট কিন্তু বরাবর তুমি আমাকে অন্য চোখে দেখেছো।ভেবেছিলাম হয়তো ছেলে মানুষি কিন্তু না পরে এটা ব্যাপক আকার ধারণ করলো।তোমার মতো ছেলেকে বন্ধু হিসেবে চয়েজ করলেও ভুল হবে,কারণ তুমি যথেষ্ট ঠান্ডা স্বভাব আর গম্ভীর প্রকৃতির পুরুষ। আর তোমার সাথে আমার কিছুই ম্যাচ হয় না।আমি সবসময় একজন প্রফুল্ল আর আমার মেন্টালিটির মানুষকে জীবন সঙ্গীনী হিসেবে চেয়েছিলাম আর রাশেদ তেমনি একজন।তোমার মন রক্ষার্থে এতদিন চুপ ছিলাম কিন্তু এখন সেটা সম্ভব হচ্ছে না।তুমি বরং আমার থেকে দূরে থাকো।তোমার সাহচর্য আদিখ্যেতা আমার মোটেও ভালো লাগে না।তাছাড়া তোমাকে আমার মাকাল ফল মনে হয় যে কিনা দেখতেই সুন্দর কিন্তু বিস্বাদ প্রকৃতির।
তুরফার এমন তীর বিঁধানো কথাগুলো শুভ্রর কলিজাটা ঝালাপালা করে দিচ্ছে। তার পা টলছে হয়তো পড়ে যাবে এমন অবস্থা। তবুও মনোবল শক্ত করে প্রশ্ন করলো সে,
তুমি যদি আমাকে এতটাই অপছন্দ করো তাহলে সরাসরি বলে দিতে, তাহলে আমি তোমাকে বিয়ে করতাম না।আমি তো অবুঝ নই তাহলে কেনে বিয়ের দিন আমাকে অপমান করলে,আমার পরিবারকে অপমান করলে, কেনো ঠকালে আমাকে? আমি তো কোনো অন্যায় করিনি তুমি বললে আমি স্বেচ্ছায় সরে আসতাম তোমার জীবন থেকে।
তুমি সরতে চাইলে তো হবে না আমার মা আমাকে ঠিকই তোমার সাথে ধরে বেধে বিয়ে দিত।তাই আমিই প্ল্যান করে তিমিরকে বাধ্য করেছি তোমাকে বিয়ে করতে।ব্ল্যাকমেইল করেছি সুইসাইড করবো বলে।বেচারি বোকা মেয়ে আমার কথা শুনে রাজি হলো।তোমাকে জানালে হয়তো তুমি মাকে বুঝাতে কিন্তু মা এটা কখনো মানতো না।তাই তোমার সাথে তিমিরের বিয়ে দিয়ে আপাতত আমার চিন্তাটা মায়ের মাথা থেকে বাদ দিয়েছি।কিছুদিন পরই আমার কোর্স শেষ হবে আর তখনি আমি রাশেদকে বিয়ে করবো।সত্যি যদি তুমি আমাকে ভালোবাসো তাহলে আজকের সব সত্যি আমার মায়ের কাছ থেকে লুকোবে আর হ্যাঁ দয়া করে আর বিরক্ত করবে না।
কথা শেষ করে এক মুহুর্ত দাঁড়ালো না তুরফা। রাশেদকে নিয়ে হনহন করে চলে গেল শুভ্রর সামনে দিয়ে। অবাক,বিহ্বল আর তন্ময়ের মতো দাঁড়িয়ে রইলো শুভ্র।
ভরসন্ধ্যা!তিমির টিউশন থেকে ফিরতেই শুভা দৌড়ে এলো তিমিরের কাছে।শুভাকে অস্থির দেখে ভয় পেলো তিমির।
কিরে শুভা কি হয়েছে তোর,এমন করছিস কেনো?
তিমির ভাইয়া না এখনো ফিরে নি বাসায়।কল দিচ্ছি কিন্তু বন্ধ শোনাচ্ছে। মা বারবার কল দিচ্ছে । তুই তো জানিস ভাইয়ার ব্যাপারে মা কতটা সিরিয়াস থাকে।ভাইয়ার কল বন্ধ পেয়ে মা কান্না শুরু করে দিয়েছে। বাবাকে অফিসে জানিয়েছে কিন্তু বাবা মিটিং এ আছে বলে আসতে পারছেনা।তবে ভরসা দিলো যে হয়তো ফোন চুরি হয়েছে অথবা কাজে আটকে আছে। মা কিছুই শুনছে না।এক নাগারে কল দিতে ব্যস্ত।
শুভ্রর ঘটনা শুনে তিমির নিজেই ভয় পেয়ে গেলো। আজ তো সে ক্লাসে তেমন কিছু করে নি তাছাড়া ক্লাস শেষ হওয়ার পর তিমির একবার টিচার্স রুমে গেলেও সেখানে শুভ্রকে দেখে নি।তাহলে কোথায় গেলো মানুষটা?
রাত নটা বাজতেই শুভ্রর গাড়ি বারান্দায় আসলো।শুভ্রর মা ছেলের আগমন খবর পেয়ে দৌড়ে এলেন।
কিরে বাবা কই ছিলি সেই দুপুর থেকে জল দিচ্ছি বন্ধ কেনো ফোন?কোনো সমস্যা হয় নি তো?
না মা আমি ঠিক আছি।ফোনে চার্জ ছিলো না তাই কল দিতে পারিনি।
নিপা আরো কিছু বলতে যাচ্ছিল তার আগেই শুভ্র মায়ের সামনে থেকে সরে রুমে চলে গেলো।আরেকটু থাকলে হয়তো গলায় আটকানো কান্নার ধলাটা চোখ দিয়ে অশ্রু আকারে বেরিয়ে পড়বে যেটা শুভ্র চায় না।দূর থেকে তিমির সবটা খেয়াল করলো।তিমির বুঝলো কোথাও ঘটকা আছে কারণ শুভ্রর চলার ভাব বা কথার ধরণ পরিবর্তিত। শুভ্রর পেছন পেছন তিমিরও রুমে গেলো। শুভ্র রুমে গিয়ে ফ্যান এসি সবটা চালু করে দিলো।তার অসম্ভব গরম লাগছে শরীর বেয়ে ঘাম ঝরছে। রুমে এসেই তার মনে বয়ে চলা ঝড়কে কমাতে সে কান্না শুরু করে দিলো।তিমির পেছন থেকে দেখলো শুভ্রর পিঠ ওটানামা করছে সেই সাথে গোঙানির আওয়াজ।ছেৎ করে উঠলো তিমিরের বুকটা।এ শক্ত পাষাণ পুরুষটা এভাবে মুখ ঢেকে কাঁদছে, বিষয়টা যেন বিশ্বাস হয় না।সে এগিয়ে গিয়ে শুভ্রর পিঠে হাত রাখতে শুভ্র স্বাভাবিক হয়ে চোখ মুছে তার দিকে তাকালো।চোখের কোণে এখনো জল দেখা যাচ্ছে তাহলে কি লুকোচ্ছে শুভ্র?
আপনি কাঁদছেন,কি হয়েছে আপনার?
শুভ্র উল্টো মুখে ফিরে ঠোঁট কামড়ে ধরলো।
না তুমি এখানে কি করছো?
আপনি কাঁদছেন, আপনার চোখে পানি টলমল করছে কি হয়েছে আপনার?
শুভ্রর টলটলে পানিটা গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়লো।সে দু কদম এগিয়ে গিয়ে শার্টের হাতায় চোখ মুছলো।তিমিরও এগিয়ে গিয়ে শুভ্রকে তার দিকে ফেরালো।
কি হয়েছে আপনার, বলুন আমাকে, কেউ কিছু বলেছে?
শুভ্র এবার বাচ্চাদের মতো হু হু করে কেঁদে দিলো।হাত দিয়ে মুখ ঢেকে কান্না শুরু করলো।জীবন এ প্রথম সে শুভ্রর মতো পুরুষকে কাঁদতে দেখলো।শুভ্রর কান্না দেখে তিমির নিজেকে সামলাতে পারলো না।তার চোখ ফেটে কান্না শুরু হলো।একজন পুরুষ এতটা অসহায় হয়ে কাঁদতে পারে সেটা তিমির ভাবে নি কখনো।কতটা কষ্ট পেলে মানুষ নিষ্পাপের মতো কাঁদে সেটা বুঝতে চাইলো তিমির।শুভ্রকে কে আঘাত করলো,কে সে পাষাণ ব্যক্তি যে কিনা শুভ্রর মতো নিষ্পাপ পুরুষের চোখে জল দেখালো।
তিমির শুভ্রকে বিছানায় বসিয়ে চোখ গুলো মুছে দিলো।শুভ্রর হাতটা হাতের মুঠোয় নিয়ে বসে রইলো।তখনো চোখ থেকে জল গড়াচ্ছে দুজনের।
তিমির আমি কি এতটাই খারাপ যে আমার মতো মানুষ ্কে সহ্য করা যায় না,আমি নিজেকে সবসময় লয়্যাল আর আদর্শবান পুরুষ হিসেবে তৈরি করেছি এটাই কি আমার ভুল ছিল?তি.তি.তিমির আমি কি মাকাল ফল যে কিনা শুধু বিস্বাদেই ভরা?
তিমিরের বুঝতে বাকি রইলো না আসল ঘটনা কি আর শুভ্রর কান্নার পেছনে কি?তার মানে তুরফা আপু সবটা জানিয়ে দিয়েছে আর শুভ্রকেও অপমান করেছে।তিমিরের রাগে শরীর কাঁপছে। শুধু মাত্র চোখের সামনে শুভ্রর এ মুখ দেখার ভয়ে সে এতদিন সবটা মুখ বুজে সয়েছে তাও জানতে দেয় নি আসল সত্য পাছে মানুষটার মন ভেঙে যায়। যতদিন মিথ্যাটা বয়ে সুখ পাক কিন্তু তুরফা আপু সবটা শেষ করে দিলো।তিমির পারছেনা এখনি সে তুরফার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে প্রশ্ন করতে কেনো সে এমনটা করলো?একটুও কষ্ট হলো না এ সরল,উদার প্রেমিক পুরুষটার হৃদয়ে এভাবে ছুরির আঘাত করতে, বুক কাপলো না তাকে এভাবে ছিন্ন করতে।শুভ্র নিজের হাতটা গুটিয়ে নিয়ে শুয়ে পড়লো।
তিমির প্লিজ চলে যাও, আমার ভালো লাগছে না।তুমি লাইট অফ করে চলে যাও প্লিজ।
শুভ্র আজ যে আঘাত পেয়েছে সেটা তার জন্য ভয়াবহ। আদুরে সন্তান হওয়ায় কখনো কারো কাছ থেকে একটা ধমক না পাওয়া ছেলে আজ মারাত্মক ভাবে অপমানিত হয়েছে। এটা সে নিতে পারছে না।তিমির সারাজীবন কষ্ট পেয়েছে তাই তার জন্য মামুলি হলেও শুভ্রর জন্য ভয়ংকর। তিমির শুভ্রর মনের অবস্থা বুঝতে পেরে শুভ্রর কথামতো সব করে দরজ ভেজিয়ে চলে গেলো।
শুভার সাথে কথাটা আলাপ করলো না।সারারাত না ঘুমিয়ে পড়ে রইলো তিমির।মাঝে মাঝে শুভ্রর রুমে গিয়ে শুভ্রকে দেখে এসেছে। ঘুামতে গিয়েও ঘুম এলো না।একটাই চিন্তা কাল জিজ্ঞেস করবে কেনো তুরফা আপু এমনটা করলো?
শেষ ভোরে চোখ লাগতেই গভীর ঘুমে চলে গেলো তিমির।শুভার ধাক্কাধাক্কিতে তিমির ধড়ফড়িয়ে উঠে বসলো।
কিরে কতক্ষণ ঘুমাবি?কলেজ যাবি না?
হঠাৎ ঘুম ভাঙায় তিমির অদ্ভুত ভাবে চেয়ে রইলো।শুভা আবারও ধাক্কা দিলো তিমিরকে।তিমির দ্রুত মনে পড়তে তাড়াতাড়ি দৌড় দিলো শুভ্রর রুমে।গিয়ে দেখলো শুভ্রর বিছানা খালি।মনে একটা স্বস্তির সুখ নিয়ে সে ঘুরে দাঁড়ালো। আবার পিছন ফিরে শুভ্রর কাপড় বিছানায় রেখে নিজের রুমে গেলো।
তিমির কতক্ষণ থেকে ডাকছি তোকে, এত দেরীতে উঠলি কলেজ যাবি না?
যাব তবে এখন আমি অন্য কাজে যাবো তুই চলে যা।আমি প্রথম পিরিয়ড করবো না।
শুভা বুঝলো না ঘুম থেকে উঠে তিমির হঠাৎ এমন করলো কেনো,এদিকে দেরী হয়ে যাচ্ছে দেখে শুভা কথা না বাড়িয়ে চলে গেলো।
তিমির বাপের বাড়ি এসে প্রথমে চারপাশে চোখ বুলালো।এ সময়ে বাড়ির কাউকে দেখা যাচ্ছে না দেখে সে তুরফার রুমের দিকে গেলো।তুরফা মেডিকেল যাওয়ার জন্য সবে ঘুম থেকে উঠেছে তন্মধ্যে তিমিরকে দেখে এগিয়ে এলো।তুরফা কিছু বলার আগে তিমির মুখ খুললো,
আপু তুমি গতকাল ওনাকে কি বলছো?
তুরফা বুঝলো শুভ্র সব বলে দিয়েছে। এ ছেলের অভ্যাসগুলো অনেকটা মেয়েলি স্বভাবের। কোনো প্রাইভেসি নেই। তুরফা বিরক্ত চোখে তিমিরকে প্রশ্ন করলো,
শুভ্র তোকে কি বলেছে?
ওনি আমাকে কিছু বলে নি?
তাহলে কীভাবে বুঝলি আমি কিছু বলেছি ওকে?
তুমি ওনাকে মাকাল ফল বলো আর তাতেই বুঝেছি তুমি ওনাকে এমন কিছু বলেছ যার জন্য গতকাল ওনি মারাত্মক ভাবে মানসিক আঘাত পেয়েছেন।তুমি এতটা নিষ্ঠুর কি করে হতে পারো আপু?
তিমির মুখ সংযত কর।কোথাকার কার জন্য তুই আমার সাথে মিসবিহপভ করতে পারিস না,তাছাড়া শুভ্রর দুদিনের বউ হতে না হতেই ওর সাইড নিয়ে কথা বলছিস খুব? তোকে বলেছিলাম সুযোগ বুঝে সব কথা ওকে জানাতে তুই তো জানালি না তাই বাধ্য হয়ে আমাকো সব বলতো হলো।তাছাড়া এত লুকোচুরি ভালো লাগছে না তাই গতকাল যখন রাশেদের সাথে আমাকে দেখলো তখনি শুভ্র ওভারটিয়েক্ট করলো।ব্যস আমিও আচ্ছামতো শুনিয়ে দিলাম কিছু কথা। এখন যদি লজ্জা থাকে আর সামনে এসে কথা বলতে সাহস করবে না
আপু তুমি বড্ড খারাপ কথা বলছো ওনাকে নিয়ে। তোমার কি একটুও মায়া হয় না ওনার প্রতি।ছোট থেকে মানুষটা তোমাকে কত আবেগ,মন দিয়ে ভালোবেসেছে,কত যত্ন করতো সেই তুমি কিনা ওনার সাথে এমন ঔদ্ধত্য আচরণ করলে।আপু অন্তত চক্ষু লজ্জায় হলেও তো তুমি ওনার সাথে বিনয়ী হয়ে কথা বলতে পারতে তাই না?তুমি তোমার স্বার্থের জন্য কতগুলো মানুষকে ব্যবহার করলে,কত বাজে আচরণ করলে আর শেষে কিনা ঐ মানুষটাকে আঘাত করলে? আপু আমার মা মারা যাওয়ার পর আমি এ বাড়িতে আসার পর তুমি বা মা কখনো আমাকে আপণ ভাবো নি।তবুও তোমাদের আমি আপন ভেবে সব অন্যায় মেনে নিয়েছি।বড় বোন মা হয় শুনেছি কিন্তু তুমি আমার সাথে মা তো দূরে থাক বোনের মতো ব্যবহার টুকু দাও নি।গতাকল মানুষটা যেভাবে কাদলো,আমি বুঝি নি পুরুষ মানুষের ভেতরও এত কষ্ট থাকতে পারে আর সেই কষ্টটা তুমি দিয়েছো।আশা করি এখন তোমার আর বাঁধা নেই নির্দ্বিধায় এবার নিজের স্বার্থ সিদ্ধি করতে পারবে!
বাহ্ বড় দেখি ভাষণ দিচ্ছিস।শুভ্রকে কথা শুনিয়েছি বলে এত রাগ।তা এতই যখন মহৎ পুরুষ শুভ্র তা সব ভুলে তোকে নিয়ে সংসার করতে বল না,দেখি কেমন মহৎ?আসলে সব পুরুষ যতই ভালো সরল হোক না কেন সুন্দরী দেখলে মাথা ঘুরে উঠে। আমি তো সুন্দর স্মার্ট তাই শুভ্র আমাকে কামনা করতো না হলে ওসব ভালোবাসা টালোবাসা বলে কিছুনা।দেখবি তুই কালো বলে সে তোকে পাত্তাই দিবে না ঠিকই সুন্দরী দেখে বিয়ে করবে।মিলিয়ে নিস আমার কথা।আর তোদের বিয়েটা তো ছেলেখেলা ধরনের ছিল, শুধু মুখেই কবুল বললি, কাগজপত্র ঘাটলে হয়তো সব ভুল থাকবে।তখন দেখবি শুভ্র আর নিপা আন্টি লাথি মে*রে তোকে তাড়াবে।তখন দেখবো নে এত মহৎ মহৎ বুলি কই যায় তোর?
আপু আমার নিয়তি নিয়ে তোমাকে না ভাবলেও চলবে তুমি তোমারটা নিয়ে ভাবো।
কথাগুলো বলে তিমির রুম ত্যাগ করে।তুরফা হাতে থাকা কাপড়টা মোচড়া মুচড়ি করতে থাকে রাগে।যাওয়ার সময় শান্তা তিমিরকে দেখতে পায় আর সাথে সাথে দৌড়ে এসে তিমিরের পথ রোধ করে।
তুই? তুই আবার এসেছিস এ বাড়িতে,হারাম*জাদী তোকে না মানা করছিলাম এ বাড়িতে যাতে তোকে না দেখী তুই???
শান্তা হাত বাড়িয়ে চুল ধরতে গেলে তিমির হাতটা ধরে ফেলে।চোখ রাঙিয়ে চেয়ে তাকে দুজন দুজনের দিকে।একজনের চোখে রাগ-ক্ষোভ অন্য জনের বিস্ময়। শান্তা বেগম বিস্ময় হয়ে দেখছেন তিমিরকে যাকে তিনি চিনেন না।
মা অনেক অত্যাচার করেছো তুমি আমার ওপর আর না।অনেক হয়েছে এসব এখন বন্ধ করো।তুমি যেমন এ বাড়ির মালিকের বউ আমিও তেমন মালিকের মেয়ে।তুরফা আপু আর আমি ভিন্ন মায়ের হলেও বাবা এক।তোমাদের যেমন বাবার সবকিছুতে হক আছে আমারও আছে। চাইলে সেটা দাবী করতে যা করার সব করবো।আর হ্যাঁ তুমি নিজেই আমার সাথে সব সম্পর্ক চূর্ণ করেছো, আমাকে মেয়ে ভাবো নি তাহলে বারবার হাত তুলো কোন সাহসে।এটা আমার বাবার বাড়ি যখন ইচ্ছে হবে আমি আসবো থাকবো খাবো।বেশি তেড়িবেড়ি করলে সোজা পুলিশকে ডেকে আনবো মনে রেখে।
হাতের মুঠ থেকে শান্তার হাতটা ঝটকা মেরে তিমির গটগট করে চলো গেলো।শান্তা চেয়ে রইলো তিমিরের চলে যাওয়ার দিকে।চোখে তার বিস্ময় এখনো পুরোপুরি।
শুভা তিমিরের মুখ থেকে সব ঘটনা শুনে যেমন রাগ করলো তেমনি অবাক হলো।রাগ হলো তুরফার ওপর, সে তার ভাইকে যা করেছে তার জন্য শুভা শাপ দিতে লাগল তুরফাকে।অবাক হলো শান্তার প্রতি তিমিরের ব্যবহার আর ভাইয়ের কষ্টের প্রতি তিমিরের মমতা দেখে।
তিমির আমি তো বিশ্বাস করতে পারছিনা তুই এসব করেছিস?
আমি নিজেই পারছিনা তুই কোত্থেকে করবি।আসলে তোর ভাই ্য়ের কালকের অবস্থা দেখে এত রাগ হয়েছিল যে মনে হচ্ছিল আজ সামনে যে আসবে তাকেই ধুয়ে দিব।
ভাইয়ার এ কষ্ট তোর যদি এমন অবস্থা হয় তাহলে তো ভাইয়ার কিছু হলে তুই…
শুভা!!একদম ফালতু কথা বলবি না।ওনি দীর্ঘায়ু হোক এটাই বলি সবসময়।
তবে আমার না ভয় লাগছে তুরফা আপু যা বলেছে তা যদি সত্যি হয়,যদি তোদের বিয়েটা বৈধ না হয় তবে তো তোকে এ বাড়ি থেকে বের করতে সময় লাগবে না।
তিমির চুপ করে রইলো এ বিষয়ে।কারণ সে নিজেও সন্দিগ্ধ যে আসলে তাদের বিয়েটা পুরোপুরি হয়েছে কিনা,কারণ কবুল বললে তো হবে না,বিয়ের কাগজপত্র, কাবিননামা যদি ভুল হয় তবে বিয়ে বাতিল হবে।
তিমির তোর বিয়ের কাগজগুলো কই রে?
জানি না আমি আসার সময় ওসব আনিনি।বোধ হয় ঐ বাড়িতে?
তুই আঙ্কেলকে কল দিয়ে জিজ্ঞেস কর ওনার কাছে কিনা,তুই সেসব নে একবার দেখি?
তিমির শুভার কথাটা মেনে নিয়ে কবিরকে কল দিলো।কবির কল ধরেই মেয়ের সাথে কিছু কথা বলে তিমির সোজা প্রশ্ন করলো,
বাবা আমার বিয়ের কাগজগুলো কি তোমার কাছে?
হ্যাঁ কেনো?
বাবা আমার ওগুলো লাগবে।তুমি কি দিতে পারবে?
ফোনের ওপাশে একটু নিরব থেকে কবির তাকে বাসায় আসতে বললো।তিমির জানালো সে বাসায় যাবে না।টিউশন শেষ করলে তারা একটা পার্কে বসবে সেখানেই কাগজগুলো নিয়ে নিবে।কল কেটে তিমির আতঙ্ক ভরা মন নিয়ে অপেক্ষা করলো সেই সময়ের!
শুভা কাগজগুলো হাতে নিয়ে বসে আছে। কাগজগুলো দেখে বিহ্বল হয়ে গেছে শুভা।এসব কি দেখছে শুভা যা দেখছে সবই সত্যি কি?তার মানে তিমির আর শুভ্রর বিয়েটায় কোথাও ফাঁকফোকর নেই। বিয়ের কাবিন, রেজিস্ট্রার সবকিছুতে বড় বড় করে লেখা মা ইয়াসমিন,বাবা কবির আর কন্যা তিমির।শুভা তো খুশিতে তিমিরকে জড়িয়ে ধরলো।
তিমিররররররর,ওরে আমার ভাবিরে সত্যিই কি তুই আমার ভাইয়ের বউ হয়ে গেলি?এখন কেউ আর তোর বিয়ে নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারবে না।কিন্তু এটা কি করে হলো, মানে বিয়ের কাগজ তো ভাইয়া আর তুরফা আপুর হওয়ার কথা ছিল তাহলে তোর নাম কীভাবে হলো?
আমিই নিজেই তো অবাক ছিলাম।যখন বাবা কাগজগুলো হাতে দিলেন তখনো আমার বুকটা ধুকধুক করছে।কান্না আসছিল এ বুঝি তোর ভাইয়ের সাথে সবটা মিথ্যা হয়ে গেছে কিন্তু কাগজ দেখার সব আমার পুরো কলিজটা খুশিতে বেরিয়ে আসতে চাইছিল। আমি চোখকে বিশ্বাস করাতে পারছিলাম না যে এসব কি হলো তবে তুরফা আপু তো এতকিছু করে নি কারণ সে শুধু আমাকে কবুলের জায়গায় থাকতে বলেছিল আর সাইন করলে সেটাও ম্যানেজ করবে বলছিলো।কারণ টাকা দিয়ে সে কাজটা করবে কিন্তু এসব কাজের পেছনে যে বাবার হাত ছিল সেটা আমি বা আপু জানতাম না
কিরকম?
তিমির শুভার দিকে তাকিয়ে শুরু করলো একটু আগের সে রোমাঞ্চ ঘটনাটা!
,
,
,
চলবে…….
#প্রেমের_মরা_জলে_ডুবে
#তানিয়া
পর্ব:১১
তিমির টিউশন করে বের হতে কবির সাহেব কল দেয় তিমির বাবার কথামতো রমনাপার্কের দিকে রিকশা নেয়।
তিমিরকে দেখে কবির হেসে মেয়েকে কাছে টেনে নেয়।
মা তুই গতকাল যা দেখালি তা দেখে তো আমি যতটা অবাক হয়েছি তারচেয়ে হয়েছি বেশি খুশী।এ রূপটা তোর আরো আগে দেখানো উচিত ছিল।
বাবা আমি সরি আসলে গতাকল এত বেশি মেজাজ খারাপ ছিল যে মুখে যা এসেছে তাই বলেছি।কিন্তু আমি ওভাবে মাকে কিছু বলতে চাই নি।
না মা ঠিকই আছে। সাপকে যখন বেশি নাড়াচাড়া করা হয় সাপ কিন্তু তার ফণাটা সাপুড়ের দিকেও তাক করে কিন্তু তুই একটু সময় নিলি এ আরকি!
বাবার কথায় তিমির হেসে দেয়।তখনি ব্যাগ থেকে জিনিসগুলো বের করে তিমিরের হাতে দিলো।তিমির হাতে নিয়ে বসে আছে খোলার সাহস পাচ্ছে না। কবির সাহেব চোখ দিয়ে ইশারা করলেন কিন্তু তিমির ভয় পাচ্ছে যদি ভয়াবহ কিছু দেখে।
তিমির কাঁপা কাঁপা হাতে কাগজগুলো খুললো আর খুলে হাতে নিতেই চোখ কপালে উঠলো।বিয়ের রেজিস্ট্রে রয়েছে তার মায়ের নাম কিন্তু শান্তা নয় ইয়াসমিনের নাম।তিমির উৎসুক দৃষ্টি নিয়ে বাবার দিকে তাকালো।কবির সাহেব মেয়েকে দেখে মুচকি মুচকি হাসছেন।
তিমির আমাকে তোর সাহায্য করতেই হবে আমি জানিনা তুই কি করবি?
তিমির আর তুরফা যখন বিয়ে নিয়ে কথা বলছিল তখনি আড়ালে থেকে সবটা শুনতে পান কবির সাহেব।এ সিদ্ধান্তে তিনি একটুও কষ্ট পাননি বরং তিনি বরাবরের মতো চেয়েছিলেন শুভ্রর মতো একটা ছেলে যেন তিমিরের বর হয়। কারণ মা মরা মেয়েটা বাপের ঘরে কষ্টে মানুষ হয়েছে যদি শুভ্র তার মেয়ের জামাই হয় তাহলে হয়তো তিমির সুখী হবে।তাই তুরফা যখন বিয়েটা নাকচ করলো এবং তিমিরকে বিয়ে করতে বললো তখনি তিনি মনে মনে প্ল্যান সাজান।তুরফা একরফা টাকা দিলো কাজীকে যাতে বিয়েটা সাজানোর ক্ষেত্রে তেমন সমস্যা না হয় কিন্তু এর পেছনে মোটা টাকা খরচ করে কাজীকে হাত করেন কবির।তিনি কাবিন নামা রেজিস্ট্রির সব কাগজ তিমিরের নামে তৈরি করে।বিয়ের আসরে মেয়ে আনার দায়িত্বও তিনি নেন কারণ তিনি জানতেন বউ সেজে তুরফা নয় তিমির।তাই কারো যাতে সন্দেহ না হয় তাই নিজেই মেয়েকে কাজীর সামনে আনেন।কাজী যখন কবুল বলার জন্য চাপ দিচ্ছিল তখনি তিমির কবুল বলে ফেলে।নাম উচ্চারণ নিয়ে কিছুটা সমস্যা হলেও রেজিস্ট্রি পেপারে আর বিয়ের কাবিন সব জায়গায় তিমিরের নাম ছিল।সবচেয়ে বড় কথা হলো তিমির আর শুভ্রর পাচ কালেমা পড়ে বিয়ে হয়েছে এরচেয়ে বড় সত্যি কি?তাছাড়া এখন তো আর কাগজেও ভেজাল নেই সে হিসেবে তিমির শুভ্রর লিগেলি ওয়াইফ।চোখের সামনে প্রিয় মানুষের সাথে বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার সত্যতা নিশ্চিয়তা দেখে তিমিরের চোখে জল চলে এলো।সে বাবাকে জড়িয়ে ধরে কান্না শুরু করে দিলো।
বাবা,তুমি এত বড় কাজটা কেনো করলে?
তোর জন্য করেছি মা,অন্য কেউ না জানুক আমি জানি তুই শুভ্রকে ছোট থেকে ভালোবাসিস।তাই তুরফা যখন অসম্মতি জানালো তখনি ভাবলাম তুরফার এ কাজে আমিও হাত লাগাবো।মা তুই সারাজীবন কষ্ট পেয়েছিস আমি চাই জীবনের সেরা মুহুর্তগুলো তুই সুখে থাক।
তিমির বাবাকে জড়িয়ে এবার হাউমাউ করে কেঁদে উঠলো।
বাবা ওনি যদি না মানেন,ওনি যদি সত্যি আমাকে ডিভোর্স দেন তখন কি হবে?
মা আমি জানি শুভ্র এমন করবে না তবুও যেভাবে বিয়েটা হলো সেখানে সন্দেহ তো থাকবেই।আমি বলবো তুই তোর মতো করে ওর সাথে সময় কাটা ওকে বোঝানোর চেষ্টা কর তোর ভালোবাসাটা তাহলে দেখবি ঠিকই ও তোকে বুঝবে।
তিমির কান্নারত চোখ তুলে বাবাকে চাইলো।চোখ মুছে প্রশ্ন করলো,
বাবা তুমি কীভাবে বুঝলে আমি ওনাকে ভালোবাসি,এ কথা তো আমি ছাড়া দ্বিতীয় কেউ জানে না।
এটা ভুল বললি, এ কথা তুই ছাড়াও তোর মা জানে।তিনি আকাশ থেকে সবটা দেখছে।টেলিপ্যাথিক সিস্টেমে ও আমায় সব বলেছে।তাছাড়া ছোট থেকে আমি প্রায়ইশ দেখতাম শুভ্র আসলেই তোর মুখে হাসি ফুটতো তুই লুকিয়ে ওকে দেখতি।ভেবেছিলাম বাচ্চা মন তাই হয়তো লজ্জায় এমন করতি কিন্তু প্রকৃতি মেয়েদের একটা বয়সে সব বোঝার ক্ষমতা দেয় আর তাদের জ্ঞানে বুদ্ধিতে চট করে বড় করে তোলে।যে বিষয়টা আমি তোর বাচ্চামো মনে করতাম সময়ের ব্যবধানে সেটা আমার মনে হলো এটা শুধু বাচ্চা মেয়ের আবেগ না, এটা একটা মেয়ের লুকায়িত প্রেম যার আভা ছড়াতো শুভ্রর নামে,আগমনে।মা রে তোর মায়ের চোখটা আল্লাহ আমাকে দিয়েছেন যাতে আমি মেয়ের মনটা পড়তে পারি।এখন তোকেও সেই চোখটা শুভ্রকে দেখাতে হবে যেটা দ্বারা শুভ্র যেন তোর মনের ভালোবাসা দেখতে পায়।
বাবার সাথে কখনো তিমির এসব নিয়ে কথা বলেনি।বাবা নির্বিঘ্নে, নিঃসংকোচে তিমিরের মনের কথাগুলো বলাতে তিমির লজ্জায় নিচু হয়ে রইলো।সেই সাথে একটা অজানা খুশি তাকে ঘিরে ধরলো।বাবার সব কথা সে মন দিয়ে শুনলো এবং বুঝলো শুভ্রর সাথে যা হয়েছে তাতে আর কোনো মেয়ের প্রতি শুভ্র ভরসা রাখতে পারবে না কিন্তু তিমিরকে কি মানবে?তিমির এবার শপথ করলো শুভ্রের মনে তার জন্য প্রেম জাগানোর আর ভুলিয়ে দেওয়া তুরফার সব আঘাত আর স্মৃতি!
নিপা আর শান্তা তুরফা আর শুভ্রর বিয়েটা নিয়ে বিভিন্ন আলোচনা করে। মাঝে মাধ্যে নিপা ছেলের কানে কথা তুললেও সেটা শুভ্র নিরবে শুনে যায় রেসপন্স করে না।কারণ মাকে যদি তুরফার সত্যিটা জানানো হয় তবে সেটা শান্তা অবধি পৌঁছাবে আর সেটা শুভ্র করবে না।যতই হোক তুরফা হেয়র সাথে তাকে ভালোবাসার পরীক্ষা দিয়েছে সেটা সে পালন করবেই।
তিমির ভোরে নামাজ পড়ার জন্য উঠলে একবারের জন্য শুভ্রর রুমে উঁকি দিবে।শুভ্রও তখন ওযু করে নামাজে দাঁড়ায়। তিমির সরে আসে।নিয়ম মতো সকালে গিয়ে আবার শুভ্রকে ডেকে তুলে সবকিছু হাতের কাছে রেখে আসে।শুভ্র সবকিছু হাতের নাগালে পাওয়াতে আলসে হয় কোনোকিছু নিজে খুঁজে বের করার।তাছাড়া সেদিন তুরফার বিষয়টা বলার পর দুজনের মাঝে এ নিয়ে টু শব্দ হয় নি।বিষয় ্টা এমন যেন কেউ কিছু জানে না।
তিমির ক্লাসে বসে আছে আর শুভা জানলায় দাঁড়িয়ে কথা বলছে। স্যার আসলেই দৌড় দিবে এমন মনোভাব। শুভ্র আসার সময় পেছনে শুভাকে একটা চাট্টি মারে শুভা পেছনে তাকাতে ভাইকে দেখে মুখ কুঁচকায়।
কি হলো ক্লাসে না গিয়ে এখানে কি,যাও ক্লাসে?
শুভা দেখলো সময় হয়ে গেছে কথা না বাড়িয়ে সে মুখ ভেংচি কেটে চলে গেলো।শুভ্র ক্লাসে ঢুকতেই তিমিরের দিকে চোখ গেলো।তিমির হাতের তালুতে থুতনি রেখে তার দিকে চেয়ে আছে। তিমিরের মনে কি একটা বদমাইশি জাগলো সে ঠুস করে একটা চোখ মে*রে দিলো। শুভ্র এহেন কাজ দেখে চোখ বড় করে ফেললো।তারপর চশমাটা খুলে আবারও পরলো।তিমির যা করলো সেটা সত্যি নাকি মিথ্যা বুঝলো না কারণ তিমির বই দেখছে এমন ভান করে নিচু হয়ে রইলো।শুভ্র নিজের মনের ভুল ভেবে নাম ডাকা শুরু করলো।নাম ডাকার এক পর্যায়ে চোখ তুলতে তিমির আবারও চোখ টিপ দিলো।এবার শুভ্র রেগে গেলো।
এই মেয়ে তুমি উঠো।
তিমির হাসি হাসি মুখে উঠে দাঁড়ালো।
কি হয়েছে স্যার?
তোমার সমস্যা কি তুমি এমন করছো কেনো?
কি করেছি আমি?
শুভ্র চোখ টিপের কথা বলতে গিয়ে থেমে গেলো।এ কথা তো আর সরাসরি বলা যায় না।তিমির বুঝলো না শুভ্র সবার সামনে এটা বলতে পারবে না তাই মুখ টিপে হাসতে লাগলো।শুভ্র মুখ শক্ত করে তিমিরকে বসিয়ে দিলো কারণ তিমির যে ইচ্ছে করে
এমনটা করেছে সে জানে।
ফার্স্ট ইয়ারের পরীক্ষা শেষ হওয়ায় কলেজে তেমন চাপ ছিলো না।শুভার ইচ্ছে হলো কোথাও বেড়াতে যাওয়ার। তাই শুভা মায়ের কাছে বায়না ধরলো যেন এ সময় একটু নানার বাড়ি যাবে।তিনি বিরক্ত হলেন কিন্তু হলেও শুভা শুনবে না।তাই নিপা রাজি হলেন।মাকে জড়িয়ে ধরে শুভা চুমু খেলো তারপর ইনিয়েবিনিয়ে সে তিমিরকে সাথে নেওয়ার কথা বললো।তিমিরের কথা শুনে ফেটে পড়লো নিপা।চোখকে তীব্র গরম করে তাকিয়ে তিনি নাকচ করলেন।বাপের বাড়িতে ঐ মেয়েকে নিলে তার সম্মান থাকবে না।সবাই বলবে নিপার রুচি খারাপ তাই ছেলের জন্য এ মেয়ে চয়েজ করেছে কেউ তো জানে না এ পাকনা মেয়ে সবার মাথায় নুন রেখে বড়ই খেয়েছে। মায়ের কটু কথায় তিমির চুপ হয়ে রইলো শুভা কিছু বলতে গেলে তিমির হাতে চাপ দেয়।শুভা তিমির না যাওয়াতে নিজেও সিদ্ধান্ত নেয় না যাওয়ার কিন্তু তিমির তাকে বুঝিয়ে ব্যাগ পত্র গুছিয়ে দেয়।পরদিন সকালে শুভাকে নিতে আসে তার কাজিন।সবার থেকে বিদায় নিয়ে আনন্দ সমেত রওনা হয় নানার বাড়ির উদ্দেশ্য।
শুভা চলে যাওয়ার পর তিমির পুরোপুরি একা হয়ে গেলো।এ বাড়িতে তার টিকে থাকার একমাত্র সম্বল হচ্ছে শুভার সাহচর্য। কারণ মেয়েটা তাকে এত হাসাতে পারে যে তিমিরের সকল দুষ্ট ্মিও তার কাছে হার মানে।
রাতে বিছানায় শুয়ে তিমির নিজের জীবনের বিভিন্ন সময়ের কথা ভাবছে।একটু আগে শুভার সাথে কথা হলো।ওর গলার স্বরে বুঝায় যাচ্ছে কতটা আপ্লূত শুভা।তিমিরের একা শুয়ে থাকতে ভালো লাগছে না তাই বারান্দায় গেলো।শীতল বাতাস তার সর্বাঙ্গে স্পর্শ করে গেলো।তিমির বাতাসটা গায়ে মাখলো তবে অসুস্থ হওয়ার ভয়ে সে রুমে এসে গেলো।
রাত বারোটা।সেই কখন বিছানায় পড়েছে এখনো ঘুম আসছে না।চারদিকে পিনপতন নীরবতা। বাপের বাড়ি ছেড়ে আসার পর থেকে শুভার সাথে থাকতে থাকতে একা থাকার অভ্যাসটা চলে গেছে।তাছাড়া এ রুমটা বড়।আলোতে ঘুম আসে না আাবার অন্ধকারে ভয় করছে।হঠাৎ তিমিরের মাথায় অন্য বুদ্ধি এলো।সে তার বালিশটা নিয়ে আস্তে করে পা বাড়ালো শুভ্রর রুমে।
স্যার স্যার আপনি ঘুমিয়েছেন?
শুভ্র এতক্ষণ বারান্দায় ছিল।একটু আগে রুমে এসে বিছানা ঠিক করে ঘুমানোর প্রস্তুতি নিতেই দরজায় ঠুকঠুক শব্দ শুনল।গলা শুনে বুঝলো তিমিরের কণ্ঠ। শুভ্র দরজা খুলতেই তিমির দ্রুত ঢুকে পড়লো।শুভ্র ভ্রু কুঁচকে তাকালো।
এত রাতে তুমি এখানে,ঘুমাও নি?
না। ঐ রুমে একা থাকতে ভয় লাগছে।
তো আমি কি করবো?আগে তো একাই ছিলে!
কিন্তু রুম তো ছোট ছিল তাই ভয় লাগে নি।এখানের রুমগুলো বড় বড় তাই ভয়টাও বড় হয়ে গেছে। তাছাড়া এতবড় রুমে একা থাকতে নিশ্চয়ই আপনারও ভালো লাগে না তাই চলে এলাম?শুভা যতদিন থাকবে না আমি আপনার সাথে থাকব।শুভা আসলে চলে যাব।
হোয়াট?আর ইউ ক্রেজি?এখন বের হও আমার রুম থেকে?
না এটা একা আপনার না আমারও।তাছাড়া আমি তো সারাজীবনের জন্য না জাস্ট এ কদিন থাকবো।তাছাড়া আপনি শুকনো মানুষ এত বড় খাটে তো জায়গা কম হবে না।আমি কোণায় গিয়ে শুয়ে পড়ব।
তিমির আমি কোনো কথা শুনতে চাই না
এক্ষুনি বিদাা্য় হও।
আমিও কিছু বলতে চাই না।এখন ঘুমাবো
তিমির শুভ্রর কথাকে পাত্তা না দিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়লো।শুভ্র জানে এ মেয়েকে তাড়ানো সম্ভব না।আর এত রাতে চিল্লাতে গেলে মা এসে সিনক্রিয়েট করবে।অগত্যা শুভ্রও চলে গেলো নিজের জায়গায়।
শোনো আমার জায়গায় আসবে না আর হ্যাঁ গায়ে হাত পা ছোড়াছুড়ির অভ্যাস থাকলে সোজা কিন্তু নিচে ফেলে দিব।
আমি যখন ঘুমে থাকি ওসব খেয়াল থাকে না।হয়তো এ অভ্যাস আছে কিছুদিন এডজাস্ট করে নিবেন আরকি?
শুভ্র তিমিরের দিকে তাকাতে তিমির চোখ বন্ধ করে ফেললো।কিন্তু বন্ধ চোখ গুলো মিটমিট করছে আর ঠোঁটে লেগে আছে মুচকি হাসি।
,
,
,
চলবে…..